সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ঈশ্বরের প্রেম থেকে কে আমাদেরকে পৃথক করতে পারবে?

ঈশ্বরের প্রেম থেকে কে আমাদেরকে পৃথক করতে পারবে?

ঈশ্বরের প্রেম থেকে কে আমাদেরকে পৃথক করতে পারবে?

“আমরা প্রেম করি, কারণ তিনিই প্রথমে আমাদিগকে প্রেম করিয়াছেন।”১ যোহন ৪:১৯.

১, ২. (ক) অন্যেরা আমাদেরকে ভালবাসে এটা জানা কেন জরুরি? (খ) কার ভালবাসা আমাদের জন্য সবচেয়ে বেশি জরুরি?

 অন্যেরা আপনাকে ভালবাসে, তা জানা আপনার কাছে কতখানি জরুরি? ছেলেবেলা থেকে বড় হওয়া পর্যন্ত, ভালবাসা পেয়ে মানুষ বেড়ে ওঠে। একটা ছোট্ট বাচ্চা কত স্নেহের সঙ্গে মায়ের কোলে তার মাকে জড়িয়ে ধরে থাকে, তা কি আপনি দেখেছেন? বেশির ভাগ সময়ই তার চারপাশে যা-ই হোক না কেন, সে যখন তার প্রেমময় মায়ের স্নিগ্ধ চোখের দিকে তাকায়, তখন মায়ের কোলে সে আরাম এবং শান্তি অনুভব করে। অথবা কিশোরবস্থা থেকে যৌবনে পদার্পণ করার সেই অস্থির দিনগুলোতে আপনি কেমন ছিলেন, তা কি মনে করতে পারেন? (১ থিষলনীকীয় ২:৭) মাঝে মাঝে আপনি হয়তো বুঝতে পারতেন না যে আপনার কী দরকার বা আপনার কেমন লাগছে, তবুও এটা জানা কত জরুরি ছিল যে আপনার বাবামা আপনাকে ভালবাসেন! যে কোন সমস্যা বা প্রশ্ন নিয়ে আপনি অনায়াসে তাদের কাছে যেতে পারেন জানা কি আপনাকে সাহায্য করেনি? সত্যি করে বলতে গেলে, আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় চাহিদাগুলোর মধ্যে একটা হল অন্যের ভালবাসা। আর এই ভালবাসা আমাদেরকে নিশ্চয়তা দেয় যে অন্যদের কাছে আমরা মূল্যবান।

নিঃসন্দেহে, বাবামার চিরস্থায়ী ভালবাসা একজনকে সঠিকভাবে গড়ে উঠতে এবং ভারসাম্য বজায় রাখতে এক বিরাট অবদান রাখে। কিন্তু, আমাদের স্বর্গীয় পিতা যিহোবা যে আমাদেরকে ভালবাসেন, এই বিষয়ে আস্থা রাখা আমাদের আধ্যাত্মিক এবং মানসিক মঙ্গলের জন্য আরও বেশি জরুরি। এই পত্রিকার কোন কোন পাঠকের বাবামা হয়তো এমন ছিলেন না, যারা সত্যিই তাদের যত্ন নিতেন। আপনার বেলায় যদি তা সত্যি হয়, তাহলে উৎসাহ হারিয়ে ফেলবেন না। এমনকি বাবামার ভালবাসার অভাব থাকলেও বা তা পর্যাপ্ত না হলেও, ঈশ্বরের একনিষ্ঠ প্রেম সেই অভাব পূরণ করে।

৩. যিহোবা যে তাঁর লোকেদের ভালবাসেন, সেই সম্বন্ধে তিনি কীভাবে আশ্বাস দিয়েছেন?

যিহোবা তাঁর ভাববাদী যিশাইয়ের মাধ্যমে বলেছিলেন যে, একজন মা তার লালিত শিশুর কথা “ভুলিয়া” যেতে পারে কিন্তু তিনি কখনও তাঁর লোকেদের কথা ভুলে যাবেন না। (যিশাইয় ৪৯:১৫) একইভাবে দায়ূদ আস্থা নিয়ে বলেছিলেন: “আমার পিতামাতা আমাকে ত্যাগ করিয়াছেন, কিন্তু সদাপ্রভু আমাকে তুলিয়া লইবেন।” (গীতসংহিতা ২৭:১০) কতই না আশ্বাসজনক! আপনার পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, আপনি যদি নিজেকে যিহোবা ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গ করে থাকেন এবং তাঁর সঙ্গে আপনার এক কাছের সম্পর্ক থাকে, তাহলে আপনার সবসময় মনে রাখা উচিত যে তিনি আপনাকে অন্য যে কোন মানুষের ভালবাসার চেয়ে হাজার গুণ বেশি ভালবাসেন!

