সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অব্রাহামের মতো বিশ্বাস রাখুন!

অব্রাহামের মতো বিশ্বাস রাখুন!

অব্রাহামের মতো বিশ্বাস রাখুন!

“যাহারা বিশ্বাসাবলম্বী, তাহারাই অব্রাহামের সন্তান।”গালাতীয় ৩:৭.

১. কনানে অব্রাম কীভাবে এক নতুন পরীক্ষার মোকাবিলা করেছিলেন?

 অব্রাম, যিহোবার আদেশের বাধ্য হয়ে ঊর শহরের আরাম-আয়েশের জীবন ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। পরের কয়েক বছর তিনি যে অসুবিধাগুলোর মুখোমুখি হয়েছিলেন, সেগুলো তাকে মিশরে তিনি যে বিশ্বাসের পরীক্ষার মুখোমুখি হবেন সেইজন্য তৈরি করেছিল। বাইবেলের বিবরণ বলে: “আর দেশে দুর্ভিক্ষ হইল।” এই পরিস্থিতিতে অব্রাম কত সহজেই বিরক্ত হয়ে যেতে পারতেন! তা না হয়ে, তার পরিবারের ভরণপোষণের জন্য তিনি বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। “অব্রাম মিসরে প্রবাস করিতে যাত্রা করিলেন; কেননা [কনান] দেশে ভারী দুর্ভিক্ষ হইয়াছিল।” আর অব্রামের বড় পরিবারকে মিশরের লোকেরা সহজেই দেখতে পাবে। যিহোবা কি তাঁর সমস্ত প্রতিজ্ঞা রাখবেন ও ক্ষয়ক্ষতি থেকে অব্রামকে রক্ষা করবেন?—আদিপুস্তক ১২:১০; যাত্রাপুস্তক ১৬:২, ৩.

২, ৩. (ক) কেন অব্রাম তার স্ত্রীর প্রকৃত পরিচয় লুকিয়েছিলেন? (খ) পরিস্থিতি অনুযায়ী অব্রাম তার স্ত্রীর সঙ্গে কেমন ব্যবহার করেছিলেন?

আদিপুস্তক ১২:১১-১৩ পদে আমরা পড়ি: “অব্রাম যখন মিসরে প্রবেশ করিতে উদ্যত হন, তখন আপন স্ত্রী সারীকে কহিলেন, দেখ, আমি জানি, তুমি দেখিতে সুন্দরী; এ কারণ মিস্রীয়েরা যখন তোমাকে দেখিবে, তখন তুমি আমার স্ত্রী বলিয়া আমাকে বধ করিবে, আর তোমাকে জীবিত রাখিবে। বিনয় করি, এই কথা বলিও যে, তুমি আমার ভগিনী; যেন তোমার অনুরোধে আমার মঙ্গল হয়, ও তোমাহেতু আমার প্রাণ বাঁচে।” সারীর বয়স তখন ৬৫ বছর হলেও তিনি নজরকাড়া সুন্দরী ছিলেন। এই বিষয়টা অব্রামের জীবনের জন্য ঝুঁকিস্বরূপ ছিল। * (আদিপুস্তক ১২:৪, ৫; ১৭:১৭) এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হল, যিহোবার উদ্দেশ্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিষয়গুলো ঝুঁকির মধ্যে ছিল কারণ ঈশ্বর বলেছিলেন যে, অব্রামের বংশের মাধ্যমে তিনি পৃথিবীর সমস্ত জাতিকে আশীর্বাদ করবেন। (আদিপুস্তক ১২:২, ৩, ৭) যেহেতু তখন পর্যন্ত অব্রামের কোন সন্তান হয়নি, তাই তার বেঁচে থাকাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

