সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

একজন “অপব্যয়ী” সন্তানকে আপনি কীভাবে সাহায্য করতে পারেন?

একজন “অপব্যয়ী” সন্তানকে আপনি কীভাবে সাহায্য করতে পারেন?

একজন “অপব্যয়ী” সন্তানকে আপনি কীভাবে সাহায্য করতে পারেন?

‘আনন্দ কর, কারণ সে হারাইয়া গিয়াছিল, এখন পাওয়া গেল।’লূক ১৫:৩২.

১, ২. (ক) খ্রীষ্টীয় সত্যের প্রতি কিছু যুবক-যুবতী কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে? (খ) এইরকম পরিস্থিতিতে বাবামা এবং ছেলেমেয়েদের অনুভূতি কেমন হতে পারে?

 “আমি সত্যে থাকতে চাই না!” একজন সন্তানের মুখ থেকে এইরকম কথা শুনে ঈশ্বর-ভয়শীল বাবামারা কত বড় আঘাতই না পান, যারা কিনা তাদের ছেলেমেয়েদেরকে খ্রীষ্টীয় পথে মানুষ করে তোলার জন্য কঠোর চেষ্টা করেছেন! আবার কোন কোন যুবক-যুবতী তাদের মনের কথা না জানিয়েই “ভাসিয়া চলিয়া” যায়। (ইব্রীয় ২:১) এদের মধ্যে অনেকে যীশুর বলা দৃষ্টান্তের অপব্যয়ী পুত্রকে চিত্রিত করে, যে তার বাবার ঘর ছেড়ে দূর দেশে গিয়ে তার সমস্ত সম্পত্তি অপচয় করেছিল।—লূক ১৫:১১-১৬.

যদিও বেশির ভাগ যিহোবার সাক্ষিদের এই সমস্যাটা নেই কিন্তু যাদের আছে, কোন সান্ত্বনার বাক্যই তাদের এই দুঃখকে পুরোপুরি দূর করতে পারে না। আর সেই বিপথগামী যুবক বা যুবতী যে দুঃখজনক পরিণতি ভোগ করতে পারে, সেটাকেও তুচ্ছ করা যায় না। তার হৃদয় ও বিবেক হয়তো তাকে দংশন করে। যীশুর বলা দৃষ্টান্তের সেই অপব্যয়ী পুত্র শেষ পর্যন্ত “চেতনা পাইলে” পর তার পিতা খুবই আনন্দিত হয়েছিলেন। বাবামা এবং মণ্ডলীর অন্যান্যরা কীভাবে অপব্যয়ীদেরকে ‘চেতনা পাইতে’ সাহায্য করতে পারেন?—লূক ১৫:১৭.

যে কারণে কেউ কেউ সত্য ছেড়ে চলে যায়

৩. কয়েকটা কারণ কী, যার জন্য কিছু যুবক-যুবতী খ্রীষ্টীয় মণ্ডলী ছেড়ে চলে যায়?

খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতে লক্ষ লক্ষ যুবক-যুবতী খুশি মনে যিহোবাকে সেবা করছে। তাহলে, কেন কিছু যুবক-যুবতী সত্য ছেড়ে চলে যেতে চায়? তারা হয়তো মনে করে যে, জগতের ভাল কিছু থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছে। (২ তীমথিয় ৪:১০) অথবা তারা হয়তো যিহোবার সুরক্ষিত খোঁয়াড়কে খুব বেশি কড়াকড়ি বলে মনে করতে পারে। এছাড়াও নিজেকে দোষী ভেবে বা কারও প্রেমে পড়ে কিংবা সমবয়সীদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠার ইচ্ছার জন্য একজন যুবক বা যুবতী যিহোবার পাল ছেড়ে চলে যেতে পারে। আবার কোন যুবক বা যুবতী হয়তো তার বাবামা বা অন্য খ্রীষ্টানদের কাজকে কপটতা বলে মনে করেও যিহোবাকে সেবা করা বন্ধ করে দিতে পারে।

৪. বেশির ভাগ সময়ই যুবক-যুবতীদের বিপথে যাওয়ার মূল কারণটা কী?

