সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহোবা আমাদের আশ্রয়

যিহোবা আমাদের আশ্রয়

যিহোবা আমাদের আশ্রয়

[“কারণ তুমি বলেছিলে,” NW] ‘হাঁ, সদাপ্রভু, তুমিই আমার আশ্রয়’। . . . তোমার কোন বিপদ ঘটিবে না।”গীতসংহিতা ৯১:৯, ১০.

১. কেন আমরা বলতে পারি যে, যিহোবা আমাদের আশ্রয়?

 যিহোবা তাঁর লোকেদের প্রকৃত আশ্রয়। আমরা যদি তাঁর কাছে নিজেদেরকে পুরোপুরি উৎসর্গ করি, তাহলে আমরা হয়তো ‘সর্ব্বপ্রকারে ক্লিষ্ট হই, কিন্তু সঙ্কটাপন্ন হই না; হতবুদ্ধি হই, কিন্তু নিরাশ হই না; তাড়িত হই, কিন্তু পরিত্যক্ত হই না; অধঃক্ষিপ্ত হই, কিন্তু বিনষ্ট হই না।’ কেন? কারণ যিহোবা আমাদেরকে “পরাক্রমের উৎকর্ষ” দান করেন। (২ করিন্থীয় ৪:৭-৯) হ্যাঁ, আমাদের স্বর্গীয় পিতা আমাদেরকে ধার্মিক জীবনযাপন বজায় রাখতে সাহায্য করেন আর তাই আমরা গীতরচকের এই কথাগুলোকে হৃদয়ে গ্রহণ করতে পারি: “কারণ তুমি বলেছিলে, ‘হাঁ, সদাপ্রভু, তুমিই আমার আশ্রয়’। তুমি পরাৎপরকে আপনার বাসস্থান করিয়াছ; তোমার কোন বিপদ ঘটিবে না।”—গীতসংহিতা ৯১:৯, ১০.

২. গীতসংহিতা ৯১ অধ্যায় সম্বন্ধে কী বলা যায় আর এখানে কোন্‌ বিষয়ে প্রতিজ্ঞা করা হয়েছে?

গীতসংহিতা ৯১ অধ্যায়ের কথাগুলো হয়তো মোশি লিখেছিলেন। ৯০ গীতের রচয়িতা হিসেবে ওপরে তার নাম লেখা আছে আর এর পরে ৯১ গীত রয়েছে, যার ওপর অন্য কোন লেখকের নাম নেই। ৯১ গীতটা হয়তো সমবেতভাবে গাওয়া হয়েছিল; অর্থাৎ, একজন ব্যক্তি হয়তো প্রথম (৯১:১, ২) অংশটুকু গেয়েছেন এবং কিছু গায়করা সমবেতভাবে উত্তর দিয়েছেন (৯১:৩-৮)। সম্ভবত এর পরে একজন গায়ক গেয়েছিলেন (৯১:৯ক) আর একদল গায়করা উত্তর দিয়েছিলেন (৯১:৯খ-১৩)। এরপর একজন গায়ক হয়তো শেষের অংশটুকু (৯১:১৪-১৬) গেয়েছেন। এটা যেভাবেই গাওয়া হোক না কেন, ৯১ গীতে এক শ্রেণী হিসেবে অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের আধ্যাত্মিক নিরাপত্তার বিষয়ে প্রতিজ্ঞা করা হয়েছে ও সেইসঙ্গে এক দল হিসেবে তাদের উৎসর্গীকৃত সঙ্গীদেরও একই আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। * আসুন আমরা যিহোবার এই সমস্ত দাসদের দৃষ্টিকোণ থেকে এই গীতটা বিবেচনা করে দেখি।

‘ঈশ্বরের অন্তরালে’ নিরাপদ

৩. (ক) ‘পরাৎপরের অন্তরাল’ কী? (খ) “সর্ব্বশক্তিমানের ছায়াতে বসতি করে” আমরা কী পাই?

