সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিনি অদৃশ্য তাঁকে দেখেছেন ভেবে স্থির থাকুন!

যিনি অদৃশ্য তাঁকে দেখেছেন ভেবে স্থির থাকুন!

যিনি অদৃশ্য তাঁকে দেখেছেন ভেবে স্থির থাকুন!

“যিনি অদৃশ্য, তাঁহাকে যেন দেখিয়াই [মোশি] স্থির থাকিলেন।”ইব্রীয় ১১:২৭.

১. পাহাড়ের ওপরে উপদেশ দেওয়ার সময় ঈশ্বর সম্বন্ধে যীশু কোন্‌ উল্লেখযোগ্য কথা বলেছিলেন?

 যিহোবা অদৃশ্য ঈশ্বর। মোশি যখন তাঁর প্রতাপ দেখতে চেয়েছিলেন, তখন যিহোবা বলেছিলেন: “তুমি আমার মুখ দেখিতে পাইবে না, কেননা মনুষ্য আমাকে দেখিলে বাঁচিতে পারে না।” (যাত্রাপুস্তক ৩৩:২০) আর প্রেরিত যোহন লিখেছিলেন: “ঈশ্বরকে কেহ কখনও দেখে নাই।” (যোহন ১:১৮) যীশু খ্রীষ্ট যখন মানুষ হিসেবে পৃথিবীতে ছিলেন, এমনকি তিনিও তখন ঈশ্বরকে দেখতে পারতেন না। পাহাড়ের ওপরে উপদেশ দেওয়ার সময় যীশু বলেছিলেন: “ধন্য যাহারা নির্ম্মলান্তঃকরণ, কারণ তাহারা ঈশ্বরের দর্শন পাইবে।” (মথি ৫:৮) এই কথা বলে যীশু আসলে কী বুঝিয়েছিলেন?

২. আমাদের মাংসিক চোখ দিয়ে কেন আমরা ঈশ্বরকে দেখতে পারি না?

শাস্ত্র যিহোবাকে অদৃশ্য আত্মা হিসেবে বলে। (যোহন ৪:২৪; কলসীয় ১:১৫; ১ তীমথিয় ১:১৭) তাই এই কথা বলে যীশু বোঝাতে চাননি যে, আমরা মানুষরা আমাদের মাংসিক চোখ দিয়ে যিহোবাকে দেখতে পারব। অবশ্য, অভিষিক্ত খ্রীষ্টানরা আত্মিক প্রাণী হিসেবে পুনরুত্থিত হওয়ার পর স্বর্গে গিয়ে যিহোবা ঈশ্বরকে দেখতে পাবেন। কিন্তু যারা “নির্ম্মলান্তঃকরণ” এবং যাদের পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকার আশা আছে, তারাও ঈশ্বরের “দর্শন” পেতে পারেন। কিন্তু, তা কীভাবে সম্ভব?

৩. মানুষরা কীভাবে ঈশ্বরের কিছু গুণকে উপলব্ধি করতে পারে?

যিহোবা যা কিছু সৃষ্টি করেছেন সেগুলোকে মন দিয়ে দেখে আমরা তাঁর সম্বন্ধে শিখতে পারি। এভাবে তাঁর শক্তি আমাদের ওপর ছাপ ফেলবে এবং আমরা তাঁকে সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বর বলে স্বীকার করব। (ইব্রীয় ১১:৩; প্রকাশিত বাক্য ৪:১১) এই সম্বন্ধে প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “[ঈশ্বরের] অদৃশ্য গুণ, অর্থাৎ তাঁহার অনন্ত পরাক্রম ও ঈশ্বরত্ব, জগতের সৃষ্টিকাল অবধি তাঁহার বিবিধ কার্য্যে বোধগম্য হইয়া দৃষ্ট হইতেছে।” (রোমীয় ১:২০) তাই, ঈশ্বরকে দেখার ব্যাপারে যীশুর কথাগুলো আসলে যিহোবার কিছু গুণ উপলব্ধি করার ক্ষমতাকে বোঝায়। এভাবে দেখার ভিত হল সঠিক জ্ঞান এবং তা “হৃদয়ের চক্ষু” দিয়ে আধ্যাত্মিকভাবে উপলব্ধি করা হয়। (ইফিষীয় ১:১৮) যীশুর কথা এবং কাজও ঈশ্বরের সম্বন্ধে অনেক কিছু জানায়। তাই, যীশু বলেছিলেন: “যে আমাকে দেখিয়াছে, সে পিতাকে দেখিয়াছে।” (যোহন ১৪:৯) যিহোবার ব্যক্তিত্বকে যীশু নিখুঁতভাবে প্রকাশ করেছিলেন। তাই, যীশুর জীবন ও শিক্ষা সম্বন্ধে জ্ঞান নিলে তা আমাদেরকে ঈশ্বরের কিছু গুণ দেখতে বা উপলব্ধি করতে সাহায্য করবে।

