সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহোবার ওপর আপনার আস্থা আরও দৃঢ় করুন

যিহোবার ওপর আপনার আস্থা আরও দৃঢ় করুন

যিহোবার ওপর আপনার আস্থা আরও দৃঢ় করুন

জঘন্য ষড়যন্ত্র চলছে। দেশের সমস্ত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা একত্রে বসে আলোচনা করে এক নতুন আইনের প্রস্তাব করেন। তাদের তৈরি আইনে রয়েছে, রাষ্ট্র অনুমোদন করে না এমন উপাসনায় কেউ জড়িত হলে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে।

 এই ঘটনাটা কি পরিচিত বলে মনে হচ্ছে? ইতিহাসে এমন ভূরিভূরি উদাহরণ রয়েছে, যারা আইনের অপব্যবহার করে লোকেদের ক্ষতি করেছেন। শুরুতেই বলা ঘটনাটা দানিয়েল ভাববাদীর সময়ে পারস্য সাম্রাজ্যে ঘটেছিল। রাজা দারিয়াবস যে আইন বলবৎ করেছিলেন তা ছিল: “যদি কেহ ত্রিশ দিন পর্য্যন্ত মহারাজ ব্যতীত কোন দেবতার কিম্বা মানুষের কাছে প্রার্থনা করে, তবে . . . সে সিংহদের খাতে নিক্ষিপ্ত হইবে।”—দানিয়েল ৬:৭-৯.

মৃত্যুর হুমকির মুখে দানিয়েল কী করবেন? তিনি কি তার ঈশ্বর যিহোবার ওপর আগের মতোই আস্থা রাখবেন, নাকি আপোশ করে রাজার নির্দেশ পালন করবেন? বিবরণ আমাদের জানায়: “পত্রখানি স্বাক্ষরিত হইয়াছে, ইহা দানিয়েল যখন জানিতে পাইলেন, তখন আপন গৃহে গেলেন; তাঁহার কুঠরীর বাতায়ন যিরূশালেমের দিকে খোলা ছিল; তিনি দিনের মধ্যে তিনবার জানু পাতিয়া আপন ঈশ্বরের সম্মুখে প্রার্থনা ও স্তবগান করিলেন, যেমন পূর্ব্বে করিতেন।” (দানিয়েল ৬:১০) এর পরের ঘটনা প্রায় সকলেরই জানা। দানিয়েলকে তার বিশ্বাসের জন্য সিংহের গর্তে ফেলে দেওয়া হয়েছিল কিন্তু যিহোবা “সিংহদের মুখ বদ্ধ” করে তাঁর বিশ্বস্ত দাসকে রক্ষা করেছিলেন।—ইব্রীয় ১১:৩৩; দানিয়েল ৬:১৬-২২.

আত্মপরীক্ষার সময়

আজকে, যিহোবার দাসেরা এমন এক প্রতিকূল জগতে আছেন, যেখানে প্রায়ই তাদের শারীরিক ও আধ্যাত্মিক নিরাপত্তা হুমকির মুখোমুখি হচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কিছু দেশে পাশবিক বর্ণবিদ্বেষের জন্য অনেক সাক্ষিকে হত্যা করা হয়েছে। আবার অন্য জায়গায় যিহোবার দাসেরা খাদ্যের অভাব, টাকাপয়সার সমস্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, কঠিন রোগ এবং অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হয়েছেন। এছাড়াও, তারা তাড়না, চাকরির জায়গায় চাপ এবং অন্যায় কাজ করার বিভিন্ন প্রলোভন সহ্য করেন, যেগুলো তাদের আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যের জন্য হুমকির কারণ হতে পারে। সত্যি বলতে কী, প্রধান শত্রু শয়তান যে কোন উপায়েই হোক না কেন, যিহোবার দাসদের ধ্বংস করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।—১ পিতর ৫:৮.

এইধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে আমরা কী করতে পারি? যখন একজনের জীবন হুমকির মুখে থাকে, তখন ভয় পাওয়াটা স্বাভাবিক কিন্তু সেই সময় আমরা পৌলের আশ্বাসবাণী মনে রাখতে পারি: “[যিহোবা] বলিয়াছেন, ‘আমি কোন ক্রমে তোমাকে ছাড়িব না, ও কোন ক্রমে তোমাকে ত্যাগ করিব না।’ অতএব আমরা সাহসপূর্ব্বক বলিতে পারি, ‘প্রভু আমার সহায়, আমি ভয় করিব না; মনুষ্য আমার কি করিবে?’” (ইব্রীয় ১৩:৫, ৬) আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, তাঁর দাসদের ব্যাপারে আজকেও যিহোবার একই অনুভূতি রয়েছে। কিন্তু, যিহোবার প্রতিজ্ঞা সম্বন্ধে জানা এক কথা আর তিনি আমাদের মঙ্গলের জন্য কিছু করবেন তা বিশ্বাস করা সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা। তাই, যিহোবার ওপর আমাদের আস্থা গড়ে ওঠার কারণ কী এবং সেই আস্থাকে আরও দৃঢ় করতে ও বজায় রাখতে আমরা আমাদের যথাসাধ্য করি কি না, তা পরীক্ষা করা আমাদের জন্য জরুরি। যদি আমরা সেটা করি, তাহলে “সমস্ত চিন্তার অতীত যে ঈশ্বরের শান্তি তাহা [আমাদের] হৃদয় ও মন খ্রীষ্ট যীশুতে রক্ষা করিবে।” (ফিলিপীয় ৪:৭) আর তাহলেই, পরীক্ষা আসলে আমরা ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করতে এবং বুদ্ধির সঙ্গে সেগুলো মোকাবিলা করতে পারব।

যিহোবার ওপর আস্থা রাখার কারণ

আমাদের সৃষ্টিকর্তা যিহোবার ওপর আস্থা রাখার অনেক কারণ আমাদের রয়েছে। প্রথম কারণ হল, যিহোবা হলেন একজন প্রেমময় ঈশ্বর যিনি সত্যিই তাঁর দাসদের জন্য চিন্তা করেন। যিহোবা যে তাঁর দাসদের জন্য প্রেমের সঙ্গে চিন্তা করেন, সেই বিষয়ে বাইবেলে অগণিত ঘটনা লেখা আছে। তাঁর মনোনীত লোক, ইস্রায়েলীয়দের সঙ্গে যিহোবার আচরণ সম্বন্ধে বর্ণনা করে মোশি লিখেছিলেন: “তিনি তাহাকে পাইলেন প্রান্তর-দেশে, পশুগর্জ্জনময় ঘোর মরুভূমিতে; তিনি তাহাকে বেষ্টন করিলেন, তাহার তত্ত্ব লইলেন, নয়ন-তারার ন্যায় তাহাকে রক্ষা করিলেন।” (দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:১০) আজকেও যিহোবা তাঁর দাসদের দলগত এবং আলাদা আলাদাভাবে উত্তম যত্ন নেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বসনিয়াতে গৃহযুদ্ধের সময়ে কিছু সাক্ষি যখন চরম খাদ্য সংকটের মধ্যে পড়েছিলেন, তখন যিহোবা তাদের অতি দরকারি জিনিসগুলো জোগানোর ব্যবস্থা করেছিলেন। আর অস্ট্রিয়ার ভাইবোনদের সাহসী পদক্ষেপের কারণেই তা সম্ভব হয়েছিল। ক্রোয়েশিয়া এবং অস্ট্রিয়ার ভাইবোনেরা তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চরম বিপদজনক এলাকার মধ্যে দিয়ে তাদের ভাইবোনদের জন্য ত্রাণসামগ্রী নিয়ে এসেছিলেন। *

