সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

‘শান্তির চেষ্টা করুন ও তাহার অনুধাবন করুন’

‘শান্তির চেষ্টা করুন ও তাহার অনুধাবন করুন’

‘শান্তির চেষ্টা করুন ও তাহার অনুধাবন করুন’

“যদি সাধ্য হয়, তোমাদের যত দূর হাত থাকে, মনুষ্যমাত্রের সহিত শান্তিতে থাক।”রোমীয় ১২:১৮.

১, ২. মানুষের ঘোষিত শান্তি কেন স্থায়ী হবে না তার কয়েকটা কারণ কী?

 মনে করুন একটা বাড়ির ভিত দুর্বল হয়ে গেছে, কড়িকাঠগুলো ক্ষয় পেতে শুরু করেছে এবং ছাদ নেমে গিয়েছে। আপনি কি সেখানে এসে আপনার ঘর বাঁধবেন? সম্ভবত না। এমনকি নতুন করে রং করালেও এই সত্যকে অস্বীকার করার উপায় নেই যে, ওই বাড়ির ভিত মজবুত নয়। আজ হোক বা কাল হোক, এটা ভেঙে পড়বেই।

এই জগৎ থেকে আসা যে কোন শান্তির অবস্থাও এই বাড়ির মতো। এর ভিত খুবই দুর্বল কারণ এর সমস্ত প্রতিজ্ঞা ও কলাকৌশল হল মানুষের, “যাহার নিকটে ত্রাণ নাই।” (গীতসংহিতা ১৪৬:৩) বিভিন্ন জাতি, উপজাতি ও সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় ইতিহাস ভরপুর। এটা ঠিক যে, কখনও কখনও কিছু সময়ের জন্য শান্তি ছিল কিন্তু তা কীধরনের শান্তি? দুটো জাতি যুদ্ধ করে যদি এর মধ্যে একটা পরাজিত হয় কিংবা লড়াই করে কোন লাভ হবে না বুঝতে পেরে তারা যদি শান্তি ঘোষণা করে, তাহলে সেটাকে কীধরনের শান্তি বলা যায়? যে ঘৃণা, সন্দেহ এবং হিংসার কারণে এই যুদ্ধ লেগেছিল তা কিন্তু রয়েই যায়। এই শান্তি হল নিছক এক মুখোশ অর্থাৎ শত্রুতাকে ঢাকার জন্য ‘এর ওপর রং দেওয়া’ মাত্র কিন্তু তা স্থায়ী শান্তি নয়।—যিহিষ্কেল ১৩:১০.

৩. ঈশ্বরের লোকেদের শান্তি কেন মানুষের ঘোষিত যে কোন শান্তি থেকে আলাদা?

তাসত্ত্বেও এই যুদ্ধবিধ্বস্ত জগতে প্রকৃত শান্তি আছে। কোথায়? যীশু খ্রীষ্টের পদচিহ্নের অনুগমনকারী অর্থাৎ প্রকৃত খ্রীষ্টানদের মাঝে, যারা যীশুর কথায় কান দেন এবং তাঁর জীবনধারা অনুকরণ করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেন। (১ করি. ১০:৩৪; ১ পিতর ২:২১) বিভিন্ন বর্ণের, সামাজিক পদমর্যাদার ও বিভিন্ন জাতীয়তার ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত সত্য খ্রীষ্টানদের মাঝে শান্তি রয়েছে, কারণ যীশু খ্রীষ্টের মুক্তির মূল্যের ভিত্তিতে ঈশ্বরের সঙ্গে তাদের যে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে, তার থেকে এই শান্তি আসে। তাদের এই শান্তি ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া একটা উপহার, কোন মানুষ তা এনে দেয়নি। (রোমীয় ১৫:৩৩; ইফিষীয় ৬:২৩, ২৪) “শান্তিরাজ” যীশু খ্রীষ্টের প্রতি বশীভূত হওয়ায় এবং “প্রেমের ও শান্তির ঈশ্বর” যিহোবাকে উপাসনা করার ফলেই এই শান্তি আসে।—যিশাইয় ৯:৬; ২ করিন্থীয় ১৩:১১.