আধ্যাত্মিক জ্ঞান থাকা খুবই জরুরি

৪. আজকে কীভাবে অনেকে দেখায় যে, আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর প্রতি তাদের উপলব্ধি নেই?

আজকে, বিশ্বাস ও আধ্যাত্মিক বিষয়ের প্রতি প্রকৃত উপলব্ধি খুব কমই দেখা যায়। পৌল বলেছিলেন, “সকলের বিশ্বাস নাই।” (২ থিষলনীকীয় ৩:২) অনেকে কেবল নিজেদের স্বার্থের পিছনে ছুটছে এবং ঈশ্বরের প্রতি তাদের একটুও বিশ্বাস নেই। তাদের পাপপূর্ণ আচরণের জন্য ও আধ্যাত্মিক বিষয়ের প্রতি উপলব্ধির অভাব থাকায় তারা তাদের বোঝার চোখ দিয়ে তাঁকে দেখতে পারে না কারণ প্রেরিত যোহন লিখেছিলেন: “যে মন্দ কার্য্য করে সে ঈশ্বরকে দর্শন করে নাই।” (৩ যোহন ১১) এইরকম ব্যক্তিরা তাদের মাংসিক চোখ দিয়ে ঈশ্বরকে দেখতে পায় না বলে এমনভাবে আচরণ করে, যেন ঈশ্বরও তাদের কাজ দেখতে পাচ্ছেন না। (যিহিষ্কেল ৯:৯) তারা আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোকে অবহেলা করে আর তাই “ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান” অর্জন করতে পারে না। (হিতোপদেশ ২:৫) তাই, উপযুক্তরূপেই পৌল লিখেছিলেন: “প্রাণিক মনুষ্য ঈশ্বরের আত্মার বিষয়গুলি গ্রহণ করে না, কেননা তাহার কাছে সে সকল মূর্খতা; আর সে সকল সে জানিতে পারে না, কারণ তাহা আত্মিক ভাবে বিচারিত হয়।”—১ করিন্থীয় ২:১৪.

৫. আধ্যাত্মিক-মনা ব্যক্তিরা কোন্‌ বিষয় মনে রাখেন?

আমরা যদি আধ্যাত্মিক-মনা হই, তাহলে আমরা সবসময় মনে রাখব যে যিহোবা মানুষের দোষ খুঁজে বেড়ান না ঠিকই কিন্তু আমরা কখন খারাপ চিন্তা ও আকাঙ্ক্ষাগুলোর দ্বারা চালিত হই, তা তিনি জানেন। সত্যিই, “মনুষ্যের পথ . . . সদাপ্রভুর দৃষ্টিগোচর; তিনি তাহার সকল পথ সমান করেন।” (হিতোপদেশ ৫:২১) আমরা যদি পাপ করে ফেলি, তাহলে অনুতপ্ত হই এবং যিহোবার ক্ষমা পেতে চাই কারণ আমরা তাঁকে ভালবাসি ও তাঁকে দুঃখ দিতে চাই না।—গীতসংহিতা ৭৮:৪১; ১৩০:৩.

কী আমাদেরকে স্থির রাখে?

৬. স্থির থাকার মানে কী?

