সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনি এক আধ্যাত্মিক হার্ট আ্যটাক এড়াতে পারেন

আপনি এক আধ্যাত্মিক হার্ট আ্যটাক এড়াতে পারেন

আপনি এক আধ্যাত্মিক হার্ট আ্যটাক এড়াতে পারেন

বিশ্বের এক নম্বর ক্রীড়াবিদ, যার নিজের দক্ষতার ওপর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ ছিল এবং বাইরে থেকে দেখলে শরীরের অবস্থা চমৎকার বলেই মনে হতো, অনুশীলন করার সময় হঠাৎ পড়ে গিয়ে সঙ্গে সঙ্গে মারা যান। সেই ক্রীড়াবিদ ছিলেন অলিম্পিকে দুবার সোনা জেতা আইস স্কেটার সিরগে গ্রিনকফ, যার ক্যারিয়ারের কুড়ি ফুটতে না ফুটতেই ঝরে পড়েছিল অর্থাৎ মাত্র ২৮ বছর বয়সে তিনি মারা গেছেন। কত দুঃখজনক! কারণটা কী ছিল? হার্ট আ্যটাক। বলা হয়েছিল যে তার মৃত্যু একেবারে অপ্রত্যাশিত ছিল কারণ তিনি যে হৃদরোগে ভুগছিলেন তার কোন লক্ষণই দেখা যায়নি। কিন্তু, ডাক্তাররা পরীক্ষা করে খুঁজে পেয়েছিলেন যে, তার হার্ট বা হৃদয় স্বাভাবিকের তুলনায় বড় হয়ে গিয়েছিল এবং করোনারি ধমনীগুলো মারাত্মকভাবে আটকে গিয়েছিল।

 যদিও মনে হয় যে হঠাৎ করেই অনেকের হার্ট আ্যটাক হয়ে থাকে কিন্তু চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলেন, এটা খুব কম ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে। কিন্তু প্রকৃত বিষয়টা হল, এইধরনের বিপদ সংকেত ও কারণগুলো যেমন শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া, অতিরিক্ত ওজন বাড়া এবং বুকের ব্যথাকে প্রায়ই অগ্রাহ্য করা হয়। এর ফলে যদিও তারা মারা যান না কিন্তু হার্ট আ্যটাকের কারণে অনেকে সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যান।

বর্তমানে, বেশির ভাগ চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা একমত যে, হার্ট আ্যটাককে রোধ করার জন্য একজন ব্যক্তির খাওয়া-দাওয়া ও জীবনপ্রণালীর প্রতি সবসময় খেয়াল রাখার এবং নিয়মিত মেডিকেল চেকাপ করার দরকার। * এই বিষয়গুলো ও সেইসঙ্গে যেখানে দরকার সেখানে বিভিন্ন রদবদল করার ইচ্ছা, হার্ট আ্যটাকের ফলে যে বেদনাদায়ক পরিণতিগুলো আসে, তা থেকে একজনকে রক্ষা পেতে সাহায্য করবে।

কিন্তু, আমাদের হৃদয়ের আরেকটা দিক রয়েছে যেখানে আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া দরকার। বাইবেল আমাদেরকে সতর্ক করে, “সমস্ত রক্ষণীয় অপেক্ষা তোমার হৃদয় রক্ষা কর কেননা তাহা হইতে জীবনের উদ্গম হয়।” (হিতোপদেশ ৪:২৩) অবশ্য, এই শাস্ত্রপদে মূলত রূপক হৃদয়ের কথা বলা হয়েছে। আমাদের আক্ষরিক হৃদয়কে রক্ষা করার জন্য সতর্ক থাকা প্রয়োজন কিন্তু আমরা যদি আমাদের রূপক হৃদয়কে, এমন রোগগুলো থেকে রক্ষা করতে চাই যা আধ্যাত্মিক মৃত্যু নিয়ে আসে, তাহলে সতর্ক থাকা আরও বেশি জরুরি।

এক রূপক হার্ট আ্যটাক সম্বন্ধে পর্যবেক্ষণ করা

আক্ষরিক হৃদরোগের মতো আধ্যাত্মিক হার্ট আ্যটাককে রোধ করার একটা নিশ্চিত উপায় হল, এর কারণগুলো সম্বন্ধে জানা এবং তারপর সেগুলোর ব্যাপারে কিছু করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া। তাই আসুন, যে কারণে আক্ষরিক ও রূপক হৃদয়ের সমস্যাগুলো তৈরি হয়, সেগুলোর কয়েকটা মূল বিষয় আমরা বিবেচনা করি।

