সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

সৎকর্ম করতে করতে নিরুৎসাহ হবেন না

সৎকর্ম করতে করতে নিরুৎসাহ হবেন না

সৎকর্ম করতে করতে নিরুৎসাহ হবেন না

“আইস, আমরা সৎকর্ম্ম করিতে করিতে নিরুৎসাহ না হই; কেননা ক্লান্ত না হইলে যথাসময়ে শস্য পাইব।”গালাতীয় ৬:৯.

১, ২. (ক) ঈশ্বরকে সেবা করতে কেন ধৈর্যের দরকার আছে? (খ) অব্রাহাম কীভাবে ধৈর্য ধরেছিলেন এবং তা করতে কী তাকে সাহায্য করেছিল?

 যিহোবার সাক্ষি হিসেবে, ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করতে পেরে আমরা আনন্দিত। শিষ্য হওয়ার “যোঁয়ালি” তুলে নিয়ে আমরাও বিশ্রাম পাই। (মথি ১১:২৯) তাসত্ত্বেও, খ্রীষ্টের সঙ্গে সঙ্গে যিহোবাকে সেবা করা সবসময় এত সহজ হয় না। প্রেরিত পৌল এই বিষয়টা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যখন তিনি তার সহ খ্রীষ্টানদের বলেছিলেন: “ধৈর্য্যে তোমাদের প্রয়োজন আছে, যেন ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করিয়া প্রতিজ্ঞার ফল প্রাপ্ত হও।” (ইব্রীয় ১০:৩৬) ঈশ্বরকে সেবা করা কঠিন হতে পারে বলে ধৈর্যের দরকার আছে।

এই কথা যে খুবই সত্য, অব্রাহামের জীবন হল তার জলন্ত প্রমাণ। অনেকবার তিনি বাছাই করার ক্ষেত্রে কঠিন অবস্থা এবং চাপপূর্ণ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন। ঊরের আরাম-আয়েশের জীবন ছেড়ে চলে যাওয়ার আদেশ ছিল কেবল শুরু। শীঘ্রিই তিনি দুর্ভিক্ষ, প্রতিবেশীদের কাছ থেকে বিরোধিতা, তার স্ত্রীর মৃত্যু, তার কিছু আত্মীয়স্বজনদের শত্রুতা এবং পাশবিক যুদ্ধের শিকার হয়েছিলেন। এর চেয়েও বড় বড় পরীক্ষা অপেক্ষা করেছিল। কিন্তু অব্রাহাম কখনও সৎকর্ম করতে করতে নিরুৎসাহ হয়ে পড়েননি। আর যখন আপনি চিন্তা করেন যে, আজকে আমাদের কাছে যেমন ঈশ্বরের পুরো বাক্য আছে, তা তার কাছে ছিল না তখন তা সত্যিই উল্লেখযোগ্য মনে হয়। তবে, কোন সন্দেহ নেই যে প্রথম ভবিষ্যদ্বাণীটা তিনি জানতেন, যেটাতে ঈশ্বর ঘোষণা করেছিলেন: “আমি তোমাতে ও নারীতে, এবং তোমার বংশে ও তাহার বংশে পরস্পর শত্রুতা জন্মাইব।” (আদিপুস্তক ৩:১৫) যেহেতু সেই বংশ অব্রাহামের মাধ্যমে আসবে, তাই স্বাভাবিকভাবেই তিনি শয়তানের শত্রুতার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবেন। এই বিষয়টা উপলব্ধি করেছিলেন বলেই তা অব্রাহামকে তার পরীক্ষাগুলোকে আনন্দের সঙ্গে সহ্য করতে সাহায্য করেছিল।

৩. (ক) আজকে যিহোবার লোকেরা কেন তাড়না আশা করে থাকেন? (খ) গালাতীয় ৬:৯ পদ আমাদেরকে কী উৎসাহ দেয়?