ঈশ্বরের প্রেমে নিজেকে রক্ষা করুন

৪. প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানরা কীভাবে ঈশ্বরের প্রেমের বিষয়ে আশ্বাস পেয়েছিলেন?

যিহোবার ভালবাসা সম্বন্ধে আপনি প্রথম কখন জেনেছেন? সম্ভবত আপনারও প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানদের মতো অভিজ্ঞতা রয়েছে। রোমীয়দের কাছে লেখা পৌলের চিঠির ৫ম অধ্যায়ে চমৎকারভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যে, একসময় ঈশ্বরের কাছ থেকে দূরে সরে যাওয়া পাপীরা কীভাবে যিহোবার প্রেম সম্বন্ধে জেনেছিলেন। ৫ পদে আমরা পড়ি: “আমাদিগকে দত্ত পবিত্র আত্মা দ্বারা ঈশ্বরের প্রেম আমাদের হৃদয়ে সেচিত হইয়াছে।” ৮ পদে পৌল আরও বলেন: “ঈশ্বর আমাদের প্রতি তাঁহার নিজের প্রেম প্রদর্শন করিতেছেন; কারণ আমরা যখন পাপী ছিলাম, তখনও খ্রীষ্ট আমাদের নিমিত্ত প্রাণ দিলেন।”

৫. ঈশ্বর আপনাকে কতটা ভালবাসেন, তা আপনি কীভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন?

একইভাবে, আপনি যখন ঈশ্বরের বাক্যের সত্য শুনেছিলেন এবং বিশ্বাস অনুশীলন করতে শুরু করেছিলেন, তখন যিহোবার পবিত্র আত্মা আপনার হৃদয়ে কাজ করতে শুরু করেছিল। এর ফলে, আপনার জন্য যিহোবা তাঁর প্রিয় পুত্রকে মৃত্যুবরণ করতে পাঠিয়ে যে মহৎ কাজ করেছিলেন তার প্রতি আপনি উপলব্ধি দেখাতে শুরু করেছিলেন। এভাবে যিহোবা আপনাকে সঠিকভাবে বুঝতে সাহায্য করেছিলেন যে মানবজাতিকে তিনি কতটা ভালবাসেন। আপনি যখন জানতে পেরেছেন যে, একজন পাপী হিসেবে জন্ম নিয়ে যিহোবার কাছ থেকে দূরে সরে যাওয়া সত্ত্বেও, মানুষের জন্য তিনি ধার্মিক গণিত হওয়ার ও অনন্ত জীবনের আশার পথ খুলে দিয়েছেন, তখন তা কি আপনার হৃদয়ে ছাপ ফেলেনি? যিহোবার জন্য আপনি কি ভালবাসা অনুভব করেননি?—রোমীয় ৫:১০.

৬. কখনও কখনও আমরা কেন যিহোবার কাছ থেকে নিজেদেরকে কিছুটা দূরে বলে মনে করতে পারি?

স্বর্গীয় পিতার প্রেম দেখে আকৃষ্ট হয়ে এবং ঈশ্বরের চোখে প্রীতিজনক হওয়ার জন্য আপনার জীবনে রদবদল করে আপনি নিজেকে ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গ করেছিলেন। আপনি এখন ঈশ্বরের শান্তি উপভোগ করছেন। কিন্তু, তারপরও কখনও কখনও আপনি কি যিহোবার কাছ থেকে নিজেকে কিছুটা দূরে বলে মনে করেন? আমাদের সবারই এইরকম মনে হতে পারে। কিন্তু, সবসময় মনে রাখবেন যে ঈশ্বরের কোন পরিবর্তন নেই। তাঁর প্রেম সূর্যের মতো অপরিবর্তনীয় এবং স্থায়ী, যা কখনও পৃথিবীতে উষ্ণ আলোকরশ্মি দেওয়া বন্ধ করে দেয় না। (মালাখি ৩:৬; যাকোব ১:১৭) অন্যদিকে, আমরা কিছু সময়ের জন্য হলেও হয়তো বদলে যেতে পারি। পৃথিবী যখন ঘোরে, তখন গ্রহের অর্ধেক অংশ অন্ধকারে ঢেকে যায়। একইভাবে, ঈশ্বরের কাছ থেকে এমনকি কিছুটা দূরে সরে গেলেও আমরা হয়তো মনে করতে পারি যে, তাঁর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক শিথিল হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিকে শোধরানোর জন্য আমরা কী করতে পারি?

