সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আমরা একটা দল ছিলাম

আমরা একটা দল ছিলাম

জীবন কাহিনী

আমরা একটা দল ছিলাম

বলেছেন মেলবা বেরি

১৯৯৯ সালের ২রা জুলাই আমার স্বামী ও আমি, যিহোবার সাক্ষিদের এক বড় সমাবেশে উপস্থিত ছিলাম আর আমাদের ৫৭ বছরের বিবাহিত জীবনে আমরা এইরকম সমাবেশে বহুবার উপস্থিত হয়েছি। সেই শুক্রবারে লয়েড হাওয়াইয়ের জেলা সম্মেলনে শেষ বক্তৃতাটা দিচ্ছিলেন। হঠাৎ তিনি পড়ে যান। তাকে বাঁচানোর সব চেষ্টা সত্ত্বেও তিনি মারা যান। *

 হাওয়াইয়ের সেই খ্রীষ্টীয় ভাইবোনেরা কতই না প্রিয়, যারা এই কঠিন পরিস্থিতিতে আমাকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে এসেছিলেন ও এই অবস্থাকে কাটিয়ে উঠতে আমাকে সাহায্য করেছিলেন! এই ভাইবোনদের অনেকের ও সেইসঙ্গে পৃথিবীর অনেক জায়গার অন্যান্য ভাইবোনদের জীবনে লয়েড বিরাট প্রভাব ফেলেছিল।

প্রায় দুবছর হতে চলেছে তিনি মারা গেছেন। এই দুবছরে আমি আমাদের সেই মূল্যবান দিনগুলোর কথা মনে করেছি যখন আমরা বিদেশে মিশনারির ও সেইসঙ্গে নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিনে যিহোবার সাক্ষিদের প্রধান কার্যালয়ে একসঙ্গে কাজ করেছি। এছাড়াও, অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে আমার যৌবনের দিনগুলো ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রথম দিকে লয়েড ও আমি বিয়ে করার জন্য যে সমস্যাগুলো মোকাবিলা করেছিলাম সেই কথাও আমার মনে পড়েছে। কিন্তু, কীভাবে আমি একজন সাক্ষি হয়েছিলাম ও ১৯৩৯ সালে লয়েডের সঙ্গে আমার কীভাবে প্রথম দেখা হয়েছিল, সেই কথাই আগে আপনাদের বলি।

যেভাবে আমি একজন সাক্ষি হয়েছিলাম

জেমস ও হেনরিয়েটা জোন্স আমার বাবামা ছিলেন। তারা খুবই স্নেহময় ও যত্নশীল ছিলেন। ১৯৩২ সালে যখন আমার বয়স মাত্র ১৪ বছর, আমি স্কুলে যাওয়া ছেড়ে দিই। তখন সারা বিশ্ব চরম অর্থনৈতিক মন্দার মাঝামাঝি সময়ে ছিল। আমি আমার পরিবারকে সাহায্য করার জন্য চাকরি শুরু করেছিলাম যে পরিবারে আমার দুজন ছোট বোন ছিল। কয়েক বছরের মধ্যে আমি একটা ভাল চাকরি পাই যেখানে আমার অধীনে বেশ কয়েকটা অল্পবয়স্ক মহিলা কাজ করতেন।

ইতিমধ্যে, ১৯৩৫ সালে আমার মা একজন যিহোবার সাক্ষির কাছ থেকে বাইবেলের বইপত্রিকা নেন ও খুব শীঘ্রিই বুঝতে পারেন যে তিনি সত্য পেয়েছেন। আমরা পরিবারের সবাই ভেবেছিলাম যে মা পাগল হয়ে গেছেন। কিন্তু, একদিন মৃতেরা কোথায়? (ইংরেজি) এই পুস্তিকাটা আমি দেখতে পাই ও এর শিরোনামটা পড়ে কৌতূহলী হয়ে উঠি। তাই লুকিয়ে লুকিয়ে আমি এই পুস্তিকাটা পড়ি। এটা আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল! সেই সময় থেকেই আমি আমার মায়ের সঙ্গে সপ্তার মাঝামাঝি সময়ে একটা সভাতে যেতাম যাকে মডেল স্টাডি বলা হতো। মডেল স্টাডি নামের পুস্তিকাতে কিছু প্রশ্ন এবং উত্তর দেওয়া ছিল ও সেই উত্তরগুলো যে ঠিক, তা প্রমাণের জন্য কিছু শাস্ত্রপদও দেওয়া ছিল। পরে এইরকম আরও তিনটে পুস্তিকা বের হয়েছিল।

