সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

গির্জার ফাদাররা বাইবেলের সত্যকে কি সমর্থন করেন?

গির্জার ফাদাররা বাইবেলের সত্যকে কি সমর্থন করেন?

গির্জার ফাদাররা বাইবেলের সত্যকে কি সমর্থন করেন?

আপনি নিজেকে খ্রীষ্টান বলে দাবি করেন বা না-ই করেন, বাইবেলের ঈশ্বর, যীশু এবং খ্রীষ্টধর্ম সম্বন্ধে আপনার যে ধারণা রয়েছে, তা অনেকটা তাদের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। তাদের মধ্যে একজনকে গোল্ডেন মাউথ আর অন্যজনকে মহান বলা হতো। এছাড়াও, তাদেরকে “খ্রীষ্টের জীবনের মূর্ত প্রতীকও” বলা হয়ে থাকে। তারা কারা? তারা হলেন প্রাচীনকালের ধর্ম বিষয়ক চিন্তাবিদ, লেখক, থিওলজিয়ান এবং দার্শনিক, যারা আজকের “খ্রীষ্টীয়” চিন্তাধারার ওপর অনেক ছাপ ফেলেছেন অর্থাৎ তারা হলেন গির্জার ফাদাররা।

গ্রিক অর্থোডক্সের ধর্ম বিষয়ক অধ্যাপক ডিমিট্রিওস জে. কনস্টেনটিলোস জোর দিয়ে বলেন, ‘ঈশ্বরের সমস্ত বাক্য বাইবেলে নেই। পবিত্র আত্মার মাধ্যমে প্রকাশিত ঈশ্বরের বাক্য বইয়ের পাতার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না।’ তাহলে, ঈশ্বরের বাক্য প্রকাশের আরেকটা নির্ভরযোগ্য উৎস কী হতে পারে? কনস্টেনটিলোস তার লেখা আন্ডারস্টেন্ডিং দ্যা গ্রিক অর্থোডক্স চার্চ বইয়ে বলেন: “পবিত্র ঐতিহ্য এবং পবিত্র শাস্ত্র [হল] একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ।”

গির্জার ফাদারদের শিক্ষা এবং লেখার ওপর ভিত্তি করেই “পবিত্র ঐতিহ্য” গড়ে উঠেছে। তারা ছিলেন বিশিষ্ট থিওলজিয়ান এবং “খ্রীষ্টীয়” দার্শনিক, যারা সা.কা. দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম শতাব্দীর মধ্যে ছিলেন। আজকের দিনের “খ্রীষ্টীয়” চিন্তাধারার ওপর তারা কতটা ছাপ ফেলেছেন? তারা কি বাইবেল থেকে শিক্ষা দিতেন? আর যীশু খ্রীষ্টের একজন অনুগামীর জন্য খ্রীষ্টীয় সত্যের প্রকৃত ভিত্তি কী হওয়া উচিত?

ঐতিহাসিক পটভূমি

সাধারণ কাল দ্বিতীয় শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে যারা নিজেদেরকে খ্রীষ্টান বলে দাবি করত, তাদেরকে রোমীয় তাড়নাকারী এবং অন্যান্য মতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে তাদের বিশ্বাসকে রক্ষা করতে হয়েছিল। কিন্তু, সেই সময় থিওলজির ওপর বহু মতবাদ ছিল। যীশুর “ঈশ্বরত্ব” এবং পবিত্র আত্মার প্রকৃতি ও কাজ নিয়ে যে ধর্মীয় তর্কবিতর্ক হয়েছিল, তা শুধু পণ্ডিত ব্যক্তিদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। “খ্রীষ্টীয়” মতবাদ নিয়ে যে প্রচণ্ড তর্কবিতর্ক এবং তীব্র মতভেদ হয়েছিল, তা রাজনীতি ও সংস্কৃতির মধ্যে এত ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল যে সেই সময় দাঙ্গা, বিদ্রোহ, সাম্প্রদায়িক শত্রুতা এমনকি যুদ্ধ পর্যন্ত হয়েছিল। ঐতিহাসিক পল জনসন লেখেন: “দ্বন্দ্ব, মতবিরোধ এবং বিভেদের মধ্যে দিয়ে [ভ্রান্ত] খ্রীষ্টধর্ম শুরু হয়েছিল এবং তা চলতেই থাকে। . . . সা.কা. প্রথম এবং দ্বিতীয় শতাব্দীতে, মধ্য এবং পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে অসংখ্য ধর্মীয় মতবাদের উদ্ভব হয় এবং সেগুলো লোকেদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করা হয়। . . . তারপর থেকে শুরু করে খ্রীষ্টধর্মের মধ্যে অনেক ভাগ হতে থাকে, যেগুলোর একটার সঙ্গে আরেকটার খুব কমই মিল ছিল।”

