আশ্চর্য কার্যকারীর প্রতি মনোযোগ দিন!
আশ্চর্য কার্যকারীর প্রতি মনোযোগ দিন!
“স্থির থাকুন, ঈশ্বরের আশ্চর্য্য কার্য্য সকল বিবেচনা করুন।”—ইয়োব ৩৭:১৪.
১, ২. ১৯২২ সালে কোন্ চমৎকার জিনিস আবিষ্কার করা হয়েছিল আর এর ফলে কেমন প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছিল?
একজন প্রত্নতত্ত্ববিদ ও এক ইংরেজ লর্ড বছরের পর বছর ধরে ধনসম্পদের সন্ধান করছিলেন। শেষে, ১৯২২ সালের ২৬শে নভেম্বর মিশরের ফরৌণদের কবরস্থান, বিখ্যাত ভ্যালি অফ দ্যা কিংস্-এ প্রত্নতত্ত্ববিদ হাওয়ার্ড কার্টার এবং লর্ড কারনারভন খুবই মূল্যবান কিছু খুঁজে পান আর তা ছিল ফরৌণ টুটাংকামেনের কবর। একটা বন্ধ করা দরজার কাছে এসে তারা দরজায় একটা ছিদ্র করেন। ওই ছিদ্র দিয়ে একটা মোমবাতি ঢুকিয়ে কার্টার ভিতরে উঁকি দেন।
২ পরে কার্টার বলেছিলেন: “আর অপেক্ষা করতে না পেরে লর্ড কারনারভন অধীর আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘আপনি কি কিছু দেখতে পাচ্ছেন?’ আমার মুখ থেকে যেন কথাই সরছিল না, অনেক চেষ্টা করে আমি বলেছিলাম, ‘হ্যাঁ, খুবই আশ্চর্যজনক কিছু।’” ওই কবরে অন্যান্য অনেক মূল্যবান ধনসম্পদের মধ্যে খাঁটি সোনা দিয়ে তৈরি একটা কফিন ছিল। আপনি হয়তো কোন ছবিতে বা জাদুঘরে গিয়ে এইরকম “আশ্চর্যজনক কিছু” দেখেছেন। তবে, জাদুঘরের ওই জিনিসগুলো যত আশ্চর্যেরই হোক না কেন, আপনার জীবনের সঙ্গে সেগুলোর কোন সম্পর্ক নেই। তাই, আসুন আমরা এই আশ্চর্যজনক জিনিসগুলো থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে যেগুলো আমাদের জীবনের সঙ্গে জড়িত ও আমাদের জন্য জরুরি, সেগুলোর দিকে মন দিই।
৩. আমাদের কাজে আসবে এমন কিছু আশ্চর্যজনক বিষয়ে আমরা কোথায় তথ্য খুঁজে পাই?
৩ উদাহরণস্বরূপ, এমন একজন ব্যক্তির কথা ভেবে দেখুন, যিনি কয়েক হাজার বছর আগে পৃথিবীতে ছিলেন। আর এই ব্যক্তি আজকালকার যে কোন নায়ক-নায়িকা, খেলোয়াড় অথবা রাজকীয় ব্যক্তির চেয়েও অনেক বেশি বিখ্যাত ছিলেন। তিনি পূর্ব দেশের লোকেদের মধ্যে সবচেয়ে মহান ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। আপনি হয়তো জানেন যে তার নাম ছিল ইয়োব। তার ঘটনা নিয়ে বাইবেলের একটা বই লেখা হয়েছে। কিন্তু, সেই সময়ে ইলীহূ নামের একজন যুবক, ইয়োবকে সংশোধন করে দেওয়াকে তার কর্তব্য বলে মনে করেছিলেন। ইলীহূ বলেছিলেন যে, ইয়োব নিজের ও তার আশেপাশের লোকেদের দিকে বেশি মনোযোগ দিয়েছিলেন। ইয়োব ৩৭ অধ্যায়ে আমরা একেবারে নির্দিষ্ট ও বিজ্ঞ কিছু উপদেশ পাই, যা আমাদের প্রত্যেকের কাজে আসবে।—ইয়োব ১:১-৩; ৩২:১-৩৩:১২.
৪. কোন্ কারণে ইলীহূ ইয়োব ৩৭:১৪ পদের কথাগুলো বলেছিলেন?