১৯৩৮ সালের এপ্রিল মাসে যিহোবার সাক্ষিদের প্রধান কার্যালয়ের একজন প্রতিনিধি জোসেফ এফ. রাদারফোর্ড সিডনিতে আসেন। তার দেওয়া জনসাধারণের বক্তৃতাই ছিল আমার শোনা প্রথম জনসাধারণের বক্তৃতা। এই বক্তৃতা সিডনি টাউন হলে দেওয়ার কথা ছিল কিন্তু আমরা যাতে এই হল ব্যবহার করতে না পারি, তার জন্য বিরোধীরা যে চেষ্টা করেছিল তাতে তারা সফল হয়েছিল। এর ফলে এই বক্তৃতা সিডনি স্পোর্টস্‌ গ্রাউন্ডে দেওয়া হয়েছিল, যেটা টাউন হলের থেকে অনেক বড় ছিল। বিরোধীরা বিষয়টাকে এত বেশি ছড়িয়ে দিয়েছিল যে এর ফলে সেখানে প্রায় ১০,০০০ লোক উপস্থিত হয়েছিলেন। আর এই সংখ্যা সত্যিই অবাক করে দেওয়ার মতো কারণ সেই সময় অস্ট্রেলিয়াতে মাত্র ১,৩০০ জন সাক্ষি ছিলেন।

এর কিছু সময় পরে কোন প্রশিক্ষণ ছাড়াই আমি প্রথম প্রচারে যাই। আমাদের দল প্রচারের এলাকায় পৌঁছানোর পর, যিনি প্রচারে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন তিনি আমাকে বলেছিলেন, “তুমি ওই বাড়িতে প্রচার করবে।” আমি এতটাই ঘাবড়ে গিয়েছিলাম যে সেই বাড়ির মহিলা যখন বেরিয়ে আসেন, তখন আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, “দয়া করে কি বলবেন এখন কটা বাজে?” সেই মহিলা ভিতরে গিয়ে সময় দেখে এসে আমাকে বলেছিলেন। শুধু এই কথাগুলো বলেই আমি সেখান থেকে চলে আসি এবং গাড়ির কাছে ফিরে যাই।

কিন্তু, আমি হাল ছেড়ে দিইনি আর তাই শীঘ্রিই আমি অন্যদের কাছে নিয়মিত রাজ্যের সংবাদ বলতে শুরু করি। (মথি ২৪:১৪) ১৯৩৯ সালের মার্চ মাসে আমাদের পাশের বাড়ির ডরোথি হাচিংসের বাথটাবে বাপ্তিস্ম নিয়ে আমি যিহোবার কাছে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলাম। যেহেতু আমাদের মণ্ডলীতে কোন ভাই ছিল না, তাই বাপ্তিস্মর পরেই আমাকে মণ্ডলীতে কিছু দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল যা সাধারণত শুধু খ্রীষ্টীয় পুরুষদেরই দেওয়া হয়।

আমরা সাধারণত কারও বাড়িতে আমাদের সভাগুলো করতাম কিন্তু জনসাধারণের বক্তৃতার জন্য কখনও কখনও হল ভাড়া করা হতো। আমাদের শাখা অফিস অর্থাৎ বেথেল থেকে একজন সুদর্শন যুবক ভাই আমাদের ছোট্ট মণ্ডলীতে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য এসেছিলেন। তার আসার আরও একটা কারণ ছিল যেটা আমি জানতাম না। তিনি আমার সম্পর্কে আরও ভালভাবে জানতে এসেছিলেন। হ্যাঁ, এভাবেই লয়েডের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল।

লয়েডের পরিবারের সঙ্গে দেখা হওয়া

তার কিছু পরেই যিহোবাকে পূর্ণ-সময় সেবা করার ইচ্ছা আমার মনে এসেছিল। কিন্তু যখন অগ্রগামীর কাজ (পূর্ণ-সময় প্রচার কাজ করা) করার জন্য আমি আবেদন করেছিলাম, আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে আমি বেথেলে কাজ করতে চাই কি না। তাই ১৯৩৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছিল তখন আমি সিডনির উপকণ্ঠে অবস্থিত স্ট্র্যাথফিল্ডের বেথেল পরিবারের একজন সদস্য হয়েছিলাম।