আজকে যিহোবার লোকেদেরও তাড়না আশা করা উচিত। (১ পিতর ১:৬, ৭) সর্বোপরি, প্রকাশিত বাক্য ১২:১৭ পদ আমাদেরকে সাবধান করে যে, অভিষিক্ত অবশিষ্টাংশদের সঙ্গে শয়তান ‘যুদ্ধ করিতেছে।’ অভিষিক্তদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে মেলামেশা করায় ‘অপর মেষরাও’ শয়তানের ক্রোধের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। (যোহন ১০:১৬, NW) খ্রীষ্টানরা লোকেদের কাছে প্রচার করার সময় বিরোধিতার মুখোমুখি হওয়া ছাড়াও, ব্যক্তিগত জীবনে হয়তো বিভিন্ন কঠিন চাপের মুখোমুখি হতে পারেন। পৌল আমাদের উৎসাহ দেন: “আইস, আমরা সৎকর্ম্ম করিতে করিতে নিরুৎসাহ না হই; কেননা ক্লান্ত না হইলে যথাসময়ে শস্য পাইব।” (গালাতীয় ৬:৯) হ্যাঁ, যদিও শয়তান আমাদের বিশ্বাস নষ্ট করতে চায় কিন্তু তবুও আমাদের দৃঢ়ভাবে তাকে প্রতিরোধ করতে হবে, বিশ্বাসে অটল থাকতে হবে। (১ পিতর ৫:৮, ৯) বিশ্বস্ত থাকার ফল কী হতে পারে? যাকোব ১:২, ৩ পদ বলে: “হে আমার ভ্রাতৃগণ, তোমরা যখন নানাবিধ পরীক্ষায় পড়, তখন তাহা সর্ব্বতোভাবে আনন্দের বিষয় জ্ঞান করিও; জানিও, তোমাদের বিশ্বাসের পরীক্ষাসিদ্ধতা ধৈর্য্য সাধন করে।”

সরাসরি আক্রমণ

৪. ঈশ্বরের লোকেদের আনুগত্য ভেঙে দেওয়ার জন্য শয়তান কীভাবে সরাসরি আক্রমণ করেছে?

অব্রাহামের জীবন স্পষ্টভাবে দেখায় যে আজকে খ্রীষ্টানরা ‘নানাবিধ পরীক্ষার’ মুখোমুখি হতে পারেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, শিনিয়রের আক্রমণকারীদের সঙ্গে তাকে লড়াই করতে হয়েছিল। (আদিপুস্তক ১৪:১১-১৬) অতএব, শয়তান তাড়নার মাধ্যমে সরাসরি আক্রমণ করে চলে, এতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে, অনেক দেশে যিহোবার সাক্ষিদের খ্রীষ্টীয় শিক্ষামূলক কাজের ওপর সরকারিভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আ্যংগোলার খ্রীষ্টানদেরকে তাদের শত্রুদের কাছ থেকে যে হিংস্রতা সহ্য করতে হয়েছিল, সেই বিষয়ে যিহোবার সাক্ষিদের বর্ষপুস্তক ২০০১ (ইংরেজি) জানায়। যিহোবার ওপর আস্থা রেখে এই দেশগুলোতে আমাদের ভাইয়েরা অটল থেকেছেন! দৌরাত্ম্য বা বিদ্রোহ করে নয় বরং বিচক্ষণতার সঙ্গে প্রচার কাজে রত থেকে তারা এর জবাব দিয়েছেন।—মথি ২৪:১৪.

৫. খ্রীষ্টান যুবক-যুবতীরা স্কুলে কীভাবে তাড়নার শিকার হতে পারে?

