সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনি কি “ন্যায়-অন্যায়কে পৃথক করতে” পারেন?

আপনি কি “ন্যায়-অন্যায়কে পৃথক করতে” পারেন?

আপনি কি “ন্যায়-অন্যায়কে পৃথক করতে” পারেন?

“প্রভুর প্রীতিজনক কি, তাহার পরীক্ষা কর।”ইফিষীয় ৫:১০.

১. আজকে, কোন্‌ দিক দিয়ে জীবন জটিল হতে পারে এবং কেন?

 “হেসদাপ্রভু আমি জানি, মনুষ্যের পথ তাহার বশে নয়, মনুষ্য চলিতে চলিতে আপন পাদবিক্ষেপ স্থির করিতে পারে না।” (যিরমিয় ১০:২৩) এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা যিরমিয় উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন, যা আমাদের দিনের জন্য আরও বেশি অর্থ রাখে। কেন? কারণ, বাইবেলে বলা ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে আমরা ‘বিষম সময়ে’ বাস করছি। (২ তীমথিয় ৩:১) রোজ আমাদের এমন জটিল পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়, যার জন্য আমাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। ছোট বা বড় যা-ই হোক না কেন, এই সিদ্ধান্তগুলো আমাদের শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক মঙ্গলের ওপর বিরাট প্রভাব ফেলতে পারে।

২. বেছে নিতে হয় এমন কোন্‌ বিষয়গুলোকে তুচ্ছ বলে মনে হতে পারে কিন্তু উৎসর্গীকৃত খ্রীষ্টানরা এই বিষয়গুলোকে কীভাবে দেখেন?

রোজকার জীবনে আমাদেরকে এমন কিছু বিষয় বেছে নিতে হয়, যেগুলোকে গতানুগতিক বা তুচ্ছ বলে মনে হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, রোজ আমাদেরকে আমরা কী পরব, কী খাব, কাদের সঙ্গে দেখা করব, এইরকম আরও অনেক বিষয় বেছে নিতে হয়। কোন কিছু চিন্তা না করে বা সামান্য ভেবেই আমরা এই বিষয়গুলো বেছে নিই। কিন্তু, এই বিষয়গুলো কি আসলেই তুচ্ছ করার মতো? আমরা যা পরি ও যেভাবে সাজগোজ করি, যা খাই ও পান করি এবং আমরা যা বলি ও যেভাবে আচরণ করি, তা উৎসর্গীকৃত খ্রীষ্টান হিসেবে আমাদের কাছে গভীর চিন্তার বিষয়, কারণ এগুলো সবসময় দেখায় যে আমরা সর্বমহান যিহোবা ঈশ্বরের দাস। প্রেরিত পৌলের কথাগুলো আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয়: “তোমরা ভোজন, কি পান, কি যাহা কিছু কর, সকলই ঈশ্বরের গৌরবার্থে কর।”—১ করিন্থীয় ১০:৩১; কলসীয় ৪:৬; ১ তীমথিয় ২:৯, ১০.

৩. বেছে নিতে হয় এমন কোন্‌ বিষয়গুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ?

আবার এমন কিছু বিষয়ও বেছে নিতে হয়, যা খুবই জরুরি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একজন ব্যক্তি বিয়ে করবেন নাকি অবিবাহিত থাকবেন এই সিদ্ধান্ত তার জীবনের ওপর গভীর এবং স্থায়ী প্রভাব ফেলে। এটা নিশ্চিত যে, বিয়ের জন্য উপযুক্ত সাথি বাছাই করা অর্থাৎ কারও জীবনসাথি হওয়া ছোটখাটো কোন বিষয় নয়। * (হিতোপদেশ ১৮:২২) এছাড়াও, বন্ধুবান্ধব ও যাদের সঙ্গে আমরা মেলামেশা করি, পড়াশোনায়, কাজের জায়গায় এবং আমোদপ্রমোদের সময়ও আমরা যা বেছে নিই, তা আমাদের আধ্যাত্মিকতা অর্থাৎ আমাদের চির মঙ্গলের ওপর বিরাট এমনকি স্থায়ী প্রভাব ফেলে।—রোমীয় ১৩:১৩, ১৪; ইফিষীয় ৫:৩, ৪.