গীতরচক গেয়ে চলেন: “যে ব্যক্তি পরাৎপরের অন্তরালে থাকে, সে সর্ব্বশক্তিমানের ছায়াতে বসতি করে। আমি সদাপ্রভুর বিষয়ে বলিব, ‘তিনি আমার আশ্রয়, আমার দুর্গ, আমার ঈশ্বর, আমি তাঁহাতে নির্ভর করিব’।” (গীতসংহিতা ৯১:১, ২) ‘পরাৎপরের অন্তরাল’ হল আমাদের এবং বিশেষ করে অভিষিক্ত ব্যক্তিদের জন্য রূপক সুরক্ষার জায়গা, যারা দিয়াবলের বিশেষ লক্ষ্যবস্তু। (প্রকাশিত বাক্য ১২:১৫-১৭) আমরা যদি ঈশ্বরের আত্মিক অতিথিদের মতো তাঁর সুরক্ষা না পেতাম, তাহলে দিয়াবল আমাদের সকলকে ধ্বংস করে দিত। “সর্ব্বশক্তিমানের ছায়াতে বসতি করে” আমরা ঈশ্বরের সুরক্ষামূলক আড়াল অথবা ছায়া পাই। (গীতসংহিতা ১৫:১, ২; ১২১:৫) আমাদের সার্বভৌম প্রভু যিহোবার চেয়ে নিরাপদ আশ্রয় বা আরও শক্তিশালী দুর্গ আর কোথাও নেই।—হিতোপদেশ ১৮:১০.

৪. ‘পাখি শিকারি’ শয়তান কোন্‌ কৌশলগুলো ব্যবহার করে আর কীভাবে আমরা রক্ষা পাই?

গীতরচক আরও বলেন: “হাঁ, তিনিই [যিহোবাই] তোমাকে ব্যাধের [“পাখি শিকারির,” NW] ফাঁদ হইতে, ও সর্ব্বনাশক মারী হইতে রক্ষা করিবেন।” (গীতসংহিতা ৯১:৩) প্রাচীন ইস্রায়েলের পাখি শিকারিরা প্রায়ই ফাঁদ বা জাল পেতে রেখে পাখি শিকার করত। ‘পাখি শিকারি’ শয়তানের ফাঁদগুলোর মধ্যে রয়েছে তার মন্দ সংগঠন এবং “সুনিপুণ চাতুরীগুলো।” (ইফিষীয় ৬:১১, পাদটীকা, NW) আমাদেরকে দুষ্টতার দিকে আকৃষ্ট করার এবং আমাদের আধ্যাত্মিকতাকে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য আমাদের পথের ওপর গুপ্ত ফাঁদ পেতে রাখা হয়েছে। (গীতসংহিতা ১৪২:৩) যেহেতু আমরা অধার্মিকতাকে অস্বীকার করেছি, তাই ‘আমাদের প্রাণ ফাঁদ হইতে পক্ষীর ন্যায় রক্ষা পায়।’ (গীতসংহিতা ১২৪:৭, ৮) আমরা কতই না কৃতজ্ঞ যে, যিহোবা আমাদেরকে দুষ্ট “পাখি শিকারির” হাত থেকে রক্ষা করেছেন!—মথি ৬:১৩.

৫, ৬. কোন্‌ “মারী” বিভিন্ন ‘সর্ব্বনাশ’ ডেকে এনেছে কিন্তু যিহোবার লোকেরা কেন এতে নতি স্বীকার করে না?

গীতরচক ‘সর্ব্বনাশক মারীর’ বিষয়ে উল্লেখ করেন। সংক্রামক মহামারী রোগের মতো এমন কিছু বিষয় রয়েছে, যা মানব পরিবার এবং যিহোবার সার্বভৌমত্বের সমর্থনকারীদের জন্য ‘সর্ব্বনাশ’ ডেকে আনে। এই ক্ষেত্রে, ইতিহাসবেত্তা আরনল্ড টয়েনবি লিখেছিলেন: “২য় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর থেকে জাতীয়তাবাদী মনোভাবের জন্য আঞ্চলিক স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রগুলোর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে . . . মানবজাতির বর্তমান আচরণ দিনের পর দিন কেবল বিভেদ তৈরি করছে।”

