সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনার উন্নতি যেন সকলে দেখতে পায়

আপনার উন্নতি যেন সকলে দেখতে পায়

আপনার উন্নতি যেন সকলে দেখতে পায়

“এ সকল বিষয়ে চিন্তা কর, এ সকলে স্থিতি কর, যেন তোমার উন্নতি সকলের প্রত্যক্ষ হয়।”১ তীমথিয় ৪:১৫.

১. একটা ফল কখন পাকে এবং খাওয়ার জন্য উপযুক্ত হয়, তা আপনি কীভাবে বলতে পারেন?

 মনে মনে আপনার প্রিয় একটা ফল যেমন পেয়ারা, নাশপাতি, আম বা অন্য কোন ফলের কথা চিন্তা করুন। এটা কখন পাকে এবং খাওয়ার জন্য উপযুক্ত হয়, আপনি কি তা বলতে পারেন? বেশির ভাগ সময়ই আপনি তা পারেন। এর ঘ্রাণ নিয়ে, রং দেখে এবং ফলটা হাতে নিয়ে আপনি বুঝতে পারেন যে, এটা এখনই খাওয়ার উপযুক্ত হয়েছে। আর এক কামড় ফল মুখে দিয়েই আপনি হয়তো তৃপ্তি প্রকাশ করেন। কত রসালো! কত মিষ্টি! এটা আপনাকে প্রচুর পরিতৃপ্তি এবং আনন্দ দেয়।

২. কীভাবে পরিপক্বতা দেখা যায় আর অন্যদের সঙ্গে সম্পর্কের ওপর এর কেমন প্রভাব রয়েছে?

এই সাধারণ কিন্তু আনন্দপূর্ণ অভিজ্ঞতার সঙ্গে জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রগুলোর হুবহু মিল আছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ফল পাকলে যেমন বোঝা যায় ঠিক তেমনই একজন ব্যক্তির আধ্যাত্মিক পরিপক্বতাও বিভিন্ন উপায়ে দেখা যায়। আমরা একজন ব্যক্তির মধ্যে তখনই পরিপক্বতা দেখতে পাই, যখন তিনি বিচক্ষণতা, দূরদৃষ্টি, প্রজ্ঞা এবং আরও অন্যান্য গুণ দেখান। (ইয়োব ৩২:৭-৯) যে ব্যক্তিরা তাদের আচার-আচরণে ও কাজে এইধরনের গুণগুলো দেখান, তাদের সঙ্গে মেলামেশা এবং কাজ করতে পারা সত্যিই আনন্দের।—হিতোপদেশ ১৩:২০.

৩. যীশুর দিনের লোকেদের সম্বন্ধে তিনি যে বর্ণনা দিয়েছেন, তাতে পরিপক্বতা সম্বন্ধে কী প্রকাশ পায়?

অন্যদিকে, একজন ব্যক্তি হয়তো শারীরিক দিক দিয়ে বৃদ্ধি পেতে পারেন কিন্তু তার কথাবার্তা ও কাজে প্রকাশ পেতে পারে যে, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে তিনি পরিপক্ব নন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যীশু খ্রীষ্টের দিনের বিপথগামী লোকেদের সম্বন্ধে তিনি বলেছিলেন: “যোহন আসিয়া ভোজন পান করেন নাই; তাহাতে লোকে বলে, সে ভূতগ্রস্ত। মনুষ্যপুত্ত্র আসিয়া ভোজন পান করেন; তাহাতে লোকে বলে, ঐ দেখ, এক জন পেটুক ও মদ্যপায়ী।” যদিও এই লোকেরা প্রাপ্তবয়স্ক ছিল কিন্তু যীশু বলেছিলেন যে, তারা “বালকদের” অর্থাৎ অপরিপক্ব ব্যক্তিদের মতো কাজ করত। তাই, তিনি বলেছিলেন: “প্রজ্ঞা নিজ কর্ম্মসমূহ দ্বারা নির্দ্দোষ বলিয়া গণিত হয়।”—মথি ১১:১৬-১৯.

