সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ভুলে যাওয়ার শ্রোতা হবেন না

ভুলে যাওয়ার শ্রোতা হবেন না

ভুলে যাওয়ার শ্রোতা হবেন না

“বাক্যের কার্য্যকারী হও, আপনাদিগকে ভুলাইয়া শ্রোতামাত্র হইও না।”যাকোব ১:২২.

১. প্রাচীন ইস্রায়েলের লোকেরা কোন্‌ অলৌকিক ঘটনাগুলো দেখার সুযোগ পেয়েছিল?

 প্রাচীন মিশরে যিহোবা যে অলৌকিক কাজগুলো করেছিলেন, সেগুলোর কথা বর্ণনা করার জন্য “অবিস্মরণীয়” শব্দটাই সবচেয়ে উপযুক্ত হবে। কেউই অস্বীকার করতে পারবে না যে, দশটা আঘাতই ছিল ভয়ংকর। ওই আঘাতগুলোর পরই ইস্রায়েলের লোকেরা সূফ সাগরের দুভাগ হয়ে যাওয়া জলের মধ্যে দিয়ে পার হয়ে অলৌকিকভাবে মুক্ত হয়েছিল। (দ্বিতীয় বিবরণ ৩৪:১০-১২) আপনার চোখের সামনে যদি ওই ঘটনাগুলো ঘটত, তাহলে আপনি নিশ্চয়ই যিনি এই কাজগুলো করেছেন তাকে কখনোই ভুলে যেতেন না। অথচ, গীতরচক গেয়েছিলেন: “তাহারা [ইস্রায়েলীয়রা] আপন ত্রাণকর্ত্তা ঈশ্বরকে ভুলিয়া গেল, যিনি মিসরে বিবিধ মহৎ কার্য্য করিয়াছিলেন; হামের দেশে নানা আশ্চর্য্য ক্রিয়া, সূফ-সাগরের ধারে নানা ভয়ঙ্কর কার্য্য করিয়াছিলেন।”—গীতসংহিতা ১০৬:২১, ২২.

২. কী দেখায় যে, ঈশ্বরের পরাক্রম কাজগুলোর প্রতি ইস্রায়েলীয়দের উপলব্ধি বেশি দিন স্থায়ী হয়নি?

সূফ সাগর পার হওয়ার পর ইস্রায়েলীয়রা “সদাপ্রভুকে ভয় করিল, এবং সদাপ্রভুতে . . . বিশ্বাস করিল।” (যাত্রাপুস্তক ১৪:৩১) ইস্রায়েলীয় পুরুষরা মোশির সঙ্গে যিহোবার উদ্দেশে বিজয় সংগীত গেয়েছিল এবং মরিয়ম ও অন্যান্য স্ত্রীলোকেরা মৃদঙ্গ বাজিয়ে ও নেচে সাড়া দিয়েছিল। (যাত্রাপুস্তক ১৫:১, ২০) হ্যাঁ, যিহোবার পরাক্রম কাজগুলো ঈশ্বরের লোকেদের ওপর ছাপ ফেলেছিল। কিন্তু যিনি ওই কাজগুলো করেছিলেন, তাঁর প্রতি তাদের উপলব্ধি খুব বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। শীঘ্রিই তাদের মধ্যে অনেকে এমন ব্যবহার করেছিল, যেন তাদের স্মৃতিশক্তি হারিয়ে গেছে। তারা যিহোবার বিরুদ্ধে বচসা ও অভিযোগ করতে শুরু করেছিল। কেউ কেউ প্রতিমাপূজা ও যৌন অনৈতিকতায় জড়িয়ে পড়েছিল।—গণনাপুস্তক ১৪:২৭; ২৫:১-৯.

কী কারণে আমরাও ভুলে যেতে পারি?

৩. আমরা অসিদ্ধ বলে কী ভুলে যেতে পারি?