৪ ইয়োবের তিনজন মিথ্যা বন্ধুর দীর্ঘ কথাবার্তা রয়েছে, যারা বলেছিল যে ইয়োব হয়তো কোন অন্যায় করেছেন বা কোন খারাপ চিন্তা করেছেন। (ইয়োব ১৫:১-৬, ১৬; ২২:৫-১০) তাদের কথা কখন শেষ হবে তার জন্য ইলীহূ ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছিলেন। এরপর তিনি বুদ্ধি ও প্রজ্ঞার সঙ্গে মুখ খুলেছিলেন। তার প্রত্যেকটা কথাই খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল কিন্তু এই মূল বিষয়টা লক্ষ্য করুন: “হে ইয়োব, আপনি ইহাতে কর্ণপাত করুন, স্থির থাকুন, ঈশ্বরের আশ্চর্য্য কার্য্য সকল বিবেচনা করুন।”—ইয়োব ৩৭:১৪.
যিনি এই কাজগুলো করেছিলেন
৫. ইলীহূ যে “ঈশ্বরের আশ্চর্য্য কার্য্য সকল” এর কথা বলেছিলেন তার সঙ্গে কী জড়িত?
৫ দেখুন যে ইলীহূ ইয়োবকে তার নিজের দিকে, ইলীহূর দিকে বা অন্য মানুষের দিকে মনোযোগ দিতে বলেননি। ইলীহূ বুদ্ধি করে ইয়োবকে ও সেইসঙ্গে আমাদেরকে, যিহোবা ঈশ্বরের আশ্চর্য কাজগুলোর দিকে মনোযোগ দিতে বলেছিলেন। “ঈশ্বরের আশ্চর্য্য কার্য্য সকল” এর সঙ্গে কী জড়িত বলে আপনার মনে হয়? এছাড়াও আপনি হয়তো বলতে পারেন, আমার নিজেরই তো অনেক চিন্তা আছে, আমার স্বাস্থ্য, টাকাপয়সার সমস্যা, আমার ভবিষ্যৎ, আমার পরিবার, সহকর্মী ও প্রতিবেশীরা থাকতে আমি কেন ঈশ্বরের কাজগুলোর দিকে মনোযোগ দেব? আপনাকে মনোযোগ দিতেই হবে কারণ নিঃসন্দেহে, যিহোবা ঈশ্বরের আশ্চর্য কার্যগুলোর সঙ্গে আমাদের চারপাশে এই পার্থিব সৃষ্টির ওপর তাঁর প্রজ্ঞা এবং তাঁর কর্তৃত্ব জড়িত। (নহিমিয় ৯:৬; গীতসংহিতা ২৪:১; ১০৪:২৪; ১৩৬:৫, ৬) এই বিষয়টাকে ভাল করে বোঝার জন্য যিহোশূয়ের বইয়ের একটা ঘটনা লক্ষ্য করুন।
৬, ৭. (ক) মোশি ও যিহোশূয়ের দিনে যিহোবা কোন্ কোন্ আশ্চর্য কাজ করেছিলেন? (খ) মোশি ও যিহোশূয়ের দিনের যে কোন একটা কাজ যদি আপনি নিজের চোখে দেখতেন, তাহলে আপনি কী বলতেন?
৬ প্রাচীন মিশরের ওপর যিহোবা বিভিন্ন আঘাত এনেছিলেন এবং মোশি যাতে প্রাচীন ইস্রায়েলীয়দের মিশর থেকে মুক্ত করে নিয়ে যেতে পারেন সেইজন্য লোহিত সাগরকে দুভাগ করেছিলেন। (যাত্রাপুস্তক ৭:১-১৪:৩১; গীতসংহিতা ১০৬:৭, ২১, ২২) যিহোশূয় ৩ অধ্যায়ে এইরকম একটা ঘটনা আছে। মোশির পর যিহোশূয়কে ইস্রায়েলীয়দের নেতা করা হয়েছিল এবং একটা নদী পার করে ঈশ্বরের লোকেদেরকে তিনি প্রতিজ্ঞাত দেশে নিয়ে গিয়েছিলেন। যিহোশূয় বলেছিলেন: “তোমরা আপনাদিগকে পবিত্র কর, কেননা কল্য সদাপ্রভু তোমাদের মধ্যে আশ্চর্য্য ক্রিয়া করিবেন।” (যিহোশূয়ের পুস্তক ৩:৫) ঈশ্বর কোন্ আশ্চর্য কাজ করেছিলেন?