শত শত বছর ধরে, কিছু শাসকরা বিভেদসৃষ্টিকারী আন্তর্জাতিক লড়াইগুলোকে উসকে দিয়েছে। সেইসঙ্গে তারা দাবি করেছে যে, তাদেরকে অথবা বিভিন্ন প্রতিমা বা প্রতীকের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো উচিত। কিন্তু, যিহোবা তাঁর বিশ্বস্ত লোকেদেরকে কখনোই এইরকম ‘মারীর’ কাছে নতি স্বীকার করতে দেননি। (দানিয়েল ৩:১, ২, ২০-২৭; ৬:৭-১০, ১৬-২২) এক প্রেমময় আন্তর্জাতিক ভ্রাতৃসমাজ হিসেবে আমরা যিহোবাকে ঐকান্তিক ভক্তি দেখাই, শাস্ত্রের মান অনুসারে নিরপেক্ষতা বজায় রাখি এবং পক্ষপাত না দেখিয়ে স্বীকার করি যে, “প্রত্যেক জাতির মধ্যে যে কেহ [ঈশ্বরকে] ভয় করে ও ধর্ম্মাচরণ করে, সে তাঁহার গ্রাহ্য হয়।” (প্রেরিত ১০:৩৪, ৩৫; যাত্রাপুস্তক ২০:৪-৬; যোহন ১৩:৩৪, ৩৫; ১৭:১৬; ১ পিতর ৫:৮, ৯) খ্রীষ্টান হিসেবে যদিও আমাদেরকে তাড়নার আকারে ‘সর্ব্বনাশ’ ভোগ করতে হয় কিন্তু তবুও আমরা “পরাৎপরের অন্তরালে” থেকে আনন্দিত এবং আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে সুরক্ষিত।

৭. কীভাবে যিহোবা “আপন পালখে” আমাদেরকে রক্ষা করেন?

যিহোবাকে আমাদের আশ্রয় হিসেবে পেয়ে আমরা এই কথাগুলো থেকে সান্ত্বনা পাই: “তিনি আপন পালখে তোমাকে আবৃত করিবেন, তাঁহার পক্ষের নীচে তুমি আশ্রয় পাইবে; তাঁহার সত্য ঢাল ও তনুত্রাণস্বরূপ।” (গীতসংহিতা ৯১:৪) পাখি যেমন তার বাচ্চার সুরক্ষার জন্য তার চারিদিকে সবসময় উড়তে থাকে, ঠিক তেমনই ঈশ্বর আমাদেরকে রক্ষা করেন। (যিশাইয় ৩১:৫) ‘তিনি আপন পালখে আমাদের আবৃত করেন।’ পাখির ‘পালখ’ বলতে সাধারণত তার ডানাকেই বোঝায়। ডানা দিয়ে পাখি তার বাচ্চাদেরকে আগলে রাখে, শিকারির হাত থেকে রক্ষা করে। সদ্য উড়তে শেখা বাচ্চা পাখির মতো আমরা যিহোবার রূপক পালখে নিরাপদ বোধ করি কারণ আমরা তাঁর সত্য খ্রীষ্টীয় সংগঠনে আশ্রয় নিয়েছি।—রূতের বিবরণ ২:১২; গীতসংহিতা ৫:১, ১১.

৮. যিহোবার “সত্য” কীভাবে এক ঢাল ও তনুত্রাণস্বরূপ?

আমরা “সত্য” বা বিশ্বস্ততার ওপর আস্থা রাখি। এটা প্রাচীন কালের ঢালের মতো, যেগুলোর আকার প্রায়ই দরজার মতো এবং একজন ব্যক্তির পুরো শরীর ঢেকে ফেলার মতো যথেষ্ট বড় ছিল। (গীতসংহিতা ৫:১২) এইধরনের সুরক্ষার ওপর আস্থা রাখা আমাদেরকে ভয় থেকে মুক্ত করে। (আদিপুস্তক ১৫:১; গীতসংহিতা ৮৪:১১) আমাদের বিশ্বাসের মতো ঈশ্বরের সত্য হল সুরক্ষাকারী বড় ঢাল, যা শয়তানের অগ্নিবাণকে নির্বাণ করে এবং শত্রুদের আঘাতকে প্রতিরোধ করে। (ইফিষীয় ৬:১৬) এছাড়াও এটা হল এক তনুত্রাণস্বরূপ বা প্রাচীর, এক শক্তিশালী রক্ষামূলক ঢিবি, যেটার পিছনে আমরা দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে আছি।

‘আমরা ভীত হইব না’

৯. রাত কেন ভয়ংকর হতে পারে কিন্তু আমরা কেন ভীত হই না?