যদিও আমাদের চোখ দিয়ে আমরা যিহোবাকে দেখতে পাই না কিন্তু আসুন আমরা সবসময় মনে রাখি যে, তিনি আমাদেরকে দেখতে পান। তিনি যে আছেন এই বিষয়টা মনে রাখা এবং যারা তাঁকে ডাকে তিনি তাদের নিকটবর্তী হন এই দৃঢ় বিশ্বাস আমাদেরকে স্থির অর্থাৎ তাঁর প্রতি আমাদের বিশ্বস্ততার ক্ষেত্রে দৃঢ় ও অটল থাকতে সাহায্য করবে। (গীতসংহিতা ১৪৫:১৮) আমরা মোশির মতো হতে পারি, যার সম্বন্ধে পৌল লিখেছিলেন: “বিশ্বাসে তিনি মিসর ত্যাগ করিলেন, রাজার কোপ হইতে ভীত হন নাই, কারণ যিনি অদৃশ্য, তাঁহাকে যেন দেখিয়াই স্থির থাকিলেন।”—ইব্রীয় ১১:২৭.

৭, ৮. ফরৌণের সামনে দাঁড়ানোর জন্য মোশি কোথা থেকে সাহস পেয়েছিলেন?

ইস্রায়েলীয়দের মিশরের বন্দিত্ব থেকে বের করে আনার জন্য ঈশ্বর মোশিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন আর তা পালন করতে গিয়ে তাকে বারবার স্বৈরাচারী ফরৌণের রাজদরবারে ধর্মীয় ও সামরিক উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের সামনে যেতে হয়েছিল। রাজপ্রাসাদের দেওয়ালে হয়তো বিভিন্ন মূর্তি সাজানো ছিল। কিন্তু, যিহোবা অদৃশ্য হওয়া সত্ত্বেও মোশির কাছে বাস্তব ছিলেন, যিনি ওই প্রতিমাগুলোর মতো নয় যাদেরকে দিয়ে মিশরের নির্জীব দেবতাদেরকে বোঝানো হতো। অতএব, ফরৌণকে দেখে যে মোশি ভয় পাননি তাতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই!

ফরৌণের সামনে বারবার দাঁড়ানোর জন্য মোশি কোথা থেকে সাহস পেয়েছিলেন? শাস্ত্র আমাদেরকে জানায়, “ভূমণ্ডলস্থ মনুষ্যদের মধ্যে সকল অপেক্ষা মোশি লোকটী অতিশয় মৃদুশীল ছিলেন।” (গণনাপুস্তক ১২:৩) এটা স্পষ্ট যে, আধ্যাত্মিক বিষয়ের প্রতি গভীর উপলব্ধি এবং ঈশ্বর তার সঙ্গে আছেন, এই দৃঢ় বিশ্বাসের জন্যই মোশি মিশরের নিষ্ঠুর রাজার সামনে “যিনি অদৃশ্য” তাঁকে তুলে ধরার শক্তি পেয়েছিলেন। কিছু উপায় কী, যার মাধ্যমে আজকে কিছু ব্যক্তিরা অদৃশ্য ঈশ্বরকে ‘দেখে’ তাদের বিশ্বাস প্রকাশ করেন?

৯. সবসময় স্থির থাকার একটা উপায় কী?

বিশ্বাস প্রকাশ করার এবং যিনি অদৃশ্য তাঁকে দেখেছি ভেবে সবসময় স্থির থাকার একটা উপায় হল, তাড়নার মধ্যেও সাহসের সঙ্গে প্রচার করে চলা। যীশু তাঁর শিষ্যদের সাবধান করেছিলেন: “আমার নাম প্রযুক্ত তোমরা সকলের ঘৃণিত হইবে।” (লূক ২১:১৭) এছাড়াও তিনি তাদেরকে বলেছিলেন: “‘দাস আপন প্রভু হইতে বড় নয়;’ লোকে যখন আমাকে তাড়না করিয়াছে, তখন তোমাদিগকেও তাড়না করিবে।” (যোহন ১৫:২০) যীশুর কথা সত্য হয়েছিল কারণ তাঁর মৃত্যুর পরপরই তাঁর অনুসারীদেরকে তাড়না সহ্য করতে হয়েছিল, যেমন তাদেরকে ভয় দেখানো হয়েছিল, গ্রেপ্তার ও মারধর করা হয়েছিল। (প্রেরিত ৪:১-৩, ১৮-২১; ৫:১৭, ১৮, ৪০) যদিও তখন তাড়নার ঢেউ বয়ে গিয়েছিল কিন্তু যীশুর প্রেরিতরা এবং অন্য শিষ্যরা সাহসের সঙ্গে সুসমাচার প্রচার করে চলেছিলেন।—প্রেরিত ৪:২৯-৩১.

