সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আনন্দিত শস্যচ্ছেদনকারী হোন!

আনন্দিত শস্যচ্ছেদনকারী হোন!

আনন্দিত শস্যচ্ছেদনকারী হোন!

“শস্য প্রচুর বটে, কিন্তু কার্য্যকারী লোক অল্প; অতএব শস্যক্ষেত্রের স্বামীর নিকটে প্রার্থনা কর, যেন তিনি নিজ শস্যক্ষেত্রে কার্য্যকারী লোক পাঠাইয়া দেন।”মথি ৯:৩৭, ৩৮.

১. কী আমাদেরকে ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে চলতে সাহায্য করে?

 যিহোবার একজন দাস হিসেবে আমরা যখন আমাদের বাপ্তিস্মের দিনের কথা স্মরণ করি, তা সেটা কয়েক বছর বা অনেক আগেই হোক, মনে হয় যেন এই তো মাত্র সেদিন আমরা বাপ্তিস্ম নিয়েছি। যিহোবার প্রশংসা করা আমাদের জীবনে প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যেরা যাতে রাজ্যের বার্তা শুনতে ও গ্রহণ করতে পারে সেই বিষয়ে সাহায্য করার জন্য আমরা যখন সময় করে নিয়েছিলাম, তখন যিহোবার প্রতি আনন্দপূর্ণ সেবাই ছিল আমাদের প্রধান চিন্তা। (ইফিষীয় ৫:১৫, ১৬) আজকে আমরা দেখতে পাই যে, আমরা যখন ‘প্রভুর কার্য্যে উপচিয়া পড়িতে’ ব্যস্ত থাকি, তখন সময় খুব তাড়াতাড়ি চলে যায়। (১ করিন্থীয় ১৫:৫৮) যদিও আমরা সমস্যার মুখোমুখি হই, তারপরেও যিহোবার ইচ্ছা পালন করার পিছনে আনন্দই আমাদেরকে প্রেরণা দেয়।—নহিমিয় ৮:১০.

২. রূপক শস্যচ্ছেদনের কাজে আনন্দ বজায় রাখতে কোন্‌ বিষয়গুলো সাহায্য করে?

খ্রীষ্টান হিসেবে আমরা রূপক শস্যচ্ছেদনের কাজে জড়িত। অনন্ত জীবনের জন্য লোকেদের সংগ্রহ করাকে যীশু খ্রীষ্ট শস্যচ্ছেদনের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। (যোহন ৪:৩৫-৩৮) যেহেতু আমরা এইরকম শস্যচ্ছেদনের কাজে জড়িত, তাই প্রথম শতাব্দীর শস্যচ্ছেদনকারীরা কেন আনন্দিত হয়েছিলেন, তা পরীক্ষা করে দেখা খুবই উৎসাহজনক হবে। আমরা তিনটে বিষয় পরীক্ষা করে দেখব, যা আমাদেরকে আজকে শস্যচ্ছেদনের কাজে আনন্দ বজায় রাখতে সাহায্য করে। এগুলো হল (১) আমাদের আশার বার্তা, (২) খুঁজে বের করার সাফল্য এবং (৩) শস্যচ্ছেদনকারী হিসেবে শান্তি বজায় রাখার মনোভাব।

শস্যচ্ছেদনকারী হিসেবে পাঠানো

৩. কোন্‌ ক্ষেত্রে যীশুর প্রথম শতাব্দীর অনুসারীরা আনন্দ পেয়েছিলেন?

