সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহোবাকে ভয় করুন ও তাঁর আজ্ঞা সকল পালন করুন

যিহোবাকে ভয় করুন ও তাঁর আজ্ঞা সকল পালন করুন

যিহোবাকে ভয় করুন ও তাঁর আজ্ঞা সকল পালন করুন

“ঈশ্বরকে ভয় কর, ও তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন কর, কেননা ইহাই সকল মনুষ্যের কর্ত্তব্য।”উপদেশক ১২:১৩.

১, ২. (ক) কীভাবে ভয় আমাদেরকে শারীরিকভাবে রক্ষা করতে পারে? (খ) বিজ্ঞ বাবামারা কেন তাদের বাচ্চাদের মনে উপযুক্ত ভয় গড়ে তোলার চেষ্টা করেন?

 লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি বলেছিলেন, “সাহস যেমন জীবনকে বিপদের দিকে ঠেলে দেয়, তেমনই ভয় বিপদ থেকে রক্ষা করে।” দুঃসাহস বা বোকার মতো সাহস দেখাতে গিয়ে একজন ব্যক্তি ঠিক কোথায় বিপদ রয়েছে তা দেখতে পায় না কিন্তু ভয় তাকে সাবধান হওয়ার কথা মনে করিয়ে দেয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমরা যদি বেশ খাঁড়া ও উঁচু পাহাড়ের কিনারে গিয়ে দেখি যে কতটা নিচে আমরা পড়ে যেতে পারি, তাহলে আমাদের মধ্যে বেশির ভাগ লোকই সহজাতভাবে পিছিয়ে আসব। একইভাবে, আগের প্রবন্ধ থেকে আমরা যেমন দেখেছি যে, উপযুক্ত ভয় শুধু ঈশ্বরের সঙ্গে এক সুন্দর সম্পর্কই গড়ে তোলে না কিন্তু সেইসঙ্গে আমাদেরকে বিপদ থেকেও সুরক্ষা করে।

কিন্তু, আধুনিক দিনে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ বিষয় রয়েছে যেগুলোর প্রতি ভয় গড়ে তোলার দরকার আছে। যেহেতু ছোট বাচ্চারা বিদ্যুৎ বা শহরের যানবাহনের বিপদ সম্বন্ধে তেমন জানে না, তাই তারা খুব সহজেই মারাত্মক দুর্ঘটনায় পড়তে পারে। * বিজ্ঞ বাবামারা আশেপাশের বিপদগুলো সম্বন্ধে বারবার বাচ্চাদেরকে সাবধান করে দিয়ে তাদের হৃদয়ে উপযুক্ত ভয় গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। বাবামারা জানেন যে, এই ভয় তাদের বাচ্চার জীবন বাঁচাতে পারে।

৩. কেন ও কীভাবে যিহোবা আমাদেরকে আধ্যাত্মিক বিপদগুলো সম্বন্ধে সাবধান করে দেন?

আমাদের মঙ্গলের জন্য যিহোবাও একইরকম চিন্তা করেন। একজন প্রেমময় বাবার মতো তিনি আমাদের উপকারের জন্য তাঁর বাক্য ও তাঁর সংগঠনের মাধ্যমে আমাদেরকে শিক্ষা দেন। (যিশাইয় ৪৮:১৭) এই ঐশিক শিক্ষা কার্যক্রমে আধ্যাত্মিক ফাঁদ সম্বন্ধে আমাদেরকে “বারবার” সাবধান করা হয়, যাতে আমরা এইরকম বিপদ সম্বন্ধে উপযুক্ত ভয় গড়ে তুলতে পারি। (২ বংশাবলি ৩৬:১৫, NW; ২ পিতর ৩:১) ‘ঈশ্বরকে ভয় করিতে এবং তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন করিতে যদি লোকেদের এইরূপ মন থাকিত,’ তাহলে সারা ইতিহাস জুড়ে অনেক আধ্যাত্মিক দুর্যোগগুলোকে এড়ানো এবং অনেক কষ্ট দূর করা যেত। (দ্বিতীয় বিবরণ ৫:২৯) এই ‘বিষম সময়ে’ কীভাবে আমরা আমাদের হৃদয়ে ঈশ্বরের প্রতি ভয় গড়ে তুলতে ও আধ্যাত্মিক বিপদ এড়িয়ে চলতে পারি?—২ তীমথিয় ৩:১.