৭. নিজেদেরকে পরীক্ষা করা কীভাবে আমাদেরকে ঈশ্বরের প্রেমে থাকতে সাহায্য করতে পারে?

আমরা যদি বুঝতে পারি যে, ঈশ্বরের প্রেম থেকে আমরা কিছুটা পৃথক হয়ে পড়েছি, তাহলে আমরা নিজেদেরকে জিজ্ঞেস করতে পারি: ‘ঈশ্বরের প্রেমকে কি আমি হালকাভাবে নিয়েছি? আমি কি ধীরে ধীরে জীবন্ত ও প্রেমময় ঈশ্বরের কাছ থেকে কিছুটা দূরে সরে পড়েছি ও বিভিন্ন দিক দিয়ে দেখিয়েছি যে, আমার বিশ্বাস দুর্বল হয়ে পড়েছে? ‘আত্মিক বিষয়ের’ প্রতি মন না দিয়ে আমি কি ‘মাংসিক বিষয়ের’ প্রতি মন দিয়েছি? (রোমীয় ৮:৫-৮; ইব্রীয় ৩:১২) আমরা যদি যিহোবার কাছ থেকে দূরে সরে গিয়ে থাকি, তাহলে সেগুলো শোধরানোর জন্য, তাঁর সঙ্গে আবারও কাছের ও উষ্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে পারি। যাকোব আমাদেরকে উৎসাহ দিয়েছিলেন: “ঈশ্বরের নিকটবর্ত্তী হও, তাহাতে তিনিও তোমাদের নিকটবর্ত্তী হইবেন।” (যাকোব ৪:৮) যিহূদার কথাগুলো লক্ষ্য করুন: “প্রিয়তমেরা, তোমরা আপনাদের পরম পবিত্র বিশ্বাসের উপরে আপনাদিগকে গাঁথিয়া তুলিতে তুলিতে, পবিত্র আত্মাতে প্রার্থনা করিতে করিতে, ঈশ্বরের প্রেমে আপনাদিগকে রক্ষা কর।”—যিহূদা ২০, ২১.

পরিস্থিতির পরিবর্তন ঈশ্বরের প্রেমের ওপর প্রভাব ফেলে না

৮. হঠাৎ করেই আমাদের জীবনে কোন্‌ পরিবর্তনগুলো ঘটতে পারে?

এই বিধিব্যবস্থায় আমাদেরকে অনেক পরিবর্তন মেনে নিতে হয়। রাজা শলোমন লক্ষ্য করেছিলেন যে, “সকলের প্রতি কাল ও দৈব ঘটে।” (উপদেশক ৯:১১) রাতারাতি আমাদের জীবন পুরোপুরি বদলে যেতে পারে। আজকে আমরা হয়তো ভাল আছি কিন্তু কালই হয়তো গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়তে পারি। আজ হয়তো আমরা ভাল চাকরি করছি বলে মনে হতে পারে কিন্তু কালই হয়তো আমাদের চাকরি চলে যেতে পারে। হঠাৎ করেই মৃত্যু আমাদের প্রিয়জনদেরকে কেড়ে নিতে পারে। কোন একটা দেশে খ্রীষ্টানরা হয়তো কিছু সময়ের জন্য শান্তিপূর্ণ অবস্থা উপভোগ করতে পারেন কিন্তু হঠাৎ করেই হয়তো প্রচণ্ড তাড়না শুরু হয়ে যেতে পারে। আমাদের ওপর মিথ্যা দোষারোপ করার কারণে আমাদেরকে হয়তো কিছুটা অবিচার সহ্য করতে হয়েছে। হ্যাঁ, জীবনে কোন স্থিরতা বা পুরোপুরি নিশ্চয়তা নেই।—যাকোব ৪:১৩-১৫.

৯. রোমীয় ৮ অধ্যায়ের কিছু অংশ কেন বিবেচনা করা উচিত?

