সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

প্রেতচর্চা কি সত্যিই আমাদের আধ্যাত্মিক প্রয়োজনগুলো মেটাতে পারে?

প্রেতচর্চা কি সত্যিই আমাদের আধ্যাত্মিক প্রয়োজনগুলো মেটাতে পারে?

প্রেতচর্চা কি সত্যিই আমাদের আধ্যাত্মিক প্রয়োজনগুলো মেটাতে পারে?

আমাদের সকলের আধ্যাত্মিক ও সেইসঙ্গে বস্তুগত চাহিদাগুলো রয়েছে। তাই অনেকে এই প্রশ্নগুলো করে থাকে যেমন, জীবনের উদ্দেশ্য কী, কেন মানুষেরা কষ্ট ভোগ করে এবং মারা গেলে আমাদের কী হয়? অনেক আন্তরিক লোকেরা এই প্রশ্নগুলো ও এইরকম অন্যান্য প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার জন্য আত্মার সঙ্গে যোগাযোগ করার বৈঠকগুলোতে যান ও সেখানে তারা আত্মা যে ব্যক্তির ওপর ভর করে (তাদেরকে মাধ্যমও বলা হয়) তাদের সঙ্গে এই আশা নিয়ে পরামর্শ করেন যে, মৃত আত্মাদের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করতে পারবেন। এই কাজকে প্রেতচর্চা বলা হয়।

অনেক দেশে প্রেতচর্চা করে, এমন লোকেদের পাওয়া যায় আর তারা বিভিন্ন সমাবেশে ও গির্জায় জড়ো হয়। উদাহরণ হিসেবে, ব্রাজিলে প্রায় ৪০,০০,০০০ জন প্রেততত্ত্ববিৎ হিপপোলিট ল্যাওন ডেনিজর রেভের লেখা শিক্ষাগুলোকে মেনে চলেন, যিনি ১৯শ শতাব্দীর এক ফরাসি শিক্ষক ও দার্শনিক ছিলেন এবং আ্যলেন কারডেক নাম নিয়ে লিখতেন। ১৮৫৪ সালে কারডেক প্রেতচর্চার বিষয়ে প্রথম আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। পরে তিনি বিভিন্ন জায়গায় যে ব্যক্তিদের ওপর আত্মা ভর করে তাদের কাছে কিছু প্রশ্ন করেছিলেন ও তাদের উত্তরগুলো তিনি প্রেতাত্মা বিষয়ক বই (ইংরেজি) নামের বইয়ে রেকর্ড করে রেখেছিলেন আর এই বইটা ১৮৫৭ সালে প্রকাশিত হয়েছিল। আরও যে দুটো বই তিনি লিখেছিলেন তা হল, মাধ্যমদের বই (ইংরেজি) আর প্রেতচর্চার আলোকে সুসমাচারের বইগুলো (ইংরেজি)।

প্রেতচর্চা বিভিন্ন ধরনের ধর্মীয় রীতিনীতির সঙ্গে জড়িত যেমন ভুদু, ডাকিনীবিদ্যা, জাদুবিদ্যা বা শয়তানের অন্যান্য কার্যকলাপ। কিন্তু যারা আ্যলেন কারডেকের শিক্ষাগুলো মেনে চলেন তারা বলেন যে তাদের বিশ্বাস আলাদা। তাদের প্রকাশনাগুলোতে প্রায়ই বাইবেল থেকে উদ্ধৃত করা থাকে ও তারা যীশুকে “সমস্ত মানবজাতির নির্দেশক ও উদাহরণ” বলে উল্লেখ করেন। তারা বলেন যে যীশুর শিক্ষাগুলো “ঈশ্বরের ব্যবস্থার সবচেয়ে খাঁটি কথা।” আ্যলেন কারডেক প্রেততত্ত্ববিৎদের লেখা বইগুলোকে মানবজাতির কাছে ঈশ্বরের ব্যবস্থার তৃতীয় প্রকাশ বলে মনে করতেন, যার প্রথম দুটো হচ্ছে মোশি ও যীশুর শিক্ষা।

