সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

চূড়ান্ত বিজয়ের জন্য সামনের দিকে এগিয়ে চলা!

চূড়ান্ত বিজয়ের জন্য সামনের দিকে এগিয়ে চলা!

চূড়ান্ত বিজয়ের জন্য সামনের দিকে এগিয়ে চলা!

“দেখ, এক শুক্লবর্ণ অশ্ব, এবং তাহার উপরে যিনি বসিয়া আছেন, তিনি ধনুর্ধারী, ও তাঁহাকে এক মুকুট দত্ত হইল; এবং তিনি জয় করিতে করিতে ও জয় করিবার জন্য বাহির হইলেন।”প্রকাশিত বাক্য ৬:২.

১. যোহন দর্শনে ভবিষ্যতের কোন্‌ ঘটনাগুলো দেখেছিলেন?

 ঈশ্বরের অনুপ্রেরণায় প্রেরিত যোহন ভবিষ্যতের প্রায় ১,৮০০ বছরের ঘটনা দেখতে পেয়েছিলেন এবং রাজা হিসেবে খ্রীষ্টের সিংহাসনে বসার বিষয়টা বর্ণনা করেছিলেন। দর্শনে যোহন যা দেখেছিলেন তা সত্যি সত্যি পূর্ণ হবে কি না, এর জন্য তার বিশ্বাসের দরকার ছিল। আজকে আমাদের কাছে স্পষ্ট প্রমাণ আছে যে, সিংহাসনে বসার এই ভবিষ্যদ্বাণীটা ১৯১৪ সালে পূর্ণ হয়েছে। বিশ্বাসের চোখ দিয়ে আমরা দেখি যে, যীশু খ্রীষ্ট “জয় করিতে করিতে ও জয় করিবার জন্য” যাচ্ছেন।

২. রাজ্যের জন্মের পর দিয়াবল কেমন প্রতিক্রিয়া দেখায় আর এর থেকে কোন্‌ বিষয়টা স্পষ্ট?

রাজ্যের জন্মের পর শয়তানকে স্বর্গ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল ও এর ফলে সে আগের চেয়ে আরও প্রচণ্ড এবং আরও বেশি ক্রুদ্ধ হয়ে যুদ্ধ করছে কিন্তু কখনোই জয়ী হতে পারবে না। (প্রকাশিত বাক্য ১২:৭-১২) তার রাগের কারণে জগতের অবস্থা এখন আরও চরম আকার ধারণ করেছে। মানব সমাজ বিভক্ত হয়ে পড়েছে। যিহোবার সাক্ষিদের কাছে এটা স্পষ্ট যে, তাদের রাজা “জয় করিবার জন্য” সামনের দিকে এগিয়ে চলেছেন।

নতুন জগতের সমাজ গঠিত হচ্ছে

৩, ৪. (ক) রাজ্যের জন্মের পর থেকে খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর সাংগঠনিক ব্যবস্থায় কোন্‌ কোন্‌ রদবদল হয়েছে এবং সেগুলোর কেন দরকার ছিল? (খ) যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী এই পরিবর্তনগুলো কী উপকার করেছে?

রাজ্যের জন্মের পর, আবারও গড়ে ওঠা খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীকে রাজ্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত আরও বড় দায়িত্বগুলো দেওয়ার সময় এসেছিল আর এই ক্ষেত্রে প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর নমুনা অনুসরণ করা হয়েছিল। তাই, ১৯৩৮ সালের ১লা ও ১৫ই জুনের প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পরীক্ষা করে দেখেছিল যে, খ্রীষ্টীয় সংগঠন কীভাবে কাজ করবে। পরে ১৯৭১ সালের ১৫ই ডিসেম্বর (ইংরেজি) সংখ্যায় “বৈধ সত্ত্বা থেকে পরিচালক গোষ্ঠী যেভাবে আলাদা” প্রবন্ধে আরও স্পষ্ট করে আধুনিক দিনের পরিচালক গোষ্ঠীকে চিহ্নিত করা হয়েছিল। ১৯৭২ সালে, স্থানীয় মণ্ডলীগুলোতে সাহায্য ও নির্দেশনা দেওয়ার জন্য প্রাচীন গোষ্ঠীকে নিয়োগ করা হয়েছিল।