১৯৩৯ সালের ডিসেম্বর মাসে একটা সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য আমি নিউজিল্যান্ডে গিয়েছিলাম। যেহেতু লয়েডের বাড়ি নিউজিল্যান্ডে ছিল, তাই তিনিও সেখানে গিয়েছিলেন। আমরা একই জাহাজে করে গিয়েছিলাম এবং একে অন্যকে খুব ভালভাবে জানতে পেরেছিলাম। আমি যাতে লয়েডের মাবাবা ও বোনদের সঙ্গে ওয়েলিংটন সম্মেলনে ও পরে ক্রাইস্টচার্চে তাদের বাড়িতে দেখা করতে পারি তার ব্যবস্থা তিনি করেছিলেন।

আমাদের কাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়

১৯৪১ সালের ১৮ই জানুয়ারি শনিবার, কমনওয়েলথের কর্মকর্তারা জিনিসপত্রকে বাজেয়াপ্ত করার জন্য ছটা কালো রঙের মোটরগাড়ি চালিয়ে শাখা অফিসের দিকে আসছিলেন। বেথেলে ঢোকার মুখেই একটা ছোট্ট বিল্ডিং ছিল আর যেহেতু আমি সেখানে কাজ করছিলাম, তাই আমি-ই তাদের প্রথম দেখেছিলাম। প্রায় ১৮ ঘন্টা আগেই যেহেতু বেথেলকে নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে জানানো হয়েছিল, তাই সব বইপত্রিকা ও ফাইলগুলো শাখা অফিস থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছিল। পরের সপ্তায় বেথেল পরিবারের পাঁচজন সদস্যকে জেলে পাঠানো হয়েছিল, যাদের মধ্যে লয়েডও ছিলেন।

আমি জানতাম যে জেলে ভাইদের আধ্যাত্মিক খাবারেরই বেশি প্রয়োজন ছিল। লয়েডকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য তাকে “প্রেমপত্র” লিখব বলে আমি ঠিক করি। প্রেমপত্র যেভাবে লেখে সেইভাবে আমি লেখা শুরু করি কিন্তু পরে প্রহরীদুর্গ এর সব প্রবন্ধগুলোকে পত্রে টুকে দিই ও তার প্রিয়তমা বলে সেই পত্র শেষ করি। সাড়ে চার মাস পরে লয়েড জেল থেকে ছাড়া পেয়েছিলেন।

বিয়ে ও পরে পূর্ণ-সময়ের কাজ

১৯৪০ সালে, লয়েডের মা অস্ট্রেলিয়াতে এসেছিলেন ও আমরা যে বিয়ে করব বলে চিন্তা করছি, তা লয়েড তার মাকে বলেছিলেন। তার মা এতে রাজি হননি কারণ সেই সময় মনে করা হচ্ছিল যে বিধিব্যবস্থার শেষ এগিয়ে আসছে। (মথি ২৪:৩-১৪) বন্ধুদের কাছেও তিনি তার এই ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন কিন্তু প্রত্যেক বার তারা তাকে বিয়ে না করার জন্য পরামর্শ দিয়েছিল। ১৯৪২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের কোন একদিন লয়েড লুকিয়ে আমাকে ও চারজন সাক্ষিকে যারা আমাদের কথা গোপন রাখবে বলে কথা দিয়েছিলেন, তাদের রেজিস্ট্রি অফিসে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং সেখানে আমাদের বিয়ে হয়েছিল। সেই সময় অস্ট্রেলিয়াতে যিহোবার সাক্ষিদের মধ্যে এমন কেউ ছিলেন না, যিনি বিয়ে রেজিস্ট্রি করতে পারেন।

যদিও বিয়ের পর আমাদেরকে বেথেল ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা বলা হয়েছিল কিন্তু বিশেষ অগ্রগামীর কাজ করতে আমরা ইচ্ছুক কি না, তা আমাদেরকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। তাই ওয়াগা ওয়াগা গ্রামে গিয়ে অগ্রগামীর কাজ করার দায়িত্বকে আমরা আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করেছিলাম। আমাদের প্রচার কাজে তখনও নিষেধাজ্ঞা ছিল ও আমাদের হাতে কোন পয়সাকড়ি ছিল না, তাই সত্যি সত্যিই আমাদের সম্পূর্ণ ভার যিহোবার ওপরে ছেড়ে দিতে হয়েছিল।—গীতসংহিতা ৫৫:২২.