৪. কোন্‌ কোন্‌ উপায়ে উন্নতি এবং পরিপক্বতা দেখানো যায়?

যীশুর কথা থেকে আমরা দেখতে পাই যে, একজন ব্যক্তির মধ্যে পরিপক্বতার বিশেষ চিহ্ন প্রকৃত প্রজ্ঞা আছে কি না, তা তার কাজ এবং এর ফল থেকে বোঝা যায়। এই বিষয়ে তীমথিয়কে প্রেরিত পৌল যে পরামর্শ দিয়েছিলেন, তা দেখুন। তীমথিয়কে যা যা করতে হবে সেই সম্বন্ধে বলার পর পৌল বলেছিলেন: “এ সকল বিষয়ে চিন্তা কর, এ সকলে স্থিতি কর, যেন তোমার উন্নতি সকলের প্রত্যক্ষ হয়।” (১ তীমথিয় ৪:১৫) হ্যাঁ, পরিপক্ব হওয়ার জন্য একজন খ্রীষ্টান যে উন্নতি করেন, তা “প্রত্যক্ষ” হয় বা স্পষ্টভাবে বোঝা যায়। খ্রীষ্টীয় পরিপক্বতা হল উজ্জ্বল আলোর মতো, এটা অদৃশ্য বা লুকিয়ে রাখার মতো কোন গুণ নয়। (মথি ৫:১৪-১৬) তাই, আমরা এখন দুটো উপায় বিবেচনা করব, যার মাধ্যমে উন্নতি এবং পরিপক্বতা দেখানো যেতে পারে: (১) জ্ঞান, বোঝার ক্ষমতা ও প্রজ্ঞা বাড়িয়ে; (২) আত্মার ফল দেখিয়ে।

বিশ্বাস ও জ্ঞানে ঐক্য

৫. পরিপক্বতাকে কীভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে?

বেশির ভাগ ডিকশনারিই পরিপক্বতাকে এভাবে ব্যাখ্যা করে, পুরোপুরি বৃদ্ধি পাওয়া, পূর্ণবয়স্ক হওয়া এবং চূড়ান্ত অবস্থা বা কাঙ্ক্ষিত মান পর্যন্ত পৌঁছানো। শুরুতেই বলা হয়েছিল, একটা ফল তখনই পরিপক্ব হয় বা পাকে যখন এর স্বাভাবিক বৃদ্ধি পূর্ণ হয়ে যায় এবং এর আকার, রং, ঘ্রাণ ও স্বাদ খাওয়ার উপযুক্ত হয়। তাই, পরিপক্ব শব্দের সমার্থ শব্দগুলো হল উৎকর্ষ, পরিপূর্ণতা, এমনকি সিদ্ধতা।—যিশাইয় ১৮:৫; মথি ৫:৪৫-৪৮: যাকোব ১:৪.

৬, ৭. (ক) কী দেখায় যে তাঁর সমস্ত উপাসকরা যেন আধ্যাত্মিক পরিপক্বতায় পৌঁছে, সেই বিষয়ে যিহোবা অত্যন্ত আগ্রহী? (খ) কীসের সঙ্গে আধ্যাত্মিক পরিপক্বতার এক নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে?