ইস্রায়েলের উপলব্ধির অভাব দেখে সত্যি অবাক হতে হয়। কিন্তু, আমাদের বেলায়ও একই বিষয় হতে পারে। এটা ঠিক যে, ঈশ্বরের এইরকম অলৌকিক কাজগুলো আমরা দেখিনি। কিন্তু, ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক গড়ে তোলার সময় নিশ্চয়ই এমন কিছু ঘটনা ঘটেছিল, যা সত্যি অবিস্মরণীয়। আমরা কেউ কেউ হয়তো সেই সময়কার কথা মনে করতে পারি যখন বাইবেলের সত্যকে মেনে নিয়েছিলাম। অন্যান্য আনন্দপূর্ণ সময় হতে পারে, প্রার্থনায় আমরা যখন যিহোবার কাছে নিজেদেরকে উৎসর্গ করেছিলাম ও সত্য খ্রীষ্টান হিসেবে জলে বাপ্তিস্ম নিয়েছিলাম। আমরা অনেকে দেখেছি যে, জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যিহোবা আমাদের প্রতি তাঁর সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। (গীতসংহিতা ১১৮:১৫) সর্বোপরি, ঈশ্বরের নিজ পুত্র যীশু খ্রীষ্টের বলিদানমূলক মৃত্যুর দ্বারা আমরা পরিত্রাণের আশা পেয়েছি। (যোহন ৩:১৬) কিন্তু, অসিদ্ধ বলে আমরা যখন অন্যায় আকাঙ্ক্ষা ও জীবনের উদ্বেগগুলোর মুখোমুখি হই, তখন ঈশ্বর আমাদের জন্য যে ভাল কাজগুলো করেছেন, সেগুলো খুব সহজেই ভুলে যেতে পারি।

৪, ৫. (ক) ভুলে যাওয়ার শ্রোতা হওয়ার বিষয়ে যাকোব কীভাবে সাবধান করেন? (খ) ব্যক্তি ও আয়নার বিষয়ে যাকোবের দৃষ্টান্তটা আমরা কীভাবে কাজে লাগাতে পারি?

সহ খ্রীষ্টানদের কাছে লেখা চিঠিতে যীশুর সৎ ভাই যাকোব, ভুলে যাওয়ার শ্রোতা হওয়ার বিপদ সম্বন্ধে সাবধান করে দিয়েছিলেন। তিনি লিখেছিলেন: “বাক্যের কার্য্যকারী হও, আপনাদিগকে ভুলাইয়া শ্রোতামাত্র হইও না। কেননা যে কেহ বাক্যের শ্রোতামাত্র, কার্য্যকারী নয়, সে এমন ব্যক্তির তুল্য, যে দর্পণে আপনার স্বাভাবিক মুখ দেখে; কারণ সে আপনাকে দেখিল, চলিয়া গেল, আর সে কিরূপ লোক, তাহা তখনই ভুলিয়া গেল।” (যাকোব ১:২২-২৪) ওই কথাগুলো বলে যাকোব কী বোঝাতে চেয়েছিলেন?

সকালে ঘুম থেকে উঠেই সাধারণত আমরা আয়নায় মুখ দেখি যে আমাদের চেহারা কেমন হয়ে আছে ও কিছু করতে হবে কি না। কিন্তু, আমরা যখন অন্যান্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি ও অন্য বিষয়গুলোতে মন দিই, তখন আমরা আয়নায় যা দেখেছিলাম, তা ভুলে যাই। আধ্যাত্মিক বিষয়েও এমনটা হতে পারে। ঈশ্বরের বাক্য পরীক্ষা করার সময় আমরা নিজেদের তুলনা করে দেখতে পারি যে, যিহোবা আমাদের কাছ থেকে কী চান আর আমরা কী করছি। এভাবে, আমরা বুঝতে পারি যে আমাদের কোথায় কোথায় দুর্বলতা রয়েছে। আর এটা জানলে তা আমাদেরকে আমাদের ব্যক্তিত্বের বিভিন্ন ক্ষেত্রে রদবদল করতে পরিচালিত করবে। কিন্তু, রোজকার কাজকর্মগুলো করার সময় এবং সমস্যাগুলোকে মোকাবিলা করতে গিয়ে আমরা খুব সহজেই আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর কথা ভুলে যেতে পারি। (মথি ৫:৩; লূক ২১:৩৪) এটা ঠিক যেন ঈশ্বর প্রেম দেখিয়ে আমাদের জন্য যে কাজগুলো করেছেন, তা আমরা ভুলে গিয়েছি। আর এমনটা হলে আমরা পাপ করে ফেলতে পারি।

৬. শাস্ত্রের কোন্‌ আলোচনা আমাদেরকে যিহোবার বাক্য ভুলে না যেতে সাহায্য করতে পারে?

