সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

দীপ্তির শহরে জ্যোতির্গণের ন্যায় প্রকাশ পাচ্ছেন

দীপ্তির শহরে জ্যোতির্গণের ন্যায় প্রকাশ পাচ্ছেন

দীপ্তির শহরে জ্যোতির্গণের ন্যায় প্রকাশ পাচ্ছেন

ফ্লুকচুয়াট নেক মারগিটুর অথবা “ঢেউ এসে এতে ধাক্কা খায় কিন্তু এটা ডোবে না,” এটা হল প্যারিস শহরের জন্য আদর্শবাক্য।

 বিগত ২,০০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে একটা জাহাজের মতো প্যারিস অসংখ্য বার বিদেশিদের আক্রমণের ঝড় এবং প্যারিসের মধ্যে বিভিন্ন বিদ্রোহকে সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করেছে কিন্তু ডুবে যায়নি। আজকে প্যারিস হল পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর শহরগুলোর মধ্যে একটা, যেখানে চমৎকার স্থাপত্যশিল্প, দুধারে বড় বড় বৃক্ষ শোভিত রাস্তা ও বিশ্ববিখ্যাত জাদুঘরগুলো রয়েছে আর এই কারণে সকলে প্যারিসের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। কেউ কেউ মনে করেন যে এখানে কবি, চিত্রকর ও দার্শনিকরা বারবার পরিদর্শন করেন। অন্যেরা এখানকার সুস্বাদু খাবারগুলো উপভোগ করেন ও এখানকার যুগপোযোগী ফ্যাশনের প্রশংসা করেন।

ঐতিহাসিক দিক দিয়ে দেখলে প্যারিস সবসময়ই ক্যাথলিক ধর্মের প্রধান ঘাঁটি হয়ে এসেছে। দুহাজার বছর আগে, এনলাইটেনমেন্ট নামে পরিচিত ইউরোপীয় মেধা বিকাশের এক আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য প্যারিস দীপ্তির শহর নামে পরিচিত হয়। আজকে জেনেই হোক বা অজান্তেই হোক, প্যারিসের বেশির ভাগ লোকেরা ধর্মের চেয়ে সেই সময়কার দর্শনবিদ্যার দ্বারা বেশি প্রভাবিত হন।

কিন্তু যেমনটা আশা করা হয়েছিল, মানুষের জ্ঞান লোকেদের জীবনে তেমন দীপ্তি দিতে পারেনি। তাই, আজকে অনেকে ভিন্ন এক উৎস থেকে দীপ্তি পাওয়ার চেষ্টা করছে। প্রায় ৯০ বছর ধরে যিহোবার সাক্ষিরা প্যারিসে ‘জ্যোতির্গণের ন্যায় প্রকাশ পাচ্ছেন।’ (ফিলিপীয় ২:১৫) দক্ষ নাবিকদের মতো তাদেরকে দ্রুত পরিবর্তনশীল স্রোতের অথবা ঘটনাগুলোর সঙ্গে অবিরত তাল মিলিয়ে চলতে হয়েছে, যাতে “সর্ব্বজাতির মনোরঞ্জন বস্তু সকল” জাহাজে চড়তে পারে।—হগয় ২:৭.