মন্দতা থেকে সরে আসুন

৪. (ক) খ্রীষ্টানদের কীসের প্রতি ঘৃণা গড়ে তোলা উচিত? (খ) পাপপূর্ণ আচরণের প্রতি যিহোবা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখান? (পাদটীকা দেখুন।)

বাইবেল ব্যাখ্যা করে যে, “সদাপ্রভুর ভয় দুষ্টতার প্রতি ঘৃণা।” (হিতোপদেশ ৮:১৩) বাইবেলের একটা অভিধান এই ঘৃণাকে “বিরোধী, অপছন্দনীয় বা জঘন্য কোন ব্যক্তি অথবা বস্তুর প্রতি এক আবেগগত মনোভাব এবং তার সঙ্গে কোন রকম যোগাযোগ বা সম্পর্ক রাখতে না চাওয়া” বলে বর্ণনা করে। তাই, ঈশ্বরের প্রতি ভয় বলতে যিহোবার চোখে যা খারাপ সেই বিষয়গুলোর প্রতি মন থেকে তীব্র অনীহা বা ঘৃণা পোষণ করাকে বোঝায়। * (গীতসংহিতা ৯৭:১০) এটা আমাদেরকে দুষ্টতা থেকে সরে আসতে চালিত করে, ঠিক যেমন কোন উঁচু পাহাড়ের কিনারে গিয়ে সহজাত ভয়ে আমরা পিছনে সরে আসি। বাইবেল বলে, “সদাপ্রভুর ভয়ে মনুষ্য মন্দ হইতে সরিয়া যায়।”—হিতোপদেশ ১৬:৬.

৫. (ক) কীভাবে আমরা ঈশ্বরের প্রতি ভয় ও মন্দ বিষয়ের প্রতি ঘৃণাকে আরও জোরালো করতে পারি? (খ) এই বিষয়ে ইস্রায়েল জাতির ইতিহাস আমাদেরকে কী শিক্ষা দেয়?

পাপ যে ক্ষতিকর পরিণতিগুলো নিয়ে আসে সেগুলো এড়ানো যায় না আর তা নিয়ে চিন্তা করে আমরা মন্দ বিষয়ের প্রতি উপযুক্ত ভয় ও ঘৃণাকে আরও জোরালো করতে পারি। বাইবেল আমাদেরকে আশ্বাস দেয় যে, মাংসের উদ্দেশে হোক বা আত্মার উদ্দেশে হোক, আমরা যা বুনব তা-ই কাটব। (গালাতীয় ৬:৭, ৮) এই কারণে যিহোবা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন যে, তাঁর আজ্ঞাগুলো অবজ্ঞা করার ও সত্য উপাসনা ছেড়ে চলে যাওয়ার পরিণতি কী হতে পারে, যা এড়ানো যায় না। যদি ঈশ্বরের সুরক্ষা না থাকত, তাহলে ছোট ও দুর্বল ইস্রায়েল জাতিকে, নিষ্ঠুর ও ক্ষমতাবান প্রতিবেশীরা সহজেই জয় করে নিতে পারত। (দ্বিতীয় বিবরণ ২৮:১৫, ৪৫-৪৮) ইস্রায়েলের অবাধ্যতার দুঃখজনক পরিণতির কথা আমাদের “চেতনার জন্য” বাইবেলে বিস্তারিতভাবে লেখা হয়েছিল, যাতে আমরা এর থেকে শিক্ষা পেতে পারি ও ঈশ্বরের প্রতি ভয় গড়ে তুলতে পারি।—১ করিন্থীয় ১০:১১.

৬. ঈশ্বরের প্রতি ভয় গড়ে তুলতে শেখার জন্য শাস্ত্রের এমন কয়েকটা উদাহরণ কী, যা নিয়ে আমরা চিন্তা করতে পারি? (পাদটীকা দেখুন।)