সেই সময় অসংখ্য লেখক এবং চিন্তাবিদদের উদ্ভব হয়, যারা মনে করেছিলেন যে দর্শনশাস্ত্রের সূত্র ব্যবহার করে “খ্রীষ্টীয়” শিক্ষাকে ব্যাখ্যা করা দরকার। শিক্ষিত ন-খ্রীষ্টীয়দেরকে সন্তুষ্ট করার জন্য এই ধর্ম বিষয়ক লেখকরা বেশির ভাগ সময়ই গ্রিক ও যিহুদি সাহিত্যাদির ওপর নির্ভর করতেন। গ্রিক লেখক জাসটিন মারটার (সা.কা. ১০০-১৬৫) থেকে শুরু করে যারা নিজেদেরকে খ্রীষ্টান বলে দাবি করতেন, তারাও গ্রিক সংস্কৃতি থেকে ধার করা বিষয়গুলোকে ধীরে ধীরে মেনে নিয়েছিলেন।

আর এর ফলস্বরূপ যা ঘটেছিল, তা আলেকজান্দ্রিয়ার গ্রিক গ্রন্থাকার ওরেজেনের (সা.কা. ১৮৫-২৫৪) লেখার মধ্যে দেখা যায়। ওরেজেনের অন ফার্স্ট প্রিন্সিপাল্‌স বইয়ে প্রথম গ্রিক দর্শনবিদ্যা দিয়ে “খ্রীষ্টীয়” থিওলজির মূল মতবাদগুলো ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা হয়েছিল। নাইসিয়ার পরিষদ (সা.কা. ৩২৫) খ্রীষ্টের “ঈশ্বরত্ব” ব্যাখ্যা ও তা প্রতিষ্ঠা করার জন্য যে চেষ্টা করেছিল, সেটাই “খ্রীষ্টীয়” মতবাদকে ব্যাখ্যা করার জন্য নতুন করে প্রেরণা দিয়েছিল। এই পরিষদই সেই যুগের শুরুকে চিহ্নিত করেছিল, যখন থেকে সাধারণ গির্জা পরিষদ আরও সঠিকভাবে মতবাদকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে।

লেখক এবং বক্তারা

সম্রাট কনস্টেনটাইনের সঙ্গে প্রথম নাইসিয়ার পরিষদের সময়কার লেখক, কৈসরিয়ার ইউসেবিয়াস মেলামেশা করতেন। নাইসিয়ার ১০০ বছরেরও একটু বেশি সময় পরে থিওলজিয়ানরা, যাদের বেশির ভাগই গ্রিক ভাষায় লিখতেন, তারা ত্রিত্ব সম্বন্ধে এক দীর্ঘ ও তুমুল তর্কবিতর্কের ঝড় তুলেছিলেন, যা পরে খ্রীষ্টীয়জগতের মতবাদের একটা অংশ হয়েছিল। তাদের মধ্যে প্রধান ছিলেন আলেকজান্দ্রিয়ার দঢ়প্রত্যয়ী বিশপ আথানেসিয়াস এবং এশিয়া মাইনরের কাপ্পাদকিয়া থেকে আসা গির্জার তিনজন নেতা—মহান বেজেল, তার ভাই নিসার গ্রেগরি এবং তাদের বন্ধু নাজিয়ানজাসের গ্রেগরি।