৪. কীভাবে একজন খ্রীষ্টান শান্তির “অনুধাবন” করেন?

অসিদ্ধ মানুষের মধ্যে শান্তি এমনি এমনি চলে আসে না। এই কারণেই পিতর বলেছিলেন যে, প্রত্যেক খ্রীষ্টানের ‘শান্তির চেষ্টা ও তাহার অনুধাবন করা’ উচিত। (১ পিতর ৩:১১) কিন্তু, কীভাবে আমরা তা করতে পারি? প্রাচীন কালের একটা ভবিষ্যদ্বাণী এই প্রশ্নের উত্তর দেয়। যিশাইয়ের মাধ্যমে যিহোবা বলেছিলেন: “তোমার সন্তানেরা সকলে সদাপ্রভুর কাছে শিক্ষা পাইবে, আর তোমার সন্তানদের পরম শান্তি হইবে।” (যিশাইয় ৫৪:১৩; ফিলিপীয় ৪:৯) হ্যাঁ, যারা যিহোবার শিক্ষাগুলোতে মনোযোগ দেন তাদের মধ্যে প্রকৃত শান্তি থাকে। এছাড়া শান্তি ও সেইসঙ্গে “প্রেম, আনন্দ, . . . দীর্ঘসহিষ্ণুতা, মাধুর্য্য, মঙ্গলভাব, বিশ্বস্ততা, মৃদুতা, ইন্দ্রিয়দমন” হল ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার ফল। (গালাতীয় ৫:২২, ২৩) যারা নিষ্ঠুর, আনন্দহীন, অধৈর্য, দয়াহীন, মন্দ, অবিশ্বস্ত, হিংস্র বা অসংযমী তারা এইরকম শান্তি উপভোগ করতে পারে না।

“মনুষ্যমাত্রের সহিত শান্তিতে থাক”

৫, ৬. (ক) শান্তিপ্রিয় হওয়া এবং শান্তি বজায় রাখার মধ্যে কী পার্থক্য রয়েছে? (খ) কাদের সঙ্গে শান্তি বজায় রাখার জন্য খ্রীষ্টানরা প্রাণপণ চেষ্টা করেন?

শান্তি বলতে শান্ত অবস্থা বা স্থিরতাকে বোঝায়। এর মধ্যে বিভিন্ন পরিস্থিতি পড়ে যেখানে কোন বিবাদ থাকবে না। এমনকি মৃত ব্যক্তিও শান্তিতে আছে! কিন্তু, প্রকৃত শান্তি উপভোগ করার জন্য একজনকে কেবল শান্তিপ্রিয় হলেই হবে না। পাহাড়ের ওপর উপদেশ দেওয়ার সময় যীশু বলেছিলেন: “ধন্য যাহারা মিলন করিয়া দেয় [“শান্তি বজায় রাখে,” NW], কারণ তাহারা ঈশ্বরের পুত্ত্র বলিয়া আখ্যাত হইবে।” (মথি ৫:৯) যীশু সেই ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, যাদের পরে ঈশ্বরের আত্মিক পুত্ত্র হওয়ার ও স্বর্গে অমর জীবন লাভ করার সুযোগ হয়েছিল। (যোহন ১:১২; রোমীয় ৮:১৪-১৭) আর শেষ পর্যন্ত, মানবজাতির মধ্যে থেকে সমস্ত বিশ্বস্ত লোকেরা যাদের স্বর্গীয় আশা নেই, তারা “ঈশ্বরের সন্তানগণের প্রতাপের স্বাধীনতা” উপভোগ করবেন। (রোমীয় ৮:২১) যারা শান্তি বজায় রাখতে চান একমাত্র তারাই এইরকম আশা করতে পারেন। ‘শান্তি বজায় রাখার’ জন্য যে গ্রিক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে তার আক্ষরিক মানে হল, “শান্তি স্থাপনকারী।” শান্তিপ্রিয় অর্থাৎ শান্তিতে থাকা এবং শান্তি বজায় রাখার মধ্যে প্রায়ই পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। শাস্ত্রে শান্তি বজায় রাখা বলতে বোঝায় শান্তি বাড়ানোর জন্য কাজ করা, কখনও কখনও এমন জায়গায় শান্তি স্থাপন করা যেখানে আগে শান্তির অভাব ছিল।

