সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহোবাকে আমরা পরীক্ষা করেছিলাম

যিহোবাকে আমরা পরীক্ষা করেছিলাম

জীবন কাহিনী

যিহোবাকে আমরা পরীক্ষা করেছিলাম

বলেছেন পল স্ক্রাইবনার

“সুপ্রভাত মিসেস স্ট্যাকহাউস। আজ সকালে আমি ইস্টারের কেকের অর্ডার নিচ্ছিলাম আর আমি নিশ্চিত যে, আপনার পরিবারের জন্য আপনিও একটা কেকের অর্ডার দিতে চাইবেন।” এটা ছিল ১৯৩৮ সালের বসন্তকালের প্রথম দিকের কথা আর আমি আমেরিকার নিউ জারসির এটকোতে জেনারেল বেকিং কোম্পানির পক্ষ থেকে আমার সেল্‌স রুটের একজন উত্তম ক্রেতার সঙ্গে কথা বলছিলাম। আমাকে অবাক করে দিয়ে মিসেস স্ট্যাকহাউস আমার প্রস্তাবটা ফিরিয়ে দিলেন।

 তিনি বলেন, ‘এই ব্যাপারে আমার কোন আগ্রহ নেই। কারণ আমরা ইস্টার পালন করি না।’

সেই মুহূর্তে ঠিক কী বলব, তা ভেবে পাচ্ছিলাম না। ইস্টার পালন করেন না? অবশ্য, বিক্রির প্রথম নীতি হচ্ছে, ক্রেতা যা বলবে সেটাই সবসময় ঠিক। তাই, এখন আমার কী করা উচিত? আমি কিছুটা ঝুঁকি নিয়ে বললাম, ‘ঠিক আছে, কিন্তু এই কেক খুবই সুস্বাদু আর আমি জানি যে আপনি আমাদের সামগ্রী পছন্দ করেন। উম . . . যদিও আপনি ইস্টার পালন করেন না কিন্তু আপনি কি মনে করেন না যে আপনার পরিবারের সবাই এই কেক উপভোগ করবে।’

উত্তরে তিনি বলেন, ‘মনে হয় না, কিন্তু আমি আপনাকে একটা বিষয়ে কিছু বলতে চাই, মি: স্ক্রাইবনার আর এখনই হয়তো তা বলার সবচেয়ে ভাল সময়।’ সেই আলোচনা আমার জীবনকে পুরোপুরি বদলে দিয়েছিল! মিসেস স্ট্যাকহাউস নিউ জারসির বার্লিনের যিহোবার সাক্ষিদের কোম্পানির (বা মণ্ডলীর) একজন সদস্য ছিলেন। তিনি আমাকে বুঝিয়ে বলেন যে, ইস্টার পালনের বিষয়টা কোথা থেকে শুরু হয়েছে আর আমাকে তিনটে পুস্তিকা দেন। সেগুলোর নাম ছিল নিরাপত্তা (ইংরেজি), উন্মোচিত (ইংরেজি) এবং সুরক্ষা (ইংরেজি)। কৌতূহলী কিন্তু কিছুটা চিন্তিত হয়ে সেগুলো আমি বাড়ি নিয়ে যাই। মিসেস স্ট্যাকহাউস যা বলেছিলেন তার সঙ্গে কিছু একটার মিল আছে, যা আমি ছোটবেলায় শুনেছিলাম।

বাইবেল ছাত্রদের সঙ্গে প্রথম পরিচয়

১৯০৭ সালের ৩১শে জানুয়ারি আমার জন্ম হয় এবং ১৯১৫ সালে আমার বয়স যখন আট বছর, তখন আমার বাবা ক্যানসার রোগে মারা যান। এর ফলে মা এবং আমি তার বাবামার সঙ্গে থাকার জন্য মাসাচুসিট্‌সের মলডেনের বিরাট বাড়িতে যাই। আমার মামা বেঞ্জামিন রেনসম এবং তার স্ত্রীও ওই বাড়ির ৪ তলায় থাকতেন। বিংশ শতাব্দী শুরু হওয়ার আগে থেকেই বেন মামা আন্তর্জাতিক বাইবেল ছাত্রদের—যিহোবার সাক্ষিরা সেই সময় এই নামেই পরিচিত ছিলেন—সঙ্গে মেলামেশা শুরু করেন। আমি বেন মামার খুব ভক্ত ছিলাম কিন্তু মার পরিবারের সবাই তাকে অস্বাভাবিক বলে মনে করতেন। তারা মেথোডিস্ট ধর্মের অনুসারী ছিলেন। কয়েক বছর পর, বিবাহবিচ্ছেদের আগে তার স্ত্রী তাকে তার ধর্মীয় বিশ্বাসের জন্য পাগল বলে পাগলা গারদে ঢুকিয়েছিলেন! কিন্তু খুব শীঘ্রিই ডাক্তাররা বুঝতে পারলেন যে, বেন মামার মাথায় কোন সমস্যা নেই আর তাই তারা ক্ষমা চেয়ে তাকে ছেড়ে দেন।

