সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনি কি জগৎকে আরও ভাল এক জায়গায় পরিণত করতে পারেন?

আপনি কি জগৎকে আরও ভাল এক জায়গায় পরিণত করতে পারেন?

আপনি কি জগৎকে আরও ভাল এক জায়গায় পরিণত করতে পারেন?

“রাজনীতির মাধ্যমে সমাজের প্রকৃত কাঠামো তৈরি করা সম্ভব নয়। অনেকদিন ধরে চলে আসা নৈতিক বিশ্বাসগুলো ধরে রাখার ক্ষেত্রে এটা চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। অনেক ভাল ভাল পরিকল্পনাও বিবাহের মানগুলোকে রক্ষা করতে পারেনি, দায়িত্ববান বাবা তৈরি করেনি, একসময় যেখানে নৈতিক মূল্যবোধ বা লজ্জাবোধ করার মনোভাব ছিল তা আবার ফিরিয়ে আনতে পারেনি . . . নৈতিকতার এই চরম অবক্ষয় যা কিনা আমাদেরকে যন্ত্রণা দেয়, তা কোন আইনের মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব নয়।”

 যুক্তরাষ্ট্র সরকারের একজন সাবেক সহকারীর ওপরে বলা মন্তব্যের সঙ্গে আপনি কি একমত? যদি একমত হন, তাহলে আজকের দিনের সমস্যাগুলো যা মূলত লোভ, পরিবারগুলোর মধ্যে স্নেহের অভাব, নৈতিকতার বিসর্জন, অজ্ঞানতা এবং সমাজের অন্যান্য ক্ষতিকর বিষয়গুলোর কারণে বৃদ্ধি পাচ্ছে ও সমাজের কাঠামোকে ক্ষয় করছে তার সমাধান কী? কিছু লোক মনে করেন যে, এই সমস্যাগুলোর কোন সমাধান নেই আর তাই তারা যতটা সম্ভব নিজের মতো ভাল থাকার চেষ্টায় ব্যস্ত থাকেন। অন্যেরা আশা করেন যে, কোন একদিন অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন ও দক্ষ একজন নেতা আসবেন, হতে পারে তিনি একজন ধর্মীয় গুরু এবং তিনিই তাদেরকে সঠিক পথ দেখাবেন।

আসলেই, আজ থেকে প্রায় দুহাজার বছর আগে লোকেরা যীশু খ্রীষ্টকে তাদের রাজা বানাতে চেয়েছিল কারণ তারা বুঝতে পেরেছিল যে, ঈশ্বর তাঁকে পাঠিয়েছেন এবং তিনিই হবেন সবচেয়ে যোগ্য শাসক। কিন্তু, যীশু তাদের চিন্তাধারা বুঝতে পেরে সেখান থেকে তাড়াতাড়ি সরে পড়েছিলেন। (যোহন ৬:১৪, ১৫) পরে তিনি একজন রোমীয় রাজ্যপালকে বলেছিলেন, “আমার রাজ্য এ জগতের নয়।” (যোহন ১৮:৩৬) বর্তমানে খুব কম লোকই যীশুর মতো মনোভাব দেখায়, এমনকি যে ধর্মীয় নেতারা যীশুর অনুসারী বলে দাবি করেন তারাও তাঁর মতো মনোভাব দেখান না। এদের কেউ কেউ জগতের শাসকদের প্রভাবিত করে বা নিজেরা রাজনৈতিক কর্তৃত্ব গ্রহণ করে এই জগৎকে আরও ভাল এক জায়গায় পরিণত করার চেষ্টা করেছিলেন। ১৯৬০ এবং ৭০ দশকের ঘটনাবলি পরীক্ষা করলে আমরা তা জানতে পারি।