ঈশ্বরের সুরক্ষার বিষয়ে গীতরচক গান করেন: “তুমি ভীত হইবে না—রাত্রির ত্রাস হইতে, দিবসে উড্‌ডীয়মান শর হইতে, তিমির-বিহারী মারী হইতে, মধ্যাহ্নের সাংঘাতিক ব্যাধি হইতে।” (গীতসংহিতা ৯১:৫, ৬) যেহেতু অন্ধকারের মধ্যে অনেক খারাপ কাজ করা হয়, তাই রাত সত্যিই এক ভয়ংকর সময় হতে পারে। বর্তমানে পৃথিবীকে আচ্ছন্ন করে রাখা আধ্যাত্মিক অন্ধকারে আমাদের শত্রুরা প্রায়ই আমাদের আধ্যাত্মিকতাকে ধ্বংস করার ও প্রচার কাজকে বন্ধ করে দেওয়ার জন্য গোপনে চেষ্টা করে থাকে। কিন্তু, ‘আমরা রাত্রির ত্রাস হইতে ভীত হই না’ কারণ যিহোবা আমাদেরকে রক্ষা করেন।—গীতসংহিতা ৬৪:১, ২; ১২১:৪; যিশাইয় ৬০:২.

১০. “দিবসে উড্‌ডীয়মান শর” বলতে কী বোঝানো হয়েছে বলে মনে হয় এবং এর প্রতি আমরা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাই? (খ) ‘তিমির-বিহারী মারীর’ বৈশিষ্ট্য কী এবং কেন আমরা এটাকে ভয় পাই না?

১০ “দিবসে উড্‌ডীয়মান শর” বলতে মনে হয় মৌখিক আক্রমণকে বোঝানো হয়েছে। (গীতসংহিতা ৬৪:৩-৫; ৯৪:২০) আমরা যখন অন্যদের কাছে সত্য তথ্য বলে চলি, তখন আমাদের পবিত্র সেবার প্রতি এইধরনের খোলাখুলি বিরোধিতা নিষ্ফল হয়। এছাড়াও, আমরা “তিমির-বিহারী মারী হইতে” ভয় পাই না। শয়তানের ক্ষমতার অধীনে থাকা নৈতিক ও ধর্মীয় দিক দিয়ে অসুস্থ এই জগতের অন্ধকার থেকে আসা এটা হল এক রূপক মারী। (১ যোহন ৫:১৯) যিহোবা, তাঁর উদ্দেশ্যগুলো এবং তাঁর প্রেমময় ব্যবস্থা সম্বন্ধে লোকেদেরকে অন্ধকারে রেখে এইরকম মারী মন ও হৃদয়ে মারাত্মক অবস্থা উৎপন্ন করে। (১ তীমথিয় ৬:৪) এই অন্ধকারের মধ্যে আমরা ভীত নই কারণ আমরা প্রচুর পরিমাণে আধ্যাত্মিক দীপ্তি উপভোগ করি।—গীতসংহিতা ৪৩:৩.

১১. যারা ‘মধ্যাহ্নে সাংঘাতিক ব্যাধি’ ভোগ করে তাদের কী হয়?

১১ এছাড়া ‘মধ্যাহ্নের সাংঘাতিক ব্যাধিও’ আমাদেরকে ভীত করে না। ‘মধ্যাহ্ন’ বলতে হয়তো জগতের তথাকথিত জ্ঞানকে বোঝাতে পারে। যারা এর বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি গা ভাসিয়ে দেয়, তারা আধ্যাত্মিক ধ্বংসের শিকার হয়। (১ তীমথিয় ৬:২০, ২১) আমরা যখন সাহসের সঙ্গে রাজ্যের বার্তা ঘোষণা করি, তখন আমরা আমাদের শত্রুদেরকে ভয় করি না, কারণ যিহোবা আমাদের রক্ষাকর্তা।—গীতসংহিতা ৬৪:১; হিতোপদেশ ৩:২৫, ২৬.

১২. কাদের পাশে হাজার হাজার ব্যক্তিরা ‘পড়িয়া’ যায় এবং কীভাবে?

১২ গীতরচক বলে চলেন: “পড়িবে তোমার পার্শ্বে সহস্র জন, তোমার দক্ষিণে দশ সহস্র জন, কিন্তু উহা তোমার নিকটে আসিবে না। তুমি কেবল স্বচক্ষে নিরীক্ষণ করিবে, দুষ্টগণের প্রতিফল দেখিবে।” (গীতসংহিতা ৯১:৭, ৮) যিহোবাকে তাদের আশ্রয় না করায় অনেকে আমাদের একেবারে “পার্শ্বে” আধ্যাত্মিক মৃত্যুবরণ করে ‘পড়িয়া’ যায়। সত্যিই, আজকে আত্মিক ইস্রায়েলীয়দের “দক্ষিণে দশ সহস্র জন” পড়েছে। (গালাতীয় ৬:১৬) কিন্তু, আমরা অভিষিক্ত খ্রীষ্টান বা তাদের উৎসর্গীকৃত সঙ্গী যাই হই না কেন, আমরা ঈশ্বরের “অন্তরালে” নিরাপদে আছি। আমরা কেবল ‘স্বচক্ষে নিরীক্ষণ করি, দুষ্টগণের প্রতিফল দেখি’ যারা বাণিজ্যিক, ধর্মীয় এবং আরও অন্যান্য দিক দিয়ে অসুবিধা ভোগ করছে।—গালাতীয় ৬:৭.