পুরো ইস্রায়েল জাতির প্রতি যা হয়েছিল তা ছাড়াও বাইবেলে বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা সহ এমন ব্যক্তিদের উদাহরণ রয়েছে, যারা হিংসা, অনৈতিকতা, লোভ ও অহংকার করেছিল। * এদের মধ্যে কিছু ব্যক্তি অনেক অনেক বছর ধরে যিহোবাকে সেবা করেছিলেন কিন্তু তাদের জীবনের সংকটময় মুহূর্তে ঈশ্বরের প্রতি তাদের ভয় যথেষ্ট জোরালো ছিল না এবং এর ফলে তারা তিক্ত পরিণতি ভোগ করেছিলেন। শাস্ত্রের এইরকম উদাহরণগুলো নিয়ে চিন্তা করা আমাদেরকে একইরকম ভুল না করার সংকল্পকে আরও মজবুত করতে পারে। ব্যক্তিগতভাবে কোন শোচনীয় পরিণতি ভোগ না করা পর্যন্ত ঈশ্বরের আদেশে মনোযোগ না দেওয়া কত দুঃখজনকই না হবে! সাধারণত লোকেরা বিশ্বাস করে যে, বিশেষ করে নিজে ভুগে যে অভিজ্ঞতা হয় সেটাই সবচেয়ে ভাল শিক্ষা কিন্তু এটা তার বিপরীত।—গীতসংহিতা ১৯:৭.

৭. যিহোবা তাঁর রূপক তাঁবুতে কাকে আমন্ত্রণ জানান?

ঈশ্বরের প্রতি ভয় গড়ে তোলার আরেকটা জোরালো কারণ হল, ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে রক্ষা করার ইচ্ছা। আমরা যিহোবাকে অসন্তুষ্ট করতে ভয় পাই কারণ তাঁর সঙ্গে বন্ধুত্বকে আমরা মূল্যবান মনে করি। যিহোবা কাকে তাঁর বন্ধু মনে করে তাঁর রূপক তাঁবুতে আমন্ত্রণ জানাবেন? একমাত্র “যে ব্যক্তি সিদ্ধ আচরণ ও ধর্ম্মকর্ম্ম করে।” (গীতসংহিতা ১৫:১, ২) আমরা যদি সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে কাছের সম্পর্ক গড়ে তোলার বিশেষ সুযোগকে মূল্যবান মনে করি, তাহলে আমরা তাঁর চোখে যা সিদ্ধ সেইরকম আচরণ করে চলার বিষয়ে যত্নবান হব।

৮. মালাখির দিনের কিছু ইস্রায়েলীয়রা কীভাবে ঈশ্বরের সঙ্গে বন্ধুত্বকে হালকাভাবে নিয়েছিল?

দুঃখের বিষয় হল, মালাখির দিনের কিছু ইস্রায়েলীয়রা ঈশ্বরের সঙ্গে বন্ধুত্বকে হালকাভাবে নিয়েছিল। ঈশ্বরকে ভয় ও সম্মান করার বদলে তারা অসুস্থ ও খোঁড়া পশুদেরকে তাঁর বেদিতে উৎসর্গ করেছিল। বিয়ে সম্বন্ধে তাদের মনোভাবেও ঈশ্বরের প্রতি তাদের ভয়ের অভাব প্রকাশ পেয়েছিল। কমবয়সী যুবতীদেরকে বিয়ে করার জন্য তারা সামান্য কারণে তাদের যৌবনকালের স্ত্রীদেরকে ত্যাগ করেছিল। মালাখি তাদের বলেছিলেন যে, যিহোবা “স্ত্রীত্যাগ” ঘৃণা করেন এবং তাদের বিশ্বাসঘাতক হৃদয় তাদেরকে ঈশ্বর থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল। যে বেদি কিনা রূপক অর্থে চোখের জলে অর্থাৎ তাদের পরিত্যক্ত স্ত্রীদের দুঃখ ভরা চোখের জলে পূর্ণ ছিল, সেখানে তাদের উৎসর্গকে যিহোবা কীভাবে মেনে নিতে পারতেন? যিহোবার মানগুলোর প্রতি এইরকম চরম অসম্মানের কারণেই তিনি এই কথা জিজ্ঞেস করেন: “আমার প্রতি ভয় কোথায়?”—মালাখি ১:৬-৮; ২:১৩-১৬.

৯, ১০. কীভাবে আমরা দেখাতে পারি যে যিহোবার সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বকে আমরা মূল্যবান মনে করি?