১০. যিহোবা আমাদের সুরক্ষা করেন, এই আস্থা কীভাবে আমাদেরকে প্রচার কাজে সাহায্য করে?

১০ মোশির মতো, যীশুর প্রথম শতাব্দীর শিষ্যরাও শত্রুদের ভয়ে জর্জরিত হয়ে পড়েননি। ঈশ্বরের ওপর যীশুর শিষ্যদের বিশ্বাস ছিল আর তাই প্রচণ্ড তাড়নার মধ্যেও তারা স্থির থাকতে পেরেছিলেন। হ্যাঁ, যিনি অদৃশ্য তাঁকে দেখেছেন ভেবে তারা সবসময় স্থির ছিলেন। আজকে, আমরা যখন সবসময় মনে রাখি যে যিহোবা আমাদেরকে সুরক্ষা করছেন তখন তা আমাদেরকে উৎসাহ দেয় এবং রাজ্য প্রচার কাজে আমরা আরও সাহস পাই। ঈশ্বরের বাক্য বলে যে, “লোক-ভয় ফাঁদজনক; কিন্তু যে সদাপ্রভুতে বিশ্বাস করে, সে উচ্চে স্থাপিত হইবে।” (হিতোপদেশ ২৯:২৫) ফলে, আমরা তাড়নার ভয়ে সরে পড়ি না; কিংবা প্রচার করতেও লজ্জা পাই না। আমাদের বিশ্বাস আমাদেরকে সাহসের সঙ্গে প্রতিবেশী, সহকর্মী, সহপাঠী ও অন্যদের কাছে সাক্ষ্য দিতে প্রেরণা দেয়।—রোমীয় ১:১৪-১৬.

যিনি অদৃশ্য তিনি তাঁর লোকেদেরকে পথ দেখান

১১. পিতর ও যিহূদার কথা অনুসারে, খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর সঙ্গে মেলামেশা করত এমন কিছু ব্যক্তিরা কীভাবে দেখিয়েছিল যে তাদের আধ্যাত্মিক বিষয়ের প্রতি উপলব্ধির অভাব আছে?

১১ বিশ্বাস আমাদেরকে দেখতে সাহায্য করে যে, যিহোবা তাঁর পার্থিব সংগঠনকে পথ দেখাচ্ছেন। আর এর ফলে মণ্ডলীতে যারা নেতৃত্ব নিচ্ছেন তাদের সমালোচনা করা থেকে আমরা বিরত হই। প্রেরিত পিতর ও যীশুর সৎ ভাই যিহূদা কিছু ব্যক্তিদের বিষয়ে সাবধান করে দিয়েছিলেন, যাদের আধ্যাত্মিক বিষয়ের প্রতি উপলব্ধির অভাব ছিল ও এই কারণে খ্রীষ্টানদের মধ্যে যারা নেতৃত্ব নিচ্ছিলেন তাদেরকে তারা নিন্দা করেছিল। (২ পিতর ২:৯-১২; যিহূদা ৮) যিহোবা যদি শারীরিকভাবে ওই ব্যক্তিদের সামনে থাকতেন, তাহলে এই দোষ অন্বেষণকারীরা কি তাঁর সামনে এভাবে কথা বলতে পারত? নিশ্চয়ই না! কিন্তু, ঈশ্বর অদৃশ্য বলে ওই ব্যক্তিরা এটা চিন্তা করেনি যে, ঈশ্বরের কাছে তাদের নিকাশ দিতে হবে।

১২. মণ্ডলীতে যারা নেতৃত্ব নেন তাদের প্রতি আমাদের কেমন মনোভাব দেখানো উচিত?