সঠিকভাবে দেখাশোনা করার জন্য আবারও এই ব্যবস্থা নেওয়ায় তা খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীকে অনেক শক্তিশালী করেছিল। এছাড়াও প্রাচীন গোষ্ঠীকে তাদের দায়িত্বগুলো সম্বন্ধে নির্দেশনা দেওয়ার ও সেইসঙ্গে তাদেরকে বিচার সংক্রান্ত বিষয়গুলোর জন্য প্রশিক্ষিত করে তুলতে পরিচালক গোষ্ঠী যে ব্যবস্থা করেছিলেন, তা-ও এই ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখেছিল। যিহোবার পার্থিব সাংগঠনিক ব্যবস্থায় ধীরে ধীরে উন্নতি ও এর উপকারের বিষয়ে যিশাইয় ৬০:১৭ পদে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল: “আমি পিত্তলের পরিবর্ত্তে সুবর্ণ, এবং লৌহের পরিবর্ত্তে রৌপ্য আনিব, কাষ্ঠের পরিবর্ত্তে পিত্তল, ও প্রস্তরের পরিবর্ত্তে লৌহ আনিব; আর আমি শান্তিকে তোমার অধ্যক্ষ করিব, ধার্ম্মিকতাকে তোমার শাসনকর্ত্তা করিব।” এই উন্নতিগুলো দেখিয়েছিল যে, এতে ঈশ্বরের আশীর্বাদ আছে ও যারা মন থেকে তাঁর রাজ্যকে সমর্থন করার জন্য এগিয়ে এসেছিলেন তাদেরকে ঈশ্বর অনুমোদন করেছেন।

৫. (ক) যিহোবা যখন তাঁর লোকেদের আশীর্বাদ করেছিলেন তখন শয়তান কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল? (খ) ফিলিপীয় ১:৭ পদের সঙ্গে মিল রেখে, শয়তানের ক্রোধের প্রতি যিহোবার লোকেরা কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন?

রাজ্যের জন্মের পর থেকে ঈশ্বর তাঁর লোকেদের প্রতি প্রেম দেখিয়ে যে মনোযোগ ও নির্দেশনা দিয়েছিলেন, তা শয়তানের অজানা ছিল না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ১৯৩১ সালে খ্রীষ্টানদের এই ছোট্ট দল লোকেদের কাছে ঘোষণা করেছিলেন যে, তারা কেবল বাইবেল ছাত্রই নয়। যিশাইয় ৪৩:১০ পদের সঙ্গে মিল রেখে তারা ছিলেন যিহোবার সাক্ষি! কাকতালীয় ব্যাপার হোক বা না হোক, সেই সময় দিয়াবল সারা পৃথিবীতে প্রচণ্ড তাড়নার ঢেউ বইয়ে দিয়েছিল, যেরকম তাড়না এর আগে কখনও হয়নি। ধর্মীয় স্বাধীনতার জন্য পরিচিত দেশগুলো যেমন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও জার্মানির সাক্ষিদেরকে পর্যন্ত তাদের উপাসনার স্বাধীনতা আদায় করার জন্য বার বার আইনগত যুদ্ধ করতে হয়েছিল। ১৯৮৮ সালের মধ্যে, যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট যিহোবার সাক্ষিদের ৭১টা মামলা আবার পরীক্ষা করেছিল এবং সেগুলোর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ মামলায়ই তাদের পক্ষে রায় দেওয়া হয়েছিল। প্রথম শতাব্দীর মতো আজকেও “সুসমাচারের পক্ষসমর্থনে ও প্রতিপাদন সম্বন্ধে” সারা পৃথিবীতে আইনগত যুদ্ধ চলছে।—ফিলিপীয় ১:৭.

