সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“যিহোবার বাক্য বৃদ্ধি পাইতে . . . থাকিল”

“যিহোবার বাক্য বৃদ্ধি পাইতে . . . থাকিল”

“যিহোবার বাক্য বৃদ্ধি পাইতে . . . থাকিল”

“তিনি পৃথিবীতে আপন আজ্ঞা পাঠান, তাঁহার বাক্য বেগে ধাবমান হয়।”গীতসংহিতা ১৪৭:১৫.

১, ২. যীশু তাঁর শিষ্যদের কোন্‌ দায়িত্ব দিয়েছিলেন আর এর সঙ্গে কী কী জড়িত ছিল?

 বাইবেলের সবচেয়ে চমৎকার ভবিষ্যদ্বাণীগুলোর মধ্যে একটা প্রেরিত ১:৮ পদে পাওয়া যায়। যীশু স্বর্গে যাবার অল্প কিছুদিন আগে তাঁর বিশ্বস্ত অনুগামীদের বলেছিলেন: “পবিত্র আত্মা তোমাদের উপরে আসিলে তোমরা শক্তি প্রাপ্ত হইবে; আর তোমরা . . . পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত আমার সাক্ষী হইবে।” কত বড় কাজই না তা হবে!

যে অল্প কয়েকজন শিষ্যকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তাদের কাছে সারা পৃথিবীতে ঈশ্বরের বাক্য ঘোষণা করা একটা কঠিন কাজ বলেই মনে হয়েছিল। এর সঙ্গে কী কী জড়িত ছিল, তা একটু ভেবে দেখুন। ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার বোঝার জন্য লোকেদেরকে তাদের সাহায্য করতে হতো। (মথি ২৪:১৪) যীশুর বিষয়ে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য তাদেরকে অন্যদের কাছে তাঁর প্রভাবশালী শিক্ষা এবং যিহোবার উদ্দেশ্যে তাঁর যে ভূমিকা রয়েছে সেই বিষয়ে শেখাতে হয়েছিল। এছাড়া, এই কাজের সঙ্গে লোকেদের শিষ্য করা ও বাপ্তিস্ম দেওয়াও জড়িত ছিল। আর তা সারা পৃথিবীতে করার দরকার ছিল!—মথি ২৮:১৯, ২০.

৩. যীশু তাঁর অনুগামীদের কী আশ্বাস দিয়েছিলেন এবং তাদেরকে যে কাজ দেওয়া হয়েছিল তাতে তারা কীভাবে সাড়া দিয়েছিলেন?

তাই, যীশু তাঁর অনুগামীদের আশ্বাস দিয়েছিলেন যে তিনি তাদেরকে যে কাজ দিয়েছেন সেই কাজ করতে পবিত্র আত্মা তাদেরকে সাহায্য করবে। এত বড় দায়িত্ব এবং সেই কাজ থামিয়ে দেওয়ার জন্য প্রচণ্ড ও হিংস্র তাড়নার মধ্যেও যীশুর প্রথম শতাব্দীর শিষ্যরা সফলভাবে তাঁর দেওয়া কাজ করেছিলেন। এটা এক বাস্তব ইতিহাস, যেটাকে অস্বীকার করা যায় না।

৪. অন্যদের কাছে প্রচার ও শিক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব কীভাবে ঈশ্বরের প্রেমের প্রকাশ ছিল?

সারা পৃথিবীতে প্রচার ও শিক্ষা দেওয়ার অভিযান ছিল সেই লোকেদের প্রতি ঈশ্বরের প্রেমের প্রকাশ, যারা তাঁর সম্বন্ধে জানত না। এটা তাদেরকে যিহোবার সঙ্গে কাছের সম্পর্ক গড়ে তোলার এবং পাপের ক্ষমা পাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিল। (প্রেরিত ২৬:১৮) এছাড়াও প্রচার ও শিক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব দেখিয়েছিল যে, যারা এই বার্তা লোকেদের কাছে নিয়ে যান তাদেরকে ঈশ্বর ভালবাসেন কারণ এটা তাদেরকে যিহোবার প্রতি ভক্তি প্রকাশ এবং মানুষের জন্য ভালবাসা দেখানোর সুযোগ করে দিয়েছিল। (মথি ২২:৩৭-৩৯) খ্রীষ্টীয় পরিচর্যাকে প্রেরিত পৌল এতটা মূল্য দিতেন যে তিনি এটাকে “ধন” বলেছিলেন।—২ করিন্থীয় ৪:৭.