১২ এটা ঠিক যে, অসিদ্ধ মানুষদের নিয়ে খ্রীষ্টীয় মণ্ডলী গড়ে উঠেছে। প্রাচীনরাও ভুল করেন আর মাঝে মাঝে তা ব্যক্তিগতভাবে আমাদেরকে প্রভাবিত করে। তাসত্ত্বেও, যিহোবা এই ব্যক্তিদেরকে তাঁর পালের পালক হিসেবে ব্যবহার করছেন। (১ পিতর ৫:১, ২) আধ্যাত্মিক-মনা নারী-পুরুষরা জানেন যে, বিভিন্ন উপায়ের মধ্যে এই একটা উপায়ে যিহোবা তাঁর লোকেদের পথ দেখান। তাই, খ্রীষ্টান হিসেবে আমরা অন্যের ভুল ধরি না, অভিযোগের মনোভাব বাদ দিই এবং ঈশতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সম্মান দেখাই। আমাদের মাঝে যারা নেতৃত্ব নেন তাদের বাধ্য হয়ে আমরা দেখাই যে, যিনি অদৃশ্য তাঁকে আমরা দেখতে পাই।—ইব্রীয় ১৩:১৭.

ঈশ্বরকে আমাদের সর্বমহান শিক্ষক হিসেবে দেখা

১৩, ১৪. আপনার কাছে যিহোবাকে সর্বমহান শিক্ষক হিসেবে দেখার মানে কী?

১৩ আরেকটা ক্ষেত্রে আধ্যাত্মিক উপলব্ধিবোধ থাকা দরকার। যিশাইয় ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন: “তোমার চক্ষু তোমার শিক্ষককে দেখিতে পাইবে।” (যিশাইয় ৩০:২০, পাদটীকা) তাঁর পার্থিব সংগঠনের মাধ্যমে যে যিহোবা আমাদেরকে শিক্ষা দিচ্ছেন, তা স্বীকার করার জন্য বিশ্বাস দরকার। (মথি ২৪:৪৫-৪৭) ঈশ্বরকে আমাদের সর্বমহান শিক্ষক হিসেবে দেখা বলতে শুধু বাইবেল অধ্যয়নের ভাল অভ্যাস বজায় রাখা ও খ্রীষ্টীয় সভাগুলোতে নিয়মিত উপস্থিত থাকাই বোঝায় না। এর মানে, ঈশ্বরের আধ্যাত্মিক ব্যবস্থাগুলো থেকে পুরোপুরি উপকার নেওয়া। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যীশুর মাধ্যমে যিহোবা আমাদেরকে যে নির্দেশনা দেন তার প্রতি অধিক আগ্রহের সঙ্গে মনোযোগ দেওয়া দরকার, যাতে আমরা আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে ভেসে চলে না যাই।—ইব্রীয় ২:১.

১৪ আধ্যাত্মিক খাদ্য থেকে পূর্ণ উপকার পাওয়ার জন্য মাঝে মাঝে বিশেষ চেষ্টার দরকার হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বাইবেলের যে ঘটনাগুলো বুঝতে কঠিন লাগে সেগুলোকে আমরা হয়তো তাড়াহুড়ো করে ওপর ওপর পড়ে শেষ করতে চাইতে পারি। প্রহরীদুর্গ এবং সচেতন থাক! পত্রিকা পড়ার সময় আমরা হয়তো যে প্রবন্ধগুলো আমাদের কাছে ভাল লাগে না, সেগুলোকে বাদ দিয়ে পড়ি। কিংবা আমরা হয়তো খ্রীষ্টীয় সভাগুলোতে এসে মন দিয়ে না শুনে নানা বিষয় নিয়ে চিন্তা করি। কিন্তু, যে বিষয়গুলো আলোচনা করা হচ্ছে সেগুলোর পিছনে কী যুক্তি আছে তা নিয়ে যদি আমরা চিন্তা করি, তাহলে আমরা সজাগ থাকতে পারি। যে আধ্যাত্মিক নির্দেশনা আমরা পেয়ে থাকি, তার প্রতি আমাদের গভীর উপলব্ধি দেখায় যে আমরা যিহোবাকে আমাদের সর্বমহান শিক্ষক হিসেবে স্বীকার করি।

আমাদেরকে নিকাশ দিতে হবে

১৫. কেউ কেউ কীভাবে দেখিয়েছে যেন ঈশ্বরও তাদেরকে দেখতে পাননি?