দুই সিটের সাইকেলে চড়ে আমরা গ্রামে গ্রামে যেতাম আর সেখানে আমরা কিছু ভাল লোকেদের দেখা পেতাম ও তাদের সঙ্গে অনেক সময় ধরে আলোচনা করতাম। খুব কম লোকই বাইবেল অধ্যয়ন করতে রাজি হয়েছিল। কিন্তু, একজন দোকানদার আমাদের কাজকে এতই প্রশংসা করেছিলেন যে প্রত্যেক সপ্তায় তিনি আমাদেরকে ফল ও শাকসবজি দিতেন। ওয়াগা ওয়াগাতে ছমাস কাজ করার পর আমাদেরকে আবার বেথেলে ডাকা হয়েছিল।

১৯৪২ সালের মে মাসে বেথেল পরিবারকে স্ট্র্যাথফিল্ড শাখা অফিস থেকে সরিয়ে নিয়ে বাড়িতে বাড়িতে রাখা হয়েছিল। তাদের যাতে খুঁজে না পাওয়া যায় তার জন্য কয়েক সপ্তা পর তারা একজনের বাড়ি থেকে আরেকজনের বাড়িতে গিয়ে থাকতেন। লয়েড ও আমি যখন আগস্ট মাসে বেথেলে ফিরে এসেছিলাম, আমরা এই জায়গাগুলোর একটাতে তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলাম। সেই সময়ে গোপনে যে ছাপাখানা শুরু করা হয়েছিল তার একটাতে দিনের বেলায় কাজ করার দায়িত্ব আমাদের দেওয়া হয়েছিল। শেষে ১৯৪৩ সালের জুন মাসে আমাদের কাজের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছিল।

মিশনারি কাজের জন্য প্রস্তুতি

১৯৪৭ সালের এপ্রিল মাসে, যুক্তরাস্ট্র নিউ ইয়র্কের সাউথ ল্যানসিংয়ে ওয়াচটাওয়ার বাইবেল স্কুল অফ গিলিয়েডে যোগ দেওয়ার জন্য আমাদেরকে প্রাথমিক আবেদনপত্র দেওয়া হয়েছিল। ইতিমধ্যে, অস্ট্রেলিয়ার কিছু মণ্ডলীতে গিয়ে সেখানকার ভাইবোনদের আধ্যাত্মিকভাবে শক্তিশালী করার জন্য আমাদেরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এর কয়েক মাস পরে আমাদের ১১তম গিলিয়েড ক্লাসের জন্য ডাকা হয়েছিল। সব জরুরি কাজ সেরে নেওয়ার ও জিনিসপত্র গুছানোর জন্য আমাদের হাতে তিন সপ্তা ছিল। ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর মাসে আমরা নিজেদের পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের ছেড়ে অস্ট্রেলিয়া থেকে আরও ১৫ জন ভাইবোনদের সঙ্গে নিউ ইয়র্কের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছিলাম, যাদেরকে এই একই ক্লাসের জন্য ডাকা হয়েছিল।

গিলিয়েড স্কুলের কয়েকটা মাস খুব তাড়াতাড়ি কেটে গিয়েছিল ও আমাদেরকে জাপানে মিশনারি হিসেবে কাজ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। জাপানে যাওয়ার জন্য আমাদের কাগজপত্র তৈরি করতে যেহেতু কিছু সময় লেগেছিল, তাই লয়েডকে আরেকবার যিহোবার সাক্ষিদের ভ্রমণ অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। যে মণ্ডলীগুলোতে আমাদের ভ্রমণ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল সেগুলো লস এঞ্জেলস শহর থেকে শুরু করে ম্যাক্সিকোর সীমান্ত পর্যন্ত ছড়িয়ে ছিল। আমাদের কোন গাড়ি ছিল না, তাই প্রত্যেক সপ্তায় সাক্ষিরা আমাদেরকে এক মণ্ডলী থেকে আরেক মণ্ডলীতে পৌঁছে দিয়ে আসতেন। ওই বড় সীমার মধ্যে যে এলাকা ছিল আজ তা তিনটে ইংরেজি ও তিনটে স্প্যানিস জেলা-র অংশ, যার প্রত্যেকটা জেলা দশটা সীমা নিয়ে তৈরি!

১৯৪৯ সালের অক্টোবর মাসে হঠাৎ করে আমরা সব মিশনারিরা জাপানে যাওয়ার জন্য একটা জাহাজে চড়ে যাত্রা শুরু করেছিলাম, যে জাহাজে আগে সেনাবাহিনীদের নিয়ে যাওয়া হতো। জাহাজের একটা দিক ছেলেদের ও আরেক দিক মেয়েদের ও বাচ্চাদের জন্য ছিল। ইয়োকোহামা পৌঁছানোর মাত্র একদিন আগে আমরা এক ঝড়ের মুখে পড়ি। এটা হওয়াতে অবশ্য আকাশ পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল, কারণ পরের দিন ৩১শে অক্টোবরে যখন সূর্য ওঠে তখন আমরা ফুজি পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখতে পেয়েছিলাম। আমাদের নতুন কাজের জন্য কী চমৎকারভাবেই না অভ্যর্থনা জানানো হয়েছিল!