৫. (ক) প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানদের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ইতিহাস আমরা কোথায় পাই আর সেখানে কেমন বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে? (খ) আজকে ঈশ্বরের দাসদের জন্য প্রেরিত পুস্তক কেন অর্থ রাখে?

প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানদের প্রচার কাজের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ইতিহাস ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত বই প্রেরিত পুস্তকে পাওয়া যায়, যা শিষ্য লূক লিখেছিলেন। এই বইয়ে বিস্ময়কর ও দ্রুত বৃদ্ধির বিবরণ রয়েছে। ঈশ্বরের বাক্যের জ্ঞানের বৃদ্ধি, গীতসংহিতা ১৪৭:১৫ পদের কথাগুলো আমাদের মনে করিয়ে দেয়, যেখানে বলা আছে: “[যিহোবা] পৃথিবীতে আপন আজ্ঞা পাঠান, তাঁহার বাক্য বেগে ধাবমান হয়।” প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানরা পবিত্র আত্মার মাধ্যমে শক্তি পেয়েছিলেন আর তাদের বিবরণ আজকে আমাদের জন্য খুবই রোমাঞ্চকর ও সেইসঙ্গে এক বিরাট অর্থ রাখে। যিহোবার সাক্ষিরা প্রচার ও শিষ্য তৈরি করার একই কাজ করছেন, তবে আমাদের কাজ প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানদের চেয়ে আরও বড় আকারে হচ্ছে। তারা যেরকম সমস্যায় পড়েছিলেন, আমরাও সেই একইরকম সমস্যায় পড়ি। প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানদের যিহোবা কীভাবে আশীর্বাদ করেছিলেন ও শক্তি দিয়েছিলেন, তা আলোচনা করলে তাঁর সাহায্যের ওপর আমাদের বিশ্বাস আরও মজবুত হয়।

শিষ্যদের সংখ্যা বৃদ্ধি

৬. বৃদ্ধি সম্বন্ধে প্রেরিত পুস্তকে কোন্‌ তিনটে কথা পাওয়া যায় আর এর থেকে কী বোঝা যায়?

“ঈশ্বরের [“যিহোবার,” NW] বাক্য বৃদ্ধি পাইতে . . . থাকিল” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) কথাগুলো নিয়ে আলোচনা করা হল প্রেরিত ১:৮ পদের পরিপূর্ণতা পরীক্ষা করার একটা উপায়। এই কথাগুলোই একটু আলাদাভাবে বাইবেলে মাত্র তিনবার রয়েছে আর প্রতিবারই তা প্রেরিত পুস্তকে পাওয়া যায়। (প্রেরিত ৬:৭; ১২:২৪; ১৯:২০) এই পদগুলোতে “যিহোবার বাক্য” অথবা “ঈশ্বরের বাক্য” বলতে সুসমাচারকে বোঝায়, যা হল ঈশ্বর সম্বন্ধে সত্যের রোমাঞ্চকর, জীবন্ত ও প্রভাবশালী বার্তা আর যারা এটাকে মেনে নেয় তাদের জীবনকে তা পালটে দেয়।—ইব্রীয় ৪:১২.

৭. প্রেরিত ৬:৭ পদে ঈশ্বরের বাক্যের বৃদ্ধির সঙ্গে কোন্‌ বিষয়টা জড়িত আর সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনে কী হয়েছিল?