একজন সন্তানের বিদ্রোহী মনোভাব ও আচরণ সাধারণত আধ্যাত্মিক দুর্বলতার লক্ষণ আর এটা তার মনে কী আছে, তা প্রকাশ করে। (হিতোপদেশ ১৫:১৩; মথি ১২:৩৪) যে কারণেই একজন যুবক বা যুবতী বিপথে যাক না কেন, বেশির ভাগ সময়ই এর পিছনে মূল কারণটা হল যে, “সত্যের তত্ত্বজ্ঞান” তার হৃদয়ে নেই। (২ তীমথিয় ৩:৭) দায়সারাভাব নিয়ে যিহোবাকে উপাসনা করার বদলে যিহোবার সঙ্গে এক কাছের সম্পর্ক গড়ে তোলা যুবক-যুবতীদের জন্য আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তা করতে কী তাদেরকে সাহায্য করবে?

ঈশ্বরের নিকটবর্তী হও

৫. ঈশ্বরের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে তুলতে হলে একজন যুবক বা যুবতীর কী খুবই দরকার?

শিষ্য যাকোব লিখেছিলেন, “ঈশ্বরের নিকটবর্ত্তী হও, তাহাতে তিনিও তোমাদের নিকটবর্ত্তী হইবেন।” (যাকোব ৪:৮) আর তা করার জন্য একজন যুবক বা যুবতীকে ঈশ্বরের বাক্যের প্রতি ভালাবাসা গড়ে তুলতে সাহায্য করতে হবে। (গীতসংহিতা ৩৪:৮) প্রথম প্রথম, তার ‘দুগ্ধের’ অর্থাৎ বাইবেলের মৌলিক শিক্ষাগুলো শেখার প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু, সে যদি ঈশ্বরের বাক্য পড়ে আনন্দ পায় এবং “কঠিন খাদ্য” অর্থাৎ গভীর আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোকে ভালবাসতে শুরু করে, তাহলে খুব তাড়াতাড়ি সে আধ্যাত্মিক পরিপক্বতা লাভ করবে। (ইব্রীয় ৫:১১-১৪; গীতসংহিতা ১:২) একজন যুবক স্বীকার করেছিল যে, সে জগতের সঙ্গে গা ভাসিয়ে দিতে শুরু করেছিল কিন্তু পরে সে আধ্যাত্মিক মূল্যবোধগুলোকে উপলব্ধি করতে শুরু করে। এই মনোভাব পালটাতে কী তাকে সাহায্য করেছিল? পুরো বাইবেল পড়ার পরামর্শে সাড়া দিয়ে সে নিয়মিত বাইবেল পড়ার তালিকা বজায় রেখেছিল। যিহোবার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য রোজ ঈশ্বরের বাক্য পড়া অত্যন্ত জরুরি।

৬, ৭. ঈশ্বরের বাক্যের প্রতি ভালবাসা গড়ে তোলার জন্য বাবামারা কীভাবে তাদের ছেলেমেয়েদেরকে সাহায্য করতে পারেন?

বাবামারা তাদের ছেলেমেয়েদেরকে ঈশ্বরের বাক্যের প্রতি ভালবাসা গড়ে তুলতে সাহায্য করেন, তা কত জরুরি! নিয়মিত পারিবারিক অধ্যয়ন করা সত্ত্বেও, এক কিশোরী খারাপ বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে মেলামেশা করতে শুরু করেছিল। তার পারিবারিক অধ্যয়ন সম্বন্ধে সে মনে করে বলে: “বাবা যখন প্রশ্ন করতেন, তখন আমি কেবল দেখে দেখে উত্তরগুলো পড়ে যেতাম, এমনকি বাবার মুখের দিকেও আমি তাকাতাম না।” পারিবারিক অধ্যয়নের সময় শুধু একটা নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু শেষ করার বদলে বিজ্ঞ বাবামারা শিক্ষাদানের কৌশলকে কাজে লাগান। (২ তীমথিয় ৪:২) কোন যুবক বা যুবতীকে অধ্যয়ন থেকে আনন্দ পেতে হলে, তাকে মনে করতে হবে যে সে-ও এর সঙ্গে জড়িত আছে। সে কী মনে করে, এমন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করুন না কেন এবং তার মনের কথা খুলে বলতে বলুন না কেন? যে বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে, সেগুলো বাস্তব জীবনে কাজে লাগাতে যুবক-যুবতীদেরকে উৎসাহ দিন। *