আমাদের জীবনে দুঃখজনক কিছু ঘটলে আমরা হয়তো নিজেদেরকে পরিত্যক্ত বলে ভাবতে শুরু করতে পারি, এমনকি আমরা হয়তো ভাবতে পারি যে ঈশ্বর আমাদেরকে আর ভালবাসেন না। যেহেতু আমরা সবাই এইরকম পরিস্থিতিতে পড়তে পারি, তাই রোমীয় ৮ অধ্যায়ে লেখা প্রেরিত পৌলের সান্ত্বনা বাক্যগুলো আমাদের মন দিয়ে বিবেচনা করা উচিত। ওই কথাগুলো আত্মায় অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের উদ্দেশে বলা হয়েছিল। কিন্তু, এই কথাগুলোর নীতি অপর মেষদের বেলায়ও খাটে, যাদেরকে ঈশ্বরের বন্ধু বলে ধার্মিক ঘোষণা করা হয়েছে, যেমন খ্রীষ্ট আসার আগে অব্রাহামকে বলা হয়েছিল।—রোমীয় ৪:২০-২২; যাকোব ২:২১-২৩.

১০, ১১. (ক) ঈশ্বরের লোকেদের বিরুদ্ধে শত্রুরা মাঝেমধ্যে কোন্‌ অভিযোগগুলো নিয়ে আসে? (খ) এই অভিযোগগুলোর জন্য কেন খ্রীষ্টানদের কিছু আসে যায় না?

১০ রোমীয় ৮:৩১-৩৪ পদ পড়ুন। পৌল জিজ্ঞেস করেন: “ঈশ্বর যখন আমাদের সপক্ষ, তখন আমাদের বিপক্ষ কে?” সত্যিই, শয়তান এবং তার দুষ্ট জগৎ আমাদের বিপক্ষে। শত্রুরা হয়তো আমাদের ওপর মিথ্যে দোষারোপ করতে পারে, এমনকি আদালতে পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে। কোন কোন খ্রীষ্টান বাবামা ঈশ্বরের আইন লঙ্ঘন হয় বলে তাদের ছেলেমেয়েদেরকে কিছু চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না দেওয়ায় বা তাদেরকে পৌত্তলিক অনুষ্ঠানগুলোতে যেতে না দেওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে এই দোষ দেওয়া হয়েছে যে, তারা তাদের ছেলেমেয়েদেরকে ঘৃণা করেন। (প্রেরিত ১৫:২৮, ২৯; ২ করিন্থীয় ৬:১৪-১৬) অন্যান্য বিশ্বস্ত খ্রীষ্টানরা যুদ্ধে তাদের সহমানবদেরকে হত্যা করতে চায়নি বলে এবং রাজনীতিতে অংশ নেয়নি বলে তাদেরকে রাজদ্রোহী বলে মিথ্যে দোষ দেওয়া হয়েছে। (যোহন ১৭:১৬) কিছু বিরোধীরা প্রচার মাধ্যমগুলোতে অপবাদ রটিয়েছে, এমনকি যিহোবার সাক্ষিদেরকে এক বিপদজনক সম্প্রদায় বলে মিথ্যে অভিযোগ করা হয়েছে।

১১ কিন্তু ভুলে যাবেন না যে প্রেরিতদের দিনেও বলা হয়েছিল: “এই দলের বিষয়ে আমরা জানি যে, সর্ব্বত্র লোকে ইহার বিরুদ্ধে কথা বলিয়া থাকে।” (প্রেরিত ২৮:২২) মিথ্যে অভিযোগগুলোর জন্য সত্যিই কি কিছু আসে যায়? সত্য খ্রীষ্টানরা খ্রীষ্টের বলিদানের ওপর বিশ্বাস রেখেছেন বলে ঈশ্বর তাদেরকে ধার্মিক বলে ঘোষণা করেছেন। তাহলে, কেন যিহোবা তাঁর উপাসকদেরকে সবচেয়ে মূল্যবান উপহার অর্থাৎ তাঁর নিজের প্রিয় পুত্রকে দিয়ে আবার তাদেরকে প্রেম করা বন্ধ করে দেবেন? (১ যোহন ৪:১০) মৃত্যু থেকে উঠে খ্রীষ্ট এখন ঈশ্বরের দক্ষিণে আছেন এবং খ্রীষ্টানদের জন্য অনুরোধ করছেন। খ্রীষ্ট যে তাঁর অনুসারীদেরকে রক্ষা করছেন সেটাকে কে অস্বীকার করতে পারে বা তাঁর বিশ্বস্ত দাসদের প্রতি ঈশ্বরের যে অনুগ্রহ রয়েছে, কে সেটার বিরোধিতা করতে পারে? কেউ-ই না!—যিশাইয় ৫০:৮, ৯; ইব্রীয় ৪:১৫, ১৬.