৪. (ক) কোন্‌ ক্ষমতা থাকা সত্যিই উপকারী? (খ) কোন্‌ প্রশ্নগুলো ভেবে দেখা দরকার?

এই সমস্ত কিছু বাছাই করার জন্য কোন্‌টা ন্যায় ও কোন্‌টা অন্যায় এবং কোন্‌টাকে দেখতে ন্যায় বলে মনে হয় আর কোন্‌টা আসলেই ন্যায়, তা পৃথক করার ক্ষমতা থাকা আমাদের জন্য সত্যিই উপকারী। বাইবেল সতর্ক করে, “একটী পথ আছে, যাহা মানুষের দৃষ্টিতে সরল; কিন্তু তাহার পরিণাম মৃত্যুর পথ।” (হিতোপদেশ ১৪:১২) তাই, নিজেদেরকে আমরা জিজ্ঞেস করতে পারি: ‘কীভাবে আমরা ন্যায়-অন্যায়কে পৃথক করার ক্ষমতা গড়ে তুলতে পারি? সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আমরা কোথায় প্রয়োজনীয় নির্দেশনা পেতে পারি? এই বিষয়ে অতীতের এবং বর্তমানের লোকেরা কী করেছে আর এর পরিণতি কী হয়েছে?’

জগতের “দর্শনবিদ্যা ও অনর্থক প্রতারণা”

৫. প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানরা কোন্‌ ধরনের জগতে বাস করতেন?

প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানরা এমন এক জগতে বাস করতেন, যেখানে গ্রিক অধ্যুষিত রোমীয় জগতের মূল্যবোধ ও আদর্শগুলোর প্রাধান্য ছিল। একদিকে ছিল রোমীয়দের আরাম-আয়েশি ও বিলাসী জীবনযাপন, যা দেখে অনেকে হিংসে করত। অন্যদিকে, তখনকার দিনের বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা শুধু প্লেটো এবং আ্যরিস্টটলের দার্শনিক মতবাদ দ্বারাই নয় সেইসঙ্গে ইপিকুরেয় ও স্তোয়িকীয়দের মতবাদ দ্বারাও পরিপূর্ণ ছিলেন। প্রেরিত পৌল যখন তার দ্বিতীয় মিশনারি যাত্রার সময় এথেন্সে আসেন, তখন তিনি ইপিকুরেয় এবং স্তোয়িকীয় দার্শনিকদের বিরোধিতার মুখোমুখি হয়েছিলেন, যারা ‘এ বাচাল’ অর্থাৎ পৌলের থেকে নিজেদেরকে বড় মনে করেছিল।—প্রেরিত ১৭:১৮.

৬. (ক) প্রথম শতাব্দীর কিছু খ্রীষ্টান কী করার জন্য আকৃষ্ট হয়েছিল? (খ) কিন্তু, পৌল কোন্‌ সাবধানবাণী দিয়েছিলেন?

তাই, সহজেই বোঝা যাচ্ছে যে প্রথম শতাব্দীর কিছু খ্রীষ্টানরা কেন তাদের চারপাশের লোকেদের জমকালো অবস্থা ও জীবনযাপন দেখে আকৃষ্ট হয়েছিল। (২ তীমথিয় ৪:১০) যারা সেই বিধিব্যবস্থায় গা ভাসিয়ে দিয়েছিল, তারা অনেক উপকার ও সুযোগসুবিধা পাচ্ছে বলে মনে হয়েছিল এবং তারা যা বেছে নিয়েছিল সেটাকে বিচক্ষণ বলে মনে করেছিল। মনে হয়েছিল যে সেই জগৎ তাদেরকে এমন মূল্যবান কিছু দিচ্ছে, যা কিনা উৎসর্গীকৃত খ্রীষ্টীয় জীবনযাপন দিতে পারে না। কিন্তু, প্রেরিত পৌল সাবধান করেছিলেন: “দেখিও, দর্শনবিদ্যা ও অনর্থক প্রতারণা দ্বারা কেহ যেন তোমাদিগকে বন্দি করিয়া লইয়া না যায়; তাহা মনুষ্যদের পরম্পরাগত শিক্ষার অনুরূপ, জগতের অক্ষরমালার অনুরূপ, খ্রীষ্টের অনুরূপ নয়।” (কলসীয় ২:৮) কেন পৌল এই কথাগুলো বলেছিলেন?