প্রেতচর্চা অনেককে আকর্ষিত করে কারণ এটা প্রতিবেশীদেরকে ভালবাসা ও দান করার ওপর জোর দেয়। প্রেততত্ত্ববিৎদের এক শিক্ষা হল: “দান না দিলে পরিত্রাণ হয় না।” তাই অনেক প্রেততত্ত্ববিৎ সমাজকল্যাণের কাজে, হাসপাতাল, স্কুল ও অন্যান্য সংস্থা বানানোর কাজে খুব ব্যস্ত আছেন। তাদের এই প্রচেষ্টা সত্যিই প্রশংসা করার মতো। কিন্তু, প্রেততত্ত্ববিৎদের বিশ্বাসগুলো কীভাবে বাইবেলে রেকর্ড করা যীশুর শিক্ষাগুলো থেকে আলাদা? আসুন, দুটো উদাহরণ দেখি: মৃতদের জন্য আশা ও কষ্ট ভোগের কারণ।

মৃতদের জন্য কী আশা আছে?

অনেক প্রেততত্ত্ববিৎ পুনর্জন্মে বিশ্বাস করেন। প্রেততত্ত্ববিৎদের একটা প্রকাশনা বলে: “পুনর্জন্ম হল একমাত্র শিক্ষা, যা ঐশিক ন্যায়বিচার সম্বন্ধে আমাদের যে ধারণা তার সঙ্গে এর মিল আছে; এটা একমাত্র শিক্ষা যা আমাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানায় ও আমাদের বিশ্বাসকে মজবুত করে।” প্রেততত্ত্ববিৎরা ব্যাখ্যা করেন যে, মারা গেলে আত্মা বা “দেহধারী আত্মা” শরীর থেকে বেরিয়ে যায়—যেমন এক প্রজাপতি কোকোন থেকে বেরিয়ে আসে। তারা বিশ্বাস করেন যে এই আত্মাগুলো তাদের আগের জন্মে করা পাপের প্রায়শ্চিত্তের জন্য মানুষ হয়ে পুনর্জন্ম নেয়। কিন্তু সেই আগের জন্মে করা পাপগুলো আর মনে থাকে না। প্রেতচর্চার আলোকে সুসমাচারের বইগুলো বলে, “আগের জীবনে করা পাপ ভুলে যাওয়াকে ঈশ্বর ঠিক বলে মনে করেছিলেন।”

আ্যলেন কারডেক লিখেছিলেন, “পুনর্জন্মকে অস্বীকার করার মানে খ্রীষ্টের কথাগুলো অস্বীকার করা।” কিন্তু, যীশু কখনও “পুনর্জন্ম” শব্দটা উচ্চারণ করেননি আর কখনও এইরকম কোন ধারণার কথাও উল্লেখ করেননি। (২২ পৃষ্ঠায় দেওয়া “বাইবেল কি পুনর্জন্মের শিক্ষা দেয়?” বিষয়টা দেখুন।) বরং, যীশু মৃতদের পুনরুত্থান হবে বলে শিখিয়েছিলেন। পৃথিবীতে তাঁর পরিচর্যা চলাকালীন সময়ে তিনি তিনজনকে অর্থাৎ নায়িন নগরের এক বিধবার ছেলেকে, সমাজ-গৃহের অধ্যক্ষের মেয়েকে ও তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু লাসারকে পুনরুত্থিত করেছিলেন। (মার্ক ৫:২২-২৪, ৩৫-৪৩; লূক ৭:১১-১৫; যোহন ১১:১-৪৪) আসুন, এই অলৌকিক ঘটনাগুলোর একটা নিয়ে আলোচনা করি এবং দেখি যে “পুনরুত্থান” বলতে যীশু কী বুঝিয়েছেন।