সাধারণ কাল ৩৩ সালে, বিশেষ করে যীশুর ১১ জন বিশ্বস্ত প্রেরিত যখন পুনরুত্থিত যীশুর সঙ্গে দেখা করার জন্য গালীলের একটা পাহাড়ে গিয়েছিলেন, তখন প্রথম শতাব্দীর এই শস্যচ্ছেদনকারীদের জীবন কতই না বদলে গিয়েছিল! (মথি ২৮:১৬) সেখানে হয়তো ‘পাঁচ শতের অধিক ভ্রাতা’ উপস্থিত ছিলেন। (১ করিন্থীয় ১৫:৬) যীশু তাদেরকে যে দায়িত্ব দিয়েছিলেন, তা তাদের কানে বাজছিল। তিনি তাদেরকে বলেছিলেন: “তোমরা গিয়া সমুদয় জাতিকে শিষ্য কর; পিতার ও পুত্ত্রের ও পবিত্র আত্মার নামে তাহাদিগকে বাপ্তাইজ কর; আমি তোমাদিগকে যাহা যাহা আজ্ঞা করিয়াছি সে সমস্ত পালন করিতে তাহাদিগকে শিক্ষা দেও।” (মথি ২৮:১৯, ২০) তারা যখন দেখেছিলেন যে অনেক জায়গায় খ্রীষ্টের অনুসারীদের মণ্ডলীগুলো স্থাপিত হচ্ছিল, তখন প্রচণ্ড তাড়না সত্ত্বেও শস্যচ্ছেদনের কাজে তারা অনেক আনন্দ পেয়েছিলেন। এক সময়ে ‘আকাশমণ্ডলের অধঃস্থিত সমস্ত সৃষ্টির কাছে সুসমাচার প্রচারিত হইয়াছিল।’—কলসীয় ১:২৩; প্রেরিত ১:৮; ১৬:৫.

৪. কোন্‌ পরিস্থিতিতে খ্রীষ্টের শিষ্যদেরকে পাঠানো হয়েছিল?

গালীলে যীশু তাঁর পরিচর্যার প্রথম দিকে ১২ জন প্রেরিতকে কাছে ডেকেছিলেন ও তাদেরকে এই কথা ঘোষণা করার জন্য পাঠিয়েছিলেন: “স্বর্গ-রাজ্য সন্নিকট হইল।” (মথি ১০:১-৭) তিনি “[গালীলের] সমস্ত নগরে ও গ্রামে ভ্রমণ করিতে লাগিলেন; তিনি লোকদের সমাজ-গৃহে উপদেশ দিলেন ও রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করিলেন, এবং সর্ব্বপ্রকার রোগ ও সর্ব্বপ্রকার ব্যাধি আরোগ্য করিলেন।” যীশু জনতাকে দেখে করুণাবিষ্ট হয়েছিলেন “কেননা তাহারা ব্যাকুল ও ছিন্নভিন্ন ছিল, যেন পালকবিহীন মেষপাল।” (মথি ৯:৩৫, ৩৬) গভীর করুণাবিষ্ট হয়ে তিনি তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন: “শস্য প্রচুর বটে, কিন্তু কার্য্যকারী লোক অল্প; অতএব শস্যক্ষেত্রের স্বামীর [যিহোবা ঈশ্বরের] নিকটে প্রার্থনা কর, যেন তিনি নিজ শস্যক্ষেত্রে কার্য্যকারী লোক পাঠাইয়া দেন।” (মথি ৯:৩৭, ৩৮) পৃথিবীতে যীশুর পরিচর্যার যখন মাত্র আর ছয় মাস বাকি ছিল, তখন যিহূদিয়ায় শস্যচ্ছেদনকারীদের প্রয়োজনের ব্যাপারেও যীশু একই কথা বলেছিলেন। (লূক ১০:২) দুজায়গাতেই তিনি তাঁর অনুসারীদেরকে শস্যচ্ছেদনকারী হিসেবে পাঠিয়েছিলেন।—মথি ১০:৫; লূক ১০:৩.

আমাদের আশার বার্তা

৫. আমরা কী ধরনের বার্তা ঘোষণা করি?

যিহোবার বর্তমান দিনের দাস হিসেবে আমরাও শস্যচ্ছেদনকারী হওয়ার ডাকে আনন্দের সঙ্গে সাড়া দিই। যে বিষয়টা আমাদের জন্য প্রচুর আনন্দ নিয়ে আসার ক্ষেত্রে অবদান রাখে তা হল, আমরা আশার বার্তা নিয়ে হতাশ ও বিষণ্ণ লোকেদের কাছে যাই। যীশুর প্রথম শতাব্দীর শিষ্যদের মতো আমাদেরও ‘ব্যাকুল ও ছিন্নভিন্ন, যেন পালকবিহীন মেষপালের’ কাছে সুসমাচার অর্থাৎ আশার এক প্রকৃত বার্তা ঘোষণা করার কত বড় সুযোগই না রয়েছে!