কিন্তু, তাড়না যে সবসময় মারধর বা আক্রমণের আকারে আসবে, তা নয়। অব্রাহামকে শেষ পর্যন্ত দুই ছেলে দিয়ে আশীর্বাদ করা হয়েছিল আর তাদের নাম ছিল ইশ্মায়েল ও ইস্‌হাক। আদিপুস্তক ২১:৮-১২ পদ আমাদের জানায় যে একবার ইস্‌হাককে ইশ্মায়েল “পরিহাস” করেছিল। গালাতীয়দের কাছে লেখা চিঠিতে পৌল বলেন যে, তা নিছক খেলার চেয়েও আরও বেশি কিছু ছিল কারণ তিনি বর্ণনা করেন যে ইস্‌হাককে ইশ্মায়েল তাড়না করত! (গালাতীয় ৪:২৯) তাই, সহপাঠীদের উপহাস ও বিরোধীদের গালিগালাজকেও তাড়না বলা যায়। রায়েন নামে একজন খ্রীষ্টান যুবক তার সহপাঠীদের কাছ থেকে যে যন্ত্রণা ভোগ করত সেই কথা মনে করে বলে: “স্কুলে আসা-যাওয়ার জন্য বাসে ১৫ মিনিটের যাত্রা মনে হতো ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে চলছে, কারণ আমাকে অনেক আজেবাজে কথা শুনতে হতো। তারা সিগারেটের লাইটারে ক্লিপ গরম করে আমার গায়ে ছেঁকা দিত।” কেন তারা এমন নিষ্ঠুর আচরণ করত? “আমার ঈশতান্ত্রিক শিক্ষা স্কুলের অন্যান্য যুবক-যুবতীদের থেকে আমাকে একেবারে আলাদা করেছিল।” তাসত্ত্বেও, বাবামার সাহায্যে রায়েন বিশ্বস্তভাবে ধৈর্য ধরতে পেরেছিল। যুবক-যুবতীরা, তোমাদের সঙ্গী সাথিদের বিদ্রূপ, হাসি-ঠাট্টার জন্য তোমরা কি উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছ? নিরুৎসাহ হয়ো না! বিশ্বস্তভাবে স্থির থেকে তোমরা যীশুর কথাগুলোকে সত্যি হতে দেখবে: “ধন্য তোমরা, যখন লোকে আমার জন্য তোমাদিগকে নিন্দা ও তাড়না করে, এবং মিথ্যা করিয়া তোমাদের বিরুদ্ধে সর্ব্বপ্রকার মন্দ কথা বলে।”—মথি ৫:১১.

রোজকার উদ্বেগগুলো

৬. কোন্‌ বিষয়গুলো আজকে সহ খ্রীষ্টানদের সম্পর্কে ফাটল ধরাতে পারে?

আজকে আমরা যে চাপগুলোর মুখোমুখি হই, তার মধ্যে রোজকার সাধারণ উদ্বেগগুলো রয়েছে। অব্রাহামের পশুপালকদের ও তার ভাইপো লোটের পশুপালকদের মধ্যে যখন ঝগড়া হয়েছিল, তখন তাকেও চাপ মোকাবিলা করতে হয়েছিল। (আদিপুস্তক ১৩:৫-৭) একইভাবে আজকে, ব্যক্তিত্বের সংঘাত ও সামান্য বিষয় নিয়ে হিংসাহিংসি আমাদের সম্পর্কে ফাটল ধরাতে পারে ও এমনকি মণ্ডলীর শান্তি নষ্ট করে দিতে পারে। “যেখানে ঈর্ষা ও প্রতিযোগিতা, সেইখানে অস্থিরতা ও সমুদয় দুষ্কর্ম্ম থাকে।” (যাকোব ৩:১৬) তাই, অব্রাহামের মতো আমাদেরও নিরুৎসাহ না হওয়া, শান্তির ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করতে পারে এমন অহংকারকে জায়গা না দেওয়া এবং অন্যদের সুযোগসুবিধাগুলোকে আগে রাখা কত গুরুত্বপূর্ণ!—১ করিন্থীয় ১৩:৫; যাকোব ৩:১৭.

৭. (ক) কোন সহ খ্রীষ্টান যদি কাউকে আঘাত দেন, তাহলে ওই ব্যক্তির কী করা উচিত? (খ) অন্যদের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে অব্রাহাম কীভাবে সুন্দর উদাহরণ রেখেছিলেন?

