ঈশ্বর যে দুঃখকষ্ট থাকতে অনুমতি দিয়েছেন তা শেষ হওয়ার সময় খুব কাছে
ঈশ্বর যে দুঃখকষ্ট থাকতে অনুমতি দিয়েছেন তা শেষ হওয়ার সময় খুব কাছে
আপনি যে দিকেই তাকান না কেন, চারিদিকে শুধু দুঃখকষ্ট। কেউ কেউ নিজেদের কষ্ট নিজেরাই ডেকে আনে। তারা যৌন রোগগুলোতে আক্রান্ত হয় অথবা মাদকদ্রব্য সেবন, মদ খাওয়া বা ধূমপান করার পরিণতি ভোগ করে। অথবা পর্যাপ্ত খাবার না খাওয়ার কারণে হয়তো তাদের স্বাস্থ্য ভাল থাকে না। কিন্তু, বেশির ভাগ দুঃখকষ্ট যে কারণে বা ঘটনাগুলোর জন্য আসে, তাতে সাধারণ লোকেদের হাত নেই যেমন যুদ্ধ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, অপরাধ, দারিদ্র, দুর্ভিক্ষ, রোগ। আর সবচেয়ে বড় যে বিষয়টাকে মানুষ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, তা হল বার্ধক্য এবং মৃত্যু।
বাইবেল আমাদেরকে বলে, “ঈশ্বর প্রেম।” (১ যোহন ৪:৮) তাহলে, একজন প্রেমময় ঈশ্বর কেন শত শত বছর ধরে এই সমস্ত দুঃখকষ্ট থাকতে অনুমতি দিয়েছেন? কখন তিনি এই পরিস্থিতি বদলাবেন? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পেতে হলে আমাদের পরীক্ষা করে দেখা দরকার যে, মানুষের জন্য ঈশ্বরের উদ্দেশ্য আসলে কী। এটা আমাদেরকে বুঝতে সাহায্য করবে যে, কেন ঈশ্বর দুঃখকষ্ট থাকতে অনুমতি দিয়েছেন এবং তিনি এর কী করবেন।
উপহার হিসেবে স্বাধীন ইচ্ছা
ঈশ্বর যখন প্রথম মানুষকে সৃষ্টি করেছিলেন তখন তিনি শুধু মস্তিষ্ক দিয়ে একটা দেহ-ই তৈরি করেননি। এছাড়া, আদম ও হবাকে ঈশ্বর বুদ্ধিহীন রবোট হিসেবেও তৈরি করেননি। তিনি তাদের মধ্যে স্বাধীন ইচ্ছা দিয়েছিলেন। আর সেটা ছিল একটা উত্তম উপহার কারণ “ঈশ্বর আপনার নির্ম্মিত বস্তু সকলের প্রতি দৃষ্টি করিলেন, আর দেখ, সে সকলই অতি উত্তম।” (আদিপুস্তক ১:৩১) হ্যাঁ, “তাঁহার কর্ম্ম সিদ্ধ।” (দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৪) উপহার হিসেবে আমাদেরকে যে স্বাধীন ইচ্ছা দেওয়া হয়েছে তার গুরুত্ব আমরা সবাই উপলব্ধি করি, কারণ আমরা চাই না যে আমাদের ইচ্ছা অনিচ্ছাকে কোন প্রাধান্য না দিয়ে সমস্ত চিন্তাভাবনা ও কাজের ব্যাপারে অন্য কেউ নির্দেশনা দিক।
কিন্তু, উত্তম উপহার হিসেবে দেওয়া এই স্বাধীন ইচ্ছাকে কি নিজেদের খেয়াল খুশিমতো ব্যবহার করা যেত? প্রাথমিক খ্রীষ্টানদেরকে নির্দেশনা দেওয়ার সময় ঈশ্বরের বাক্য উত্তর দেয়: “আপনাদিগকে স্বাধীন জান; আর স্বাধীনতাকে দুষ্টতার আবরণ করিও না, কিন্তু আপনাদিগকে ঈশ্বরের দাস জান।” (১ পিতর ২:১৬) সকলের মঙ্গলের জন্য সবকিছুরই একটা সীমা থাকা দরকার। তাই, স্বাধীন ইচ্ছাকে আইনের শাসনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে হতো। নতুবা বিশৃঙ্খলা দেখা দিত।
কার আইন?