এই কথা মাথায় রেখে, রোমীয়দের কাছে লেখা চিঠিতে প্রেরিত পৌলের পরামর্শের কথা চিন্তা করুন: “যদি সাধ্য হয়, তোমাদের যত দূর হাত থাকে, মনুষ্যমাত্রের সহিত শান্তিতে থাক।” (রোমীয় ১২:১৮) এখানে পৌল রোমীয়দেরকে শুধু শান্তভাব বজায় রাখতে বলছিলেন না, যদিও তা উপকারজনক ছিল। তিনি তাদেরকে শান্তি স্থাপন করার জন্য উৎসাহ দিচ্ছিলেন। কাদের সঙ্গে? “মনুষ্যমাত্রের” সঙ্গে অর্থাৎ পরিবারের সদস্য, সহ খ্রীষ্টান এবং এমনকি তাদের সঙ্গেও যারা তাদের সঙ্গে একই বিশ্বাসী ছিল না। তিনি রোমীয়দের উৎসাহ দিয়েছিলেন যাতে তারা ‘তাহাদের যত দূর হাত থাকে’ অন্যদের সঙ্গে শান্তিতে থাকেন। অবশ্য এই কথা বলে তিনি বোঝাননি যে, শান্তি স্থাপনের জন্য অন্যদের বিশ্বাসের সঙ্গে তাদের আপোশ করতে হবে। অযথা অন্যদের বিরোধিতা না করে, শান্তি রাখার উদ্দেশ্য নিয়ে অন্যদের কাছে তাদের যাওয়া উচিত। আর মণ্ডলীর লোকেদের সঙ্গে হোক বা বাইরের লোকেদের সঙ্গে হোক, এই উদ্দেশ্য খ্রীষ্টানদেরকে মনে রাখতে হতো। (গালাতীয় ৬:১০) এর সঙ্গে মিল রেখে পৌল লিখেছিলেন: “পরস্পরের এবং সকলের প্রতি সর্ব্বদা সদাচরণের অনুধাবন কর।”—১ থিষলনীকীয় ৫:১৫.

৭, ৮. যারা তাদের বিশ্বাসের সঙ্গে একমত নন সেই লোকেদের প্রতি কীভাবে ও কেন খ্রীষ্টানরা শান্তি বজায় রাখেন?

যারা আমাদের বিশ্বাসের সঙ্গে একমত নন ও যারা এমনকি আমাদের বিশ্বাসের বিরোধিতা করেন, তাদের সঙ্গে আমরা কীভাবে শান্তি বজায় রাখতে পারি? একটা উপায় হল, আমরা নিজেদেরকে শ্রেষ্ঠ বলে জাহির করা এড়িয়ে চলতে পারি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কাউকে হেয় করে কথা বললে কখনও শান্তি বজায় রাখা হবে না। বিভিন্ন সংগঠন ও বিভিন্ন শ্রেণীর লোকেদের বিরুদ্ধে যিহোবা তাঁর বিচার প্রকাশ করেছেন কিন্তু কোন ব্যক্তি শাস্তি পাওয়ার যোগ্য বলে তাকে নিন্দা করার কোন অধিকার আমাদের নেই। সত্যি বলতে কী, আমরা অন্যদের এমনকি আমাদের বিরোধীদেরও বিচার করি না। ক্রীতীতে খ্রীষ্টানরা মানব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কেমন আচরণ করবে, সেই সম্বন্ধে তীতকে পরামর্শ দিতে বলার পর পৌল তাদেরকে মনে করিয়ে দিতে বলেছিলেন, তারা যেন “কাহারও নিন্দা না করে, নির্ব্বিরোধ ও ক্ষান্তশীল হয়, সকল মনুষ্যের কাছে সম্পূর্ণ মৃদুতা দেখায়।”—তীত ৩:১, ২.