কোন সহ বিশ্বাসী আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছে বলে আমরা যখন মনে করি, তখন শান্তিপ্রিয় হওয়া খুবই কঠিন হতে পারে। হিতোপদেশ ১২:১৮ পদ বলে: “কেহ কেহ অবিবেচনার কথা বলে, খড়্গাঘাতের মত।” অবিবেচনার কথা এমনকি যদি সরলভাবেও বলা হয়, তবুও তা অনেক কষ্ট দিতে পারে। কষ্ট আরও বেড়ে যায় যদি আমরা মনে করি যে আমাদের সম্বন্ধে মিথ্যা কথা বলা হয়েছে বা আমাদের বদনাম করা হয়েছে। (গীতসংহিতা ৬:৬, ৭) কিন্তু একজন খ্রীষ্টানের কখনও কষ্টকর অনুভূতির কারণে নিরুৎসাহ হয়ে পড়া উচিত নয়! আপনি যদি এমন পরিস্থিতিতে পড়েন, তাহলে যে আপনাকে আঘাত দিয়েছে তার সঙ্গে দয়া দেখিয়ে কথা বলে সমস্যাটা সমাধান করার চেষ্টা করুন। (মথি ৫:২৩, ২৪; ইফিষীয় ৪:২৬) ওই ব্যক্তিকে ক্ষমা করার মনোভাব রাখুন। (কলসীয় ৩:১৩) বিরক্ত না হয়ে আমরা আমাদের আবেগকে সংযত করার ও সেইসঙ্গে আমাদের ভাইয়ের সঙ্গে সম্পর্ককে ভাল করে তোলার চেষ্টা করি। অব্রাহাম মনে মনে লোটের ওপর বিরক্ত হতে পারতেন কিন্তু তিনি হননি। বরং, লোট ও তার পরিবারকে রক্ষা করার জন্য অব্রাহাম ছুটে গিয়েছিলেন!—আদিপুস্তক ১৪:১২-১৬.

নিজেরা যে পরীক্ষাগুলো ডেকে আনি

৮. (ক) কীভাবে একজন খ্রীষ্টান নিজেকে ‘যাতনারূপ কন্টকে আপনাদিগকে বিদ্ধ করে’? (খ) বস্তুগত বিষয়গুলোর প্রতি অব্রাহাম কেন ভারসাম্য বজায় রাখতে পেরেছিলেন?

এটা স্বীকার করতেই হবে যে, কিছু কিছু পরীক্ষা আমরা নিজেরাই ডেকে আনি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যীশু তাঁর অনুগামীদের আদেশ দিয়েছিলেন: “তোমরা পৃথিবীতে আপনাদের জন্য ধন সঞ্চয় করিও না; এখানে ত কীটে ও মর্চ্চ্যায় ক্ষয় করে, এবং এখানে চোরে সিঁধ কাটিয়া চুরি করে।” (মথি ৬:১৯) তারপরেও, কিছু ভাইয়েরা বস্তুগত বিষয়গুলোকে রাজ্যের আগে রেখে ‘যাতনারূপ কন্টকে আপনারা আপনাদিগকে বিদ্ধ করে।’ (১ তীমথিয় ৬:৯, ১০) অব্রাহাম ঈশ্বরকে খুশি করার জন্য বস্তুগত আরাম-আয়েশকে স্বেচ্ছায় ত্যাগ করেছিলেন। “বিশ্বাসে তিনি বিদেশের ন্যায় প্রতিজ্ঞাত দেশে প্রবাসী হইলেন, তিনি সেই প্রতিজ্ঞার সহাধিকারী ইস্‌হাক ও যাকোবের সহিত তাম্বুতেই বাস করিতেন; কারণ তিনি ভিত্তিমূলবিশিষ্ট সেই নগরের অপেক্ষা করিতেছিলেন, যাহার স্থাপনকর্ত্তা ও নির্ম্মাতা ঈশ্বর।” (ইব্রীয় ১১:৯, ১০) ভবিষ্যৎ ‘নগর’ বা ঈশ্বরের সরকারের প্রতি অব্রাহামের বিশ্বাস তাকে ধনসম্পদের ওপর নির্ভর না করতে সাহায্য করেছিল। আমাদের জন্যও কি একই বিষয় করা বিজ্ঞের কাজ হবে না?

৯, ১০. (ক) খ্যাতি পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা কীভাবে কষ্ট ডেকে আনতে পারে? (খ) আজকে একজন ভাই কীভাবে নিজেকে ‘ক্ষুদ্র ব্যক্তি’ বলে মনে করতে পারেন?