প্রেরিত পৌল করিন্থীয়দের কাছে তার প্রথম অনুপ্রাণিত চিঠিতে প্রান্তরে ইস্রায়েলীয়দের ভুলে যাওয়ার প্রবণতা সম্বন্ধে বলেছিলেন। প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানরা যেমন পৌলের কথাগুলো থেকে উপকার পেয়েছিলেন, ঠিক তেমনই তিনি যা লিখেছিলেন তা আলোচনা করা আমাদেরকে যিহোবার বাক্য ভুলে না যেতে সাহায্য করতে পারে। তাই, আসুন আমরা ১ করিন্থীয় ১০:১-১২ পদ আলোচনা করে দেখি।

জাগতিক আকাঙ্ক্ষাগুলোকে অস্বীকার করুন

৭. ইস্রায়েলীয়রা যিহোবার ভালবাসার কোন্‌ অকাট্য প্রমাণ দেখতে পেয়েছিল?

ইস্রায়েলীয়দের বিষয়ে পৌল যা বলেছিলেন, তা খ্রীষ্টানদের জন্য এক সাবধানবাণী। পৌল লেখেন: “হে ভ্রাতৃগণ, আমার ইচ্ছা নয় যে, তোমরা অজ্ঞাত থাক যে, আমাদের পিতৃপুরুষেরা সকলে সেই মেঘের নীচে ছিলেন, ও সকলে সমুদ্রের মধ্য দিয়া গমন করিয়াছিলেন; এবং সকলে মোশির উদ্দেশে মেঘে ও সমুদ্রে বাপ্তাইজিত হইয়াছিলেন।” (১ করিন্থীয় ১০:১-৪) মোশির দিনে ইস্রায়েলের লোকেরা ঈশ্বরের শক্তির মহৎ প্রকাশ দেখেছিল। যেমন, ঈশ্বরের অলৌকিক মেঘস্তম্ভ তাদেরকে দিনের বেলা পথ দেখাত ও সূফ সাগর পার হতে সাহায্য করেছিল। (যাত্রাপুস্তক ১৩:২১; ১৪:২১, ২২) হ্যাঁ, সেই ইস্রায়েলীয়রা যিহোবার ভালবাসার অকাট্য প্রমাণ দেখতে পেয়েছিল।

৮. আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো ভুলে যাওয়ায় ইস্রায়েলীয়দের কী পরিণতি হয়েছিল?

পৌল বলে চলেন, “কিন্তু তাঁহাদের মধ্যে অধিকাংশ লোকের প্রতি ঈশ্বর প্রীত হন নাই; ফলতঃ তাঁহারা প্রান্তরে নিপাতিত হইলেন।” (১ করিন্থীয় ১০:৫) কত দুঃখজনক! যে ইস্রায়েলীয়রা মিশর ছেড়ে এসেছিল তাদের মধ্যে বেশির ভাগই প্রতিজ্ঞাত দেশে ঢোকার অযোগ্য হয়ে পড়েছিল। বিশ্বাসের অভাব থাকায় ঈশ্বর তাদেরকে সেখানে যেতে অনুমতি দেননি ও তারা প্রান্তরে মারা গিয়েছিল। (ইব্রীয় ৩:১৬-১৯) এই ঘটনা থেকে আমরা কী শিখতে পারি? পৌল বলেন: “এই সকল বিষয় আমাদের দৃষ্টান্তস্বরূপে ঘটিয়াছিল, যেন তাঁহারা যেমন অভিলাষ করিয়াছিলেন, আমরা তেমনি মন্দ বিষয়ের অভিলাষ না করি।”—১ করিন্থীয় ১০:৬.

৯. যিহোবা কীভাবে তাঁর লোকেদের জন্য বিভিন্ন বিষয় জুগিয়েছিলেন কিন্তু ইস্রায়েলীয়রা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল?