৭ এই বিবরণ দেখায় যে যিহোবা যর্দন নদীর মধ্যে দিয়ে পথ করে দিয়েছিলেন, যাতে হাজার হাজার নারী-পুরুষ ও ছেলেমেয়েরা ওই শুকনো পথের ওপর দিয়ে পার হতে পারে। (যিহোশূয়ের পুস্তক ৩:৭-১৭) আমরা যদি সেখানে থাকতাম এবং আমাদের চোখের সামনে নদীর জল শুকিয়ে যেতে ও সমস্ত লোকেদের সেই পথ দিয়ে পার হতে দেখতাম, তাহলে আমরা নিশ্চয়ই বলতাম যে এটা সত্যিই আশ্চর্য কাজ! এই আশ্চর্য কাজটা করে ঈশ্বর দেখিয়েছিলেন যে সমস্ত সৃষ্টির ওপর তাঁর কর্তৃত্ব আছে। কিন্তু, এখন আমাদের সময়েও অনেক আশ্চর্য কিছু ঘটছে। সেই আশ্চর্য কাজগুলোর কয়েকটা কী এবং কেন আমাদের সেগুলোর দিকে মনোযোগ দেওয়া দরকার, তা জানার জন্য আসুন আমরা ইয়োব ৩৭:৫-৭ পদ বিবেচনা করি।
৮, ৯. ইয়োব ৩৭:৫-৭ পদে কোন্ আশ্চর্য কাজগুলোর কথা বলা আছে কিন্তু আমাদের কেন এগুলো নিয়ে চিন্তা করা উচিত?
৮ ইলীহূ বলেছিলেন: “ঈশ্বর স্বীয় রবে আশ্চর্য্যরূপ গর্জ্জন করেন, আমাদের বোধের অগম্য মহৎ মহৎ কার্য্য করেন।” ঈশ্বর ‘আশ্চর্য্যরূপে’ কাজ করেন বলতে ইলীহূ কী বোঝাতে চেয়েছিলেন? তিনি হিমানী ও বৃষ্টির কথা বলেন। এগুলো কৃষকের কাজকে থামিয়ে রাখে, ঈশ্বরের কাজগুলোর পিছনে কারণ কী তা ভাবার জন্য তাকে সময় দেয়। আমরা হয়তো কৃষক নই কিন্তু বৃষ্টি ও তুষারপাত আমাদের কাজকর্মের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। আমরা যেখানে থাকি সেখানে বৃষ্টি ও তুষারপাতের জন্য আমাদের স্বাভাবিক কাজকর্মেও হয়তো বাধা পড়তে পারে। তখন কি আমরা ভেবে দেখি যে, এই সমস্ত আশ্চর্য কাজের পিছনে কে আছেন আর কেন এগুলো হয়? আপনি কি কখনও তা ভেবে দেখেছেন?
৯ অবাক হওয়ার মতো বিষয় হল, ইয়োব ৩৮ অধ্যায় পড়ার সময় আমরা দেখি যে যিহোবা ঈশ্বর নিজে এইরকমই কিছু বিষয় তুলে ধরেন, তিনি ইয়োবকে ভাবিয়ে তোলার মতো কয়েকটা প্রশ্ন করেন। আমাদের সৃষ্টিকর্তা যদিও ইয়োবকে এই প্রশ্নগুলো করেছিলেন কিন্তু কোন সন্দেহ নেই যে এগুলোর সঙ্গে আমাদের মনোভাব, অস্তিত্ব ও ভবিষ্যৎ জড়িত। তাই, আসুন আমরা দেখি যে ঈশ্বর কী জিজ্ঞেস করেন ও এর সঙ্গে আমরা কীভাবে জড়িত। ইয়োব ৩৭:১৪ পদ আমাদেরকে যা করতে বলে, আসুন আমরা তা করি।
১০. ইয়োব ৩৮ অধ্যায় আমাদের ওপর কেমন ছাপ ফেলে আর এর থেকে কোন্ প্রশ্নগুলো ওঠে?