লাসারের পুনরুত্থান

যীশু শুনেছিলেন যে তাঁর বন্ধু লাসার অসুস্থ। দুদিন পর তিনি তাঁর শিষ্যদেরকে বলেছিলেন: “আমাদের বন্ধু লাসার নিদ্রা গিয়াছে, কিন্তু আমি নিদ্রা হইতে তাহাকে জাগাইতে যাইতেছি।” যীশু কী বলতে চাইছিলেন তা শিষ্যরা বোঝেননি, তাই তিনি স্পষ্টভাবে বলেছিলেন: “লাসার মরিয়াছে।” শেষে যীশু যখন লাসারের কবরের কাছে আসেন তখন লাসার মরেছে চার দিন হয়ে গেছে। তবুও যীশু কবরের মুখে যে পাথর আছে তা সরানোর আদেশ দিয়েছিলেন। তারপর তিনি উচ্চস্বরে ডেকেছিলেন: “লাসার, বাহিরে আইস!” ওই সময় অলৌকিক কিছু ঘটেছিল। “তাহাতে সেই মৃত ব্যক্তি বাহিরে আসিলেন; তাঁহার চরণ ও হস্ত কবর-বস্ত্রে বদ্ধ ছিল, এবং মুখ গামছায় বাঁধা ছিল। যীশু তাহাদিগকে কহিলেন, ইহাকে খুলিয়া দেও, ও যাইতে দেও।”—যোহন ১১:৫, ৬, ১১-১৪, ৪৩, ৪৪.

এটা কোনভাবেই পুনর্জন্ম ছিল না। যীশু বলেছিলেন যে, মৃত লাসার ঘুমিয়ে ছিলেন ও অচেতন অবস্থায় ছিলেন। যেমন বাইবেল বলে, ‘তাহার সঙ্কল্প সকল নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।’ তিনি ‘কিছুই জানতেন না।’ (গীতসংহিতা ১৪৬:৪; উপদেশক ৯:৫) পুনরুত্থিত লাসার পুনরায় দেহ ধারণ করা অন্য কোন ব্যক্তি ছিলেন না। তার সেই একই ব্যক্তিত্ব, একই বয়স ও সেই একই স্মৃতিগুলো ছিল। তার অকাল মৃত্যুর আগে যে জীবন ছিল সেই জীবনই তিনি ফিরে পেয়েছিলেন আর সেই প্রিয়জনদের কাছে আবার ফিরে গিয়েছিলেন, যারা তার মৃত্যুতে কেঁদেছিলেন।—যোহন ১২:১, ২.

পরে লাসার আবার মারা গিয়েছিলেন। তাহলে কী উদ্দেশ্যে তাকে পুনরুত্থিত করা হয়েছিল? যীশু আরও যাদের পুনরুত্থিত করেছিলেন তার সঙ্গে এই পুনরুত্থান ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞার ওপর আমাদের আস্থাকে আরও বাড়িয়ে দেয় যে তাঁর বিশ্বস্ত সেবকরা তাঁরই নিরূপিত সময়ে মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হবে। যীশুর এই আশ্চর্য কাজগুলো তাঁর এই কথাগুলোকে আরও অর্থপূর্ণ করে তোলে: “আমিই পুনরুত্থান ও জীবন; যে আমাতে বিশ্বাস করে, সে মরিলেও জীবিত থাকিবে।”—যোহন ১১:২৫.

ভবিষ্যতে যে পুনরুত্থান হবে সেই বিষয়ে যীশু বলেছিলেন: “এমন সময় আসিতেছে, যখন কবরস্থ সকলে [আমার] রব শুনিবে, এবং যাহারা সৎকার্য্য করিয়াছে, তাহারা জীবনের পুনরুত্থানের জন্য, ও যাহারা অসৎকার্য্য করিয়াছে, তাহারা বিচারের পুনরুত্থানের জন্য বাহির হইয়া আসিবে।” (যোহন ৫:২৮, ২৯) লাসারের যেমন হয়েছিল, ঠিক তেমনই মৃত ব্যক্তিদের পুনরুত্থান হবে। এই পুনরুত্থান মানে, জীবিত আত্মার সঙ্গে পুনরুত্থিত দেহ যা পচে গেছে এবং হয়তো অন্যান্য জীবের অঙ্গ হয়ে গেছে তার সঙ্গে পুনর্মিলন নয়। মৃতদের পুনরুত্থান করা, স্বর্গ ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তার ক্ষমতার মধ্যে যাঁর প্রজ্ঞা ও শক্তির কোন শেষ নেই।

পুনরুত্থানের শিক্ষা যা যীশু শিখিয়েছিলেন, তা কি প্রত্যেকটা মানুষের প্রতি ঈশ্বরের গভীর প্রেমকে প্রকাশ করে না? কিন্তু দ্বিতীয় প্রশ্নের বিষয় কী বলা যায়, যা আগে উল্লেখ করা হয়েছে?