প্রান্তরে থাকার সময় আধ্যাত্মিক বিষয় নিয়ে চিন্তা করার অনেক কারণ ইস্রায়েলীয়দের ছিল। যিহোবা তাদের সঙ্গে এক চুক্তি করেছিলেন ও তারা তাঁর কাছে উৎসর্গীকৃত এক জাতি হয়েছিল। এছাড়াও যাজকপদ, উপাসনার কেন্দ্র সমাগম তাম্বু এবং যিহোবার উদ্দেশে তারা যেন বলি দিতে পারে সেই ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। কিন্তু, এই আধ্যাত্মিক উপহারগুলোর জন্য আনন্দ করার বদলে ঈশ্বর তাদের জন্য যা কিছু জুগিয়েছিলেন, সেগুলো নিয়ে তারা খুশি ছিল না।—গণনাপুস্তক ১১:৪-৬.

১০. আমাদের চিন্তায় কেন সবসময় ঈশ্বরকে রাখা উচিত?

১০ আজকে যিহোবার লোকেরা প্রান্তরের ইস্রায়েলীয়দের মতো নন বরং তাদের প্রতি ঈশ্বরের অনুমোদন রয়েছে। কিন্তু, আলাদা আলাদা ব্যক্তি হিসেবে আমাদের চিন্তায় ঈশ্বরকে রাখা খুবই জরুরি। তাহলে, আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকে অস্পষ্ট করতে পারে এমন স্বার্থপর আকাঙ্ক্ষাগুলোকে দূর করতে এটা আমাদের সাহায্য করবে। আমাদের দৃঢ় সংকল্প নিতে হবে “যেন আমরা ভক্তিহীনতা ও সাংসারিক অভিলাষ সকল অস্বীকার করিয়া সংযত, ধার্ম্মিক ও ভক্তিভাবে এই বর্ত্তমান যুগে জীবন যাপন করি।” (তীত ২:১২) আমাদের মধ্যে যারা একেবারে ছেলেবেলা থেকে খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর সঙ্গে জড়িত তাদের কখনও এমন মনে করা উচিত নয় যে, তারা আনন্দদায়ক কিছু কাজ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আমাদের মনে কখনও এমন চিন্তা আসলে, আমরা যিহোবার কথা ও তিনি আমাদের জন্য যে চমৎকার আশীর্বাদগুলো জমা করে রেখেছেন সেগুলোর কথা মনে করতে পারি।—ইব্রীয় ১২:২, ৩.

যিহোবার প্রতি সম্পূর্ণ বাধ্যতা

১১, ১২. মূর্তির প্রতি শ্রদ্ধা না দেখিয়েও একজন ব্যক্তি কীভাবে প্রতিমাপূজার দোষে দোষী হতে পারে?

১১ পৌল আমাদেরকে আরেকটা বিষয়ে সাবধান করে লেখেন: “আবার যেমন তাঁহাদের মধ্যে কতক লোক হইয়াছিল, তোমরা তেমনি প্রতিমাপূজক হইও না; যথা লিখিত আছে, ‘লোকেরা ভোজন পান করিতে বসিল, পরে ক্রীড়া করিতে উঠিল।’” (১ করিন্থীয় ১০:৭) পৌল এখানে সেই সময়ের কথা বলছিলেন যখন ইস্রায়েলীয়রা সোনার বাছুর বানানোর জন্য হারোণকে রাজি করিয়েছিল। (যাত্রাপুস্তক ৩২:১-৪) আমরা হয়তো সরাসরি প্রতিমাপূজা করব না কিন্তু যিহোবাকে মনপ্রাণ দিয়ে সেবা না করে স্বার্থপর আকাঙ্ক্ষাগুলোকে চরিতার্থ করে আমরা প্রতিমাপূজক হয়ে উঠতে পারি।—কলসীয় ৩:৫.

১২ আরেক জায়গায় পৌল এমন কিছু ব্যক্তিদের বিষয়ে লিখেছিলেন, যারা আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা না করে বস্তুগত বিষয়গুলো নিয়ে বেশি চিন্তা করেছিলেন। যারা ‘এমন চলিতেছে যে তাহারা খ্রীষ্টের ক্রুশের শত্রু’ তাদের সম্বন্ধে তিনি লিখেছিলেন: “তাহাদের পরিণাম বিনাশ; উদর তাহাদের ঈশ্বর।” (ফিলিপীয় ৩:১৮, ১৯) তারা হাতে বানানো কোন মূর্তিকে পূজা করেনি। তাদের বস্তুগত আকাঙ্ক্ষাই তাদের পূজার বস্তু ছিল। অবশ্য, সব আকাঙ্ক্ষাই ভুল নয়। যিহোবা আমাদেরকে কিছু চাহিদা দিয়ে এবং বিভিন্নভাবে আনন্দ উপভোগ করার ক্ষমতা দিয়ে সৃষ্টি করেছিলেন। কিন্তু, যারা ঈশ্বরের সঙ্গে তাদের সম্পর্ককে প্রথমে না রেখে আনন্দের পিছনে ছোটে তারা প্রতিমাপূজকে পরিণত হয়।—২ তীমথিয় ৩:১-৫.