১০ ৩৮ অধ্যায়ের শুরুতেই বলা আছে: “সদাপ্রভু ঘূর্ণবায়ুর মধ্য হইতে ইয়োবকে উত্তর দিয়া কহিলেন, এ কে, যে জ্ঞানরহিত কথা দ্বারা মন্ত্রণাকে তিমিরাবৃত করে? তুমি এখন বীরের ন্যায় কটিবন্ধন কর; আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করি, তুমি আমাকে বুঝাইয়া দেও।” (ইয়োব ৩৮:১-৩) এই কথাগুলো থেকে বোঝা যায় যে, তিনি কী বলতে চাচ্ছেন। এটা ইয়োবকে তার চিন্তাভাবনায় কিছুটা রদবদল করে বুঝতে সাহায্য করেছিল যে তিনি মহাবিশ্বের স্রষ্টার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন আর তাঁর কাছে তাকে হিসেব দিতে হবে। আমরা ও আমাদের আশেপাশে যারা আছেন সবাই এর থেকে শিখতে পারি। এরপর ঈশ্বর এমন কিছু বিষয়ে বলেন, যে সম্বন্ধে ইলীহূও ইয়োবকে বলেছিলেন। “যখন আমি পৃথিবীর ভিত্তিমূল স্থাপন করি, তখন তুমি কোথায় ছিলে? যদি তোমার বুদ্ধি থাকে, তবে বল, তুমি কি জান, কে পৃথিবীর পরিমাণ নিরূপণ করিল? কে তাহার উপরে মানরজ্জু ধরিল? তাহার চুঙ্গী সকল কিসের উপরে স্থাপিত হইল? কে বা তাহার কোণের প্রস্তর বসাইল?”—ইয়োব ৩৮:৪-৬.
১১. ইয়োব ৩৮:৪-৬ পদ পড়ে আমাদের কোন্ বিষয়টা বুঝতে পারা উচিত?
১১ ঈশ্বর যখন পৃথিবী সৃষ্টি করেছিলেন তখন ইয়োব বা আমরা কোথায় ছিলাম? আমাদের মধ্যে কোন স্থপতি কি পৃথিবীর নকশা তৈরি করেছিলেন ও স্কেল দিয়ে এর বিস্তার নিরূপণ করেছিলেন? নিশ্চয়ই না! তখন মানুষের কোন অস্তিত্বই ছিল না। পৃথিবীকে একটা বিল্ডিংয়ের সঙ্গে তুলনা করে ঈশ্বর জিজ্ঞেস করেছিলেন: “কে বা তাহার কোণের প্রস্তর বসাইল?” আমরা জানি যে পৃথিবী সূর্য থেকে একেবারে ঠিক ঠিক দূরত্বে রয়েছে, যার ফলে আমরা বেঁচে আছি ও বংশ বৃদ্ধি করি। আর পৃথিবীর আকারও একেবারে ঠিক। পৃথিবী যদি আরও বড় হতো, তাহলে বায়ুমণ্ডলে হাইড্রোজেন গ্যাস নির্গত হতো না আর পৃথিবীতে কেউই বেঁচে থাকতে পারত না। স্পষ্টতই, কেউ একজন একেবারে ঠিক জায়গাতে ‘তাহার কোণের প্রস্তর বসিয়েছিলেন।’ এর জন্য কৃতিত্বের দাবিদার কি ইয়োব, আমরা নাকি যিহোবা ঈশ্বর?—হিতোপদেশ ৩:১৯; যিরমিয় ১০:১২.
কে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানে?
১২. ইয়োব ৩৮:৬ পদে যে প্রশ্ন পাওয়া যায়, সেটা আমাদেরকে কোন্ বিষয় চিন্তা করতে পরিচালিত করে?
১২ এছাড়াও, ঈশ্বর জিজ্ঞেস করেছিলেন: “তাহার চুঙ্গী সকল কিসের উপরে স্থাপিত হইল?” এটা খুবই ভাল প্রশ্ন, তাই নয় কি? সম্ভবত আমরা সবাই মহাকর্ষ শব্দটা শুনেছি কিন্তু ইয়োব এই বিষয়ে কিছুই জানতেন না। আমরা এখন অনেকেই জানি যে সূর্যের বিশাল ভর থেকে যে মহাকর্ষীয় বল আসে, তা পৃথিবীকে ঠিক জায়গায় থাকতে সাহায্য করে, অন্য কথায় পৃথিবীর চুঙ্গি বা স্তম্ভগুলোকে ঠিক জায়গায় রাখে। কিন্তু, মহাকর্ষীয় বল আসলে কী বা কীভাবে কাজ করে তা কে পুরোপুরি বোঝে?