এছাড়াও, শাস্ত্রীয় আলোচনাকে জীবন্ত করে তুলুন। দরকার হলে ছেলেমেয়েদেরকে বাইবেলের ঘটনা এবং নাটকগুলো অভিনয় করে দেখাতে বলুন। যে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে, তা কোথায় হয়েছে ও সেই জায়গার বৈশিষ্ট্যগুলো মনের চোখ দিয়ে দেখতে তাদেরকে সাহায্য করুন। এই ক্ষেত্রে মানচিত্র এবং নকশা হয়তো সাহায্য করতে পারে। হ্যাঁ, একটু চিন্তা করলেই পারিবারিক অধ্যয়নকে জীবন্ত এবং অন্যরকমভাবে করা যেতে পারে। বাবামাদেরও যিহোবার সঙ্গে তাদের কেমন সম্পর্ক, তা পরীক্ষা করে দেখা উচিত। তারা যখন ঈশ্বরের আরও নিকটবর্তী হন, তখন তারা তাদের সন্তানদেরও তা করতে সাহায্য করতে পারেন।—দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৫-৭.

৮. প্রার্থনা কীভাবে একজনকে ঈশ্বরের নিকটবর্তী হতে সাহায্য করে?

প্রার্থনাও একজনকে ঈশ্বরের নিকটবর্তী হতে সাহায্য করে। একজন কিশোরী খ্রীষ্টীয় জীবনযাপন করবে, নাকি তার বিশ্বাসে বিশ্বাসী নয় এমন বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে মেলামেশা করবে, তা নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যে পড়ে গিয়েছিল। (যাকোব ৪:৪) এই ব্যাপারে সে কী করেছিল? সে স্বীকার করে, ‘সবচেয়ে প্রথমে আমি এই ব্যাপারে কেমন বোধ করি, তা জানিয়ে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেছিলাম।’ অবশেষে সে তার প্রার্থনার উত্তর পেয়েছিল বলে জানিয়েছিল যখন সে খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতে এমন একজন বান্ধবীকে খুঁজে পায়, যার ওপর সে আস্থা রাখতে পারে। যিহোবা তাকে নির্দেশনা দিচ্ছে এইরকম মনে করে সে ঈশ্বরের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে তুলতে শুরু করে। বাবামারা তাদের নিজেদের প্রার্থনার মান উন্নত করে তাদের ছেলেমেয়েদেরকে সাহায্য করতে পারেন। পারিবারের সবাই মিলে প্রার্থনা করার সময় বাবামারা অন্তর থেকে প্রার্থনা করতে পারেন, যাতে তাদের ছেলেমেয়েরা বুঝতে পারে যে যিহোবার সঙ্গে তাদের বাবামার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।

ধৈর্য ধরুন ও সেইসঙ্গে দৃঢ় থাকুন

৯, ১০. স্বেচ্ছাচারী ইস্রায়েলীয়দের প্রতি দীর্ঘসহিষ্ণু হয়ে যিহোবা কোন্‌ উদাহরণ রেখেছিলেন?

একজন যুবক বা যুবতী যখন ভেসে যেতে শুরু করে, তখন সে হয়তো নিজেকে আলাদা করে রাখার চেষ্টা করতে পারে এবং তার বাবামা তার সঙ্গে আধ্যাত্মিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করার সমস্ত চেষ্টা সত্ত্বেও, তা শুনতে নাও চাইতে পারে। এইধরনের কঠিন পরিস্থিতিতে বাবামারা কী করতে পারেন? প্রাচীন ইস্রায়েলের সঙ্গে যিহোবা কী করেছিলেন, তা বিবেচনা করুন। স্বেচ্ছাচারী জীবনযাপনের জন্য “শক্তগ্রীব” ইস্রায়েলীয়দের পরিত্যাগ করার আগে ৯০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি ধৈর্য ধরেছিলেন। (যাত্রাপুস্তক ৩৪:৯; ২ বংশাবলি ৩৬:১৭-২১; রোমীয় ১০:২১) বারবার তারা ‘ঈশ্বরের পরীক্ষা করা’ সত্ত্বেও, যিহোবা তাদের প্রতি “স্নেহময়” ছিলেন। তিনি “অনেকবার আপন ক্রোধ সম্বরণ করিলেন, আপনার সমস্ত কোপ উদ্দীপিত করিলেন না।” (গীতসংহিতা ৭৮:৩৮-৪২) তাদের সঙ্গে যিহোবার আচরণে একটুও খুঁত ছিল না। সন্তানকে সাহায্য করার জন্য বাবামাদের চেষ্টা সত্ত্বেও যদি সে সঙ্গে সঙ্গে কথা না শোনে, তখন প্রেমময় বাবামারা যিহোবাকে অনুকরণ করেন এবং ধৈর্য ধরেন।

