সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহোবার জ্ঞানে আনন্দ করুন

যিহোবার জ্ঞানে আনন্দ করুন

যিহোবার জ্ঞানে আনন্দ করুন

“ধন্য [“সুখী,” Nw] তাহারাই, যাহারা ঈশ্বরের বাক্য শুনিয়া পালন করে।”লূক ১১:২৮.

১. কখন থেকে মানুষের সঙ্গে যিহোবা কথা বলা শুরু করেন?

 যিহোবা মানুষকে ভালবাসেন এবং তাদের মঙ্গলের জন্য তিনি অত্যন্ত আগ্রহী। তাই, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে তিনি তাদের সঙ্গে কথা বলেন। এদন বাগানে প্রথম কথা বলা শুরু হয়েছিল। আদিপুস্তক ৩:৮ পদ অনুসারে একবার “দিবাবসানে” আদম ও হবা “সদাপ্রভু ঈশ্বরের রব শুনিতে পাইলেন।” কেউ কেউ মনে করেন, সম্ভবত প্রতিদিন ওই সময়টাতে আদমের সঙ্গে যিহোবা কথা বলতেন। যাই হোক না কেন, বাইবেল পরিষ্কার জানায় যে প্রথম মানুষকে শুধু নির্দেশনা দেওয়ার জন্যই নয়, সেইসঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে তার যা যা জানা দরকার, তা শেখানোর জন্যও ঈশ্বর সময় করে নিয়েছিলেন।—আদিপুস্তক ১:২৮-৩০.

২. কীভাবে প্রথম মানব দম্পতি যিহোবার নির্দেশনা থেকে নিজেদেরকে আলাদা করেছিল আর এর পরিণাম কী হয়েছিল?

আদম ও হবাকে যিহোবা জীবন এবং পশুপাখি ও পুরো পৃথিবীর ওপর কর্তৃত্ব করার ক্ষমতা দিয়েছিলেন। তবে একটা বিষয়ে তাদের নিষেধ করা হয়েছিল, সেটা হল যে সদসদ্‌-জ্ঞানদায়ক বৃক্ষের ফল তারা খেতে পারবে না। কিন্তু, শয়তানের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আদম ও হবা ঈশ্বরের আজ্ঞার অবাধ্য হয়েছিল। (আদিপুস্তক ২:১৬, ১৭; ৩:১-৬) তারা স্বাধীনভাবে কাজ করাকে বেছে নিয়েছিল এবং নিজেরাই স্থির করতে চেয়েছিল যে তাদের জন্য কোন্‌টা ঠিক ও কোন্‌টা ভুল। আর তা করে তারা তাদের প্রেমময় সৃষ্টিকর্তার নির্দেশনা থেকে নিজেদেরকে আলাদা করেছিল, যা তাদের জন্য বোকামির কাজ ছিল। তাদের এবং তাদের অজাত বংশধরদের জন্য এর পরিণাম হয়েছিল মারাত্মক। আদম ও হবা বুড়ো হতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত পুনরুত্থানের কোন আশা ছাড়াই মারা যায়। আর তাদের বংশধররা উত্তরাধিকার সূত্রে পাপ এবং এর পরিণতি মৃত্যু পেয়েছিল।—রোমীয় ৫:১২.

৩. কয়িনের সঙ্গে যিহোবা কেন কথা বলেছিলেন এবং কয়িন এর প্রতি কেমন সাড়া দিয়েছিল?

এদনে বিদ্রোহ করা সত্ত্বেও, তাঁর সৃষ্ট মানুষদের সঙ্গে যিহোবা কথা বলা চালিয়েই যান। আদম ও হবার বড় ছেলে কয়িন যে কোন সময় পাপ করে ফেলতে পারত। যিহোবা তাকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, সে সমস্যার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে আর তাই তিনি তাকে “সদাচরণ” করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। এই প্রেমপূর্ণ পরামর্শে কান না দিয়ে কয়িন তার ভাইকে হত্যা করেছিল। (আদিপুস্তক ৪:৩-৮) এভাবেই পৃথিবীর প্রথম তিনজন মানুষ ঈশ্বরের স্পষ্ট নির্দেশনাকে প্রত্যাখান করেছিল, যিনি তাদেরকে জীবন দিয়েছিলেন ও যিনি তাঁর লোকেদেরকে নির্দেশনা দেন, যাতে তা তাদের জন্য উপকারী হয়। (যিশাইয় ৪৮:১৭) এটা যিহোবাকে কত হতাশই না করেছিল!