অব্রাম ও তার স্ত্রী একটু কৌশলী হবেন বলে আগেই একমত হয়েছিলেন অর্থাৎ অব্রাম তার স্ত্রীকে বোন বলে পরিচয় দেবেন। লক্ষ্য করে দেখুন যে, যদিও তিনি কুলপতি ছিলেন কিন্তু তবুও তিনি অন্যায়ভাবে তার অধিকার খাটাননি বরং তার কাছ থেকে নম্রভাবে সহযোগিতা ও সমর্থন চেয়েছিলেন। (আদিপুস্তক ১২:১১-১৩; ২০:১৩) এটা করে অব্রাম স্বামীদের জন্য এক সুন্দর উদাহরণ রেখেছেন, যেন তারা প্রেমের সঙ্গে তাদের মস্তকপদকে কাজে লাগান এবং সারী তার স্বামীর বশীভূত হয়ে আজকে স্ত্রীদের জন্য এক চমৎকার উদাহরণ রেখেছেন।—ইফিষীয় ৫:২৩-২৮; কলসীয় ৪:৬.

৪. আজকে ঈশ্বরের বিশ্বস্ত দাসদের কী করা উচিত যখন তাদের ভাইদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে থাকে?

সারী নিজেকে অব্রামের বোন বলতে পারতেন কারণ তিনি সত্যিসত্যিই তার সৎবোন ছিলেন। (আদিপুস্তক ২০:১২) এছাড়াও, এই সমস্ত তথ্য জানার অধিকার নেই এমন লোকেদের কাছে তা বলতে অব্রাম বাধ্য ছিলেন না। (মথি ৭:৬) আধুনিক সময়ে ঈশ্বরের বিশ্বস্ত দাসেরা সৎ থাকার জন্য বাইবেলের আদেশের বাধ্য হন। (ইব্রীয় ১৩:১৮) উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আদালতে শপথ নিয়ে তারা কখনও মিথ্যা কথা বলবেন না। কিন্তু, তাড়না বা গৃহযুদ্ধের সময় যখন তাদের ভাইদের জীবন দৈহিক বা আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে ঝুঁকির মধ্যে থাকে, তখন তারা যীশুর এই আদেশকে মনে রাখেন, “সর্পের ন্যায় সতর্ক ও কপোতের ন্যায় অমায়িক হও।”—মথি ১০:১৬. ১৯৯৬ সালের ১লা নভেম্বর প্রহরীদুর্গ এর ১৮ পৃষ্ঠার ১৯ অনুচ্ছেদ দেখুন।

৫. কেন সারী অব্রামের অনুরোধ রেখেছিলেন?

অব্রামের অনুরোধে সারী কী করেছিলেন? প্রেরিত পিতর সারীর মতো নারীদের সম্বন্ধে বলেন যে, তারা “ঈশ্বরে প্রত্যাশা” রাখিতেন। তাই, এর সঙ্গে যে আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো জড়িত ছিল তা সারী উপলব্ধি করেছিলেন। এছাড়াও, তিনি তার স্বামীকে ভালবাসতেন ও তাকে সম্মান করতেন। এভাবে সারী ‘আপন স্বামীর বশীভূত হইয়াছিলেন’ এবং তিনি যে বিবাহিত তা গোপন করেছিলেন। (১ পিতর ৩:৫) অবশ্য, এইরকম করে তিনিও বিপদের মধ্যে ছিলেন। “পরে অব্রাম মিসরে প্রবেশ করিলে মিস্রীয়েরা ঐ স্ত্রীকে পরমসুন্দরী দেখিল। আর ফরৌণের অধ্যক্ষগণ তাঁহাকে দেখিয়া ফরৌণের সাক্ষাতে তাঁহার প্রশংসা করিলেন; তাঁহাতে সেই স্ত্রী ফরৌণের বাটীতে নীত হইলেন।”—আদিপুস্তক ১২:১৪, ১৫.

যিহোবা উদ্ধার করেন

৬, ৭. অব্রাম ও সারী কোন্‌ কঠিন অবস্থায় পড়েছিলেন আর যিহোবা কীভাবে সারীকে উদ্ধার করেছিলেন?