খাবারদাবার। সাধারণত সবাই জানে যে অস্বাস্থ্যকর খাবারদাবার লোভনীয় এবং সুস্বাদু বলে মনে হলেও এগুলো স্বাস্থ্যের জন্য মোটেও উপকারী নয়। একইভাবে, মানসিক দিক দিয়ে অস্বাস্থ্যকর খাবারদাবার সহজেই পাওয়া যায় এবং লোভনীয় বলে মনে হয়, কিন্তু তা একজন ব্যক্তির আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। প্রচার মাধ্যমগুলো কৌশলতার সঙ্গে এমন বিষয়গুলো বাজারজাত করে যেগুলোর মধ্যে ব্যভিচার ও মাদকদ্রব্য, দৌরাত্ম্য ও জাদুবিদ্যার মতো বিষয়গুলো রয়েছে। এইধরনের খাবারদাবার দিয়ে কেউ যদি তার মনকে ভরিয়ে রাখে, তাহলে তা রূপক হৃদয়ের জন্য মারাত্মক। ঈশ্বরের বাক্য সাবধান করে: “জগতে যে কিছু আছে, মাংসের অভিলাষ, চক্ষুর অভিলাষ, ও জীবিকার দর্প, এ সকল পিতা হইতে নয়, কিন্তু জগৎ হইতে হইয়াছে। আর জগৎ ও তাহার অভিলাষ বহিয়া যাইতেছে; কিন্তু যে ব্যক্তি ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে, সে অনন্তকালস্থায়ী।”—১ যোহন ২:১৬, ১৭.

অস্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি আসক্ত একজন ব্যক্তির কাছে পুষ্টিকর খাবার যেমন, ফলমূল এবং সবুজ শাকসবজি ততটা লোভনীয় বলে মনে হয় না। একইভাবে, যে ব্যক্তি জাগতিক বিষয়বস্তু দিয়ে তার হৃদয় ও মনকে ভরিয়ে রাখতে অভ্যস্ত তার কাছে স্বাস্থ্যকর এবং কঠিন আধ্যাত্মিক খাদ্য হয়তো ততটা লোভনীয় বলে মনে হয় না। সে হয়তো কিছু সময়ের জন্য ঈশ্বরের বাক্যের ‘দুগ্ধ’ খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে। (ইব্রীয় ৫:১৩) কিন্তু, ভবিষ্যতে সে আধ্যাত্মিক পরিপক্বতা গড়ে তুলতে পারে না, যা কিনা খ্রীষ্টীয় মণ্ডলী এবং পরিচর্যায় তার প্রাথমিক আধ্যাত্মিক দায়িত্বগুলো নেওয়ার জন্য জরুরি। (মথি ২৪:১৪; মথি ২৮:১৯; ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) এইধরনের পরিস্থিতিতে কেউ কেউ তাদের আধ্যাত্মিক শক্তিকে এতটাই কমে যেতে দিয়েছে যে, তারা নিষ্ক্রিয় বা নিষ্কর্ম সাক্ষি হয়ে পড়েছে!

আরেকটা বিপদ হল, বাইরের চেহারা প্রতারিত করতে পারে। খ্রীষ্টীয় দায়িত্বগুলো শুধু ওপর ওপর করলে তা হয়তো ধীরে ধীরে অসুস্থ হওয়া রূপক হৃদয়কে ঢেকে রাখতে পারে, যেটা আড়ালে আড়ালে বস্তুবাদিতার পিছনে ছুটে বা অনৈতিকতা, দৌরাত্ম্য অথবা জাদুবিদ্যাকে তুলে ধরে এমন বিষয়গুলো দেখে দুর্বল হয়ে পড়েছে। এইধরনের অপুষ্টিকর আধ্যাত্মিক খাবারদাবার হয়তো কারও আধ্যাত্মিকতার ওপর খুব একটা ভাল ফল নিয়ে আসবে না কিন্তু এটা রূপক হৃদয়কে পঙ্গু করে দিতে পারে, ঠিক যেমন অপুষ্টিকর খাবারদাবার ধমনীগুলোকে শক্ত করে দেয় এবং আক্ষরিক হৃদয়ের ক্ষতি করে। কারও হৃদয়ে খারাপ আকাঙ্ক্ষাগুলোকে জায়গা না দেওয়ার বিষয়ে যীশু সাবধান করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “যে কেহ কোন স্ত্রীলোকের প্রতি কামভাবে দৃষ্টিপাত করে, সে তখনই মনে মনে তাহার সহিত ব্যভিচার করিল।” (মথি ৫:২৮) হ্যাঁ, অপুষ্টিকর আধ্যাত্মিক খাবারদাবারের কারণে আধ্যাত্মিক হার্ট আ্যটাক হতে পারে। কিন্তু, বিবেচনা করার মতো আরও কিছু বিষয় রয়েছে।