স্বাধীনতার সঠিক সীমা নির্ধারণের জন্য কার আইন দেওয়া হয়েছিল? এই প্রশ্নের উত্তর, ঈশ্বর কেন দুঃখকষ্ট থাকতে অনুমতি দিয়েছেন, তার মূল কারণের সঙ্গে জড়িত। ঈশ্বর যেহেতু মানুষকে সৃষ্টি করেছেন, তাই তিনি সবচেয়ে ভাল জানেন যে, নিজেদের ও অন্যদের ভালর জন্য কোন্ আইনগুলো তাদের মেনে চলা দরকার। বাইবেল এইভাবে বলে: “আমি সদাপ্রভু তোমার ঈশ্বর, আমি তোমার উপকারজনক শিক্ষা দান করি, ও তোমার গন্তব্য পথে তোমাকে গমন করাই।”—যিশাইয় ৪৮:১৭.
অতএব, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা হল: ঈশ্বরের কাছ থেকে স্বাধীন হওয়ার জন্য মানুষকে তৈরি করা হয়নি। তিনি তাদেরকে এমনভাবে তৈরি করেছেন যে তাদের সাফল্য এবং সুখ তাঁর ধার্মিক আইনগুলোর প্রতি বাধ্য থাকার ওপর নির্ভর করে। ঈশ্বরের ভাববাদী যিরমিয় বলেছিলেন: “হে সদাপ্রভু, আমি জানি, মনুষ্যের পথ তাহার বশে নয়, মনুষ্য চলিতে চলিতে আপন পাদবিক্ষেপ স্থির করিতে পারে না।”—যিরমিয় ১০:২৩.
মানবজাতিকে ঈশ্বর কিছু প্রাকৃতিক নিয়ম যেমন, অভিকর্ষের নিয়মের অধীন করে তৈরি করেছেন। একইভাবে মানুষকে তিনি তাঁর নৈতিক আইনগুলো মেনে চলার জন্য তৈরি করেছিলেন, যার ফলে এক ঐক্যবদ্ধ সমাজ গড়ে উঠবে। তাই, সঠিক কারণেই ঈশ্বরের বাক্য পরামর্শ দেয়: “তুমি সমস্ত চিত্তে সদাপ্রভুতে বিশ্বাস কর; তোমার নিজ বিবেচনায় নির্ভর করিও না।”—হিতোপদেশ ৩:৫.
এই কারণেই, ঈশ্বরের শাসন ছাড়া মানব পরিবার কখনোই নিজেদেরকে সফলভাবে চালাতে পারবে না। তাঁর কাছ থেকে স্বাধীন হওয়ার চেষ্টা করে লোকেরা সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় ব্যবস্থার সৃষ্টি করেছে, যেগুলোর মধ্যে সবসময় দ্বন্দ্ব লেগেই থাকে এবং “এক জন অন্যের উপরে তাহার অমঙ্গলার্থে কর্ত্তৃত্ব করে।”—উপদেশক ৮:৯.
কোথায় ভুল ছিল?
ঈশ্বর সবকিছু নিখুঁতভাবে তৈরি করেছিলেন আর তাই আমাদের প্রথম পিতামাতা সবকিছু নিখুঁতভাবে শুরু করেছিল। তাদের সিদ্ধ শরীর ও মন ছিল এবং পরমদেশ বাগান তাদের বাড়ি ছিল। তারা যদি ঈশ্বরের আইনগুলো মেনে চলত, তাহলে তারা সিদ্ধ থাকতে ও সুখী হতে পারত। আর পরে তারা পরমদেশ পৃথিবীতে বসবাসকারী সমস্ত সিদ্ধ ও সুখী মানুষের পিতামাতা আদিপুস্তক ১:২৭-২৯; ২:১৫.