অব্রাম ও সারীর জন্য তা কত কঠিনই না ছিল! সারী প্রায় ধর্ষিত হতে যাচ্ছিলেন বলে মনে হয়। এছাড়াও, সারী যে আসলে বিবাহিত তা না জেনেই ফরৌণ অব্রামকে প্রচুর উপহার দিয়েছিলেন, এর ফলে “অব্রাম মেষ, গোরু, গর্দ্দভ এবং দাস দাসী, গর্দ্দভী ও উষ্ট্র পাইলেন।” * (আদিপুস্তক ১২:১৬) এই উপহারগুলো পেয়ে অব্রাম মনে মনে নিজেকে কতটা অপরাধীই না ভেবেছিলেন! পরিস্থিতি যত অন্ধকার বলেই মনে হোক না কেন, যিহোবা অব্রামকে ছেড়ে দেননি।

“কিন্তু অব্রামের স্ত্রী সারীর জন্য সদাপ্রভু ফরৌণ ও তাঁহার পরিবারের উপরে ভারী ভারী উৎপাত ঘটাইলেন।” (আদিপুস্তক ১২:১৭) যে কোন ভাবেই হোক, এই ‘উৎপাতের’ আসল কারণ ফরৌণের কাছে প্রকাশ করা হয়েছিল। এই কথা শুনে তিনি সঙ্গে সঙ্গে বলেছিলেন: “তাহাতে ফরৌণ অব্রামকে ডাকিয়া কহিলেন, আপনি আমার সহিত এ কি ব্যবহার করিলেন? উনি আপনার স্ত্রী, এ কথা আমাকে কেন বলেন নাই? উহাঁকে আপনার ভগিনী কেন বলিলেন? আমি ত উহাঁকে বিবাহ করিতে লইয়াছিলাম। এখন আপনার স্ত্রীকে লইয়া চলিয়া যাউন। তখন ফরৌণ লোকদিগকে তাঁহার বিষয়ে আজ্ঞা দিলেন, আর তাহারা সর্ব্বস্বের সহিত তাঁহাকে ও তাঁহার স্ত্রীকে বিদায় করিল।”—আদিপুস্তক ১২:১৮-২০; গীতসংহিতা ১০৫:১৪, ১৫.

৮. আজকে খ্রীষ্টানদেরকে রক্ষা করার বিষয়ে যিহোবা কীধরনের প্রতিজ্ঞা করেন?

আজকে, যিহোবা আমাদেরকে মৃত্যু, অপরাধ, দুর্ভিক্ষ বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করবেন বলে নিশ্চয়তা দেন না। আমাদের কাছে প্রতিজ্ঞা করা হয়েছে যে, যিহোবা সবসময় সেই বিষয়গুলো থেকে আমাদেরকে রক্ষা করবেন, যা আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে আমাদের ক্ষতি করতে পারে। (গীতসংহিতা ৯১:১-৪) তাঁর বাক্য ও “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাস” এর মাধ্যমে সময়োপযোগী সাবধানবাণী জুগিয়ে মূলত তিনি তা করে থাকেন। (মথি ২৪:৪৫) তাড়নার কারণে কেউ মারা গেলে সেই সম্বন্ধে কী বলা যায়? যদিও কিছু কিছু ব্যক্তি মারা যান কিন্তু ঈশ্বর তাঁর সমস্ত লোকেদেরকে একাধারে মেরে ফেলার জন্য কখনোই অনুমতি দেবেন না। (গীতসংহিতা ১১৬:১৫) আর বিশ্বস্ত ব্যক্তিরা যদি মারাও যান, তাহলে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে তারা পুনরুত্থিত হবেন।—যোহন ৫:২৮, ২৯.

শান্তি বজায় রাখার জন্য ত্যাগস্বীকার করা

৯. কীভাবে বোঝা যায় যে, অব্রাম কনানে স্থায়ীভাবে থাকেননি?