‘আমাদের কোন বিপদ ঘটিবে না’

১৩. আমাদের ওপর কোন্‌ বিপদগুলো আসে না এবং কেন?

১৩ যদিও আজকে জগতের নিরাপত্তা ব্যবস্থার পতন ঘটছে, কিন্তু আমরা ঈশ্বরকে প্রথমে রাখি ও গীতরচকের এই কথাগুলো থেকে সাহস পাই: “কারণ তুমি বলেছিলে ‘হাঁ, সদাপ্রভু, তুমিই আমার আশ্রয়’। তুমি পরাৎপরকে আপনার বাসস্থান করিয়াছ; তোমার কোন বিপদ ঘটিবে না, কোন উৎপাত তোমার তাম্বুর নিকটে আসিবে না।” (গীতসংহিতা ৯১:৯, ১০) হ্যাঁ, যিহোবা আমাদের আশ্রয়। কিন্তু, আমরাও পরাৎপর ঈশ্বরকে “আমাদের বাসস্থান” করি, যেখানে আমরা নিরাপত্তা খুঁজে পাই। মহাবিশ্বের সার্বভৌম প্রভু হিসেবে আমরা যিহোবার প্রশংসা করি, আমাদের নিরাপত্তার উৎস হিসেবে তাঁর সঙ্গে ‘বাস’ করি এবং তাঁর রাজ্যের সুসমাচার ঘোষণা করি। (মথি ২৪:১৪) তাই, ‘আমাদের কোন বিপদ ঘটিবে না’—এই গীতে আগে যে বিপদগুলোর কথা বলা হয়েছে সেগুলোর একটাও না। এমনকি অন্যদের সঙ্গে সঙ্গে আমরাও যখন ভূমিকম্প, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, দুর্ভিক্ষ এবং যুদ্ধবিগ্রহের শিকার হই, তখন এগুলো আমাদের বিশ্বাস বা আমাদের আধ্যাত্মিক নিরাপত্তাকে ধ্বংস করে দিতে পারে না।

১৪. যিহোবার দাস হিসেবে, কেন আমরা মারাত্মক উৎপাতের দ্বারা সংক্রামিত হই না?

১৪ অভিষিক্ত খ্রীষ্টানরা বিদেশিদের মতো, যারা এই বিধিব্যবস্থা থেকে আলাদা হয়ে তাঁবুতে বাস করছেন। (১ পিতর ২:১১) ‘কোন উৎপাত তাহাদের তাম্বুর নিকটে আইসে না।’ আমাদের আশা স্বর্গীয় বা পার্থিব যা-ই হোক না কেন, আমরা জগতের অংশ নই এবং যে বিষয়গুলো আধ্যাত্মিকতার জন্য মারাত্মক যেমন অনৈতিকতা, বস্তুবাদিতা, মিথ্যা ধর্ম এবং ‘পশু’ ও এর ‘প্রতিমা’ অর্থাৎ রাষ্ট্রসংঘকে উপাসনা করার মতো উৎপাতের দ্বারা আমরা সংক্রামিত হই না।—প্রকাশিত বাক্য ৯:২০, ২১; ১৩:১-১৮; যোহন ১৭:১৬.

১৫. কোন্‌ কোন্‌ উপায়ে আমরা দূতেদের সাহায্য পাই?