৬. প্রথম শতাব্দীতে প্রেরিতরা কোন্‌ কাজে রত ছিলেন?

প্রথম শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে প্রেরিত পৌল সুসমাচার প্রচার করায় ব্যস্ত ছিলেন। আর কোন সন্দেহ নেই যে, তার শস্যচ্ছেদনের কাজ ফলপ্রসূ হয়েছিল কারণ সা.কা. ৫৫ সালে করিন্থের খ্রীষ্টানদের কাছে লেখার সময় তিনি বলেছিলেন: “হে ভ্রাতৃগণ, তোমাদিগকে সেই সুসমাচার জানাইতেছি, যে সুসমাচার তোমাদের নিকট প্রচার করিয়াছি, যাহা তোমরা গ্রহণও করিয়াছ, যাহাতে তোমরা দাঁড়াইয়া আছ।” (১ করিন্থীয় ১৫:১) প্রেরিতরা ও প্রথম শতাব্দীর অন্যান্য খ্রীষ্টানরা পরিশ্রমী শস্যচ্ছেদনকারী ছিলেন। সা.কা. ৭০ সালে যিরূশালেম ধ্বংসের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোর মধ্যে দিয়ে কত জন প্রেরিত বেঁচে ছিলেন, সেই বিষয়ে যদিও বাইবেল কিছুই বলে না কিন্তু আমরা জানি যে, এর প্রায় ২৫ বছর পরেও প্রেরিত যোহন প্রচার করে চলেছিলেন।—প্রকাশিত বাক্য ১:৯.

৭, ৮. যিহোবার দাসেরা আশার কোন্‌ বার্তা আগের চেয়ে এখন আরও অনেক বেশি তৎপরতার সঙ্গে ঘোষণা করে চলেছেন?

এরপরের কয়েকশ বছর সেই ধর্মভ্রষ্ট “পাপ-পুরুষ” অর্থাৎ খ্রীষ্টীয়জগতের পাদরিদের আধিপত্যের যুগ এসেছিল। (২ থিষলনীকীয় ২:৩) কিন্তু, উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে যারা মূল খ্রীষ্টধর্মের আদর্শ অনুযায়ী তাদের জীবনকে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন, তারা আশার বার্তাকে মেনে নিয়েছিলেন ও রাজ্যের বিষয়ে ঘোষণা করেছিলেন। সত্যি বলতে কী, এই পত্রিকার প্রথম সংখ্যা (জুলাই ১৮৭৯) থেকেই এর শিরোনামে “খ্রীষ্টের উপস্থিতির ঘোষণা,” “খ্রীষ্টের রাজ্যের ঘোষণা” অথবা “যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে” কথাগুলো ছিল।

যীশু খ্রীষ্ট ১৯১৪ সালে ঈশ্বরের স্বর্গীয় রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আর আমরা আগের চেয়ে এখন আরও অনেক বেশি তৎপরতার সঙ্গে আশার বার্তা ঘোষণা করছি। কেন? কারণ রাজ্য শাসন যে আশীর্বাদগুলো নিয়ে আসবে তার মধ্যে একটা হল, বর্তমান দুষ্ট বিধিব্যবস্থার শেষ একেবারে কাছে। (দানিয়েল ২:৪৪) এর চেয়ে ভাল বার্তা আর কী-ই-বা হতে পারে? এছাড়া “মহাক্লেশ” আঘাত করার আগে, রাজ্যের বিষয়ে ঘোষণা করা ছাড়া আর কোন্‌ আনন্দ আমাদের থাকতে পারে?—মথি ২৪:২১; মার্ক ১৩:১০.

খোঁজায় সফলতা

৯. যীশু তাঁর শিষ্যদের কী নির্দেশ দিয়েছিলেন আর রাজ্যের বার্তার প্রতি লোকেরা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল?