ঈশ্বরের বাক্যের বৃদ্ধির কথা প্রথমে প্রেরিত ৬:৭ পদে পাওয়া যায়। সেখানে আমরা পড়ি: “আর ঈশ্বরের বাক্য ব্যাপিয়া গেল, এবং যিরূশালেমে শিষ্যদের সংখ্যা অতিশয় বৃদ্ধি পাইতে লাগিল; আর যাজকদের মধ্যে বিস্তর লোক বিশ্বাসের বশবর্ত্তী হইল।” এখানে শিষ্যদের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে বৃদ্ধি জড়িত। আগে সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনে ওপরের এক কুঠরীতে সমবেত হওয়া ১২০ জন শিষ্যের ওপর ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা সেচন করা হয়েছিল। এরপর প্রেরিত পিতর একটা উদ্দীপনামূলক বক্তৃতা দিয়েছিলেন আর যারা তা শুনেছিলেন তাদের মধ্যে প্রায় ৩,০০০ লোক সেই দিনই বিশ্বাসী হয়েছিলেন। যীশুর নামে বাপ্তিস্ম নেওয়ার জন্য হাজার হাজার লোকেরা যখন যিরূশালেম ও এর আশেপাশের জলাশয়গুলোতে যাচ্ছিলেন, তখন সেখানে কত হইচই-ই না পড়ে গিয়েছিল কারণ মাত্র ৫০ দিন আগে এই যীশুকেই একজন অপরাধী হিসেবে যাতনাদণ্ডে বিদ্ধ করা হয়েছিল!—প্রেরিত ২:৪১.

৮. সাধারণ কাল ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনের পরের বছরগুলোতে শিষ্যদের সংখ্যা কীভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল?

অবশ্য, সেটা কেবলমাত্র শুরু ছিল। প্রচার কাজকে বন্ধ করে দেওয়ার জন্য যিহুদি ধর্মীয় নেতাদের কঠোর চেষ্টা একেবারে ব্যর্থ হয়ে গিয়েছিল। ওই নেতাদের নিরাশ করে দিয়ে “যাহারা পরিত্রাণ পাইতেছিল, প্রভু দিন দিন তাহাদিগকে [শিষ্যদের] সহিত সংযুক্ত করিতেন।” (প্রেরিত ২:৪৭) শীঘ্রিই “পুরুষদের সংখ্যা কমবেশ পাঁচ হাজার হইল।” এরপরে “উত্তর উত্তর অনেক পুরুষ ও স্ত্রীলোক বিশ্বাসী হইয়া প্রভুতে সংযুক্ত হইতে লাগিল।” (প্রেরিত ৪:৪; ৫:১৪) আমরা পড়ি কিছুদিন পর: “যিহূদিয়া, গালীল ও শমরিয়ার সর্ব্বত্র মণ্ডলী শান্তিভোগ করিতে ও গ্রথিত হইতে লাগিল, এবং প্রভুর ভয়ে ও পবিত্র আত্মার আশ্বাসে চলিতে চলিতে বহুসংখ্যক হইয়া উঠিল।” (প্রেরিত ৯:৩১) কয়েক বছর পর খুব সম্ভবত সা.কা. ৫৮ সাল সম্বন্ধে আমরা দেখি যে তখন “কত সহস্র লোক বিশ্বাসী হইয়াছে।” (প্রেরিত ২১:২০) সেই সময়ের মধ্যে অনেক পরজাতীয়েরাও বিশ্বাসী হয়েছিলেন।

৯. প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানদের কথা আপনি কীভাবে বলবেন?

মূলত ধর্মান্তরিত হওয়ার মাধ্যমেই শিষ্যদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছিল। ওই ধর্মটা নতুন হলেও খুবই সক্রিয় ছিল। শিষ্যরা গির্জার নিষ্ক্রিয় সদস্যদের মতো ছিলেন না বরং যিহোবা ও তাঁর বাক্যের প্রতি একনিষ্ঠ ছিলেন। আর কখনও কখনও তারা এমন ব্যক্তিদের কাছ থেকে সত্য শিখেছিলেন, যারা একসময় প্রচণ্ড তাড়না ভোগ করেছিলেন। (প্রেরিত ১৬:২৩, ২৬-৩৩) যারা খ্রীষ্টধর্মকে মেনে নিয়েছিলেন তারা যুক্তি খাটিয়ে ও সমস্ত কিছু বুঝেশুনেই তা করেছিলেন। (রোমীয় ১২:১) তারা ঈশ্বরের পথে শিক্ষা পেয়েছিলেন; তাদের মন ও হৃদয়ে সত্য ছিল। (ইব্রীয় ৮:১০, ১১) তারা যা বিশ্বাস করতেন, তার জন্য তারা মরতেও রাজি ছিলেন।—প্রেরিত ৭:৫১-৬০.