যেহেতু যিহোবা হলেন সর্বশক্তিমান ঈশ্বর, তাই তিনি তাঁর দাসদের যে কোন পরিস্থিতিতে রক্ষা করতে পারেন। (যিশাইয় ৩৩:২২; প্রকাশিত বাক্য ৪:৮) যিহোবা মাঝে মাঝে তাঁর কিছু দাসদেরকে তাদের মৃত্যু পর্যন্ত তারা বিশ্বস্ত থাকেন কি না, সেটা প্রমাণ করতে দিলেও তিনি তাদেরকে শক্তি দেন এবং তারা যাতে তাদের আনুগত্য বজায় রাখতে পারেন, সেই বিষয়ে সাহায্য করেন। আর এটাই তাদেরকে শেষ পর্যন্ত দৃঢ়, আনন্দিত এবং স্থির থাকতে সাহায্য করে। তাই, গীতরচকের মতো আমরাও একই আস্থা রাখতে পারি: “ঈশ্বর আমাদের পক্ষে আশ্রয় ও বল। তিনি সঙ্কটকালে অতি সুপ্রাপ্য সহায়। অতএব আমরা ভয় করিব না যদ্যপি পৃথিবী পরিবর্ত্তিত হয়, যদ্যপি পর্ব্বতগণ টলিয়া সমুদ্রের গর্ব্ভে পড়ে।”—গীতসংহিতা ৪৬:১, ২.

বাইবেল এও প্রকাশ করে যে, যিহোবা হলেন সত্যের ঈশ্বর। এর অর্থ হল, তিনি সবসময় তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলো পূর্ণ করেন। এই কারণে বাইবেল তাঁকে “মিথ্যাকথনে অসমর্থ ঈশ্বর” হিসেবে বর্ণনা করে। (তীত ১:২) যেহেতু, যিহোবা বারবার প্রকাশ করেছেন যে তিনি তাঁর দাসদেরকে বিপদ আপদ থেকে রক্ষা ও উদ্ধার করতে চান, তাই আমরা পুরোপুরি নিশ্চিত থাকতে পারি যে তিনি শুধুমাত্র প্রতিজ্ঞাগুলো পূর্ণ করতেই সমর্থ নন, সেইসঙ্গে সেগুলো পূর্ণ করার জন্যও তিনি তৈরি আছেন।—ইয়োব ৪২:২.

আমাদের আস্থাকে আরও দৃঢ় করার উপায়গুলো

যদিও যিহোবার ওপর আস্থা রাখার যথেষ্ট কারণ আমাদের রয়েছে কিন্তু আমরা কখনোই এটা ধরে নেব না যে আমাদের এই আস্থা সবসময় অটুট থাকবে। কারণ, পৃথিবীতে বেশির ভাগ লোকেরই ঈশ্বরের প্রতি খুব একটা বিশ্বাস নেই আর আশেপাশের লোকেদের এরকম মনোভাব খুব সহজেই যিহোবার প্রতি আমাদের আস্থাকে দুর্বল করে দিতে পারে। এইজন্য, সেই আস্থাকে আরও দৃঢ় করতে এবং বজায় রাখতে আমাদের অবশ্যই প্রাণপণ চেষ্টা করতে হবে। যিহোবা এই বিষয়ে ভালভাবেই জানেন এবং এর জন্য তিনি কিছু ব্যবস্থা করেছেন, যার মাধ্যমে আমরা তা করতে পারি।

প্রথমত, তিনি আমাদেরকে তাঁর লিখিত বাক্য বাইবেল দিয়েছেন, যেটার মধ্যে তাঁর দাসদের জন্য তিনি যে অনেক অনেক পরাক্রম কাজ করেছেন তার বিবরণ রয়েছে। মনে করুন, আপনি যদি একজন ব্যক্তির শুধু নামটাই জানেন, তাহলে তার ওপর আপনি কতটুকু আস্থা রাখতে পারেন? সম্ভবত একটুও না। তার ওপর আস্থা রাখার জন্য আপনার কি তার কাজগুলো এবং তিনি কীভাবে কাজ করেন, সেই সম্বন্ধে জানতে হবে না? আমরা যখন বাইবেলের ঘটনাবলি পড়ি এবং ধ্যান করি তখন যিহোবা ও তাঁর চমৎকার পথগুলোর বিষয়ে আমাদের জ্ঞান গভীর হয় এবং আমরা আরও বেশি করে উপলব্ধি করি যে, তাঁর ওপর কতটা আস্থা রাখা যায়। এইভাবে তাঁর ওপর আমাদের আস্থা আরও দৃঢ় হয়। গীতরচক এক চমৎকার উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন যখন তিনি ঈশ্বরের কাছে অন্তর থেকে করা প্রার্থনায় বলেছিলেন: “আমি সদাপ্রভুর কর্ম্ম সকল উল্লেখ করিব; তোমার পূর্ব্বকালীন আশ্চর্য্য ক্রিয়া সকল স্মরণ করিব। আমি তোমার সমস্ত কর্ম্ম ধ্যানও করিব, তোমার ক্রিয়া সকল আলোচনা করিব।”—গীতসংহিতা ৭৭:১১, ১২.