আরেকটা বিষয় শস্যচ্ছেদনকারী হিসেবে আমাদের কাজে আনন্দ এনে দেয় আর তা হল, আমরা সেই ব্যক্তিদের খুঁজে পাই যারা শিষ্য হন ও আমাদের সঙ্গে শস্যচ্ছেদনের কাজ করেন। সা.কা. ৩১-৩২ সালে যীশু তাঁর শিষ্যদের নির্দেশ দিয়েছিলেন: “তোমরা যে নগরে কি গ্রামে প্রবেশ করিবে, তথাকার কোন্‌ ব্যক্তি যোগ্য, তাহা অনুসন্ধান করিও।” (মথি ১০:১১) রাজ্যের বার্তা শুনে তাদের প্রতিক্রিয়া দেখেই বোঝা গিয়েছিল যে, সব লোকেরা যোগ্য ছিল না। তাসত্ত্বেও যেখানেই লোকেদের পাওয়া যেত, যীশুর শিষ্যরা উদ্যোগের সঙ্গে তাদের কাছে সুসমাচার প্রচার করতেন।

১০. কীভাবে পৌল যোগ্য ব্যক্তিদের খোঁজ করে চলেছিলেন?

১০ যীশুর মৃত্যু ও পুনরুত্থানের পর যোগ্য ব্যক্তিদেরকে আরও জোরকদমে অনুসন্ধান করা হয়েছিল। পৌল সমাজ-গৃহে যিহুদিদের সঙ্গে ও এথেন্সের বাজারের লোকেদের সঙ্গে যুক্তি দেখিয়ে কথা বলেছিলেন। তিনি যখন গ্রিক শহর আরেয়পাগে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন, তখন “কোন কোন ব্যক্তি তাঁহার সঙ্গ ধরিল ও বিশ্বাস করিল; তাহাদের মধ্যে আরেয়পাগীয় দিয়নুষিয়, এবং দামারী নাম্নী একটী স্ত্রীলোক, ও তাঁহাদের সহিত আর কয়েক জন ছিলেন।” পৌল যেখানেই গেছেন সেখানেই তিনি “সাধারণ্যে ও ঘরে ঘরে” প্রচার করে উদাহরণ রেখেছিলেন।—প্রেরিত ১৭:১৭, ৩৪; ২০:২০.

১১. কিছু বছর আগে কোন্‌ পদ্ধতিতে পরিচর্যা সম্পন্ন করা হতো?

১১ উনবিংশ শতাব্দীর শেষ বছরগুলোতে অভিষিক্ত খ্রীষ্টানরা সাহসের সঙ্গে যোগ্য ব্যক্তিদের খোঁজ করেছিলেন। ১৮৮১ সালের জুলাই/আগস্ট জায়ন্স ওয়াচ টাওয়ার এর “প্রচার করার জন্য অভিষিক্ত” নামে একটা প্রবন্ধ বলেছিল: “এখন ‘মৃদুশীল’ ব্যক্তিদের কাছে অর্থাৎ খ্রীষ্টের দেহ বা সহদায়াদ হওয়ার জন্য যারা শুনতে চান ও শুনতে সক্ষম তাদের কাছে . . . সুসমাচার প্রচার করা হচ্ছে।” ঈশ্বরের শস্যচ্ছেদনকারীরা প্রায়ই এমন লোকেদের কাছে যেতেন, যারা গির্জায় যাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলেন এবং যোগ্য ব্যক্তিরা যাতে আগ্রহ দেখিয়ে সাড়া দেন এর জন্য শাস্ত্রীয় বার্তা সহ ট্র্যাক্ট দিয়েছিলেন। সাক্ষ্যদানের এই পদ্ধতি কতখানি কার্যকর, তা ভালভাবে বিবেচনা করে ১৯০৩ সালের ১৫ই মে এর প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) শস্যচ্ছেদনকারীদের উৎসাহ দিয়ে বলেছিল, তারা যাতে “রবিবার সকালে ঘরে-ঘরে” গিয়ে ট্র্যাক্ট বিতরণ করেন।