যারা আমাদের বিশ্বাসের সঙ্গে একমত নন তাদের কাছে সত্য জানানোর জন্য তাদের সঙ্গে শান্তি বজায় রাখা খুবই উপকারজনক। অবশ্য, আমরা সেই লোকেদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করি না, যারা “শিষ্টাচার নষ্ট করে।” (১ করিন্থীয় ১৫:৩৩) তাসত্ত্বেও, আমরা তাদের প্রতি সৌজন্য মনোভাব দেখাতে পারি এবং আমাদের উচিত সমস্ত লোকেদের সঙ্গে মর্যাদা ও দয়া দেখিয়ে আচরণ করা। পিতর লিখেছিলেন: “পরজাতীয়দের মধ্যে আপন আপন আচার ব্যবহার উত্তম করিয়া রাখ; তাহা হইলে তাহারা যে বিষয়ে দুষ্কর্ম্মকারী বলিয়া তোমাদের পরীবাদ করে, স্বচক্ষে তোমাদের সৎক্রিয়া দেখিলে সেই বিষয়ে তত্ত্বাবধানের দিনে ঈশ্বরের গৌরব করিবে।”—১ পিতর ২:১২.

পরিচর্যায় শান্তি বজায় রাখা

৯, ১০. অবিশ্বাসীদের সঙ্গে শান্তি বজায় রেখে কথা বলার বিষয়ে প্রেরিত পৌল কী উদাহরণ রেখেছিলেন?

প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানরা তাদের সাহসের জন্য সুপরিচিত ছিলেন। তারা তাদের বার্তাকে হালকা করে ফেলেননি এবং যখন বিরোধিতার মুখোমুখি হয়েছিলেন, তখন তারা মানুষের চেয়ে বরং ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন করার জন্য দৃঢ় ছিলেন। (প্রেরিত ৪:২৯; ৫:২৯) কিন্তু তাই বলে তারা সাহস আর রূঢ় ব্যবহারকে মিলিয়ে ফেলেননি। রাজা হেরোদ আগ্রিপ্প ২য় এর কাছে পৌল তার বিশ্বাস সম্বন্ধে আত্মপক্ষ সমর্থন করার সময় কী করেছিলেন, তা একটু ভেবে দেখুন। নিজের ছোট বোন বর্ণীকীর সঙ্গে হেরোদ আগ্রিপ্পের অনৈতিক সম্পর্ক ছিল। কিন্তু, আগ্রিপ্পের সামনে পৌল নৈতিকতার ওপর বক্তৃতা দিতে শুরু করেননি। এর বদলে তিনি সেই বিষয়গুলোর ওপর জোর দিয়েছিলেন যেগুলোর বিষয়ে আগ্রিপ্প ও তিনি দুজনেই একমত ছিলেন আর আগ্রিপ্প যিহুদিদের রীতিনীতিতে অভিজ্ঞ ও ভাববাদীদেরকে বিশ্বাস করেন, এই কথা বলে পৌল তাকে সম্মান দেখিয়েছিলেন।—প্রেরিত ২৬:২, ৩, ২৭.

১০ পৌলকে মুক্তি দিতে পারেন, এমন একজন ব্যক্তিকে কি তিনি তোষামোদ করছিলেন? না। পৌল নিজে যে পরামর্শ দিয়েছিলেন এখানে তিনি তা-ই মেনে চলছিলেন এবং সত্য কথা বলেছিলেন। হেরোদ আগ্রিপ্পকে তিনি যা কিছু বলেছিলেন তার একটাও মিথ্যে ছিল না। (ইফিষীয় ৪:১৫) পৌল শান্তি স্থাপনকারী ছিলেন এবং তিনি জানতেন যে কীভাবে “সর্ব্বজনের কাছে সর্ব্ববিধ” হওয়া যায়। (১ করিন্থীয় ৯:২২) তার উদ্দেশ্য ছিল যীশুর বিষয়ে প্রচার করার জন্য তার অধিকারকে আদায় করা। একজন কার্যকারী শিক্ষক হিসেবে, তিনি এমন কিছু বিষয় বলে কথা শুরু করেছিলেন যাতে তিনি ও আগ্রিপ্প দুজনেই একমত ছিলেন। এভাবে পৌল এই দুশ্চরিত্র রাজার মনে খ্রীষ্টধর্ম সম্বন্ধে আরও ভাল ছাপ ফেলতে সাহায্য করেছিলেন।—প্রেরিত ২৬:২৮-৩১.