আরেকটা দিক বিবেচনা করুন। বাইবেলে এই জোরালো নির্দেশনা পাওয়া যায়: “যদি কেহ মনে করে, আমি কিছু, কিন্তু বাস্তবিক সে কিছুই নয়, তবে সে আপনি আপনাকে ভুলায়।” (গালাতীয় ৬:৩) এছাড়াও, আমাদেরকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, “প্রতিযোগিতার কিম্বা অনর্থক দর্পের বশে কিছুই করিও না, বরং নম্রভাবে . . . কর।” (ফিলিপীয় ২:৩) কেউ কেউ এই পরামর্শকে কাজে না লাগিয়ে নিজেরাই বিভিন্ন পরীক্ষা ডেকে আনে। তারা যখন মণ্ডলীতে কোন দায়িত্ব পান না, তখন “উত্তম কার্য্য” করার ইচ্ছা না করে বরং সুখ্যাতি লাভ করার আকাঙ্ক্ষা দ্বারা চালিত হওয়ায় উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন ও অসন্তুষ্ট হন।—১ তীমথিয় ৩:১.

১০ ‘একজনের বিষয়ে যেমন বোধ করা উপযুক্ত, তদপেক্ষা বড় বোধ না করিয়া’ অব্রাহাম এক সুন্দর উদাহরণ রেখেছিলেন। (রোমীয় ১২:৩) মল্কীষেদকের সঙ্গে তার যখন দেখা হয়েছিল, তখন অব্রাহাম এমন ভাব দেখাননি যে, ঈশ্বর তাকে অনুগ্রহ দেখিয়েছেন বলে তিনি শ্রেষ্ঠ। বরং দশমাংশ দিয়ে যাজক হিসেবে মল্কীষেদকের শ্রেষ্ঠ মর্যাদাকে তিনি স্বীকার করেছিলেন। (ইব্রীয় ৭:৪-৭) একইভাবে আজকে খ্রীষ্টানদেরও নিজেদেরকে ‘ক্ষুদ্র ব্যক্তি’ মনে করা উচিত এবং লোকেদের কাছ থেকে নিজেদের খ্যাতি লাভ করার চেষ্টা করা উচিত নয়। (লূক ৯:৪৮) আপনার যদি এমন মনে হয় যে, মণ্ডলীতে যারা নেতৃত্ব নিচ্ছেন তারা আপনাকে কিছু দায়িত্ব দিচ্ছেন না, তাহলে সৎভাবে নিজেকে পরীক্ষা করে দেখুন যে, আপনার ব্যক্তিত্বের কোন্‌ কোন্‌ দিকগুলোতে অথবা কোন কাজ করার সময় আপনি কীভাবে উন্নতি করতে পারেন। আপনার যে দায়িত্বগুলো নেই, সেগুলোর জন্য মনে বিরক্তি পুষে না রেখে বরং আপনার যে দায়িত্বগুলো আছে বিশেষ করে, অন্যদেরকে যিহোবার সম্বন্ধে জানতে সাহায্য করে পূর্ণ উপকার লাভ করুন। হ্যাঁ, “ঈশ্বরের পরাক্রান্ত হস্তের নীচে নত হও, যেন তিনি উপযুক্ত সময়ে তোমাদিগকে উন্নত করেন।”—১ পিতর ৫:৬.

অদৃশ্য বিষয়গুলোর ওপর বিশ্বাস

১১, ১২. (ক) মণ্ডলীর কেউ কেউ হয়তো কেন তৎপরতার মনোভাব হারিয়ে ফেলেতে পারেন? (খ) ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলোর ওপর বিশ্বাস রেখে অব্রাহাম তার জীবনকে গড়ে তুলে কীভাবে এক সুন্দর উদাহরণ রেখেছিলেন?

১১ আরেকটা পরীক্ষা হতে পারে যে, এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থার শেষ আসতে আপাতদৃষ্টিতে দেরি হচ্ছে বলে মনে হতে পারে। ২ পিতর ৩:১২ পদ অনুসারে, খ্রীষ্টানরা “ঈশ্বরের সেই দিনের আগমনের অপেক্ষা ও আকাঙ্ক্ষা” করেন। কিন্তু, অনেকে এই “দিনের” জন্য বছরের পর বছর ধরে ও কেউ কেউ অনেক সময় ধরে অপেক্ষা করেছেন। ফলে, কেউ কেউ উৎসাহ ও তৎপরতার মনোভাব হারিয়ে ফেলতে পারেন।