প্রচারের জন্য খুবই কঠিন এক শহর

১৮৫০ সালে প্যারিসে ৬,০০,০০০ জন লোক বাস করত। বর্তমানে এর শহরতলিগুলো সহ এখানকার মোট জনসংখ্যা নব্বই লক্ষেরও বেশি। এই বৃদ্ধির ফলে প্যারিস ফ্রান্সের এমন এক শহরে পরিণত হয়েছে, যেখানে বিভিন্ন দেশের লোকেদের পাওয়া যায়। এটা বিশ্বের উচ্চশিক্ষার এক কেন্দ্র, যেখানে বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো একটা বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে এবং এই শহরে প্রায় ২,৫০,০০০ জন ছাত্র-ছাত্রী আছে। প্যারিসের কিছু শহরতলিতে অনেক উঁচু-উঁচু ঘরবাড়ি রয়েছে ও সেইসঙ্গে অপরাধ এবং বেকারত্বও আছে, যা প্যারিসের অন্ধকারময় দিককে প্রকাশ করে। কোন সন্দেহ নেই যে, সুসমাচার যাতে সবধরনের লোকেদেরকে আকৃষ্ট করে সেইজন্য যিহোবার সাক্ষিদের দক্ষতা ও সবরকমের পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা থাকা দরকার।—১ তীমথিয় ৪:১০.

প্রত্যেক বছর দুই কোটিরও বেশি পর্যটক প্যারিসে ঘুরতে আসেন। তারা হয়তো অত্যন্ত রোমাঞ্চিত হয়ে আইফেল টাওয়ারে চড়েন, সিন নদীর ধারে পায়চারি করেন অথবা রাস্তার ধারে রেস্টুরেন্ট

ও বারগুলোতে সময় কাটান, মোট কথা তারা এই পরিবেশের সঙ্গে একাকার হয়ে যান। কিন্তু তবুও প্যারিসের লোকেদের রোজকার জীবন

খুবই ব্যস্ততাপূর্ণ। একজন পূর্ণ-সময়ের পরিচারক ক্রীস্টান বলেন ‘লোকেরা যেন সারাক্ষণই ছুটছে। কাজ থেকে ঘরে ফেরার সময় তারা খুবই ক্লান্ত থাকে।’ তাই, এই ব্যস্ত লোকেদের সঙ্গে কথা বলা খুব একটা সহজ নয়।

কিন্তু, প্যারিসে যিহোবার সাক্ষিদেরকে সবচেয়ে বড় যে সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় তা হল, লোকেদেরকে ঘরে পাওয়া। কিছু কিছু বিল্ডিংয়ে ইন্টারকমের ব্যবস্থা রয়েছে। অপরাধ দিনের পর দিন বেড়ে যাচ্ছে বলে প্রায় সমস্ত আ্যপার্টমেন্টে ঢোকার দরজায় ইলকট্রনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে আর তাই ভিতরে ঢোকা একেবারে অসম্ভব হয়ে পড়ে। কোন সন্দেহ নেই যে, এই কারণেই কিছু কিছু এলাকায় ১,৪০০ জন লোকেদের কাছে প্রচার করার জন্য মাত্র একজন সাক্ষি রয়েছে। তাই এখানে টেলিফোনের মাধ্যমে এবং রীতিবহির্ভূত সাক্ষ্যদান দিন-দিন বেড়ে চলেছে। যিহোবার সাক্ষিরা কি আরও অন্যান্য উপায়ে নিজেদের “দীপ্তি . . . উজ্জ্বল” করতে পেরেছেন?—মথি ৫:১৬.

রীতিবহির্ভূত সাক্ষ্যদান করার জন্য প্রচুর সুযোগ ও জায়গা রয়েছে। মার্টিন, একজন মহিলাকে খুব মনমরা হয়ে একটা বাসস্টপে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন। ওই মহিলা মাত্র কিছুদিন আগে তার একমাত্র মেয়েকে হারিয়েছিলেন। মার্টিন তাকে একটা ব্রোশার দেন, যেটাতে বাইবেলে দেওয়া পুনরুত্থানের আশার কথা বলা রয়েছে। এরপর কয়েক মাস ওই মহিলার সঙ্গে তার আর কোন যোগাযোগ হয়নি। মার্টিনের সঙ্গে ওই মহিলার যখন আবার দেখা হয়, তখন তিনি তার সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করেন। তার স্বামীর কাছ থেকে বাধা আসা সত্ত্বেও, ওই মহিলা একজন সাক্ষি হন।