১০. প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানরা কোন্‌ দায়িত্ব মেনে নিয়েছিলেন আর আমাদের দিনের সঙ্গে এর কী মিল রয়েছে?

১০ খ্রীষ্টীয় শিক্ষাকে যারা মেনে নিয়েছিলেন তারা বুঝতে পেরেছিলেন যে অন্যদেরকে সত্য জানানো তাদের দায়িত্ব। এই কাজই শিষ্যদের সংখ্যা বৃদ্ধিতে সরাসরি অবদান রেখেছিল। একজন বাইবেল পণ্ডিত বলেছিলেন: “বিশ্বাসের কথা অন্যদেরকে জানানো শুধু খুবই উদ্যোগী ব্যক্তিদের অথবা যারা সুসমাচার প্রচারের জন্য নিযুক্ত ছিলেন, তাদের একার দায়িত্ব ছিল না। সুসমাচার প্রচার করা গির্জার প্রত্যেক সদস্যের এক বিশেষ অধিকার এবং দায়িত্ব ছিল। . . . পুরো খ্রীষ্টান সমাজের স্বতঃস্ফুর্ত প্রচার কাজই একেবারে শুরু থেকে খ্রীষ্টধর্মকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পিছনে মূল চালিকা শক্তি ছিল।” তিনি আরও লিখেছিলেন: “সুসমাচার প্রচারই ছিল প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানদের জন্য জীবনীশক্তি।” আজকে সত্য খ্রীষ্টানদের জন্যও তাই।

বিভিন্ন জায়গায় বৃদ্ধি

১১. প্রেরিত ১২:২৪ পদে কোন্‌ ধরনের বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে আর তা কীভাবে হয়েছিল?

১১ ঈশ্বরের বাক্যের বৃদ্ধির কথা দ্বিতীয় বার প্রেরিত ১২:২৪ পদে পাওয়া যায়: “যিহোবার বাক্য বৃদ্ধি পাইতে ও ব্যাপ্ত হইতে থাকিল।” এই বাক্যাংশটা বিভিন্ন এলাকার বৃদ্ধির সঙ্গে জড়িত। সরকারের কাছ থেকে বিরোধিতা সত্ত্বেও, ওই কাজ এগিয়ে চলেছিল। পবিত্র আত্মা প্রথমে যিরূশালেমের লোকেদের ওপর সেচিত হয়েছিল এবং সেখান থেকে তারা খুব তাড়াতাড়ি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। যিরূশালেমে শিষ্যদের ওপর তাড়না আসায় তারা যিহূদিয়া ও শমরিয়ার সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছিলেন। এর ফল কী হয়েছিল? “যাহারা ছিন্নভিন্ন হইয়াছিল, তাহারা চারদিকে ভ্রমণ করিয়া সুসমাচারের বাক্য প্রচার করিল।” (প্রেরিত ৮:১, ৪) ফিলিপকে একজন ব্যক্তির কাছে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য পাঠানো হয়েছিল আর সেই ব্যক্তি বাপ্তিস্ম নেওয়ার পর ইথিয়পিয়ায় সেই বার্তা নিয়ে গিয়েছিলেন। (প্রেরিত ৮:২৬-২৮, ৩৭, ৩৮) শীঘ্রিই লুদ্দায়, শারোণে ও যাফোয় সত্য ছড়িয়ে পড়েছিল। (প্রেরিত ৯:৩৫, ৪২) পরে প্রেরিত পৌল জল ও স্থলপথে হাজার হাজার কিলোমিটার পথ ভ্রমণ করেছিলেন, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে অনেক মণ্ডলী গড়ে তুলেছিলেন। প্রেরিত পিতর বাবিলনে গিয়েছিলেন। (১ পিতর ৫:১৩) পঞ্চাশত্তমীর দিনে পবিত্র আত্মা সেচিত হওয়ার ৩০ বছরের মধ্যেই পৌল লিখেছিলেন যে, সুসমাচার “আকাশমণ্ডলের অধঃস্থিত সমস্ত সৃষ্টির কাছে প্রচারিত হইয়াছে।” এই কথার দ্বারা সম্ভবত তিনি সেই সময়ের পুরো পৃথিবীকে বুঝিয়েছিলেন।—কলসীয় ১:২৩.