৭. জগতের প্রজ্ঞার কোন্‌ মূল্য রয়েছে?

জগতের প্রতি যারা আকৃষ্ট হয়েছিল তাদের চিন্তাধারার পিছনে যে বিপদ লুকিয়ে ছিল, তা উপলব্ধি করে পৌল এই সাবধানবাণী দিয়েছিলেন। তিনি যে “দর্শনবিদ্যা ও অনর্থক প্রতারণা” শব্দ ব্যবহার করেছেন তার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। “দর্শনবিদ্যা” শব্দের আক্ষরিক মানে হল, “প্রজ্ঞাকে ভালবাসা ও এর অনুসন্ধান করা।” এর অর্থ অনুযায়ী এটা হয়তো উপকারী হতে পারে। আর বাইবেল, বিশেষ করে হিতোপদেশের বই সঠিক জ্ঞান ও প্রজ্ঞার অনুসন্ধান করার জন্য উৎসাহ দেয়। (হিতোপদেশ ১:১-৭; ৩:১৩-১৮) কিন্তু, পৌল ‘দর্শনবিদ্যার’ সঙ্গে “অনর্থক প্রতারণা” যুক্ত করেছেন। অন্য কথায়, জগৎ যে প্রজ্ঞার কথা বলে সেটাকে পৌল অনর্থক এবং প্রতারণা হিসেবে দেখেছেন। ঠিক যেমন একটা ফোলানো বেলুনকে বাইরে থেকে দেখতে শক্ত বলে মনে হয় কিন্তু আসলে এর ভিতরে কোন সারবস্তু থাকে না। তাই, কোন্‌টা ন্যায় আর কোন্‌টা অন্যায় সে ব্যাপারে কারও পছন্দের ওপর নির্ভর করা, জগতের ভিত্তিহীন ‘দর্শনবিদ্যা ও অনর্থক প্রতারণার’ মতো অসার ও এমনকি ধ্বংসাত্মক।

যারা “মন্দকে ভাল, আর ভালকে মন্দ” বলে

৮. (ক) পরামর্শের জন্য লোকেরা কাদের কাছে যান? (খ) তাদেরকে কোন্‌ ধরনের পরামর্শ দেওয়া হয়?

আমাদের পরিস্থিতিও প্রথম শতাব্দীর থেকে আলাদা নয়। মানুষের কর্মপ্রচেষ্টার প্রায় সমস্ত ক্ষেত্রেই পরামর্শদাতার অভাব নেই। বিয়ে এবং পরিবারের উপদেষ্টা, সংবাদ পত্রের লেখক, স্বখ্যাত চিকিৎসক, জ্যোতিষী, প্রেতচর্চক এবং এইরকম আরও অনেকে, পয়সার বিনিময়ে পরামর্শ দেওয়ার জন্য একেবারে তৈরি। কিন্তু, তারা কোন্‌ ধরনের পরামর্শ দিয়ে থাকে? বেশির ভাগ সময়ই তারা বাইবেলের নৈতিক মানগুলো সম্বন্ধে না বলে এই জগতের নৈতিকতা সম্বন্ধে বলে থাকে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সরকারের “একই লিঙ্গের ব্যক্তিদের মধ্যে বিয়ে” রেজিস্ট্রি অনুমোদন না করার বিষয়ে কানাডার প্রধান খবরের কাগজ দ্যা গ্লোবাল আ্যন্ড মেইল বলে: “এই ২০০০ সালে, একে অন্যকে ভালবাসে এবং একান্তভাবে চায়, এমন দম্পতি একই লিঙ্গের বলে যে তাদের আকুল ইচ্ছাকে মেনে নেওয়া হবে না, তা একেবারে অযৌক্তিক।” আজকের প্রবণতা হল সহ্য করা, কোন কিছু বিচার করা নয়। সবকিছু সহজেই মেনে নেওয়া হয়; তাই ন্যায়-অন্যায় বোঝার নির্দিষ্ট কোন মান নেই।—গীতসংহিতা ১০:৩, ৪.