সফল রীতিবহির্ভূত সাক্ষ্যদান

প্যারিসের জনসাধারণের জন্য পরিবহণ ব্যবস্থা পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে ভাল ব্যবস্থাগুলোর মধ্যে একটা। বিখ্যাত মেট্রো যানবাহনে প্রতিদিন ৫০,০০,০০০ যাত্রী চলাফেরা করে। প্যারিসের শ্যাটলে-লে-আল স্টেশন হল বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও ব্যস্ততম পাতাল স্টেশন। সেখানে লোকেদের সঙ্গে কথা বলার অনেক সুযোগ রয়েছে। আ্যলেকজান্ড্রা প্রতিদিন মেট্রোতে করে কাজে যান। একদিন তিনি এক যুবক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেন, যিনি লিউকিমিয়া রোগের একেবারে শেষ পর্যায়ে ছিলেন। আ্যলেকজান্ড্রা তাকে পরমদেশের আশা সম্বন্ধে একটা ট্র্যাক্ট দেন। ছসপ্তা ধরে প্রতিদিন একই সময় ও একই জায়গাতে বাইবেল আলোচনা করা হয়েছিল। তারপর, একদিন সেই ব্যক্তি আসা বন্ধ করে দেন। এর কিছুদিন পরেই সেই ব্যক্তির স্ত্রী আ্যলেকজান্ড্রাকে ফোন করে হাসপাতালে আসার জন্য বলেন কারণ তার স্বামীর অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে গিয়েছিল। দুঃখের বিষয় যে আ্যলেকজান্ড্রা বেশ দেরি করে সেখানে পৌঁছান। সেই ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার স্ত্রী দক্ষিণ-পশ্চিম ফ্রান্সের বোরডোতে চলে যান আর সেখানকার সাক্ষিরা তার সঙ্গে দেখা করেন। এক বছর পর, সেই বিধবা বাপ্তিস্ম নিয়ে যিহোবার একজন খ্রীষ্টান সাক্ষি হয়েছেন, এই আশা নিয়ে যে তিনি তার স্বামীকে পুনরুত্থিত হতে দেখবেন আর এটা আ্যলেকজান্ড্রার জন্য কত খুশির খবরই না ছিল!—যোহন ৫:২৮, ২৯.

একজন বয়স্ক খ্রীষ্টান বোন ট্রেনে করে প্যারিস থেকে মধ্য ফ্রান্সের লিমোশ পর্যন্ত যাওয়ার সময় রেনাতার সঙ্গে কথা বলেছিলেন। রেনাতা তার দেশ পোল্যান্ডে পাঁচ বছর থিওলজি, ইব্রীয় ও গ্রিকের ওপর পড়াশোনা করেছিলেন কিন্তু এরপরেও তিনি ঈশ্বরের ওপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছিলেন। এই আলোচনার তিন মাস আগে তিনি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছিলেন। যদিও সেই বয়স্ক বোন যা বলতে চান, সেই বিষয়ের প্রতি রেনাতার কোন আগ্রহ ছিল না এবং এই বোন আবার তার সঙ্গে কথা বলবেন এমন আশাও তিনি করেননি কিন্তু তবুও রেনাতা সেই বোনকে তার টেলিফোন নম্বর দিয়েছিলেন। সেই বোন হাল ছেড়ে দেননি এবং কিছুদিনের মধ্যে কেউ যেন রেনাতার সঙ্গে দেখা করেন, সেই ব্যবস্থা তিনি করেছিলেন। এক সাক্ষি দম্পতি যখন তার সঙ্গে দেখা করতে আসেন, তখন রেনাতা মনে মনে ভেবেছিলেন, ‘এরা আমাকে কী-ই-বা শেখাবে?’ থিওলজির জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও, রেনাতা নম্রভাবে বাইবেলের সত্যকে মেনে নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “আমি খুব সহজেই বুঝেছিলাম যে এটাই সত্য।” আজ তিনি বাইবেলের সংবাদকে অন্যদের কাছে বলতে পেরে খুবই খুশি।