১৫ আমরা যে সুরক্ষা উপভোগ করি, সেই সম্বন্ধে গীতরচক আরও বলেন: “তিনি [যিহোবা] আপন দূতগণকে তোমার বিষয়ে আজ্ঞা দিবেন, যেন তাঁহারা তোমার সমস্ত পথে তোমাকে রক্ষা করেন। তাঁহারা তোমাকে হস্তে করিয়া তুলিয়া লইবেন, পাছে তোমার চরণে প্রস্তরের আঘাত লাগে।” (গীতসংহিতা ৯১:১১, ১২) আমাদেরকে রক্ষা করার জন্য দূতেদেরকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। (২ রাজাবলি ৬:১৭; গীতসংহিতা ৩৪:৭-৯; ১০৪:৪; মথি ২৬:৫৩; লূক ১:১৯) তারা ‘আমাদের সমস্ত পথে’ আমাদেরকে রক্ষা করেন। (মথি ১৮:১০) রাজ্য ঘোষণাকারী হিসেবে কাজ করার সময় দূতেরা আমাদেরকে নির্দেশনা দেন এবং দেখাশোনা করেন, ফলে আমরা আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে হোঁচট খাই না। (প্রকাশিত বাক্য ১৪:৬, ৭) এমনকি আমাদের কাজের ওপর নিষেধাজ্ঞার মতো ‘প্রস্তরগুলোও’ আমাদের বিঘ্ন জন্মায় না ও ঈশ্বরের অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত করে না।

১৬. “যুবসিংহ” ও “সর্পের” আক্রমণের মধ্যে পার্থক্য কী এবং এগুলোর প্রতি আমরা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাই?

১৬ গীতরচক বলে চলেন: “তুমি সিংহ ও সর্পের উপর পা দিবে, তুমি যুবসিংহ ও নাগকে পদতলে দলিবে।” (গীতসংহিতা ৯১:১৩) একটা যুবসিংহ যেমন সরাসরি ও একেবারে সামনে থেকে আক্রমণ করে, ঠিক তেমনই আমাদের কিছু কিছু শত্রুরা প্রচার কাজকে বন্ধ করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে আইনের আশ্রয় নিয়ে প্রকাশ্যে আমাদের বিরোধিতা করে। সেইসঙ্গে, গুপ্ত জায়গা থেকে আসা সাপের কামড়ের মতো হঠাৎ আক্রমণগুলোও রয়েছে। পাদরিরা পর্দার আড়ালে থেকে মাঝে মাঝে আইনপ্রণেতা, বিচারক বা অন্যান্যদের মাধ্যমে আমাদেরকে আক্রমণ করে থাকেন। কিন্তু, যিহোবার সাহায্যে আমরা আদালতের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে মীমাংসার চেষ্টা করি ও এভাবে ‘সুসমাচারের পক্ষসমর্থন ও প্রতিপাদন করি।’—ফিলিপীয় ১:৭; গীতসংহিতা ৯৪:১৪, ২০-২২.

১৭. কীভাবে আমরা ‘যুবসিংহকে’ পদতলে দলিত করি?

১৭ গীতরচক “যুবসিংহ ও নাগকে” পদতলে দলিত করার কথা বলেন। একটা যুবসিংহ প্রচণ্ড হিংস্র হতে পারে এবং নাগ বলতে বেশ বড় আকারের কোন সরীসৃপকে বোঝাতে পারে। (যিশাইয় ৩১:৪) কিন্তু, সামনে থেকে আক্রমণ করার সময় একটা যুবসিংহ যত হিংস্রই হোক না কেন, আমরা সিংহতুল্য মানুষ বা সংগঠনগুলোর বদলে ঈশ্বরের বাধ্য হয়ে এটাকে পদতলে দলিত করি। (প্রেরিত ৫:২৯) তাই, ভয়ংকর ‘সিংহ’ আমাদেরকে আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে আহত করতে পারে না।

১৮. ‘নাগ’ আমাদেরকে কার কথা মনে করিয়ে দেয় এবং আমরা যদি তার আক্রমণের শিকার হই, তাহলে আমাদের কী করা উচিত?

১৮ গ্রিক সেপ্টুয়াজিন্ট-এ “নাগকে” “ড্রাগন” বলা হয়েছে, যা বৃহদাকার সাপকে বোঝায়। এটা আমাদেরকে “সেই মহানাগ . . . পুরাতন সর্প, যাহাকে দিয়াবল [অপবাদক] এবং শয়তান [বিপক্ষ] বলা যায়” তার কথা মনে করিয়ে দেয়। (প্রকাশিত বাক্য ১২:৭-৯; আদিপুস্তক ৩:১৫) সে একটা প্রকাণ্ড সরীসৃপের মতো, যে তার শিকারকে চূর্ণ করতে ও গিলে ফেলতে পারে। (যিরমিয় ৫১:৩৪) শয়তান যেহেতু আমাদেরকে ফাঁদে ফেলার জন্য চারিদিক দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করছে, এই জগতের বিভিন্ন চাপের দ্বারা আমাদেরকে চূর্ণ করতে ও গিলে ফেলতে চাইছে, তাই আসুন আমরা নিজেদেরকে এর দাসত্ব থেকে ছাড়িয়ে নিই এবং এই “নাগকে” পদতলে দলিত করি। (১ পিতর ৫:৮) রোমীয় ১৬:২০ পদের কথাগুলোর পরিপূর্ণতায় অংশ নেওয়ার জন্য অভিষিক্ত অবশিষ্টাংশদেরকে অবশ্যই তা করতে হবে।