১১. আমাদের পরিচর্যায় কীভাবে আমরা শান্তি স্থাপনকারী হতে পারি?

১১ আমাদের পরিচর্যায় আমরা কীভাবে শান্তি স্থাপনকারী হতে পারি? পৌলের মতো আমাদেরও তর্কবিতর্ক এড়িয়ে চলা উচিত। এটা ঠিক যে, মাঝে মাঝে আমাদের বিশ্বাসের পক্ষসমর্থনের জন্য “নির্ভয়ে ঈশ্বরের বাক্য” বলা উচিত। (ফিলিপীয় ১:১৪) কিন্তু, আমাদের প্রধান লক্ষ্য হল সুসমাচার প্রচার করা। (মথি ২৪:১৪) একজন ব্যক্তি যদি বুঝতে পারেন যে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যগুলো পূর্ণ হচ্ছে, তাহলে তিনি মিথ্যা ধর্মীয় ধারণাগুলোকে বাদ দিতে এবং নোংরা অভ্যাসগুলো থেকে নিজেকে শুচি করতে পারেন। তাই, যতদূর সম্ভব সেই বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলা উপকার নিয়ে আসবে, যেগুলো আমাদের শ্রোতাদের মনে দাগ কাটবে এবং যে বিষয়গুলোতে আমরা তাদের সঙ্গে একমত। কিন্তু এর ঠিক বিপরীত হবে যদি একজন ব্যক্তির বিরোধিতা করা হয়, যার সঙ্গে কৌশলে কথা বললে তিনি হয়তো আমাদের বার্তা শুনতেন।—২ করিন্থীয় ৬:৩.

পরিবারে শান্তি স্থাপনকারীরা

১২. পরিবারে আমরা কোন্‌ কোন্‌ উপায়ে শান্তি স্থাপনকারী হতে পারি?

১২ পৌল বলেছিলেন যে, যারা বিয়ে করবে তাদের “দৈহিক ক্লেশ ঘটিবে।” (১ করিন্থীয় ৭:২৮) বিভিন্ন কঠিন অবস্থা আসবে। অন্যান্য সমস্যা ছাড়াও, মাঝে মাঝে কিছু দম্পতিদের মধ্যে হয়তো মতের অমিল হতে পারে। এমনটা হলে তা কীভাবে সমাধান করা উচিত? শান্তি বজায় রেখে। একজন শান্তি স্থাপনকারী আপ্রাণ চেষ্টা করবেন, যাতে ঝগড়া বেশি দূর না গড়ায়। কীভাবে? প্রথমত, জিহ্বাকে দমন করে। কাউকে ব্যঙ্গ বা অপমান করে কথা বলা হলে, এই ক্ষুদ্র অঙ্গ সত্যিই “অশান্ত মন্দ বিষয়, মৃত্যুজনক বিষে পরিপূর্ণ” হতে পারে। (যাকোব ৩:৮) একজন শান্তি স্থাপনকারী কাউকে ছোট করার জন্য নয় বরং গেঁথে তোলার জন্য তার জিহ্বাকে কাজে লাগান।—হিতোপদেশ ১২:১৮.

১৩, ১৪. আমরা যখন অন্যায় কিছু বলে ফেলি বা উত্তেজিত হয়ে পড়ি, তখন কীভাবে শান্তি বজায় রাখতে পারি?

১৩ অসিদ্ধ হওয়ায় আমরা সবাই-ই মাঝে মাঝে এমন কিছু বলি, যার জন্য পরে অনুশোচনা করি। যদি এমন হয়, তাহলে তাড়াতাড়ি শুধরে ফেলুন অর্থাৎ শান্তি স্থাপন করুন। (হিতোপদেশ ১৯:১১; কলসীয় ৩:১৩) ‘বাগ্‌যুদ্ধ’ ও “চিরবিসংবাদ [“সামান্য ব্যাপার নিয়ে প্রচণ্ড কলহ,” NW]” এড়িয়ে চলুন। (১ তীমথিয় ৬:৪, ৫) এর বদলে ঘটনার গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করুন ও আপনার সঙ্গীর অনুভূতিকে বোঝার চেষ্টা করুন। সে যদি আপনার সঙ্গে কর্কশভাবে কথা বলে, তাহলে আপনি সেভাবে কথা বলবেন না। মনে রাখবেন, “কোমল উত্তর ক্রোধ নিবারণ করে।”—হিতোপদেশ ১৫:১.

