সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

পাঠকদের থেকে প্রশ্নসকল

পাঠকদের থেকে প্রশ্নসকল

পাঠকদের থেকে প্রশ্নসকল

 যিরমিয় ৭:১৬ পদে ঈশ্বর যে নির্দেশ দিয়েছেন তার মানে কি এই যে, খ্রীষ্টানরা খ্রীষ্টীয় মণ্ডলী থেকে বহিষ্কৃত এমন কারও জন্য প্রার্থনা করবেন না কারণ ওই ব্যক্তি একজন অনুতাপহীন পাপী?

অবিশ্বস্ত যিহূদার প্রতি যিহোবা তাঁর বিচারাজ্ঞা ঘোষণা করার পর যিরমিয়কে বলেছিলেন: “তুমি এই জাতির নিমিত্ত প্রার্থনা করিও না, তাহাদের জন্য আমার কাছে কাতরোক্তি ও প্রার্থনা উৎসর্গ করিও না, অনুরোধও করিও না; কেননা আমি তোমার কথা শুনিব না।”—যিরমিয় ৭:১৬.

যিহোবা কেন যিরমিয়কে ইস্রায়েলীয়দের জন্য প্রার্থনা করতে বারণ করেছিলেন? এর কারণ স্পষ্ট যে তারা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ঘোর অন্যায় করেছিল। নিঃসংকোচে ও নির্লজ্জভাবে তারা ‘চুরি, নরহত্যা, ব্যভিচার, মিথ্যাশপথ এবং বালের উদ্দেশে ধূপদাহ করিত, এবং অন্য দেবগণের পশ্চাদ্গমন করিত।’ তাই যিহোবা অবিশ্বাসী যিহুদিদেরকে বলেছিলেন: “তোমাদের ভ্রাতৃসমূহকে, ইফ্রয়িমের সমস্ত বংশকে, যেমন বাহির করিয়া দিয়াছি, তেমনি তোমাদিগকেও আমার দৃষ্টিপথ হইতে বাহির করিয়া দিব।” তাই যিহোবাকে তাঁর বিচারাজ্ঞা পালটাতে বলার জন্য যিরমিয় বা অন্য কারও প্রার্থনা করা একেবারেই উচিত হতো না।—যিরমিয় ৭:৯, ১৫.

এই বিষয়ে বলতে গিয়ে প্রেরিত যোহন ঈশ্বরের কাছে সঠিক প্রার্থনা করা সম্বন্ধে লিখেছিলেন। প্রথমত, তিনি খ্রীষ্টানদেরকে এই আশ্বাস দিয়েছিলেন: “যদি তাঁহার ইচ্ছানুসারে কিছু যাচ্ঞা করি, তবে তিনি আমাদের যাচ্ঞা শুনেন।” (১ যোহন ৫:১৪) এরপর অন্যদের হয়ে প্রার্থনা করার বিষয়ে যোহন আরও বলেছিলেন: “যদি কেহ আপন ভ্রাতাকে এমন পাপ করিতে দেখে, যাহা মৃত্যুজনক নয়, তবে সে যাচ্ঞা করিবে, এবং [ঈশ্বর] তাহাকে জীবন দিবেন—যাহারা মৃত্যুজনক পাপ করে না, তাহাদিগকেই দিবেন। মৃত্যুজনক পাপ আছে, সে বিষয়ে আমি বলি না যে, তাহাকে বিনতি করিতে হইবে।” (১ যোহন ৫:১৬) যীশু এমন ধরনের পাপ সম্বন্ধেও বলেছিলেন যেটার “ক্ষমা হইবে না” অর্থাৎ পবিত্র আত্মার বিরুদ্ধে পাপ।—মথি ১২:৩১, ৩২.

এর মানে কি এই যে, পাপ করে অনুতপ্ত না হওয়ায় যারাই খ্রীষ্টীয় মণ্ডলী থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন তারা সকলেই “মূত্যুজনক” পাপ করেছেন আর তাই তাদের জন্য প্রার্থনা করা উচিত নয়? সবসময় তা না-ও হতে পারে কারণ কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় যে সেই পাপগুলো মৃত্যুজনক নয়। আসলে তা মৃত্যুজনক কিনা সেটা বলা মুশকিল। যিহূদার রাজা মনঃশি এর উদাহরণ। তিনি মিথ্যা দেবদেবীদের উদ্দেশে যজ্ঞবেদি নির্মাণ করেছিলেন, তার নিজ পুত্রদের বলি দিয়েছিলেন, প্রেতচর্চা করেছিলেন এবং যিহোবার মন্দিরে একটা ক্ষোদিত প্রতিমা স্থাপন করেছিলেন। আসলে বাইবেল বলে যে মনঃশি ও লোকেরা “সদাপ্রভু ইস্রায়েল-সন্তানদের সম্মুখ হইতে যে জাতিদিগকে বিনষ্ট করিয়াছিলেন, তাহাদের অপেক্ষা অধিক কদাচরণ” করেছিল। এই সবকিছুর জন্য যিহোবা মনঃশিকে এক বন্দি হিসেবে বাবিলে পাঠিয়ে শাস্তি দিয়েছিলেন।—২ রাজাবলি ২১:১-৯; ২ বংশাবলি ৩৩:১-১১.