কষ্ট ভোগের কারণ কী?

বেশির ভাগ সময় মূর্খ, অনভিজ্ঞ বা দুষ্ট লোকেদের কাজের জন্য কষ্ট ভোগ করতে হয়। কিন্তু সেই ধরনের মর্মান্তিক ঘটনাগুলোর বিষয়ে কী বলা যায়, যার জন্য সরাসরি লোকেদের দায়ী করা যায় না? উদাহরণ হিসেবে, কেন দুর্ঘটনা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো ঘটে? কেন কোন কোন বাচ্চা শারীরিক খুঁত নিয়ে জন্মায়? আ্যলেন কারডেক মনে করেন এগুলো হল শাস্তি। তিনি লিখেছিলেন: “আমাদের যদি শাস্তি দেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে নিশ্চয়ই আমরা কখনও ভুল করেছি। যদি সেই ভুল এই জীবনে করা হয়নি, তাহলে অবশ্যই আগের জীবনে করা হয়েছে।” প্রেততত্ত্ববিৎদের এইরকম প্রার্থনা করতে শেখানো হয়েছে: “প্রভু, তুমি ন্যায়বিচারক। যে অসুস্থতা আমার হোক বলে তুমি মনে কর তা উপযুক্ত . . . এটাকে আমি আমার বিগত জীবনের প্রায়শ্চিত্ত এবং আমার বিশ্বাসের পরীক্ষা ও তোমার পবিত্র ইচ্ছা বলে মেনে নিই।”—প্রেতচর্চার আলোকে সুসমাচারের বইগুলো।

যীশু কি এইরকম কিছু শিখিয়েছিলেন? না। বাইবেলে যা বলা আছে যীশু তা খুব ভাল করে জানতেন: “সকলের প্রতি কাল ও দৈব ঘটে।” (উপদেশক ৯:১১) তিনি জানতেন যে কখনও কখনও খারাপ ঘটনা এমনিই ঘটে থাকে। সেগুলো পাপের শাস্তি না-ও হতে পারে।

যীশুর জীবনের এই ঘটনাটার কথা ভেবে দেখুন: “[যীশু] যাইতে যাইতে একটী লোককে দেখিতে পাইলেন, সে জন্মাবধি অন্ধ। তাঁহার শিষ্যেরা তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, রব্বি, কে পাপ করিয়াছিল, এ ব্যক্তি, না ইহার পিতামাতা, যাহাতে এ অন্ধ হইয়া জন্মিয়াছে?” যীশু যে উত্তর দিয়েছিলেন সত্যিই তাতে খুব ভাল শিক্ষা আছে: “পাপ এ করিয়াছে, কিম্বা ইহার পিতামাতা করিয়াছে, তাহা নয়; কিন্তু এই ব্যক্তিতে ঈশ্বরের কার্য্য যেন প্রকাশিত হয়, তাই এমন হইয়াছে। এই কথা বলিয়া তিনি ভূমিতে থুথু ফেলিয়া সেই থুথু দিয়া কাদা করিলেন; পরে ঐ ব্যক্তির চক্ষুতে সেই কাদা লেপন করিলেন ও তাহাকে কহিলেন, শীলোহ সরোবরে যাও, ধুইয়া ফেল; . . . তখন সে গিয়া ধুইয়া ফেলিল, এবং দেখিতে দেখিতে আসিল।”—যোহন ৯:১-৩, ৬, ৭.

