রাজ্যের আশীর্বাদগুলো আপনিও পেতে পারেন
রাজ্যের আশীর্বাদগুলো আপনিও পেতে পারেন
খ্রীষ্টান প্রেরিত পৌল তার সময়কার কয়েকটা প্রধান ভাষায় কথা বলতে পারতেন। তিনি যে শিক্ষা পেয়েছিলেন, তা আজকের দিনের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সমান ছিল। রোমীয় নাগরিক হিসেবে তিনি সমস্ত সুযোগসুবিধা এবং অধিকার ভোগ করেছিলেন। (প্রেরিত ২১:৩৭-৪০; ২২:৩, ২৮) এই বিষয়গুলোর জন্য তিনি চাইলে ধনী এবং বিখ্যাত হতে পারতেন। কিন্তু তিনি বলেছিলেন: “যাহা যাহা আমার লাভ ছিল, সে সমস্ত খ্রীষ্টের নিমিত্ত ক্ষতি বলিয়া গণ্য করিলাম। . . . এবং তাহা মলবৎ গণ্য করিতেছি, যেন খ্রীষ্টকে লাভ করি।” (ফিলিপীয় ৩:৭, ৮) কেন পৌল এই কথাগুলো বলেছিলেন?
পৌল আগে তার্ষের শৌল এবং “সেই পথাবলম্বী” লোকেদের তাড়নাকারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন কিন্তু পুনরুত্থিত এবং মহিমান্বিত যীশুর দর্শন পাওয়ার পর তিনি বিশ্বাসী হয়েছিলেন। (প্রেরিত ৯:১-১৯) দম্মেশকে যাওয়ার পথে এই ঘটনাই তার মনের সমস্ত সন্দেহ দূর করে দিয়েছিল এবং তিনি বিশ্বাস করেছিলেন যে যীশুই হলেন প্রতিজ্ঞাত মশীহ অথবা খ্রীষ্ট, যিনি প্রতিজ্ঞাত রাজ্যের ভবিষ্যৎ শাসনকর্তা। এছাড়াও, এটা তার জীবনকে নাটকীয়ভাবে বদলে দিয়েছিল, যা ওপরে বলা তার দৃঢ় কথা থেকে বোঝা যায়। অন্য কথায় বলা যায় যে, আন্তরিক এবং সৎ হৃদয়ের হওয়ায় পৌল মন ফিরিয়েছিলেন।—গালাতীয় ১:১৩-১৬.
বাইবেলে “মন ফিরাও” ক্রিয়াপদটা প্রায়ই যে গ্রিক শব্দ থেকে অনুবাদ করা হয়েছে, তার আক্ষরিক অর্থ হল “জানার পর” আর এর বিপরীত শব্দ হল প্রেরিত ৩:১৯; প্রকাশিত বাক্য ২:৫) দম্মেশকে যাওয়ার পথে যে উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছিল, সেটাকে পৌল সাধারণ একটা আবেগগত বা কেবল তথাকথিত ধর্মীয় অভিজ্ঞতা বলে মনে করেননি। এটা তাকে সজাগ করে দিয়েছিল যে খ্রীষ্টকে অবজ্ঞা করে আগে তিনি যেভাবে জীবনযাপন করছিলেন, তার কোন মূল্যই ছিল না। তিনি এও বুঝতে পেরেছিলেন যে খ্রীষ্ট সম্বন্ধে তিনি যে নতুন জ্ঞান পেয়েছেন, তা থেকে উপকার পেতে হলে তার জীবনধারায় কিছু রদবদল করতে হবে।—রোমীয় ২:৪; ইফিষীয় ৪:২৪.
“জেনেশুনে।” তাই, মন ফিরানোর মানে হল একজনের মন, আচরণ অথবা উদ্দেশ্য পরিবর্তন করা এবং আগের খারাপ জীবনধারা ত্যাগ করা। (যে পরিবর্তন অনেক আশীর্বাদ নিয়ে এসেছিল
পৌল আগে ফরীশী সম্প্রদায়ের একজন সদস্য ছিলেন আর ঈশ্বর সম্বন্ধে পৌলের যতটুকু জ্ঞান ছিল তার প্রায় অনেকখানিই তিনি তাদের কাছ থেকে পেয়েছিলেন। তারা মানুষের দর্শনবিদ্যা এবং রীতিনীতিতে বিশ্বাস করত। ধর্মীয় কুসংস্কারের কারণে পৌলের উদ্যোগ এবং চেষ্টা ভুল ছিল। যদিও তিনি মনে করেছিলেন যে তিনি ঈশ্বরের সেবা করছেন কিন্তু তিনি আসলে তাঁর বিরুদ্ধে লড়াই করছিলেন।—ফিলিপীয় ৩:৫, ৬.
