সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

‘দেখুন! বিরাট জনতা!’

‘দেখুন! বিরাট জনতা!’

পূর্ণতা লাভ করে এবং দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকুন

‘দেখুন! বিরাট জনতা!’

 বছরের পর বছর ধরে এই প্রশ্নটা যিহোবার দাসদের ভাবিয়ে তুলেছে। এই বিষয়ে শাস্ত্র কী বলে, তা জানার জন্য অনেক দিন ধরেই চেষ্টা করা হচ্ছিল। এই বিষয় নিয়ে অনেক আলোচনা করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত বাইবেল থেকে এর উত্তর পাওয়া গেছে এবং ১৯৩৫ সালে ওয়াশিংটন ডি.সি.-র এক সম্মেলনে আসা লোকেরা তা শুনে অত্যন্ত রোমাঞ্চিত হয়েছিলেন।

এত সব আলোচনার মূলে এই একটা প্রশ্নই ছিল: প্রকাশিত বাক্য ৭:৯ পদে যে “বিস্তর লোক” অথবা “বিরাট জনতা”-র (NW) কথা বলা হয়েছে, তাদেরকে কীভাবে চেনা যাবে? বিশ্বাসীদের এই দলটা কি স্বর্গে থাকবেন?

দীর্ঘ দিন ধরে একটা প্রশ্ন

“বিস্তর লোক” আসলে কারা, এই প্রশ্নটা প্রেরিত যোহনের সময় থেকে আমাদের দিন পর্যন্ত খ্রীষ্টানদেরকে অনেক ভাবিয়ে তুলেছে। বাইবেল ছাত্ররা মনে করতেন যে, বিরাট জনতা স্বর্গে যাবেন ঠিকই কিন্তু তারা গৌণ শ্রেণীর অধিকারী, তাদের বাইবেলের সত্যের জ্ঞান আছে তবে এই বিষয়ে তারা অন্যদেরকে তেমন একটা জানাননি।

কিন্তু, অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের কিছু সঙ্গীরা অনেক উদ্যোগের সঙ্গে প্রচার করেছিলেন। তাদের স্বর্গে যাওয়ার কোন আকাঙ্ক্ষা ছিল না। সত্যি করে বলতে গেলে, তাদের আশা “লক্ষ লক্ষ ব্যক্তিরা যারা এখন বেঁচে আছেন কখনও মরবেন না” নামে জনসাধারণের উদ্দেশে বক্তৃতায় বলা আশার মতোই ছিল। ১৯১৮ থেকে ১৯২২ সাল পর্যন্ত যিহোবার লোকেরা এই বিষয়টাই ঘোষণা করেছিলেন। সেখানে বলা হয়েছিল যে, এই ব্যক্তিরা চিরকাল পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে পারবেন।

১৯২৩ সালের ১৫ই অক্টোবরের প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) মেষ ও ছাগ সম্বন্ধে যীশুর বলা দৃষ্টান্তটা নিয়ে আলোচনা করেছিল ও বলেছিল: “মেষ বলতে আত্মায়-জাত ব্যক্তিদের নয় বরং ধার্মিকতার জন্য নিরূপিত সমস্ত জাতির লোকেদেরকে বোঝায়, যারা মন থেকে যীশু খ্রীষ্টকে প্রভু বলে স্বীকার করেন এবং যারা তাঁর শাসনে সুন্দর সময়ের জন্য আনন্দের সঙ্গে অপেক্ষা ও আশা করে আছেন।”—মথি ২৫:৩১-৪৬.

আরও আলোকরশ্মি

১৯৩১ সালে, সত্যতা প্রতিপাদন (ইংরেজি) বইয়ের প্রথম খণ্ডে যিহিষ্কেল ৯ অধ্যায় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল এবং জগতের শেষ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য যাদের কপালে চিহ্ন ছিল, তাদেরকে যীশুর দৃষ্টান্তের মেষ বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল। সত্যতা প্রতিপাদন বইয়ের তৃতীয় খণ্ডে (১৯৩২ সালে প্রকাশিত) ন-ইস্রায়েলীয় যিহোনাদবের হৃদয়ের সরলতার কথা আলোচনা করা হয়েছিল, যিনি ইস্রায়েলের মনোনীত রাজা যেহূর সঙ্গে রথে চড়েছিলেন এবং মিথ্যা উপাসকদের হত্যা করতে যেহূর উদ্যোগ দেখার জন্য তার সঙ্গে গিয়েছিলেন। (২ রাজাবলি ১০:১৫-২৮) ওই বই বলেছিল: “যিহোনাদব সেই শ্রেণীর লোকেদের প্রতিনিধিত্ব করে অথবা পূর্বাভাস দেয়, যারা এখন পৃথিবীতে আছেন ও শয়তানের সংগঠনের সঙ্গে যাদের কোন সম্পর্ক নেই, যারা ধার্মিকতার পক্ষে থাকেন এবং হর্‌মাগিদোনের সময় যাদেরকে প্রভু রক্ষা করবেন ও পৃথিবীতে অনন্ত জীবন দেবেন। এই ব্যক্তিদের নিয়ে ‘মেষ’ শ্রেণী গড়ে উঠেছে।”

১৯৩৪ সালে প্রহরীদুর্গ স্পষ্ট করে বলেছিল, যে খ্রীষ্টানদের পার্থিব আশা আছে তাদের নিজেকে যিহোবার কাছে উৎসর্গ করতে ও বাপ্তিস্ম নিতে হবে। সত্যিই, পৃথিবীতে যারা বেঁচে থাকবেন তাদের সম্বন্ধে দীপ্তি দিন-দিন আরও উজ্জ্বল হচ্ছিল।—হিতোপদেশ ৪:১৮.