সেই সময় লেখক এবং প্রচারকরা বাকপটুতায় শীর্ষে পৌঁছে গিয়েছিলেন। নাজিয়ানজাসের গ্রেগরি ও জন ক্রিসেসটম (অর্থ “গোল্ডেন মাউথ”) গ্রিক ভাষায় আর সেইসঙ্গে মিলানের আমব্রোস ও হিপ্পোর অগাস্টিন ল্যাটিন ভাষায় দক্ষ বক্তা ও তাদের সময়কার সবচেয়ে সম্মানীয় এবং জনপ্রিয় কলা বিদ্যার শিক্ষক ছিলেন। সেই সময়ে সবচেয়ে প্রভাবশালী লেখক ছিলেন অগাস্টিন। থিওলজির ওপর তার বইগুলো আজকের দিনের “খ্রীষ্টীয়” চিন্তাধারার ওপর সবচেয়ে বেশি ছাপ ফেলেছে। জেরম যিনি সেই সময়ের সবচেয়ে জ্ঞানী পণ্ডিত ছিলেন, মূলত তিনিই মূল ভাষা থেকে বাইবেলের ল্যাটিন ভালগেট অনুবাদ করেছিলেন।

কিন্তু, গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলো হল: গির্জার ফাদাররা কি বাইবেলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন? তাদের শিক্ষা কি অনুপ্রাণিত শাস্ত্র থেকে ছিল? তাদের লেখাগুলো কি ঈশ্বরের সঠিক জ্ঞান পাওয়ার জন্য উপযুক্ত নির্দেশক?

ঈশ্বরের অথবা মানুষের শিক্ষা?

সম্প্রতি, পিষিদিয়ার গ্রিক অর্থোডক্স মেট্রোপলিটান মেথোডিয়াস আধুনিক “খ্রীষ্টীয়” চিন্তাধারার কাঠামো যে গ্রিক সংস্কৃতি এবং দর্শনবিদ্যার মাধ্যমে গড়ে উঠেছে, তা দেখানোর জন্য দ্যা হেলেনিক পেডেস্টাল অফ খ্রীষ্টীয়ানিটি লিখেছেন। সেই বইয়ে তিনি নির্দ্বিধায় স্বীকার করেন: “বেশির ভাগ বড় বড় গির্জার ফাদাররা গ্রিক উপাদানগুলোকে সবচেয়ে বেশি দরকারি বলে মনে করেন আর সেগুলো তারা খ্রীষ্টীয় সত্যকে বোঝার ও সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য প্রাচীন গ্রিক নিদর্শন থেকে ধার করেছেন।”

উদাহরণ হিসেবে, পিতা, পুত্র এবং পবিত্র আত্মা মিলে ত্রিত্ব গঠন করে, সেই শিক্ষার কথাই ধরুন। গির্জার অনেক ফাদাররা নাইসিয়ার পরিষদ হওয়ার পর গোড়া ত্রিত্ব বিশ্বাসী হয়েছেন। ত্রিত্বকে খ্রীষ্টীয় জগতের একটা মূল মতবাদ করার জন্য তাদের লেখা এবং ব্যাখ্যাগুলো খুবই উল্লেখযোগ্য ছিল। কিন্তু, বাইবেলে কি ত্রিত্ব সম্বন্ধে কিছু পাওয়া যায়? না। তাহলে, গির্জার ফাদাররা এগুলো কোথা থেকে পেলেন? আ্য ডিকশনারি অফ রিলিজিয়াস নলেজ জানায়, অনেকে বলে ত্রিত্ব “হল ন-খ্রীষ্টীয় ধর্ম থেকে ধার করা একটা ভুল শিক্ষা এবং খ্রীষ্টীয় বিশ্বাসের সঙ্গে এটাকে জুড়ে দেওয়া হয়েছে।” আর দ্যা পেগানিজম ইন আওয়ার খ্রীষ্টীয়ানিটি বলে: “[ত্রিত্বের] উৎস হল পুরোপুরি ন-খ্রীষ্টীয়।” *যোহন ৩:১৬; ১৪:২৮.