১২, ১৩. (ক) কোন্‌ অবস্থা বা পরিস্থিতিগুলো আমাদেরকে ঈশ্বরের প্রেম থেকে পৃথক করতে পারে না? (খ) আমাদেরকে কষ্ট দেওয়ার পিছনে দিয়াবলের উদ্দেশ্য কী? (গ) কেন খ্রীষ্টানরা পুরোপুরি বিজয়ী হবেন?

১২ রোমীয় ৮:৩৫-৩৬ পদ পড়ুন। এমন কেউ বা এমন কিছু কি আছে, যা আমাদেরকে যিহোবা ও তাঁর পুত্র খ্রীষ্ট যীশুর প্রেম থেকে পৃথক করতে পারে? খ্রীষ্টানদেরকে সমস্যায় ফেলার জন্য শয়তান হয়তো তার পার্থিব প্রতিনিধিদেরকে ব্যবহার করতে পারে। গত একশ বছরে, অনেক দেশে আমাদের খ্রীষ্টান ভাইবোনেরা প্রচণ্ড তাড়না ভোগ করেছেন। কিছু কিছু জায়গায় আমাদের ভাইবোনেরা রোজ টাকাপয়সার সমস্যার মুখোমুখি হন। কেউ কেউ খাওয়া-পরার অভাবে কষ্ট পাচ্ছেন। এইধরনের কষ্টকর পরিস্থিতিগুলো ঘটানোর পিছনে দিয়াবলের উদ্দেশ্য কী? অন্তত তার একটা উদ্দেশ্য হল, যিহোবার সত্য উপাসনায় বাধা দেওয়া। শয়তান আমাদেরকে বিশ্বাস করাতে চায় যে, ঈশ্বরের প্রেম শীতল হয়ে গেছে। কিন্তু, আসলেই কি তাই?

১৩ পৌল, যিনি গীতসংহিতা ৪৪:২২ পদ থেকে উদ্ধৃতি করেছিলেন, তার মতো আমরাও ঈশ্বরের লিখিত বাক্য অধ্যয়ন করেছি। আমরা বুঝতে পারি যে, ঈশ্বরের নামের জন্য আমাদের প্রতি অর্থাৎ তাঁর ‘মেষদের’ প্রতি এই বিষয়গুলো ঘটে। এর সঙ্গে ঈশ্বরের নামকে পবিত্র করা এবং তাঁর সার্বিক সার্বভৌমত্বের সত্যতা প্রতিপাদন করা জড়িত। এই গুরুত্বপূর্ণ বিচার্য বিষয়গুলোর জন্যই ঈশ্বর পরীক্ষা ঘটার অনুমতি দিয়েছেন কিন্তু তার মানে এই নয় যে, তিনি আমাদেরকে আর ভালবাসেন না। পরিস্থিতি যত দুঃখজনকই হোক না কেন, আমরা আশ্বাস পাই যে ঈশ্বরের লোকেদের জন্য ও সেইসঙ্গে আমাদের প্রত্যেকের প্রতি তাঁর প্রেম একটুও পরিবর্তন হয়নি। আপাতদৃষ্টিতে আমরা যে পরাজয়ই বরণ করি না কেন, সেটা বিজয়ে পরিণত হবে যদি আমরা আমাদের আনুগত্য বজায় রাখি। ঈশ্বরের অটল প্রেমের আশ্বাস পেয়ে আমরা আরও শক্তিশালী হই এবং বেঁচে থাকি।

১৪. খ্রীষ্টানরা বিভিন্ন কষ্ট ভোগ করতে পারেন, তা জানা সত্ত্বেও ঈশ্বরের প্রেমের বিষয়ে কেন পৌলের এত আস্থা ছিল?