১৪ মাঝে মাঝে আপনার হয়তো হিতোপদেশ ১৭:১৪ পদের পরামর্শ বিবেচনা করার দরকার হতে পারে: “উচ্চণ্ড হইবার পূর্ব্বে বিবাদ ত্যাগ কর।” উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি ত্যাগ করুন। পরে যখন মেজাজ ঠাণ্ডা হয়, তখন আপনি হয়তো শান্তি বজায় রেখে সমস্যাটা সমাধান করতে পারবেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে, সাহায্যের জন্য পরিপক্ব খ্রীষ্টান অধ্যক্ষকে ডাকা ভাল হতে পারে। বিবাহিত জীবনে শান্তি বিপন্ন হওয়ার হুমকি দেখা দিলে, এইরকম অভিজ্ঞ ও সহানুভূতিশীল ব্যক্তিরা সতেজ হতে সাহায্য করতে পারেন।—যিশাইয় ৩২:১, ২.

মণ্ডলীতে শান্তি স্থাপনকারীরা

১৫. যাকোবের কথা অনুসারে, কিছু খ্রীষ্টানদের মধ্যে কোন্‌ মন্দ মনোভাব গড়ে উঠেছিল আর সেই মনোভাব কেন “পার্থিব,” “প্রাণিক” এবং “পৈশাচিক”?

১৫ দুঃখের বিষয় হল যে, প্রথম শতাব্দীর কিছু খ্রীষ্টানরা হিংসা ও প্রতিযোগিতার মনোভাব দেখিয়েছিল, যা ছিল শান্তির একেবারে বিপরীত বিষয়। যাকোব বলেছিলেন: “সেই জ্ঞান এমন নয়, যাহা উপর হইতে নামিয়া আইসে, বরং তাহা পার্থিব, প্রাণিক, পৈশাচিক। কেননা যেখানে ঈর্ষা ও প্রতিযোগিতা, সেইখানে অস্থিরতা ও সমুদয় দুষ্কর্ম্ম থাকে।” (যাকোব ৩:১৪-১৬) কেউ কেউ মনে করেন ‘প্রতিযোগিতার’ জন্য যে গ্রিক শব্দ অনুবাদ করা হয়েছে তা স্বার্থপর লক্ষ্য, পদমর্যাদার জন্য লড়াই করাকে বোঝায়। তাই, উপযুক্ত কারণেই যাকোব এটাকে “পার্থিব, প্রাণিক, পৈশাচিক” বলেছেন। ইতিহাস জুড়ে জগতের শাসকরা প্রতিযোগিতার বশে কাজ করেছেন, ঠিক যেমন বন্য জন্তুরা একে অন্যের সঙ্গে লড়াই করে। এইরকম প্রতিযোগিতা আসলেই “পার্থিব” এবং “প্রাণিক।” এছাড়াও এটা “পৈশাচিক।” এই ছলনাপূর্ণ মনোভাব সবচেয়ে প্রথমে ক্ষমতা-লোভী এক দূত প্রকাশ করেছিল, যে যিহোবা ঈশ্বরের বিরুদ্ধাচরণ করে মন্দ দূতেদের শাসক, শয়তানে পরিণত হয়েছিল।

১৬. প্রথম শতাব্দীর কিছু খ্রীষ্টানরা কীভাবে শয়তানের মতো মনোভাব দেখিয়েছিল?