কনানের দুর্ভিক্ষ দূর হয়ে গেলে পর, “অব্রাম ও তাঁহার স্ত্রী সমস্ত সম্পত্তি লইয়া লোটের সঙ্গে মিসর হইতে [কনান দেশের] দক্ষিণাঞ্চলে [“নেগেবে,” NW] [যিহূদার পাহাড়ি অঞ্চলের দক্ষিণ দিকে কিছুটা শুষ্ক অঞ্চল] যাত্রা করিলেন। অব্রাম পশুধনে ও স্বর্ণ রৌপ্যে অতিশয় ধনবান্‌ ছিলেন।” (আদিপুস্তক ১৩:১, ২) তাই স্থানীয় লোকেরা তাকে একজন ক্ষমতাবান, প্রভাবশালী এবং শক্তিমান অধ্যক্ষ হিসেবে দেখতেন। (আদিপুস্তক ২৩:৬) সেখানে স্থায়ীভাবে থাকার ও কনানীয়দের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার কোন ইচ্ছাই অব্রামের ছিল না। এর বদলে, “তিনি দক্ষিণ [“নেগেব,” NW] হইতে বৈথেলের দিকে যাইতে যাইতে বৈথেলের ও অয়ের মধ্যবর্ত্তী যে স্থানে পূর্ব্বে তাঁহার তাম্বু স্থাপিত ছিল, . . . সেখানে উপস্থিত হইলেন।” বরাবরের মতো এবারও অব্রাম যেখানেই গিয়েছিলেন যিহোবার উপাসনাকে প্রথম স্থানে রেখেছিলেন।—আদিপুস্তক ১৩:৩, ৪.

১০. অব্রাম ও লোটের পশুপালকদের মধ্যে কী সমস্যা হয়েছিল আর তা তাড়াতাড়ি করে সমাধান করা কেন জরুরি ছিল?

১০ “আর অব্রামের সহযাত্রী লোটেরও অনেক মেষ ও গো এবং তাম্বু ছিল। আর সেই দেশে একত্র বাস সম্পোষ্য হইল না, কেননা তাঁহাদের প্রচুর সম্পত্তি থাকাতে তাঁহারা একত্র বাস করিতে পারিলেন না। আর অব্রামের পশুপালকদের ও লোটের পশুপালকদের পরস্পর বিবাদ হইল।—তৎকালে সেই দেশে কনানীয়েরা ও পরিষীয়েরা বসতি করিত।” (আদিপুস্তক ১৩:৫-৭) অব্রাম ও লোটের পশুপালের জন্য ওই দেশে পর্যাপ্ত জল ও চারণভূমি ছিল না। এই কারণে পশুপালকরা চিন্তিত হয়ে পড়ে ও একে অন্যের প্রতি বিরক্ত হয়ে যায়। এইরকম খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে ঝগড়া করা সত্য ঈশ্বরের উপাসকদের জন্য শোভন ছিল না। এইরকম ঝগড়া যদি চলতেই থাকত, তাহলে তাদের সম্পর্ক হয়তো চিরকালের জন্য নষ্ট হয়ে যেতে পারত। তাই, এই অবস্থাকে অব্রাম কীভাবে সমাধান করবেন? লোটের বাবার মৃত্যুর পর থেকে তিনি তাকে পালন করছিলেন, হয়তো তার নিজের ছেলের মতো করে লোটকে মানুষ করেছিলেন। দুজনের মধ্যে অব্রাম বড় ছিলেন, তাহলে তারই কি সর্বোত্তম অংশটা নেওয়ার অধিকার ছিল না?

১১, ১২. লোটকে অব্রাম কোন্‌ উদার প্রস্তাব দিয়েছিলেন আর লোটের বাছাই কেন বুদ্ধিমানের কাজ ছিল না?

১১ কিন্তু, “অব্রাম লোটকে কহিলেন, বিনয় করি, তোমাতে ও আমাতে এবং তোমার পশুপালকগণে ও আমার পশুপালকগণে বিবাদ না হউক; কেননা আমরা পরস্পর জ্ঞাতি। তোমার সম্মুখে কি সমস্ত দেশ নাই? বিনয় করি, আমা হইতে পৃথক্‌ হও; হয়, তুমি বামে যাও, আমি দক্ষিণে যাই; নয়, তুমি দক্ষিণে যাও, আমি বামে যাই।” বৈথেলের কাছাকাছি একটা জায়গা ছিল যেটাকে প্যালেস্টাইনের “অপূর্ব জায়গাগুলোর মধ্যে একটা” বলা হতো। সম্ভবত সেখান থেকে “লোট চক্ষু তুলিয়া দেখিলেন, যর্দ্দনের সমস্ত অঞ্চল সোয়র পর্য্যন্ত সর্ব্বত্র সজল, সদাপ্রভুর উদ্যানের ন্যায়, মিসর দেশের ন্যায়, কেননা তৎকালে সদাপ্রভু সদোম ও ঘমোরা বিনষ্ট করেন নাই।”—আদিপুস্তক ১৩:৮-১০.