১২. কীভাবে আমরা আমাদের পরিচর্যার কার্যকারিতাকে বাড়িয়েছি? উদাহরণ দিন।

১২ সম্প্রতি, ঘরে-ঘরে ছাড়াও অন্যান্য জায়গায় লোকেদের সঙ্গে দেখা করে আমরা আমাদের পরিচর্যাকে বাড়িয়েছি। এই পদ্ধতিটা সেইসমস্ত দেশগুলোতে খুবই কার্যকারী হয়েছে, যেখানে অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে ও অবসর সময় কাটানোর জন্য লোকেরা সাধারণত সেই সময়গুলোতে ঘরে থাকেন না, যখন আমরা তাদের সঙ্গে ঘরে দেখা করতে যাই। ইংল্যান্ডের একজন সাক্ষি ও তার সহকারিণী যখন দেখেছিলেন যে পর্যটকরা রোজ সমুদ্রতীরে সময় কাটিয়ে বাসে করে ফিরে যান, তখন তারা সাহস করে বাসে চড়ে যাত্রীদেরকে প্রহরীদুর্গ এবং সচেতন থাক! পত্রিকা দিয়েছিলেন। এক মাসে তারা ২২৯টা কপি বিলি করেছিলেন। তারা বলেন: “সমুদ্রতীরে, ব্যবসায়িক এলাকায় বা অন্যান্য যে কোন কঠিন অবস্থাই হোক না কেন, প্রচার করতে আমাদের একটুও ভয় লাগে না কারণ আমরা জানি যে, যিহোবা সবসময় আমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছেন।” তারা পত্রিকা রুট চালু করেছিলেন, একটা বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করেছিলেন এবং দুজনেই সহায়ক অগ্রগামীর কাজ শুরু করেছিলেন।

১৩. কিছু কিছু জায়গায় প্রচার কাজে কী কী রদবদল করার দরকার দেখা দিয়েছে?

১৩ যোগ্য ব্যক্তিদের খোঁজ করে চলার সময়, কিছু জায়গায় হয়তো আমাদের পরিচর্যার বিষয়টাকে আরও ভালভাবে বিবেচনা করে দেখার দরকার হতে পারে। যদিও অনেক সাক্ষিরা অভ্যাসবশত রবিরার সকালে ঘরে-ঘরে প্রচারে যান কিন্তু কিছু এলাকায় তারা দেখতে পেয়েছেন যে, খুব সকালে লোকেদের ঘরে গেলে তা খুব একটা কার্যকর হয় না কারণ সেই সময় তারা হয়তো ঘুমিয়ে থাকেন। তাই, অনেক সাক্ষিরা তাদের তালিকায় রদবদল করে দিনের অন্য কোন সময়, হতে পারে খ্রীষ্টীয় সভাগুলোর পর লোকেদেরকে খুঁজতে যান। আর এভাবে খোঁজা ভাল ফল এনে দিয়েছে। গত বছর সারা পৃথিবীতে রাজ্যের ঘোষণাকারীদের সংখ্যা শতকরা ২.৩ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। এটা শস্যক্ষেত্রের স্বামীর সম্মান নিয়ে আসে এবং আমাদের হৃদয়কেও আনন্দিত করে।

শস্যচ্ছেদনের কাজে শান্তি বজায় রাখুন

১৪. আমরা কেমন মনোভাব নিয়ে আমাদের বার্তা জানাই এবং কেন?

১৪ শস্যচ্ছেদনের কাজে আনন্দ এনে দেওয়ার আরেকটা কারণ হল, আমরা শস্যচ্ছেদনের কাজে শান্তি বজায় রাখার মনোভাব দেখাই। যীশু বলেছিলেন, “তাহার গৃহে প্রবেশ করিবার সময়ে সেই গৃহকে মঙ্গলবাদ করিও। তাহাতে সেই গৃহ যদি যোগ্য হয়, তবে তোমাদের শান্তি তাহার প্রতি বর্ত্তুক।” (মথি ১০:১২, ১৩) ইব্রীয় মঙ্গলবাদ ও এর জন্য বাইবেলে যে গ্রিক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে দুটোরই অর্থ হল, ‘আপনার মঙ্গল হোক।’ লোকেদের কাছে সুসমাচার প্রচার করার সময় আমাদের এইরকম মনোভাব থাকে। আমরা আশা করি যে, তারা রাজ্যের বার্তা শুনে আগ্রহ দেখাবে। যারা শোনে তাদের ঈশ্বরের সঙ্গে সম্মিলিত হওয়ার আশা থাকে কারণ তারা তাদের পাপের জন্য অনুতপ্ত হয়, পাপ থেকে ফিরে আসে ও তাঁর ইচ্ছা পালন করে। ফলে, ঈশ্বরের সঙ্গে শান্তি তাদেরকে অনন্ত জীবনের দিকে নিয়ে যায়।—যোহন ১৭:৩; প্রেরিত ৩:১৯; ১৩:৩৮, ৪৮; ২ করিন্থীয় ৫:১৮-২০.