১০ দীর্ঘসহিষ্ণু বা ধৈর্য ধরার মানে “অনেক সময় ধরে সহ্য” করাই নয়; এর অর্থ হল এমন মনে না করা যে, কারও মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট হয়ে গেলে তা কখনোই জোড়া লাগানো যাবে না। কীভাবে দীর্ঘসহিষ্ণু হতে হয় সেই বিষয়ে যিহোবা উদাহরণ স্থাপন করেছেন। তিনি ইস্রায়েলীয়দের কাছে “প্রত্যুষে [“বারবার,” NW]” দূতেদের পাঠিয়ে নিজে প্রথমে উদ্যোগ নিয়েছিলেন। যদিও “তাহারা ঈশ্বরের দূতদিগকে পরিহাস করিত, তাঁহার বাক্য তুচ্ছ করিত” কিন্তু যিহোবা আপন “প্রজাদের . . . প্রতি মমতা করিতেন।” (২ বংশাবলি ৩৬:১৫, ১৬) তিনি ইস্রায়েলীয়দেরকে এই বলে অনুরোধ করেছিলেন: “তোমরা প্রত্যেক জন আপন আপন কুপথ হইতে . . . ফির।” (যিরমিয় ২৫:৪, ৫) কিন্তু, যিহোবা তাঁর ধার্মিক মানের সঙ্গে কখনও আপোশ করেননি। ইস্রায়েলীয়দেরকে ঈশ্বরের কাছে এবং তাঁর পথে ‘ফিরতে’ বলা হয়েছিল।

১১. সত্য ছেড়ে চলে যাওয়া কোন সন্তানের সঙ্গে ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাবামারা কীভাবে দীর্ঘসহিষ্ণু হতে ও সেইসঙ্গে দৃঢ় থাকতে পারেন?

১১ বিপথে যাওয়া কোন সন্তানের প্রতি সমস্ত আশা ছেড়ে না দিয়ে বাবামারা দীর্ঘসহিষ্ণু হওয়ার ক্ষেত্রে যিহোবার উদাহরণ অনুকরণ করতে পারেন। আশা না হারিয়ে তারা তার সঙ্গে কথাবার্তা বলার পথ খোলা রাখতে বা আবারও কথাবার্তা বলা শুরু করার জন্য প্রথমে উদ্যোগ নিতে পারেন। ধার্মিক নীতিগুলোতে লেগে থেকে তারা সত্যের পথে ফিরে আসতে সন্তানকে “বারবার” অনুরোধ জানাতে পারেন।

একজন অপ্রাপ্তবয়স্ককে যখন সমাজচ্যুত করা হয়

১২. বাবামার সঙ্গে থাকে এমন একজন অপ্রাপ্তবয়স্ককে যদি মণ্ডলী থেকে বের করে দেওয়া হয়, তাহলে তার প্রতি বাবামার কী দায়িত্ব রয়েছে?

১২ একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তান সম্বন্ধে কী বলা যায়, যে তার বাবামার সঙ্গে থাকে কিন্তু গুরুতর কোন অন্যায় করে অনুতপ্ত না হওয়ায় তাকে মণ্ডলী থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে? সেই সন্তান যেহেতু তার বাবামার সঙ্গে থাকে, তাই ঈশ্বরের বাক্যের সঙ্গে মিল রেখে তাকে নির্দেশনা দেওয়ার এবং শাসন করার দায়িত্ব তখনও তাদের রয়েছে। কীভাবে তা করা যেতে পারে?—হিতোপদেশ ৬:২০-২২; ২৯:১৭.