যীশুর কথা থেকে জানা যায় যে, জন্ম থেকে অন্ধ হওয়ার জন্য সেই ব্যক্তি বা তার বাবামা কেউই দায়ী ছিলেন না। তাই পূর্ব জীবনে করা পাপের জন্য যে ওই ব্যক্তির শাস্তি হয়েছে সেই ধারণাকেও যীশু সমর্থন করেননি। এটা ঠিক যে, যীশু জানতেন প্রত্যেকটা মানুষ উত্তরাধিকারসূত্রে পাপী হয়েই জন্মায়। কিন্তু তারা আদমের পাপ নিয়ে জন্মায়, এটা তাদের জন্মের আগে করা পাপ নয়। আদমের পাপের জন্য প্রত্যেকটা মানুষ শারীরিকভাবে অসিদ্ধ হয়ে জন্মায়, অসুস্থ হয় ও মারা যায়। (ইয়োব ১৪:৪; গীতসংহিতা ৫১:৫; রোমীয় ৫:১২; ৯:১১) আর এই অবস্থাকে বদলানোর জন্যই যীশুকে পাঠানো হয়েছিল। যোহন বাপ্তাইজক বলেছিলেন যে যীশু হলেন “ঈশ্বরের মেষশাবক, যিনি জগতের পাপভার লইয়া যান!”—যোহন ১:২৯. *

এছাড়াও লক্ষ্য করুন যে, যীশু বলেননি ঈশ্বর ইচ্ছা করে সেই ব্যক্তিকে অন্ধ হয়ে জন্মাতে দিয়েছেন, যাতে একদিন যীশু তার কাছে গিয়ে তাকে সুস্থ করেন। সেটা কতই না এক নিষ্ঠুর ও নিন্দার কাজ হতো! সেটা কি ঈশ্বরের প্রশংসা নিয়ে আসত? না। কিন্তু, সেই অন্ধ ব্যক্তিকে অলৌকিকভাবে সুস্থ করার দ্বারা ‘ঈশ্বরের কার্য্য প্রকাশিত হইয়াছিল।’ আরও অনেক লোকেদের যে যীশু সুস্থ, করেছিলেন তা কষ্ট ভোগ করা মানবজাতির জন্য ঈশ্বরের আন্তরিক প্রেমকে এবং তাঁর নিরূপিত সময়ে প্রত্যেকটা মানুষের অসুস্থতা ও কষ্ট দূর করে দেওয়ার যে প্রতিজ্ঞা তিনি করেছেন সেটার ওপর নির্ভরশীলতাকে প্রকাশ করে।—যিশাইয় ৩৩:২৪.

এটা জানা কি আমাদের সান্ত্বনা দেয় না যে, কষ্ট দেওয়ার চেয়ে আমাদের স্বর্গীয় পিতা “যাহারা তাঁহার কাছে যাচ্ঞা করে, তাহাদিগকে উত্তম উত্তম দ্রব্য” দেন? (মথি ৭:১১) যখন অন্ধদের চক্ষু খুলে যাবে, বধিরদের কর্ণ মুক্ত হবে ও খঞ্জেরা চলবে, লাফাবে ও দৌড়াবে তখন এটা সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কতই না প্রশংসা নিয়ে আসবে!—যিশাইয় ৩৫:৫, ৬.

আমাদের আধ্যাত্মিক প্রয়োজনগুলোকে মেটানো

যীশু বলেছিলেন: “মনুষ্য কেবল রুটীতে বাঁচিবে না, কিন্তু ঈশ্বরের মুখ হইতে যে প্রত্যেক বাক্য নির্গত হয়, তাহাতেই বাঁচিবে।” (মথি ৪:৪) হ্যাঁ, আমাদের আধ্যাত্মিক প্রয়োজনগুলো তখনই মেটানো যায় যখন আমরা ঈশ্বরের বাক্য, বাইবেল পড়ি এবং এর কথাগুলো আমাদের জীবনে কাজে লাগাই। যে ব্যক্তিদের ওপর আত্মা ভর করে তাদের কাছে যাওয়া আমাদের আধ্যাত্মিক প্রয়োজনগুলোকে মেটাতে পারে না। সত্যি বলতে কী, আ্যলেন কারডেক যেটাকে ঈশ্বরের ব্যবস্থার প্রথম প্রকাশ বলেছেন সেখানে এইধরনের কাজকে নিন্দা করা হয়েছে।—দ্বিতীয় বিবরণ ১৮:১০-১৩.