১৫ বিশেষ করে এই ‘শেষকালে’ দুষ্টতা এত বেশি ছেয়ে গেছে যে, যিনি অদৃশ্য তাঁর ওপর বিশ্বাস রাখা খুবই জরুরি। (দানিয়েল ১২:৪) অসততা এবং যৌন অনৈতিকতা দিন-দিন কেবল বেড়েই চলেছে। কিন্তু, কোন মানুষ আমাদেরকে দেখতে না পেলেও যিহোবা যে আমাদের সমস্ত কিছু দেখতে পান, এই বিষয়টা মনে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। কেউ কেউ এই বিষয়টা ভুলে গেছে। তাই কেউ যখন তাদেরকে দেখে না তখন তারা হয়তো অশাস্ত্রীয় কোন আচরণ করে ফেলতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কেউ কেউ ইন্টারনেট, টেলিভিশন ও অন্যান্য আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ক্ষতিকর আমোদপ্রমোদ এবং বিভিন্ন অশ্লীল ছবি দেখার লোভকে দমন করেনি। এইধরনের কাজগুলো যেহেতু নির্জন পরিবেশে হয়, তাই কেউ কেউ এমন ভাব দেখিয়েছে যেন যিহোবাও তাদের আচরণ দেখতে পাননি।

১৬. যিহোবার উচ্চ মানগুলোর সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করতে কী আমাদেরকে সাহায্য করবে?

১৬ প্রেরিত পৌলের এই কথাগুলো মনে রাখা ভাল: “আমাদের প্রত্যেক জনকে ঈশ্বরের কাছে আপন আপন নিকাশ দিতে হইবে।” (রোমীয় ১৪:১২) আমাদের মনে রাখা দরকার যে, আমরা যত বার পাপ করি তত বারই তা যিহোবার বিরুদ্ধে করে থাকি। এই বিষয়টা জানা থাকলে তা আমাদেরকে তাঁর উচ্চ মানগুলোর সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করতে ও নোংরা অভ্যাস এড়িয়ে চলতে সাহায্য করবে। বাইবেল আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয়: “তাঁহার সাক্ষাতে কোন সৃষ্ট বস্তু অপ্রকাশিত নয়; কিন্তু তাঁহার চক্ষুর্গোচরে সকলই নগ্ন ও অনাবৃত রহিয়াছে, যাঁহার কাছে আমাদিগকে নিকাশ দিতে হইবে।” (ইব্রীয় ৪:১৩) এটা ঠিক যে, ঈশ্বরের কাছে আমাদের নিকাশ দিতে হবে কিন্তু তাঁর ইচ্ছা ও তাঁর ধার্মিক মানগুলো মেনে চলার পিছনে প্রধান কারণ হল যিহোবাকে আমরা গভীরভাবে ভালবাসি। তাই, আসুন আমরা আমোদপ্রমোদ বাছাই করার ও বিপরীত লিঙ্গের ব্যক্তিদের সঙ্গে কথাবার্তা বলার সময় বিচক্ষণ হই।

১৭. যিহোবা আমাদের প্রতি কীধরনের আগ্রহ দেখান?

১৭ যিহোবা আমাদের প্রতি খুবই আগ্রহী কিন্তু তার মানে এই নয় যে, তিনি অপেক্ষা করে থাকেন যে কখন আমরা ভুল করব ও তিনি আমাদেরকে শাস্তি দেবেন। বরং, তিনি প্রেম দেখিয়ে আমাদের জন্য চিন্তা করেন, ঠিক যেমন একজন বাবা তার বাধ্য সন্তানকে পুরস্কার দিতে চান। আমাদের স্বর্গীয় পিতা আমাদের বিশ্বাস দেখে খুশি হন ও “যাহারা তাঁহার অন্বেষণ করে, তিনি তাহাদের পুরস্কারদাতা” তা জানা আমাদেরকে কত সান্ত্বনাই না দেয়! (ইব্রীয় ১১:৬) আমরা যেন যিহোবার ওপর পূর্ণ বিশ্বাস রাখি ও ‘একাগ্র অন্তঃকরণে তাঁহার সেবা করি।’—১ বংশাবলি ২৮:৯.

১৮. যেহেতু যিহোবা আমাদের বিশ্বস্ততার কাজগুলো দেখেন ও লক্ষ্য রাখেন, তাই আমরা শাস্ত্র থেকে কোন্‌ নিশ্চয়তা পাই?