৬. নিষেধাজ্ঞা ও বাধা কি যিহোবার লোকেদেরকে সামনে এগিয়ে যাওয়া থেকে থামিয়ে রাখতে পেরেছে? বুঝিয়ে বলুন।

১৯৩০ এর দশকে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে জার্মানি, স্পেন ও জাপান ছাড়াও আরও অন্যান্য দেশগুলোতে একনায়ক সরকারগুলো যিহোবার লোকেদের কাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল বা বাধা দিয়েছিল। কিন্তু ২০০০ সালে, শুধু এই তিনটে দেশেই ঈশ্বরের রাজ্যের পক্ষে প্রায় ৫,০০,০০০ জন সক্রিয় ঘোষণাকারী আছে। আর এটা ১৯৩৬ সালে সারা পৃথিবীতে যত সাক্ষিরা ছিলেন তাদের সংখ্যার প্রায় দশগুণ বেশি! অতএব এটা স্পষ্ট যে, নিষেধাজ্ঞা বা বাধা যিহোবার লোকেদেরকে তাদের বিজয়ী নেতা যীশু খ্রীষ্টের নেতৃত্বে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া থেকে তাদের থামিয়ে রাখতে পারেনি।

৭. ১৯৫৮ সালে কোন্‌ উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছিল আর তখন থেকে কোন্‌ নাটকীয় পরিবর্তন হয়ে এসেছে?

১৯৫৮ সালে, নিউ ইয়র্ক সিটিতে ঐশিক ইচ্ছা আন্তর্জাতিক অধিবেশন নামে যিহোবার সাক্ষিদের সবচেয়ে বড় সম্মেলনে যখন সর্বোচ্চ ২,৫৩,৯২২ জন উপস্থিত হয়েছিলেন তখন তা দেখিয়েছিল যে, তারা সামনের দিকে এগিয়ে চলেছেন। ১৯৭০ সালের মধ্যে, তাদের কাজ আগের অনুচ্ছেদে বলা তিনটে দেশেই আবার শুরু হয়ে গিয়েছিল। তবে তখন যে জায়গা পূর্ব জার্মানি নামে পরিচিত ছিল, সেখানে কাজ শুরু করা যায়নি। কিন্তু, বৃহত্তর সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং এর সঙ্গে ওয়ার্‌স শান্তি চুক্তি সমর্থনকারী দেশগুলোতে সাক্ষিদের কাজের ওপর তখনও নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিন্তু, আজকে এই দেশগুলোতে যেখানে আগে সাম্যবাদ ছিল এখন সেখানে পাঁচ লক্ষেরও বেশি সক্রিয় সাক্ষি আছেন।

৮. তাঁর লোকেদের ওপর যিহোবার আশীর্বাদের ফল কী হয়েছে এবং ১৯৫০ সালের প্রহরীদুর্গ এই বিষয়ে কী বলেছিল?

যিহোবার সাক্ষিদের সংখ্যা বৃদ্ধি করে তাদেরকে আশীর্বাদ করা হয়েছে কারণ তারা “প্রথমে [ঈশ্বরের] রাজ্য ও তাঁহার ধার্ম্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা” করে চলেছেন। (মথি ৬:৩৩) ইতিমধ্যে যিশাইয়ের এই ভবিষ্যদ্বাণী আক্ষরিকভাবে পূর্ণ হয়েছে: “যে ছোট, সে সহস্র হইয়া উঠিবে, যে ক্ষুদ্র, সে বলবান্‌ জাতি হইয়া উঠিবে; আমি সদাপ্রভু যথাকালে ইহা সম্পন্ন করিতে সত্বর হইব।” (যিশাইয় ৬০:২২) আর এখনও এই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। গত দশ বছরে রাজ্য শাসনের সক্রিয় সমর্থনকারীদের সংখ্যা প্রায় ১৭,৫০,০০০ জনেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা স্বেচ্ছায় এমন এক দলের অংশ হয়েছেন, যাদের সম্বন্ধে ১৯৫০ সালের প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) এই মন্তব্য করেছিল: “ঈশ্বর এখন নতুন জগতের সমাজকে তৈরি করছেন। . . . এই দলটা হর্‌মাগিদোনের মধ্যে দিয়ে পার হবেন, . . . তারাই হবেন ‘নূতন পৃথিবীর’ প্রথম ব্যক্তি . . . যারা সাংগঠনিক পদ্ধতি জানেন ও ঈশতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সংগঠিত হয়েছেন।” ওই প্রবন্ধ এই কথা বলে শেষ হয়েছিল: “তাই, আসুন আমরা সবাই একসঙ্গে নতুন জগতের সমাজ হিসেবে এগিয়ে যাই!”