যিহোবা ঈশ্বর, তাঁর সমস্ত উপাসকরা যেন আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে পরিপক্বতায় পৌঁছে সেই বিষয়ে অত্যন্ত আগ্রহী। এর জন্য খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতে তিনি অপূর্ব ব্যবস্থা জুগিয়েছেন। ইফিষের খ্রীষ্টানদের কাছে প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “তিনিই কয়েক জনকে প্রেরিত, কয়েক জনকে ভাববাদী, কয়েক জনকে সুসমাচার-প্রচারক ও কয়েক জনকে পালক ও শিক্ষাগুরু করিয়া দান করিয়াছেন, পবিত্রগণকে পরিপক্ব করিবার নিমিত্ত করিয়াছেন, যেন পরিচর্য্যা-কার্য্য সাধিত হয়, যেন খ্রীষ্টের দেহকে গাঁথিয়া তোলা হয়, যাবৎ আমরা সকলে ঈশ্বরের পুত্ত্র বিষয়ক বিশ্বাসের ও তত্ত্বজ্ঞানের ঐক্য পর্য্যন্ত, সিদ্ধ পুরুষের [“পূর্ণবয়স্ক,” NW] অবস্থা পর্য্যন্ত, খ্রীষ্টের পূর্ণতার আকারের পরিমাণ পর্য্যন্ত, অগ্রসর না হই; যেন আমরা আর বালক না থাকি, মনুষ্যদের ঠকামিতে, ধূর্ত্ততায়, ভ্রান্তির চাতুরীক্রমে তরঙ্গাহত এবং যে সে শিক্ষাবায়ুতে ইতস্ততঃ পরিচালিত না হই।”—ইফিষীয় ৪:১১-১৪.

মণ্ডলীর মধ্যে কেন ঈশ্বর এত আধ্যাত্মিক ব্যবস্থা জুগিয়েছেন, তার কারণগুলো পৌল এই পদগুলোতে তুলে ধরেছেন, যেগুলো হল আমরা সবাই যেন: ‘বিশ্বাসের ও তত্ত্বজ্ঞানের ঐক্য পর্য্যন্ত অগ্রসর হই,’ “পূর্ণবয়স্ক” হয়ে উঠি এবং ‘খ্রীষ্টের পূর্ণতা’ লাভ করি। একমাত্র তাহলেই আমরা মিথ্যা মতবাদ এবং শিক্ষার দ্বারা আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে শিশুদের মতো অস্থিরমনা হব না। এভাবে আমরা দেখতে পাই যে, খ্রীষ্টীয় পরিপক্বতার দিকে উন্নতি করে চলা এবং “ঈশ্বরের পুত্ত্র বিষয়ক বিশ্বাসের ও তত্ত্বজ্ঞানের ঐক্য” অর্জন করার মধ্যে এক নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। পৌলের পরামর্শে অনেকগুলো বিষয় রয়েছে, যার দিকে আমাদের মনোযোগ দেওয়া উচিত।

৮. বিশ্বাস ও তত্ত্বজ্ঞানে “ঐক্য” অর্জন করতে হলে কীসের প্রয়োজন?

প্রথমত, “ঐক্য” বজায় রাখতে হলে একজন পরিপক্ব খ্রীষ্টানকে বিশ্বাস এবং জ্ঞানের দিক দিয়ে তার সহবিশ্বাসীদের সঙ্গে যতদূর সম্ভব এক হতে ও পুরোপুরি মিল রাখতে হবে। বাইবেলের কোন একটা বিষয়কে বোঝার জন্য তিনি তার ব্যক্তিগত মতামতকে সমর্থন করেন না বা চাপিয়ে দেন না কিংবা নিজস্ব ধারণাকে মনে পুষে রাখেন না। এর বদলে, যিহোবা ঈশ্বর তাঁর পুত্র যীশু খ্রীষ্ট এবং “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাস” এর মাধ্যমে যে সত্য প্রকাশ করেছেন, সেটার ওপর তিনি পুরোপুরি আস্থা রাখেন। খ্রীষ্টীয় প্রকাশনাদি, সভা, অধিবেশন ও সম্মেলনগুলোর মাধ্যমে “উপযুক্ত সময়ে” যে আধ্যাত্মিক খাদ্য জোগানো হচ্ছে, তা নিয়মিত গ্রহণ করে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, বিশ্বাস এবং জ্ঞানে সহ খ্রীষ্টানদের সঙ্গে আমরা “ঐক্য” বজায় রাখছি।—মথি ২৪:৪৫.