১২. বিভিন্ন জায়গায় ঈশ্বরের বাক্যের বৃদ্ধির বিষয়ে খ্রীষ্টধর্মের বিরোধীরা কী স্বীকার করেছিলেন?

১২ এমনকি খ্রীষ্টধর্মের বিরোধীরাও স্বীকার করেছিলেন যে, ঈশ্বরের বাক্য সমগ্র রোমীয় সাম্রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছিল। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, প্রেরিত ১৭:৬ পদ বলে যে উত্তর গ্রিসের থিষলনীকীতে বিরোধীরা চেঁচিয়ে বলেছিল: “এই যে লোকেরা জগৎ-সংসারকে লণ্ডভণ্ড করিয়া ফেলিয়াছে, ইহারা এ স্থানেও উপস্থিত হইল।” এছাড়াও দ্বিতীয় শতাব্দীর শুরুতে প্লিনি দ্যা ইয়াংগার বিথেনিয়া থেকে সম্রাট ট্র্যাজেনকে খ্রীষ্টধর্মের বিষয়ে লিখেছিলেন। এই বিষয়ে তিনি অভিযোগ করে বলেছিলেন: “[এটা] শুধু নগরে নগরেই নয় কিন্তু সংক্রামক রোগের মতো আশেপাশের গ্রাম ও বিভিন্ন জায়গায়ও ছড়িয়ে পড়েছে।”

১৩. বিভিন্ন জায়গায় ঈশ্বরের বাক্যের বৃদ্ধি কী করে দেখায় যে মানুষের জন্য ঈশ্বরের ভালবাসা আছে?

১৩ বিভিন্ন জায়গায় ঈশ্বরের বাক্যের বৃদ্ধি দেখায় যে মুক্তি পাওয়ার যোগ্য মানবজাতিকে যিহোবা গভীরভাবে ভালবাসেন। পিতর যখন বুঝতে পেরেছিলেন যে পরজাতীয় কর্ণীলিয়ের মধ্যে পবিত্র আত্মা কাজ করছে তখন তিনি বলেছিলেন: “আমি সত্যই বুঝিলাম, ঈশ্বর মুখাপেক্ষা করেন না; কিন্তু প্রত্যেক জাতির মধ্যে যে কেহ তাঁহাকে ভয় করে ও ধর্ম্মাচরণ করে, সে তাঁহার গ্রাহ্য হয়।” (প্রেরিত ১০:৩৪, ৩৫) হ্যাঁ, আগে এবং এখনও সুসমাচার হল সমস্ত লোকেদের জন্য এক বার্তা আর বিভিন্ন জায়গায় ঈশ্বরের বাক্যের বৃদ্ধি লোকেদেরকে ঈশ্বরের দেখানো প্রেমে সাড়া দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিল। এই একবিংশ শতাব্দীতে ঈশ্বরের বাক্য সত্যি সত্যিই পৃথিবীর সমস্ত জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে।

প্রবল বৃদ্ধি হয়েছিল

১৪. প্রেরিত ১৯:২০ পদে কোন্‌ ধরনের বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে এবং ঈশ্বরের বাক্য কীসের ওপর প্রবল হয়েছিল?