১৪ রোমীয় ৮:৩৮, ৩৯ পদ পড়ুন। কী কারণে পৌল এতটা আস্থা নিয়ে বলতে পেরেছিলেন যে, কোন কিছুই খ্রীষ্টানদেরকে ঈশ্বরের প্রেম থেকে পৃথক করতে পারবে না? কোন সন্দেহ নেই যে, পরিচর্যায় পৌলের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাই তার আস্থাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছিল যে, কষ্টভোগ ঈশ্বরের প্রেম থেকে আমাদেরকে পৃথক করতে পারবে না। (২ করিন্থীয় ১১:২৩-২৭; ফিলিপীয় ৪:১৩) এছাড়া যিহোবার অনন্ত উদ্দেশ্য এবং অতীতে তাঁর লোকেদের সঙ্গে তিনি যেরকম আচরণ করেছেন সেই সম্বন্ধেও পৌল জানতেন। যারা নিষ্ঠার সঙ্গে ঈশ্বরের সেবা করেছেন, মৃত্যু কি তাদের প্রতি ঈশ্বরের প্রেমকে শেষ করে দিতে পারবে? কখনোই না! এইধরনের যে বিশ্বস্ত ব্যক্তিরা মারা গেছেন, তারা যিহোবার স্মরণে থাকবেন এবং তাঁর নিরূপিত সময়ে তিনি তাদেরকে পুনরুত্থিত করবেন।—লূক ২০:৩৭, ৩৮; ১ করিন্থীয় ১৫:২২-২৬.

১৫, ১৬. এমন কিছু বিষয়ের কথা বলুন, যা ঈশ্বরের বিশ্বস্ত দাসদের প্রতি তাঁর যে প্রেম আছে সেটাকে কখনও থামিয়ে দিতে পারে না।

১৫ আমাদের জীবনে যে দুর্ঘটনাই আসুক না কেন, হতে পারে কোন মারাত্মক দুর্ঘটনা, কঠিন কোন রোগ বা অর্থনৈতিক সমস্যা, কোন কিছুই ঈশ্বরের লোকেদের প্রতি তাঁর প্রেমকে শেষ করে দিতে পারে না। যে অবাধ্য দূত শয়তানে পরিণত হয়েছিল, তার মতো অন্যান্য শক্তিশালী দূতেরা যিহোবার উৎসর্গীকৃত দাসদের প্রতি তাঁর প্রেমকে থামিয়ে দেওয়ার জন্য তাঁকে প্রভাবিত করতে পারে না। (ইয়োব ২:৩) ঈশ্বরের লোকেদের কাজের ওপর সরকার হয়তো নিষেধাজ্ঞা জারি করতে, তাদেরকে জেলে ভরতে ও তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতে পারে এবং তাদেরকে হয়তো “সমাজের অবাঞ্ছিত লোক” নাম দিতে পারে। (১ করিন্থীয় ৪:১৩) বিভিন্ন জাতির এইধরনের অযৌক্তিক ঘৃণা হয়তো আমাদের বিরোধিতা করার জন্য লোকেদেরকে উসকে দিতে পারে কিন্তু আমাদেরকে পরিত্যাগ করার জন্য মহাবিশ্বের সার্বভৌম শাসককে তা একটুও প্রভাবিত করতে পারে না।

১৬ খ্রীষ্টান হিসেবে আমাদেরকে এমন কোন কিছুকে ভয় পাওয়া উচিত নয়, যেগুলোকে পৌল “উপস্থিত বিষয় সকল” বলেছিলেন অর্থাৎ বর্তমান বিধিব্যবস্থার বিভিন্ন ঘটনা, অবস্থা এবং পরিস্থিতি বা “ভাবী বিষয় সকল” অর্থাৎ ভবিষ্যতে যা কিছুই হোক না কেন, ঈশ্বরের লোকেদের প্রতি তাঁর যে অনুরাগ রয়েছে কোন কিছুই সেটাতে ভাঙন ধরাতে পারে না। যদিও পার্থিব কর্তৃত্ব এবং দুষ্ট আত্মারা আমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে কিন্তু ঈশ্বরের একনিষ্ঠ প্রেম আমাদেরকে বাঁচিয়ে রাখে। এমনকি ‘ঊর্দ্ধ্ব স্থান, কি গভীর স্থানও’ ঈশ্বরের প্রেমে বাধা দিতে পারে না, যে বিষয়ে পৌল জোর দিয়েছিলেন। হ্যাঁ, যে বিষয়গুলো আমাদেরকে নিরুৎসাহিত করে বা আমাদের ওপর জোরালো প্রভাব ফেলে এমন কিছুই আমাদেরকে ঈশ্বরের প্রেম থেকে আলাদা করতে পারে না; অথবা তাঁর সৃষ্ট কোন প্রাণীও ঈশ্বরের বিশ্বস্ত দাসদের সঙ্গে তাঁর যে সম্পর্ক রয়েছে, তাতে ফাটল ধরাতে পারে না। ঈশ্বরের প্রেম কখনও শেষ হয় না; এটা হল চিরস্থায়ী।—১ করিন্থীয় ১৩:৮.