১৩. ব্যক্তিগত বাইবেল অধ্যয়নের সময় বাবামারা কীভাবে তাদের সন্তানের হৃদয়ে পৌঁছাতে চেষ্টা করতে পারেন?

১৩ ব্যক্তিগত বাইবেল অধ্যয়নের সময় এইধরনের নির্দেশনা দেওয়া এবং শাসন করা যেতে পারে আর তা করা সবচেয়ে ভাল হবে। একজন বাবা অথবা মা সন্তানের একগুঁয়ে মনোভাব দেখে তার বিচার করবেন না বরং তার মনে আসলে কী রয়েছে, তা জানার চেষ্টা করবেন। কোন্‌ কোন্‌ দিক দিয়ে সে আধ্যাত্মিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে? (হিতোপদেশ ২০:৫) তার কাঁচা মনকে কি স্পর্শ করা সম্ভব? শাস্ত্রের কোন্‌ পদগুলো ব্যবহার করলে কাজ হবে? প্রেরিত পৌল আমাদেরকে নিশ্চয়তা দেন: “ঈশ্বরের বাক্য জীবন্ত ও কার্য্যসাধক, এবং সমস্ত দ্বিধার খড়গ অপেক্ষা তীক্ষ্ণ, এবং প্রাণ ও আত্মা, গ্রন্থি ও মজ্জা, এই সকলের বিভেদ পর্য্যন্ত মর্ম্মবেধী, এবং হৃদয়ের চিন্তা ও বিবেচনার সূক্ষ্ম বিচারক।” (ইব্রীয় ৪:১২) হ্যাঁ, বাবামায়েরা তাদের সন্তানকে শুধু আবারও অন্যায় না করতে বলার চেয়ে আরও বেশি কিছু করতে পারেন। সুস্থ করে তোলার জন্য তারা প্রথমে উদ্যোগ নেওয়ার এবং সাহায্য করার চেষ্টা করতে পারেন।

১৪. ভুল করেছে এমন যুবক বা যুবতীর ঈশ্বরের সঙ্গে আবারও সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য প্রথমে তাকে কোন্‌ ধাপটা নিতে হবে আর বাবামারা কীভাবে সন্তানকে সেই ধাপ নিতে সাহায্য করতে পারেন?

১৪ ভুল করেছে এমন কোন যুবক বা যুবতীর যিহোবার সঙ্গে আবারও সম্পর্ক গড়ে তোলার দরকার আছে। প্রথমে তাকে যে ধাপ নিতে হবে তা হল, ‘মন ফিরাতে ও ফিরিতে’ হবে। (প্রেরিত ৩:১৯; যিশাইয় ৫৫:৬, ৭) ঘরে কোন যুবক বা যুবতীকে অনুতপ্ত হতে সাহায্য করার সময়, সে যদি ইচ্ছা করে সাড়া না দেয়, তাহলে বাবামাদের অবশ্যই ‘সহনশীল হইতে, এবং মৃদু ভাবে বিরোধিগণকে শাসন করিতে হইবে।’ (২ তীমথিয় ২:২৪-২৬) বাইবেলে বলা নীতির সঙ্গে মিল রেখে তাকে “অনুযোগ” করা দরকার। যে গ্রিক শব্দকে “অনুযোগ” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে সেটাকে এভাবেও বলা যেতে পারে, “দৃঢ়প্রত্যয় উৎপাদন করার মতো প্রমাণ জোগানো।” (প্রকাশিত বাক্য ৩:১৯; যোহন ১৬:৮) তাই, অনুযোগ করার জন্য সন্তানকে যথেষ্ঠ প্রমাণ দেওয়া দরকার, যাতে সে পুরোপুরিভাবে বুঝতে পারে যে সে সত্যি ভুল করেছে। এটা ঠিক যে, তা করা সবসময় সহজ নয়। কিন্তু, শাস্ত্রের সঙ্গে মিল রাখে এমন উপযুক্ত সমস্ত উপায় কাজে লাগিয়ে বাবামারা তার হৃদয় স্পর্শ করতে পারেন। তাকে বুঝতে সাহায্য করতে হবে যে ‘মন্দকে ঘৃণা করা ও উত্তমকে ভালবাসা’ দরকার। (আমোষ ৫:১৫) সে হয়তো “দিয়াবলের ফাঁদ হইতে . . . চেতনা” পাবে।

১৫. যে ভুল করেছে তার সঙ্গে যিহোবার সম্পর্ক আবারও ঠিক করার জন্য প্রার্থনা কোন্‌ ভূমিকা পালন করে?