প্রাচীন কালের বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের কাছে যিহোবা নিজেকে প্রকাশ করেছিলেন

৪. আদম ও হবার বংশধরদের বিষয়ে যিহোবার কোন্‌ আস্থা ছিল আর সেই কথা মনে রেখে তিনি কোন্‌ আশার বার্তা ঘোষণা করেছিলেন?

যদিও মানুষদের সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দেওয়ার অধিকার যিহোবার ছিল কিন্তু তিনি তা করেননি। তাঁর আস্থা ছিল যে, আদমের বংশধরদের মধ্যে কেউ কেউ বিজ্ঞ হয়ে তাঁর নির্দেশনায় মনোযোগ দেবে। যেমন, আদম ও হবার ওপর বিচারাজ্ঞা ঘোষণা করার সময় যিহোবা একটা ‘বংশের’ আসার কথা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, যিনি সর্প অর্থাৎ শয়তান দিয়াবলকে প্রতিরোধ করবেন। পরে শয়তানের মস্তক একেবারে চূর্ণ করে দেওয়া হবে। (আদিপুস্তক ৩:১৫) “যাহারা ঈশ্বরের বাক্য শুনিয়া পালন করে” তাদের জন্য এটা ছিল আশার এক আনন্দদায়ক বার্তা।—লূক ১১:২৮.

৫, ৬. সাধারণ কাল প্রথম শতাব্দীর আগে কীভাবে যিহোবা তাঁর লোকেদের সঙ্গে কথা বলতেন এবং কীভাবে তা তাদের উপকার করেছিল?

প্রাচীন কালের বিশ্বস্ত ব্যক্তি যেমন, নোহ, অব্রাহাম, ইস্‌হাক, যাকোব এবং ইয়োবের কাছে যিহোবা তাঁর ইচ্ছার কথা বলেছিলেন। (আদিপুস্তক ৬:১৩; যাত্রাপুস্তক ৩৩:১; ইয়োব ৩৮:১-৩) পরে মোশির মাধ্যমে ইস্রায়েল জাতির জন্য তিনি পুরো ব্যবস্থা জানিয়েছিলেন। মোশির ব্যবস্থা অনেক দিক দিয়ে তাদের উপকার করেছিল। এটা মেনে চলে ঈশ্বরের বিশেষ লোক হিসেবে ইস্রায়েল জাতি অন্য সকল জাতি থেকে আলাদা ছিল। ইস্রায়েলীয়দেরকে ঈশ্বর আশ্বাস দিয়েছিলেন যে তারা যদি ব্যবস্থা মেনে চলে, তাহলে তিনি তাদেরকে শুধু বস্তুগত দিক দিয়েই নয় সেইসঙ্গে আধ্যাত্মিক দিক দিয়েও আশীর্বাদ করবেন, তাদেরকে যাজকদের এক রাজ্য ও পবিত্র এক জাতি করবেন। ব্যবস্থার মধ্যে এমনকি খাবারদাবার এবং স্বাস্থ্যবিধানের কিছু বিধিনিষেধও ছিল, যা তাদের স্বাস্থ্যকে ভাল রেখেছিল। কিন্তু, অবাধ্য হলে কী ভয়ানক পরিণতি হতে পারে, সেই বিষয়েও যিহোবা তাদেরকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন।—যাত্রাপুস্তক ১৯:৫, ৬; দ্বিতীয় বিবরণ ২৮:১-৬৮.

পরে ঈশ্বরের অনুপ্রেরণায় লেখা অন্যান্য বইও বাইবেলের প্রমাণিত অংশের অর্ন্তভুক্ত হয়েছিল। ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো বিভিন্ন জাতি এবং লোকেদের সঙ্গে ঈশ্বরের আচরণ সম্বন্ধে জানায়। কাব্যিক বইগুলো অপূর্বরূপে তাঁর গুণাবলি তুলে ধরে। ভবিষ্যদ্বাণীর বইগুলো দেখায় যে, ভবিষ্যতে কীভাবে যিহোবার ইচ্ছা পূর্ণ হবে। প্রাচীন কালের বিশ্বস্ত দাসেরা ঈশ্বরের অনুপ্রেরণায় লেখা এই বইগুলো যত্নের সঙ্গে অধ্যয়ন করেছেন ও সেগুলো নিজের জীবনে কাজে লাগিয়েছেন। একজন লিখেছিলেন: “তোমার বাক্য আমার চরণের প্রদীপ, আমার পথের আলোক।” (গীতসংহিতা ১১৯:১০৫) যারা এগুলো শোনার জন্য আগ্রহী ছিলেন, যিহোবা তাদের জন্য শিক্ষা এবং জ্ঞানের আলো জুগিয়েছেন।