যিহোবা—আমাদের পরিত্রাণের উৎস

১৯. কেন আমরা যিহোবাকে আমাদের আশ্রয় হিসেবে নিই?

১৯ সত্য উপাসকদের সম্বন্ধে গীতরচক ঈশ্বরের এই কথাগুলো বলেন: “‘সে আমাতে আসক্ত, তজ্জন্য আমি তাহাকে বাঁচাইব; আমি তাহাকে উচ্চে স্থাপন করিব, কারণ সে আমার নাম জ্ঞাত হইয়াছে।” (গীতসংহিতা ৯১:১৪) “আমি তাহাকে বাঁচাইব,” এই কথাগুলোর আক্ষরিক মানে হল “আমি তাকে উচ্চে স্থান দেব” অর্থাৎ এমন স্থান যা নাগালের বাইরে। আমরা যিহোবার উপাসক হিসেবে তাঁকে আমাদের আশ্রয় হিসেবে নিই আর এর বিশেষ কারণটা হল, ‘আমরা তাহাতে আসক্ত হইয়াছি।’ (মার্ক ১২:২৯, ৩০; ১ যোহন ৪:১৯) ফলে, ঈশ্বর আমাদেরকে শত্রুদের হাত থেকে ‘বাঁচান।’ আমাদেরকে কখনও ধ্বংস করা হবে না। এর বদলে আমরা পরিত্রাণ পাব কারণ আমরা ঈশ্বরের নাম জানি এবং বিশ্বাস নিয়ে এই নামে ডাকি। (রোমীয় ১০:১১-১৩, NW) আর আমরা ‘চিরকাল যিহোবার নামে চলিবার’ জন্য সংকল্পবদ্ধ।—মীখা ৪:৫; যিশাইয় ৪৩:১০-১২.

২০. গীতসংহিতা ৯১ অধ্যায়ের শেষে ঈশ্বর তাঁর বিশ্বস্ত দাসের কাছে কী প্রতিজ্ঞা করেন?

২০ গীতসংহিতা ৯১ অধ্যায়ের শেষে যিহোবা তাঁর বিশ্বস্ত দাসকে বলেন: “সে আমাকে ডাকিবে, আমি তাহাকে উত্তর দিব; আমি সঙ্কটে তাহার সঙ্গে থাকিব; আমি তাহাকে উদ্ধার করিব, গৌরবান্বিতও করিব। আমি দীর্ঘ আয়ু দিয়া তাহাকে তৃপ্ত করিব, আমার পরিত্রাণ তাহাকে দেখাইব।’” (গীতসংহিতা ৯১:১৫, ১৬) যখন আমরা ঈশ্বরের ইচ্ছার সঙ্গে মিল রেখে তাঁর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি আমাদেরকে উত্তর দেন। (১ যোহন ৫:১৩-১৫) ইতিমধ্যেই আমরা অনেক সংকট পেরিয়ে এসেছি কারণ শয়তান বিভিন্নভাবে আমাদের বিরোধিতা করেছে। কিন্তু “আমি সঙ্কটে তাহার সঙ্গে থাকিব” কথাগুলো আমাদেরকে ভবিষ্যতের পরীক্ষাগুলোর জন্য তৈরি করে এবং আমাদেরকে আশ্বাস দেয় যে, এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থার ধ্বংসের সময় ঈশ্বর আমাদেরকে শক্তি জোগাবেন।

২১. কীভাবে অভিষিক্তরা ইতিমধ্যেই প্রতাপান্বিত হয়েছেন?