অনুশীলন। সবাই জানে যে শারীরিক পরিশ্রম ছাড়া জীবনযাপন করলেও হার্ট আ্যটাক হতে পারে। একইভাবে, আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে পরিশ্রম না করে জীবনযাপন করলে তা মারাত্মক পরিণতি নিয়ে আসতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একজন ব্যক্তি হয়তো খ্রীষ্টীয় পরিচর্যায় কিছুটা অংশগ্রহণ করে কিন্তু যেখানে কোন ঝুট-ঝামেলা পোহাতে হয় না শুধু সেখানে যায় এবং “যাহার লজ্জা করিবার প্রয়োজন নাই, যে সত্যের বাক্য যথার্থরূপে ব্যবহার করিতে জানে” ‘এমন কার্য্যকারী হওয়ার’ জন্য খুব সামান্য বা কোন চেষ্টাই করে না। (২ তীমথিয় ২:১৫) অথবা সে হয়তো খ্রীষ্টীয় সভাগুলোতে যোগ দেয় ঠিকই কিন্তু সভার জন্য ভালভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার এবং সভাতে উত্তর দেওয়ার কোন চেষ্টা করে না। আধ্যাত্মিক লক্ষ্য বা আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর জন্য তার হয়তো কোন আকাঙ্ক্ষা বা উদ্যোগ থাকে না। আগে তার যতটা বিশ্বাসই থাকুক না কেন, আধ্যাত্মিক অনুশীলনের অভাবে তা দুর্বল হয়ে পড়ে এমনকি মারা যায়। (যাকোব ২:২৬) ইব্রীয় খ্রীষ্টানদেরকে লেখার সময় প্রেরিত পৌল এই বিপদটা লক্ষ্য করেছিলেন, যখন তাদের মধ্যে কেউ কেউ আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে পরিশ্রম না করেই দিন কাটাতে শুরু করেছিল। এইধরনের জীবনধারণ যে তাদেরকে আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে কঠিন করে দিতে পারে সেই সম্বন্ধে তিনি যে সাবধানবাণী দিয়েছিলেন, তা লক্ষ্য করুন। “ভ্রাতৃগণ, দেখিও, পাছে অবিশ্বাসের এমন মন্দ হৃদয় তোমাদের কাহারও মধ্যে থাকে যে, তোমরা জীবন্ত ঈশ্বর হইতে সরিয়া পড়। বরং তোমরা দিন দিন পরস্পর চেতনা দেও, যাবৎ ‘অদ্য’ নামে আখ্যাত সময় থাকে, যেন তোমাদের মধ্যে কেহ পাপের প্রতারণায় কঠিনীভূত না হয়।”—ইব্রীয় ৩:১২, ১৩.