মিশেল গাড়ি চালানো শিখছিল। গাড়ি চালানো শেখার থিওরি ক্লাসে অন্যান্য ছাত্রীরা বিয়ের আগে যৌন সম্পর্কের বিষয়ে কথাবার্তা শুরু করে। এই বিষয়ে মিশেল যে একমত নয়, তা সে জানিয়ে দেয়। এক সপ্তা পরে গাড়ি চালানোর শিক্ষিকা সিলভি তাকে জিজ্ঞেস করেন: “তুমি কি একজন যিহোবার সাক্ষি?” বাইবেলের ওপর মিশেলের দৃষ্টিভঙ্গি সিলভির ওপর খুব জোরালো প্রভাব ফেলেছিল। তার সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করা হয়েছিল এবং এক বছর পর সিলভি বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন।

প্যারিসে অনেক পার্ক ও বাগান আছে, তাই লোকেদের সঙ্গে কথা বলার জন্য এগুলো খুব সুন্দর জায়গা। বিরতির সময়কে কাজে লাগানোর জন্য জোসেট একটা পার্কে যান, যেখানে আ্যলেন নামে একজন বয়স্ক মহিলা পায়চারি করছিলেন। জোসেট তাকে বাইবেলের চমৎকার প্রতিজ্ঞাগুলো সম্বন্ধে বলেন। তার সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়নের ব্যবস্থা করা হয় এবং আ্যলেন খুব তাড়াতাড়ি উন্নতি করেন ও বাপ্তিস্ম নেন। আজ ৭৪ বছর বয়সে আ্যলেন একজন সফল নিয়মিত অগ্রগামী, যিনি অন্যদের কাছে খ্রীষ্টীয় সত্য জানাতে খুবই খুশি।

সমস্ত জাতির জন্য দীপ্তি

বিভিন্ন জাতির লোকেদেরকে পাওয়ার জন্য প্যারিসের সাক্ষিদেরকে অনেক দূর দেশে যেতে হয় না। মোট জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশই বিদেশি। সেখানে প্রায় ২৫টা ভাষার খ্রীষ্টীয় মণ্ডলী ও দল আছে।

সুসমাচার প্রচারের এই বিশেষ দায়িত্বে দক্ষতা ও চিন্তাশক্তি ভাল ফল পেতে সাহায্য করে। ফিলিপিনসের একজন সাক্ষি বোন, নিজেই নিজের এক বিশেষ এলাকা তৈরি করে নিয়েছিলেন। কেনাকাটা করার সময় দোকানে অন্যান্য ফিলিপিনো লোকেদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে তিনি অনেক বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করতে পেরেছিলেন।

প্রচার করার জন্য নিজে থেকে এগিয়ে যাওয়া ভাল ফল নিয়ে আসে। ১৯৯৬ সালের ডিসেম্বর মাসে এক বিদেশি-ভাষী মণ্ডলীর সাক্ষিরা যখন জানতে পারেন যে, সেই শহরে এক বিশ্ববিখ্যাত সার্কাস দল আসছে, তখন তারা সার্কাসের শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলবেন বলে ঠিক করেন। একদিন সন্ধ্যায় শো শেষ হয়ে যাওয়ার পর, তারা সেই শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেয়েছিলেন, যারা হোটেলে ফিরে যাচ্ছিলেন। এভাবে নিজে থেকে এগিয়ে যাওয়াতে তারা ২৮টা বাইবেল, ৫৯টা খ্রীষ্টীয় বই, ১৩১টা ব্রোশার ও ২৯০টা পত্রিকা অর্পণ করতে পেরেছিলেন। তিন সপ্তা সেখানে থাকার পর একজন শিল্পী জিজ্ঞেস করেছিলেন: “আমি কীভাবে একজন যিহোবার সাক্ষি হতে পারি?” আরেকজন বলেছিলেন: “দেশে ফিরে আমি প্রচার করব!”