১৩, ১৪. (ক) মহাকর্ষ সম্বন্ধে আমাদের কী স্বীকার করা উচিত? (খ) ইয়োব ৩৮:৬ পদে যে অবস্থার কথা বলা হয়েছে, তা পড়ে আমাদের কেমন প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত?
১৩ কিছুদিন আগে প্রকাশিত, মহাবিশ্বের ব্যাখ্যা (ইংরেজি) নামে একটা বই স্বীকার করে যে, ‘মহাকর্ষ শব্দটা সবাই-ই জানে কিন্তু প্রকৃতির এই শক্তি সম্বন্ধেই মানুষ সবচেয়ে কম বোঝে।’ ওই বই আরও বলে: “ফাঁকা জায়গাতে মহাকর্ষ-বল মুহূর্তের মধ্যে চলাচল করতে পারে বলে মনে হয় কিন্তু কেন পারে, সেই সম্বন্ধে কোন স্পষ্ট কারণ জানা যায় না। তবে, কিছুদিন আগে থেকে পদার্থবিজ্ঞানীরা ধারণা করতে শুরু করেছেন যে গ্র্যাভিটন নামে ক্ষুদ্র কণাগুলো দ্বারা গঠিত তরঙ্গের মধ্যে দিয়ে হয়তো মহাকর্ষ চলাচল করে থাকে। . . . কিন্তু আসলেই সেগুলো আছে কি না, তা কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারে না।” এর থেকে কী বোঝা যায়, তা একটু ভেবে দেখুন।
১৪ যিহোবা প্রায় ৩,০০০ বছর আগে ইয়োবকে এই প্রশ্নগুলো করেছিলেন আর তখন থেকে বিজ্ঞান এখন আরও অনেক দূর এগিয়ে গেছে। কিন্তু, তারপরও আমরা বা কোন অভিজ্ঞ পদার্থবিজ্ঞানী কেউই একেবারে ঠিক ঠিক করে মহাকর্ষকে ব্যাখ্যা করতে পারি না। এটা পৃথিবীকে ঠিক কক্ষপথে রাখে, যার জন্য আমরা এখানে বেঁচে আছি। (ইয়োব ২৬:৭; যিশাইয় ৪৫:১৮) তবে মহাকর্ষের মধ্যে যে রহস্য আছে, তা বের করার জন্য আমরা গবেষণা করতে বলছি না। বরং, ঈশ্বরের আশ্চর্য কাজগুলোর মধ্যে এমনকি একটার প্রতি মনোযোগ দিলেও আমরা তাঁর সম্বন্ধে ভাল করে বুঝতে পারব। আপনি কি তাঁর অগাধ প্রজ্ঞা ও জ্ঞানের সামনে দাঁড়াতে পারেন আর আপনি কি বোঝেন যে কেন আমাদের তাঁর ইচ্ছা সম্বন্ধে আরও বেশি জানা দরকার?
১৫-১৭. ইয়োব ৩৮:৮-১১ পদে কোন্ বিষয়ের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে ও এটা পড়ে কোন্ প্রশ্নগুলো ওঠে? (খ) মহাসাগর এবং পৃথিবীর উপর সেগুলোর অবস্থান সম্পর্কিত জ্ঞান সম্বন্ধে কী স্বীকার করতেই হবে?
১৫ ইয়োবকে স্রষ্টা প্রশ্ন করেই চলেন। তিনি জিজ্ঞেস করেন: “কে কবাট দিয়া সমুদ্রকে রুদ্ধ করিল, যখন তাহা নির্গত হইল, গর্ব্ভাশয় হইতে বাহির হইল? তৎকালে আমি মেঘকে তাহার বস্ত্র করিলাম, ঘন তিমিরকে তাহার পটিকা করিলাম; আমি তাহার জন্য আমার বিধি নিরূপণ করিলাম, অর্গল ও কবাট স্থাপন করিলাম, বলিলাম, তুমি এই পর্য্যন্ত আসিতে পার, আর নয়; এ স্থানে তোমার তরঙ্গের গর্ব্ব নিবারিত হইবে।”—ইয়োব ৩৮:৮-১১.