মনঃশির পাপ গুরুতর ছিল ঠিকই কিন্তু তা কি মৃত্যুজনক ছিল? স্পষ্টতই তা ছিল না কারণ তার সম্বন্ধে বাইবেলে আরও বলা হয়েছে: “সঙ্কটাপন্ন হইয়া তিনি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে বিনতি করিলেন, ও আপন পিতৃপুরুষদের ঈশ্বরের সম্মুখে আপনাকে অতিশয় অবনত করিলেন। এইরূপে তাঁহার কাছে প্রার্থনা করিলে তিনি তাঁহার প্রার্থনা গ্রাহ্য করিলেন, তাঁহার বিনতি শুনিয়া তাঁহাকে পুনর্ব্বার যিরূশালেমে তাঁহার রাজ্যে আনিলেন। তখন মনঃশি জানিতে পারিলেন যে, সদাপ্রভুই ঈশ্বর।”—২ বংশাবলি ৩৩:১২, ১৩.

তাই আমরা শীঘ্রিই এটা ভেবে নেব না যে, একজন ব্যক্তিকে মণ্ডলী থেকে বহিষ্কৃত করা হয়েছে বলে তিনি মৃত্যুজনক পাপ করার জন্য দায়ী। সেই ব্যক্তির হৃদয়ের প্রকৃত অবস্থা কেমন তা প্রকাশ পাওয়ার জন্য হয়তো সময়ের দরকার। আসলে, প্রায়ই বলা হয় যে একজনকে সমাজচ্যুত করার উদ্দেশ্য হল সেই পাপীকে তার ভুল বুঝতে দেওয়া এবং এই আশা করা যে তিনি অনুতপ্ত হয়ে ফিরে আসবেন।

যেহেতু সেই ব্যক্তি মণ্ডলীর আর কোন অংশ নন, তাই তার হৃদয় ও মনোভাবে যদি কোন পরিবর্তন ঘটে তা হয়তো তার নিকটতম যারা আছেন তারা প্রথমে লক্ষ্য করেন, যেমন তার বিবাহ সঙ্গী বা পরিবারের সদস্যরা। যারা এই পরিবর্তনগুলো লক্ষ্য করেন তারা হয়তো বুঝতে পারেন যে সেই পাপী এমন কোন পাপ করেননি যা মৃত্যুজনক। তারা হয়তো সেই পাপীর জন্য প্রার্থনা করতে পারেন, যাতে তিনি ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত বাক্য থেকে শক্তি পান এবং যিহোবা যেন তাঁর ইচ্ছার সঙ্গে মিল রেখে সেই পাপীর বিচার করেন।—গীতসংহিতা ৪৪:২১; উপদেশক ১২:১৪.

ওই পাপী যে সত্যিই অনুতপ্ত হয়েছেন, তা বিশ্বাস করার মতো যথেষ্ট প্রমাণ হয়তো শুধুমাত্র কয়েকজনই দেখতে পারেন কিন্তু মণ্ডলীর সবাই হয়তো তা না-ও দেখতে পারেন। তাই তারা যদি শোনেন যে কেউ ওই সমাজচ্যুত ব্যক্তির জন্য জনসাধারণের সামনে প্রার্থনা করছে, তাহলে তারা হয়তো দ্বিধায় পড়তে পারেন, কষ্ট পেতে ও এমনকি বিঘ্ন পেতে পারেন। এই কারণে যারা এই পাপীর জন্য প্রার্থনা করতে চান তাদের শুধু ব্যক্তিগতভাবে তা করা উচিত এবং পরবর্তী বিষয়গুলো মণ্ডলীর দায়িত্ববান প্রাচীনদের হাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত।

[৩১ পৃষ্ঠার ক্যাপশন]

মনঃশির গুরুতর পাপগুলোকে ক্ষমা করা হয়েছিল যখন তিনি যিহোবার সামনে নিজেকে নত করেছিলেন

[৩০ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]

Reproduced from Illustrierte Pracht - Bibel/Heilige Schrift des Alten und Neuen Testaments, nach der deutschen Uebersetzung D. Martin Luther’s