গুপ্তধন পাওয়া

প্যারিসে আসা পর্যটকরা যে দিকেই তাকান, তারা বিগত যুগের চমৎকার স্থাপত্যশিল্প দেখতে পান, যেগুলো প্যারিসের সম্পদ। কিন্তু, আরও মূল্যবান জিনিসগুলো এখনও খুঁজে পেতে বাকি। আ্যনিজা তার কূটনীতিক পিসেমশাইয়ের সঙ্গে ফ্রান্সে আসেন। তিনি ঘরে নিয়মিত বাইবেল পড়েন। একদিন তিনি ঘর থেকে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যাচ্ছিলেন আর সেই সময় একজন অগ্রগামী তাকে আপনি কেন বাইবেলকে বিশ্বাস করতে পারেন এই ট্র্যাক্টটা দিয়েছিলেন। পরের সপ্তাতে আলোচনার জন্য তিনি সময় দিয়েছিলেন ও তার সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করা হয়েছিল। আ্যনিজার পরিবার তার অনেক বিরোধিতা করেছিল। তিনি অধ্যয়নে উন্নতি করতে থাকেন ও শেষে বাপ্তিস্ম নেন। অন্যদের কাছে সত্য জানানোর যে সুযোগ তার আছে সেটাকে তিনি কীভাবে দেখেন? “প্রচার করা প্রথম প্রথম খুব কঠিন ছিল কারণ আমি খুব লাজুক। তবুও, আমি যখন বাইবেল পড়ি, তখন এটা আমাকে উদ্দীপিত করে তোলে। প্রচার না করলে আমি মনে শান্তি পাই না।” প্যারিসের অনেক সাক্ষিদের এইরকম মনোভাব রয়েছে, যাদের ‘প্রভুর কার্য্যে . . . উপচিয়া পড়িতে’ হবে।—১ করিন্থীয় ১৫:৫৮.

প্যারিসের সীমান্তে যে ঘরবাড়িগুলো আছে সেখানেও বাইবেলের সত্য প্রকাশ পাচ্ছে এবং অন্যান্য “রত্নগুলোকে” প্রকাশ করছে। ব্রুস তার বন্ধুর কাছ থেকে কয়েকটা রেকর্ড করা ক্যাসেট ধার করার জন্য তার কাছে যায়, যে কিনা মাত্র কিছুদিন আগে যিহোবার সাক্ষি হয়েছে। ব্রুসের চেনাপরিচিত কয়েকজনের সঙ্গে তার বন্ধুকে বাইবেল নিয়ে আলোচনা করতে দেখে ব্রুসও সেই আলোচনা শুনতে থাকে। সে বাইবেল অধ্যয়ন করতে রাজি হয় কিন্তু তার কিছু সমস্যা ছিল। “ওই জায়গায় সবাই আমাকে খুব ভালভাবে চিনত। আমার বড়দা সবসময় ঝগড়া করত এবং আমি হইচইপূর্ণ নাচের পার্টির আয়োজন করতাম। অন্যেরা কীভাবে এই কথাটা মেনে নেবে যে, আমি একজন যিহোবার সাক্ষি হতে যাচ্ছি?” এইধরনের পার্টির আয়োজন করার চাপ সত্ত্বেও, ব্রুস তা আয়োজন করা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এক মাস পরে তিনি প্রচার করতে শুরু করেছিলেন: “সেই এলাকার প্রত্যেকে এটা জানতে চেয়েছিল যে কেন আমি একজন সাক্ষি হয়েছি।” এর কিছু পরেই তিনি বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন। এক সময় তিনি মিনিস্টিরিয়াল ট্রেনিং স্কুলে যোগ দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন।