জাপানিদের সঙ্গে কাজ করা

বন্দরের কাছাকাছি এসে আমরা হাজার হাজার কালো চুলের লোকেদেরকে দেখতে পেয়েছিলাম। আমরা যখন দুমদাম আওয়াজ শুনি তখন ভেবেছিলাম ‘এই লোকেরা কত আওয়াজ-ই না করে!’ প্রত্যেকে এমন জুতো পরেছিল যার তলায় কাঠ লাগানো ছিল আর সেটাই কাঠের তৈরি ঘাটে দুমদাম আওয়াজ করছিল। ইয়োকোহামাতে এক রাত থেকে কোবেতে আমাদের মিশনারি কাজে যাওয়ার জন্য ট্রেনে চড়েছিলাম। সেখানে ডন হ্যাসলেট, যিনি আমাদের সঙ্গে একই গিলিয়েড ক্লাসে ছিলেন ও কিছু মাস আগে জাপানে পৌঁছেছিলেন তিনি মিশনারিদের থাকার জন্য একটা ঘর ভাড়া নিয়েছিলেন। সেই ঘরটা খুবই সুন্দর, বড়, পাশ্চাত্য ধাঁচে তৈরি দোতলা ঘর ছিল, যেখানে কোন আসবাবপত্র ছিল না!

বিছানা করে শোয়ার জন্য আমরা ঘরের চারপাশে যে লম্বা লম্বা ঘাস ছিল সেগুলো কেটে ঘরের মেঝেতে বিছিয়ে দিয়েছিলাম। এইভাবেই আমাদের সঙ্গে শুধু যা ছিল তা নিয়েই আমাদের মিশনারি জীবন শুরু হয়েছিল। ঘরকে গরম রাখার ও রান্না করার জন্য আমরা কাঠকয়লার কয়েকটা ছোট্ট উনুন জোগাড় করেছিলাম যাকে হিবাচি বলা হতো। একদিন রাতে লয়েড দেখেন যে পারসি ও ইলমা ইজলোব নামে দুজন মিশনারি অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছেন। একটু সতেজ ও ঠাণ্ডা হাওয়ার জন্য তিনি যখন জানালা খুলে দেন তখন তাদের জ্ঞান ফিরে আসে। কাঠকয়লার উনুনে রান্না করতে গিয়ে আমিও একবার অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলাম। কিছু কিছু বিষয়ে অভ্যস্ত হতে একটু সময় লেগেছিল!

ভাষা শেখাই ছিল সবচেয়ে প্রথম কাজ আর তাই এক মাস ধরে আমরা প্রতিদিন ১১ ঘন্টা করে জাপানি ভাষা শিখেছিলাম। শেখার এক মাস পরে আমরা প্রচার শুরু করি ও প্রচারে বলার জন্য আমরা একটা বা দুটো লাইন লিখে নিয়ে যেতাম। প্রথমদিন প্রচারে গিয়ে এক সুন্দরী মহিলা মিও তাকাগির সঙ্গে আমার দেখা হয়, যিনি আমাকে তার ঘরে ডেকেছিলেন। পুনর্সাক্ষাতের সময়গুলোতে মিও ও আমি জাপানি থেকে ইংলিশ ডিকশনারির সাহায্যে খুব কষ্ট করে কথাবার্তা বলতাম আর এতে একটা ভাল বাইবেল অধ্যয়ন শুরু হয়েছিল। ১৯৯৯ সালে জাপানের শাখা অফিসের নতুন বিল্ডিংগুলোর উৎসর্গীকরণে যোগ দেওয়ার সময় মিও ও সেই প্রিয়জনদের সঙ্গে আবারও আমার দেখা হয়, যাদের সঙ্গে আমি অধ্যয়ন করেছিলাম। পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে গেছে কিন্তু এখনও উদ্যোগী রাজ্যের ঘোষণাকারী হিসেবে যিহোবাকে সেবা করার জন্য তারা তাদের যথাসাধ্য করে যাচ্ছেন।