১৮ হিতোপদেশ ১৫:৩ পদ বলে: “সদাপ্রভুর চক্ষু সর্ব্বস্থানেই আছে, তাহা অধম ও উত্তমদের প্রতি দৃষ্টি রাখে।” হ্যাঁ, ঈশ্বর খারাপ লোকেদের ওপর নজর রাখেন ও তাদের আচরণ অনুযায়ী তাদেরকে প্রতিফল দেন। কিন্তু আমরা যদি ‘উত্তম’ হই, তাহলে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, যিহোবা আমাদের বিশ্বস্ততার কাজগুলো লক্ষ্য করেন। ‘প্রভুতে আমাদের পরিশ্রম নিষ্ফল নয়’ ও যিনি অদৃশ্য তিনি ‘আমাদের কার্য্য এবং তাঁহার নামের প্রতি প্রদর্শিত আমাদের প্রেম ভুলিয়া যাইবেন না’ জেনে আমাদের বিশ্বাস কত মজবুতই না হয়!—১ করিন্থীয় ১৫:৫৮; ইব্রীয় ৬:১০.

আমাদের পরীক্ষা করার জন্য যিহোবাকে আমন্ত্রণ জানানো

১৯. যিহোবার ওপর অটল বিশ্বাস রাখার কিছু উপকার কী?

১৯ যিহোবার বিশ্বস্ত দাস হিসেবে, আমরা তাঁর কাছে খুবই মূল্যবান। (মথি ১০:২৯-৩১) যদিও তিনি অদৃশ্য কিন্তু তারপরেও তিনি আমাদের কাছে বাস্তব হয়ে উঠতে পারেন এবং তাঁর সঙ্গে আমাদের যে মূল্যবান সম্পর্ক রয়েছে, তা আমরা বজায় রাখতে পারি। আমাদের স্বর্গীয় পিতার প্রতি এইরকম মনোভাব থাকলে তা আমাদের জন্য অনেক উপকার নিয়ে আসে। আমাদের অটল বিশ্বাস আমাদেরকে যিহোবার সামনে শুচি হৃদয় এবং শুদ্ধ বিবেক বজায় রাখতে সাহায্য করে। অকপট বিশ্বাস আমাদেরকে দ্বৈত জীবনযাপন করা থেকে বিরত রাখে। (১ তীমথিয় ১:৫, ১৮, ১৯) ঈশ্বরের প্রতি আমাদের অটল বিশ্বাস এক ভাল উদাহরণ এবং আমাদের চারিদিকে যারা আছে তাদের ওপর উৎসাহজনক প্রভাব ফেলতে পারে। (১ তীমথিয় ৪:১২) এছাড়াও, এইরকম বিশ্বাস ঈশ্বরের অনুমোদন আছে এমন আচরণ গড়ে তোলে ও তা যিহোবার হৃদয়কে আনন্দিত করে।—হিতোপদেশ ২৭:১১.

২০, ২১. যিহোবা আমাদের ওপর সবসময় নজর রাখুন, তা আমরা কেন চাইব? (খ) গীতসংহিতা ১৩৯:২৩, ২৪ পদের কথাগুলো কীভাবে আমরা নিজেদের জীবনে কাজে লাগাতে পারি?

২০ আমরা যদি সত্যিই জ্ঞানী হই, তাহলে যিহোবা আমাদের ওপর নজর রাখছেন জেনে আমরা আনন্দিত হব। তিনি আমাদেরকে দেখবেন আমরা শুধু তা-ই চাইব না বরং আমরা চাইব যে, তিনি যেন আমাদের চিন্তা ও কাজগুলোকে গভীরভাবে পরীক্ষা করেন। প্রার্থনায় আমরা যিহোবাকে আমন্ত্রণ জানাব তিনি যেন আমাদের সমস্ত কিছু পরীক্ষা করেন ও আমাদের মধ্যে কোন ভুল প্রবণতা রয়েছে কি না, তা দেখেন। আমাদের বিভিন্ন সমস্যা মোকাবিলা এবং প্রয়োজনীয় রদবদল করতে তিনি আমাদেরকে অবশ্যই সাহায্য করবেন। উপযুক্তভাবেই গীতরচক দায়ূদ গেয়েছিলেন: “হে ঈশ্বর, আমাকে অনুসন্ধান কর, আমার অন্তঃকরণ জ্ঞাত হও; আমার পরীক্ষা কর, আমার চিন্তা সকল জ্ঞাত হও; আর দেখ, আমাতে দুষ্টতার পথ পাওয়া যায় কি না, এবং সনাতন পথে আমাকে গমন করাও।”—গীতসংহিতা ১৩৯:২৩, ২৪.