৯. ইফিষয়ীদের কাছে লেখা চিঠিতে পৌল যে ‘বিশ্বাস’ শব্দটা ব্যবহার করেছেন তার অর্থ কী, বুঝিয়ে বলুন।

দ্বিতীয়ত, ‘বিশ্বাস’ বলতে প্রত্যেক খ্রীষ্টান আলাদা আলাদাভাবে যা মেনে নেন, তা বোঝায়নি বরং আমরা সকলে যে বিষয়গুলো মেনে নিই সেগুলোকে অর্থাৎ এর ‘প্রশস্ততা, দীর্ঘতা, উচ্চতা ও গভীরতাকে’ বোঝায়। (ইফিষীয় ৩:১৮; ৪:৫; কলসীয় ১:২৩; ২:৭) একজন খ্রীষ্টান যদি শুধু কয়েকটা ‘বিশ্বাসকে’ গ্রহণ করেন বা মেনে নেন, তাহলে কীভাবে বলা যাবে যে তিনি তার সহবিশ্বাসীদের সঙ্গে ঐক্যে আছেন? এর অর্থ হল যে, শুধু বাইবেলের মূল শিক্ষাগুলো অথবা সত্যের অস্পষ্ট কিংবা আংশিক জ্ঞান নিয়েই আমরা সন্তুষ্ট থাকব না। এর বদলে, যিহোবা তাঁর বাক্যকে গভীরভাবে অনুসন্ধান করার জন্য তাঁর সংগঠনের মাধ্যমে যে ব্যবস্থা জুগিয়েছেন, তার সমস্ত কিছু থেকে পুরোপুরি উপকার নেওয়ার জন্য আমাদের আগ্রহী হওয়া উচিত। ঈশ্বরের ইচ্ছা ও উদ্দেশ্য যথাসম্ভব সঠিকভাবে এবং পুরোপুরি বোঝার জন্য আমাদের চেষ্টা করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে বাইবেল এবং বাইবেল-ভিত্তিক প্রকাশনাদি পড়ার জন্য সময় করে নেওয়া, ঈশ্বরের সাহায্য ও নির্দেশনা চেয়ে প্রার্থনা করা, নিয়মিত খ্রীষ্টীয় সভাগুলোতে যোগ দেওয়া এবং রাজ্যের প্রচার ও শিষ্য তৈরির কাজে পুরোপুরি অংশ নেওয়া।—হিতোপদেশ ২:১-৫.

১০. ইফিষীয় ৪:১৩ পদে বলা “যাবৎ আমরা সকলে . . . অগ্রসর না হই” কথাগুলোর মানে কী?

১০ তৃতীয়ত, তিনটে লক্ষ্য সম্বন্ধে বলতে গিয়ে পৌল “যাবৎ আমরা সকলে . . . অগ্রসর না হই” কথাগুলো বলেছেন। “আমরা সকলে” এই অভিব্যক্তি সম্বন্ধে একটা বাইবেল পুস্তিকা বলে যে, এর অর্থ “প্রত্যেকে, একজন একজন করে, আলাদা আলাদাভাবে নয় কিন্তু সবাই একসঙ্গে।” অন্য কথায়, আমাদের প্রত্যেককে পুরো ভ্রাতৃসংঘের সঙ্গে খ্রীষ্টীয় পরিপক্বতা অর্জন করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করা উচিত। দি ইন্টারপ্রিটারস বাইবেল বলে, “অন্যদের থেকে আলাদা হয়ে একা একা আধ্যাত্মিক সিদ্ধির পূর্ণতা লাভ করা সম্ভব নয়, ঠিক যেমন শরীরের একটা অংশ পুরোপুরি বৃদ্ধি পেতে পারে না, যদি না পুরো শরীর এর বৃদ্ধিতে সবসময় সহায়তা করে।” ইফিষীয় খ্রীষ্টানদেরকে পৌল মনে করিয়ে দিয়েছিলেন যে, “সমস্ত পবিত্রগণের সহিত” বিশ্বাসের সম্পূর্ণ পরিধিকে বোঝার জন্য চেষ্টা করা উচিত।—ইফিষীয় ৩:১৮ক.