১৫ যিহোবার সঙ্গে আবারও সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য প্রার্থনা অপরিহার্য। অবশ্য, আগে খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর সঙ্গে মেলামেশা করত এমন কোন ব্যক্তি যদি অনুতাপ না করে গুরুতর পাপ করেই চলে, তাহলে তার জন্য কারও “বিনতি” করা উচিত নয়। (১ যোহন ৫:১৬, ১৭; যিরমিয় ৭:১৬-২০; ইব্রীয় ১০:২৬, ২৭) কিন্তু বাবামারা যিহোবার কাছে প্রার্থনা করতে পারেন, যেন তিনি তাদেরকে এইরকম পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য প্রজ্ঞা দেন। (যাকোব ১:৫) সমাজচ্যুত যুবক বা যুবতী যদি দেখায় যে সে তার ভুলের জন্য অনুতপ্ত কিন্তু “ঈশ্বরের উদ্দেশে” তা বলার মতো “সাহস” তার না হয়, তাহলে বাবামারা প্রার্থনা করতে পারেন যে ঈশ্বর যদি ক্ষমা করতে চান, তাহলে তিনি যেন তাকে ক্ষমা করে দেন। (১ যোহন ৩:২১) এইরকম প্রার্থনা শুনে একজন যুবক বা যুবতী বুঝতে সাহায্য পাবে যে যিহোবা কত করুণাময়। *যাত্রাপুস্তক ৩৪:৬, ৭; যাকোব ৫:১৬.

১৬. সমাজচ্যুত হওয়া অপ্রাপ্তবয়স্ক কোন সন্তানের পরিবারের সদস্যদেরকে আমরা কীভাবে সাহায্য করতে পারি?

১৬ কোন বাপ্তাইজিত যুবক বা যুবতী যদি সমাজচ্যুত হয়, তাহলে সাধারণত আশা করা হয় যে, মণ্ডলীর সদস্যরা তার ‘সংসর্গে থাকিবেন না।’ (১ করিন্থীয় ৫:১১; ২ যোহন ১০, ১১) এরকম করলে তা শেষ পর্যন্ত হয়তো তাকে ‘চেতনা পাইতে’ এবং ঈশ্বরের সুরক্ষিত পালের মধ্যে আসতে সাহায্য করবে। (লূক ১৫:১৭) কিন্তু সে ফিরে আসুক বা না আসুক, মণ্ডলীর সদস্যরা সেই সমাজচ্যুত যুবক বা যুবতীর পরিবারকে উৎসাহ দিতে পারে। আমরা সবাই “পরদুঃখে দুঃখিত” হতে এবং তাদের সকলের প্রতি “স্নেহবান্‌” হতে পারি।—১ পিতর ৩:৮, ৯.

অন্যেরা যেভাবে সাহায্য করতে পারেন

১৭. বিপথে যাওয়া সন্তানকে সাহায্য করার সময় মণ্ডলীর সবাই কোন্‌ বিষয়টা মনে রাখবেন?