খ্রীষ্ট এবং ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের মধ্যে তাঁর ভূমিকা সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞান নেওয়ার পর পৌল কোন্ পথ বেছে নেবেন সেই বিষয়ে এক কঠিন সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হয়েছিলেন: তিনি কি একজন ফরীশীই থাকবেন এবং সামাজিক মর্যাদা ও সম্মান পেয়ে চলবেন, নাকি তিনি তার জীবনধারা বদলে ফেলবেন এবং ঈশ্বরের অনুমোদন পাওয়ার জন্য যা যা করা দরকার, তা করবেন? আনন্দের বিষয় এই যে, পৌল সঠিক পথ বেছে নিয়েছিলেন কারণ তিনি বলেছিলেন: “আমি সুসমাচার সম্বন্ধে লজ্জিত নহি; কারণ উহা প্রত্যেক বিশ্বাসীর পক্ষে পরিত্রাণার্থে ঈশ্বরের শক্তি; প্রথমতঃ যিহূদীর পক্ষে, আর গ্রীকেরও পক্ষে।” (রোমীয় ১:১৬) খ্রীষ্ট এবং রাজ্য সম্বন্ধে পৌল একজন উদ্যোগী সুসমাচার প্রচারক হয়েছিলেন।
অনেক বছর পরে পৌল তার খ্রীষ্টান ভাইবোনদের বলেছিলেন: “আমি যে তাহা ধরিয়াছি, আপনার বিষয়ে এমন বিচার করি না; কিন্তু একটী কাজ করি, পশ্চাৎ স্থিত বিষয় সকল ভুলিয়া গিয়া সম্মুখস্থ বিষয়ের চেষ্টায় একাগ্র হইয়া লক্ষ্যের অভিমুখে দৌড়িতে দৌড়িতে আমি খ্রীষ্ট যীশুতে ঈশ্বরের কৃত ঊর্দ্ধ্বদিক্স্থ আহ্বানের পণ পাইবার জন্য যত্ন করিতেছি।” (ফিলিপীয় ৩:১৩, ১৪) সুসমাচার থেকে পৌল উপকার পেয়েছিলেন কারণ যে বিষয়গুলো তাকে ঈশ্বরের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল সেগুলো তিনি স্বেচ্ছায় ছেড়ে দিয়েছিলেন এবং ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের সঙ্গে মিল রাখে এমন লক্ষ্যগুলোতে পৌঁছানোর জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন।
আপনি কী করবেন?
আপনি হয়তো কিছুদিন হল রাজ্যের সুসমাচার সম্বন্ধে শুনেছেন। নিখুঁত পরমদেশে চিরকাল বেঁচে থাকার আশা কি আপনার মনকে স্পর্শ করে? মনকে স্পর্শ করাই স্বাভাবিক কারণ শান্তিপূর্ণ এবং নিরাপদ পরিবেশে বেঁচে থাকার ইচ্ছা নিয়েই আমরা জন্মেছি। বাইবেল বলে যে আমাদের হৃদয়মধ্যে ঈশ্বর “চিরকাল” রেখেছেন। (উপদেশক ৩:১১) তাই, সেই সময়ের জন্য আশা করা স্বাভাবিক, যে সময়ে মানুষেরা শান্তিতে ও সুখে চিরকাল বেঁচে থাকবে। আর রাজ্যের সুসমাচার এই সম্বন্ধেই জানায়।
কিন্তু, এই আশাকে বাস্তবে পরিণত করতে হলে সেই সুসমাচারটা আসলে কী, তা আপনার খুব ভালভাবে পরীক্ষা করা এবং খুঁজে দেখা দরকার। প্রেরিত পৌল পরামর্শ দিয়েছিলেন: ‘[নিজে] পরীক্ষা করিয়া জান, ঈশ্বরের ইচ্ছা কি, যাহা উত্তম ও প্রীতিজনক ও সিদ্ধ।’ (রোমীয় ১২:২) অতএব, জ্ঞান এবং বোঝার ক্ষমতা লাভ করার পর পৌলের মতো আপনাকেও বেছে নিতে হবে।
ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে আপনার হয়তো ইতিমধ্যেই কিছু বিশ্বাস রয়েছে। মনে রাখবেন যে, প্রেরিত পৌল হওয়ার আগে শৌলেরও ঈশ্বরের ইচ্ছা সম্বন্ধে তার নিজস্ব কিছু ধারণা ছিল। ঈশ্বর আপনার কাছে অলৌকিকভাবে কিছু প্রকাশ করবেন এটা আশা না করে বাস্তব দৃষ্টিতে বিষয়টা বিবেচনা করে দেখুন না কেন? নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘মানুষ এবং পৃথিবী সম্বন্ধে ঈশ্বরের ইচ্ছা কী, তা কি আসলেই আমি জানি? আমার বিশ্বাসকে সত্য বলে দেখানোর জন্য আমি কোন্ প্রমাণ দিতে পারি? ঈশ্বরের বাক্য, বাইবেলের দৃষ্টিকোণ থেকে যদি আমার প্রমাণকে পরীক্ষা করা হয়, তাহলে তা কি যুক্তিসংগত এবং অকাট্য হিসেবে বহাল থাকবে?’ আপনি যদি আপনার ধর্মীয় বিশ্বাসকে এভাবে পরীক্ষা করে দেখেন, তাহলে তাতে আপনার হারাবার কিছুই নেই। আর আপনার তা করতে চাওয়া উচিত কারণ বাইবেল আমাদের পরামর্শ দেয়: “সর্ব্ববিষয়ের পরীক্ষা কর; যাহা ভাল, তাহা ধরিয়া রাখ।” (১ থিষলনীকীয় ) অতএব, ঈশ্বরের অনুমোদন পাওয়াটাই কি সবচেয়ে জরুরি বিষয় নয়?— ৫:২১যোহন ১৭:৩; ১ তীমথিয় ২:৩, ৪.