১৩. সোনার বাছুরের ঘটনা থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

১৩ মিশর থেকে চলে আসার পর ইস্রায়েলীয়রা উপাসনা করার জন্য একটা সোনার বাছুর বানিয়েছিল। প্রতিমাপূজার বিরুদ্ধে সাবধান হওয়া ছাড়াও এই ঘটনা থেকে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শেখার আছে। ইস্রায়েলীয়রা যিহোবার স্পষ্ট নির্দেশনার অবাধ্য হয়েছিল। (যাত্রাপুস্তক ২০:৪-৬) অথচ তারা আবার যিহোবাকে তাদের ঈশ্বর হিসেবেও অস্বীকার করতে চায়নি। ধাতু গলিয়ে বাছুর তৈরি করে তারা সেটার উদ্দেশে বলি দিয়েছিল ও সেই অনুষ্ঠানকে “সদাপ্রভুর উদ্দেশে উৎসব” নাম দিয়েছিল। আসলে তারা নিজেদেরকে এই বলে ভোলাতে চেয়েছিল যে, ঈশ্বর তাদের এই অবাধ্যতাকে গণ্য করবেন না। এটা ছিল যিহোবার জন্য চরম অপমানজনক আর তা তাঁকে অনেক ক্রোধান্বিত করেছিল।—যাত্রাপুস্তক ৩২:৫, ৭-১০; গীতসংহিতা ১০৬:১৯, ২০.

১৪, ১৫. (ক) ভুলে যাওয়ার শ্রোতা হওয়ার পিছনে কেন ইস্রায়েলীয়দের কোন অজুহাত ছিল না? (খ) আমরা যদি দৃঢ় সংকল্প নিই যে আমরা ভুলে যাওয়ার শ্রোতা হব না, তাহলে যিহোবার আজ্ঞাগুলোকে আমরা কীভাবে দেখব?

১৪ সাধারণত কোন যিহোবার সাক্ষিকে মিথ্যা ধর্মে যোগ দিতে দেখা যায় না। কিন্তু, মণ্ডলীতে থেকেও কেউ কেউ অন্যভাবে যিহোবার নির্দেশনাকে অস্বীকার করতে পারেন। ভুলে যাওয়ার শ্রোতা হওয়ার পিছনে ইস্রায়েলের লোকেদের কোন অজুহাতই ছিল না। তারা দশ আজ্ঞা শুনেছিল এবং সেখানে উপস্থিত ছিল যখন মোশি তাদেরকে ঈশ্বরের এই আদেশ জানিয়েছিলেন: “তোমরা আমার প্রতিযোগী কিছু নির্ম্মাণ করিও না; আপনাদের নিমিত্তে রৌপ্যময় দেবতা কি স্বর্ণময় দেবতা নির্ম্মাণ করিও না।” (যাত্রাপুস্তক ২০:১৮, ১৯, ২২, ২৩) এত কিছুর পরেও ইস্রায়েলীয়রা সোনার বাছুরকে উপাসনা করেছিল।