১৯৫০ সালের ১লা এপ্রিলে, কোবেতে খ্রীষ্টের মৃত্যুর স্মরণার্থক সভায় প্রায় ১৮০ জন উপস্থিত ছিলেন। আমরা দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম যে পরের দিন সকালে ৩৫ জন প্রচারে অংশ নেওয়ার জন্য এসেছিলেন। একেকজন মিশনারি তিন কি চারজন নতুনদের নিয়ে প্রচার করেছিলেন। গৃহকর্তারা আমার সঙ্গে কথা বলেননি কারণ একজন বিদেশি হওয়ায় আমি তাদের ভাষা খুব বেশি বুঝতে পারতাম না কিন্তু তারা স্মরণার্থক সভায় আসা সেই জাপানিদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন, যারা আমার সাথে প্রচারে এসেছিলেন। তারা অনেকক্ষণ আলোচনা চালিয়ে গিয়েছিলেন কিন্তু তারা কী আলোচনা করছিলেন তা আমি বুঝতে পারিনি। তবে এটা বলতে পেরে আমি খুশি যে এই নতুন ব্যক্তিদের মধ্যে কিছুজনের জ্ঞান বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং এখনও তারা তাদের প্রচার কাজ করে চলেছেন।

অনেক বিশেষ সুযোগ ও কাজ

১৯৫২ সাল পর্যন্ত আমরা কোবেতে মিশনারি কাজ চালিয়ে গিয়েছিলাম। এই সময়ে আমাদের টোকিওতে কাজ করার জন্য পাঠানো হয়েছিল, যেখানে লয়েডকে শাখা অফিস দেখাশোনা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এক সময় তার কাজের জন্য তাকে জাপানের সর্বত্র ও আরও অন্যান্য দেশগুলোতে যেতে হয়েছিল। পরে প্রধান কার্যালয় থেকে নেথেন এইচ. নর যখন একবার টোকিওতে এসেছিলেন তখন তিনি আমাকে বলেছিলেন: “আপনি কি জানেন এইবারের জোন ভ্রমণে আপনার স্বামী কোথায় যাচ্ছেন? অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড।” তিনি আরও বলেছিলেন: “আপনিও যেতে পারেন যদি আপনার যাওয়ার খরচ আপনি নিজে বহন করেন।” এই কথা শুনে কী যে ভাল লেগেছিল! আর কেনই বা লাগবে না, ঘর ছেড়ে প্রায় ন-বছর হয়ে গিয়েছিল।

চিঠি লিখে আমরা নিজেদের পরিবারের সঙ্গে তাড়াতাড়ি যোগাযোগ করেছিলাম। আমার জন্য টিকিট কিনতে মা আমাকে সাহায্য করেছিলেন। লয়েড ও আমি আমাদের দায়িত্ব নিয়ে এতই ব্যস্ত ছিলাম যে পরিবারের সঙ্গে দেখা করার জন্য আমাদের কাছে পয়সা ছিল না। তাই এই সাহায্যের দ্বারা আমার প্রার্থনার উত্তর আমি পেয়েছিলাম। আপনারা হয়তো বুঝতে পারছেন যে মা আমাকে দেখে কত খুশি হয়েছিলেন! তিনি বলেছিলেন, “আমি পয়সা জমাবো যাতে তিন বছর পর তুই আবার আসতে পারিস।” এই কথা মনে রেখে আমরা সেখান থেকে বিদায় নিই কিন্তু দুঃখের কথা যে পরের জুলাইয়ে তিনি মারা যান। নতুন জগতে আবার তাকে দেখার কী অপূর্ব আশাই না আমার আছে!

১৯৬০ সাল পর্যন্ত শুধু মিশনারি কাজই আমি করছিলাম কিন্তু তার পর আমি একটা চিঠি পেয়েছিলাম যেটাতে বলা হয়েছিল: “আজকে থেকে আপনি পুরো বেথেল পরিবারের কাপড় ধোবেন ও ইস্ত্রি করবেন।” সেই সময় আমাদের বেথেল পরিবারে মাত্র ১২ জন ছিলেন তাই মিশনারি কাজের সঙ্গে এই কাজও আমি করতে পেরেছিলাম।

১৯৬২ সালে জাপানি ধাঁচে তৈরি আমাদের ঘরটা ভেঙে ফেলা হয়েছিল ও পরের বছর সেই একই জায়গায় ছতলার এক নতুন বেথেল ঘর তৈরি শেষ হয়েছিল। বেথেলের নতুন যুবক ভাইদের নিজেদের কামরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে ও কাপড়চোপড় গুছিয়ে রাখতে, থালাবাটি ধুতে ও আরও অন্যান্য ঘরের কাজ শেখানোর দায়িত্ব আমাকে দেওয়া হয়েছিল। জাপানে সাধারণত ছেলেদের ঘরেতে কিছুই করতে শেখানো হয় না। পড়াশোনার ওপর বেশি জোর দেওয়া হতো বলে মায়েরা-ই তাদের সব কাজ করে দিতেন। তারা খুব তাড়াতাড়ি বুঝতে পেরেছিল যে মায়েদের মতো আমি তাদের সব কাজ করে দেব না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এদের অনেকেই উন্নতি করেছিল এবং সংগঠনের মধ্যে নতুন ও দায়িত্বপূর্ণ কাজ নিয়েছিল।