২১ শয়তানের প্রচণ্ড বিরোধিতা সত্ত্বেও, আমাদের মাঝে যে অভিষিক্ত ব্যক্তিরা আছেন তারা সকলে পৃথিবীতে “দীর্ঘ আয়ু” উপভোগ করার পর, যিহোবার নিরূপিত সময়ে স্বর্গে প্রতাপান্বিত হবেন। কিন্তু, ঈশ্বরের উল্লেখযোগ্য উদ্ধার কাজগুলো ইতিমধ্যেই অভিষিক্তদের আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে প্রতাপান্বিত করেছে। আর এই শেষ কালে যিহোবার সাক্ষি হিসেবে নেতৃত্ব দিতে পেরে কত সম্মানিতই না তারা হয়েছেন! (যিশাইয় ৪৩:১০-১২) যিহোবার মহাযুদ্ধ হর্‌মাগিদোনে তাঁর লোকেরা সবচেয়ে বড় উদ্ধার পাবে, যখন তিনি তাঁর সার্বভৌমত্ব ও তাঁর পবিত্র নামের সত্যতা প্রতিপাদন করবেন।—গীতসংহিতা ৮৩:১৮; যিহিষ্কেল ৩৮:২৩; প্রকাশিত বাক্য ১৬:১৪, ১৬.

২২. কারা ‘সদাপ্রভুর পরিত্রাণ দেখিতে’ পাবে?

২২ আমরা অভিষিক্ত খ্রীষ্টান বা তাদের সহযোগী উৎসর্গীকৃত সঙ্গী যে-ই হই না কেন, পরিত্রাণের জন্য আমরা যিহোবার ওপর নির্ভর করি। যারা নিষ্ঠার সঙ্গে ঈশ্বরের সেবা করবে তারা ‘সদাপ্রভুর ঐ মহৎ ও ভয়ঙ্কর দিনে’ পরিত্রাণ পাবে। (যোয়েল ২:৩০-৩২) আমাদের মধ্যে যারা ঈশ্বরের নতুন জগতে রক্ষাপ্রাপ্ত হিসেবে ‘বিস্তর লোকের’ অংশ হবে এবং যারা চূড়ান্ত পরীক্ষায় বিশ্বস্ত থাকবে তাদেরকে ঈশ্বর ‘দীর্ঘ আয়ু দিয়া তৃপ্ত করিবেন’ অর্থাৎ তারা চিরকাল বেঁচে থাকবে। এছাড়াও তিনি অসংখ্য লোকেদের পুনরুত্থিত করবেন। (প্রকাশিত বাক্য ৭:৯; ২০:৭-১৫) সত্যিই যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমে ‘আমাদেরকে পরিত্রাণ দেখাইয়া’ যিহোবা প্রচুর আনন্দ পাবেন। (গীতসংহিতা ৩:৮) আমাদের সামনে যে বিরাট সুযোগগুলো রয়েছে, সেগুলো মনে রেখে আসুন ঈশ্বরকে মহিমান্বিত করার জন্য, আমাদের দিন গণনায় সাহায্য করতে আমরা তাঁর ওপর নির্ভর করে চলি। আমাদের কথা ও কাজের দ্বারা আমরা যেন সবসময় প্রমাণ দিই যে, যিহোবা আমাদের আশ্রয়।

[পাদটীকা]

^ খ্রীষ্টান গ্রিক শাস্ত্রের লেখকরা গীতসংহিতা ৯১ অধ্যায়কে মশীহের ভবিষ্যদ্বাণীর দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনা করেননি। অবশ্য, যীশু খ্রীষ্ট যখন মানুষ হিসেবে ছিলেন সেই সময় যিহোবা তাঁর আশ্রয় ও এক দৃঢ়দুর্গ ছিলেন, এমনকি এই ‘শেষকালে’ তিনি যীশুর অভিষিক্ত অনুসারী ও এক দল হিসেবে তাদের উৎসর্গীকৃত সঙ্গীদের আশ্রয়।—দানিয়েল ১২:৪.

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• “পরাৎপরের অন্তরাল” কী?

• আমরা কেন ভয় পাই না?

• কীভাবে ‘আমাদের কোন বিপদ ঘটিবে না’?

• কেন আমরা বলতে পারি যে, যিহোবা আমাদের পরিত্রাণের উৎস?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

আপনি কি জানেন যে কীভাবে যিহোবার সত্য আমাদের জন্য এক ঢালস্বরূপ?

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

হঠাৎ আক্রমণ ও প্রকাশ্য বিরোধিতা সত্ত্বেও, যিহোবা তাঁর দাসদেরকে তাদের পরিচর্যা সম্পন্ন করতে সাহায্য করেন

[সৌজন্যে]

গোখরো সাপ: A. N. Jagannatha Rao, Trustee, Madras Snake Park Trust