১৬ এখানে সমুদ্রকে রুদ্ধ করার সঙ্গে মহাদেশ, মহাসাগর ও জোয়ার-ভাটা জড়িত রয়েছে। মানুষ কত দিন আগে থেকে এই বিষয়গুলো নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা ও গবেষণা করছে? হাজার হাজার বছর ধরে আর বিশেষ করে গত শতাব্দীতে অনেক মন দিয়ে তারা সেগুলো পরীক্ষা করেছে। আপনি হয়তো ভাবছেন যে, এতদিনে এগুলো সম্বন্ধে যা জানা গেছে তার দ্বারা সমস্ত কিছুই নিশ্চিত হয়ে যাওয়া উচিত। কিন্তু, এখন এই ২০০১ সালে আপনি যদি খুব ভাল করে এই বিষয়গুলো নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করেন, নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য পৃথিবীর বড় বড় লাইব্রেরিগুলোতে গিয়ে গবেষণা করেন বা ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, তাহলে আপনি কী দেখতে পাবেন?
১৭ একটা বিখ্যাত বই স্বীকার করে: “অনেক সময় ধরে বিজ্ঞানীরা মহাদেশ, মহাসাগর, পাহাড়-পর্বত ও নদীগুলোর অবস্থান নিয়ে গবেষণা করে আসছেন। আর তারা লক্ষ্য করেছেন যে, এই বিষয়গুলো নিয়ে পরীক্ষা করা ও এগুলোর ব্যাখ্যা দেওয়া খুবই কঠিন।” এই কথা বলার পর, এনসাইক্লোপিডিয়া চারটে সম্ভাব্য ব্যাখ্যা দেয় কিন্তু এই কথাও বলে যে এগুলো “অনেক প্রকল্পগুলোর মধ্যে” মাত্র কয়েকটা। আপনি হয়তো জানেন যে, প্রকল্প “মানে কোন একটা বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসার জন্য অনিশ্চিত ব্যাখ্যা না দিয়ে বরং প্রমাণ করা, তবে সেটা যথেষ্ট নয়।”
১৮. ইয়োব ৩৮:৮-১১ পদ পড়ে আপনি কোন্ সিদ্ধান্তে আসেন?
১৮ ইয়োব ৩৮:৮-১১ পদে আমরা যে প্রশ্নগুলো পড়েছি সেগুলো কি আমাদের সময়ের জন্য উপযোগী নয়? এই পর্যন্ত পৃথিবী গ্রহের যে বিষয়গুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি, সেগুলোকে ঠিক ঠিক জায়গায় বসানোর জন্য সত্যিই আমাদের কোন কৃতিত্ব নেই। আমরা চাঁদকে এমন জায়গায় বসাইনি, যার আকর্ষণে জোয়ার-ভাটা হয় আর এর ফলে সমুদ্র উপকূল ও আমরা যেখানে থাকি সেই এলাকাগুলো প্লাবিত হয় না। আপনি জানেন যে কে তা করেছিলেন। হ্যাঁ, আশ্চর্য কার্যকারীই তা করেছেন।—গীতসংহিতা ৩৩:৭; ৮৯:৯; হিতোপদেশ ৮:২৯; প্রেরিত ৪:২৪: প্রকাশিত বাক্য ১৪:৭.
যিহোবাকে তাঁর প্রাপ্য কৃতিত্ব দিন
১৯. ইয়োব ৩৮:১২-১৪ পদের কাব্যিক কথাগুলো পৃথিবীর সম্বন্ধে আমাদেরকে কী জানায়?
১৯ পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘোরে বলে এর জন্য আমাদের কোন কৃতিত্ব নেই, যে বিষয়ে ইয়োব ৩৮:১২-১৪ পদে ইঙ্গিত করা হয়েছে। পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘোরে বলেই ভোর হয় ও চারিদিকে এক অপূর্ব সৌন্দর্য ছড়িয়ে দেয়। যখন সূর্য ওঠে, ধীরে ধীরে এর আলো আরও উজ্জ্বল হয় তখন আমাদের চারিদিকে সবকিছু পরিষ্কার দেখা যায়, ঠিক যেমন কাদামাটির ওপর সিলমোহর করলে তা আকার পেয়ে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আমরা যদি পৃথিবীর গতির কথা একটু চিন্তা করি, তাহলে অবাক হয়ে যাব যে পৃথিবী কখনও তাড়াতাড়ি ঘোরে না। যদি ঘুরত, তাহলে খুবই মারাত্মক হতো, যা আমরা খুব সহজেই বুঝতে পারি। আবার এত ধীরেও ঘোরে না যে দিন বা রাত স্বাভাবিকের চেয়ে বড় হয় কিংবা খুব বেশি ঠাণ্ডা বা গরম পড়ে আর তা হলে মানুষের জন্য বেঁচে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়ত। স্পষ্ট করে বলতে গেলে, আমাদের জেনে খুশি হওয়া উচিত যে কোন মানুষ নয় কিন্তু ঈশ্বরই এই গতিকে ঠিক করে দিয়েছেন।—গীতসংহিতা ১৪৮:১-৫.