৯. বছরের পর বছর ধরে যিহোবার সাক্ষিরা যে বিষয়গুলো শিখেছেন সেগুলো কীভাবে উপকারী?

এর মধ্যে, এই বেড়ে চলা নতুন জগৎ সমাজের লোকেরা কাজ সম্বন্ধে বাস্তবজ্ঞান লাভ করেছেন ও তা আজকে খুবই উপকারী প্রমাণ হয়েছে আর হর্‌মাগিদোনের পরে পুনর্স্থাপনের সময়ও হয়তো তা কাজে আসবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সাক্ষিরা বড় বড় সম্মেলনের ব্যবস্থা করতে, জরুরি ত্রাণ সামগ্রী দ্রুত বিতরণ করতে এবং দ্রুত নির্মাণ কাজ করতে শিখেছেন। এই কাজগুলো দেখে অনেকে যিহোবার সাক্ষিদেরকে শ্রদ্ধা ও সম্মান করেছেন।

ভুল ধারণাগুলোকে সংশোধন করা

১০, ১১. যিহোবার সাক্ষিদের সম্বন্ধে ভুল ধারণাগুলোকে কীভাবে সংশোধন করা হয়েছে, তা বুঝিয়ে বলুন।

১০ কিন্তু, এমন লোকেরাও আছেন যারা সাক্ষিদেরকে সমাজ ছাড়া বলে দোষ দেয়। মূলত রক্ত দেওয়া-নেওয়া, নিরপেক্ষতা, ধূমপান ও নৈতিকতা সম্বন্ধে তাদের বাইবেল ভিত্তিক বিশ্বাসের জন্যই এই দোষ দেওয়া হয়। কিন্তু, অনেকেই এখন স্বীকার করছেন যে, সাক্ষিদের মতামতগুলো মন দিয়ে বিবেচনা করার মতো। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, পোল্যান্ডের একজন মহিলা ডাক্তার যিহোবার সাক্ষিদের প্রশাসনিক অফিসে ফোন করে বলেছিলেন যে, রক্ত দেওয়া-নেওয়ার বিষয়ে তিনি ও তার সহকর্মীরা হাসপাতালে কয়েক ঘন্টা তর্ক করেছেন। জান্নেক জাহোদনি নামে পোলিশ খবরের কাগজে সেদিন প্রকাশিত একটা প্রবন্ধই এই তর্কবিতর্কের মূল কারণ। ওই ডাক্তার স্বীকার করেছিলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি যে, রোগীদের চিকিৎসা করার সময় অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োজন না হলেও রক্ত দেওয়া হয়। এই বিষয়টা বদলানো দরকার আর কেউ একজন বিষয়টা উত্থাপন করায় আমি খুবই খুশি। এই বিষয়ে আমি আরও তথ্য জানতে চাই।’

১১ গত বছর অনুষ্ঠিত একটা কনফারেন্সে আমেরিকা, ইউরোপ, ইস্রায়েল এবং কানাডা থেকে আসা চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা রক্ত ছাড়া রোগীর চিকিৎসা করতে ডাক্তারদের সাহায্য করার জন্য কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত এই সভায় বলা হয়েছিল যে, বেশির ভাগ লোকেরা হয়তো এটা স্বীকার করবে না কিন্তু দেখা গেছে, যে রোগীরা রক্ত নেননি তাদের চেয়ে যারা রক্ত নিয়েছিলেন তাদের মৃত্যুর হার বেশি। সাক্ষি রোগীরা সাধারণত যে রোগীদেরকে রক্ত দেওয়া হয় তাদের চেয়ে আগে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যান ও এর ফলে তাদের চিকিৎসার খরচও কম হয়।

১২. রাজনীতিতে যিহোবার সাক্ষিদের নিরপেক্ষ অবস্থান সম্পর্কে কিছু বিখ্যাত ব্যক্তিরা যে প্রশংসা করেছেন সেই সম্বন্ধে উদাহরণ দিন।