১১. (ক) আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে উন্নতি করার মানে কী নয়? (খ) উন্নতি করার জন্য আমাদের কী করা দরকার?

১১ পৌলের কথাগুলো থেকে পরিষ্কার বোঝা যায় যে, আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে উন্নতি করার মানে শুধু জ্ঞান এবং বহু বিদ্যা দিয়ে আমাদের মনকে ভরিয়ে তোলাকে বোঝায় না। একজন পরিপক্ব খ্রীষ্টান তার মেধা দিয়ে অন্যদেরকে চমক লাগিয়ে দেন না। বিপরীতে বাইবেল বলে: “ধার্ম্মিকদের পথ প্রভাতীয় জ্যোতির ন্যায়, যাহা মধ্যাহ্ন পর্য্যন্ত উত্তরোত্তর দেদীপ্যমান হয়।” (হিতোপদেশ ৪:১৮) হ্যাঁ, কোন ব্যক্তি নয় কিন্তু “পথ” “উত্তরোত্তর দেদীপ্যমান হয়।” আমরা যদি ঈশ্বরের বাক্যের দিন-দিন উজ্জ্বল হওয়া জ্ঞানকে বোঝার জন্য চেষ্টা করে চলি, যা যিহোবা তাঁর লোকেদেরকে দিয়েছেন, তাহলে আমরা আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে উন্নতি করতে পারব। এই ক্ষেত্রে, চেষ্টা করে চলার মানে হল, সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া এবং তা আমরা সকলে করতে পারি।—গীতসংহিতা ৯৭:১১; ১১৯:১০৫.

“আত্মার ফল” দেখান

১২. আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে উন্নতি করার বিষয়ে আমাদের যে লক্ষ্য, তাতে আত্মার ফল দেখানো কেন জরুরি?

১২ “বিশ্বাসের ও তত্ত্বজ্ঞানের ঐক্য” লাভ করা যেমন জরুরি, তেমনই আমাদের জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে ঈশ্বরের আত্মার ফল উৎপন্ন করাও জরুরি। কেন? কারণ, আমরা দেখেছি যে পরিপক্বতা ভিতরের বা লুকানো কোন বিষয় নয় কিন্তু এমন এক বৈশিষ্ট্য, যা স্পষ্টভাবে দেখা যায় এবং অন্যদের উপকার করে ও গড়ে তোলে। অবশ্য, আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য আমাদের যে লক্ষ্য, তা শুধু ভদ্র আচরণ আয়ত্ত করাকে বোঝায় না। বদলে, আমরা যদি আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে বৃদ্ধি পাই, ঈশ্বরের আত্মার পরিচালনা মেনে নিই, তাহলে আমাদের আচরণ এবং কাজে বিরাট পরিবর্তন দেখা যাবে। প্রেরিত পৌল বলেছিলেন, “তোমরা আত্মার বশে চল, তাহা হইলে মাংসের অভিলাষ পূর্ণ করিবে না।”—গালাতীয় ৫:১৬.

১৩. কোন্‌ পরিবর্তন স্পষ্ট দেখায় যে একজন ব্যক্তি উন্নতি করে চলেছেন?