বাইবেল তো আছেই, এছাড়াও যিহোবার সংগঠন আমাদের জন্য বাইবেল ভিত্তিক বিভিন্ন প্রকাশনার মাধ্যমে প্রচুর আধ্যাত্মিক খাবারের ব্যবস্থা করেছে। এই প্রকাশনাগুলো প্রায়ই আধুনিক দিনের ঈশ্বরের দাসদের মর্মস্পর্শী জীবন কাহিনী তুলে ধরে, যা দেখায় যিহোবা কীভাবে তাদেরকে চরম দুর্দশাপূর্ণ পরিস্থিতিতে সাহায্য করেছিলেন ও স্বস্তি দিয়েছিলেন। উদাহরণ হিসেবে মার্টিন পোয়েটজিঙ্গারের কথা বলা যায়, যিনি পরে যিহোবার সাক্ষিদের পরিচালক গোষ্ঠীর একজন সদস্য হয়েছিলেন। তিনি তার নিজ দেশ থেকে অনেক দূরে ইউরোপের বিভিন্ন জায়গায় অগ্রগামী হিসেবে সেবা করার সময় একবার গুরুতরভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তার কাছে কোন টাকাপয়সা ছিল না এবং কোন ডাক্তারও তার চিকিৎসা করতে চাননি। কিন্তু, যিহোবা তাকে ছেড়ে দেননি। অবশেষে, স্থানীয় হাসপাতালের বড় একজন ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। এই ব্যক্তির বাইবেলে দৃঢ় বিশ্বাস ছিল এবং খুবই দয়ালু ছিলেন। তিনি কোন টাকাপয়সা ছাড়াই নিজের ছেলের মতো ভাই পোয়েটজিঙ্গারের চিকিৎসা করেছিলেন। এইধরনের জীবন কাহিনীগুলো পড়া আমাদের স্বর্গীয় পিতার ওপর আমাদের আস্থাকে নিঃসন্দেহে আরও দৃঢ় করতে পারে।

যিহোবা, তাঁর ওপর আমাদের আস্থাকে আরও দৃঢ় করার জন্য অন্য একটা উপায় রেখেছেন আর তা হল, প্রার্থনা করার বিশেষ সুযোগ। প্রেরিত পৌল প্রেমের সঙ্গে আমাদের বলেন: “কোন বিষয়ে ভাবিত হইও না, কিন্তু সর্ব্ববিষয়ে প্রার্থনা ও বিনতি দ্বারা ধন্যবাদ সহকারে তোমাদের যাচ্ঞা সকল ঈশ্বরকে জ্ঞাত কর।” (ফিলিপীয় ৪:৬) ‘সর্ব্ববিষয়ের’ মধ্যে রয়েছে আমাদের আবেগঅনুভূতি, চাহিদা, ভয়ভীতি এবং দুশ্চিন্তাগুলো। আমরা যত বেশি মন থেকে প্রার্থনা করব, যিহোবার ওপর আমাদের আস্থা তত বেশি দৃঢ় হবে।

যীশু যখন পৃথিবীতে ছিলেন, তখন মাঝে মাঝে প্রার্থনা করার জন্য তিনি একাকী নির্জন স্থানে চলে যেতেন। (মথি ১৪:২৩; মার্ক ১:৩৫) গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার আগে তিনি এমনকি সারারাত তাঁর পিতার কাছে প্রার্থনা করতেন। (লূক ৬:১২, ১৩) এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, যিহোবার ওপর যীশুর আস্থা এতটাই দৃঢ় ছিল যে তিনি ভয়ংকর পরীক্ষা সহ্য করতে পেরেছিলেন, যা অন্য কারও ওপর আসেনি। যাতনা দন্ডের ওপর তাঁর শেষ কথাগুলো ছিল: “পিতঃ, তোমার হস্তে আমার আত্মা সমর্পণ করি।” এইরকম দৃঢ় আস্থার অভিব্যক্তি প্রমাণ করেছিল যে, শেষ পর্যন্ত তাঁর পিতার ওপর তাঁর আস্থা বিন্দুমাত্র কমেনি যদিও তাঁর পিতা তাঁকে রক্ষা করার জন্য কিছুই করেননি।—লূক ২৩:৪৬.