প্রচণ্ড গরমের সময় একদিন, একজন বাইবেল ছাত্র আমাদের শাখা অফিস ঘুরে দেখেছিলেন ও সেই সময় তিনি আমাকে বাথরুম পরিষ্কার করতে দেখেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “দয়া করে যিনি দায়িত্বে আছেন তাকে বলবেন যে আপনার কাজটা এক ঝি এসে করে দেবে আর তার পয়সা আমি দেব।” আমি তাকে বলেছিলাম, এই বিষয়ে চিন্তা করার জন্য অনেক ধন্যবাদ, কিন্তু যিহোবার সংগঠনে যে কোন কাজ করতে সবসময় আমি তৈরি।

ঠিক এই সময় লয়েড ও আমি গিলিয়েডের ৩৯তম ক্লাসে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ পাই! ১৯৬৪ সালে ৪৬ বছর বয়সে আবার স্কুলে যাওয়ার কত বড় এক সুযোগই না ছিল! এই ক্লাসটা বিশেষ করে তাদেরকে সাহায্য করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল, যারা শাখা অফিসগুলোতে বিভিন্ন কাজের দায়িত্বে ছিলেন। দশ মাস ক্লাস হওয়ার পর আমাদের আবারও জাপানে কাজ করতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই সময় পর্যন্ত সেখানে ৩,০০০ এর বেশি রাজ্য ঘোষণাকারীরা ছিলেন।

উন্নতি এত দ্রুত গতিতে হতে থাকে যে ১৯৭২ সালের মধ্যে ১৪,০০০ এরও বেশি সাক্ষি সেখানে ছিলেন ও টোকিওর দক্ষিণে নুমাজুতে নতুন পাঁচ তলার এক শাখা আফিস তৈরি করা হয়েছিল। আমাদের বিল্ডিং থেকে ফুজি পাহাড়ের অপূর্ব দৃশ্য আমরা দেখতে পেতাম। নতুন বড় রোটারি ছাপাখানায় প্রতি মাসে দশ লক্ষেরও বেশি জাপানি ভাষায় পত্রিকা ছাপানো শুরু হয়েছিল। কিন্তু আমাদের জন্য এক পরিবর্তন অপেক্ষা করছিল।

১৯৭৪ সালের শেষ দিকে যিহোবার সাক্ষিদের ব্রুকলিনের প্রধান কার্যালয় থেকে লয়েড একটা চিঠি পেয়েছিলেন যেটাতে তাকে পরিচালক গোষ্ঠীতে সেবা করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। প্রথমে আমি ভেবেছিলাম: ‘এখানেই আমাদের একসঙ্গে থাকা শেষ। যেহেতু লয়েডের স্বর্গীয় এবং আমার পার্থিব আশা আছে, তাই একদিন না একদিন আমাদের একে অন্যকে ছাড়তেই হতো। হয়তো লয়েডের আমাকে ছেড়ে ব্রুকলিনে যাওয়া উচিত।’ কিন্তু, খুব শীঘ্রিই আমি নিজের চিন্তাধারা পালটেছিলাম ও ১৯৭৫ সালের মার্চ মাসে খুশি মনে লয়েডের সঙ্গে গিয়েছিলাম।

প্রধান কার্যালয়ে পাওয়া আশীর্বাদগুলো

এমনকি ব্রুকলিনে এসেও লয়েডের মন জাপানেই পড়েছিল এবং সেখানে আমাদের যা যা অভিজ্ঞতা হয়েছিল, তা তিনি সবসময়ই বলতেন। কিন্তু এখন কাজ করার আরও অনেক সুযোগ আছে। তার জীবনের শেষ ২৪টা বছর লয়েডকে জোন কাজের জন্য অনেকভাবে ব্যবহার করা হয়েছিল আর এর জন্য তাকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করতে হয়েছিল। এই সময় তার সঙ্গে আমি পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণে গিয়েছিলাম।