১২ যদিও বাইবেলে লোটকে “ধার্ম্মিক” বলা হয়েছে কিন্তু কোন কারণে এই ব্যাপারে তিনি অব্রামের কাছে বশ্যতাস্বীকার করেননি কিংবা বয়স্ক ব্যক্তির কাছ থেকে পরামর্শ চেয়েছেন বলে মনে হয়নি। (২ পিতর ২:৭) “লোট আপনার নিমিত্তে যর্দ্দনের সমস্ত অঞ্চল মনোনীত করিয়া পূর্ব্বদিকে প্রস্থান করিলেন; এইরূপে তাঁহারা পরস্পর পৃথক্‌ হইলেন। অব্রাম কনান দেশে থাকিলেন, এবং লোট সেই অঞ্চলস্থিত নগরসমূহের মধ্যে থাকিয়া সদোমের নিকট পর্য্যন্ত তাম্বু স্থাপন করিতে লাগিলেন।” (আদিপুস্তক ১৩:১১, ১২) সদোম উন্নত শহর ছিল ও সেখানে বস্তুগত দিক দিয়ে অনেক সুযোগসুবিধাও ছিল। (যিহিষ্কেল ১৬:৪৯, ৫০) বস্তুগত দৃষ্টিকোণ থেকে লোটের এই বেছে নেওয়াকে হয়তো বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে হয়েছে কিন্তু আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে তা অবিবেচনাপূর্ণ সিদ্ধান্ত ছিল। কেন? কারণ আদিপুস্তক ১৩:১৩ পদ বলে, “সদোমের লোকেরা অতি দুষ্ট ও সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে অতি পাপিষ্ঠ ছিল।” সেখানে যাওয়ার ব্যাপারে লোটের এই সিদ্ধান্ত শেষ পর্যন্ত তার পরিবারের ওপর অনেক দুঃখ ডেকে এনেছিল।

১৩. যে খ্রীষ্টানরা টাকাপয়সা নিয়ে সহ বিশ্বাসীদের সঙ্গে সমস্যায় জড়িয়ে পড়েছেন, অব্রামের উদাহরণ তাদেরকে কীভাবে সাহায্য করে?

১৩ অব্রামের বংশের লোকেরাই শেষ পর্যন্ত এই পুরো দেশ অধিকার করবে, যিহোবার এই প্রতিজ্ঞায় যদিও অব্রাম বিশ্বাস দেখিয়েছিলেন কিন্তু তবুও তিনি এক ক্ষুদ্র অংশ নিয়ে তর্ক করেননি। উদার হয়ে, তিনি ১ করিন্থীয় ১০:২৪ পদে যে নীতির কথা পরে বলা হয়েছে সেই অনুযায়ী কাজ করেছিলেন: “কেহই স্বার্থ চেষ্টা না করুক, বরং প্রত্যেক জন পরের মঙ্গল চেষ্টা করুক।” যাদের কোন সহ বিশ্বাসীর সঙ্গে টাকাপয়সা নিয়ে সমস্যা আছে, তাদেরকে মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য এটা একটা ভাল বিষয়। মথি ১৮:১৫-১৭ পদের পরামর্শ না মেনে কেউ কেউ তাদের ভাইদেরকে আদালতে পর্যন্ত নিয়ে গেছেন। (১ করিন্থীয় ৬:১, ৭) অব্রামের উদাহরণ দেখায় যে, যিহোবার নামের বদনাম আনার চেয়ে বা খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর শান্তি নষ্ট করার চেয়ে বরং অর্থনৈতিক ক্ষতি মেনে নেওয়া ভাল।—যাকোব ৩:১৮.