১৭ সেই যুবক বা যুবতী সম্বন্ধে কী বলা যায়, যাকে খ্রীষ্টীয় মণ্ডলী থেকে সমাজচ্যুত করা হয়নি কিন্তু বিশ্বাসে দুর্বল হয়ে পড়েছে? প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন, “এক অঙ্গ দুঃখ পাইলে তাহার সহিত সকল অঙ্গই দুঃখ পায়।” (১ করিন্থীয় ১২:২৬) অন্যেরা এইরকম যুবক বা যুবতীর প্রতি আগ্রহী মনোভাব দেখাতে পারেন। অবশ্য, সাবধান হওয়া জরুরি কারণ আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে অসুস্থ যুবক-যুবতীরা অন্য যুবক-যুবতীদের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। (গালাতীয় ৫:৭-৯) একটা মণ্ডলীতে, আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছে এমন কিছু যুবক-যুবতীদেরকে সাহায্য করার ভাল ইচ্ছা নিয়ে কয়েকজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি একসঙ্গে কিছু জনপ্রিয় গান বাজানোর জন্য তাদেরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। যদিও যুবক-যুবতীরা এইরকম অনুষ্ঠানগুলোর সঙ্গে একেবারে মিশে গিয়েছিল এবং সেগুলো উপভোগ করেছিল কিন্তু একে অন্যের ওপর তারা এতটাই প্রভাব ফেলেছিল যে, শেষ পর্যন্ত ওই যুবক-যুবতীরা মণ্ডলীর সঙ্গে মেলামেশা করা একেবারেই বন্ধ করে দিয়েছিল। (১ করিন্থীয় ১৫:৩৩; যিহূদা ২২, ২৩) যে সামাজিক মেলামেশায় কোন আধ্যাত্মিক নির্দেশনা পাওয়া যায় না, আধ্যাত্মিকভাবে অসুস্থ সন্তানকে তা সুস্থ করতে পারে না কিন্তু যে মেলামেশা আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর প্রতি ভালবাসা গড়ে তুলতে সাহায্য করে তা তাকে সুস্থ করতে পারে। *

১৮. কীভাবে আমরা যীশুর বলা দৃষ্টান্তের অপব্যয়ী পুত্রের বাবার মতো মনোভাব দেখাতে পারি?

১৮ মণ্ডলী ছেড়ে চলে যাওয়া কোন যুবক বা যুবতী যখন আবার কিংডম হলে আসে বা কোন সম্মেলনে যোগ দেয়, তখন তার মনের অবস্থাটা কেমন হয়, তা একটু ভেবে দেখুন। যীশুর দৃষ্টান্তে বলা বাবা সেই অপব্যয়ী পুত্রের প্রতি যেমন মনোভাব দেখিয়েছিলেন আমাদেরও কি সেইরকম গ্রহণ করে নেওয়ার মনোভাব রাখা উচিত নয়? (লূক ১৫:১৮-২০, ২৫-৩২) খ্রীষ্টীয় মণ্ডলী ছেড়ে চলে যাওয়া একজন কিশোর এক জেলা সম্মেলনে যোগ দিয়ে বলেছিল: “আমি ভেবেছিলাম যে আমার মতো এক ব্যক্তিকে সবাই-ই অবহেলা করবে কিন্তু ভাইবোনেরা আমার কাছে এগিয়ে এসেছিলেন এবং আমাকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। এটা আমার হৃদয়ে দারুণভাবে নাড়া দিয়েছিল।” সে আবারও অধ্যয়ন শুরু করে এবং পরে বাপ্তিস্ম নেয়।

হাল ছেড়ে দেবেন না

১৯, ২০. একজন অপব্যয়ী সন্তানের প্রতি কেন আমাদের ইতিবাচক মনোভাব রাখা উচিত?

১৯ কোন “অপব্যয়ী” সন্তানকে ‘চেতনা পাইতে’ সাহায্য করার জন্য অনেক ধৈর্যের দরকার আর এটা বাবামা এবং অন্যদের জন্য একটা কঠিন বিষয় হতে পারে। কিন্তু হাল ছেড়ে দেবেন না। “প্রভু নিজ প্রতিজ্ঞা বিষয়ে দীর্ঘসূত্রী নহেন—যেমন কেহ কেহ দীর্ঘসূত্রিতা জ্ঞান করে—কিন্তু তোমাদের পক্ষে তিনি দীর্ঘসহিষ্ণু; কতকগুলি লোক যে বিনষ্ট হয়, এমন বাসনা তাঁহার নাই; বরং সকলে যেন মনপরিবর্ত্তন পর্য্যন্ত পঁহুছিতে পায়, এই তাঁহার বাসনা।” (২ পিতর ৩:৯) শাস্ত্র আমাদেরকে আশ্বাস দিয়েছে যে, যিহোবা চান যেন লোকেরা অনুতপ্ত হয় এবং বেঁচে থাকে। এছাড়াও মানুষেরা যেন আবার তাঁর সঙ্গে সম্মিলিত হতে পারে, সেই ব্যবস্থা তিনি করেছেন। (২ করিন্থীয় ৫:১৮, ১৯) তাঁর ধৈর্য লক্ষ লক্ষ লোকেদেরকে চেতনা পেতে সাহায্য করেছে।—যিশাইয় ২:২, ৩.