ধন খোঁজার জন্য অনেক প্রচেষ্টার দরকার। তবে সেই প্রচেষ্টার ফল পাওয়া গেলে কতই না আনন্দ হয়! জ্যাকি, ব্রুনো ও ডামিয়েন, প্যারিসে রুটি তৈরি করার কাজ করেন। জ্যাকি বলেন, “আমাদের সঙ্গে কারও দেখা করা একেবারে অসম্ভব ছিল কারণ আমরা সারাক্ষণই কাজ করতাম ও কখনোই ঘরে থাকতাম না।” প্যাট্রিক নামে একজন নিয়মিত অগ্রগামী দেখেন যে, একটা বিল্ডিংয়ের ছাদে কয়েকটা চিলেকোঠা আছে আর তিনি মনে মনে বলেন, অন্তত একটা ঘরে কেউ না কেউ থাকে। সেই ঘরের বাসিন্দাদের কাছে পৌঁছানোর জন্য তার প্রচেষ্টা ভাল ফল নিয়ে আসে কারণ একদিন দুপুর বেলায় তিনি জ্যাকির সঙ্গে আলাপ করতে পারেন, যিনি সেখানে কিছু সময়ের জন্য অবস্থান করছিলেন। এর ফল কী হয়? সেই তিন বন্ধু সাক্ষি হয়েছিলেন এবং তারা অন্য কাজ খুঁজে পেয়েছিলেন, যেটা তাদেরকে ঈশতান্ত্রিক কাজে পুরোপুরিভাবে অংশ নেওয়ার সময় করে দিয়েছিল।

ঝড়কে শান্ত করা

কয়েক বছর আগে, ফ্রান্সের কয়েকটা প্রচার মাধ্যম যিহোবার সাক্ষিদেরকে এক বিপদজনক সম্প্রদায় বলে তুলে ধরে। ১৯৯৬ সালে, সাক্ষিরা যিহোবার সাক্ষীবৃন্দ—আপনার কী জানার প্রয়োজন আছে (ইংরেজি) শিরোনামের এক বিশেষ ট্র্যাক্ট নব্বই লক্ষেরও বেশি কপি বিতরণে মনপ্রাণ দিয়ে অংশ নিয়েছিলেন। এটা করার ফল ভাল হয়েছিল।

প্রত্যেকের কাছে পৌঁছানোর জন্য বিশেষ প্রচেষ্টা করা হয়েছিল। অনেক কর্মকর্তারা সাক্ষিদের কাজের জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছিলেন। পৌরসভার একজন উপদেষ্টা লিখেছিলেন: “এই ট্র্যাক্টটা বিতরণ করে যিহোবার সাক্ষিরা খুব ভাল কাজ করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা অপবাদকে এটা শুধরে দিয়েছে।” একজন ডাক্তার বলেছিলেন: “আমি এই তথ্যের জন্য অনেক দিন ধরে অপেক্ষা করে আছি।!” প্যারিসে থাকেন এমন একজন ব্যক্তি লিখেছিলেন: “যিহোবার সাক্ষীবৃন্দ—আপনার কী জানার প্রয়োজন আছে ট্র্যাক্টটা হঠাৎ করে পেয়ে আমি সেটা পড়েছিলাম। আমি এই বিষয়ে আরও জানতে চাই ও বিনামূল্যে গৃহ বাইবেল অধ্যয়ন করার প্রস্তাবটাকে কাজে লাগাতে চাই।” আরেকজন মহিলা লিখেছিলেন: “আপনাদের সততার জন্য ধন্যবাদ।” একজন ক্যাথলিক মহিলা সাক্ষিদের বলেছিলেন: “ওহ্‌! শেষ পর্যন্ত আপনারা তাহলে এই মিথ্যার প্রতিবাদ করলেন!”