১৪. উদারতার জন্য অব্রাম কীভাবে আশীর্বাদ পেয়েছিলেন?

১৪ তার এই উদারতার জন্য অব্রাম আশীর্বাদ পাওয়ার যোগ্য ছিলেন। ঈশ্বর ঘোষণা করেছিলেন: “পৃথিবীস্থ ধূলির ন্যায় তোমার বংশবৃদ্ধি করিব; কেহ যদি পৃথিবীস্থ ধূলি গণিতে পারে, তবে তোমার বংশও গণা যাইবে।” এই কথাগুলো শুনে নিঃসন্তান অব্রাম কত উৎসাহই না পেয়েছিলেন! এরপর ঈশ্বর আদেশ দিয়েছিলেন: “উঠ, এই দেশের দীর্ঘপ্রস্থে পর্য্যটন কর, কেননা আমি তোমাকেই ইহা দিব।” (আদিপুস্তক ১৩:১৬, ১৭) না, অব্রামকে শহরের আরাম-আয়েশের জীবন উপভোগ করার জন্য অনুমতি দেওয়া হয়নি। কনানীয়দের কাছ থেকে তাকে আলাদা থাকতে হয়েছিল। একইভাবে, আজকে খ্রীষ্টানদেরকে জগৎ থেকে আলাদা থাকতে হবে। তারা নিজেদেরকে অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ মনে করেন না কিন্তু অশাস্ত্রীয় আচরণে জড়িয়ে পড়ার জন্য প্রলোভন দেখাতে পারে এমন লোকেদের সঙ্গে তারা খুব বেশি মেলামেশা করেন না।—১ পিতর ৪:৩, ৪.

১৫. (ক) অব্রামের বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করার তাৎপর্য কী হতে পারে? (খ) আজকে খ্রীষ্টান পরিবারগুলোর জন্য অব্রাম কী উদাহরণ রেখেছেন?

১৫ বাইবেলের সময়ে, কেউ যদি কোন দেশে থাকার জন্য যেত, তাহলে এর আগে ওই দেশ নিরীক্ষণ করে আসার অধিকার তার ছিল। তাই, বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করা হয়তো বারবার মনে করিয়ে দিয়েছিল যে, একদিন এই দেশ অব্রামের বংশধরদের হবে। বাধ্যতা দেখিয়ে “অব্রাম তাম্বু তুলিয়া হিব্রোণে স্থিত মম্রির এলোন বনের নিকটে গিয়া বাস করিলেন, এবং সেখানে সদাপ্রভুর উদ্দেশে এক যজ্ঞবেদি নির্ম্মাণ করিলেন।” (আদিপুস্তক ১৩:১৮) অব্রাম আরেকবার দেখিয়েছিলেন যে, উপাসনাকে তিনি সবচেয়ে উঁচুতে রেখেছিলেন। পারিবারিক অধ্যয়ন, পারিবারিক প্রার্থনা এবং সভাতে আসা কি আপনার পরিবারে সবচেয়ে প্রথম স্থানে রয়েছে?

শত্রুদের আক্রমণ

১৬. (ক) আদিপুস্তক ১৪:১ পদের কথাগুলোতে কেন অশুভ ইঙ্গিত পাওয়া যায়? (খ) প্রাচ্যের চারজন রাজা কেন আক্রমণ করেছিলেন?