৯. সমাজে সম্মান করা হয় এমন ব্যক্তিরা বেশির ভাগ সময়ই কী করেন?

অন্যেরা সিন্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সামাজিক এবং আর্থিক দিক দিয়ে সফল অর্থাৎ ধনী এবং নামিদামি ব্যক্তিদেরকে আদর্শ হিসেবে দেখে। যদিও ধনী এবং নামিদামি ব্যক্তিদেরকে আজকের সমাজে অনেক সম্মান করা হয় কিন্তু বেশির ভাগ সময়ই তারা সততা এবং বিশ্বাসের মতো সদ্‌গুণের কথা শুধু মুখেই বলেন, মেনে চলেন না। ক্ষমতা এবং জনপ্রিয়তার পিছনে ছুটতে গিয়ে নৈতিক মানগুলোকে অবহেলা ও সেগুলোকে তুচ্ছ করতেও অনেকের বিবেকে বাধে না। খ্যাতি এবং জনপ্রিয়তা অর্জনের জন্য কেউ কেউ প্রচলিত মূল্যবোধ ও মানগুলো নিয়ে মাথা ঘামায় না এবং উদ্ভট ও জঘন্য আচরণ করেন। এর ফলে শুধু লাভের চিন্তা করে, এমন এক প্রশ্রয়ী সমাজ গড়ে উঠেছে যে সমাজের নীতিবাক্য হচ্ছে, “সবকিছুই চলে।” তাই, যখন ন্যায়-অন্যায়ের বিষয়টা আসে, তখন লোকেরা দ্বিধার মধ্যে পড়ে যায় বলে এবং নিজের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলে বলে কি অবাক হওয়ার কিছু আছে?—লূক ৬:৩৯.

১০. ভাল ও মন্দের বিষয়ে যিশাইয়ের কথাগুলো কীভাবে সত্য প্রমাণিত হয়েছে?

১০ ভুল নির্দেশনার ওপর নির্ভর করে বোকার মতো যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তার দুঃখজনক পরিণতি আমাদের চারপাশে দেখা যায় যেমন, বিয়ে ও পরিবারের মধ্যে ভাঙন, নেশাকর ওষুধ ও মদের অপব্যবহার, উচ্ছৃঙ্খল যুবকদের দৌরাত্ম্য, বাছবিচারহীন যৌনতা এবং বিভিন্ন যৌন রোগ হল এর মাত্র কয়েকটা উদাহরণ। সত্যিই, ন্যায়-অন্যায়ের ক্ষেত্রে লোকেরা যখন সমস্ত মানদণ্ড বা নীতিগুলো প্রত্যাখ্যান করে, তখন কীভাবে আমরা এর চেয়ে ভাল পরিণতি আশা করতে পারি? (রোমীয় ১:২৮-৩২) এটা ঠিক ভাববাদী যিশাইয়ের বলা ঘোষণার মতো: “ধিক্‌ তাহাদিগকে, যাহারা মন্দকে ভাল, আর ভালকে মন্দ বলে, আলোকে আঁধার, ও আঁধারকে আলো বলিয়া ধরে, মিষ্টকে তিক্ত, আর তিক্তকে মিষ্ট মনে করে! ধিক্‌ তাহাদিগকে, যাহারা আপন আপন চক্ষে জ্ঞানবান, আপন আপন দৃষ্টিতে বুদ্ধিমান!”—যিশাইয় ৫:২০, ২১.

১১. কোন্‌টা ন্যায় আর কোন্‌টা অন্যায়, তা ঠিক করার বিষয়টা যখন আসে, তখন নিজের ওপর নির্ভর করা কেন বুদ্ধির কাজ নয়?