১৫ ভুলে যাওয়ার শ্রোতা হওয়ার পিছনে আমাদেরও কোন অজুহাত থাকতে পারে না। জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে শাস্ত্রে আমাদের জন্য ঈশ্বরের অনেক নির্দেশনা আছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যিহোবার বাক্য নির্দিষ্ট করে সেই ব্যক্তিদের নিন্দা করে যারা অভ্যাসবশত ঋণ করে তারপর পরিশোধ করে না। (গীতসংহিতা ৩৭:২১) ছেলেমেয়েদেরকে তাদের বাবামার বাধ্য হতে আজ্ঞা দেওয়া হয়েছে এবং বাবারা তাদের ছেলেমেয়েদেরকে “প্রভুর [“যিহোবার,” NW] . . . চেতনা প্রদানে” মানুষ করে তুলবেন বলে আশা করা হয়। (ইফিষীয় ৬:১-৪) অবিবাহিত খ্রীষ্টানদেরকে “কেবল প্রভুতেই” বিয়ে করতে বলা হয়েছে এবং ঈশ্বরের বিবাহিত দাসদের বলা হয়েছে: “সকলের মধ্যে বিবাহ আদরণীয় ও সেই শয্যা বিমল [হউক]; কেননা ব্যভিচারীদের ও বেশ্যাগামীদের বিচার ঈশ্বর করিবেন।” (১ করিন্থীয় ৭:৩৯; ইব্রীয় ১৩:৪) আমরা যদি সংকল্প নিই যে, আমরা ভুলে যাওয়ার শ্রোতা হব না, তাহলে আমরা এই বিষয়গুলো ও ঈশ্বরের কাছ থেকে আসা অন্যান্য নির্দেশগুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে নেব এবং সেগুলোর সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করব।

১৬. সোনার বাছুরকে উপাসনা করার পরিণতি কী হয়েছিল?

১৬ ইস্রায়েলীয়রা যখন তাদের নিজেদের পদ্ধতি অনুসারে যিহোবাকে উপাসনা করতে চেয়েছিল তখন যিহোবা তা মেনে নেননি। এর বদলে ৩,০০০ লোককে হত্যা করা হয়েছিল, সম্ভবত সোনার বাছুরকে উপাসনা করে বিদ্রোহ করার ক্ষেত্রে তাদের প্রধান ভূমিকা ছিল। অন্যান্য অপরাধীদেরকে যিহোবা আঘাত করেছিলেন। (যাত্রাপুস্তক ৩২:২৮, ৩৫) যারা ঈশ্বরের বাক্য পড়ে কিন্তু শুধু যে কথাগুলো তাদের ভাল লাগে সেগুলো মেনে চলে, তাদের জন্য এটা কত বড় এক শিক্ষা!

“ব্যভিচার হইতে পলায়ন কর”

১৭. ১ করিন্থীয় ১০:৮ পদে কোন্‌ ঘটনার কথা বলা হয়েছে?

১৭ একটা ক্ষেত্রে মাংসিক আকাঙ্ক্ষাগুলো আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোকে ভুলে যেতে প্ররোচিত করতে পারে আর সেই বিষয়টা প্রেরিত পৌল তুলে ধরেছিলেন যখন তিনি বলেন: “আর যেমন তাঁহাদের মধ্যে কতক লোক ব্যভিচার করিয়াছিল, এবং এক দিনে তেইশ হাজার লোক মারা পড়িল, আমরা যেন তেমনি ব্যভিচার না করি।” (১ করিন্থীয় ১০:৮) এখানে পৌল, ইস্রায়েলীয়দের প্রান্তরে ৪০ বছর ধরে সুদীর্ঘ পথ ভ্রমণের শেষে মোয়াব তলভূমির একটা ঘটনার কথা বলছেন। ইস্রায়েলীয়রা কিছুদিন আগেই যর্দনের পূর্বপারের দেশগুলো জয় করার সময় যিহোবার সাহায্য পেয়েছিল কিন্তু তাদের মধ্যে অনেকে সেগুলো ভুলে গিয়েছিল ও অকৃতজ্ঞ হয়ে পড়েছিল। প্রতিজ্ঞাত দেশের সীমান্তে এসে তারা যৌন অনৈতিকতার ফাঁদে পা দিয়েছিল এবং মিথ্যা বাল পিয়োরের উপাসনায় জড়িয়ে পড়েছিল। প্রায় ২৪,০০০ লোককে ধ্বংস করা হয়েছিল, যাদের মধ্যে ১,০০০ জন ছিল নেতা।—গণনাপুস্তক ২৫:৯.

১৮. কোন্‌ ধরনের আচরণ যৌন অনৈতিকতায় চালিত করতে পারে?