২০. ইয়োব ৩৮:১৬, ১৮ পদের প্রশ্নগুলোর উত্তরে আপনি কী বলবেন?
২০ এখন মনে করুন ঈশ্বর আপনাকে এই প্রশ্নগুলো করছেন: “তুমি কি সমুদ্রের উৎসে প্রবেশ করিয়াছ? জলধি-তলে কি পদার্পণ করিয়াছ?” এমনকি একজন সমুদ্রবিজ্ঞানীও এই বিষয়ে নিশ্চিত উত্তর দিতে পারেন না! “তুমি কি ভুবনের বিস্তার জ্ঞাত হইয়াছ? বল, যদি সমস্তই জান।” (ইয়োব ৩৮:১৬, ১৮) আপনি কি পৃথিবীর সব জায়গায় বা বেশির ভাগ জায়গাগুলোতে গিয়েছেন? পৃথিবীতে যে সমস্ত সুন্দর সুন্দর জায়গা আছে তার সবগুলোতে যেতে ও যিহোবা যে আশ্চর্য কাজগুলো করেছেন, সেগুলো দেখতে আমাদের কত সময় ধরে বেঁচে থাকতে হবে? আর সত্যি সত্যিই যদি তা হতো, তাহলে তা কত আনন্দের সময়ই না হতো!
২১. (ক) ইয়োব ৩৮:১৯ পদের প্রশ্নগুলো থেকে বৈজ্ঞানিক কোন্ তথ্য জানা যায়? (খ) আলোর সম্বন্ধে সঠিক তথ্য জেনে আমাদের কী করা উচিত?
২১ এছাড়া, ইয়োব ৩৮:১৯ পদে ভাবিয়ে তোলার মতো প্রশ্নটাও দেখুন: “দীপ্তির নিবাসে যাইবার পথ কোথায়? অন্ধকারেরই বা বাসস্থান কোথায়?” আপনি হয়তো জানেন যে অনেক দিন ধরেই মনে করা হয়েছিল যে পুকুরের ছোট ছোট ঢেউয়ের মতোই আলো তরঙ্গের আকারে চলে। তারপর, ১৯০৫ সালে আ্যলবার্ট আইনস্টাইন বলেছিলেন যে আলো শক্তিগুচ্ছ বা শক্তিকণিকার আকারে চলে। এই ব্যাখ্যা কি ঠিক ছিল? কিছুদিন আগের একটা এনসাইক্লোপিডিয়ায় এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: “আলো কি তরঙ্গ না কণিকা?” উত্তরে এটা বলে: “[আলো তরঙ্গ এবং কণিকা] একসঙ্গে দুটোই হতে পারে না কারণ তরঙ্গ ও কণিকা একেবারে আলাদা দুটো বিষয়। সঠিক করে বলতে গেলে আলো তরঙ্গও না বা কণিকাও না।” কিন্তু (সরাসরি হোক বা পরোক্ষভাবে হোক) আমরা সূর্যের আলো পাচ্ছি যদিও মানুষ ঈশ্বরের কাজগুলোকে পুরোপুরি বুঝতে পারে না। গাছপালা সূর্যের আলোর সাহায্যে খাদ্য ও অক্সিজেন তৈরি করছে ও আমরা সেগুলো উপভোগ করছি। আলো থাকায় আমরা পড়তে পারি, প্রিয়জনদের দেখতে পারি, অপূর্ব সূর্যাস্তের দিকে তাকাতে পারি এবং আরও অনেক কিছু করতে পারি। তাই, ঈশ্বরের আশ্চর্য কাজগুলোর জন্য আমাদের কি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা উচিত নয়?—গীতসংহিতা ১০৪:১, ২; ১৪৫:৫; যিশাইয় ৪৫:৭; যিরমিয় ৩১:৩৫.
২২. ঈশ্বরের আশ্চর্য কাজগুলো দেখে প্রাচীনকালের দায়ূদ কী বলেছিলেন?