১১ প্রাচীনকালে যে যিহুদিরা “আপন চক্ষে জ্ঞানবান” হয়েছিল, যিহোবা তাদের কাছ থেকে নিকাশ নিয়েছিলেন আর এটা ন্যায়-অন্যায়কে ঠিক করার জন্য আমাদের নিজের ওপর নির্ভর করা এড়িয়ে চলাকে আরও বেশি জরুরি করে তোলে। আজকে অনেকে এই ধারণার সঙ্গে একমত যে, “তোমার মন যা বলে তা-ই শোন” বা “তুমি যেটাকে ভাল মনে কর, সেটাই কর।” এইরকম মনে করা কি বুদ্ধির কাজ? বাইবেল অনুসারে এইরকম মনে করা ঠিক নয়, যা পরিষ্কার করে বলে: “অন্তঃকরণ সর্ব্বাপেক্ষা বঞ্চক, তাহার রোগ অপ্রতিকার্য্য, কে তাহা জানিতে পারে?” (যিরমিয় ১৭:৯) সিদ্ধান্ত নেওয়ার বেলায় আপনি কি এমন একজন ব্যক্তির ওপর নির্ভর করবেন, যিনি বঞ্চক এবং হতাশায় ভোগেন? কখনোই না। বরং এইধরনের ব্যক্তি যা বলবে আপনি হয়তো তার বিপরীত কাজ করতে চাইবেন। তাই, বাইবেল আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয়: “যে নিজ হৃদয়কে বিশ্বাস করে, সে হীনবুদ্ধি; কিন্তু যে প্রজ্ঞা-পথে চলে, সে রক্ষা পাইবে।”—হিতোপদেশ ৩:৫-৭; ২৮:২৬.

ঈশ্বরের কাছে যা গ্রহণযোগ্য তা-ই শেখা

১২. কেন আমাদেরকে “ঈশ্বরের ইচ্ছা” পরীক্ষা করে দেখতে হবে?

১২ যখন ন্যায়-অন্যায়ের বিষয়টা আসে, তখন যেহেতু জগতের প্রজ্ঞা বা আমাদের নিজেদের ওপর নির্ভর করা উচিত নয়, তাহলে আমরা কী করব? প্রেরিত পৌলের এই স্পষ্ট পরামর্শ লক্ষ্য করুন: “এই যুগের অনুরূপ হইও না, কিন্তু মনের নূতনীকরণ দ্বারা স্বরূপান্তরিত হও; যেন তোমরা পরীক্ষা করিয়া জানিতে পার, ঈশ্বরের ইচ্ছা কি, যাহা উত্তম ও প্রীতিজনক ও সিদ্ধ।” (রোমীয় ১২:২) কেন আমাদেরকে ঈশ্বরের ইচ্ছা পরীক্ষা করে দেখতে হবে? এই ব্যাপারে বাইবেলের মধ্যে যিহোবা আমাদেরকে সরাসরি কিন্তু জোরালো কারণ জানিয়ে দিয়েছেন: “ভূতল হইতে আকাশমণ্ডল যত উচ্চ, তোমাদের পথ হইতে আমার পথ, ও তোমাদের সঙ্কল্প হইতে আমার সঙ্কল্প তত উচ্চ।” (যিশাইয় ৫৫:৯) তাই, লোকেরা যা ঠিক মনে করে বা যেটাকে ভাল বলে, তার ওপর নির্ভর করার চেয়ে বরং আমাদেরকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে: “প্রভুর প্রীতিজনক কি, তাহার পরীক্ষা কর।”—ইফিষীয় ৫:১০.

১৩. যোহন ১৭:৩ পদে বলা যীশুর কথাগুলো কীভাবে জোর দেয় যে ঈশ্বরের প্রীতিজনক কী, তা জানা জরুরি?