১৫. প্রচার করার সময় লোকেরা যখন আমাদের কথা শুনতে চান না, তখন কীভাবে আমরা শান্তিপূর্ণ মনোভাব বজায় রাখতে পারি?

১৫ লোকেরা যখন আমাদের কথা শুনতে চান না, তখন আমরা কীভাবে আমাদের শান্তি বজায় রাখতে পারি? যীশু বলেছিলেন: “[সেই গৃহ] যদি যোগ্য না হয়, তবে তোমাদের শান্তি তোমাদের কাছে ফিরিয়া আইসুক।” (মথি ১০:১৩) লূকের বর্ণনা অনুযায়ী, ৭০ জন শিষ্যকে প্রচারে পাঠানোর আগে যীশু এই কথা বলেন: “তথায় যদি শান্তির সন্তান থাকে, তবে তোমাদের শান্তি তাহার উপরে অবস্থিতি করিবে, নতুবা তোমাদের প্রতি ফিরিয়া আসিবে।” (লূক ১০:৬) আমরা যখন সুসমাচার নিয়ে লোকেদের কাছে যাই, তখন সঠিক কারণেই আমরা হাসিখুশি ও শান্তিপূর্ণ মনোভাব নিয়েই তাদের কাছে যাই। কিন্তু গৃহকর্তা যদি আমাদের কথা না শোনেন, কোন অভিযোগ বা খারাপ ব্যবহার করেন, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই আমাদের শান্তিপূর্ণ বার্তা ‘আমাদের কাছে ফিরিয়া’ আসে। তবে এই কারণগুলোর একটাও আমাদের মধ্যে যিহোবার পবিত্র আত্মার ফল যে শান্তি রয়েছে, সেটাকে হরণ করতে পারে না।—গালাতীয় ৫:২২, ২৩.

শস্যচ্ছেদনকারীদের জন্য এক চমৎকার লক্ষ্য

১৬, ১৭. (ক) পুনর্সাক্ষাৎ করার সময় আমাদের লক্ষ্য কী হয়? (খ) বাইবেল সম্বন্ধে যাদের প্রশ্ন আছে তাদেরকে আমরা কীভাবে সাহায্য করতে পারি?

১৬ শস্যচ্ছেদনকারী হিসেবে অনন্ত জীবনের জন্য লোকেদের সংগ্রহ করার কাজে অংশ নিতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত। আর যাদের কাছে আমরা প্রচার করেছি তাদের কেউ যখন আমাদের কথা শোনেন, আরও বেশি শিখতে চান এবং নিজেকে “শান্তির সন্তান” বলে প্রমাণ করেন, তখন আমরা কত খুশিই না হই! বাইবেল সম্বন্ধে তার হয়তো অনেক প্রশ্ন আছে আর একবার গিয়েই তার সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। আর যেহেতু প্রথম সাক্ষাতেই কারও ঘরে অনেক সময় ধরে থাকা ঠিক হবে না, তাহলে কী করা যেতে পারে? আমরা একটা লক্ষ্য নিতে পারি, যে বিষয়ে প্রায় ৬০ বছর আগে বলা হয়েছিল।