২২ যিহোবার আশ্চর্য কাজগুলো দেখে শ্রদ্ধা-মিশ্রিত ভয়ে ভীত হয়েছি বা বিস্ময়ে একেবারে নির্বাক হয়ে গেছি বলেই কি শুধু আমরা এগুলো নিয়ে ধ্যান করি? কখনোই না। প্রাচীনকালের গীতরচক দায়ূদ স্বীকার করেছিলেন যে, ঈশ্বরের সমস্ত কাজের বিষয় চিন্তা করা বা সেগুলো নিয়ে কথা বলা অসম্ভব। তিনি লিখেছিলেন: “সদাপ্রভু আমার ঈশ্বর, তুমিই বাহুল্যরূপে সাধন করিয়াছ . . . আশ্চর্য্য কার্য্য সকল . . . আমি সে সকল বলিতাম ও বর্ণনা করিতাম, কিন্তু সে সকল গণনা করা যায় না।” (গীতসংহিতা ৪০:৫) কিন্তু, তাই বলে তিনি বোঝাতে চাননি যে, এই মহৎ কাজগুলো দেখে তিনি চুপ করে থাকবেন। গীতসংহিতা ৯:১ পদে বলা দায়ূদ তার সংকল্পে এটাই প্রমাণ করেছেন: “আমি সর্ব্বান্তঃকরণে সদাপ্রভুর স্তব করিব, তোমার সমস্ত আশ্চর্য্য ক্রিয়া বর্ণনা করিব।”
২৩. ঈশ্বরের আশ্চর্য কাজগুলো দেখে আপনার কেমন লাগে আর অন্যদেরকে আপনি কীভাবে সাহায্য করতে পারেন?
২৩ আমরাও কি একই কথা বলতে প্রেরণা পাই না? ঈশ্বরের মহৎ কাজগুলো দেখে আমরা যে অবাক হই, তা কি আমাদেরকে তিনি যা কিছু করেছেন এবং ভবিষ্যতে তিনি যা করবেন, সেই কথা অন্যকে বলতে প্রেরণা দেয় না? এর উত্তর খুবই স্পষ্ট—“জাতিগণের মধ্যে তাঁহার গৌরব, সমস্ত লোক-সমাজে তাঁহার আশ্চর্য্য কর্ম্ম সকল” আমাদের ‘প্রচার করা’ উচিত। (গীতসংহিতা ৯৬:৩-৫) হ্যাঁ, ঈশ্বর সম্বন্ধে আমরা যা কিছু জেনেছি, অন্যদেরকে তা জানিয়ে আমরা তাঁর আশ্চর্য কাজগুলোর প্রতি নম্রভাবে উপলব্ধি দেখাতে পারি। লোকেরা যদি এমন পরিবেশে মানুষ হয়ে ওঠে যেখানে কেউ সৃষ্টিকর্তাকে বিশ্বাস করে না, এমনকি সেই সমস্ত জায়গায়ও ঈশ্বর সম্বন্ধে আমাদের বিশ্বাস দেখে ও সঠিক তথ্যগুলো শুনে তারা ঈশ্বরকে জানতে পারেন। এর চেয়েও বড় কথা হল, এর জন্য তারা হয়তো যিনি ‘সকলের সৃষ্টি করিয়াছেন’ সেই আশ্চর্য কার্যকারী যিহোবার বিষয়ে শিখতে চাইতে পারেন ও তাঁকে সেবা করতে পারেন।—প্রকাশিত বাক্য ৪:১১.
আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?
• ইয়োব ৩৭:১৪ পদের পরামর্শ আপনাকে ঈশ্বরের কোন্ কাজগুলোর বিষয়ে চিন্তা করতে পরিচালিত করে?
• ইয়োব ৩৭ ও ৩৮ অধ্যায়ে কোন্ বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে, যেগুলো বিজ্ঞানও পুরোপুরি ব্যাখ্যা করতে পারে না?
• ঈশ্বরের আশ্চর্য কাজগুলো সম্বন্ধে আপনি কী মনে করেন আর তা আপনাকে কী করতে প্রেরণা দেয়?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
কে সমুদ্রকে রুদ্ধ করে একেবারে ঠিক জায়গায় রেখেছেন?
[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
ঈশ্বরের সৃষ্টি আমাদের এই পৃথিবীর সমস্ত সুন্দর সুন্দর জায়গায় কে গিয়েছে?