দীপ্তি আরও উজ্জ্বল হয়

৭. যদিও যীশু অনেক অলৌকিক কাজ করেছিলেন কিন্তু লোকেরা আসলে তাঁকে কী বলে জানত এবং কেন?

প্রথম শতাব্দীতে যিহুদি ধর্মীয় দলগুলো ব্যবস্থার মধ্যে মানুষের পরম্পরাগত রীতিনীতি ঢুকিয়ে দিয়েছিল। ব্যবস্থাকে ভুলভাবে ব্যবহার করা হয়েছিল এবং ওই রীতিনীতির কারণে জ্ঞানের আলোর উৎস না হয়ে তা বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। (মথি ২৩:২-৪) কিন্তু, সা.কা. ২৯ সালে যীশু মশীহ হিসেবে প্রকাশিত হন। মানবজাতির জন্য তিনি শুধু তাঁর জীবনই দিতে আসেননি, সেইসঙ্গে “সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য” দেওয়াও তাঁর কাজ ছিল। যদিও তিনি অনেক অলৌকিক কাজ করেছিলেন কিন্তু লোকেরা আসলে তাঁকে “গুরু” বলে জানত। যে আধ্যাত্মিক অন্ধকার মানুষের মনকে ঢেকে রেখেছিল সেই অন্ধকারের মধ্যে তাঁর শিক্ষা উজ্জ্বল আলোর মতো ছিল। উপযুক্তভাবেই যীশু বলেছিলেন: “আমি জগতের জ্যোতি।”—যোহন ৮:১২; ১১:২৮; ১৮:৩৭.

৮. সাধারণ কাল প্রথম শতাব্দীতে ঈশ্বরের অনুপ্রেরণায় কোন্‌ বইগুলো লেখা হয়েছিল এবং প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানরা কীভাবে সেগুলো থেকে উপকার পেয়েছিলেন?

পরে সুসমাচারগুলো অর্থাৎ যীশুর জীবনকাহিনী নিয়ে চারটে বিবরণ এবং প্রেরিত পুস্তক লেখা হয়েছিল আর যীশু মারা যাওয়ার পর কীভাবে খ্রীষ্টধর্ম ছড়িয়ে পড়েছিল তার ইতিহাস এই প্রেরিত পুস্তকে রয়েছে। এছাড়াও, ঈশ্বরের অনুপ্রেরণায় লেখা যীশুর শিষ্যদের চিঠিগুলো ও সেইসঙ্গে প্রকাশিত বাক্য লেখা হয়েছিল। এই লেখাগুলো ও সেইসঙ্গে ইব্রীয় শাস্ত্র মিলে বাইবেলের প্রমাণিত অংশকে সম্পূর্ণ করেছে। ঈশ্বরের অনুপ্রেরণায় লেখা এই বইগুলোর সাহায্যে খ্রীষ্টানরা ‘সমস্ত পবিত্রগণের সহিত বুঝিতে সমর্থ হইত যে’ সত্যের “সেই প্রশস্ততা, দীর্ঘতা, উচ্চতা ও গভীরতা কি।” (ইফিষীয় ৩:১৪-১৯) তারা “খ্রীষ্টের মন” পেতে পারতেন। (১ করিন্থীয় ২:১৬) তাসত্ত্বেও, প্রথম শতাব্দীর সেই খ্রীষ্টানরা যিহোবার উদ্দেশ্যের সমস্ত দিক পুরোপুরি বুঝতে পারেননি। প্রেরিত পৌল তার সহবিশ্বাসীদের লিখেছিলেন: “এখন আমরা দর্পণে অস্পষ্ট দেখিতেছি।” (১ করিন্থীয় ১৩:১২) এইধরনের দর্পণে পুরোপুরি স্পষ্ট নয় কিন্তু অস্পষ্ট দেখা যেত। ঈশ্বরের বাক্যের পুরোপুরি অর্থ তখনও জানতে বাকি ছিল।

৯. “শেষ কালে” কোন্‌ বিষয়গুলো বোঝা গেছে?