১৯৯৭ সালে বিশ্ব ক্যাথলিক যুব দিবসে যখন প্রচার অভিযানের ব্যবস্থা করা হয়েছিল, সেই সময় প্যারিসের অনেক যুবক-যুবতী সাক্ষিরা বিশেষ আনন্দ পেয়েছিল। যদিও তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপর ছিল কিন্তু তবুও ২,৫০০ জন সাক্ষি এটাতে যোগ দিয়েছিলেন। কিছুদিনের মধ্যে তারা সমস্ত লোকের জন্য একটি পুস্তক (ইংরেজি) ব্রোশারটার ১৮,০০০ কপি পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গার থেকে আসা যুবক-যুবতীদের হাতে দেন। যিহোবার নামের উত্তম সাক্ষ্য দেওয়া ও সত্যের বীজ বোনার সঙ্গে সঙ্গে এই অভিযান যুবক-যুবতী সাক্ষিদেরকে অনেক উদ্যোগী করে তুলেছিল। একজন যুবতী বোন, যিনি তার ছুটি কাটছাট করেছিলেন যাতে তিনি এই বিশেষ কাজে পুরোপুরি অংশ নিতে পারেন, তিনি লিখেছিলেন: “পৃথিবীতে যিহোবার সুখী লোকেরা আছেন, যারা তাদের শক্তিকে তাঁর প্রশংসা করার জন্য ব্যবহার করেন। এই দুদিন খুব ব্যস্ত ও উপকারজনক ছিল, জীবনে সব ছুটির মধ্যে, এটা ছিল সবচেয়ে উত্তমভাবে ছুটি কাটানো! (গীতসংহিতা ৮৪:১০)”

১৯৯৮ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারি হিটলারের জারি করা আইনের ৬৫তম বার্ষিকী ছিল ও এর ফলে জার্মানিতে যিহোবার সাক্ষিদের কাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। ফ্রান্সের যিহোবার সাক্ষিরা সেই দিনে হল ভাড়া করে নাৎসী আক্রমণের বিরুদ্ধে যিহোবার সাক্ষিরা দৃঢ় থাকেন (ইংরেজি) ভিডিওটা জনসাধারণ্যে দেখানোর ব্যবস্থা করেছিলেন, যেটাতে যিহোবার লোকেরা কীধরনের তাড়না সহ্য করেছেন তা দেখানো হয়েছে। সত্তর লক্ষেরও বেশি আমন্ত্রণপত্র বিতরণ করা হয়েছিল। ইতিহাসবেত্তারা ও সেই সময়ে ক্যাম্পে ছিলেন এমন ব্যক্তিরা সাক্ষ্য দিয়েছিলেন, যেগুলো সত্যিই হৃদয়কে স্পর্শ করেছিল। প্যারিসে প্রায় ৫,০০০ জন সেখানে যোগ দিয়েছিলেন, যার মধ্যে সাক্ষি নয় এমন অনেক লোকেরা ছিলেন।

প্যারিসে অনেকে আধ্যাত্মিক দীপ্তির প্রতি অনেক উপলব্ধি দেখান এবং তারা খুশি যে রাজ্যের প্রকাশকরা দীপ্তির মতো উজ্জ্বল হয়ে প্রকাশ পাচ্ছেন। এটা ঠিক যীশু যেমন বলেছিলেন: “শস্য প্রচুর বটে, কিন্তু কার্য্যকারী লোক অল্প।” (মথি ৯:৩৭) এই শহরে প্রচার করার জন্য যে মুশকিলগুলো রয়েছে সেগুলোকে কাটিয়ে ওঠার জন্য যিহোবার সাক্ষিরা দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ, তারা প্যারিসকে এক বিশেষ অর্থে অর্থাৎ যিহোবার প্রশংসা আনার জন্য দীপ্তির এক শহর করে তুলেছে।

[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

শহরের হল

[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

লুভ্রে যাদুঘর

[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

অপেরা গারনিয়ার

[১০ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

ব্যস্ত লোকেদের যেখানেই পাওয়া যায়, তাদের কাছে বাইবেলের বার্তা বলা