১৩ এই প্রয়োজনের ওপর জোর দিয়ে যীশু খ্রীষ্ট বলেছিলেন: “আর ইহাই অনন্ত জীবন যে, তাহারা তোমাকে, একমাত্র সত্যময় ঈশ্বরকে, এবং তুমি যাঁহাকে পাঠাইয়াছ, তাঁহাকে, যীশু খ্রীষ্টকে, জানিতে পায়।” (যোহন ১৭:৩) মূল গ্রিক ভাষায় “জানিতে পায়” কথাগুলোর গভীর অর্থ রয়েছে। ভাইনের এক্সপজিটরি ডিকশনারি অনুসারে এর অর্থ “যে ব্যক্তি জানবে এবং যাকে জানতে হবে তাদের মধ্যে সম্পর্ককে বোঝায়; এই ক্ষেত্রে সে যা জানতে পায় তা ও সেইসঙ্গে তাদের প্রতিষ্ঠিত সম্পর্কও খুবই মূল্যবান এবং গুরুত্বপূর্ণ।” কারও সঙ্গে সম্পর্ক থাকার মানে শুধু সেই ব্যক্তি কে বা তার নাম কী, সেটা জানার চেয়ে আরও বেশি কিছুকে বোঝায়। এর সঙ্গে জড়িত তিনি কী পছন্দ করেন ও কী পছন্দ করেন না, তার নীতি ও মানগুলো জানা এবং সেগুলোকে সম্মান করা।—১ যোহন ২:৩; ৪:৮.

আমাদের জ্ঞানেন্দ্রিয় সকল প্রশিক্ষিত করা

১৪. আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে শিশু এবং পরিপক্ব লোকেদের মধ্যে পৌল কোন্‌ গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য তুলে ধরেছেন?

১৪ কীভাবে আমরা ন্যায়-অন্যায়কে পৃথক করার ক্ষমতা লাভ করতে পারি? প্রথম শতাব্দীর ইব্রীয় খ্রীষ্টানদের উদ্দেশে বলা পৌলের কথাগুলো এর উত্তর দেয়। তিনি লিখেছিলেন: “যে দুগ্ধপোষ্য, সে ত ধার্ম্মিকতার বাক্যে অভ্যস্ত নয়; কারণ সে শিশু। কিন্তু কঠিন খাদ্য সেই সিদ্ধবয়স্কদেরই জন্য, যাহাদের জ্ঞানেন্দ্রিয় সকল অভ্যাস প্রযুক্ত সদসৎ বিষয়ের বিচারণে [“ন্যায়-অন্যায়কে পৃথক করতে,” NW] পটু হইয়াছে।” এখানে পৌল “দুগ্ধপোষ্য” অর্থাৎ আগের পদে বলা “ঈশ্বরীয় বচনকলাপের আদিম কথার অক্ষরমালার” সঙ্গে ‘সিদ্ধবয়স্কদের’ ‘কঠিন খাদ্যের’ তুলনা করেছেন, যাদের ‘জ্ঞানেন্দ্রিয় সকল অভ্যাস প্রযুক্ত ন্যায়-অন্যায়কে পৃথক করিতে পটু হইয়াছে।’—ইব্রীয় ৫:১২-১৪.

১৫. ঈশ্বরের সঠিক জ্ঞান লাভ করার জন্য কেন কঠোর চেষ্টার প্রয়োজন?

১৫ এর অর্থ হল, প্রথমে আমাদেরকে ঈশ্বরের বাক্য বাইবেলে দেওয়া তাঁর মানগুলো সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞান লাভ করার জন্য কঠোর চেষ্টা করতে হবে। আমাদের কী করতে হবে বা কী করতে হবে না, সেই বিষয়ে আমরা সেখানে কোন তালিকা খুঁজি না। আর বাইবেল এইরকম কোন বই নয়। বদলে, পৌল বলেছিলেন: “ঈশ্বর-নিশ্বসিত প্রত্যেক শাস্ত্রলিপি আবার শিক্ষার, অনুযোগের, সংশোধনের, ধার্ম্মিকতা সম্বন্ধীয় শাসনের নিমিত্ত উপকারী, যেন ঈশ্বরের লোক পরিপক্ব, সমস্ত সৎকর্ম্মের জন্য সুসজ্জীভূত হয়।” (২ তীমথিয় ৩:১৬, ১৭) সেই শিক্ষা, অনুযোগ এবং সংশোধন থেকে উপকার পাওয়ার জন্য অবশ্যই আমাদের মন ও চিন্তাশক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। এর জন্য চেষ্টার প্রয়োজন কিন্তু এর ফল হয় উত্তম অর্থাৎ আমরা “পরিপক্ক, সমস্ত সৎকর্ম্মের জন্য সুসজ্জীভূত” হই।—হিতোপদেশ ২:৩-৬.