আজকে আমরা এমন এক যুগে বাস করছি যেটাকে ‘শেষ কাল’ বলা হয়েছে, যে যুগ “বিষম সময় [“মোকাবিলা করা কঠিন,” NW]।” (২ তীমথিয় ৩:১) ভাববাদী দানিয়েল বলেছিলেন যে এই সময়ে “জ্ঞানের বৃদ্ধি হইবে।” (দানিয়েল ১২:৪) তাই মহান যোগাযোগকারী যিহোবা, সৎহৃদয়ের লোকেদেরকে তাঁর বাক্যের অর্থ বোঝার জন্য সাহায্য করেছেন। আজকে লক্ষ লক্ষ ব্যক্তিরা বুঝতে পেরেছেন যে, ১৯১৪ সালে খ্রীষ্ট যীশু অদৃশ্য স্বর্গে রাজারূপে সিংহাসনে বসেছেন। তারা এও জানেন যে, খুব শীঘ্রিই তিনি এই পৃথিবীর ওপর সমস্ত দুষ্টতার শেষ আনবেন এবং এটাকে পরমদেশে পরিণত করবেন। রাজ্যের সুসমাচারের এই জরুরি বিষয়টা আজকে সারা পৃথিবীতে প্রচার করা হচ্ছে।—মথি ২৪:১৪.

১০. শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে যিহোবার পরামর্শের প্রতি লোকেরা কেমন মনোভাব দেখিয়েছে?

১০ হ্যাঁ, ইতিহাস দেখায় যে পৃথিবীর লোকেদের কাছে যিহোবা তাঁর ইচ্ছা এবং উদ্দেশ্যের কথা বলেছেন। বাইবেলে এমন অনেক ব্যক্তিদের কথা বলা আছে, যারা ঈশ্বরীয় প্রজ্ঞার কথা শুনে সেগুলো কাজে লাগিয়েছিলেন এবং আশীর্বাদ পেয়েছিলেন। আবার ঈশ্বরের প্রেমময় পরামর্শে কান না দিয়ে যারা আদম ও হবার মতো ধ্বংসাত্মক কাজে পা বাড়িয়েছিল, তাদের কথাও এতে বলা আছে। দুটো রূপক পথের কথা বলে যীশু এই অবস্থার বর্ণনা দিয়েছিলেন। একটা পথ ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। প্রশস্ত ও পরিসর হওয়াতে অনেকে এই পথকে বেছে নিয়েছে আর তারা ঈশ্বরের বাক্যকে গ্রহণ করে না। অন্য পথ অনন্ত জীবনের দিকে নিয়ে যায়। দুর্গম হলেও কিছু লোক এই পথ বেছে নিয়েছেন এবং তারা বাইবেলকে ঈশ্বরের বাক্য বলে মেনে নেন ও এর সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করেন।—মথি ৭:১৩, ১৪.

আমাদের যা আছে তার প্রতি উপলব্ধি দেখানো

১১. বাইবেলের ওপর আমাদের জ্ঞান এবং বিশ্বাস কীসের প্রমাণ?

১১ আপনি কি তাদের মধ্যে একজন, যারা জীবনের পথ বেছে নিয়েছেন? যদি তাই হন, তাহলে কোন সন্দেহ নেই যে আপনি সেই পথে থাকতে চাইবেন। কীভাবে আপনি তা করতে পারেন? বাইবেলের সত্য জানার ফলে আপনি জীবনে যে আশীর্বাদগুলো পাচ্ছেন, তা নিয়ে রোজ ধ্যান করুন ও তার প্রতি উপলব্ধি দেখান। আপনি যে সুসমাচারের প্রতি সাড়া দিয়েছেন এটাই হল ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া আশীর্বাদের একটা বড় প্রমাণ। যীশু এটা দেখিয়েছিলেন যখন তিনি তাঁর পিতার কাছে এই কথাগুলো বলে প্রার্থনা করেছিলেন: “হে পিতঃ, হে স্বর্গের ও পৃথিবীর প্রভু, আমি তোমার ধন্যবাদ করিতেছি, কেননা তুমি বিজ্ঞ ও বুদ্ধিমানদের হইতে এই সকল বিষয় গুপ্ত রাখিয়া শিশুদের নিকটে প্রকাশ করিয়াছ।” (মথি ১১:২৫) জেলে এবং করগ্রাহীরা যীশুর শিক্ষার অর্থ বুঝতে পেরেছিলেন অথচ উচ্চশিক্ষিত ধর্মীয় গুরুরা বুঝতে পারেনি। যীশু আরও বলেছিলেন: “পিতা, যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তিনি আকর্ষণ না করিলে কেহ আমার কাছে আসিতে পারে না।” (যোহন ৬:৪৪) আপনি যদি বাইবেল জেনে থাকেন এবং এর শিক্ষাগুলো বিশ্বাস করেন ও মেনে চলেন, তাহলে এটা প্রমাণ দেয় যে যিহোবা আপনাকে আকর্ষণ করেছেন। আর এটাই হল আনন্দ করার কারণ।