১২ আরেকবার, অব্রাহামের উদাহরণ বিবেচনা করুন। ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলো যদিও তার জীবনকালে পরিপূর্ণ হওয়ার কোন সম্ভাবনাই ছিল না কিন্তু তবুও তিনি সেগুলোর ওপর বিশ্বাস রেখে তার পুরো জীবন গড়ে তুলেছিলেন। এটা ঠিক যে, তিনি তার ছেলে ইস্‌হাক বড় হওয়া পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন। কিন্তু, অব্রাহামের বংশের লোকেদেরকে “আকাশের তারাগণের” অথবা “সমুদ্রতীরস্থ বালুকার” সঙ্গে তুলনা করার জন্য আরও কয়েকশ বছর লাগবে। (আদিপুস্তক ২২:১৭) তাই বলে অব্রাহাম বিরক্ত হননি বা উৎসাহ হারিয়ে ফেলেননি। সেইজন্য অব্রাহাম ও অন্যান্য কুলপতিদের বিষয়ে প্রেরিত পৌল বলেছিলেন: “বিশ্বাসানুরূপে ইহাঁরা সকলে মরিলেন; ইহাঁরা প্রতিজ্ঞাকলাপের ফল প্রাপ্ত হন নাই, কিন্তু দূর হইতে তাহা দেখিতে পাইয়া সাদর সম্ভাষণ করিয়াছিলেন, এবং আপনারা যে পৃথিবীতে বিদেশী ও প্রবাসী, ইহা স্বীকার করিয়াছিলেন।”—ইব্রীয় ১১:১৩.

১৩. (ক) আজকে খ্রীষ্টানরা কীভাবে “প্রবাসী”-দের মতো? (খ) কেন যিহোবা এই বিধিব্যবস্থার শেষ আনবেন?

১৩ যে প্রতিজ্ঞাগুলোর পরিপূর্ণতা অনেক ‘দূরে’ ছিল, অব্রাহাম যদি সেই প্রতিজ্ঞাগুলোর ওপর তার জীবনকে কেন্দ্রীভূত করতে পারেন, তাহলে আজকে আমাদের তা আরও কত বেশি করা উচিত, যখন এই বিষয়গুলোর পরিপূর্ণতা খুবই কাছে! অব্রাহামের মতো, আমাদেরও স্থায়ীভাবে ইচ্ছেখুশি মতো জীবনযাপন করা বাদ দিয়ে নিজেদেরকে শয়তানের বিধিব্যবস্থায় “প্রবাসী” হিসেবে দেখতে হবে। স্বাভাবিকভাবেই আমরা মেনে নেব যে, “সকল বিষয়ের পরিণাম” শুধু কাছে নয় কিন্তু এখনই। (১ পিতর ৪:৭) হতে পারে আমরা গুরুতর কোন অসুস্থতায় ভুগছি। কিংবা টাকাপয়সার অভাব আমাদের খুবই ভারগ্রস্ত করে তুলতে পারে। কিন্তু, আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, যিহোবা আমাদেরকে এই শোচনীয় অবস্থা থেকে শুধু উদ্ধার করার জন্যই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে তাঁর নিজের নামকে পবিত্র করার জন্যও শেষ নিয়ে আসবেন। (যিহিষ্কেল ৩৬:২৩; মথি ৬:৯, ১০) তাই, আমাদের সুবিধাজনক সময়ে যে শেষ আসবে তা নয় বরং যিহোবার উদ্দেশ্যগুলো পূর্ণ হওয়ার জন্য যখন সবচেয়ে ভাল সময় হবে, তখনই শেষ আসবে।

১৪. ঈশ্বরের দীর্ঘসহিষ্ণুতা আজকে খ্রীষ্টানদের কীভাবে উপকার করে?