১৪ ঈশ্বরের বাক্যের বৃদ্ধির কথা তৃতীয়বার প্রেরিত ১৯:২০ পদে পাওয়া যায়: “সপরাক্রমে প্রভুর [“যিহোবার,” NW] বাক্য বৃদ্ধি পাইতে ও প্রবল হইতে লাগিল।” যে গ্রিক শব্দকে “প্রবল হইতে লাগিল” বলে অনুবাদ করা হয়েছে সেটা মূলত “বল খাটানো”-কে বোঝায়। আগের পদগুলো বলে যে ইফিষে অনেকে বিশ্বাসী হয়েছিলেন এবং তাদের মধ্যে বেশ কিছু সংখ্যক ব্যক্তিরা জাদুমন্ত্রের বইগুলো সবার সামনে পুড়িয়ে ফেলেছিলেন। এভাবেই, মিথ্যা ধর্মীয় বিশ্বাসের ওপর ঈশ্বরের বাক্য প্রবল হয়েছিল। এছাড়া, আরও অন্যান্য বাধা, যেমন তাড়নার মধ্যেও সুসমাচার প্রবল হয়েছিল। কোন কিছুই এটাকে থামিয়ে রাখতে পারেনি। এই দিক দিয়েও আমরা তখনকার সময়ের সঙ্গে আমাদের দিনের সত্য খ্রীষ্টধর্মের মিল দেখতে পাই।

১৫. (ক) প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানদের বিষয়ে একজন বাইবেল ইতিহাসবেত্তা কী লিখেছিলেন? (খ) তাদের সাফল্যের জন্য শিষ্যরা কাকে কৃতিত্ব দিয়েছিলেন?

১৫ প্রেরিতরা এবং প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানরা জোরকদমে ঈশ্বরের বাক্য ঘোষণা করেছিলেন। তাদের সম্বন্ধে একজন বাইবেল ইতিহাসবেত্তা বলেছিলেন: “কারও যদি প্রভুর বিষয়ে বলার সত্যিই ইচ্ছা থাকে, তাহলে যেভাবেই হোক তা বলার পথ তিনি খুঁজে নেন। আসলে ওই লোকেরা কীভাবে প্রচার করেছিলেন তার চেয়ে তাদের প্রেরণাই আমাদের ওপর বেশি ছাপ ফেলে।” তাসত্ত্বেও, প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানরা বুঝতে পেরেছিলেন যে প্রচার কাজে তাদের সাফল্য শুধু তাদের একার চেষ্টার ওপরই নির্ভর করেনি। তাদের কাজ করার দায়িত্ব ঈশ্বরের কাছ থেকে ছিল আর তা সম্পন্ন করার জন্য ঈশ্বর তাদের সাহায্য করেছিলেন। আধ্যাত্মিক বৃদ্ধি ঈশ্বরের কাছ থেকে আসে। করিন্থ মণ্ডলীর উদ্দেশে লেখা চিঠিতে প্রেরিত পৌল এই কথাটা স্বীকার করেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন: “আমি রোপণ করিলাম, আপল্লো জল সেচন করিলেন, কিন্তু ঈশ্বর বৃদ্ধি দিতে থাকিলেন। কারণ আমরা ঈশ্বরেরই সহকার্য্যকারী।”—১ করিন্থীয় ৩:৬, ৯.

পবিত্র আত্মা কাজ করছে

১৬. কী দেখায় যে পবিত্র আত্মা শিষ্যদেরকে সাহসের সঙ্গে কথা বলতে শক্তি দিয়েছিল?