১৬. একজনের জ্ঞানেন্দ্রিয় সকল পটু করার মানে কী?

১৬ এরপর পৌল বলেছিলেন যে পরিপক্ব লোকেদের ‘জ্ঞানেন্দ্রিয় সকল অভ্যাস প্রযুক্ত ন্যায়-অন্যায়কে পৃথক করিতে পটু হইয়াছে।’ এখানেই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা রয়েছে। “জ্ঞানেন্দ্রিয় সকল . . . পটু” করার আক্ষরিক মানে হল, “(শরীরচর্চাকারীর মতো) জ্ঞানেন্দ্রিয়গুলোকে প্রশিক্ষণ দেওয়া।” (কিংডম ইন্টারলিনিয়ার ট্রান্সলেসন) একজন অভিজ্ঞ ক্রীড়াবিদ বাছাই করা বিভিন্ন যন্ত্রপাতি যেমন, রিং বা ভারসাম্য বিম দিয়ে যে দ্রুত কৌশল দেখাতে পারেন, তা দেখে মনে হয় যে অভিকর্ষের আইন বা অন্যান্য প্রাকৃতিক নিয়ম তার কাছে কিছুই নয়। পুরো শরীরের ওপর সবসময় তার নিয়ন্ত্রণ থাকে এবং কী করতে হবে, তা প্রায়ই তিনি সহজাতভাবে বুঝতে পারেন আর এই কারণেই তিনি তার নৈপুণ্য সফলতার সঙ্গে সম্পূর্ণ করতে পারেন। এই সমস্ত কিছু কঠোর প্রশিক্ষণ এবং একটানা অনুশীলনের জন্য সম্ভব হয়।

১৭. কোন্‌ অর্থে আমাদেরকে শরীরচর্চাকারীদের মতো হতে হবে?

১৭ আধ্যাত্মিক অর্থে বলতে গেলে শরীরচর্চাকারীর মতো আমাদেরও প্রশিক্ষিত হতে হবে, যদি আমরা নিশ্চিত হতে চাই যে আমরা যে সিদ্ধান্ত নিই এবং যা বাছাই করি, তা সবসময় ঠিক। আমাদের ইন্দ্রিয় এবং শরীরের ওপর সবসময় পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে। (মথি ৫:২৯, ৩০; কলসীয় ৩:৫-১০) উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, অনৈতিক বিষয়গুলো না দেখার জন্য আপনি কি আপনার চোখকে এবং নোংরা গানবাজনা বা কথাবার্তা না শোনার জন্য আপনি কি আপনার কানকে শাসন করেন? এটা ঠিক যে, এইধরনের নোংরা বিষয়গুলো আমাদের চারপাশে রয়েছে। কিন্তু, তারপরও সেগুলোকে আমাদের হৃদয়ে ও মনে জায়গা দেব কী দেব না, এটা সম্পূর্ণ আমাদের ওপর নির্ভর করে। আমরা গীতরচককে অনুসরণ করতে পারি যিনি বলেছিলেন: “আমি কোন জঘন্য পদার্থ চক্ষের সম্মুখে রাখিব না, আমি বিপথগামীদের ক্রিয়া ঘৃণা করি, তাহা আমাতে লিপ্ত হইবে না। . . . মিথ্যাবাদী আমার চক্ষুর্গোচরে স্থির থাকিবে না।”—গীতসংহিতা ১০১:৩, ৭.

অভ্যাস প্রযুক্ত আপনার জ্ঞানেন্দ্রিয় সকল প্রশিক্ষিত করুন

১৮. একজনের জ্ঞানেন্দ্রিয়গুলোকে প্রশিক্ষিত করার জন্য পৌল যে “অভ্যাস” কথাটা ব্যবহার করেছেন, তার অর্থ কী?