হতে পারত। এটাই ছিল মানুষের জন্য ঈশ্বরের উদ্দেশ্য।—কিন্তু, আমাদের আদি পিতামাতা তাদের স্বাধীন ইচ্ছাকে ঠিকভাবে কাজে লাগায়নি। তারা ভুলভাবে চিন্তা করেছিল যে, ঈশ্বরের কাছ থেকে স্বাধীন হয়ে তারা সফল হতে পারবে। তারা ইচ্ছা করে ঈশ্বরের আইনের সীমার বাইরে পা দিয়েছিল। (আদিপুস্তক ৩ অধ্যায়) তাঁর শাসনকে অগ্রাহ্য করায় তিনি আর তাদেরকে সিদ্ধভাবে বাঁচিয়ে রাখতে বাধ্য ছিলেন না। ‘ইহারা তাঁহার সম্বন্ধে ভ্রষ্টাচারী হইয়াছিল, তাঁহার সন্তান থাকেনি, এবং এই ইহাদের কলঙ্ক হইয়াছিল।’—দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৫.
আদম ও হবা যখন ঈশ্বরের অবাধ্য হয়েছিল তখন থেকে তাদের শরীর ও মন কলুষিত হতে শুরু করেছিল। যিহোবা হলেন জীবনের উৎস। (গীতসংহিতা ৩৬:৯) তাই, যিহোবার কাছ থেকে নিজেদেরকে আলাদা করায় প্রথম মানব দম্পতি অসিদ্ধ হয়ে গিয়েছিল এবং একসময় মারা গিয়েছিল। (আদিপুস্তক ৩:১৯) বংশগতির নিয়ম অনুযায়ী তাদের বংশধররা তাদের পিতামাতার মধ্যে যা ছিল, শুধু তাই পেতে পারত। সেটা কী ছিল? সেটা ছিল অসিদ্ধতা এবং মৃত্যু। প্রেরিত পৌল তাই লিখেছিলেন: “যেমন এক মনুষ্য দ্বারা পাপ, পাপ দ্বারা মৃত্যু জগতে প্রবেশ করিল; আর এই প্রকারে মৃত্যু সমুদয় মনুষ্যের কাছে উপস্থিত হইল, কেননা সকলেই পাপ করিল।”—রোমীয় ৫:১২.
প্রধান বিচার্য বিষয়—সার্বভৌমত্ব
আদম ও হবা যখন ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল তখন তারা তাঁর সার্বভৌমত্বের অর্থাৎ তাঁর শাসন করার ন্যায্যতার অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। যিহোবা চাইলে তাদেরকে ধ্বংস করে দিতে পারতেন এবং নতুন এক দম্পতি তৈরি করে সবকিছু আবার নতুন করে শুরু করতে পারতেন। কিন্তু, তা করলে লোকেদের জন্য কার শাসন সঠিক এবং সবচেয়ে ভাল, তার মীমাংসা করা যেত না। তাদের নিজেদের মতো করে সমাজ গড়ে তোলার জন্য সময় দিলে, ঈশ্বরের কাছ থেকে স্বাধীন হয়ে গড়ে ওঠা তাদের শাসনব্যবস্থা যে কখনও সফল হতে পারবে না, সেই বিষয়ে মানুষের মনে আর কোন সন্দেহ থাকবে না।
মানুষের হাজার হাজার বছরের ইতিহাস আমাদেরকে কী জানায়? এই হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ বিভিন্ন ধরনের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় ব্যবস্থা তৈরি করে শাসন করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু দুষ্টতা এবং দুঃখকষ্ট রয়েই গেছে। সত্যি বলতে কী, বিশেষ করে আমাদের দিনে ‘দুষ্ট লোকেরা উত্তর উত্তর কুপথে অগ্রসর হইতেছে।’—২ তীমথিয় ৩:১৩.
বিংশ শতাব্দীতে বিজ্ঞান এবং শিল্পের দিক দিয়ে মানুষ শীর্ষে পৌঁছেছে। কিন্তু, এই শতাব্দীতেই আবার মানুষের সম্পূর্ণ ইতিহাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুঃখকষ্ট দেখা গেছে। আর চিকিৎসার দিক দিয়ে অনেক উন্নতি করলেও ঈশ্বরের আইন এখনও সত্য: জীবনের উৎস অর্থাৎ ঈশ্বরের কাছ থেকে আলাদা হয়ে মানুষ অসুস্থ ও বুড়ো হচ্ছে এবং মারা যাচ্ছে। এটা কতই না সত্যি যে, মানুষ “আপন পাদবিক্ষেপ স্থির করিতে” পারে না!