১৬ মনে করে দেখুন, যীশু তাঁর শিষ্যদের আশ্বাস দিয়েছিলেন যে ঈশ্বরের বাক্যের বৃদ্ধিতে পবিত্র আত্মা এক বিরাট ভূমিকা রাখবে আর প্রচার কাজে পবিত্র আত্মা তাঁর শিষ্যদেরকে শক্তি দেবে। (প্রেরিত ১:৮) কিন্তু এটা কীভাবে হয়েছিল? পঞ্চাশত্তমীর দিনে শিষ্যদের ওপর পবিত্র আত্মা সেচিত হওয়ার কিছুদিন পরেই পিতর ও যোহন ওই দেশের প্রধান আদালত, যিহুদি মহাসভায় সাক্ষ্য দিতে শুরু করেছিলেন। যীশু খ্রীষ্টকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পিছনে এই মহাসভার বিচারকরাই দায়ী ছিলেন। এমন উদ্ধত ও এত এত লোকদের সামনে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে প্রেরিতরা কি ভয় পেয়েছিলেন? একটুও না! পিতর ও যোহনকে পবিত্র আত্মা শক্তি দিয়েছিল এবং তারা এতটা সাহসের সঙ্গে কথা বলেছিলেন যে তাদের শত্রুরা তাদের দেখে আশ্চর্য জ্ঞান করেছিলেন এবং “চিনিতে পারিলেন যে, ইহাঁরা যীশুর সঙ্গে ছিলেন।” (প্রেরিত ৪:৮, ১৩) স্তিফানকেও সাহসের সঙ্গে মহাসভার সামনে সাক্ষ্য দিতে পবিত্র আত্মা শক্তি জুগিয়েছিল। (প্রেরিত ৬:১২; ৭:৫৫, ৫৬) আগে, পবিত্র আত্মা শিষ্যদেরকে সাহসের সঙ্গে প্রচার করতে প্রেরণা দিয়েছিল। লূক বলেন: “তাঁহারা প্রার্থনা করিলে, যে স্থানে তাঁহারা সমবেত হইয়াছিলেন, সেই স্থান কাঁপিয়া উঠিল; এবং তাঁহারা সকলেই পবিত্র আত্মায় পরিপূর্ণ হইলেন ও সাহসপূর্ব্বক ঈশ্বরের বাক্য বলিতে থাকিলেন।”—প্রেরিত ৪:৩১.

১৭. প্রচার কাজে পবিত্র আত্মা শিষ্যদেরকে আর কোন্‌ কোন্‌ দিক দিয়ে সাহায্য করেছিল?

১৭ যিহোবা তাঁর শক্তিশালী পবিত্র আত্মা ও সেইসঙ্গে পুনরুত্থিত যীশুর মাধ্যমে প্রচার কাজে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। (যোহন ১৪:২৮; ১৫:২৬) কর্ণীলিয়, তার আত্মীয়স্বজন এবং তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের ওপর যখন আত্মা সেচিত হয়েছিল তখন প্রেরিত পিতর বুঝতে পেরেছিলেন যে, অছিন্নত্বক পরজাতীয়রাও যীশু খ্রীষ্টের নামে বাপ্তিস্ম নেওয়ার যোগ্য হয়ে উঠতে পারেন। (প্রেরিত ১০:২৪, ৪৪-৪৮) পরে, মিশনারি কাজের জন্য বার্ণবা ও শৌলকে (প্রেরিত পৌলকে) নিযুক্ত করতে এবং তাদের কোথায় যাওয়া উচিত ও উচিত না, তা ঠিক করতে পবিত্র আত্মা এক বিরাট ভূমিকা রেখেছিল। (প্রেরিত ১৩:২, ৪; ১৬:৬, ৭) এটা যিরূশালেমের প্রেরিতবর্গ ও প্রাচীন ব্যক্তিদের সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করেছিল। (প্রেরিত ১৫:২৩, ২৮, ২৯) এছাড়া খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতে অধ্যক্ষদের নিযুক্ত করাও পবিত্র আত্মার মাধ্যমে হয়েছিল।—প্রেরিত ২০:২৮.

১৮. প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানরা কীভাবে প্রেম দেখিয়েছিলেন?