১৪ এছাড়াও মনে রাখবেন যে, “প্রভু নিজ প্রতিজ্ঞা বিষয়ে দীর্ঘসূত্রী নহেন—যেমন কেহ কেহ দীর্ঘসূত্রিতা জ্ঞান করে—কিন্তু তোমাদের পক্ষে তিনি দীর্ঘসহিষ্ণু; কতকগুলি লোক যে বিনষ্ট হয়, এমন বাসনা তাঁহার নাই; বরং সকলে যেন মনপরিবর্ত্তন পর্য্যন্ত পঁহুছিতে পায়, এই তাঁহার বাসনা।” (২ পিতর ৩:৯) লক্ষ্য করুন, ঈশ্বর “তোমাদের পক্ষে দীর্ঘসহিষ্ণু” অর্থাৎ খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর সদস্যদের পক্ষে তিনি দীর্ঘসহিষ্ণু। (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) সম্ভবত আমাদের কারও কারও বিভিন্ন পরিবর্তন ও রদবদল করতে আরেকটু সময় লাগতে পারে, যাতে আমাদেরকে “তাঁহার কাছে . . . নিষ্কলঙ্ক ও নির্দ্দোষ অবস্থায় শান্তিতে দেখিতে পাওয়া যায়।” (২ পিতর ৩:১৪) তাই, ঈশ্বর এতটা দীর্ঘসহিষ্ণু হয়েছেন বলে আমাদের কি কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত নয়?

বিভিন্ন বাধার মধ্যেও আনন্দ খোঁজা

১৫. পরীক্ষার মধ্যে যীশু কীভাবে তাঁর আনন্দকে বজায় রাখতে পেরেছিলেন এবং তাঁকে অনুকরণ করা আজকে খ্রীষ্টানদেরকে কীভাবে উপকার করতে পারে?

১৫ অব্রাহামের জীবন থেকে খ্রীষ্টানরা আজকে অনেক কিছু শিখতে পারেন। শুধু বিশ্বাসই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে তিনি দীর্ঘসহিষ্ণুতা, বিচক্ষণতা, সাহস ও নিঃস্বার্থ প্রেম দেখিয়েছিলেন। তিনি যিহোবার উপাসনাকে তার জীবনে সবচেয়ে প্রথমে রেখেছিলেন। তারপরেও আমাদের এই কথা মনে রাখা উচিত যে, আমাদের অনুকরণের জন্য যীশু খ্রীষ্ট শ্রেষ্ঠ উদাহরণ রেখে গেছেন। তিনি বিভিন্ন কষ্ট ও পরীক্ষার মুখোমুখি হয়েছিলেন কিন্তু তবুও তাঁর আনন্দ কখনও হারিয়ে ফেলেননি। কেন? কারণ তাঁর সামনে যে আশা ছিল, সেটার প্রতি তিনি দৃষ্টি রেখেছিলেন। (ইব্রীয় ১২:২, ৩) তাই পৌল প্রার্থনা করেছিলেন: “ধৈর্য্যের ও সান্ত্বনার ঈশ্বর এমন বর দিউন, যাহাতে তোমরা খ্রীষ্ট যীশুর অনুরূপে পরস্পর একমনা হও।” (রোমীয় ১৫:৫) অতএব, শয়তান আমাদের সামনে যে বাধাই রাখুক না কেন, আমাদের যদি সঠিক মনোভাব থাকে, তাহলে আমরা এর মধ্যেও আনন্দ খুঁজে পেতে পারি।

১৬. আমাদের সমস্যাগুলোকে যখন পাহাড় সমান বলে মনে হয়, তখন আমরা কী করতে পারি?