ধর্মীয় গুরুরা হয়তো আমাদের কাছে অনন্ত ভবিষ্যতের প্রতিজ্ঞা করে। কিন্তু, সেই প্রতিজ্ঞা যদি বাইবেলের শিক্ষার ওপর ভিত্তি করে না হয়, তাহলে সেটা আমাদেরকে ঈশ্বরের রাজ্যের আশীর্বাদগুলো পেতে সাহায্য করবে না। পাহাড়ে দেওয়া তাঁর বিখ্যাত উপদেশে যীশু স্পষ্টভাবে সতর্ক করেছিলেন: “যাহারা আমাকে হে প্রভু, হে প্রভু বলে, তাহারা সকলেই যে স্বর্গ-রাজ্যে প্রবেশ করিতে পাইবে, এমন নয়, কিন্তু যে ব্যক্তি আমার স্বর্গস্থ পিতার ইচ্ছা পালন করে, সেই পাইবে।”—মথি ৭:২১.
লক্ষ্য করুন যে, ঈশ্বরের রাজ্যের আশীর্বাদগুলো পাওয়ার মানদণ্ড হিসেবে পিতার ইচ্ছা পালন করার ওপর যীশু জোর দিয়েছিলেন। অন্য কথায় বলা যায়, ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি আছে এমন ভাব দেখালেই যে ঈশ্বর তাঁকে গ্রহণ করবেন এমন নয়। কারণ যীশু আরও বলেছিলেন: “সেই দিন অনেকে আমাকে বলিবে, হে প্রভু, হে প্রভু, আপনার নামেই আমরা কি ভাববাণী বলি নাই? আপনার নামেই কি ভূত ছাড়াই নাই? আপনার নামেই কি অনেক পরাক্রম-কার্য্য করি নাই? তখন আমি তাহাদিগকে স্পষ্টই বলিব, আমি কখনও তোমাদিগকে জানি নাই; হে অধর্ম্মাচারীরা, আমার নিকট হইতে দূর হও।” (মথি ৭:২২, ২৩) তাই এটা পরিষ্কার যে রাজ্যের সুসমাচারটা আসলে কী, তা আমরা সত্যিকারভাবে বুঝতে পেরেছি কি না এবং এর সঙ্গে মিল রেখে কাজ করছি কি না, সে সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়া জরুরি বিষয়।—মথি ৭:২৪, ২৫.
চাইলেই সাহায্য পাওয়া যাবে
১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে যিহোবার সাক্ষিরা ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করে চলেছেন। ছাপানো প্রকাশনাদির মাধ্যমে এবং মুখে বলে তারা সারা পৃথিবীর লোকেদেরকে রাজ্য কী, এটা কোন্ কোন্ আশীর্বাদ নিয়ে আসবে এবং এই আশীর্বাদগুলো পেতে হলে একজনকে কী করতে হবে সেই সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞান পেতে সাহায্য করছেন।
যিহোবার সাক্ষিরা যে বার্তা প্রচার করে চলেছেন, তা শোনার জন্য আমরা আপনাকে উৎসাহ দিচ্ছি। সুসমাচার শুনে এবং সেই মতো কাজ করে আপনিও অপূর্ব আশীর্বাদগুলো পেতে পারেন আর তা শুধু এখনই নয় কিন্তু ভবিষ্যতে ঈশ্বরের রাজ্য যখন সারা পৃথিবীর ওপর শাসন করবে তখনও পেতে পারেন।—১ তীমথিয় ৪:৮.
এখনই সেই মতো কাজ করুন কারণ ঈশ্বরের রাজ্যের আশীর্বাদগুলো খুবই কাছে!
[৭ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
ছাপানো প্রকাশনাদির মাধ্যমে এবং মুখে বলে যিহোবার সাক্ষিরা ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করছেন