১৬ “শিনিয়রের অম্রাফল রাজা, ইল্লাসরের অরিয়োক রাজা, এলমের * কদলায়োমর রাজা এবং গোয়ীমের তিদিয়ল রাজার সময়ে . . . যুদ্ধ করিলেন।” (“. . . সময়ে”) কথাটার মূল ইব্রীয় ভাষাতে এক অশুভ বৈশিষ্ট্য আছে, “কষ্টকর এক পরীক্ষার কাল, যা পরে আশীর্বাদের মাধ্যমে শেষ হয়” এমন সময়কে ইঙ্গিত করে। (আদিপুস্তক ১৪:১, ২, পাদটীকা, NW) প্রাচ্যের এই চারজন রাজা ও তাদের সেনাবাহিনী যখন কনানকে ধ্বংস করার জন্য আক্রমণ করেছিলেন, তখন কষ্টকর সময় শুরু হয়েছিল। তাদের উদ্দেশ্য কী ছিল? সদোম, ঘমোরা, অদ্‌মা, সবোয়িম এবং বিলা, এই পাঁচ শহরের বিদ্রোহকে দমন করা। এই পাঁচ শহরের সমস্ত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে তারা “সিদ্দীম তলভূমিতে অর্থাৎ লবণসমুদ্রে একত্র হইয়াছিলেন।” লোট ও তার পরিবার এর কাছাকাছি জায়গাতেই থাকতেন।—আদিপুস্তক ১৪:৩-৭.

১৭. লোটের বন্দিত্ব কেন অব্রামের জন্য বিশ্বাসের এক পরীক্ষা ছিল?

১৭ কনান দেশের রাজারা আক্রমণকারীদেরকে খুবই জোরালোভাবে প্রতিরোধ করেছিলেন কিন্তু তারা অত্যন্ত লজ্জাজনকভাবে পরাজিত হয়েছিলেন। “আর শত্রুরা সদোম ও ঘমোরার সমস্ত সম্পত্তি ও ভক্ষ্য দ্রব্য লইয়া প্রস্থান করিলেন। বিশেষতঃ তাঁহারা অব্রামের ভ্রাতুষ্পুত্ত্র লোটকে ও তাঁহার সম্পত্তি লইয়া গেলেন, কেননা তিনি সদোমে বাস করিতেছিলেন।” এই ধ্বংসাত্মক ঘটনাগুলোর কথা শীঘ্রিই অব্রামের কানে পৌঁছে: “তখন এক জন পলাতক ইব্রীয় অব্রামকে সমাচার দিল; ঐ সময়ে তিনি ইষ্কোলের ভ্রাতা ও আনেরের ভ্রাতা ইমোরীয় মম্রির এলোন বনে বাস করিতেছিলেন, এবং তাঁহারা অব্রামের সহায় ছিলেন। অব্রাম . . . শুনিলেন, তাঁহার জ্ঞাতি ধৃত হইয়াছেন।” (আদিপুস্তক ১৪:৮-১৪) বিশ্বাসের কত বড় পরীক্ষা! তার ভাইপো, দেশের মধ্যে সবচেয়ে ভাল জায়গাটা বেছে নিয়েছিলেন বলে অব্রাম কি মনে মনে বিদ্বেষ পুষে রাখবেন? এছাড়াও মনে রাখবেন যে, এই আক্রমণকারীরা তার নিজ দেশ শিনিয়র থেকে এসেছিল। তাদের সঙ্গে লড়াই করা মানে নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনাকে চিরকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া। এছাড়া, কনানের সম্মিলিত বাহিনী যখন ওই সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করতে পারেনি সেখানে অব্রাম আর কী-ই-বা করতে পারেন?

১৮, ১৯. (ক) অব্রাম কীভাবে লোটকে উদ্ধার করতে পেরেছিলেন? (খ) এই জয়ের কৃতিত্ব কে পেয়েছিলেন?