ঈশ্বরের সার্বভৌমত্ব প্রমাণিত হয়েছে
ঈশ্বরের কাছ থেকে স্বাধীন হওয়ার ফলে এই দুঃখজনক পরিণতি দেখিয়েছে যে, ঈশ্বরের কাছ থেকে আলাদা হয়ে মানুষ কখনও সফলভাবে শাসন করতে পারে না। একমাত্র ঈশ্বরের শাসনই সুখ, একতা, সুন্দর স্বাস্থ্য এবং জীবন দিতে পারে। এছাড়াও, যিহোবা ঈশ্বরের বাক্য বাইবেলের কথা কোন সময় ব্যর্থ হয় না আর তা দেখায় যে, ঈশ্বরের কাছ থেকে স্বাধীন হওয়া মানুষের শাসনের “শেষ কালে” আমরা বাস করছি। (২ তীমথিয় ৩:১-৫) যিহোবা যে এই শাসনব্যবস্থা, দুষ্টতা এবং দুঃখকষ্ট থাকতে অনুমতি দিয়েছেন, তা শেষ হওয়ার সময় খুবই কাছে।
খুব শীঘ্রিই যিহোবা মানুষের ওপর হস্তক্ষেপ করবেন। শাস্ত্র আমাদেরকে বলে: “সেই রাজগণের [মানুষের বর্তমান শাসনব্যবস্থার] সময়ে স্বর্গের ঈশ্বর [স্বর্গে] এক রাজ্য স্থাপন করিবেন, তাহা কখনও বিনষ্ট হইবে না, এবং সেই রাজত্ব অন্য জাতির হস্তে সমর্পিত হইবে না [পৃথিবীতে আর কখনও মানুষ শাসন করবে না]; তাহা ঐ সকল রাজ্য [বর্তমান শাসনব্যবস্থা] চূর্ণ ও বিনষ্ট করিয়া আপনি চিরস্থায়ী হইবে।”—দানিয়েল ২:৪৪.
স্বর্গীয় রাজ্যের মাধ্যমে যিহোবা ঈশ্বরের সার্বভৌমত্বের মথি ২৪:১৪.
ন্যায্যতা প্রতিপাদন হল, বাইবেলের মূল বিষয়বস্তু। এটাই ছিল যীশুর শিক্ষার মূল বিষয়। তিনি বলেছিলেন: “সর্ব্ব জাতির কাছে সাক্ষ্য দিবার নিমিত্ত রাজ্যের এই সুসমাচার সমুদয় জগতে প্রচার করা যাইবে; আর তখন শেষ উপস্থিত হইবে।”—ঈশ্বরের শাসনব্যবস্থা যখন মানুষের শাসনকে দূর করে দেবে তখন কারা রক্ষা পাবে এবং কারা রক্ষা পাবে না? হিতোপদেশ ২:২১, ২২ পদ আমাদের নিশ্চয়তা দেয়: “সরলগণ দেশে বাস করিবে, সিদ্ধেরা তথায় অবশিষ্ট থাকিবে। কিন্তু দুষ্টগণ [যারা ঈশ্বরের শাসনব্যবস্থাকে সমর্থন করে না] দেশ হইতে উচ্ছিন্ন হইবে।” ঈশ্বরের অনুপ্রেরণায় গীতরচক গেয়েছিলেন: “ক্ষণকাল, পরে দুষ্ট লোক আর নাই, . . . কিন্তু মৃদুশীলেরা দেশের অধিকারী হইবে, এবং শান্তির বাহুল্যে আমোদ করিবে। ধার্ম্মিকেরা দেশের অধিকারী হইবে, তাহারা নিয়ত তথায় বাস করিবে।”—গীতসংহিতা ৩৭:১০, ১১, ২৯.