১২ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে ও যুদ্ধ চলাকালে যিহোবার সাক্ষিরা যখন নাৎসি আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছিলেন তখন তাদের নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়ে অনেক ইতিবাচক মন্তব্য করা হয়েছিল। ১৯৯৬ সালের ৬ই নভেম্বর জার্মানির রেভেন্সব্রুক কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে যিহোবার সাক্ষিদের তৈরি নাৎসি আক্রমণের বিরুদ্ধে যিহোবার সাক্ষিদের দৃঢ়তা (ইংরেজি) নামে ভিডিও দেখানোর পর তাদের পক্ষে অনেক ভাল মন্তব্য শোনা গিয়েছিল। ১৯৯৮ সালের ১৮ই এপ্রিল বেরগেন-বেলসনের কুখ্যাত কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে যখন এই ভিডিওটা দেখানো হয় তখন লোয়ার স্যাক্সোনিতে সেন্টার ফর পলিটিক্যাল এডুকেশন এর পরিচালক ড. ওল্ফগ্যাং শিল স্বীকার করেছিলেন: “অপ্রিয় হলেও সত্য যে, জাতীয় সমাজতন্ত্রকে অস্বীকার করার জন্য সাক্ষিদের দৃঢ়সংকল্প খ্রীষ্টীয় গির্জাগুলোর চেয়ে অনেক অনেক বেশি জোরালো। . . . যিহোবার সাক্ষিদের শিক্ষা ও ধর্মের জন্য তাদের উদ্যোগ দেখে আমরা যা-ই মনে করি না কেন, নাৎসি শাসনের সময় তাদের দৃঢ়তা অবশ্যই সম্মানের যোগ্য।”

১৩, ১৪. (ক) প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানদের পক্ষে এক অপ্রত্যাশিত উৎস থেকে কেমন মন্তব্য শোনা গিয়েছিল? (খ) আজকে ঈশ্বরের লোকেদের পক্ষে যে ভাল মন্তব্য শোনা যায় তার কিছু উদাহরণ দিন।

১৩ যে বিষয়গুলো নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়, সেগুলোর ওপর বিখ্যাত ব্যক্তিরা বা আদালত যখন যিহোবার সাক্ষিদের পক্ষে রায় দেয় তখন তাদের সম্বন্ধে লোকেদের ভুল ধারণাগুলো ভেঙে যায় ও সাধারণ লোকেরা সাক্ষিদেরকে ভাল চোখে দেখতে থাকে। এর ফলে সেই লোকেদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ খুলে যায়, যারা আগে কখনও সাক্ষিদের কথা শুনতে চাইতেন না। তাই, এই ঘটনাগুলোতে যিহোবার সাক্ষিরা আনন্দিত হন ও সেগুলোর প্রতি প্রকৃত উপলব্ধি দেখান। এটা আমাদেরকে প্রথম শতাব্দীর যিরূশালেমের কথা মনে করিয়ে দেয়। উদ্যোগের সঙ্গে প্রচার করার জন্য যিহুদিদের উচ্চ আদালত মহাসভা যখন খ্রীষ্টানদেরকে হত্যা করতে চেয়েছিল তখন, “সকল লোকের নিকটে মান্য ব্যবস্থা-গুরু” গমলীয়েল সাবধান করে বলেছিলেন: “হে ইস্রায়েল-লোকেরা, সেই লোকদের বিষয়ে তোমরা কি করিতে উদ্যত হইয়াছ, তদ্বিষয়ে সাবধান হও। . . . তোমরা এই লোকদের হইতে ক্ষান্ত হও, তাহাদিগকে থাকিতে দেও; কেননা এই মন্ত্রণা কিম্বা এই ব্যাপার যদি মনুষ্য হইতে হইয়া থাকে, তবে লোপ পাইবে; কিন্তু যদি ঈশ্বর হইতে হইয়া থাকে, তবে তাহাদিগকে লোপ করা তোমাদের সাধ্য নয়, কি জানি, দেখা যাইবে যে, তোমরা ঈশ্বরের সহিত যুদ্ধ করিতেছ।”—প্রেরিত ৫:৩৩-৩৯.