প্রেততত্ত্ববিৎ সহ অনেকে এটা বোঝেন যে ঈশ্বর হলেন সর্বোচ্চ সত্তা, অনন্তকালীন, সম্পূর্ণ সিদ্ধ, স্নেহশীল, দয়ালু ও ন্যায্য। কিন্তু বাইবেল আরও কিছু বলে। এটা বলে যে তাঁর এক ব্যক্তিগত নাম আছে যা হল, যিহোবা আর এই নামকে আমাদের সম্মান করতে হবে যেমন যীশু করেছিলেন। (মথি ৬:৯; যোহন ১৭:৬) এটা বলে যে ঈশ্বর হলেন একজন প্রকৃত ব্যক্তি, যাঁর সঙ্গে মানুষ এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখতে পারে। (রোমীয় ৮:৩৮, ৩৯) বাইবেল পড়ে আমরা জানি যে ঈশ্বর হলেন দয়ালু এবং তিনি “আমাদের প্রতি আমাদের পাপানুযায়ী ব্যবহার করেন নাই, আমাদের অধর্ম্মানুযায়ী প্রতিফল আমাদিগকে দেন নাই।” (গীতসংহিতা ১০৩:১০) তাঁর লিখিত বাক্যের মাধ্যমে সার্বভৌম ঈশ্বর যিহোবা তাঁর প্রেম, সার্বভৌমত্ব ও ন্যায্যতাকে প্রকাশ করেছেন। তিনি বাধ্য মানুষকে নির্দেশনা দেন ও রক্ষা করেন। যিহোবা ও তাঁর পুত্র যীশু খ্রীষ্টকে জানার মানে হল “অনন্ত জীবন।”—যোহন ১৭:৩.

ঈশ্বরের উদ্দেশ্যগুলো সম্বন্ধে যা যা আমাদের দরকার তার সব তথ্যই বাইবেলে পাওয়া যায় এবং এটা আমাদের বলে যে আমরা যদি তাঁকে খুশি করতে চাই, তাহলে আমাদের কী করতে হবে। বাইবেলকে ভালভাবে পরীক্ষা করে দেখলে আমরা নিজেদের প্রশ্নগুলোর সঠিক ও সন্তুষ্টজনক উত্তর পাব। কোন্‌টা ঠিক বা ভুল সেটার নির্দেশনাও বাইবেল আমাদের দেয় এবং এটা আমাদের এক জোরালো আশা দেয়। এটা আমাদের আশ্বাস দেয় যে নিকট ভবিষ্যতে ঈশ্বর “[মানবজাতির] সমস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দিবেন; এবং মৃত্যু আর হইবে না; শোক বা আর্ত্তনাদ বা ব্যথাও আর হইবে না; কারণ প্রথম বিষয় সকল লুপ্ত হইল [হইবে]।” (প্রকাশিত ২১:৩, ৪) যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমে যিহোবা মানবজাতিকে জন্মগত পাপ ও অসিদ্ধতা থেকে মুক্ত করবেন এবং পরমদেশ পৃথিবীতে বাধ্য মানুষেরা অনন্ত জীবন পাবে। সেই সময় তাদের শারীরিক ও আধ্যাত্মিক, দুটো প্রয়োজনই পুরোপুরিভাবে মেটানো হবে।—গীতসংহিতা ৩৭:১০, ১১, ২৯; হিতোপদেশ ২:২১, ২২; মথি ৫:৫.

[পাদটীকা]

^ কীভাবে পাপ ও মৃত্যু এসেছে, তা আলোচনা করার জন্য যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত জ্ঞান যা অনন্ত জীবনে পরিচালিত করে বইয়ের ৬ অধ্যায় দেখুন।

[২২ পৃষ্ঠার বাক্স]

বাইবেল কি পুনর্জন্মের শিক্ষা দেয়?

বাইবেল কোথাও কি পুনর্জন্মের শিক্ষাকে সমর্থন করে? যারা এই শিক্ষাতে বিশ্বাস করে তারা যে শাস্ত্রপদগুলো ব্যবহার করে সেগুলোর কয়েকটা দেখুন:

“কেননা সমস্ত ভাববাদী ও ব্যবস্থা যোহন পর্য্যন্ত ভাববাণী বলিয়াছে। . . . যে এলিয়ের আগমন হইবে, তিনি এই ব্যক্তি।”—মথি ১১:১৩, ১৪.