১৩ পৌল বিভিন্ন ‘মাংসের কার্য্য সকলের’ তালিকা দিয়েছেন, যা “প্রকাশ” পায়। ঈশ্বরের চাহিদাগুলোর গুরুত্ব উপলব্ধি করার আগে, একজন ব্যক্তি হয়তো জগতের মতো জীবনযাপন করতেন এবং পৌল যে বিষয়গুলো উল্লেখ করেছেন তার কিছু কিছু হয়তো তার মধ্যে ছিল যেমন: “বেশ্যাগমন, অশুচিতা, স্বৈরিতা, প্রতিমাপূজা, কুহক, নানা প্রকার শত্রুতা, বিবাদ, ঈর্ষা, রাগ, প্রতিযোগিতা, বিচ্ছিন্নতা, দলভেদ, মাৎসর্য্য, মত্ততা, রঙ্গরস ও তৎসদৃশ অন্য অন্য দোষ।” (গালাতীয় ৫:১৯-২১) কিন্তু, আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে উন্নতি করে তিনি ধীরে ধীরে সেই অবাঞ্ছিত “মাংসের কার্য্য সকল” কাটিয়ে ওঠেন এবং তার জায়গায় “আত্মার ফল” গড়ে তোলেন। বাইরে দিয়ে এই পরিবর্তন স্পষ্ট দেখায় যে, একজন ব্যক্তি আধ্যাত্মিক পরিপক্বতার দিকে উন্নতি করছেন।—গালাতীয় ৫:২২.

১৪. “মাংসের কার্য্য সকল” এবং “আত্মার ফল” এই কথাগুলোকে বুঝিয়ে বলুন।

১৪ “মাংসের কার্য্য সকল” এবং “আত্মার ফল” এই কথাগুলোতে আমাদের মনোযোগ দেওয়া উচিত। “কার্য্য” হচ্ছে একজন ব্যক্তির কৃত কর্মের ফল। অন্য কথায়, পৌল মাংসের কার্য সকলের যে তালিকা দিয়েছেন, তা হয়তো একজন ব্যক্তির জেনেশুনে করা কাজ অথবা অসিদ্ধ মাংসের প্রভাবের ফল। (রোমীয় ১:২৪, ২৮; ৭:২১-২৫) অন্যদিকে, “আত্মার ফল” বলে যে গুণগুলোর তালিকা দেওয়া হয়েছে, তা চরিত্রের বা ব্যক্তিত্বের উন্নতি করার জন্য যে প্রচেষ্টা করা হয়, তার ফলকে বোঝায় না বরং একজন ব্যক্তির ওপর পবিত্র আত্মাকে কাজ করতে দেওয়ায় যে ফল উৎপন্ন হয়, তাকে বোঝায়। একটা গাছকে সঠিকভাবে যত্ন নেওয়া হলে এটা যেমন ফল উৎপাদন করে, ঠিক তেমনই একজন ব্যক্তির জীবনে যখন পবিত্র আত্মা পুরোপুরি কাজ করে তখন তার মধ্যে আত্মার ফল দেখা যায়।—গীতসংহিতা ১:১-৩.

১৫. সমস্ত ‘আত্মার ফলের’ দিকে মনোযোগ দেওয়া কেন জরুরি?

১৫ এখানে আরেকটা বিষয় বিবেচনা করার মতো আর তা হল, ভাল গুণগুলো বোঝানোর জন্য পৌল “ফল” শব্দটা ব্যবহার করেছেন। আমাদের পছন্দ মতো ফল বেছে নেওয়ার জন্য আত্মা বিভিন্ন ফল উৎপন্ন করে না। পৌল যে সমস্ত গুণের কথা বলেছেন যেমন প্রেম, আনন্দ, শান্তি, দীর্ঘসহিষ্ণুতা, মাধুর্য, মঙ্গলভাব, বিশ্বস্ততা, মৃদুতা এবং ইন্দ্রিয়দমন, সবই সমানভাবে জরুরি এবং এগুলো একসঙ্গে নতুন খ্রীষ্টীয় ব্যক্তিত্ব গড়ে তোলে। (ইফিষীয় ৪:২৪; কলসীয় ৩:১০) তাই, আমরা হয়তো আমাদের ব্যক্তিত্বে বা প্রবণতায় এই গুণগুলোর মধ্যে কয়েকটা স্পষ্টভাবে দেখতে পাই কিন্তু পৌল যে ফলগুলোর কথা বলেছেন তার সবগুলোর দিকেই আমাদের মনোযোগ দেওয়া জরুরি। তা করে আমরা আমাদের জীবনে খ্রীষ্টের মতো ব্যক্তিত্ব আরও ভালভাবে দেখাতে পারব।—১ পিতর ২:১২, ২১.