১৪ গমলীয়েলের মতো, আজকেও বিখ্যাত ব্যক্তিরা যিহোবার সাক্ষিদেরকে ধর্মীয় স্বাধীনতা দেওয়ার পক্ষে কথা বলেছেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ধর্ম ও বিশ্বাসের স্বাধীনতা বিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন সভাপতি যুক্তি দেখিয়ে বলেছিলেন: “কোন ধর্মের বিশ্বাসগুলোকে সমাজ মেনে নিতে চায় না বা সমাজে প্রচলিত নয় বলে, সেই ধর্মের ধর্মীয় অধিকারগুলোকে খর্ব করা উচিত নয়।” আর জার্মান সরকারি কমিশন তথাকথিত ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলোকে তদন্ত করায় লিপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্ম বিষয়ক বৈজ্ঞানিক গবেষণার একজন অধ্যাপক জিজ্ঞেস করেছিলেন: “বড় দুটো গির্জাকে [রোমান ক্যাথলিক ও লুথারিয়ান] তদন্ত না করে কেন শুধু লঘু ধর্মীয় দলগুলোকেই অনুসন্ধান করা হয়?” জার্মানির প্রাক্তন এক সরকারি কর্মকর্তার কথা থেকে আমরা খুব সহজেই এই প্রশ্নের উত্তর পাই, যিনি লিখেছিলেন: “কোন সন্দেহ নেই যে, পর্দার আড়ালে গির্জার গোঁড়া ব্যক্তিরাই আসলে সরকারি কমিশনকে এই আদেশ দিয়েছিলেন।”

স্বস্তির জন্য আমরা কার দিকে তাকাই?

১৫, ১৬. (ক) গমলীয়েলের কথা কেন পুরোপুরি কার্যকর হয়নি? (খ) কীভাবে অন্য তিনজন প্রভাবশালী ব্যক্তি যীশুর জন্য খুব বেশি কিছু করতে পারেননি?

১৫ গমলীয়েলের কথা থেকে খুব স্পষ্ট বোঝা যায় যে, কোন কাজে ঈশ্বরের সাহায্য থাকলে তা কখনও ব্যর্থ হতে পারে না। কোন সন্দেহ নেই যে, তিনি মহাসভায় এই কথা বলায় প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানরা উপকার লাভ করেছিলেন কিন্তু তারা যীশুর এই কথা ভুলে যাননি যে, তাঁর অনুসারীদেরকে তাড়না ভোগ করতে হবে। গমলীয়েলের কথা শুনে ধর্মীয় নেতারা তাদেরকে হত্যা করার পরিকল্পনা থেকে ক্ষান্ত হয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু তাই বলে তাদের প্রতি তাড়না পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়নি, কারণ আমরা পড়ি: “তখন তাঁহারা তাঁহার কথায় সম্মত হইলেন, আর প্রেরিতদিগকে কাছে ডাকিয়া প্রহার করিলেন, এবং যীশুর নামে কোন কথা কহিতে নিষেধ করিয়া ছাড়িয়া দিলেন।”—প্রেরিত ৫:৪০.

১৬ যীশুর বিচার করার সময় পন্তীয় পীলাত যখন তাঁর কোন দোষ খুঁজে পাননি তখন তিনি যীশুকে ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি পারেননি। (যোহন ১৮:৩৮, ৩৯; ১৯:৪, ৬, ১২-১৬) এমনকি মহাসভার দুজন সদস্য, নীকদীম ও আরিমাথিয়ার যোষেফ যারা যীশুর পক্ষে ছিলেন তারাও যীশুর বিরুদ্ধে আদালত যে শাস্তি দিয়েছিল, তা থামাতে পারেননি। (লূক ২৩:৫০-৫২; যোহন ৭:৪৫-৫২; ১৯:৩৮-৪০) উদ্দেশ্য যাই হোক না কেন, কিছু লোক যখন যিহোবার লোকেদের পক্ষ হয়ে কোন কথা বলেন তখন তা শুনে তারা কিছুটা স্বস্তি পান। জগৎ যেমন খ্রীষ্টকে ঘৃণা করেছিল, তেমনই তাঁর প্রকৃত অনুসারীদেরও ঘৃণা করে যাবে। পুরোপুরি স্বস্তি একমাত্র যিহোবার কাছ থেকেই আসবে।—প্রেরিত ২:২৪.