১৮ এছাড়া খ্রীষ্টানদের আচরণেও পবিত্র আত্মার প্রভাব দেখা গিয়েছিল, তারা ঈশ্বরীয় বিভিন্ন গুণ গড়ে তুলেছিলেন, যেমন একটা ছিল প্রেম। (গালাতীয় ৫:২২, ২৩) প্রেম ছিল বলেই শিষ্যরা একে অন্যকে সাহায্য করেছিলেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর পরে যিরূশালেমের শিষ্যদের দৈহিক চাহিদাগুলো মেটানোর জন্য সকলে মিলে একটা তহবিল গঠন করেছিলেন। বাইবেলের বিবরণ বলে: “তাহাদের মধ্যে কেহই দীনহীন ছিল না; কারণ যাহারা ভূমির অথবা বাটীর অধিকারী ছিল, তাহারা তাহা বিক্রয় করিয়া, বিক্রীত সম্পত্তির মূল্য আনিয়া প্রেরিতদের চরণে রাখিত; পরে যাহার যেমন প্রয়োজন, তাহাকে তেমনি দেওয়া হইত।” (প্রেরিত ৪:৩৪, ৩৫) যারা বিশ্বাসী ছিলেন শুধু তাদের প্রতিই নয় কিন্তু অন্যদের কাছেও সুসমাচার প্রচার করে ও সেইসঙ্গে দয়া দেখিয়ে ভালবাসা দেখানো হতো। (প্রেরিত ২৮:৮, ৯) যীশু বলেছিলেন যে আত্মত্যাগমূলক প্রেম দেখেই তাঁর শিষ্যদের চেনা যাবে। (যোহন ১৩:৩৪, ৩৫) সত্যিই, প্রেমের উত্তম গুণই লোকেদেরকে ঈশ্বরের প্রতি আকৃষ্ট করেছিল এবং প্রথম শতাব্দীর বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছিল, যা আজকেও রেখে চলেছে।—মথি ৫:১৪, ১৬.

১৯. (ক) প্রথম শতাব্দীতে কোন্‌ তিনটে উপায়ে যিহোবার বাক্য বৃদ্ধি পেয়েছিল? (খ) পরের প্রবন্ধে আমরা কোন্‌ বিষয়ে আলোচনা করব?

১৯ প্রেরিত পুস্তকে মোট ৪১ বার ‘পবিত্র আত্মা’ শব্দটা পাওয়া যায়। এটা খুবই পরিষ্কার যে, প্রথম শতাব্দীতে প্রকৃত খ্রীষ্টানদের বৃদ্ধির সঙ্গে পবিত্র আত্মার শক্তি ও নির্দেশনা জড়িত ছিল। শিষ্যদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছিল, ঈশ্বরের বাক্য অনেক জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছিল এবং সেই যুগের ধর্ম ও দর্শনবিদ্যার চেয়েও তা প্রবল হয়েছিল। প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানদের বৃদ্ধির সঙ্গে আজকে যিহোবার সাক্ষিদের কাজের মিল পাওয়া যায়। পরের প্রবন্ধে আমরা পরীক্ষা করে দেখব যে একইভাবে আজকের দিনেও ঈশ্বরের বাক্য লক্ষণীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে।

আপনার কি মনে আছে?

• প্রথম শতাব্দীর শিষ্যদের সংখ্যা কীভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল?

• ঈশ্বরের বাক্য কীভাবে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছিল?

• প্রথম শতাব্দীতে ঈশ্বরের বাক্য কীভাবে প্রবল হয়েছিল?

• ঈশ্বরের বাক্যের বৃদ্ধিতে পবিত্র আত্মার কী ভূমিকা ছিল?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১২ পৃষ্ঠার চিত্র]

ফিলিপ একজন ইথিয়পীয় ব্যক্তির কাছে প্রচার করেছিলেন আর এভাবে বিভিন্ন জায়গায় সুসমাচার ছড়িয়ে পড়েছিল

[১৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিরূশালেমের প্রেরিত ও প্রাচীন ব্যক্তিদেরকে পবিত্র আত্মা নির্দেশনা দিয়েছিল

[১০ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]

ওপরে ডান কোণে: Reproduction of the City of Jerusalem at the time of the Second Temple - located on the grounds of the Holyland Hotel, Jerusalem