১৭ “বাইবেল অধ্যয়ন করানোর জন্য প্রত্যেক যিহোবার সাক্ষিকে তৈরি থাকতে হবে।” ১৯৩৭ থেকে ১৯৪১ সাল পর্যন্ত প্রকাশিত মডেল স্টাডি নামে ধারাবাহিক পুস্তিকাগুলোর তৃতীয়টাতে এই কথা বলা হয়েছিল। এটা আরও বলেছিল: “যে প্রীতিপাত্ররা রাজ্যের বার্তার প্রতি আগ্রহ দেখান তাদেরকে যে কোন উপায়ে সাহায্য করার জন্য সমস্ত [রাজ্যের] প্রকাশকদের অধ্যবসায়ী হতে হবে। এই ব্যক্তিদের কাছে আবার ফিরে যাওয়া [পুনর্সাক্ষাৎ করা], তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেওয়া . . . ও যত তাড়াতাড়ি সম্ভব . . . তাদের সঙ্গে অধ্যয়ন শুরু করা উচিত।” হ্যাঁ, পুনর্সাক্ষাৎ করার পিছনে আমাদের লক্ষ্য হল, বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করা এবং তা নিয়মিতভাবে করা। * আগ্রহী ব্যক্তিদের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব এবং তাদের জন্য প্রেমপূর্ণ চিন্তা আমাদেরকে ভালভাবে প্রস্তুত হতে ও কার্যকরভাবে অধ্যয়ন করতে সাহায্য করে।

১৮. যীশু খ্রীষ্টের শিষ্য হওয়ার জন্য নতুন ব্যক্তিদেরকে আমরা কীভাবে সাহায্য করতে পারি?

১৮ জ্ঞান যা অনন্ত জীবনে পরিচালিত করে বই এবং ঈশ্বর আমাদের কাছ থেকে কী চান? ব্রোশার দিয়ে আমরা কার্যকারী গৃহ বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করতে এবং আগ্রহী নতুন ব্যক্তিদেরকে শিষ্য হতে সাহায্য করতে পারি। আমরা যখন আমাদের মহান শিক্ষক, যীশু খ্রীষ্টকে অনুকরণ করার চেষ্টা করি, তখন সম্ভবত বাইবেল ছাত্ররাও আমাদের শান্তিপূর্ণ, হাসিখুশি মনোভাব, আমাদের আন্তরিকতা এবং যিহোবার মান ও নির্দেশনাগুলোর প্রতি আমাদের সম্মান দেখে শিখবেন। আমরা যখন নতুন ব্যক্তিদেরকে তাদের প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে সাহায্য করি, তখন আসুন আমরা তাদেরকে শেখাই যে, অন্যরা যখন তাদেরকে প্রশ্ন করবেন তখন তারা কীভাবে এর উত্তর দিতে পারবেন। (২ তীমথিয় ২:১, ২; ১ পিতর ২:২১) রূপক শস্যচ্ছেদনকারী হিসেবে, আমরা আনন্দিত হতে পারি কারণ গত পরিচর্যা বছরে সারা পৃথিবীতে গড়ে ৪৭,৬৬,৬৩১টা গৃহ বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করা হয়েছিল। আর আমরা যদি গৃহ বাইবেল অধ্যয়ন করিয়ে শস্যচ্ছেদনের কাজে ব্যক্তিগতভাবে অংশ নিয়ে থাকি, তাহলে আমরা বিশেষভাবে আনন্দিত হই।

শস্যচ্ছেদনের কাজে আনন্দ করে চলুন

১৯. যীশুর পরিচর্যার সময়ে ও এর অল্প কিছু পর আনন্দ করার কেন উপযুক্ত কারণ ছিল?

১৯ যীশুর পরিচর্যার সময়ে ও এর অল্প কিছু পর শস্যচ্ছেদনের কাজে আনন্দ করার অনেক কারণ ছিল। অনেকে তখন সুসমাচার শুনেছিলেন। বিশেষ করে সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনে অনেক আনন্দ হয়েছিল কারণ সেদিন প্রায় ৩,০০০ লোক পিতরের নির্দেশনা শুনে সাড়া দিয়েছিলেন, যিহোবার পবিত্র আত্মা লাভ করেছিলেন এবং ঈশ্বরের আত্মিক ইস্রায়েলের অংশী হয়েছিলেন। সত্যি, তাদের সংখ্যা বেড়ে চলেছিল এবং তাদের আনন্দ উপচে পড়েছিল কারণ “প্রভু দিন দিন তাহাদিগকে তাহাদের সহিত সংযুক্ত করিতেন।”—প্রেরিত ২:৩৭-৪১, ৪৬, ৪৭; গালাতীয় ৬:১৬; ১ পিতর ২:৯.