বিভিন্ন দেশের খ্রীষ্টান ভাইদের কাছে যাওয়ায় আমি উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম যে তারা কী পরিস্থিতিতে থাকেন ও কীভাবে কাজ করেন। দশ বছরের মেয়ে এনটেলিয়া, যার সঙ্গে আমার উত্তর আফ্রিকায় দেখা হয়েছিল তার চেহারা আমি কখনোই ভুলবো না। সে ঈশ্বরের নামকে ভালবাসত ও খ্রীষ্টীয় সভাগুলোতে আসার জন্য তিন ঘন্টার পথ হেঁটে আসাযাওয়া করত। পরিবার থেকে প্রচণ্ড তাড়না আসা সত্ত্বেও এনটেলিয়া নিজেকে যিহোবার কাছে উৎসর্গ করেছিল। আমরা যখন তার মণ্ডলীতে গিয়েছিলাম সেখানে বক্তার নোটের ওপর কম পাওয়ারের মাত্র একটা বাল্ব ঝুলতে দেখেছিলাম আর সভার জায়গা ঘুটঘুটে অন্ধকার ছিল। সেই ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যেও ভাইবোনদের গলায় সুন্দর গান শোনা সত্যিই শিহরণ জাগাতো।

১৯৯৮ সালের ডিসেম্বর মাসে আমাদের জীবনে এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছিল যখন কিউবাতে “জীবনের জন্য ঈশ্বরের পথ” জেলা সম্মেলনগুলোতে কিছু প্রতিনিধিদের মধ্যে লয়েড ও আমি ছিলাম। ব্রুকলিন প্রধান কার্যালয় থেকে কিছুজন তাদের কাছে এসেছেন বলে ভাইবোনেরা যে কৃতজ্ঞতা ও আনন্দ প্রকাশ করেছিলেন, তা আমাদের মনে কত গভীর ছাপই না ফেলেছিল! প্রিয়জনেরা যারা উদ্যোগের সঙ্গে যিহোবার প্রশংসা করে চলেছেন তাদের সঙ্গে দেখা হওয়ার সেই স্মৃতিগুলো আমার চিরকাল মনে থাকবে।

ঈশ্বরের লোকেদের মাঝে আমি স্বচ্ছন্দ বোধ করি

যদিও আমার বাড়ি অস্ট্রেলিয়াতে কিন্তু যিহোবার সংগঠন আমাকে যেখানেই পাঠিয়েছে সেখানকার লোকেদেরকে আমি ভালবেসেছিলাম। জাপানের ভাইবোনদের আমি ভালবেসেছিলাম ও ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে আমি আমেরিকাতে আছি আর এখানকার ভাইবোনদেরকেও আমি একইরকমভাবে ভালবাসি। আমার স্বামীকে হারানোর পর অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে যাওয়ার কথা আমি ভাবিনি কিন্তু ব্রুকলিন বেথেলেই থাকব বলে ঠিক করি, যেখানে যিহোবা আমাকে কাজ দিয়েছেন।

আমার বয়স এখন ৮০-র কোঠায়। ৬১ বছর পূর্ণ-সময়ের কাজ করার পর এখনও যেখানে যিহোবা আমাকে কাজে লাগাতে পারেন সেখানে আমি কাজ করতে চাই। তিনি আমার খুব ভালভাবে যত্ন নিয়েছেন। ৫৭ বছরের বেশি সময় আমার প্রিয় সঙ্গী যিনি যিহোবাকে ভালবাসতেন তার সঙ্গে থাকার যে স্মৃতিগুলো আছে, তা আমি মনে ধরে রাখব। যিহোবা যে আমাদের আশীর্বাদ করে যাবেন সেই বিষয়ে আমার পুরো ভরসা আছে ও আমি জানি আমরা যে কাজ করেছি ও তাঁর নামের প্রতি যে প্রেম দেখিয়েছি, তা তিনি ভুলে যাবেন না।—ইব্রীয় ৬:১০.

[পাদটীকা]

^ ১৯৯৯ সালের ১লা অক্টোবর প্রহরীদুর্গ এর ১৬ ও ১৭ পৃষ্ঠা দেখুন।

[২৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

১৯৫৬ সালে মায়ের সঙ্গে

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

১৯৫০ দশকের শুরুতে লয়েড ও এক দল জাপানি প্রকাশকদের সঙ্গে

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

১৯৫০ দশকের শুরুতে এবং ১৯৯৯ সালে জাপানে আমার প্রথম বাইবেল ছাত্রী, মিও তাকাগির সঙ্গে

[২৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

লয়েডের সঙ্গে জাপানে পত্রিকা দেওয়ার কাজে