১২. কোন্‌ কোন্‌ দিক দিয়ে বাইবেল আমাদেরকে জ্ঞানের আলো দিয়েছে?

১২ ঈশ্বরের বাক্যের মধ্যে সেই সত্য রয়েছে, যা আমাদেরকে স্বাধীন করে এবং এটা আমাদেরকে জ্ঞান দেয়। যারা বাইবেলের জ্ঞানের সঙ্গে মিল রেখে চলেন তারা সমস্ত কুসংস্কার, মিথ্যা শিক্ষা এবং অজ্ঞানতা থেকে মুক্ত হন, যা আজকে লক্ষ লক্ষ লোকেদের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করছে। উদাহরণ হিসেবে, আত্মা সম্বন্ধে প্রকৃত সত্য জেনে আমরা সেই সমস্ত ভয় থেকে মুক্ত হয়েছি যেমন, মৃতেরা আমাদের ক্ষতি করতে পারে বা আমাদের প্রিয়জনরা মরে গিয়ে কষ্ট পায়। দুষ্ট দূতেদের সম্বন্ধে সত্য বিষয়টা জানা আমাদেরকে প্রেতচর্চার ফাঁদ এড়িয়ে চলতে সাহায্য করে। মৃত্যুতে যারা তাদের প্রিয়জনদের হারিয়েছে, পুনরুত্থানের শিক্ষা তাদেরকে সান্ত্বনা দেয়। (যোহন ১১:২৫) বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী দেখায় যে, সময়ের প্রবাহে আমরা কোথায় আছি এবং ভবিষ্যতের জন্য ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা সম্বন্ধে আমাদেরকে আস্থা দেয়। এছাড়াও, এগুলো আমাদের চিরকাল বেঁচে থাকার আশাকে আরও মজবুত করে।

১৩. ঈশ্বরের বাক্যে মনোযোগ দেওয়া কীভাবে আমাদেরকে শারীরিক দিক দিয়ে উপকৃত করে?

১৩ বাইবেলের মধ্যে ঈশ্বরের যে নীতিগুলো রয়েছে, সেগুলো আমাদেরকে এমনভাবে জীবনযাপন করতে শেখায়, যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকার এনে দেয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, শরীরকে কলুষিত করে এমন বদভ্যাসগুলো যেমন, তামাক সেবন ও নেশাকর ওষুধের অপব্যবহার করা আমরা এড়িয়ে চলতে শিখি। আমরা অতিরিক্ত মদ খাওয়া এড়িয়ে চলি। (২ করিন্থীয় ৭:১) ঈশ্বরের নৈতিক মানগুলোতে মনোযোগ দেওয়া, অবৈধ যৌন সম্পর্ক করার ফলে যে রোগগুলো হয়, তা থেকে আমাদেরকে রক্ষা করে। (১ করিন্থীয় ৬:১৮) অর্থপ্রিয় না হওয়ার ব্যাপারে ঈশ্বরের পরামর্শ মেনে চলে আমরা আমাদের মনের শান্তিকে নষ্ট করি না, যা কিনা অনেকে ধনী হওয়ার চেষ্টায় করে থাকে। (১ তীমথিয় ৬:১০) ঈশ্বরের বাক্য নিজের জীবনে কাজে লাগিয়ে আপনি শারীরিকভাবে কোন্‌ কোন্‌ দিক দিয়ে উপকার পেয়েছেন?

১৪. আমাদের জীবনের ওপর পবিত্র আত্মার কোন্‌ প্রভাব রয়েছে?