বেন মামা আমাকে বোস্টনের আন্তর্জাতিক বাইবেল ছাত্রদের সভাগুলোতে নিয়ে যেতেন, বিশেষ করে সেখানে যখন অতিথি বক্তারা বক্তৃতা দিতেন বা কোন বিশেষ অনুষ্ঠান হতো তখন নিয়ে যেতেন। একবার অতিথি বক্তা ছিলেন সবার পরিচিত চার্লস টেজ রাসেল, যিনি সেই সময় প্রচার কাজের দেখাশোনা করতেন। আরেকবার “ফটো-ড্রামা অফ ক্রিয়েশন” দেখানোর এক বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছিল। যদিও সেটা ১৯১৫ সালের কথা কিন্তু সেই দৃশ্যের কথা এখনও আমার পরিষ্কার মনে আছে যে, ইস্‌হাককে বলি দেওয়ার জন্য অব্রাহাম তাকে নিয়ে পাহাড়ের ওপর উঠছেন। (আদিপুস্তক, ২২ অধ্যায়) আমি এখনও স্পষ্ট দেখতে পাই যে, যিহোবার ওপর পুরোপুরি আস্থা রেখে অব্রাহাম ও ইস্‌হাক কাঠের বোঝা নিয়ে পাহাড়ের ওপর উঠছেন। যেহেতু আমার বাবা ছিল না, তাই বিষয়টা আমার মনের ওপর গভীর ছাপ ফেলেছিল।

এরপর বেন মামা তার স্ত্রীকে নিয়ে মেইনে চলে যান এবং মা আবারও বিয়ে করেন এবং আমাদেরকে নিয়ে নিউ জারসিতে চলে যান। তাই, এর পরে অনেক বছর পর্যন্ত বেন মামার সঙ্গে আমার আর দেখা হয়নি। আমি যখন কিশোর, তখন নিউ জারসিতে ম্যারিয়ন নেফের সঙ্গে আমার দেখা হয়। সে এক প্রেসবিটারিয়ান পরিবারের আট ছেলেমেয়ের মধ্যে একজন ছিল আর ওই পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে আমার খুব ভাল লাগত। প্রায় রবিবার বিকেলটা আমি সেই পরিবারের ও গির্জার যুবকদের সঙ্গে কাটিয়েছি আর এর ফলে শেষে আমি নিজে একজন প্রেসবিটারিয়ান হই। কিন্তু, তারপরও বাইবেল ছাত্রদের সভাগুলোতে আমি যা শিখেছিলাম, তা আমার মনে রয়ে গিয়েছিল। ১৯২৮ সালে ম্যারিয়ন এবং আমি বিয়ে করি এবং ১৯৩৫ সালে আমাদের মেয়ে ডরিস এবং ১৯৩৮ সালে লুইজ জন্মে। আমাদের ছোট্ট মেয়ে এবং নবজাত শিশুকে নিয়ে আমাদের দুজনেরই মনে হয়েছিল যে, পরিবারকে গড়ে তোলার জন্য আমাদের আধ্যাত্মিক নির্দেশনার দরকার আছে।

সেই পুস্তিকাগুলোতে সত্য খুঁজে পাওয়া

ম্যারিয়ন এবং আমি একটা গির্জা খুঁজতে থাকি, যাতে আমরা সেখানে যোগ দিতে পারি আর এর জন্য আমরা একটা পরিকল্পনা করি। প্রতি রবিবার পালা করে আমাদের মধ্যে একজন বাচ্চাদের সঙ্গে ঘরে থাকবে এবং আরেকজন গির্জা খুঁজতে যাবে। এক রবিবার ম্যারিয়নের ঘরে থাকার পালা ছিল কিন্তু বাচ্চাদের দেখাশোনা করার জন্য আমিই ঘরে থাকব বলে প্রস্তাব দিই, যাতে সেই সময় আমি মিসেস স্ট্যাকহাউসের দেওয়া তিনটে পুস্তিকার মধ্যে প্রথমটা অর্থাৎ নিরাপত্তা পুস্তিকাটা পড়তে পারি। একবার আমি যখন পড়া শুরু করি, বই থেকে আমি আর চোখ নামাতে পারিনি! ধীরে ধীরে আমি একেবারে নিশ্চিত হয়ে যাই যে আমি এমন কিছু খুঁজে পেয়েছি, যা কোন গির্জাই শেখাতে পারবে না। পরের সপ্তায়ও একই বিষয় ঘটে এবং আমি বাচ্চাদের দেখাশোনা করার জন্য ঘরে থেকে যেতে চাই আর এর মধ্যে আমি দ্বিতীয় পুস্তিকাটা অর্থাৎ উন্মোচিত পুস্তিকাটা পড়ে ফেলি। আমি যা পড়ছিলাম তার সঙ্গে একটা কিছুর মিল আছে বলে মনে হচ্ছিল। এটাই কি বেন মামা বিশ্বাস করতেন? আমাদের পরিবার মনে করত যে তার ধর্মটা অদ্ভুত। ম্যারিয়ন এটাকে কীভাবে দেখবে? এই নিয়ে আমার চিন্তা করার দরকার হয়নি। কারণ, উন্মোচিত পুস্তিকাটা পড়ার বেশ কয়েক দিন পর আমি যখন কাজ থেকে ঘরে ফিরে আসি, তখন ম্যারিয়ন আমাকে অবাক করে দিয়ে বলে, “যে পুস্তিকাগুলো তুমি ঘরে নিয়ে এসেছ সেগুলো আমি পড়েছি। সেগুলো আসলেই আগ্রহজনক।” তার এই কথা শুনে আমি অনেক স্বস্তি পেয়েছিলাম!