২০. কোন্‌ বিষয়টা আমাদের শস্যচ্ছেদনের কাজে প্রচুর আনন্দ নিয়ে আসে?

২০ সেই সময়ে যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণী সত্য প্রমাণিত হচ্ছিল: “তুমি [যিহোবা] সেই জাতির বৃদ্ধি করিয়াছ, তাহাদের আনন্দ বাড়াইয়াছ; তাহারা তোমার সাক্ষাতে শস্যচ্ছেদন সময়ের ন্যায় আহ্লাদ করে, যেমন লুট বিভাগ করিবার সময়ে লোকেরা উল্লাসিত হয়।” (যিশাইয় ৯:৩) যদিও এখন আমরা দেখি যে, অভিষিক্ত ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত এই “জাতির বৃদ্ধি” কমে যাচ্ছে কিন্তু অন্য শস্যচ্ছেদনকারীদের সংখ্যা বছরের পর বছর বেড়ে চলেছে দেখে আমরা অনেক আনন্দ পাই।—গীতসংহিতা ৪:৭; সখরিয় ৮:২৩; যোহন ১০:১৬.

২১. পরের প্রবন্ধে আমরা কোন্‌ বিষয় আলোচনা করব?

২১ শস্যচ্ছেদনের কাজে আনন্দ করে চলার যথেষ্ট কারণ আমাদের রয়েছে। আমাদের আশার বার্তা, যোগ্য ব্যক্তিদের খোঁজা এবং শান্তি স্থাপন করার মনোভাব—এই সমস্তই শস্যচ্ছেদনকারী হিসেবে আমাদের আনন্দ নিয়ে আসে। তারপরেও অনেকের কাছ থেকে ভাল সাড়া পাওয়া যায় না। প্রেরিত যোহনের বেলায় এইরকম হয়েছিল। “ঈশ্বরের বাক্য ও যীশুর সাক্ষ্য প্রযুক্ত” তাকে পাট্‌ম দ্বীপে নির্বাসন দেওয়া হয়েছিল। (প্রকাশিত বাক্য ১:৯) তাহলে, তাড়না ও বিরোধিতার মধ্যে আমরা কীভাবে আমাদের আনন্দ বজায় রাখতে পারি? আমরা এখন যাদের কাছে প্রচার করি তাদের অনেকের কঠিন মনোভাবকে সহ্য করতে কী আমাদেরকে সাহায্য করবে? পরের প্রবন্ধে এই প্রশ্নগুলোর শাস্ত্র-ভিত্তিক উত্তর দেওয়া আছে।

[পাদটীকা]

^ আগ্রহী ব্যক্তিরা যেখানে একসঙ্গে মিলিত হতে পারতেন এমন জায়গাগুলোতে প্রথমে অধ্যয়ন করার ব্যবস্থা করা হতো। কিন্তু, শীঘ্রিই ব্যক্তি ও পরিবারগুলোর সঙ্গে আলাদা আলাদাভাবে অধ্যয়ন করার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।—যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত যিহোবার সাক্ষিরা—ঈশ্বরের রাজ্যের ঘোষণাকারী (ইংরেজি) বইয়ের ৫৭৪ পৃষ্ঠা দেখুন।

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• রূপক শস্যচ্ছেদনের কাজ কী?

• আমরা কী ধরনের বার্তা ঘোষণা করি?

• শিষ্য খোঁজার কাজে আমরা কেন সফল হই?

• শস্যচ্ছেদনের কাজে আমরা কীভাবে শান্তি বজায় রাখি?

• শস্যচ্ছেদনের কাজে আমরা কেন আনন্দ করে চলি?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১২, ১৩ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

প্রথম ও বিংশ শতাব্দীর প্রচার কাজ

[১৩ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

পৌলের মতো, বর্তমান দিনের শস্যচ্ছেদনকারীরা সব জায়গার লোকেদের কাছে পৌঁছাতে চেষ্টা করেন

[১৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

হাসিখুশি মনোভাব নিয়ে সুসমাচার ঘোষণা করুন