১৮ অব্রাম এবারও যিহোবার ওপর সম্পূর্ণ আস্থা রেখেছিলেন। “তখন তিনি আপন গৃহজাত তিন শত আঠার জন অভ্যস্ত দাসকে লইয়া দান পর্য্যন্ত ধাবমান হইয়া গেলেন। পরে রাত্রিকালে আপন দাসদিগকে দুই দল করিয়া তিনি শত্রুগণকে আঘাত করিলেন, এবং দম্মেশকের উত্তরে স্থিত হোবা পর্য্যন্ত তাড়াইয়া দিলেন। এবং সকল সম্পত্তি, আর আপন জ্ঞাতি লোট ও তাঁহার সম্পত্তি এবং স্ত্রীলোকদিগকে ও লোক সকলকে ফিরাইয়া আনিলেন।” (আদিপুস্তক ১৪:১৪-১৬) যিহোবার ওপর প্রগাঢ় বিশ্বাস দেখিয়ে অব্রাম তার বিশাল লোকেদের নিয়ে জয়ী হয়েছিলেন এবং লোট ও তার পরিবারকে উদ্ধার করেছিলেন। এরপর অব্রামের শালেমের রাজা ও যাজক মল্কীষেদকের সঙ্গে দেখা হয়। “শালেমের রাজা মল্কীষেদক রুটী ও দ্রাক্ষারস বাহির করিয়া আনিলেন, তিনি পরাৎপর ঈশ্বরের যাজক। তিনি অব্রামকে আশীর্ব্বাদ করিলেন, বলিলেন, অব্রাম স্বর্গমর্ত্ত্যের অধিকারী পরাৎপর ঈশ্বরের আশীর্ব্বাদপাত্র হউন, আর পরাৎপর ঈশ্বর ধন্য হউন, যিনি তোমার বিপক্ষগণকে তোমার হস্তে সমর্পণ করিয়াছেন। তখন অব্রাম সমস্ত দ্রব্যের দশমাংশ তাহাকে দিলেন।”—আদিপুস্তক ১৪:১৮-২০.

১৯ হ্যাঁ, যিহোবাই বিজয় এনে দিতে পারেন। বিশ্বাস থাকায় অব্রামকে আরও একবার যিহোবা উদ্ধার করেছিলেন। আজকে, ঈশ্বরের লোকেরা আক্ষরিক যুদ্ধে অংশ নেন না কিন্তু তারা বিভিন্ন পরীক্ষা ও কঠিন সমস্যাগুলোর মোকাবিলা করেন। আমাদের পরের প্রবন্ধ দেখাবে যে, কীভাবে অব্রামের উদাহরণ আমাদেরকে সেই বিষয়গুলোকে সফলভাবে মোকাবিলা করতে সাহায্য করে।

[পাদটীকাগুলো]

^ (যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত) শাস্ত্রের প্রতি অন্তর্দৃষ্টি (ইংরেজি) অনুসারে, “প্রাচীন একটা প্যাপিরাস একজন ফরৌণ সম্বন্ধে বলে, যিনি সশস্ত্র লোকেদেরকে আদেশ দিয়েছিলেন তারা যেন একজন সুন্দরী স্ত্রীলোককে বন্দি করে নিয়ে আসে এবং তার স্বামীকে হত্যা করে।” তাই, অব্রামের ভয় পাওয়াটা স্বাভাবিক ছিল।

^ হাগার, যে কিনা পরে অব্রামের উপপত্নী হয়েছিলেন, তাকে হয়তো এই সময়ই অন্যান্য দাসীদের সঙ্গে দেওয়া হয়েছিল।—আদিপুস্তক ১৬:১.

^ সমালোচকরা একবার দাবি করেছিলেন যে, এলম কখনও শিনিয়রের ওপর এতটা প্রভাব বিস্তার করেনি এবং কদলায়োমরের আক্রমণের বিবরণ মিথ্যা। যে প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ বাইবেলের বিবরণকে সমর্থন করে, তা জানার জন্য ১৯৮৯ সালের ১লা জুলাই প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) এর ৪-৭ পৃষ্ঠা দেখুন।

আপনি কি লক্ষ্য করেছেন?

• কনান দেশের দুর্ভিক্ষ কীভাবে অব্রামের জন্য বিশ্বাসের পরীক্ষা ছিল?

• আজকে স্বামী ও স্ত্রীদের জন্য অব্রাম ও সারী কীভাবে ভাল উদাহরণ রেখেছেন?

• অব্রাম তার ও লোটের দাসদের মধ্যে ঝগড়া মেটাতে গিয়ে যা করেছিলেন, তার থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২২ পৃষ্ঠার চিত্র]

অব্রাম তার অধিকারকে জাহির করেননি বরং লোটের ইচ্ছাকে তার নিজের ইচ্ছার চেয়ে আগে রেখেছিলেন

[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

অব্রাম তার ভাইপো লোটকে উদ্ধার করতে গিয়ে যিহোবার ওপর নির্ভর করেছিলেন