সেই পুস্তিকাগুলোর পিছনে সম্প্রতি বের হওয়া শত্রুরা (ইংরেজি) বই সম্বন্ধে বলা ছিল, যেখানে মিথ্যা ধর্মকে এমনভাবে প্রকাশ করেছিল যে তা জলন্ত অঙ্গারের মতো ছিল। এটা সংগ্রহ করব বলে আমরা ঠিক করেছিলাম। চিঠির মাধ্যমে আমাদের আবেদন জানানোর আগে একজন সাক্ষি আমাদের দরজায় কড়া নাড়েন এবং আমাদেরকে সেই বইটা দেন। সেই বইটা আমাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করেছিল! আমরা বিভিন্ন গির্জায় যাওয়া বাদ দিই এবং নিউ জারসির কেমডেনে যিহোবার সাক্ষিদের কোম্পানির সভাগুলোতে যাওয়া শুরু করি। কয়েক মাস পর, ১৯৩৮ সালের ৩১শে জুলাই রবিবারে আমরা প্রায় ৫০ জনের একটা দল বোন স্ট্যাকহাউসের লনে, যে বাড়িতে আমি ইস্টারের কেক বিক্রি করার চেষ্টা করেছিলাম, সেখানে মিলিত হই এবং জাজ রাদারফোর্ডের রেকর্ড করা বাপ্তিস্মের ওপর একটা বক্তৃতা শুনি। এরপর আমরা ঘরে গিয়ে আমাদের কাপড় পালটাই এবং ১৯ জন ব্যক্তি কাছেরই একটা ছোট্ট নদীতে বাপ্তিস্ম নিই।

অগ্রগামী হওয়ার সংকল্প নেওয়া

আমার বাপ্তিস্মের পরপরই মণ্ডলীর একজন বোন আমাকে অগ্রগামীদের কথা বলেন, যারা প্রচার কাজকে তাদের প্রধান কাজ হিসেবে বেছে নেন। আমি সঙ্গে সঙ্গে কৌতূহলী হয়ে পড়ি এবং খুব শীঘ্রিই এমন একটা পরিবারের দেখা পাই, যারা সবাই-ই অগ্রগামী। কোনিগ নামে একজন বয়স্ক ভাই, তার স্ত্রী এবং তাদের প্রাপ্তবয়স্কা মেয়ে কাছের একটা মণ্ডলীতে অগ্রগামীর কাজ করতেন। কোনিগের পরিবার পরিচর্যায় যে গভীর আনন্দ পেতেন, তা ছোট ছোট বাচ্চাদের বাবা হিসেবে আমার মনে ছাপ ফেলেছিল। আমি প্রায়ই আমার বেকারির ট্রাক থামিয়ে তাদের সঙ্গে ঘরে-ঘরে প্রচারে যেতাম। খুব শীঘ্রিই, আমিও একজন অগ্রগামী হতে চাই। কিন্তু কীভাবে? ম্যারিয়ন এবং আমার ছোট্ট দুটো বাচ্চা আছে এবং আমার কাজে অনেক সময় দিতে হতো। সত্যি বলতে কী, ইউরোপে যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়, তখন অনেক যুবকরা আমেরিকার সেনাবাহিনীতে যোগ দেয় আর এর ফলে আমরা যারা অসামরিক কাজে ছিলাম তাদের কাজের পরিমাণ দিন-দিন বেড়ে যেতে থাকে। আমাকে আরও সেল্‌স রুটের কাজ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল আর আমি জানতাম যে এই ব্যস্ত তালিকার মধ্যে অগ্রগামীর কাজ করা কখনও সম্ভব নয়।

ভাই কোনিগের কাছে আমি যখন অগ্রগামী হওয়ার ব্যাপারে আমার ইচ্ছার কথা বলি, তখন তিনি আমাকে বলেছিলেন: “যিহোবার সেবায় কঠোর পরিশ্রম করে চলুন এবং প্রার্থনায় তাঁকে আপনার লক্ষ্যের কথা জানান। তিনি আপনাকে লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করবেন।” এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আমি তা করে যাচ্ছিলাম। প্রায়ই আমি মথি ৬:৮ পদের কথা চিন্তা করতাম, যা আমাদেরকে নিশ্চয়তা দেয় যে আমরা তাঁর কাছে চাওয়ার আগেই যিহোবা আমাদের প্রয়োজনগুলো জানেন। আর আমি মথি ৬:৩৩ পদের পরামর্শ কাজে লাগানোর চেষ্টা করে চলি, যেখানে বলা আছে প্রথমে ঈশ্বরের রাজ্য ও তাঁর ধার্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা কর। এছাড়াও, আঞ্চলিক দাস (এখন সীমা অধ্যক্ষ বলা হয়) ভাই মেলভিন উইনচেস্টারের কাছ থেকে আমি উৎসাহ পেয়েছিলাম।

ম্যারিয়নকে আমি আমার লক্ষ্যগুলোর কথা জানিয়েছিলাম। আমরা মালাখি ৩:১০ পদের কথাগুলো নিয়ে আলোচনা করি, যেখানে আমাদেরকে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে আমরা যেন যিহোবাকে পরীক্ষা করে দেখি যে, তিনি আমাদেরকে অপরিমেয় আশীর্বাদ করেন কি না। তার উত্তর শুনে আমি অনেক উৎসাহ পেয়েছিলাম: “তুমি যদি অগ্রগামী হতে চাও, তাহলে আমার জন্য দেরি করো না। তুমি অগ্রগামীর কাজ করার সময় আমি মেয়েদের দেখাশোনা করতে পারব। আমাদের খুব বেশি টাকাপয়সা বা জিনিসপত্রের দরকার নেই।” আমাদের বিয়ের এই ১২ বছরের ভিতর ইতিমধ্যেই আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, ম্যারিয়ন মিতব্যয়ী এবং সতর্ক গৃহিণী। সময় গড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সে আমার খুব ভাল অগ্রগামী সহকারী হয়েছিল এবং এই ৬০ বছর সফলভাবে পূর্ণ-সময়ের পরিচর্যা করে চলার পিছনে একটা রহস্য হল, অল্প টাকাপয়সা ও জিনিসপত্র নিয়ে সে পরিতৃপ্ত থেকেছে এবং যা আছে সেটাকে অনেক বেশি বলে মনে করেছে।

বেশ কয়েক মাস ধরে প্রার্থনা এবং পরিকল্পনা করার পর, ম্যারিয়ন ও আমি কিছু টাকা জমাতে পেরেছিলাম আর ১৯৪১ সালের গরমকালে সেই জমানো টাকা দিয়ে আমরা ৫.৫ মিটার লম্বা একটা গাড়ি কিনি, যেখানে আমাদের পরিবার থাকতে পারবে। আমি আমার কাজ ছেড়ে দিই এবং ১৯৪১ সালের জুলাই মাসে নিয়মিত অগ্রগামী হই আর সেই সময় থেকে এখনও পর্যন্ত আমি পূর্ণ-সময়ের পরিচর্যার কাজ করে চলেছি। নিউ জারসি এবং মিসৌরির সেন্ট লুইসের মধ্যে ৫০ নম্বর রুটে যে দশটা স্টেশন আছে সেখানে আমার প্রথম কার্যভার ছিল আর আগস্ট মাসের প্রথম দিকে মিসৌরির এই সেন্ট লুইসেই সম্মেলন হয়েছিল। আমাকে ওই রুটের ভাইদের নাম এবং ঠিকানা পাঠানো হয়েছিল আর আমি তাদের লিখে পাঠিয়েছিলাম যে, কখন আমি সেখানে যাব। সম্মেলনে গিয়ে আমি অগ্রগামীদের বিভাগ খুঁজে বের করি এবং সেখানে আমাকে আরেকটা কার্যভার দেওয়া হয়েছিল।

“আমি যিহোবাকে পরীক্ষা করতে চলেছি”

আমরা আমাদের ছোট্ট গাড়ি সাহিত্যাদি দিয়ে বোঝাই করে ভাইবোনদের কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার জন্য কেমডেনের শেষ সভায় যাই। যেহেতু আমাদের ছোট ছোট দুই মেয়েকে দেখাশোনা করতে হতো এবং সম্মেলনের পরে আমরা কোথায় যাব সে সম্বন্ধে আমাদের কিছুই জানা ছিল না, তাই অনেক ভাইবোনদের কাছে আমাদের সিদ্ধান্তটাকে অবাস্তব বলে মনে হয়েছিল। তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলেছিলেন: “খুব শীঘ্রিই তোমাদেরকে ফিরে আসতে হবে।” আমার মনে পড়ে যে আমি বলেছিলাম: “আমি বলছি না যে আমি ফিরে আসব না। যিহোবা বলেছেন যে তিনি আমার যত্ন নেবেন আর আমি যিহোবাকে পরীক্ষা করতে চলেছি।”

মাসাচুসিট্‌স থেকে মিসিসিপি পর্যন্ত ২০টা শহরে ৬০ বছর ধরে অগ্রগামীর কাজ করার পর আমরা বলতে পারি যে, যিহোবা তাঁর প্রতিজ্ঞা রক্ষার চেয়ে আরও বেশি কিছু করেছেন। ম্যারিয়ন, আমার এবং আমাদের দুই মেয়ের ওপর তিনি যে আশীর্বাদ বর্ষণ করেছেন, তা ১৯৪১ সালে আমি যতটা আশা করেছিলাম তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি। এগুলো হল যে, আমাদের মেয়েরা কাছেরই একটা মণ্ডলীতে বিশ্বস্তভাবে অগ্রগামীর কাজ করছে এবং আমেরিকার ইস্ট কোস্টের বিভিন্ন জায়গায় (শেষ গণণা অনুসারে) প্রায় ১০০ জন আত্মিক ছেলেমেয়ে রয়েছে। আমি ৫২ জন ব্যক্তিকে অধ্যয়ন করিয়েছি এবং ম্যারিয়ন ৪৮ জন ব্যক্তিকে, যারা যিহোবা ঈশ্বরের কাছে নিজেদের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন।

১৯৪১ সালের আগস্ট মাসে আমরা সেন্ট লুইসে যাই এবং সেখানে বেথেল থেকে আসা ভাই টি. জে. সলিভানের সঙ্গে আমাদের দেখা হয়। তার কাছে আমার নিযুক্তিকরণের চিঠি ছিল যেটা আমার দরকার ছিল কারণ খুব শীঘ্রিই যুদ্ধ এবং বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার জন্য লোক বাছাই করার কাজ শুরু হতে চলেছিল। আমি ভাই সলিভানকে বলেছিলাম যে আমি যতটা সময় প্রচার করি আমার স্ত্রীও ততটা সময় প্রচার করে এবং সে-ও আমার সঙ্গে অগ্রগামীর কাজ করতে চায়। যদিও সম্মেলনে তখনও পর্যন্ত অগ্রগামী বিভাগ স্থাপিত হয়নি, তবুও ভাই সলিভান সঙ্গে সঙ্গে ম্যারিয়নকে অগ্রগামী হিসেবে নিযুক্ত করে আমাদেরকে জিজ্ঞেস করেন: “সম্মেলনের পরে আপনারা কোথায় অগ্রগামীর কাজ করবেন?” আমরা জানতাম না যে আমরা কোথায় যাব। তিনি বলেছিলেন, ‘যাকগে, এটা নিয়ে চিন্তিত হবেন না, সম্মেলনে আপনাদের সঙ্গে এমন কারও দেখা হবে যাদের এলাকায় অগ্রগামীদের দরকার আর তাহলেই আপনাদের সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আমাদেরকে শুধু লিখে জানাবেন যে আপনারা কোথায় আছেন আর আমরা আপনাদেরকে কার্যভারের চিঠি পাঠিয়ে দেব।’ ঠিক তা-ই হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত দেখা গেল যে ভাই জ্যাক ডিউইট, যিনি আগে একজন আঞ্চলিক দাস ছিলেন, তিনি ভার্জিনিয়ার নিউ মার্কেটের কিছু লোকেদের জানতেন, যাদের পাইয়োনিয়ার হোম আছে আর সেখানে আরও কিছু অগ্রগামী দরকার। তাই সম্মেলনের পরে আমরা নিউ মার্কেটে যাই।

নিউ মার্কেটে আমাদের জন্য এক অপ্রত্যাশিত আনন্দ অপেক্ষা করছিল। আমাদের সঙ্গে অগ্রগামীর কাজে যোগ দেওয়ার জন্য ফিলাডেলফিয়া থেকে বেঞ্জামিন রেনসম ছাড়া আর কেই বা আসতে পারবে! হ্যাঁ, বেন মামা। ২৫ বছরেরও বেশি সময় আগে বোস্টনে তিনি আমার মনে সত্যের বীজ বুনে দিয়েছিলেন আর এত বছর পর, তার সঙ্গে সেই সত্য সম্বন্ধে ঘরে-ঘরে প্রচার করতে পারাটা কত আনন্দেরই না ছিল! বছরের পর বছর ধরে তার পরিবারের অনীহা, উপহাস ও চাপ সত্ত্বেও, যিহোবা এবং পরিচর্যার প্রতি বেন মামা কখনও ভালবাসা হারিয়ে ফেলেননি।

নিউ মার্কেটের পাইয়োনিয়ার হোমে আমরা আট মাস ছিলাম। সেই সময় অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে আমরা এও শিখেছিলাম যে কীভাবে সাহিত্যাদির বিনিময়ে মুরগি ও ডিম নিতে হয়। এরপর বেন মামা, ম্যারিয়ন ও আমাকে এবং সেইসঙ্গে আরও তিনজনকে পেনসিলভানিয়ার হ্যানোভারে বিশেষ অগ্রগামী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ১৯৪২ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত পেনসিলভানিয়ায় আমাদের যে ছটা দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তার মধ্যে এটাই ছিল প্রথম দায়িত্ব।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে বিশেষ অগ্রগামীরা

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্য আমাদেরকে প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল কিন্তু যিহোবা সবসময় আমাদের সাহায্য করেছিলেন। মাসাচুসিট্‌সের প্রভিন্সটাউনে একবার আমাদের পুরনো বুয়িক গাড়িটা ভেঙে যায় এবং আমাকে একটা পুনর্সাক্ষাৎ করার জন্য বিরোধী ক্যাথলিক এলাকার মধ্যে দিয়ে কয়েক কিলোমিটার পথ হেঁটে যেতে হয়। একদল উচ্ছৃঙ্খল যুবকদের পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় তারা আমাকে চিনে ফেলে এবং চিৎকার শুরু করে। তারা আমার পিছনে ধাওয়া করে আসছে না এই আশা নিয়ে আমি তাড়াতাড়ি হাঁটা শুরু করি এবং সেইসঙ্গে আমার কানের পাশ দিয়ে সাঁ করে পাথর ছোড়ার শব্দ শুনতে পাই। কোন আঘাত ছাড়াই আমি ভালভাবে সেই আগ্রহী ব্যক্তির ঘরে যেতে পেরেছিলাম। কিন্তু গৃহকর্তা, যিনি আ্যমেরিকান লিজিয়নের একজন সম্মানিত সদস্য ছিলেন, তিনি আমার কাছে ক্ষমা চেয়ে বলেন: “আজকে রাতে আমি আপনাকে সময় দিতে পারছি না বলে খুবই দুঃখিত কারণ আমি ভুলে গিয়েছিলাম যে, সিনেমা দেখার জন্য আজকে আমরা শহরে যাব।” আমার যখন মনে পড়ে যে সেই পাথর নিক্ষেপকারী উচ্ছৃঙ্খল যুবকরা আমার ফেরার জন্য অপেক্ষা করে আছে, তখন ভয়ে আমার হাতপা ঠাণ্ডা হয়ে আসে। কিন্তু, আমার মন খুশিতে ভরে ওঠে যখন সেই ভদ্রলোক বললেন: “আপনিও আমাদের সঙ্গে হেঁটে চলুন না কেন? আমরা যেতে যেতে কথা বলতে পারব।” ফলে, আমি তার কাছে সাক্ষ্য দিতে পেরেছিলাম এবং নিরাপদে সেই বিপদজনক এলাকা পার হয়েছিলাম।

পরিবার ও পরিচর্যার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা

যুদ্ধের পর শারলট্‌সভিলে আট বছর বিশেষ ও নিয়মিত অগ্রগামী হিসেবে থাকা ছাড়াও, ভার্জিনিয়ায় আমাদের বেশ কয়েক জায়গায় দায়িত্ব দেওয়া হয়। মেয়েরা বড় হয় এবং ১৯৫৬ সালের মধ্যে তাদের বিয়ে হয়ে যায় আর ম্যারিয়ন এবং আমি আবারও জায়গা বদলাই এবং ভার্জিনিয়ার হেরিসনবার্গে অগ্রগামী হিসেবে ও নর্থ ক্যারোলিনার লিংকেনটনে বিশেষ অগ্রগামী হিসেবে কাজ করি।

১৯৬৬ সালে আমাকে সীমার কাজের জন্য নিযুক্ত করা হয়, যেখানে আমি এক মণ্ডলী থেকে আরেক মণ্ডলীতে গিয়ে ভাইবোনদেরকে উৎসাহ দিতাম, ঠিক যেমন আমার বয়স যখন ৩০ এর কোঠায় ছিল, তখন নিউ জারসিতে ভাই উইনচেস্টার আমাকে উৎসাহ দিতেন। দুই বছরের জন্য আমি টেনেসির মণ্ডলীগুলো নিয়ে গঠিত একটা সীমায় কাজ করি। এরপর ম্যারিয়ন এবং আমাকে আবারও আমাদের প্রিয় বিশেষ অগ্রগামীর কাজ করতে বলা হয়। ১৯৬৮ থেক ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত আমরা জর্জিয়া এবং মিসিসিপির ডিপ সাউথে বিশেষ অগ্রগামী হিসেবে কাজ করি।

জর্জিয়ার ইস্টম্যানে প্রিয় বয়স্ক ভাই পাওয়েল কার্কল্যান্ডের বদলে আমাকে মণ্ডলীর অধ্যক্ষ (পরিচালক অধ্যক্ষ) হিসেবে নিয়োগ করা হয়। এই ভাই অনেক বছর ধরে সীমা অধ্যক্ষ হিসেবে কাজ করেছিলেন কিন্তু স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যাওয়ায় তার পক্ষে এই দায়িত্ব পালন করা আর সম্ভব ছিল না। তিনি আমার প্রতি অনেক উপলব্ধি দেখিয়েছিলেন এবং অনেক সাহায্য করেছিলেন। তার সাহায্যের খুবই দরকার ছিল কারণ মণ্ডলীতে কিছু বিষয় নিয়ে মতানৈক্য ছিল এবং এর সঙ্গে কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি জড়িত ছিলেন। বিষয়টা অনেক চরমে চলে গিয়েছিল এবং এটা নিয়ে যিহোবার কাছে আমি অনেক প্রার্থনা করেছিলাম। হিতোপদেশ ৩:৫, ৬ পদের কথাগুলো আমার মনে এসেছিল: “তুমি সমস্ত চিত্তে সদাপ্রভুতে বিশ্বাস কর; তোমার নিজ বিবেচনায় নির্ভর করিও না; তোমার সমস্ত পথে তাঁহাকে স্বীকার কর; তাহাতে তিনি তোমার পথ সকল সরল করিবেন।” বিষয়টা নিয়ে খোলাখুলিভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করে আমরা মণ্ডলীতে একতা আনতে পেরেছিলাম এবং এটা সবার জন্য ভাল ফল নিয়ে এসেছিল।