১৭. যিহোবার সাক্ষিরা কোন্‌ বাস্তব বিষয়টা জানেন কিন্তু কেন তারা সুসমাচার প্রচার করে চলার জন্য তাদের যে সংকল্প রয়েছে তাতে দুর্বল হয়ে পড়েন না?

১৭ সত্যি করে বলতে গেলে, যিহোবার সাক্ষিরা জানেন যে তাড়না আসবেই। চূড়ান্ত যুদ্ধে শয়তানের বিধিব্যবস্থা পুরোপুরি নির্মূল হলেই একমাত্র বিরোধিতা বন্ধ হবে। কিন্তু, কষ্টকর হলেও এই তাড়নার কারণে সাক্ষিরা রাজ্যের বিষয় প্রচার করার দায়িত্বে অবহেলা করেন না। ঈশ্বর যদি তাদের সাহায্য করে থাকেন, তাহলে কেনই বা তারা তা করবেন? উপযুক্ত উদাহরণ হিসেবে তারা তাদের সাহসী নেতা, যীশু খ্রীষ্টের ওপর নির্ভর করেন।—প্রেরিত ৫:১৭-২১, ২৭-৩২.

১৮. যিহোবার লোকেদের জন্য এখনও কোন্‌ বাধা অপেক্ষা করছে কিন্তু কোন্‌ ফলাফলের বিষয়ে তারা নিশ্চিত?

১৮ একেবারে শুরু থেকেই সত্য ধর্ম ঘোর বিরোধিতার মুখোমুখি হয়ে এসেছে। স্বর্গ থেকে নিপাতিত হওয়ার পর গোগ অর্থাৎ শয়তান যতখানি হিংস্র ছিল, খুব শীঘ্রিই সে আগের চেয়েও আরও প্রচণ্ডভাবে সত্য ধর্মকে আক্রমণ করবে। কিন্তু, সত্য ধর্ম টিকে থাকবে। (যিহিষ্কেল ৩৮:১৪-১৬) তারপর শয়তানের নির্দেশে ‘জগৎ সমুদয়ের রাজারা’ “মেষশাবকের সহিত যুদ্ধ করিবে, আর মেষশাবক তাহাদিগকে জয় করিবেন, কারণ ‘তিনি প্রভুদের প্রভু ও রাজাদের রাজা।’” (প্রকাশিত বাক্য ১৬:১৪; ১৭:১৪) হ্যাঁ, আমাদের রাজা চূড়ান্ত বিজয়ের জন্য সামনের দিকে এগিয়ে চলেছেন এবং শীঘ্রিই “জয়” করবেন। অল্প কিছুদিন পর, যিহোবার উপাসকরা যখন বলবেন যে “ঈশ্বর . . . আমাদের সপক্ষ,” তখন আর কেউই এর কোন রকম প্রতিবাদ করবে না জেনে যীশুর সঙ্গে সঙ্গে চলা, আমাদের জন্য কত বড় এক সুযোগ!—রোমীয় ৮:৩১; ফিলিপীয় ১:২৭, ২৮.

আপনি কি বলতে পারেন?

• রাজ্যের জন্ম থেকে খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীকে শক্তিশালী করার জন্য যিহোবা কী করেছেন?

• খ্রীষ্ট যাতে তাঁর জয় সম্পূর্ণ করতে না পারেন এর জন্য শয়তান কী করেছে কিন্তু তার ফল কী হয়েছে?

• যারা সাক্ষি নন তারা যখন আমাদের পক্ষে কথা বলেন তখন এর প্রতি আমাদের কোন্‌ ভারসাম্যপূর্ণ মনোভাব রাখা উচিত?

• খুব শীঘ্রিই শয়তান কী করবে এবং এর ফল কী হবে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

সম্মেলনগুলো হল এক বিরাট প্রমাণ যে যিহোবার লোকেরা সামনের দিকে এগিয়ে চলেছেন

[২০ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সাক্ষিদের নিরপেক্ষতা এখনও যিহোবার প্রশংসা আনে