ঈশ্বরের প্রেমপূর্ণ দয়াকে চিরকাল মূল্যবান মনে করুন

১৭. (ক) ঈশ্বরের প্রেম থাকা কেন “জীবন হইতেও উত্তম”? (খ) কীভাবে আমরা দেখাতে পারি যে ঈশ্বরের প্রেমপূর্ণ দয়াকে আমরা মূল্যবান মনে করি?

১৭ ঈশ্বরের প্রেম আপনার কাছে কতখানি জরুরি? আপনিও কি দায়ূদের মতো মনে করেন, যিনি লিখেছিলেন: “কারণ তোমার [“প্রেমপূর্ণ,” NW] দয়া জীবন হইতেও উত্তম; আমার ওষ্ঠাধর তোমার প্রশংসা করিবে। এইরূপে আমি যাবজ্জীবন তোমার ধন্যবাদ করিব, আমি তোমার নামে অঞ্জলি উঠাইব”? (গীতসংহিতা ৬৩:৩, ৪) সত্যিই, ঈশ্বরের প্রেম এবং নিষ্ঠাপূর্ণ বন্ধুত্ব উপভোগ করার চেয়ে এই জগতের অন্য কোন কিছু কি আমাদেরকে আরও ভাল জীবন দিতে পারে? উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ঈশ্বরের সঙ্গে কাছের সম্পর্ক থাকার ফলে যে মনের শান্তি এবং সুখ পাওয়া যায়, একটা ভাল ও লাভজনক চাকরি কি আপনাকে তা দিতে পারে? (লূক ১২:১৫) কিছু খ্রীষ্টান যিহোবাকে অস্বীকার করবেন নাকি মৃত্যুকে বেছে নেবেন, সেই বিচার্য বিষয়ের মুখোমুখি হয়েছিলেন। আর তা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে অনেক যিহোবার সাক্ষিদের বেলায় হয়েছিল। অল্প কয়েকজন ছাড়া আমাদের বেশির ভাগ খ্রীষ্টান ভাইবোনই যিহোবার প্রেমে থাকা বেছে নিয়েছিলেন এবং প্রয়োজনে মরতেও রাজি ছিলেন। যারা নিষ্ঠা দেখিয়ে তাঁর প্রেমে থাকেন তারা পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারেন যে, ঈশ্বরের কাছ থেকে তারা অনন্ত ভবিষ্যৎ পুরস্কার পাবেন, যা এই জগৎ আমাদেরকে দিতে পারে না। (মার্ক ৮:৩৪-৩৬) কিন্তু, এর সঙ্গে অনন্ত জীবনের চেয়েও আরও বেশি কিছু জড়িত রয়েছে।

১৮. অনন্ত জীবন কেন এত চমৎকার?

১৮ যেহেতু যিহোবাকে ছাড়া চিরকাল বেঁচে থাকা সম্ভব নয়, তাই আমাদের সৃষ্টিকর্তাকে ছাড়া এত দীর্ঘ জীবন কেমন হতে পারে, তা একটু ভেবে দেখুন। এটা একেবারে শূন্য হয়ে যাবে এবং প্রকৃত কোন উদ্দেশ্য থাকবে না। এই শেষ কালে করার জন্য যিহোবা তাঁর লোকেদেরকে পরিতৃপ্তিজনক কাজ দিয়েছেন। তাই আমরা আস্থা রাখতে পারি যে, মহান উদ্দেশ্যকারী যিহোবা যখন আমাদেরকে অনন্ত জীবন দেবেন, তখন তা খুবই চমৎকার হবে এবং শেখার ও করার জন্য অনেক গঠনমূলক বিষয় থাকবে। (উপদেশক ৩:১১) সামনে যে হাজার বছর আসতে যাচ্ছে সেখানে আমরা যতটুকুই শিখতে পারি না কেন, “ঈশ্বরের ধনাঢ্যতা ও প্রজ্ঞা ও জ্ঞান” সম্বন্ধে আমরা কখনোই পুরোপুরি জানতে পারব না।—রোমীয় ১১:৩৩.