চাপ। হার্ট আ্যটাকের আরেকটা বড় কারণ হল অতিরিক্ত চাপ। একইভাবে চাপ বা ‘জীবিকার চিন্তা’ খুব সহজেই রূপক হৃদয়ের জন্য মারাত্মক বলে প্রমাণিত হতে পারে, এমনকি যে তার শিকার হয় সে ঈশ্বরকে সেবা করা পর্যন্ত পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে পারে। এইক্ষেত্রে যীশুর সাবধানবাণী খুবই উপযোগী: “আপনাদের বিষয়ে সাবধান থাকিও, পাছে ভোগপীড়ায় ও মত্ততায় এবং জীবিকার চিন্তায় তোমাদের হৃদয় ভারগ্রস্ত হয়, আর সেই দিন হঠাৎ ফাঁদের ন্যায় তোমাদের উপরে আসিয়া পড়ে।” (লূক ২১:৩৪, ৩৫) এছাড়া, চাপ আমাদের রূপক হৃদয়ের ওপর মারাত্মক প্রভাবও ফেলতে পারে যদি আমরা গোপনে করা পাপকে দীর্ঘদিন ধরে মনে পুষে রেখে কষ্ট পেতে থাকি। এইধরনের ক্ষতিকারক চাপের ফলে যে কষ্ট ভোগ করতে হয়, তা রাজা দায়ূদ নিজের অভিজ্ঞতা থেকে শিখেছিলেন যখন তিনি বলেছিলেন: “আমার পাপহেতু আমার অস্থিতে কিছু শান্তি নাই। কেননা আমার অপরাধসমূহ আমার মস্তকের উপরে উঠিয়াছে, ভারী বোঝার ন্যায় সে সকল আমার শক্তি অপেক্ষা ভারী।”—গীতসংহিতা ৩৮:৩, ৪.

অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস। যারা হার্ট আ্যটাকের শিকার হন তারা হার্ট আ্যটাকের আগে পর্যন্ত নিজেদের স্বাস্থ্য সম্বন্ধে খুবই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। প্রায়ই চেকাপ করার বা পরীক্ষা করে দেখার বিষয়কে অগ্রাহ্য করা হয় বা অপ্রয়োজনীয় বলে হেসে উড়িয়ে দেওয়া হয়। একইভাবে কেউ কেউ হয়তো মনে করতে পারেন যে, তারা যেহেতু বেশ কিছু সময় ধরে খ্রীষ্টান হিসেবে আছেন, তাই তাদের প্রতি কখনও কিছু ঘটবে না। বিপদ না আসা পর্যন্ত তারা হয়তো নিজেদের আধ্যাত্মিক চেকাপ বা আত্মপরীক্ষা করার ব্যাপারে কোন গুরুত্বই দেয় না। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস সম্বন্ধে প্রেরিত পৌল যে উত্তম পরামর্শ দিয়েছিলেন, তা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ: “যে মনে করে, আমি দাঁড়াইয়া আছি, সে সাবধান হউক, পাছে পড়িয়া যায়।” আমাদের অসিদ্ধতাকে স্বীকার করা এবং আমাদের আধ্যাত্মিকতাকে নিয়মিত পরীক্ষা করা হল বিজ্ঞের কাজ।—১ করিন্থীয় ১০:১২; হিতোপদেশ ২৮:১৪.

বিপদ সংকেতগুলোকে অবহেলা করবেন না

উপযুক্ত কারণেই শাস্ত্র রূপক হৃদয়ের অবস্থাকে প্রাধান্য দেয়। যিরমিয় ১৭:৯, ১০ পদে আমরা পড়ি: “অন্তঃকরণ সর্ব্বাপেক্ষা বঞ্চক, তাহার রোগ অপ্রতিকার্য্য, কে তাহা জানিতে পারে? আমি সদাপ্রভু অন্তঃকরণের অনুসন্ধান করি, আমি মর্ম্মের পরীক্ষা করি; আমি প্রত্যেক মনুষ্যকে আপন আপন আচরণানুসারে আপন আপন কর্ম্মের ফল দিয়া থাকি।” কিন্তু আমাদের হৃদয় পরীক্ষা করা ছাড়াও যিহোবা প্রেমময় ব্যবস্থা জুগিয়েছেন, যা আমাদেরকে প্রয়োজনীয় আত্মপরীক্ষা করতে সাহায্য করে।

“বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাস” শ্রেণীর মাধ্যমে আমাদেরকে উপযুক্ত সময়ে মনে করিয়ে দেওয়া হয়। (মথি ২৪:৪৫) উদাহরণ হিসেবে, যে প্রধান উপায়গুলোর মাধ্যমে আমাদের রূপক হৃদয় আমাদেরকে প্রতারিত করতে পারে তার একটা হল, আমাদেরকে জগতের স্বপ্নবিলাসগুলোর মধ্যে ডুবে থাকতে উৎসাহ দেয়। এগুলো হল অবাস্তব কল্পনা, দিবাস্বপ্ন এবং অলস মনের চিন্তাভাবনা। এগুলো অত্যন্ত ক্ষতিকারক হতে পারে, বিশেষ করে সেগুলো যদি নোংরা চিন্তাভাবনাকে জাগিয়ে তোলে। তাই সেগুলোকে আমাদের পুরোপুরি পরিত্যাগ করতে হবে। যীশুর মতো আমরাও যদি দুষ্টতাকে ঘৃণা করি, তাহলে আমরা জগতের স্বপ্নবিলাসগুলোর মধ্যে ডুবে না থেকে আমাদের হৃদয়কে রক্ষা করতে পারব।—ইব্রীয় ১:৮, ৯.