১৪ আমরা যদি ঈশ্বরের বাক্য অনুযায়ী জীবনযাপন করি, তাহলে আমরা যিহোবার পবিত্র আত্মা পাব। দয়া ও করুণার মতো উত্তম গুণগুলো দেখিয়ে আমরা খ্রীষ্টের মতো ব্যক্তিত্ব গড়ে তুলি। (ইফিষীয় ৪:২৪, ৩২) এছাড়াও, ঈশ্বরের আত্মা আমাদের মধ্যে এর ফলগুলো গড়ে তোলে যেমন প্রেম, আনন্দ, শান্তি, দীর্ঘসহিষ্ণুতা, মাধুর্য, মঙ্গলভাব, বিশ্বস্ততা, মৃদুতা, ইন্দ্রিয়দমন। (গালাতীয় ৫:২২, ২৩) এই গুণগুলো পরিবারের লোকেদের ও সেইসঙ্গে অন্যদের সঙ্গে সুখী এবং মূল্যবান সম্পর্ক গড়ে তোলে। আমরা মনের শক্তি পাই, যা আমাদেরকে সাহসের সঙ্গে কষ্টকর পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করতে সাহায্য করে। আপনি কি বুঝতে পারেন যে, পবিত্র আত্মার প্রভাবে কীভাবে আপনার জীবন আরও ভাল হয়েছে?

১৫. ঈশ্বরের ইচ্ছার সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করে কীভাবে আমরা উপকৃত হই?

১৫ আমরা যদি যিহোবার ইচ্ছার সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করি, তাহলে তাঁর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আরও মজবুত হয়। আমাদের আস্থা আরও দৃঢ় হয় যে তিনি আমাদের বুঝতে পারেন এবং আমাদেরকে ভালবাসেন। অভিজ্ঞতার মাধ্যমে আমরা শিখি যে, কঠিন সময়ে তিনি আমাদেরকে সাহায্য করেন। (গীতসংহিতা ১৮:১৮) আমরা বুঝতে পারি যে আসলেই তিনি আমাদের প্রার্থনা শোনেন। (গীতসংহিতা ৬৫:২) আমরা তাঁর নির্দেশনার ওপর নির্ভর করি এবং এই আস্থা রাখি যে, সেগুলো আমাদের জন্য উপকারী। আর আমাদের অপূর্ব আশা আছে যে, নির্দিষ্ট সময়ে ঈশ্বর তাঁর বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের সিদ্ধতায় নিয়ে আসবেন এবং তাদেরকে অনন্তকাল বেঁচে থাকার পুরস্কার দেবেন। (রোমীয় ৬:২৩) শিষ্য যাকোব লিখেছিলেন: “ঈশ্বরের নিকটবর্ত্তী হও, তাহাতে তিনিও তোমাদের নিকটবর্ত্তী হইবেন।” (যাকোব ৪:৮) ঈশ্বরের নিকটবর্তী হয়ে আপনি কি বুঝতে পেরেছেন যে, যিহোবার সঙ্গে আপনার সম্পর্ক আরও মজবুত হয়েছে?

যে সম্পদের তুলনা হয় না

১৬. প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানরা কোন্‌ পরিবর্তনগুলো করেছিল?

১৬ প্রথম শতাব্দীর আত্মায় অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদেরকে পৌল মনে করিয়ে দিয়েছিলেন যে তাদের মধ্যে কেউ কেউ ব্যভিচারী, পারদারিক, সমকামী, চোর, লোভী, মদ্যপায়ী, কটুভাষী এবং পরধনগ্রাহী ছিলেন। (১ করিন্থীয় ৬:৯-১১) বাইবেলের সত্য জেনে তারা তাদের জীবনে বড় বড় পরিবর্তন করেছেন; তারা নিজেদেরকে ‘ধৌত করিয়াছেন।’ বাইবেল থেকে আপনি যে সত্য শিখেছেন, যা আমাদেরকে স্বাধীন করে, তা যদি না থাকত তাহলে আপনার জীবন কেমন হতো, তা একটু ভেবে দেখুন। আসলেই, সত্য হল সেই সম্পদ যার তুলনা হয় না। আমরা কত খুশি যে যিহোবা আমাদেরকে তা জানিয়েছেন!

১৭. খ্রীষ্টীয় সভাগুলোতে যিহোবার সাক্ষিরা কীভাবে আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে পুষ্টি লাভ করেছেন?