এছাড়াও আত্মার অমরত্বের শিক্ষার কথাই ধরুন, যেখানে বিশ্বাস করা হয় যে একজন ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর তার কোন একটা অংশ বেঁচে থাকে। আবারও গির্জার ফাদাররাই ধর্মের মধ্যে এমন শিক্ষা ঢুকিয়ে দিয়েছেন, যেখানে মারা যাওয়ার পর আত্মা বেঁচে থাকা সম্বন্ধে কোন ধারণাই ছিল না। বাইবেল পরিষ্কারভাবে দেখায় যে, একজন ব্যক্তি যখন মারা যায় তখন তার কোন কিছুই বেঁচে থাকে না: “কারণ জীবিত লোকেরা জানে যে, তাহারা মরিবে; কিন্তু মৃতেরা কিছুই জানে না, এবং তাহাদের আর কোন ফলও হয় না, কারণ লোকে তাহাদের বিষয় ভুলিয়া গিয়াছে। তাহাদের প্রেম, তাহাদের দ্বেষ ও তাহাদের ঈর্ষা সকলই বিনষ্ট হইয়া গিয়াছে; সূর্য্যের নীচে যে কোন কার্য্য করা যায়, তাহাতে কোন কালেও তাহাদের আর কোন অধিকার হইবে না।” (উপদেশক ৯:৫, ৬) গির্জার ফাদারদের আত্মার অমরত্বে বিশ্বাসের ভিত্তি কী ছিল? নিউ ক্যাথলিক এনসাইক্লোপিডিয়া বলে যে, “মানুষকে সজীব করার জন্য আত্মা তৈরি করে ঈশ্বর গর্ভাবস্থায় এটাকে শরীরের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছেন, এই খ্রীষ্টীয় ধারণা খ্রীষ্টান দর্শনবিদ্যার অনেকদিনের ফল। শুধু প্রাচ্যের ওরেজেন এবং পাশ্চাত্যের সাধু অগাস্টিন, আত্মাকে একটা অদৃশ্য কিছু বলে প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং আত্মার প্রকৃতি সম্বন্ধে একটা দার্শনিক মতবাদের সৃষ্টি করেছেন। . . . [অগাস্টিনের মতবাদ] . . . বেশির ভাগই (ও সেইসঙ্গে কিছু ভুলও) নবপ্লেটোবাদ থেকে নেওয়া হয়েছে।” আর প্রেসবিটারিয়ান লাইফ বলে: “আত্মার অমরত্ব হল গ্রিক মতবাদ, যা প্রাচীনকালের রহস্যজনক ধর্মীয় বিশ্বাসগুলো গড়ে তুলেছে এবং দার্শনিক প্লেটো এটাকে আরও বিশদভাবে তুলে ধরেছেন।” *

খ্রীষ্টীয় বিশ্বাসের প্রকৃত ভিত্তি

গির্জার ফাদারদের ঐতিহাসিক পটভূমিকা ও সেইসঙ্গে তাদের শিক্ষার উৎস সম্বন্ধে সংক্ষেপে আলোচনা করার পর এটা জিজ্ঞেস করা উপযুক্ত যে, একজন আন্তরিক খ্রীষ্টানের বিশ্বাসের ভিত্তি কি গির্জার ফাদারদের শিক্ষার ওপর হওয়া উচিত? বাইবেলকেই এর উত্তর দিতে দিন।

যীশু খ্রীষ্ট নিজে ধর্মীয় উপাধি “পিতা” বলে ডাকতে নিষেধ করে বলেছিলেন: “পৃথিবীতে কাহাকেও ‘পিতা’ বলিয়া সম্বোধন করিও না, কারণ তোমাদের পিতা এক জন, তিনি সেই স্বর্গীয়।” (মথি ২৩:৯) যে কোন ধর্মীয় নেতার ক্ষেত্রে “পিতা” বা “ফাদার” শব্দটা ব্যবহার করা অখ্রীষ্টীয় এবং অশাস্ত্রীয়। সা.কা. প্রায় ৯৮ সালে প্রেরিত যোহনের লেখা বই দিয়ে ঈশ্বরের বাক্য লেখা শেষ হয়েছিল। তাই, অনুপ্রাণিত বাক্য সম্বন্ধে জানার জন্য সত্য খ্রীষ্টানদের কোন মানুষের ওপর নির্ভর করার দরকার নেই। মানুষের পরম্পরাগত রীতিনীতির কারণে যেন ‘ঈশ্বরের বাক্য নিষ্ফল করা’ না হয় সে বিষয়ে তারা খুবই সতর্ক। ঈশ্বরের বাক্যের পরিবর্তে মানুষের পরম্পরাগত রীতিনীতিকে জায়গা দেওয়া আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে খুবই মারাত্মক। যীশু সাবধান করেছিলেন: “যদি অন্ধ অন্ধকে পথ দেখায়, উভয়েই গর্ত্তে পড়িবে।”—মথি ১৫:৬, ১৪.