২১ দায়ূদ অনুরোধ করেছিলেন যাতে যিহোবা তাঁকে অনুসন্ধান করে দেখেন যে তার মধ্যে কোন “দুষ্টতার পথ” আছে কি না। গীতরচকের মতো আমরাও কি চাই না ঈশ্বর আমাদের হৃদয় পরীক্ষা করুন ও দেখুন যে, আমাদের মধ্যে কোন ভুল উদ্দেশ্য আছে কি না? তাই, আসুন আমরা বিশ্বাস নিয়ে যিহোবাকে বলি যাতে তিনি আমাদের পরীক্ষা করেন। কিন্তু, কোন ভুল করে আমরা যদি দুশ্চিন্তা করি বা আমাদের মধ্যে যদি খারাপ কিছু পাওয়া যায়, তাহলে কী? তাহলে, আসুন আমরা সবসময় একাগ্রভাবে আমাদের প্রেমময় ঈশ্বর যিহোবার কাছে প্রার্থনা করি এবং নম্রভাবে তাঁর পবিত্র আত্মার নির্দেশনা ও তাঁর বাক্যের পরামর্শ মেনে চলি। আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে তিনি আমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং আমাদেরকে এমন এক পথে চলতে সাহায্য করবেন, যা অনন্ত জীবনের পথে নিয়ে যায়।—গীতসংহিতা ৪০:১১-১৩.

২২. যিনি অদৃশ্য তাঁর সম্বন্ধে আমাদের কী সংকল্প হওয়া উচিত?

২২ যিহোবা আমাদের কাছ থেকে যা চান তা যদি আমরা করি, তাহলে তিনি আমাদেরকে অনন্ত জীবন দিয়ে আশীর্বাদ করবেন। এর জন্য অবশ্যই আমাদেরকে তাঁর ক্ষমতা ও কর্তৃত্বকে স্বীকার করতে হবে, ঠিক যেমন প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “যিনি যুগপর্য্যায়ের রাজা, অক্ষয় অদৃশ্য একমাত্র ঈশ্বর, যুগপর্য্যায়ের যুগে যুগে তাঁহারই সমাদর ও মহিমা হউক। আমেন।” (১ তীমথিয় ১:১৭) আমরা যেন যিহোবাকে সবসময় মন থেকে এইরকম শ্রদ্ধা দেখাই। আর যা কিছুই আসুক না কেন, যিনি অদৃশ্য তাঁকে দেখেছি ভেবে সবসময় স্থির থাকার জন্য আমাদের সংকল্প যেন কখনও টলে না যায়।

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• মানুষরা কীভাবে ঈশ্বরকে দেখতে পারে?

• যিহোবা যদি আমাদের কাছে বাস্তব হন, তাহলে তাড়নার সময় আমরা কেমন আচরণ দেখাব?

• যিহোবাকে আমাদের সর্বমহান শিক্ষক হিসেবে দেখার মানে কী?

• কেন আমরা চাইব, যিহোবা আমাদের পরীক্ষা করুন?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

ফরৌণকে দেখে মোশি ভয়ে জড়সড় হয়ে যাননি বরং এমনভাবে কাজ করেছিলেন যেন তিনি অদৃশ্য ঈশ্বর যিহোবাকে দেখতে পেয়েছিলেন

[২১ পৃষ্ঠার চিত্র]

আসুন আমরা কখনও এমন কাজ না করি, যাতে মনে হয় যেন ঈশ্বর আমাদেরকে দেখতে পাচ্ছেন না

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

আমরা একাগ্রভাবে ঈশ্বর বিষয়ক জ্ঞান খুঁজি কারণ তাঁকে আমরা আমাদের সর্বমহান শিক্ষক হিসেবে দেখি