১৬ খ্রীষ্টানদেরকে যাকোব পরামর্শ দিয়েছিলেন যাতে তারা প্রতিযোগিতার মনোভাব গড়ে না তোলেন কারণ তা শান্তি আনতে পারে না। তিনি লিখেছিলেন: “তোমাদের মধ্যে কোথা হইতে যুদ্ধ ও কোথা হইতে বিবাদ উৎপন্ন হয়? তোমাদের অঙ্গ প্রত্যঙ্গে যে সকল সুখাভিলাষ যুদ্ধ করে, সে সকল হইতে কি নয়?” (যাকোব ৪:১) এখানে, “সুখাভিলাষ” বলতে বস্তুগত সম্পদের প্রতি তীব্র লালসা অথবা খ্যাতি, কর্তৃত্ব বা ক্ষমতার জন্য আকাঙ্ক্ষাকে বোঝায়। যীশু যেমন বলেছিলেন যে তাঁর প্রকৃত অনুসারীদের ‘ক্ষুদ্র ব্যক্তি’ হতে হবে কিন্তু তা না হয়ে বিভিন্ন মণ্ডলীতে কেউ কেউ শয়তানের মতো প্রধান ব্যক্তি হতে চেয়েছিল। (লূক ৯:৪৮) এইরকম মনোভাব মণ্ডলীর শান্তি হরণ করতে পারে।

১৭. আজকে খ্রীষ্টানরা কীভাবে মণ্ডলীতে শান্তি স্থাপনকারী হতে পারেন?

১৭ আজকে, আমাদেরও বস্তুবাদী মনোভাব, হিংসা বা স্বার্থপর লক্ষ্য রাখার প্রবণতা বাদ দিতে হবে। আমরা যদি সত্যিই শান্তি স্থাপনকারী হই, তাহলে মণ্ডলীতে কেউ কেউ যদি কিছু কাজে আমাদের চেয়ে বেশি পারদর্শী হন, তাহলে আমরা নিজেদেরকে ছোট মনে করে কষ্ট পাব না কিংবা তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে অযথা সন্দেহ করে অন্যদের কাছে তাদের সুনামকে নষ্ট করব না। আমাদের যদি কোন লক্ষণীয় কর্মক্ষমতা থাকে, তাহলে আমরা সেটাকে অন্যদের চেয়ে নিজেদেরকে বিশেষ কেউ দেখানোর জন্য কাজে লাগাব না বা এইরকম ভাব দেখাব না যে, মণ্ডলী শুধু আমাদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার জন্যই দিন-দিন উন্নতি করবে। এইরকম মনোভাব বিভক্তি নিয়ে আসবে; এটা শান্তি আনবে না। শান্তি স্থাপনকারীরা নিজেদের মেধাকে অন্যদের কাছে জাহির করেন না বরং নম্র মনে তাদের ভাইদের সেবা করার জন্য ও যিহোবার সম্মান নিয়ে আসার জন্য সেগুলোকে কাজে লাগান। তারা উপলব্ধি করেন যে, কর্মক্ষমতা নয় কিন্তু প্রেমই হল একজন সত্য খ্রীষ্টানকে চেনার চিহ্ন।—যোহন ১৩:৩৫; ১ করিন্থীয় ১৩:১-৩.

‘শান্তি তোমার অধ্যক্ষ’

১৮. প্রাচীনরা কীভাবে নিজেদের মধ্যে শান্তি বাড়ান?