১৬. খ্রীষ্টীয় পরিপক্বতা অর্জনের জন্য আমাদের লক্ষ্য কী আর কীভাবে আমরা সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারি?

১৬ পৌলের আলোচনা থেকে আমরা যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা শিখতে পারি তা হল, খ্রীষ্টীয় পরিপক্বতা অর্জন করতে গিয়ে আমাদের লক্ষ্য, বিশেষ জ্ঞান লাভ করা ও শেখা কিংবা ভাল ব্যক্তিত্ব গড়ে তোলাও নয়। আমাদের লক্ষ্য হবে ঈশ্বরের আত্মাকে আমাদের জীবনে পুরোপুরি কাজ করতে দেওয়া। আমাদের চিন্তাধারা এবং কাজে যত আমরা ঈশ্বরের আত্মার পরিচালনা মেনে নেব আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে আমরা তত পরিপক্ব হব। কিন্তু, কীভাবে আমরা এই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারি? ঈশ্বরের আত্মা যেন আমাদের ওপর কাজ করতে পারে এর জন্য আমাদের হৃদয় ও মনকে খোলা রাখতে হবে। এর জন্য খ্রীষ্টীয় সভাগুলোতে নিয়মিত যোগ দিতে ও উত্তর দিতে হবে। এছাড়াও, আমাদেরকে নিয়মিত ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন ও তা নিয়ে ধ্যান করতে হবে এবং অন্যদের সঙ্গে মেলামেশা করার, কোন কিছু বাছাই করার এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এর নীতিগুলোকে কাজে লাগাতে হবে। আর, এভাবেই আমাদের উন্নতি স্পষ্টভাবে দেখা যাবে।

ঈশ্বরের মহিমার জন্য উন্নতি করুন

১৭. উন্নতির সঙ্গে কীভাবে স্বর্গীয় পিতার মহিমা জড়িত?

১৭ কোন সন্দেহ নেই যে, উন্নতি প্রকাশ পেলে তা আমাদের নয় বরং আমাদের স্বর্গীয় পিতার মহিমা এবং প্রশংসা নিয়ে আসে, যিনি আমাদের আধ্যাত্মিক পরিপক্বতা অর্জনের জন্য সাহায্য করেন। মারা যাওয়ার আগের রাতে যীশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন: “ইহাতেই আমার পিতা মহিমান্বিত হন যে, তোমরা প্রচুর ফলে ফলবান্‌ হও; আর তোমরা আমার শিষ্য হইবে।” (যোহন ১৫:৮) আত্মার ফল এবং প্রচারে তাদের রাজ্যের ফলের মাধ্যমে শিষ্যরা যিহোবার মহিমা নিয়ে এসেছিলেন।—প্রেরিত ১১:৪, ১৮; ১৩:৪৮.

১৮. (ক) আজকে কোন্‌ আনন্দপূর্ণ শস্যছেদনের কাজ হচ্ছে? (খ) এই শস্যছেদন কোন্‌ প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে আসে?