বোধগম্যতার এক অতি উজ্জ্বল ঝলক

প্রকাশিত বাক্য ৭:৯-১৭ পদে যা বলা হয়েছে সেই বিষয়ে দীপ্তি আরও উজ্জল হয়ে ওঠে। (গীতসংহিতা ৯৭:১১) প্রহরীদুর্গ এইরকম আশা সম্বন্ধে বলেছিল যে, ১৯৩৫ সালের ৩০শে মে থেকে ৩রা জুন পর্যন্ত আমেরিকার ওয়াশিংটন ডি.সি.-তে যে সম্মেলন হবে, তা যিহোনাদব শ্রেণীর ব্যক্তিদের জন্য “এক প্রকৃত সান্ত্বনা ও উপকারের বিষয়” হবে। আর সত্যিই তা-ই হয়েছিল!

“বিস্তর লোক” নামে উদ্দীপনামূলক বক্তৃতা দেওয়ার সময় ভাই জে. এফ. রাদারফোর্ড সম্মেলনে আসা ২০,০০০ জনের সামনে বাইবেল থেকে প্রমাণ করে দেখিয়েছিলেন যে, আজকের দিনের “অপর মেষ” এবং প্রকাশিত বাক্য ৭:৯ পদে বলা “বিরাট জনতা” একই শ্রেণীর ব্যক্তি। (যোহন ১০:১৬, NW) এই বক্তৃতার শেষে বক্তা জিজ্ঞেস করেছিলেন: “যারা চিরকাল পৃথিবীতে বেঁচে থাকার আশা রাখেন, তারা দয়া করে দাঁড়াবেন কি?” উপস্থিত বেশির ভাগ লোকেরা যখন উঠে দাঁড়িয়েছিলেন তখন রাদারফোর্ড বলেছিলেন: “দেখুন! বিস্তর লোক!” প্রথমে চারিদিক নীরব হয়ে গিয়েছিল কিন্তু পরে উচ্চস্বরে আনন্দধ্বনি শোনা গিয়েছিল। এর পরদিন ৮৪০ জন বাপ্তিস্ম নিয়ে যিহোবার নতুন সাক্ষি হয়েছিলেন, যাদের মধ্যে বেশির ভাগ ব্যক্তিই বিরাট জনতার অংশ ছিলেন।

এক লক্ষণীয় উপস্থিতি

১৯৩৫ সালের আগে যারা বাইবেলের বার্তা শুনেছিলেন এবং জোরকদমে সুসমাচার প্রচার করেছিলেন, তাদের অনেকেই পরমদেশ পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। স্বর্গে যাওয়ার কোন ইচ্ছা তাদের ছিল না কারণ ঈশ্বর তাদেরকে স্বর্গীয় জীবনের আশা দেননি। নিজেদেরকে অপর মেষের বিরাট জনতা হিসেবে চিহ্নিত করে তারা দেখিয়েছিলেন যে, ১,৪৪,০০০ অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের আহ্বান ১৯৩৫ সালের মধ্যে শেষ হয়ে গিয়েছিল।—প্রকাশিত বাক্য ৭:৪.

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, বিরাট জনতাকে সংগ্রহ করার কাজ থামিয়ে দেওয়ার জন্য শয়তান দিয়াবল উঠে পড়ে লেগেছিল। অনেক দেশে রাজ্যের প্রচার কাজকে নিষেধ করে দেওয়া হয়েছিল। ওই অন্ধকারময় দিনগুলোতে এবং মারা যাওয়ার কিছুদিন আগে, ১৯৪২ সালের জানুয়ারি মাসে জে. এফ. রাদারফোর্ড বলেছিলেন: “‘মনে হচ্ছে বিস্তর লোকের’ সংখ্যা খুব বেশি নয়।”

কিন্তু, ঈশ্বরের আশীর্বাদে আসলে এমনটা হয়নি। ‘পূর্ণতা লাভ করে এবং দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে’ অভিষিক্ত ব্যক্তিরা এবং তাদের সঙ্গী অপর মেষেরা শিষ্য তৈরির দায়িত্ব পালন করে চলছিলেন। (কলসীয় ৪:১২, NW; মথি ২৪:১৪; ২৮:১৯, ২০) ১৯৪৬ সালের মধ্যে সারা পৃথিবীতে মোট ১,৭৬,৪৫৬ জন যিহোবার সাক্ষি প্রচার করেছিলেন, যাদের মধ্যে বেশির ভাগই বিস্তর লোকের অংশী ছিলেন। ২০০০ সালে, দ্বীপ ও দেশ মিলিয়ে ২৩৫টা জায়গায় ৬০,০০,০০০-রও বেশি সাক্ষিরা বিশ্বস্তভাবে যিহোবাকে সেবা করে যাচ্ছেন—এক বিরাট জনতাই বটে! আর এই সংখ্যা দিন-দিন বেড়েই চলেছে।