১৮ মণ্ডলীর প্রাচীনরা শান্তি স্থাপন করায় নেতৃত্ব দেন। যিহোবা তাঁর লোকেদের সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন: “আমি শান্তিকে তোমার অধ্যক্ষ করিব, ধার্ম্মিকতাকে তোমার শাসনকর্ত্তা করিব।” (যিশাইয় ৬০:১৭) এই ভবিষ্যদ্বাণীর সঙ্গে মিল রেখে খ্রীষ্টীয় পালকরা তাদের নিজেদের মধ্যে ও পালের মধ্যে শান্তি বাড়ানোর জন্য কঠোর পরিশ্রম করেন। প্রাচীনরা ‘উপর হইতে আসা’ শান্তিপূর্ণ ও যুক্তিসংগত “জ্ঞান” দেখিয়ে নিজেদের মধ্যে শান্তি বজায় রাখতে পারেন। (যাকোব ৩:১৭) বিভিন্ন পটভূমি ও জীবনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কারণে মণ্ডলীর প্রাচীনদের মধ্যে হয়তো মাঝে মাঝে ভিন্ন ভিন্ন মত থাকতে পারে। তার মানে কি এই যে, তাদের মধ্যে শান্তির অভাব আছে? এইরকম পরিস্থিতিকে যদি সঠিকভাবে মোকাবিলা করা যায়, তাহলে বলা যায় যে শান্তির অভাব নেই। শান্তি স্থাপনকারীরা নম্রভাবে তাদের চিন্তা প্রকাশ করেন ও সম্মান দেখিয়ে অন্যদের কথা শোনেন। একজন শান্তি স্থাপনকারী নিজের মতের সঙ্গে একগুঁয়েভাবে লেগে না থেকে আন্তরিকতার সঙ্গে তার ভাইয়ের মতামতকে বিবেচনা করবেন। বাইবেলের কোন নীতি লংঘন করা না হলে সাধারণত বিভিন্ন মতামত জানার সুযোগ থাকে। অন্যেরা যখন তার সঙ্গে একমত হন না, তখন একজন শান্তি স্থাপনকারী বেশির ভাগ লোকেদের কথা মেনে নেবেন ও তাদের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করবেন। এভাবে তিনি দেখাবেন যে তিনি যুক্তিবাদী। (১ তীমথিয় ৩:২, ৩) অভিজ্ঞ অধ্যক্ষরা জানেন যে, নিজেদের মতামত অনুযায়ী কিছু করার চেয়ে শান্তি রক্ষা করা আরও অনেক বেশি জরুরি।

১৯. মণ্ডলীতে প্রাচীনরা কীভাবে শান্তি স্থাপনকারী হিসেবে কাজ করেন?

১৯ প্রাচীনরা পালের সদস্যদের সমর্থন করে ও তাদের কাছ থেকে খুব বেশি আশা না করে শান্তি বাড়ান। এটা ঠিক যে, কখনও কখনও কাউকে কাউকে তার পথ পরিবর্তন করতে সাহায্য করার দরকার হতে পারে। (গালাতীয় ৬:১) কিন্তু, কাউকে শাসন করা একজন খ্রীষ্টান অধ্যক্ষের প্রধান কাজ নয়। বেশির ভাগ সময়ই তিনি অন্যদের প্রশংসা করেন। প্রেমময় প্রাচীনরা অন্যদের ভাল গুণগুলোকে দেখার চেষ্টা করেন। সহ খ্রীষ্টানদের কঠোর পরিশ্রমকে অধ্যক্ষরা উপলব্ধি করেন এবং তারা এই আস্থা রাখেন যে, সহ বিশ্বাসীরা তাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন।—২ করিন্থীয় ২:৩, ৪.

২০. সবাই যদি শান্তি স্থাপনকারী হয়, তাহলে মণ্ডলী কীভাবে উপকার পায়?

২০ তাই পরিবারে, মণ্ডলীতে এবং যারা আমাদের বিশ্বাসের সঙ্গে একমত নন তাদের সঙ্গে আচরণ করার সময় আমরা শান্তি বজায় রাখতে ও শান্তি রক্ষার জন্য কাজ করতে চেষ্টা করি। যদি আমরা অধ্যবসায়ের সঙ্গে শান্তি গড়ে তুলি, তাহলে আমরা মণ্ডলীর সুখ বাড়াতে অবদান রাখব। সেইসঙ্গে আমরা সুরক্ষিত হব এবং অনেক উপায়ে শক্তি পাব, যা পরের প্রবন্ধে আলোচনা করা হবে।

আপনি কি মনে করতে পারেন?

• শান্তি বজায় রাখার মানে কী?

• সাক্ষি নন এমন ব্যক্তিদের সঙ্গে আমরা কীভাবে শান্তি বজায় রেখে ব্যবহার করতে পারি?

• পরিবারে শান্তি বাড়ানোর কয়েকটা উপায় কী?

• প্রাচীনরা কীভাবে মণ্ডলীতে শান্তি বাড়াতে পারেন?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

শান্তি স্থাপনকারীরা নিজেদেরকে বড় মনে করা এড়িয়ে চলেন

[১০ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

পরিচর্যায়, বাড়িতে এবং মণ্ডলীতে খ্রীষ্টানরা শান্তি স্থাপন করার চেষ্টা করেন