বাইবেলে ঈশ্বরের যে বাক্য রয়েছে তা ছাড়াও কী একজন খ্রীষ্টানের আর কোন প্রকাশের দরকার আছে? না। অনুপ্রাণিত বিবরণে কোন কিছু যোগ না করার জন্য প্রকাশিত বাক্য আমাদেরকে সাবধান করে: “যদি কেহ ইহার সহিত আর কিছু যোগ করে, তবে ঈশ্বর সেই ব্যক্তিতে এই গ্রন্থে লিখিত আঘাত সকল যোগ করিবেন।”—প্রকাশিত বাক্য ২২:১৮.

ঈশ্বরের লিখিত বাক্য বাইবেলে খ্রীষ্টীয় সত্য স্পষ্টভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। (যোহন ১৭:১৭; ২ তীমথিয় ৩:১৬; ২ যোহন ১-৪) এটা সঠিকভাবে বোঝার জন্য জাগতিক দর্শনবিদ্যার ওপর নির্ভর করার দরকার নেই। ঈশ্বরের প্রকাশকে ব্যাখ্যা করার জন্য যারা মানুষের জ্ঞানকে ব্যবহার করার চেষ্টা করেছেন তাদের জন্য পৌলের এই প্রশ্নগুলো আবারও করা উপযুক্ত: “জ্ঞানবান্‌ কোথায়? অধ্যাপক কোথায়? এই যুগের বাদানুবাদকারী কোথায়? ঈশ্বর কি জগতের জ্ঞানকে মূর্খতায় পরিণত করেন নাই?”—১ করিন্থীয় ১:২০.

এছাড়াও, সত্য খ্রীষ্টীয় মণ্ডলী “সত্যের স্তম্ভ ও দৃঢ় ভিত্তি।” (১ তীমথিয় ৩:১৫) এর অধ্যক্ষরা মণ্ডলীতে তাদের শিক্ষার শুদ্ধতাকে রক্ষা করেন এবং কোন মতবাদ ঢুকে গিয়ে যাতে একে কলুষিত না করে তাতে বাধা দেন। (২ তীমথিয় ২:১৫-১৮, ২৫) তারা মণ্ডলী থেকে ‘ভাক্ত ভাববাদী, ভাক্ত গুরু এবং বিনাশজনক দলকে’ বের করে দেন। (২ পিতর ২:১) প্রেরিতদের মৃত্যুর পর গির্জার ফাদাররা “ভ্রান্তিজনক আত্মাদিগেতে ও ভূতগণের শিক্ষামালায় মন দিয়া” সেগুলোকে খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর শিকড় করেছেন।—১ তীমথিয় ৪:১.

এই ধর্মভ্রষ্টতার ফল আজকের খ্রীষ্টীয়জগতের মধ্যেও দেখা যায়। এর বিশ্বাস এবং নিয়মগুলো বাইবেলের সত্য থেকে একেবারে আলাদা।

[পাদটীকাগুলো]

^ যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত আপনার কি ত্রিত্বে বিশ্বাস করা উচিত? ব্রোশারে ত্রিত্বের মতবাদ সম্বন্ধে আরও ভালভাবে পাওয়া যাবে।

^ আত্মা সম্বন্ধে বাইবেলের শিক্ষা বিশদভাবে জানতে চাইলে যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত শাস্ত্র থেকে যুক্তি করা (ইংরেজি) বইয়ের ৯৮-১০৪ এবং ৩৭৫-৮০ পৃষ্ঠা দেখুন।

[১৮ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]

কাপ্পাদকিয়ার ফাদাররা

লেখক ও ভিক্ষু কাললিসটোস বলেন, “অর্থোডক্স গির্জা . . . চতুর্থ শতাব্দীর লেখকদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা দেখান, বিশেষ করে তাদের প্রতি, যাদেরকে ‘তিনজন মহান যাজক’ বলা হতো আর তারা হলেন নাজিয়ানজাসের গ্রেগরি, মহান বেজিল এবং জন ক্রিসেসটম।” গির্জার এই ফাদারদের শিক্ষা কি অনুপ্রাণিত শাত্রের ওপর ভিত্তি করে ছিল? মহান বেজিল সম্বন্ধে দ্যা ফাদার্‌স অফ দ্যা গ্রিক চার্চ বইটা বলে: “তার লেখাগুলো দেখায় যে তিনি প্লেটো, হোমার এবং অন্যান্য ইতিহাসবেত্তা ও বক্তাদের সঙ্গে মিলিয়ে লিখেছিলেন আর কোন সন্দেহ নেই যে তার লেখার ওপর তারা অনেক ছাপ ফেলেছিলেন। . . . বেজিল একজন ‘গ্রিকই’ থেকে যান।” নাজিয়ানজাসের গ্রেগরির বিষয়েও এই একই কথা সত্য। “তার দৃষ্টিতে প্রাচীন সংস্কৃতির রীতিনীতিগুলোকে সম্পূর্ণ মেনে নেওয়াই গির্জার জয় এবং শ্রেষ্ঠতা দেখানোর সবচেয়ে ভাল উপায়।”