এলিয় কি যোহন বাপ্তাইজক হয়ে পুর্নজন্ম নিয়েছিলেন? যখন জিজ্ঞেস করা হয়: “আপনি কি এলিয়?” যোহন স্পষ্টভাবে উত্তর দিয়েছিলেন: “আমি নই।” (যোহন ১:২১) তবে, এটা আগে থেকে বলা হয়েছিল যে যোহন “এলিয়ের আত্মায় ও পরাক্রমে” মশীহের পূর্বে আসবেন। (লূক ১:১৭; মালাখি ৪:৫, ৬) অন্যভাবে বললে, যোহন বাপ্তাইজক এলিয় ছিলেন এই অর্থে যে তিনি এলিয়ের মতো কাজ করেছিলেন।

“নূতন জন্ম না হইলে কেহ ঈশ্বরের রাজ্য দেখিতে পায় না। আমি যে তোমাকে বলিলাম, তোমাদের নূতন জন্ম হওয়া আবশ্যক, ইহাতে আশ্চর্য্য জ্ঞান করিও না।”—যোহন ৩:৩, .

পরে প্রেরিতদের একজন লিখেছিলেন: “ধন্য আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের ঈশ্বর ও পিতা; তিনি নিজ বিপুল দয়ানুসারে মৃতগণের মধ্য হইতে যীশু খ্রীষ্টের পুনরুত্থান দ্বারা, জীবন্ত প্রত্যাশার নিমিত্ত আমাদিগকে পুনর্জন্ম [“নতুন জন্ম,” NW] দিয়াছেন।” (১ পিতর ১:৩, ৪; যোহন ১:১২, ১৩) এখান থেকে স্পষ্টভাবে বোঝা যায়, যীশু যে নতুন জন্মের কথা বলেছিলেন, তা বলতে তিনি ভবিষ্যতে তাঁর শিষ্যদের পুনর্জন্ম হবে সেটা বোঝাননি বরং তারা বেঁচে থাকতে থাকতেই আত্মিকভাবে জন্ম নেবেন, সেটা বুঝিয়েছিলেন।

“যখন একজন ব্যক্তি মারা যায়, সে চিরকাল বেঁচে থাকে: পৃথিবীতে যখন আমার জীবন শেষ হবে, আমি অপেক্ষা করব এই মনে রেখে যে আমি আবার ফিরে আসব।”ইয়োব ১৪:১৪ পদের “গ্রিক অনুবাদ” প্রেতচর্চার আলোকে সুসমাচারের বইগুলো বইয়ে পাওয়া যায়।

বাইবেল এইরকমভাবে এই পদ অনুবাদ করে: “মনুষ্য মরিয়া কি পুনর্জীবিত হইবে? আমি আপন সৈন্যবৃত্তির সমস্ত দিন প্রতীক্ষা করিব, যে পর্য্যন্ত আমার দশান্তর না হয়।” এই পদের আগের পদগুলো পড়ে দেখুন। আপনি দেখতে পাবেন যে মৃতেরা কবরে নিজেদের ‘দশান্তরের’ জন্য অপেক্ষা করছে। (১৩ পদ) কবরে অপেক্ষা করার সময় তাদের কোন অস্তিত্ব থাকে না। “একজন ব্যক্তি মারা গেলে সম্পূর্ণভাবে শেষ হয়ে যায়; এবং যখন একজন মানুষ ভূপাতিত হয় তখন তার আর কিছুই থাকে না।”—ইয়োব ১৪:১০, ব্যাগস্টারের সেপ্টুয়াজিন্ট ভারসন।

[২১ পৃষ্ঠার চিত্র]

পুনরুত্থানের আশা প্রত্যেকটা মানুষের প্রতি ঈশ্বরের গভীর আগ্রহকে প্রকাশ করে

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

মানুষ যেসব কষ্ট ভোগ করছে, ঈশ্বর সেগুলো দূর করবেন