এছাড়াও, অন্য আরেকটা উপায়ে যিহোবার ওপর আমরা আমাদের আস্থা গড়ে তুলতে পারি আর তা হল, যারা সর্বান্তকরণে তাঁর ওপর আস্থা রাখেন তাদের সঙ্গে নিয়মিত মেলামেশা করে। একে অন্যকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য এবং তাঁর সম্বন্ধে আরও শেখার জন্য যিহোবা তাঁর লোকেদেরকে নিয়মিত একত্র হওয়ার আদেশ দিয়েছিলেন। (দ্বিতীয় বিবরণ ৩১:১২; ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) এইধরনের মেলামেশা যিহোবার ওপর তাদের আস্থাকে আরও দৃঢ় করেছিল এবং বিশ্বাসের কঠিন পরীক্ষাগুলো সহ্য করতে সাহায্য করেছিল। আফ্রিকার একটা দেশে প্রচার কাজ নিষেধ ছিল আর সেখানে যিহোবার সাক্ষিদের কোনরকম পুলিশের সাহায্য, ভ্রমণের বৈধ কাগজপত্র, বিয়ের সার্টিফিকেট, হাসপাতালে চিকিৎসা এবং চাকরি দিতে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছিল। একটা এলাকায় গৃহযুদ্ধ আরম্ভ হলে, সেই এলাকার কাছাকাছি একটা মণ্ডলীর ছোট ছোট ছেলেমেয়ে সহ ৩৯ জন সদস্য তাদের শহরে বোমা হামলা থেকে রক্ষা পেতে মরুভূমিতে একটা ব্রিজের নিচে প্রায় চার মাস থেকেছিলেন। এইধরনের কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে তাদের প্রতিদিনের বাইবেল পাঠ আলোচনা এবং অন্যান্য সভাগুলো তাদেরকে যথেষ্ট শক্তি জুগিয়েছিল। আর এভাবে তারা তাদের আধ্যাত্মিকতাকে পুরোপুরি ঠিক রেখে এই কঠিন পরীক্ষা সহ্য করতে পেরেছিলেন। যিহোবার লোকেদের সঙ্গে নিয়মিত মেলামেশা করা যে গুরুত্বপূর্ণ, এই ঘটনা সেটা স্পষ্ট করে দেয়।

সবশেষে, যিহোবার ওপর আমাদের আস্থাকে আরও দৃঢ় করতে আমরা অবশ্যই রাজ্যের প্রচার কাজ করব, অন্যদের সুসমাচার জানাতে প্রস্তুত থাকব। এটা কানাডার একজন উদ্যোগী যুবতীর মর্মস্পর্শী অভিজ্ঞতায় দেখা গিয়েছিল, যার মারাত্মক লিউকিমিয়া রোগ হয়েছিল। মারাত্মকভাবে অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও, সে একজন নিয়মিত অগ্রগামী অর্থাৎ পূর্ণ-সময়ের প্রচারিকা হতে চেয়েছিল। এই অসুস্থতার মাঝে সে কিছুটা সুস্থ বোধ করেছিল আর সেই সময় একমাস সহায়ক অগ্রগামী হিসেবে কাজ করেছিল। এর পর তার অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটে এবং কয়েক মাস পর সে মারা যায়। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত সে আধ্যাত্মিকভাবে দৃঢ় ছিল এবং যিহোবার ওপর তার আস্থা এক মুহূর্তের জন্যেও টলেনি। তার মা বলেছিলেন: “শেষ পর্যন্ত সে তার নিজের চেয়ে অন্যদের জন্য বেশি চিন্তিত ছিল। তাদেরকে সে বাইবেল অধ্যয়ন করতে উৎসাহ দিত আর বলত, ‘আমরা পরমদেশে মিলিত হব।’”