পিতা আপনাকে ভালবাসেন

১৯. বিদায়কালে যীশু খ্রীষ্ট তাঁর শিষ্যদেরকে কোন্‌ আশ্বাস দিয়েছিলেন?

১৯ সাধারণ কাল ৩৩ সালের ১৪ই নিশান যীশু তাঁর ১১ জন বিশ্বস্ত প্রেরিতের সঙ্গে শেষ সন্ধ্যা কাটানোর সময় তাদেরকে অনেক বিষয় বলেছিলেন, যেন সামনে যে বিষয়গুলো ঘটতে চলেছে সেই সময় তারা সাহস রাখতে পারেন। যীশুর পরীক্ষার সময় তারা সবাই তাঁর সঙ্গে সঙ্গে ছিলেন এবং তাদের প্রতি তাঁর যে প্রেম ছিল, তা তারা সবাই বুঝতে পেরেছিলেন। (লূক ২২:২৮, ৩০; যোহন ১:১৬; ১৩:১) এরপর যীশু তাদেরকে আশ্বাস দিয়েছিলেন: “পিতা আপনি তোমাদিগকে ভাল বাসেন।” (যোহন ১৬:২৭) তাদের স্বর্গীয় পিতার কোমল অনুভূতি বুঝতে এই কথাগুলো শিষ্যদেরকে কত সাহায্যই না করেছিল!

২০. আপনি কী করার সংকল্প নিয়েছেন আর আপনি কোন্‌ বিষয়ে আস্থা রাখতে পারেন?

২০ আজকে অনেকে বছরের পর বছর ধরে বিশ্বস্ততার সঙ্গে যিহোবার সেবা করে আসছেন। কোন সন্দেহ নেই যে, এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থা শেষ হওয়ার আগে আমাদেরকে আরও অনেক পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে। কিন্তু এইধরনের পরীক্ষা এবং হতাশাকে ঈশ্বরের একনিষ্ঠ প্রেমের ব্যাপারে সন্দেহ জাগিয়ে তুলতে দেবেন না। এটা বললে বাড়িয়ে বলা হবে না যে, যিহোবা আপনাকে ভালবাসেন। (যাকোব ৫:১১) আসুন আমরা নিষ্ঠার সঙ্গে ঈশ্বরের আদেশগুলো মেনে চলে প্রত্যেকে আমাদের নিজ নিজ অংশটুকু করে চলি। (যোহন ১৫:৮-১০) প্রতিটা সুযোগে আমরা যেন তাঁর নামের প্রশংসা করি। প্রার্থনা এবং তাঁর বাক্য অধ্যয়নের মাধ্যমে তাঁর সঙ্গে কাছের সম্পর্ক গড়ে তুলে আমাদের সংকল্পকে আরও দৃঢ় করে চলা উচিত। আগামীকাল যাই ঘটুক না কেন, যিহোবাকে খুশি করার জন্য আমরা যদি আমাদের যথাসাধ্য করি, তাহলে আমরা শান্তিতে থাকব এবং তাঁর নিশ্চিত প্রেমের প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা থাকবে।—২ পিতর ৩:১৪.

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• আধ্যাত্মিক এবং মানসিক বিষয়গুলোতে ভারসাম্য বজায় রাখতে হলে, বিশেষ করে কার প্রেম আমাদের জন্য জরুরি?

• কোন্‌ বিষয়গুলো কখনও যিহোবার দাসদের প্রতি তাঁর প্রেমকে বন্ধ করে দিতে পারবে না?

• যিহোবার প্রেম উপভোগ করা কেন “জীবন হইতেও উত্তম”?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৩ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

আমরা যদি বুঝতে পারি যে, ঈশ্বরের প্রেম থেকে আমরা কিছুটা পৃথক হয়ে পড়েছি, তাহলে এই পরিস্থিতিকে শোধরানোর জন্য আমরা পদক্ষেপ নিতে পারি

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

পৌল বুঝতে পেরেছিলেন যে, কেন তাকে তাড়না করা হয়েছিল