জগতে ভাল পরিস্থিতি আনতে ধর্মগুলোর প্রচেষ্টা

১৯৬০ দশকের শেষের দিকে ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোতে কিছু থিওলজিয়ানরা গরিব এবং নিপীড়িত লোকেদের পক্ষে আন্দোলন শুরু করেছিলেন। এই লক্ষ্যে পৌঁছাতে তারা লিবারেশন থিওলজি নামে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন, যেখানে খ্রীষ্টকে শুধু বাইবেলের দৃষ্টিকোণেই নয়, সেইসঙ্গে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে একজন ত্রাণকর্তা হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটা গির্জার নেতারা নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে সর্বজনীন নৈতিকতা নামে একটা সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন। এর উদ্দেশ্য ছিল এমন রাজনীতিবিদদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা, যারা কিনা চমৎকার পারিবারিক মূল্যবোধের নিয়মকানুন তৈরি করবেন। একইভাবে অনেক মুসলিম দেশগুলোতেও, কোরানের আইনকানুনগুলোতে অনুগত থেকে বিভিন্ন দলগুলো দুর্নীতি ও অবিচারকে দমন করার চেষ্টা করেছেন।

কিন্তু আপনি কি মনে করেন যে, এইধরনের বিভিন্ন প্রচেষ্টার ফলে জগৎ আরও ভাল এক জায়গায় পরিণত হয়েছে? প্রকৃত ঘটনা দেখায় যে, তুলনামূলকভাবে নৈতিক মানের অবক্ষয় ঘটেই চলেছে এবং ধনী ও গরিবের মধ্যে বৈষম্য বেড়েই চলেছে আর এমনকি এটা সেইসব দেশগুলোতও হচ্ছে, যেখানে থিওলজিয়ানদের আন্দোলন লক্ষণীয় বিষয় ছিল।

যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রেই সর্বজনীন নৈতিকতার বিষয়টা এর মূল লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে, তাই এর উদ্যোক্তা জ্যারি ফলওয়েল ১৯৮৯ সালে এই সংগঠনের কাজকর্ম গুটিয়ে নিয়েছিলেন। অন্য সংগঠনগুলো এর জায়গায় কাজ করেছিল। কিন্তু, পল ওয়েরিচ যিনি “সর্বজনীন নৈতিকতা” নামটা দিয়েছিলেন, তিনি আজকে খ্রীষ্টতত্ত্ব (ইংরেজি) নামে একটা পত্রিকায় লিখেছিলেন: “যদিও আমরা রাজনীতির দিক দিয়ে জয়ী হয়েছি কিন্তু যে শাসনপ্রণালী আমরা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেছি, তা আমাদের বিজয় এনে দিতে পারেনি।” তিনি আরও লিখেছিলেন: “সংস্কৃতি আগের তুলনায় আরও নিচে নেমে যাচ্ছে। আমরা সংস্কৃতির বিরাট এক অধঃপতনে জড়িয়ে পড়েছি আর এটা এতই গুরুতর যে তা রাজনীতিকে ছাড়িয়ে গেছে।”

রাজনীতির মাধ্যমে সমাজের উন্নতি বিধানের প্রচেষ্টাকে লেখক ক্যাল থমাস প্রধান এক ত্রুটি হিসেবে বিবেচনা করে বলেছিলেন: “প্রকৃত পরিবর্তন ব্যক্তি বিশেষের কাছ থেকে আসে, রাজনৈতিক সাফল্যের মাধ্যমে আসে না কারণ আমাদের মূল সমস্যাগুলো অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নয় বরং নৈতিক আর আধ্যাত্মিক।”

কিন্তু, যে পৃথিবীতে কোন মান বা নীতি নেই এবং লোকেরা নিজেরাই তাদের ভালমন্দ ঠিক করে, সেখানে কীভাবে আপনি নৈতিক ও আধ্যাত্মিক সমস্যাগুলোর সমাধান করবেন? ধার্মিকমনা হোক বা না হোক, এমন প্রভাব বিস্তারকারী ও ভাল মনের ব্যক্তিরা যদি এই জগৎকে সত্যিই আরও ভাল এক জায়গায় পরিণত করতে না পারেন, তাহলে কে পারবেন? পরের প্রবন্ধে আমরা এই প্রশ্নের উত্তর পাব। আর সেখান থেকেই আমরা জানতে পারব যে, কেন যীশু বলেছিলেন তাঁর রাজ্য এই জগতের নয়।

[২ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]

প্রচ্ছদ: নোংরা জল: WHO/UNICEF photo; পৃথিবী: Mountain High Maps® Copyright © ১৯৯৭ Digital Wisdom, Inc.

[৩ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]

ছেলেমেয়েরা: UN photo; পৃথিবী: Mountain High Maps® Copyright © ১৯৯৭ Digital Wisdom, Inc.