যিহোবার ওপর আমাদের আস্থার প্রমাণ

“যেমন আত্মাবিহীন দেহ মৃত, তেমনি কর্ম্মবিহীন বিশ্বাসও মৃত।” (যাকোব ২:২৬) যাকোব এখানে ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস সম্বন্ধে যা বলেছেন, তা তাঁর ওপর আমাদের আস্থার বিষয়েও বলা যায়। যদি আমরা আমাদের কাজের মাধ্যমে সেই আস্থা না দেখাই, তাহলে যিহোবাতে আমাদের আস্থা আছে এটা আমরা যতই বলি না কেন, তা অর্থহীন হবে। অব্রাহাম নির্দ্বিধায় যিহোবার সমস্ত আজ্ঞা পালন করে তাঁর ওপর পুরোপুরি আস্থা রেখেছিলেন, এমনকি তিনি তার ছেলে ইস্‌হাককে বলি দিতে তৈরি হয়েছিলেন। এইধরনের অতুলনীয় আস্থা এবং বাধ্যতার জন্য অব্রাহাম যিহোবার বন্ধু হিসেবে পরিচিত হয়েছিলেন।—ইব্রীয় ১১:৮-১০, ১৭-১৯; যাকোব ২:২৩.

যিহোবার ওপর যে আমাদের আস্থা আছে, তা দেখানোর জন্য আমাদের কোন কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করার দরকার নেই। যীশু তাঁর শিষ্যদেরকে বলেছিলেন: “যে ক্ষুদ্রতম বিষয়ে বিশ্বস্ত, সে প্রচুর বিষয়েরও বিশ্বস্ত; আর যে ক্ষুদ্রতম বিষয়ে অধার্ম্মিক, সে প্রচুর বিষয়েও অধার্ম্মিক।” (লূক ১৬:১০) প্রতিদিনের সমস্ত কাজে আমাদের যিহোবার ওপর আস্থা রাখতে শেখা উচিত। এছাড়া, ছোটখাটো বিষয়েও আমাদের তাঁর বাধ্য থাকতে হবে। এইরকম বাধ্যতার ফলে যে উপকারগুলো পাওয়া যায়, তা দেখে আমাদের স্বর্গীয় পিতার ওপর আমাদের আস্থা আরও দৃঢ় হয় আর এর ফলে আমরা বড় বা কঠিন পরীক্ষাগুলো মোকাবিলা করতে পারি।

এই জগৎ যতই এর আকস্মিক ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, যিহোবার লোকেরা আরও বেশি করে বিভিন্ন পরীক্ষা ও ভয়াবহ পরিস্থিতি সহ্য করছেন। (প্রেরিত ১৪:২২; ২ তীমথিয় ৩:১২) যিহোবার ওপর এখনই দৃঢ় এবং পূর্ণ আস্থা গড়ে তুলে আমরা তাঁর প্রতিজ্ঞাত নতুন পৃথিবীতে রক্ষা পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে পারি, তা মহাক্লেশ থেকে জীবিত রক্ষা পেয়ে হোক বা পুনরুত্থানের মাধ্যমেই হোক। (২ পিতর ৩:১৩) যিহোবার সঙ্গে আমাদের মূল্যবান সম্পর্ক নষ্ট করতে আমরা যেন কখনও কোনভাবেই তাঁর ওপর আস্থার অভাব না দেখাই। তাহলেই, দানিয়েল সিংহের গর্ত থেকে রক্ষা পাওয়ার পর তার সম্বন্ধে যা বলা হয়েছিল, আমাদের ক্ষেত্রেও তা-ই বলা যাবে: “তাঁহার শরীরে কোন প্রকার আঘাত দৃষ্ট হইল না, কারণ তিনি আপন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিয়াছিলেন।”—দানিয়েল ৬:২৩.

[পাদটীকা]

^ বিস্তারিত জানার জন্য ১৯৯৪ সালের ১লা নভেম্বর প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) এর ২৩-৭ পৃষ্ঠা দেখুন।

[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

মার্টিন পোয়েটজিঙ্গারের মতো যিহোবার বিশ্বস্ত দাসদের জীবন কাহিনীগুলো পড়া বিশ্বাসকে আরও দৃঢ় করে