১৭ এছাড়া, বিভিন্ন বর্ণের লোকেদের নিয়ে গঠিত ভ্রাতৃবর্গের মাধ্যমে আমরা যে আর্শীবাদ পাচ্ছি, সে কথাও ভেবে দেখুন। “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাস” উপযুক্ত সময়ে আমাদের জন্য আধ্যাত্মিক খাদ্য জোগান, যার মধ্যে রয়েছে অসংখ্য ভাষায় প্রচুর বাইবেল, পত্রপত্রিকা এবং অন্যান্য সাহিত্যাদি। (মথি ২৪:৪৫-৪৭) ২০০০ সালে মণ্ডলীর সভাগুলোতে বিভিন্ন দেশের যিহোবার সাক্ষিরা ইব্রীয় শাস্ত্রের প্রধান আটটা বইয়ের মূল বিষয়গুলো পুনরালোচনা করেছেন। শাস্ত্রের প্রতি অন্তর্দৃষ্টি (ইংরেজি) বই থেকে নেওয়া বাইবেলের ৪০ জন ব্যক্তির জীবন নিয়ে তারা গভীরভাবে বিবেচনা করেছেন। সর্বমহান পুরুষ যিনি কখনও জীবিত ছিলেন বইয়ের এক চতুর্থাংশ নিয়ে তারা আলোচনা করেছেন এবং দানিয়েলের ভবিষ্যদ্বাণীতে মনোযোগ দিন! (ইংরেজি) বইয়ের প্রায় পুরোটা শেষ করে ফেলেছেন। প্রহরীদুর্গ পত্রিকা থেকে ৫২টা অধ্যয়ন প্রবন্ধ ছাড়াও আরও ছত্রিশটা অন্যান্য প্রবন্ধ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়া, যিহোবার লোকেরা আমাদের রাজ্যের পরিচর্যা-র ১২টা সংখ্যা থেকেও পুষ্টি লাভ করেছেন এবং প্রতি সপ্তায় বাইবেলের বিভিন্ন বিষয়ের ওপর জনসাধারণের বক্তৃতাগুলো শুনেছেন। আধ্যাত্মিক জ্ঞানের কত বড় ভাণ্ডারই না জোগানো হয়েছে!

১৮. খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতে কোন্‌ কোন্‌ উপায়ে আমরা সাহায্য পেয়ে থাকি?

১৮ সারা পৃথিবীতে ৯১,০০০রেরও বেশি মণ্ডলীগুলো সভা ও মেলামেশার মাধ্যমে সাহায্য এবং উৎসাহ জোগায়। এছাড়াও, আমরা সেই সমস্ত পরিপক্ব খ্রীষ্টানদের সাহায্য উপভোগ করেছি, যারা আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে আমাদেরকে সাহায্য করতে চান। (ইফিষীয় ৪:১১-১৩) হ্যাঁ, সত্যের জ্ঞান পেয়ে আমরা অনেক উপকৃত হয়েছি। এটা জানা এবং যিহোবাকে সেবা করা অনেক আনন্দের। গীতরচকের এই কথাগুলো কত সত্যি, যিনি লিখেছিলেন: “ধন্য [“সুখী,” NW] সেই জাতি, সদাপ্রভু যাহার ঈশ্বর।”—গীতসংহিতা ১৪৪:১৫.

আপনি কি মনে করতে পারেন?

• প্রথম শতাব্দীর আগে যিহোবা কাদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন?

• প্রথম শতাব্দীতে কীভাবে আধ্যাত্মিক দীপ্তি আরও উজ্জ্বল হয়েছিল? আর আজকে তা কীভাবে হচ্ছে?

• যিহোবার জ্ঞান অনুযায়ী চললে, আমাদের জীবনে কোন্‌ আশীর্বাদগুলো আসে?

• ঈশ্বরের জ্ঞানে কেন আমরা আনন্দ করি?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[৮, ৯ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

মোশি, নোহ এবং অব্রাহামের কাছে যিহোবা তাঁর ইচ্ছার কথা বলেছিলেন

[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

আমাদের দিনে যিহোবা তাঁর বাক্যের ওপর আলো বর্ষণ করেছেন

[১০ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

বিভিন্ন বর্ণের লোকদের নিয়ে গঠিত ভ্রাতৃবর্গের মাধ্যমে আমরা যে আশীর্বাদ উপভোগ করছি, তা ভেবে দেখুন!