এক অপূর্ব নতুন জগৎ
ঈশ্বরের রাজ্যের শাসনব্যবস্থায়, এই বিধিব্যবস্থার শেষ থেকে যারা রক্ষা পাবে তারা দুষ্টতা এবং দুঃখকষ্ট থেকে মুক্ত এক পৃথিবীতে প্রবেশ করবে। মানুষকে ঈশ্বরের নির্দেশনা দেওয়া হবে এবং একসময় “সমুদ্র যেমন জলে আচ্ছন্ন, তেমনি পৃথিবী সদাপ্রভু-বিষয়ক জ্ঞানে পরিপূর্ণ হইবে।” (যিশাইয় ১১:৯) নৈতিক দিক দিয়ে গড়ে তোলে ও উপকারী এই শিক্ষার ফলে সত্যিকারের শান্তিপূর্ণ ও ঐক্যবদ্ধ মানব সমাজ গড়ে উঠবে। আর এই কারণে সেখানে কোন যুদ্ধ, হত্যা, দৌরাত্ম্য, ধর্ষণ, চুরি অথবা অন্য কোন অপরাধ থাকবে না।
ঈশ্বরের নতুন জগতের সমস্ত বাধ্য মানবজাতি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবে। ঈশ্বরের শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করায় যে সমস্ত খারাপ পরিণতিগুলো এসেছিল, তা একেবারে দূর করা হবে। অসিদ্ধতা, অসুস্থতা, বার্ধক্য এবং মৃত্যু অতীতের বিষয় হবে। বাইবেল আমাদেরকে আশ্বাস দেয়: “নগরবাসী কেহ বলিবে না, আমি পীড়িত।” এছাড়া শাস্ত্র আরও প্রতিজ্ঞা করে, “তৎকালে অন্ধদের চক্ষু খোলা যাইবে, আর বধিরদের কর্ণ মুক্ত হইবে। তৎকালে খঞ্জ হরিণের ন্যায় লম্ফ দিবে, ও গোঙ্গাদের জিহ্বা আনন্দগান করিবে।” (যিশাইয় ৩৩:২৪; ৩৫:৫, ৬) প্রতিদিন এবং চিরকালের জন্য আরও সুন্দর স্বাস্থ্য উপভোগ করা কত রোমাঞ্চকরই না হবে!
ঈশ্বরের প্রেমময় নির্দেশনার মাধ্যমে নতুন জগতের বাসিন্দারা তাদের শক্তি এবং দক্ষতা এই পৃথিবীকে পরমদেশ বানানোর জন্য কাজে লাগাবে। দারিদ্র, ক্ষুধা এবং গৃহের অভাব চিরকালের জন্য দূর হয়ে যাবে কারণ যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণী বলে: “লোকেরা গৃহ নির্ম্মাণ করিয়া তাহার মধ্যে বসতি করিবে, দ্রাক্ষাক্ষেত্র প্রস্তুত করিয়া তাহার ফল ভোগ করিবে। তাহারা গৃহ নির্ম্মাণ করিলে অন্যে বাস করিবে না, তাহারা রোপণ করিলে অন্যে ভোগ করিবে না।” (যিশাইয় ৬৫:২১, ২২) সত্যিই, “প্রত্যেকে আপন আপন দ্রাক্ষালতার ও আপন আপন ডুমুরবৃক্ষের তলে বসিবে; কেহ তাহাদিগকে ভয় দেখাইবে না।”—মীখা ৪:৪.
ঈশ্বর এবং বাধ্য মানবজাতির প্রেমময় যত্নে এই পৃথিবীও সাড়া দেবে। শাস্ত্র আমাদেরকে এই আশ্বাস দেয়: “প্রান্তর ও জলশূন্য স্থান আমোদ করিবে, মরুভূমি উল্লাসিত হইবে, গোলাপের ন্যায় উৎফুল্ল হইবে। . . . যিশাইয় ৩৫:১, ৬) “দেশমধ্যে পর্ব্বত-শিখরে প্রচুর শস্য হইবে।”—গীতসংহিতা ৭২:১৬.