১৯৭৭ সাল থেকে আমরা একটু একটু করে বুঝতে শুরু করি যে আমাদের বয়স হয়েছে এবং আমাদেরকে আবারও শারলট্‌সভিলে পাঠানো হয়, যেখানে আমাদের দুই মেয়ে তাদের পরিবারের সঙ্গে থাকত। গত ২৩ বছর ধরে এই এলাকায় কাজ করা, ভার্জিনিয়ার রাকার্সাভিলে মণ্ডলী গড়ে তুলতে সাহায্য করতে পারা এবং আমাদের প্রথম বাইবেল ছাত্রদের ছেলেমেয়ে ও নাতি-নাতনিদের বড় হয়ে মণ্ডলীর প্রাচীন, অগ্রগামী এবং বেথেলকর্মী হিসেবে দেখতে পাওয়া সত্যিই আনন্দের। ম্যারিয়ন এবং আমি এখনও নিয়মিত প্রচারে যেতে পারছি এবং শারলট্‌সভিলের ইস্ট মণ্ডলীতে আমি একজন প্রাচীন হিসেবে কাজ করার, বই অধ্যয়ন পরিচালনা করার এবং জনসাধারণের বক্তৃতাগুলো দেওয়ার সুযোগ পেয়েছি।

সময় গড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্যদের মতো আমরাও অনেক সমস্যায় পড়েছিলাম। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, আমাদের চেষ্টা সত্ত্বেও কিশোরী ডরিস আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছিল এবং সাক্ষি নয় এমন একজনকে বিয়ে করেছিল। কিন্তু, যিহোবার প্রতি সে কখনোই পুরোপুরি ভালবাসা হারিয়ে ফেলেনি এবং তার ছেলে বিল ১৫ বছর ধরে নিউ ইর্য়কের ওয়ালকিলের বেথেলে সেবা করছে। ডরিস এবং লুইজ দুজনেই এখন বিধবা কিন্তু কাছাকাছি একটা এলাকায় তারা আনন্দের সঙ্গে নিয়মিত অগ্রগামীর কাজ করছে।

সময় গড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যা যা শিখেছি

যিহোবার সেবায় সফল হওয়ার জন্য আমি কিছু সাধারণ নিয়ম কাজে লাগাতে শিখেছি, যা হল: নিজের জীবনকে সাদাসিধে রাখুন। সমস্ত কাজে ও সেইসঙ্গে ব্যক্তিগত জীবনে উদাহরণ হোন। “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাস” এর দেওয়া নির্দেশনা সবকিছুতে কাজে লাগান।—মথি ২৪:৪৫.

ছেলেমেয়েদের মানুষ করার সময় সফলভাবে অগ্রগামীর কাজ করার জন্য ম্যারিয়ন ছোট কিন্তু কার্যকারী একটা পরামর্শের তালিকা তৈরি করেছিল, যা হল: কাজে লাগানো যাবে এমন একটা তালিকা তৈরি করুন ও তা মেনে চলুন। অগ্রগামীর কাজকে জীবনধারণের মূল কাজ হিসেবে নিন। স্বাস্থ্যকর খাবারদাবার খান। পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন। বিনোদনের পিছনে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করবেন না। সত্য ও সেইসঙ্গে পরিচর্যার সমস্ত দিককে আপনার ছেলেমেয়েদের সামনে এক আনন্দদায়ক বিষয় করে তুলুন। পরিচর্যাকে সবসময় তাদের সামনে একটা আগ্রহজনক বিষয় করে তুলুন।

এখন আমাদের বয়স ৯০ এর কোঠায়। স্ট্যাকহাউসের বাড়ির লনে আমাদের বাপ্তিস্মের বক্তৃতা শোনার সময় থেকে প্রায় ৬২ বছর কেটে গেছে এবং পূর্ণ-সময়ের পরিচর্যায় আমরা ৬০ বছর কাটিয়েছি। ম্যারিয়ন এবং আমি মন থেকে বলতে পারি যে আমরা আমাদের জীবন নিয়ে পুরোপুরি এবং গভীরভাবে পরিতৃপ্ত। অল্পবয়স্ক বাবা হিসেবে আধ্যাত্মিক লক্ষ্যগুলোকে প্রথমে রাখার এবং সেগুলোতে পৌঁছাতে কাজ করে চলার জন্য আমি যে উৎসাহ পেয়েছি, তার জন্য আমি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। এছাড়াও, আমার প্রিয়তমা স্ত্রী ম্যারিয়ন এবং মেয়েরা এত বছর ধরে আমাকে যে সাহায্য করেছে তার জন্য আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। যেহেতু আমাদের খুব বেশি টাকাপয়সা নেই, তাই উপদেশক ২:২৫ পদের কথাগুলো আমি প্রায়ই বলি: “আমা হইতে কে অধিক ভোজন করিতে কিম্বা অধিক সুখভোগ করিতে পারে?”