২০ কোন অপব্যয়ী অপ্রাপ্তবয়স্ককে চেতনা পেতে সাহায্য করার জন্য বাবামাদের কি শাস্ত্রে বলা সমস্ত পদ্ধতিই ব্যবহার করা উচিত নয়? আপনার সন্তানকে যিহোবার কাছে ফিরে আসতে সাহায্য করার জন্য ইতিবাচক ধাপগুলো নেওয়ার সময় যিহোবাকে অনুকরণ করে দীর্ঘসহিষ্ণু হোন। বাইবেলের নীতিগুলোকে দৃঢ়ভাবে মেনে চলুন এবং সাহায্যের জন্য যিহোবার কাছে প্রার্থনা করার সময় তাঁর গুণাবলি যেমন প্রেম, ন্যায়বিচার এবং প্রজ্ঞা দেখানোর চেষ্টা করুন। একগুঁয়ে অনেক বিদ্রোহীরা যেমন যিহোবার প্রেমময় ডাকে সাড়া দিয়ে ফিরে এসেছে, তেমনই আপনার অপব্যয়ী ছেলে বা মেয়ে হয়তো যিহোবার সুরক্ষিত পালে ফিরে আসবে।—লূক ১৫:৬, ৭.

[পাদটীকাগুলো]

^ যুবক-যুবতীদেরকে কীভাবে আরও কার্যকারীভাবে শিক্ষা দিতে হয় সে সম্বন্ধে আরও জানার জন্য ১৯৯৯ সালের ১লা জুলাই প্রহরীদুর্গ এর ১৩-১৭ পৃষ্ঠা দেখুন।

^ সমাজচ্যুত কোন অপ্রাপ্তবয়স্কের জন্য মণ্ডলীর সভায় সবার সামনে কোন প্রার্থনা করা যাবে না কারণ অন্যেরা হয়তো সমাজচ্যুত ব্যক্তির অবস্থা সম্বন্ধে জানেন না।—১৯৭৯ সালের ১৫ই অক্টোবর প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) এর ৩১ পৃষ্ঠা দেখুন।

^ এই ব্যাপারে আরও স্পষ্ট পরামর্শের জন্য ১৯৭২ সালের ২২শে জুন সচেতন থাক! (ইংরেজি) এর ১৩-১৬ পৃষ্ঠা; ১৯৯৬ সালের ২২শে সেপ্টেম্বর (ইংরেজি) এর ২১-৩ পৃষ্ঠা দেখুন।

আপনি কি মনে করতে পারেন?

• যুবক-যুবতীরা যখন মণ্ডলী ছেড়ে চলে যায়, তখন তার মূল কারণ কী হতে পারে?

• যিহোবার সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য যুবক-যুবতীদেরকে কীভাবে সাহায্য করা যেতে পারে?

• একজন অপব্যয়ী সন্তানকে সাহায্য করার সময় বাবামাদেরকে কেন দীর্ঘসহিষ্ণু হতে ও সেইসঙ্গে দৃঢ় থাকতে হবে?

• মণ্ডলীর সদস্যরা কীভাবে কোন অপব্যয়ী যুবক বা যুবতীকে ফিরে আসতে সাহায্য করতে পারেন?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিহোবার সঙ্গে কাছের সম্পর্ক গড়ে তুলতে হলে ঈশ্বরের বাক্য পড়া জরুরি

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

বাবামাদের, অন্তর থেকে করা প্রার্থনা তাদের ছেলেমেয়েদেরকে বুঝতে সাহায্য করতে পারে যে, যিহোবার সঙ্গে তাদের বাবামার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে

[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

অপব্যয়ী সন্তান যখন ‘চেতনা পায়,’ তখন তাকে স্বাগত জানান

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

আপনার সন্তানকে যিহোবার কাছে ফিরে আসতে সাহায্য করার জন্য বিভিন্ন ইতিবাচক ধাপ নিন