এছাড়া আমাদের জন্য খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতে প্রেমময় প্রাচীনদের সাহায্যও রয়েছে। যদিও অন্যদের প্রতি চিন্তা দেখানো সত্যিই প্রশংসনীয় কিন্তু আমাদের রূপক হৃদয়ের যত্ন নেওয়ার বিষয়টা আমাদের নিজ নিজ দায়িত্ব। ‘সর্ব্ববিষয়ের পরীক্ষা করা’ এবং ‘আমরা বিশ্বাসে আছি কি না, তাহা পরীক্ষা করা’ আমাদের নিজেদের দায়িত্ব।—১ থিষলনীকীয় ৫:২১; ২ করিন্থীয় ১৩:৫.

হৃদয়কে রক্ষা করুন

“মনুষ্য যাহা কিছু বুনে তাহাই কাটিবে,” বাইবেলের এই নীতি আমাদের রূপক হৃদয়ের বেলায়ও খাটে। (গালাতীয় ৬:৭) যে আধ্যাত্মিক দুর্ঘটনাকে প্রায়ই হঠাৎ হয়েছে বলে মনে হয়, তা আসলে অনেক দিন ধরে লুকিয়ে লুকিয়ে আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে ক্ষতিকর বিষয়গুলোর মধ্যে ডুবে থাকার কারণে হয়, যেমন অশ্লীল পত্রপত্রিকা দেখা, বস্তুগত বিষয় নিয়ে খুব বেশি উদ্বিগ্ন হওয়া অথবা বিখ্যাত হওয়ার বা ক্ষমতা পাওয়ার পিছনে লেগে থাকা।

তাই, হৃদয়কে রক্ষা করার জন্য একজন ব্যক্তির আধ্যাত্মিক খাবারদাবারের দিকে লক্ষ্য রাখা জরুরি। মন এবং হৃদয়কে ঈশ্বরের বাক্য দিয়ে ভরিয়ে রেখে পুষ্টি প্রদান করুন। মানসিক দিক দিয়ে অস্বাস্থ্যকর খাবারদাবার নেওয়াকে পরিহার করুন, যা সহজেই পাওয়া যায় এবং আকর্ষণীয় বলে মনে হলেও তা আসলে আমাদের রূপক হৃদয়কে অসংবেদনশীল করে তোলে। উপযুক্ত এবং চিকিৎসার দিক দিয়ে উত্তম এক উপমা দিয়ে গীতরচক এভাবে সাবধান করেন: “উহাদের অন্তঃকরণ মেদের ন্যায় স্থূল।”—গীতসংহিতা ১১৯:৭০.

অনেক দিন ধরে মনে গেঁথে রাখা গোপন পাপগুলোকে উপড়ে ফেলার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করুন, তা না হলে তা আপনার রূপক ধমনীগুলোকে আটকে দেবে। জগৎ যদি আকর্ষণীয় বলে মনে হতে শুরু করে এবং আমোদপ্রমোদ ও মনোরঞ্জনের ব্যাপারে লোভ দেখায়, তাহলে প্রেরিত পৌলের দেওয়া বিজ্ঞ পরামর্শ নিয়ে ধ্যান করুন। তিনি লিখেছিলেন: “আমি এই কথা বলিতেছি, ভ্রাতৃগণ, সময় সঙ্কুচিত, এখন হইতে . . . যাহারা সংসার ভোগ করিতেছে, যেন পূর্ণমাত্রায় করিতেছে না, যেহেতুক এই সংসারের অভিনয় অতীত হইতেছে।” (১ করিন্থীয় ৭:২৯-৩১) আর বস্তুগত ধনসম্পদকে যদি আকর্ষণীয় বলে মনে হতে শুরু করে, তাহলে ইয়োবের এই কথাগুলোতে মনোযোগ দিন: “আমি যদি স্বর্ণকে আশাভূমি করিয়া থাকি, সুবর্ণকে বলিয়া থাকি, তুমি মম আশ্রয়, তবে তাহাও বিচারকর্ত্তাদের শাসনীয় অপরাধ হইত, কেননা তাহা হইলে ঊর্দ্ধ্ববাসী ঈশ্বরকে অস্বীকার করিতাম।”—ইয়োব ৩১:২৪, ২৮; গীতসংহিতা ৬২:১০; ১ তীমথিয় ৬:৯, ১০.