১৬ সমস্যাগুলোকে যখন পাহাড় সমান বলে মনে হয়, তখন মনে রাখবেন যে, যিহোবা অব্রাহামকে যেমন ভালবাসতেন তেমনই আপনাকেও ভালবাসেন। তিনি চান যেন আপনি সফল হন। (ফিলিপীয় ১:৬) যিহোবার ওপর আপনার পূর্ণ আস্থা রাখুন, নিশ্চিত থাকুন যে, “তিনি তোমাদের প্রতি তোমাদের শক্তির অতিরিক্ত পরীক্ষা ঘটিতে দিবেন না, বরং পরীক্ষার সঙ্গে সঙ্গে রক্ষার পথও করিয়া দিবেন, যেন তোমরা সহ্য করিতে পার।” (১ করিন্থীয় ১০:১৩) রোজ ঈশ্বরের বাক্য পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। (গীতসংহিতা ১:২) প্রার্থনায় নিবিষ্ট থাকুন, সহ্য করার জন্য সাহায্য চেয়ে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করুন। (ফিলিপীয় ৪:৬) তিনি “যাহারা তাঁহার কাছে যাচ্ঞা করে, তাহাদিগকে পবিত্র আত্মা দান করিবেন।” (লূক ১১:১৩) আপনাকে আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে শক্তিশালী করার জন্য যিহোবা যে ব্যবস্থাগুলো জুগিয়েছেন, যেমন বাইবেল-ভিত্তিক প্রকাশনাগুলোর পূর্ণ উপকার নিন। এছাড়াও আমাদের ভ্রাতৃসমাজের সাহায্য চান। (১ পিতর ২:১৭) বিশ্বস্তভাবে খ্রীষ্টীয় সভাগুলোতে যোগ দিন কারণ সেখানে আপনি ধৈর্য ধরার জন্য আপনার যে উৎসাহ দরকার তা পাবেন। (ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) এই দৃঢ় প্রত্যয়ে আনন্দ করুন যে, আপনার ধৈর্য ঈশ্বরের চোখে আপনাকে পরীক্ষাসিদ্ধ অবস্থায় নিয়ে আসে এবং আপনার বিশ্বস্ততা তাঁর হৃদয়কে আনন্দিত করে।—হিতোপদেশ ২৭:১১; রোমীয় ৫:৩-৫.

১৭. খ্রীষ্টানরা কেন হতাশ হয়ে পড়েন না?

১৭ ঈশ্বর অব্রাহামকে তাঁর ‘বন্ধুর’ মতো করে ভালবাসতেন। (যাকোব ২:২৩) তবুও অব্রাহামের জীবনে অত্যন্ত কঠিন পরীক্ষা ও ক্লেশ ছিল। তাই, খ্রীষ্টানরা এই সংকটপূর্ণ “শেষ কালে” এর চেয়ে ভাল কিছু আশা করতে পারেন না। আসলে, বাইবেল আমাদেরকে সাবধান করে যে, “দুষ্ট লোকেরা ও বঞ্চকেরা, . . . উত্তর উত্তর কুপথে অগ্রসর হইবে।” (২ তীমথিয় ৩:১, ১৩) হতাশ না হয়ে মনে রাখবেন, আমরা যে চাপগুলোর মুখোমুখি হই তা প্রমাণ দেয় যে, শয়তানের দুষ্ট বিধিব্যবস্থার শেষ একেবারে কাছে। কিন্তু যীশু আমাদেরকে মনে করিয়ে দেন, “যে কেহ শেষ পর্য্যন্ত স্থির থাকিবে, সেই পরিত্রাণ পাইবে।” (মথি ২৪:১৩) তাই, ‘সৎকর্ম্ম করিতে করিতে নিরুৎসাহ হইবেন না!’ অব্রাহামকে অনুকরণ করুন এবং তাদের মাঝে থাকুন, যারা “বিশ্বাস ও দীর্ঘসহিষ্ণুতা দ্বারা প্রতিজ্ঞা-সমূহের দায়াধিকারী।”—ইব্রীয় ৬:১২.

আপনি কি লক্ষ্য করেছেন?

• আজকে যিহোবার লোকেরা কেন পরীক্ষা ও ক্লেশ আশা করেন?

• কোন্‌ কোন্‌ উপায়ে শয়তান সরাসরি আক্রমণ করতে পারে?

• খ্রীষ্টানদের মধ্যে ব্যক্তিগত সমস্যাগুলোকে কীভাবে সমাধান করা যায়?

• অহংকার ও নিজেকে বড় মনে করা কীভাবে পরীক্ষায় ফেলতে পারে?

• ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলো পরিপূর্ণ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করে অব্রাহাম কীভাবে এক সুন্দর উদাহরণ রেখেছিলেন?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

অনেক খ্রীষ্টান যুবক-যুবতীরা বন্ধুবান্ধবদের বিদ্রূপের শিকার হয়ে তাড়না ভোগ করে

[২৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

অব্রাহামের সময়ে ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলোর পরিপূর্ণতা অনেক ‘দূরে’ ছিল কিন্তু তবুও তিনি সেগুলোকে কেন্দ্র করে তার জীবন গড়ে তুলেছিলেন