তাদের তিনজনের সম্বন্ধে অধ্যাপক পেনাগিওটিস কে. ক্রিসটৌ লেখেন: “নতুন নিয়মের সঙ্গে মিল রাখার জন্য যদিও তারা কখনও কখনও ‘দর্শনবিদ্যা এবং অনর্থক প্রতারণার’ বিরুদ্ধে সাবধান থাকতেন কিন্তু একই সঙ্গে তারা দর্শনবিদ্যা ও এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নিয়মনীতিগুলো পড়ার জন্য আগ্রহী ছিলেন আর এমনকি অন্যদেরকেও তারা সেগুলো পড়তে বলতেন।” তাই, এটা পরিষ্কার যে এইধরনের গির্জার শিক্ষকরা মনে করতেন যে তাদের মতবাদকে সমর্থন করার জন্য বাইবেলই যথেষ্ট নয়। অন্যান্য বিষয় থেকে তাদের সমর্থন চাওয়াটা কি দেখায় যে, বাইবেলে তাদের শিক্ষাগুলো সম্বন্ধে কোন উল্লেখ নেই? প্রেরিত পৌল ইব্রীয় খ্রীষ্টানদের সতর্ক করেছিলেন: “তোমরা বহুবিধ এবং বিজাতীয় শিক্ষা দ্বারা বিপথে চালিত হইও না।”—ইব্রীয় ১৩:৯.

[সৌজন্যে]

© Archivo Iconografico, S.A./CORBIS

[২০ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]

আলেকজান্দ্রিয়ার সিরিল গির্জার এক বিতর্কিত ফাদার

গির্জার ফাদারদের মধ্যে আলেকজান্দ্রিয়ার সিরিল (সা.কা. ৩৭৫-৪৪৪) হচ্ছেন সবচেয়ে বিতর্কিত ব্যক্তি। গির্জার ইতিহাসবেত্তা হান্‌স ভন কেমপেনহাউসেন তার সম্বন্ধে বলেন যে তিনি “একরোখা, হিংস্র ও ধূর্ত ছিলেন এবং তার পেশার মহত্ত্ব ও পদমর্যাদা চারিদিকে ছড়িয়ে ছিল” ও সেইসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “তিনি কোন কিছুকে কখনও ঠিক বলে মনে করতেন না যদি না সেটা তার শক্তি ও ক্ষমতাকে বাড়ানোর কাজে আসত . . . তার পন্থাগুলোর নিষ্ঠুরতা এবং অন্যায় কখনও তাকে হতাশ করত না।” সিরিল যখন আলেকজান্দ্রিয়ার বিশপ ছিলেন তখন তিনি কনস্টানটিনোপলের বিশপকে তার পদ থেকে সরাবার জন্য ঘুস, মানহানিকর রচনা এবং অপবাদ ব্যবহার করেছিলেন। এছাড়াও, মনে করা হয় যে সা.কা. ৪১৫ সালে বিখ্যাত দার্শনিক হাইপাটিয়াকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করার পিছনে তারই হাত ছিল। সিরিলের থিওলজির বিষয়ে লেখাগুলো সম্বন্ধে কেমপেনহাউসেন বলেন: “তিনিই প্রথম কোন একটা বিষয়কে বিশ্বাস করা না করা, তা শুধু বাইবেলের ওপর ভিত্তি করে নয় বরং অন্যান্য উপযুক্ত উদ্ধৃতি এবং স্বীকৃতিপ্রাপ্ত পণ্ডিত ব্যক্তিদের সংগৃহীত উদ্ধৃতির সাহায্য নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার রীতি চালু করেছিলেন।”

[১৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

জেরম

[সৌজন্যে]

Garo Nalbandian