কেননা প্রান্তরে জল উৎসারিত হইবে, ও মরুভূমির নানা স্থানে প্রবাহ হইবে।” (যে কোটি কোটি লোকেরা মারা গেছে, তাদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? যারা ঈশ্বরের স্মরণে আছে তাদেরকে আবার জীবিত করা হবে কারণ “ধার্ম্মিক অধার্ম্মিক উভয় প্রকার লোকের পুনরুত্থান হইবে।” (প্রেরিত ২৪:১৫) হ্যাঁ, মৃতদেরকে জীবন ফিরিয়ে দেওয়া হবে। তাদেরকে ঈশ্বরের শাসনব্যবস্থা সম্বন্ধে শেখানো হবে এবং পরমদেশ পৃথিবীতে অনন্তকাল বেঁচে থাকার সুযোগ দেওয়া হবে।—যোহন ৫:২৮, ২৯.
এভাবেই, হাজার হাজার বছর ধরে দুঃখকষ্ট, অসুস্থতা ও মৃত্যুর দাসত্বে থেকে মানুষ যে ভয়ংকর অবস্থার মধ্যে ছিল, যিহোবা তা পুরোপুরি বদলে দেবেন। কোথাও অসুস্থতা নেই! অক্ষমতা নেই! মৃত্যু নেই! ঈশ্বর “তাহাদের সমস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দিবেন; এবং মৃত্যু আর হইবে না; শোক বা আর্ত্তনাদ বা ব্যথাও আর হইবে না; কারণ প্রথম বিষয় সকল লুপ্ত হইল [হইবে]।”—প্রকাশিত বাক্য ২১:৩, ৪.
এভাবেই ঈশ্বর দুঃখকষ্ট শেষ করবেন। তিনি এই কলুষিত জগৎকে ধ্বংস করবেন এবং পুরোপুরি নতুন বিধিব্যবস্থা নিয়ে আসবেন, যেখানে “ধার্ম্মিকতা বসতি” করে। (২ পিতর ৩:১৩) কত চমৎকার এক সুসংবাদ! আমাদের খুব তাড়াতাড়ি সেই নতুন জগৎ দরকার। আর তা দেখার জন্য আমাদেরকে খুব বেশি দিন অপেক্ষা করতে হবে না। বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীগুলোর পরিপূর্ণতা দেখে আমরা জানি যে, নতুন জগৎ একেবারে দোরগোড়ায় এবং ঈশ্বর যে দুঃখকষ্ট থাকতে অনুমতি দিয়েছেন, তা শেষ হওয়ার সময়ও খুব কাছে।—মথি ২৪:৩-১৪.
[৮ পৃষ্ঠার বাক্স]
মানুষের ব্যর্থ শাসনব্যবস্থা
মানুষের শাসনব্যবস্থা সম্বন্ধে জার্মানির প্রাক্তন চ্যান্সেলর হেলমুট স্মিট বলেছিলেন: “আমরা মানুষেরা . . . সবসময় পক্ষপাত দেখিয়ে জগৎকে শাসন করেছি এবং বেশির ভাগ সময়ই খুব খারাপভাবে তা করেছি। . . . আমরা কখনও পুরোপুরি শান্তিপূর্ণভাবে এটাকে শাসন করিনি।” মানব উন্নয়ন বিবরণ ১৯৯৯ (ইংরেজি) বলেছিল: “সব দেশ সামাজিক বিক্ষোভ, বেড়ে চলা অপরাধ, ঘরে-ঘরে অশান্তি সহ তাদের সামাজিক কাঠামোর অবক্ষয় সম্বন্ধে বলে। . . . সারা পৃথিবীর অবস্থা দিন-দিন এত খারাপ হচ্ছে যে, জাতিগত বা আন্তর্জাতিকভাবে তা সামাল দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ছে।”
[৮ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
“[তাহারা] শান্তির বাহুল্যে আমোদ করিবে।” —গীতসংহিতা ৩৭:১১
[৫ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]
ওপর থেকে তৃতীয়, মা ও শিশু: FAO photo/B. Imevbore; নিচে, বিস্ফোরণ: U.S. National Archives photo