১৮ আজকে সারা পৃথিবীতে তাঁর লোকেদের আধ্যাত্মিক শস্যছেদনের কাজে যিহোবার আশীর্বাদ আছে। বহু বছর ধরে, প্রায় ৩,০০,০০০ জন নতুন ব্যক্তি প্রতি বছর যিহোবার কাছে নিজেদেরকে উৎসর্গ করেছেন এবং জলে বাপ্তিস্ম নিয়ে তাদের উৎসর্গীকরণকে প্রকাশ করেছেন। এটা দেখে আমরা খুশি হই এবং কোন সন্দেহ নেই যে, যিহোবার হৃদয়ও এতে আনন্দিত হয়। (হিতোপদেশ ২৭:১১) কিন্তু, এটা সবসময় আনন্দ এবং যিহোবার প্রশংসা করার উৎস হিসেবে থাকার জন্য এই নতুন ব্যক্তিদের ‘[খ্রীষ্টেই] চলা; তাঁহাতেই বদ্ধমূল ও সংগ্রথিত হইয়া প্রাপ্ত শিক্ষানুসারে বিশ্বাসে দৃঢ়ীভূত হওয়া’ দরকার। (কলসীয় ২:৬, ৭) এটা যিহোবার লোকেদেরকে দুটো দিক দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি করে। একটা হল যে আপনি যদি নতুন বাপ্তাইজিত হন, তাহলে আপনি কি সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে মেনে নিতে রাজি আছেন, যেন “তোমার উন্নতি সকলের প্রত্যক্ষ হয়”? আরেকটা হল, আপনি যদি বেশ কিছু সময় ধরে সত্যে থেকে থাকেন, তাহলে আপনি কি নতুনদের আধ্যাত্মিক মঙ্গলের জন্য তাদের যত্ন নেওয়ার দায়িত্বকে নিজের কাঁধে তুলে নিতে সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে মেনে নেবেন? উভয় ক্ষেত্রেই যে পরিপক্ব হওয়া দরকার, তা একেবারে পরিষ্কার।—ফিলিপীয় ৩:১৬; ইব্রীয় ৬:১.

১৯. আপনি যদি আপনার উন্নতি সকল দেখান, তাহলে আপনি কোন্‌ সুযোগ এবং আশীর্বাদ পাবেন?

১৯ যারা তাদের আধ্যাত্মিক উন্নতি দেখানোর জন্য চেষ্টা করেন, তাদের জন্য অপূর্ব আশীর্বাদ রয়েছে। তীমথিয়কে উন্নতি করার কথা বলার পর পৌল যে উৎসাহজনক কথাগুলো বলেছিলেন, সেগুলো মনে করে দেখুন: “আপনার বিষয়ে ও তোমার শিক্ষার বিষয়ে সাবধান হও, এ সকলে স্থির থাক; কেননা তাহা করিলে তুমি আপনাকে ও যাহারা তোমার কথা শুনে, তাহাদিগকেও পরিত্রাণ করিবে।” (১ তীমথিয় ৪:১৬) অধ্যবসায়ের সঙ্গে আপনার উন্নতি দেখিয়ে আপনিও ঈশ্বরের নামকে গৌরবান্বিত করার এবং তাঁর আশীর্বাদ উপভোগ করার সুযোগ পাবেন।

আপনি কি স্মরণ করতে পারেন?

• কোন্‌ কোন্‌ দিক দিয়ে আধ্যাত্মিক পরিপক্বতা দেখানো যেতে পারে?

• কোন্‌ ধরনের জ্ঞান এবং বোঝার ক্ষমতা পরিপক্বতাকে তুলে ধরে?

• “আত্মার ফল” দেখানো কীভাবে আধ্যাত্মিক উন্নতিকে চিহ্নিত করে?

• পরিপক্ব হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের কোন্‌ প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে মেনে নেওয়া উচিত?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

পাকা অথবা পরিপক্বতা স্পষ্টভাবে দেখা যায়

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

প্রকাশ পাওয়া সত্যের সঙ্গে সঙ্গে চলে আমরা আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে উন্নতি করতে পারি

[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

প্রার্থনা আমাদেরকে “আত্মার ফল” দেখাতে সাহায্য করে