১৮ আজকে যিহোবার লোকেরা তাদের উচ্চ নৈতিক মানের জন্য সুপরিচিত। কিন্তু, যৌন অনৈতিকতার ফাঁদে পড়ে কিছু খ্রীষ্টানরা ঈশ্বর ও তাঁর নীতিগুলোর কথা চিন্তা করা বাদ দিয়েছেন। তারা ভুলে যাওয়ার শ্রোতা হয়ে উঠেছেন। প্রথমেই হয়তো ব্যভিচার করার প্রলোভন আসে না। এটা হতে পারে অশ্লীল ছবি বা সিনেমা দেখা, নোংরা রসিকতা বা প্রেমের ভান করা অথবা নৈতিক দিক দিয়ে দুর্বল ব্যক্তিদের সঙ্গে মেলামেশা করা। এই বিষয়গুলোই পরবর্তী সময়ে খ্রীষ্টানদেরকে পাপের দিকে চালিত করেছে।—১ করিন্থীয় ১৫:৩৩; যাকোব ৪:৪.

১৯. শাস্ত্রের কোন্‌ পরামর্শ আমাদেরকে ‘ব্যভিচার হইতে পলায়ন করিতে’ সাহায্য করে?

১৯ অনৈতিক আচরণে জড়িত হওয়ার প্রলোভন আসলেও যিহোবার বিষয়ে চিন্তা করা আমাদের বন্ধ করে দেওয়া উচিত নয়। এর বদলে, আমাদের অবশ্যই তাঁর বাক্যে যে বিষয়গুলো মনে করিয়ে দেওয়া হয় সেগুলো পালন করতে হবে। (গীতসংহিতা ১১৯:১, ২) খ্রীষ্টান হওয়ায় আমাদের মধ্যে বেশির ভাগ ব্যক্তিই নৈতিক দিক দিয়ে শুচি থাকার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করি কিন্তু ঈশ্বরের চোখে যা সঠিক, তা করার জন্য আমাদের অবিরাম চেষ্টা করা দরকার। (১ করিন্থীয় ৯:২৭) রোমের খ্রীষ্টানদেরকে পৌল লিখেছিলেন: “তোমাদের আজ্ঞাবহতার কথা সকল লোকের নিকটে ব্যাপিয়াছে। অতএব তোমাদের জন্য আমি আনন্দ করিতেছি; কিন্তু আমার ইচ্ছা এই তোমরা উত্তম বিষয়ে বিজ্ঞ ও মন্দ বিষয়ে অমায়িক হও।” (রোমীয় ১৬:১৯) ২৪,০০০ জন ইস্রায়েলীয় যেমন তাদের পাপের জন্য মারা পড়েছিল, ঠিক তেমনই ব্যভিচারী ও অন্যান্য অন্যায়কারীরা শীঘ্রিই যিহোবার প্রতিকূল বিচারের সম্মুখীন হবে। (ইফিষীয় ৫:৩-৬) তাই, ভুলে যাওয়ার শ্রোতা না হয়ে আমাদের অবশ্যই ‘ব্যভিচার হইতে পলায়ন করা উচিত।’—১ করিন্থীয় ৬:১৮.

যিহোবা আমাদেরকে যা জুগিয়ে যাচ্ছেন, সেগুলোর প্রতি সবসময় উপলব্ধি দেখান

২০. ইস্রায়েলীয়রা কীভাবে যিহোবার পরীক্ষা করেছিল আর এর ফল কী হয়েছিল?

২০ বেশির ভাগ খ্রীষ্টান কখনোই যৌন অনৈতিকতায় জড়ান না। তারপরেও আমাদের সাবধান হওয়া দরকার, যাতে আমরা কখনও এমন কিছু না করি যা আমাদেরকে বচসা করতে পরিচালিত করে ও এর ফলে আমরা ঈশ্বরের অনুমোদন হারাতে পারি। পৌল আমাদের পরামর্শ দেন: “আর যেমন [ইস্রায়েলীয়দের] মধ্যে কতক লোক পরীক্ষা করিয়াছিল, এবং সর্পের দ্বারা বিনষ্ট হইয়াছিল, আমরা যেন তেমনি প্রভুর [“যিহোবার,” NW] পরীক্ষা না করি। আর যেমন তাঁহাদের মধ্যে কতক লোক বচসা করিয়াছিল, এবং সংহারকের দ্বারা বিনষ্ট হইয়াছিল, তোমরা তেমনি বচসা করিও না।” (১ করিন্থীয় ১০:৯, ১০) ইস্রায়েলীয়রা মোশি ও হারোণের বিরুদ্ধে এমনকি যিহোবার বিরুদ্ধে পর্যন্ত বচসা করেছিল এবং তারা অলৌকিকভাবে জোগানো মান্নার বিষয়ে অভিযোগ করেছিল। (গণনাপুস্তক ১৬:৪১; ২১:৫) ব্যভিচারের মতো বচসার সময়ও কি যিহোবা তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হননি? বাইবেলের বিবরণ দেখায় যে, অনেক বচসাকারী সাপের কামড়ে মারা গিয়েছিল। (গণনাপুস্তক ২১:৬) আগের একটা ঘটনায় ১৪,৭০০ জন বিদ্রোহী বচসাকারীকে বিনষ্ট করা হয়েছিল। (গণনাপুস্তক ১৬:৪৯) তাই, আসুন যিহোবা আমাদের জন্য যা জোগান তার প্রতি অসম্মান দেখিয়ে যিহোবার দীর্ঘসহিষ্ণুতাকে আমরা পরীক্ষা না করি।