১৮ মনে রাখবেন যে, “অভ্যাস” করার মাধ্যমে আমরা আমাদের জ্ঞানেন্দ্রিয়গুলোকে ন্যায়-অন্যায়কে পৃথক করার জন্য প্রশিক্ষিত করতে পারি। অন্য কথায়, যখনই সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তখন বাইবেলের কোন্‌ নীতিগুলো জড়িত এবং সেগুলো কীভাবে কাজে লাগানো যায়, তা বোঝার জন্য আমাদেরকে মানসিক ক্ষমতা ব্যবহার করতে শিখতে হবে। “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাস” এর জোগানো বাইবেলের প্রকাশনাগুলো অনুসন্ধান করার জন্য অভ্যাস গড়ে তুলুন। (মথি ২৪:৪৫) পরিপক্ব খ্রীষ্টানদের কাছেও আমরা সাহায্য চাইতে পারি। এছাড়াও, ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করার জন্য ব্যক্তিগতভাবে চেষ্টা ও সেইসঙ্গে যিহোবার নির্দেশনা ও আত্মা চেয়ে তাঁর কাছে প্রার্থনা করলে, তা পরিশেষে আমাদের জন্য প্রচুর ফল নিয়ে আসবে।—ইফিষীয় ৩:১৪-১৯.

১৯. আমরা যদি সবসময় আমাদের জ্ঞানেন্দ্রিয়গুলোকে প্রশিক্ষিত করি, তাহলে কোন্‌ কোন্‌ আশীর্বাদ পাব?

১৯ আমাদের জ্ঞানেন্দ্রিয়গুলোকে প্রশিক্ষিত করে চলার উদ্দেশ্য হল, যেন “আমরা আর বালক না থাকি, মনুষ্যদের ঠকামিতে, ধূর্ত্ততায়, ভ্রান্তির চাতুরীক্রমে তরঙ্গাহত এবং যে সে শিক্ষাবায়ুতে ইতস্ততঃ পরিচালিত না হই।” (ইফিষীয় ৪:১৪) এর বদলে, ঈশ্বর যেভাবে চান সেই জ্ঞান এবং বোঝার ক্ষমতার ওপর নির্ভর করে আমরা বিজ্ঞের সঙ্গে ছোট বা বড় সিদ্ধান্ত নিতে পারব আর সেটা আমাদের জন্য উপকারী হবে, আমাদের সহ উপাসকদের গড়ে তুলবে এবং সর্বোপরি তা আমাদের স্বর্গীয় পিতাকে আনন্দিত করবে। (হিতোপদেশ ২৭:১১) এই বিষম সময়ে তা কত বড় আশীর্বাদ এবং সুরক্ষা!

[পাদটীকা]

^ ডা. থমাজ হোমজ এবং রিচার্ড রে মানুষের জীবনের ৪০টারও বেশি সবচেয়ে দুঃখজনক অভিজ্ঞতা নিয়ে যে তালিকা রচনা করেছেন তার মধ্যে সঙ্গীর মৃত্যু, বিবাহবিচ্ছেদ এবং স্বামী বা স্ত্রীর আলাদা হয়ে যাওয়া হচ্ছে প্রথম তিনটে বিষয়। আর বিয়ে করা হচ্ছে সপ্তম বিষয়।

আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?

• সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কোন্‌ ক্ষমতার প্রয়োজন?

• কোন্‌টা ন্যায় এবং কোন্‌টা অন্যায় সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় নামিদামি ব্যক্তি বা নিজের বিচার-বুদ্ধির ওপর নির্ভর করা কেন বুদ্ধির কাজ নয়?

• সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় ঈশ্বরের প্রীতিজনক কী, সেই বিষয়ে কেন আমাদেরকে নিশ্চিত হতে হবে আর কীভাবে আমরা তা করতে পারি?

• ‘আমাদের জ্ঞানেন্দ্রিয় সকল পটু’ করার অর্থ কী?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

নির্দেশনার জন্য ধনী এবং নামিদামি লোকেদের কাছে যাওয়া অসার

[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]

একজন শরীরচর্চাকারীর মতো আমাদেরও জ্ঞানেন্দ্রিয়গুলো এবং শরীরের ওপর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে