সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

সন্দেহ করে আপনার বিশ্বাসকে নষ্ট হতে দেবেন না

সন্দেহ করে আপনার বিশ্বাসকে নষ্ট হতে দেবেন না

সন্দেহ করে আপনার বিশ্বাসকে নষ্ট হতে দেবেন না

একদিন আপনি চিন্তা করলেন যে আপনার স্বাস্থ্য তো ভালই আছে। কিন্তু, পরের দিন আপনার অসুস্থ লাগছে। হঠাৎ করে আপনি শরীরে কোন শক্তি বা বল পাচ্ছেন না। আপনার মাথা ব্যথা এবং সারা শরীরে প্রচণ্ড যন্ত্রণা শুরু হয়েছে। ঘটনাটা কী? ভয়ংকর রোগজীবাণু আপনার শরীরে ঢুকে রোগপ্রতিরোধক ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দিয়েছে এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রতঙ্গকে আক্রান্ত করেছে। চিকিৎসা করা না হলে এই আক্রান্ত অঙ্গগুলো সারা জীবনের জন্য অকেজো হয়ে যেতে পারে আর এমনকি আপনি মারাও যেতে পারেন।

 এটা ঠিক যে আপনার স্বাস্থ্য যদি ভাল না থাকে ও সেইসঙ্গে কোন রোগে আক্রান্ত হন, তাহলে আপনি আরও তাড়াতাড়ি দুর্বল হবেন। উদাহরণ হিসেবে, পিটার উইনগেট নামে একজন চিকিৎসা প্রতিবেদক বলেন, অপুষ্টির কারণে আপনার শরীর যদি দুর্বল হয়ে পড়ে, তাহলে আপনার প্রতিরোধক ক্ষমতা “এতই কমে যায় যে সামান্য অসুস্থতাও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।”

যদি তা-ই হয়, তাহলে কেই-বা না খেয়ে থাকতে চাইবে? খুব সম্ভবত আপনি ভাল ভাল খাবার খেয়ে স্বাস্থ্য ভাল রাখার জন্য সমস্ত কিছুই করে থাকেন। এছাড়াও কোন রোগজীবাণু যাতে আপনাকে আক্রমণ না করে, সেই বিষয়ে যথেষ্ট যত্ন নিয়ে থাকেন। কিন্তু, যখন ‘বিশ্বাসে নিরাময়’ থাকার বিষয়টা আসে, তখনও কি আপনি এইরকম মনোযোগ দেন? (তীত ২:২) উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আপনি কি ক্ষতিকর সন্দেহের বিপদ সম্বন্ধে সতর্ক? এইরকম সন্দেহ খুব সহজেই আপনার মন ও হৃদয়কে আক্রমণ করে আপনার বিশ্বাস এবং যিহোবার সঙ্গে আপনার সম্পর্ককে নষ্ট করে দিতে পারে। কিছু ব্যক্তি এই বিপদ সম্বন্ধে সতর্ক নন। তারা আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে ক্ষুধার্ত থেকে নিজেদেরকে সন্দেহের ফাঁদে আটকে পড়ার ঝুঁকিতে রাখে। আপনার বেলায়ও কি এমনটা হতে পারে?

সন্দেহ করা কি সবসময়ই ক্ষতিকর?

এটা ঠিক যে, সব সন্দেহ ক্ষতিকর নয়। কখনও কখনও কোন বিষয়ে প্রকৃত সত্য সম্বন্ধে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সেই বিষয়টা মেনে নেওয়া যায় না। যে ধর্মীয় উপদেশগুলো জানায় যে আপনার কোনরকম সন্দেহ না করে শুধু বিশ্বাস করা উচিত, তা আসলে বিপদজনক এবং ভুল পথে নিয়ে যায়। এটা ঠিক যে বাইবেল বলে, প্রেম “সকলই বিশ্বাস করে।” (১ করিন্থীয় ১৩:৭) নির্ভরযোগ্য বলে প্রমাণ দিয়েছেন এমন ব্যক্তিদেরকে একজন প্রেমপূর্ণ খ্রীষ্টান নিশ্চিতভাবেই বিশ্বাস করেন। কিন্তু, ঈশ্বরের বাক্য ‘সকল কথায় বিশ্বাস করার’ বিরুদ্ধেও সতর্ক করে। (হিতোপদেশ ১৪:১৫) কখনও কখনও একজন ব্যক্তিকে তার আগের কোন ঘটনার কারণেই স্বাভাবিকভাবে সন্দেহ করা হয়ে থাকে। বাইবেল সতর্ক করে, “[ছলনাকারীর] রব মধুময় হইলে তাহাকে বিশ্বাস করিও না।”—হিতোপদেশ ২৬:২৪, ২৫.

প্রেরিত যোহনও খ্রীষ্টানদেরকে অন্ধ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে সতর্ক করেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন, “তোমরা সকল আত্মাকে [“অনুপ্রাণিত অভিব্যক্তিকে,” NW] বিশ্বাস করিও না, বরং আত্মা সকলের [“অনুপ্রাণিত অভিব্যক্তিগুলোর,” NW] পরীক্ষা করিয়া দেখ, তাহারা ঈশ্বর হইতে কি না।” (১ যোহন ৪:১) কোন ‘অভিব্যক্তি’ অর্থাৎ কোন শিক্ষা বা মতামত ঈশ্বর থেকে এসেছে বলে মনে হতে পারে। কিন্তু, সত্যিই কি এটা তাঁর কাছ থেকে এসেছে? প্রেরিত যোহন যেমন বলেন, “অনেক ভ্রামক জগতে বাহির হইয়াছে” তাই কিছুটা সন্দেহ রাখা বা নিশ্চিত হয়ে বিশ্বাস করা একটা সুরক্ষা হতে পারে।—২ যোহন ৭.

ভিত্তিহীন সন্দেহগুলো

কোন বিষয় সত্য কি না, তা যাচাই করার জন্য সৎ ও নম্রভাবে পরীক্ষা করে দেখার দরকার হয়। কিন্তু তাই বলে আমাদের মনে ও হৃদয়ে ভিত্তিহীন, ক্ষতিকর সন্দেহগুলোকে দানা বাঁধতে দেওয়া উচিত নয় কারণ এইরকম সন্দেহ আমাদের মধ্যে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত সমস্ত বিশ্বাস ও সম্পর্ককে নষ্ট করে দিতে পারে। এইধরনের সন্দেহকে “অনিশ্চিত বিশ্বাস বা মতামত, যা কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার বেলায় দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করে” বলে সংজ্ঞায়িত করা হয়। আপনার কি মনে আছে, কীভাবে শয়তান হবার মনে যিহোবার বিষয়ে সন্দেহ ঢুকিয়ে দিয়েছিল? সে জিজ্ঞেস করেছিল: “ঈশ্বর কি বাস্তবিক বলিয়াছেন, তোমরা এই উদ্যানের কোন বৃক্ষের ফল খাইও না?” (আদিপুস্তক ৩:১) এই সরল প্রশ্নটা এক অনিশ্চিত অবস্থার সৃষ্টি করছিল, যা তাকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বেলায় ধাঁধার মধ্যে ফেলে দেয়। এভাবেই শয়তান তার কৌশলগুলো ব্যবহার করে থাকে। বেনামি চিঠির লেখক যেমন দুর্নাম করে চিঠি লেখে, তেমনিই সে-ও কটাক্ষপাত, কিছুটা সত্য বলে প্রতারণা করায় ও মিথ্যা বলায় খুবই দক্ষ। শয়তান এইভাবে ছলনাপূর্ণ সন্দেহের বীজ বপন করে অগণিত ব্যক্তির চমৎকার, নির্ভরযোগ্য সম্পর্ককে নষ্ট করে দিয়েছে।—গালাতীয় ৫:৭-৯.

এইধরনের সন্দেহ যে কতটা ক্ষতিকর, শিষ্য যাকোব সেটা স্পষ্টভাবে বুঝতে পেরেছিলেন। পরীক্ষার সময়ে সাহায্যের জন্য আমরা যে সহজেই ঈশ্বরের নিকটবর্তী হতে পারি, সেই চমৎকার সুযোগের বিষয়ে তিনি লিখেছিলেন। কিন্তু, ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করার সময় যে বিষয়ে সতর্ক হতে হবে সেই সম্বন্ধে যাকোব যা বলেছিলেন তা হল, “সে বিশ্বাসপূর্ব্বক যাচ্ঞা করুক কিছু সন্দেহ না করুক।” ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের মধ্যে সন্দেহ থাকলে সেটা আমাদেরকে “বায়ুতাড়িত বিলোড়িত সমুদ্র-তরঙ্গের তুল্য” করে। আমরা তখন “দ্বিমনা লোক, আপনার সকল পথে অস্থির” হয়ে পড়ি। (যাকোব ১:৬, ৮) আমাদের বিশ্বাসের মধ্যে অনিশ্চয়তা বেড়ে যায়, যা আমাদেরকে দ্বন্দ্বের মধ্যে ফেলে দেয়। তারপর হবার ক্ষেত্রে যেমনটা হয়েছিল, আমরাও মন্দ দূতদের সমস্ত শিক্ষা এবং দর্শনের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারি।

আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্য ভাল রাখা

তাহলে, কীভাবে আমরা ক্ষতিকর সন্দেহগুলো থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারি? এর উত্তর খুবই সহজ: শয়তানের অপপ্রচারকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখান করে এবং “বিশ্বাসে অটল” থাকতে ঈশ্বরের কার্যক্রমে যে সকল ব্যবস্থা রয়েছে তাতে অংশ নিয়ে আমরা তা করতে পারি।—১ পিতর ৫:৮-১০.

যে বিষয়টা অবশ্যই করতে হবে তা হল, ব্যক্তিগতভাবে ভালমতো আধ্যাত্মিক খাবার গ্রহণ করা। লেখক উইনগেট, যার কথা আগে বলা হয়েছে তিনি বলেন: “এমনকি যখন দেহ বিশ্রাম নিতে থাকে তখনও এর রাসায়নিক প্রক্রিয়া চালু রাখতে এবং গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর কাজ চালিয়ে নেওয়ার জন্য শক্তির জোগান অব্যাহত রাখা দরকার।” একই বিষয় আমাদের আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যের বেলায়ও খাটে। নিয়মিত আধ্যাত্মিক খাবার না খেলে আমাদের বিশ্বাস, খাবার থেকে বঞ্চিত এক দেহের মতো ধীরে ধীরে নষ্ট হতে থাকবে এবং একসময় মারা যাবে। যীশু খ্রীষ্ট এই বিষয়ে জোর দিয়ে বলেছিলেন: “মনুষ্য কেবল রুটীতে বাঁচিবে না, কিন্তু ঈশ্বরের মুখ হইতে যে প্রত্যেক বাক্য নির্গত হয়, তাহাতেই বাঁচিবে।”—মথি ৪:৪.

বিষয়টা চিন্তা করুন। শুরুতেই কীভাবে আমরা এক দৃঢ় বিশ্বাস গড়ে তুলেছিলাম? প্রেরিত পৌল এই বিষয়ে লিখেছিলেন, ‘বিশ্বাস শ্রবণ হইতে হয়।’ (রোমীয় ১০:১৭) তিনি বুঝিয়েছেন যে শুরুতেই আমরা ঈশ্বরের বাক্য থেকে খাদ্য গ্রহণ করে যিহোবা, তাঁর সব প্রতিজ্ঞা এবং তাঁর সংগঠনের ওপর আমাদের বিশ্বাস ও আস্থা গড়ে তুলেছিলাম। অবশ্যই আমরা যা কিছু শুনেছিলাম, তা শুধু অন্ধের মতো বিশ্বাস করিনি। বিরয়া নগরের লোকেরা যা করেছিলেন আমরাও তা-ই করেছিলাম। আমরা ‘এ সকল বাস্তবিকই এইরূপ কি না, তাহা জানিবার জন্য প্রতিদিন শাস্ত্র পরীক্ষা করিয়াছিলাম।’ (প্রেরিত ১৭:১১) আমরা ‘পরীক্ষা করিয়া জানিতে পারিয়াছি, ঈশ্বরের ইচ্ছা কি, যাহা উত্তম ও প্রীতিজনক ও সিদ্ধ’ এবং যা শুনেছিলাম সেগুলো সত্য কি না, তা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়েছিলাম। (রোমীয় ১২:২; ১ থিষলনীকীয় ৫:২১) তখন থেকে আমাদের বিশ্বাসকে আরও শক্তিশালী করেছি যেন আমরা আগের চাইতে আরও স্পষ্টভাবে দেখেছি যে, ঈশ্বরের বাক্য এবং তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলো কখনও ব্যর্থ হয় না।—যিহোশূয়ের পুস্তক ২৩:১৪; যিশাইয় ৫৫:১০, ১১.

আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে ক্ষুধার্ত থাকা পরিহার করুন

বিশ্বাস বজায় রাখা এবং যিহোবা ও তাঁর সংগঠনের ওপর আমাদের আস্থাকে দুর্বল করে দেয় এমন অনিশ্চিত বিশ্বাসকে পরিহার করা বর্তমানে খুবই কঠিন। কিন্তু, তা করতে হলে, আমাদের অবশ্যই প্রতিদিন শাস্ত্র পরীক্ষা করতে হবে। প্রেরিত পৌল সতর্ক করে বলেন: “উত্তরকালে কতক লোক [যাদের হয়তো শুরুতে দৃঢ় বিশ্বাস আছে বলে মনে হয়েছে] ভ্রান্তিজনক আত্মাদিগেতে ও ভূতগণের শিক্ষামালায় মন দিয়া বিশ্বাস হইতে সরিয়া পড়িবে।” (১ তীমথিয় ৪:১) এইসব ভ্রান্তিজনক আত্মা ও শিক্ষাগুলো কারও কারও মনে সন্দেহের সৃষ্টি করে এবং ঈশ্বর থেকে তাদেরকে আলাদা করে দেয়। আমাদের জন্য সুরক্ষা কী? সবসময় আমরা যে ‘বিশ্বাসের ও উত্তম শিক্ষার অনুসরণ করিয়া আসিতেছি, তাহার বাক্যে পোষিত থাকিতে হইবে।’—১ তীমথিয় ৪:৬.

এটা দুঃখজনক যে বিনামূল্যে দেওয়া সত্ত্বেও, আজকে কেউ কেউ ‘বিশ্বাসের বাক্যে পোষিত থাকিবার’ বিষয়ে আগ্রহ দেখায় না। যেমন হিতোপদেশ বইয়ের একজন লেখক উল্লেখ করেন যে, হাতের কাছেই প্রচুর আধ্যাত্মিক খাবার অর্থাৎ এক আধ্যাত্মিক ভোজ রয়েছে কিন্তু তারপরও তা খেতে ও হজম করতে চায় না।—হিতোপদেশ ১৯:২৪; ২৬:১৫.

এটা খুবই বিপদজনক। লেখক পিটার উইনগেট বলেন: “যখনই দেহের প্রোটিন শেষ হতে থাকে তখনই স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ে।” খাবার না খেলে আপনার দেহ এর মধ্যে জমা করা পুষ্টির সরবরাহকে ব্যবহার করা শুরু করে। কিন্তু, যখন এই সরবরাহ শেষ হয়ে যায় তখন দেহ সেই প্রোটিনকে ব্যবহার করা শুরু করে, যা কিনা কলার বৃদ্ধি ও উন্নতির জন্য জরুরি। এভাবে একপর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো অচল হয়ে পড়ে এবং তারপর দ্রুত আপনার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে।

প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতে কিছু কিছু ব্যক্তির আধ্যাত্মিকতার ক্ষেত্রে একই ঘটনা ঘটেছিল। তাদের যতটুকু আধ্যাত্মিক জ্ঞান ছিল তা নিয়েই তারা চলার চেষ্টা করেছিলেন। তারা হয়তো ব্যক্তিগত অধ্যয়ন অবহেলা করতেন, ফলে আধ্যাত্মিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। (ইব্রীয় ৫:১২) কিন্তু এমনটা করার বিপদ সম্বন্ধে প্রেরিত পৌল ইব্রীয় খ্রীষ্টানদের বলেছিলেন: “যাহা যাহা শুনিয়াছি, তাহাতে অধিক আগ্রহের সহিত মনোযোগ করা আমাদের উচিত, পাছে কোন ক্রমে ভাসিয়া চলিয়া যাই।” তিনি জানতেন, আমরা যদি ‘মহৎ পরিত্রাণ অবহেলা করি,’ তাহলে মন্দ অভ্যাসগুলোতে ভেসে যাওয়া কত সহজ হবে।—ইব্রীয় ২:১, ৩.

তবে, একজন ব্যক্তি অপুষ্টিতে ভুগলেই যে তাকে দেখতে অসুস্থ বা রুগ্ন লাগবে এমন নয়। একইভাবে, একজন ব্যক্তি যে আধ্যাত্মিক অপুষ্টিতে ভুগছেন, সেটাও হয়তো তাড়াতাড়ি বোঝা যায় না। এমনকি যথাযথভাবে খাবার না খেলেও আপনাকে দেখতে প্রথমে আধ্যাত্মিকভাবে স্বাস্থ্যবানই মনে হতে পারে কিন্তু তা শুধু অল্প সময়ের জন্য! আপনি আধ্যাত্মিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়বেন, ভিত্তিহীন সন্দেহের দ্বারা সহজে প্রভাবিত হবেন এবং বিশ্বাসের পক্ষে প্রাণপণ করতে ব্যর্থ হবেন। (যিহূদা ৩) অন্য কেউ না জানলেও আপনি জানেন যে ব্যক্তিগতভাবে আপনি কতটা আধ্যাত্মিক খাবার গ্রহণ করে থাকেন।

তাই, আপনার ব্যক্তিগত অধ্যয়ন বজায় রাখুন। সন্দেহের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে লড়াই করুন। কোন বিষয় অল্প ক্ষতিকর বলে মনে হওয়ায় তা এড়িয়ে গেলে এবং ওই বিষয়ে মনের মধ্যে বিরক্তিকর সন্দেহ রেখে দিলে তার ফলাফল হয়তো ভয়াবহ হতে পারে। (২ করিন্থীয় ১১:৩) ‘আমরা কি সত্যিই শেষকালে বাস করছি? বাইবেল যা বলে তার সবকিছুই কি আপনি বিশ্বাস করতে পারেন? এটা কি সত্যিই যিহোবার সংগঠন?’ শয়তান আপনার মনে এইধরনের অনেক প্রশ্ন তুলে সন্দেহ ঢুকিয়ে দিতে তৎপর। আধ্যাত্মিক খাবার উপেক্ষা করার মনোভাব দেখাবেন না কারণ তা সহজেই আপনাকে তার প্রতারণাপূর্ণ শিক্ষার ফাঁদে আটকে ফেলতে পারে। (কলসীয় ২:৪-৭) তীমথিয়কে দেওয়া পরামর্শ মেনে চলুন। ‘পবিত্র শাস্ত্রকলাপের’ একজন ভাল ছাত্র হোন, যাতে আপনি ‘যাহা যাহা শিখিয়াছেন ও যাহার যাহার প্রমাণ জ্ঞাত হইয়াছেন, তাহাতেই স্থির থাকেন।’—২ তীমথিয় ৩:১৩-১৫.

এটা করতে আপনার হয়তো সাহায্যের দরকার হতে পারে। শুরুতেই বলা সেই লেখক আরও বলেন: “খাবারের তীব্র অভাবে ভিটামিন এবং অন্যান্য দরকারি চাহিদাগুলোর ঘাটতির কারণে হজম করার অঙ্গগুলো এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে যে, সাধারণ খাবারও এরা হজম করতে পারে না। লোকেদের এইরকম পরিস্থিতিতে কিছু সময়ের জন্য এমন খাবারের দরকার হতে পারে, যা সহজেই পরিপাক হয়।” খাবারের ঘাটতির কারণে শরীরের যে হাল হয়, তা কাটিয়ে উঠতে বিশেষ যত্নের দরকার। একইভাবে, যে ব্যক্তি তার ব্যক্তিগত বাইবেল অধ্যয়নকে পুরোপুরি অবহেলা করেছে, তার আধ্যাত্মিক ক্ষুধা ফিরিয়ে আনতে যথেষ্ট সাহায্য আর উৎসাহের দরকার হতে পারে। আপনার পরিস্থিতি যদি এমন হয়, তাহলে এই সাহায্য লাভের চেষ্টা করুন এবং আপনার আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্য ও শক্তিকে পুনরায় ফিরিয়ে আনতে যে সাহায্য দেওয়া হয়েছে, তা খুশিমনে গ্রহণ করুন।—যাকোব ৫:১৪, ১৫.

“অবিশ্বাস বশতঃ সন্দেহ” করবেন না

কুলপতি অব্রাহামের অবস্থা বিবেচনা করে কেউ কেউ হয়তো মনে করতে পারেন যে, অব্রাহামের সন্দেহ করার যথাযথ কারণ ছিল। এটা মনে করা হয়তো কিছুটা যুক্তিযুক্ত হতে পারে কারণ ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও তার ‘বহুজাতির পিতা হওয়ার প্রত্যাশা ছিল না।’ কেন? শুধু মানুষের দৃষ্টিতে দেখলে, বিষয়গুলো পরিপূর্ণ হবে বলে মনে হয়নি। বাইবেলের বিবরণ বলে, ‘তিনি আপনার মৃতকল্প শরীর, এবং সারার গর্ব্ভের মৃতকল্পতাও টের পাইলেন।’ তবুও তিনি তার মনে ও হৃদয়ে ঈশ্বর ও তাঁর প্রতিজ্ঞার বিষয়ে সন্দেহ করাকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখান করেছিলেন। প্রেরিত পৌল লেখেন: ‘তিনি বিশ্বাসে দুর্ব্বল হন নাই’ বা ‘অবিশ্বাস বশতঃ সন্দেহ করেন নাই।’ অব্রাহাম “নিশ্চয় জানিলেন, ঈশ্বর যাহা প্রতিজ্ঞা করিয়াছেন, তাহা সফল করিতে সমর্থও আছেন।” (রোমীয় ৪:১৮-২১) তিনি অনেক বছর ধরে যিহোবার সঙ্গে খুবই দৃঢ়, ব্যক্তিগত ও নির্ভরযোগ্য সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। এই চমৎকার সম্পর্ককে দুর্বল করে দিতে পারে, এমন যে কোন সন্দেহকে তিনি প্রত্যাখান করেছিলেন।

আপনি যদি ‘নিরাময় বাক্য সমূহ ধারণ করেন’ অর্থাৎ ভালমতো আধ্যাত্মিক খাবার গ্রহণ করেন, তবে আপনিও তা-ই করতে পারেন। (২ তীমথিয় ১:১৩) সন্দেহ করায় যে বিপদ আছে, তা গুরুত্বের সঙ্গে দেখুন। আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে ক্ষতিকর এমন জীবাণু দিয়ে যুদ্ধ করায় শয়তান ব্যস্ত আছে। আপনি যদি ব্যক্তিগত বাইবেল অধ্যয়ন করে ও খ্রীষ্টীয় সভাতে উপস্থিত হয়ে আধ্যাত্মিক খাবার গ্রহণ করাকে এড়িয়ে চলেন, তাহলে আপনি সহজেই তার আক্রমণের লক্ষ্য হন। “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাস” উদারভাবে ও সময়মতো যে আধ্যাত্মিক খাবার জোগান তা ভালমতো কাজে লাগান। (মথি ২৪:৪৫) ‘নিরাময় বাক্য স্বীকার করিয়া’ চলুন এবং ‘বিশ্বাসে নিরাময়’ থাকুন। (১ তীমথিয় ৬:৩; তীত ২:২) সন্দেহ করে আপনার বিশ্বাসকে নষ্ট হতে দেবেন না।

[২১ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

আপনি কতটা ভালমতো আধ্যাত্মিক খাবার গ্রহণ করেন?