২১. (ক) পৌল কোন্‌ পরামর্শ লেখার জন্য অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন? (খ) যাকোব ১:২৫ পদ অনুসারে কীভাবে আমরা সত্যিই সুখী হতে পারি?

২১ সহ খ্রীষ্টানদেরকে চিঠি লেখার সময় পৌল পরামর্শ দিয়ে এই সাবধানবাণীর তালিকা শেষে বলেন: “এই সকল তাহাদের প্রতি দৃষ্টান্তস্বরূপে ঘটিয়াছিল, এবং আমাদেরই চেতনার জন্য লিখিত হইল; আমাদের, যাহাদের উপরে যুগকলাপের অন্ত আসিয়া পড়িয়াছে। অতএব যে মনে করে, আমি দাঁড়াইয়া আছি, সে সাবধান হউক, পাছে পড়িয়া যায়।” (১ করিন্থীয় ১০:১১, ১২) ইস্রায়েলীয়দের মতো, আমরা যিহোবার কাছ থেকে অনেক আশীর্বাদ লাভ করেছি। কিন্তু, আসুন আমরা যেন তাদের মতো না হই। ঈশ্বর আমাদের জন্য যে সমস্ত ভাল কাজ করে চলেছেন, সেগুলো যেন আমরা কখনও ভুল না যাই ও উপলব্ধি দেখাতে ব্যর্থ না হই। জীবনের উদ্বেগগুলো যখন আমাদেরকে জর্জরিত করে তখন আসুন আমরা তাঁর বাক্যে পাওয়া চমৎকার প্রতিজ্ঞাগুলো নিয়ে চিন্তা করি। আমরা যেন যিহোবার সঙ্গে আমাদের মূল্যবান সম্পর্ক মনে রাখি এবং রাজ্যের বিষয়ে প্রচার করার যে দায়িত্ব আমাদেরকে দেওয়া হয়েছে তা সবসময় করে যাই। (মথি ২৪:১৪; ২৮:১৯, ২০) কোন সন্দেহ নেই যে, এই পথ প্রকৃত সুখ নিয়ে আসবে কারণ শাস্ত্র প্রতিজ্ঞা করে: “যে কেহ হেঁট হইয়া স্বাধীনতার সিদ্ধ ব্যবস্থায় দৃষ্টিপাত করে, ও তাহাতে নিবিষ্ট থাকে, ভুলিয়া যাইবার শ্রোতা না হইয়া কার্য্যকারী হয়, সেই আপন কার্য্যে ধন্য [“সুখী,” NW] হইবে।”—যাকোব ১:২৫.

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• কী করে আমরা ভুলে যাওয়ার শ্রোতা হয়ে উঠতে পারি?

• ঈশ্বরের প্রতি পুরোপুরি বাধ্য থাকা কেন জরুরি?

• কীভাবে আমরা ‘ব্যভিচার হইতে পলায়ন করিতে’ পারি?

• যিহোবা আমাদেরকে যা কিছু জোগান তার প্রতি আমাদের কেমন মনোভাব রাখা উচিত?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিহোবা ইস্রায়েলীয়দের পক্ষে যে পরাক্রম কাজগুলো করেছিলেন, সেগুলো তারা ভুলে গিয়েছিল

[১৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিহোবার লোকেরা উচ্চ নৈতিক মানগুলো বজায় রাখার জন্য সংকল্পবদ্ধ