সত্যিই, আমাদের প্রতি যিহোবা মালাখি ৩:১০ পদে করা তাঁর প্রতিজ্ঞা অপরিমিতভাবে পরিপূর্ণ করেছেন। বাস্তবিকই তিনি ‘আমাদের প্রতি অপরিমেয় আশীর্বাদ বর্ষণ’ করেছেন।

[২৯ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]

যুদ্ধের সময়ের স্মৃতিগুলো

যুদ্ধের প্রায় ৬০ বছর পর, পুরো পরিবারের মনে সেই সময়ের স্মৃতিগুলো জ্বলজ্বল করছে।

স্মৃতির পাতা ঘেঁটে ডরিস বলেন, ‘পেনসিলভানিয়ায় অনেক ঠাণ্ডা ছিল। একদিন রাতে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে গিয়েছিল।’ লুইজ বলেন, “আমাদের পা যাতে ঠান্ডা হয়ে না যায়, সেই জন্য ডরিস এবং আমি আমাদের পুরনো বুয়িকের পিছনের সিটে একজন আরেকজনের পায়ের ওপর বসেছিলাম।”

ডরিস বলেন, ‘কিন্তু আমরা নিজেদেরকে কখনও গরিব বা অসহায় মনে করিনি। আমরা জানতাম যে অন্য লোকেদের চেয়ে আমাদের অনেক বেশি এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে হয় কিন্তু সবসময় আমাদের প্রচুর খাবারদাবার থাকত এবং আমরা ভাল জামাকাপড় পরতাম যা ওহাইওর বন্ধুরা আমাদেরকে দিতেন, যাদের মেয়েরা আমাদের মেয়েদের চেয়ে একটু বড় ছিল। ওই জামাকাপড়গুলো প্রায় নতুনের মতোই দেখাত।”

লুইজ বলেন, “মা এবং বাবা সবসময় আমাদের সঙ্গে এমনভাবে আচরণ করতেন, যা দেখে আমরা সবসময় অনুভব করতাম যে তারা আমাদের ভালবাসেন এবং আমাদের প্রতি উপলব্ধি দেখান। আর আমরা তাদের সঙ্গে অনেকটা সময় প্রচার করে কাটাতাম। এর ফলে নিজেদেরকে তাদের কাছে বিশেষ কোন ব্যক্তি এবং তাদের খুব কাছের বলে মনে হতো।”

স্মৃতির পাতা ঘেঁটে পল বলেন, ‘আমার একটা ১৯৩৬ বুয়িক স্পেশাল ছিল আর এই গাড়িগুলো দুটো চাকাকে সংযুক্ত করার জন্য যে দণ্ড থাকে সেগুলো ভেঙে যাওয়ার জন্য বিখ্যাত ছিল। আমার মনে হয় গাড়ির অন্যান্য অংশের তুলনায় ইঞ্জিনটা খুব বেশি শক্তিশালী ছিল বলে এমনটা হতো। আর মনে হয় সবসময় ঠাণ্ডার রাতগুলোতেই এমনটা হতো এবং আমাকে তখন আরেকটা দণ্ড আনার জন্য পুরনো বাতিল জিনিসপত্রের দোকানে যেতে হতো। সেগুলো বদলানোর কাজে আমি অনেক দক্ষ হয়ে উঠেছিলাম।

ম্যারিয়ন বলেন: ‘রেশন কার্ডের কথা আমি কখনও ভুলব না। রেশন কার্ড দিয়ে সবকিছুই পাওয়া যেত—মাংস, পেট্রোল, গাড়ির টায়ার সমস্ত কিছু। আমাদের নতুন দায়িত্বের জায়গায় যাওয়ার আগে প্রতিবারই রেশন কার্ডের জন্য আবেদন করতে স্থানীয় সরকারের অফিসে যেতে হতো। একটা রেশন কার্ড পেতে কয়েক মাস লেগে যেত আর মনে হতো যে যখনই আমরা রেশন কার্ড পেতাম, তখনই আমাদেরকে আরেকটা নতুন দায়িত্ব দিয়ে অন্য জায়গায় পাঠানো হতো আর আমাদের আবার প্রথম থেকে শুরু করতে হতো। কিন্তু যিহোবা সবসময় আমদের যত্ন নিয়েছেন।’

[চিত্র]

২০০০ সালে ডরিস (বাঁদিকে) এবং লুইজের সঙ্গে আমি ও ম্যারিয়ন

[২৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

১৯১৮ সালে মার সঙ্গে, যখন আমার বয়স ১১ বছর

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

১৯৪৮ সালে মেয়েদের বাপ্তিস্মের সময় লুইজ, ম্যারিয়ন এবং ডরিসের সঙ্গে

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

আমাদের বিয়ের ছবি, ১৯২৮ সালের অক্টোবর মাসে

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

আমার মেয়েরা (একেবারে বায়ে এবং একেবারে ডানে) এবং আমি ইয়াংকি স্টেডিয়ামে, ১৯৫৫ সালে