বাইবেলের পরামর্শ সবসময় অবহেলা করার মারাত্মক পরিণতি সম্বন্ধে বর্ণনা করতে গিয়ে বাইবেল আমাদেরকে সাবধান করে: “যে পুনঃ পুনঃ অনুযুক্ত হইয়াও ঘাড় শক্ত করে, সে হঠাৎ ভাঙ্গিয়া পড়িবে, তাহার প্রতীকার হইবে না।” (হিতোপদেশ ২৯:১) অন্যদিকে, খুব ভালভাবে আমাদের রূপক হৃদয়ের যত্ন নিয়ে আমরা আনন্দ ও মনের শান্তি পেতে পারি, যা সাদাসিধে এবং সুষ্ঠ জীবনযাপন করার মাধ্যমে আসে। প্রকৃত খ্রীষ্টানদেরকে তা করার জন্য সবসময় পরামর্শ দেওয়া হয়। প্রেরিত পৌল এটা লিখতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন: “বাস্তবিকই ভক্তি, সন্তোষযুক্ত হইলে, মহালাভের উপায়, কেননা আমরা জগতে কিছুই সঙ্গে আনি নাই, কিছুই সঙ্গে করিয়া লইয়া যাইতেও পারি না; কিন্তু গ্রাসাচ্ছাদন পাইলে আমরা তাহাতেই সন্তুষ্ট থাকিব।”—১ তীমথিয় ৬:৬-৮.

হ্যাঁ, ঈশ্বরীয় ভক্তি অনুযায়ী নিজেদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং অনুশীলন করা নিশ্চিত করবে যে আমাদের এক সুস্থ ও মজবুত রূপক হৃদয় রয়েছে। আমাদের আধ্যাত্মিক খাবারদাবারের ওপর ভাল করে লক্ষ্য রেখে আমরা নিজেদের আধ্যাত্মিকতাকে এই জগতের ধ্বংসাত্মক বিষয় এবং চিন্তাগুলোর দ্বারা আক্রান্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সুযোগ দেব না। সর্বোপরি, যিহোবার সংগঠনের মাধ্যমে জোগানো তাঁর ব্যবস্থাগুলোকে মেনে নিয়ে আসুন আমরা নিয়মিত আমাদের রূপক হৃদয়কে পরীক্ষিত হতে দিই। নিয়মিত তা করলে সেটা আমাদেরকে আধ্যাত্মিক হার্ট আ্যটাকের মারাত্মক পরিণতি থেকে রক্ষা করবে।

[পাদটীকা]

^ আরও তথ্যের জন্য দয়া করে যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত ১৯৯৬ সালের ৮ই ডিসেম্বরের সচেতন থাক! (ইংরেজি) পত্রিকার “হার্ট আ্যটাক—কী করা যেতে পারে?” শিরোনামের ধারাবাহিক প্রবন্ধগুলো দেখুন।

[১০ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

অপুষ্টিকর আধ্যাত্মিক খাবারদাবার রূপক হৃদয়কে পঙ্গু করে দিতে পারে, ঠিক যেমন অপুষ্টিকর খাবারদাবার ধমনীগুলোকে শক্ত করে দেয় এবং আক্ষরিক হৃদয়ের ক্ষতি করে

[১০ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে পরিশ্রম না করে জীবনযাপন করলে তা মারাত্মক পরিণতি নিয়ে আসতে পারে

[১১ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

‘জীবিকার চিন্তা’ খুব সহজেই রূপক হৃদয়ের জন্য মারাত্মক বলে প্রমাণিত হতে পারে

[১১ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

আমাদের আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যকে অবহেলা করা অনেক কষ্ট নিয়ে আসতে পারে

[১৩ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

ভাল আধ্যাত্মিক অভ্যাসগুলো গড়ে তুললে তা আমাদের রূপক হৃদয়কে রক্ষা ক

[৯ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]

AP Photo/David Longstreath