একইভাবে আজকেও, যিহোবা অনেক নির্দোষ সাথি বা ছেলেমেয়েদের দুঃখ দেখতে পান, যারা স্বার্থপর ও দুশ্চরিত্র স্বামী ও বাবা বা এমনকি স্ত্রী ও মায়ের কারণে দুঃখ পাচ্ছেন। এই অবস্থা দেখে তিনি খুবই দুঃখ পান। ঈশ্বরের একজন বন্ধু, ঈশ্বর বিষয়গুলোকে যেভাবে দেখেন ঠিক সেভাবে দেখবেন এবং তার বিবাহিত জীবনকে আরও অটুট করার, বিবাহ বন্ধনের গুরুত্বকে হালকা করে দেয় এমন জাগতিক চিন্তাভাবনাগুলোকে পরিত্যাগ এবং “ব্যভিচার হইতে পলায়ন” করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করবেন।—১ করিন্থীয় ৬:১৮.

১০ বিয়ে ও সেইসঙ্গে জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রগুলোতে, যিহোবার চোখে যা খারাপ, সেগুলোর প্রতি ঘৃণা ও তাঁর সঙ্গে করা বন্ধুত্বের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা যিহোবার অনুগ্রহ ও অনুমোদন নিয়ে আসবে। প্রেরিত পিতর দৃঢ়ভাবে বলেছিলেন: “আমি সত্যই বুঝিলাম, ঈশ্বর মুখাপেক্ষা [“পক্ষপাত,” NW] করেন না; কিন্তু প্রত্যেক জাতির মধ্যে যে কেহ তাঁহাকে ভয় করে ও ধর্ম্মাচরণ করে, সে তাঁহার গ্রাহ্য হয়।” (প্রেরিত ১০:৩৪, ৩৫) শাস্ত্রে আমাদের জন্য অনেক উদাহরণ রয়েছে, যেগুলো দেখায় যে ঈশ্বরের প্রতি ভয় কীভাবে অনেক ব্যক্তিকে বিভিন্ন কঠিন পরিস্থিতিতেও সঠিক কাজ করতে পরিচালিত করেছিল।

ঈশ্বরকে ভয় করতেন এমন তিনজন ব্যক্তি

১১. কোন্‌ পরিস্থিতিতে ঘোষণা করা হয়েছিল যে, অব্রাহাম ‘ঈশ্বরকে ভয় করেন’?

১১ বাইবেলে এমন একজন ব্যক্তির কথা বলা হয়েছে যাকে যিহোবা নিজে তাঁর বন্ধু বলেছিলেন আর তিনি হলেন কুলপতি অব্রাহাম। (যিশাইয় ৪১:৮) ঈশ্বরের প্রতি অব্রাহামের ভয় পরীক্ষার মুখোমুখি হয়েছিল যখন ঈশ্বর অব্রাহামকে তার একমাত্র পুত্র ইস্‌হাককে উৎসর্গ করার জন্য বলেছিলেন, যার মাধ্যমে কিনা ঈশ্বর তাঁর ওই প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করবেন যে অব্রাহামের বংশ এক মহাজাতি হবে। (আদিপুস্তক ১২:২, ৩; ১৭:১৯) “‘ঈশ্বরের বন্ধু’” কি এই বেদনাপূর্ণ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবেন? (যাকোব ২:২৩) অব্রাহাম যে মুহূর্তে তার ছেলে ইস্‌হাককে হত্যা করার জন্য তার ওপর ছুরি তুলেছিলেন ঠিক তখন যিহোবার দূত তাকে বলেছিলেন: “যুবকের প্রতি তোমার হস্ত বিস্তার করিও না, উহার প্রতি কিছুই করিও না, কেননা এখন আমি বুঝিলাম, তুমি ঈশ্বরকে ভয় কর, আমাকে আপনার অদ্বিতীয় পুত্ত্র দিতেও অসম্মত নও।”—আদিপুস্তক ২২:১০-১২.

১২. কোন্‌ বিষয়টা ঈশ্বরকে ভয় করতে অব্রাহামকে প্রেরণা দিয়েছিল এবং আমরাও কীভাবে একই মনোভাব দেখাতে পারি?

১২ যদিও অব্রাহাম আগেই নিজেকে একজন ঈশ্বর ভয়শীল ব্যক্তি বলে প্রমাণ করেছিলেন কিন্তু এই ঘটনায় তিনি এক উল্লেখযোগ্য উপায়ে ঈশ্বরের প্রতি তার ভয় প্রকাশ করেছিলেন। ইস্‌হাককে উৎসর্গ করতে তার ইচ্ছা শুধু সম্মান দেখিয়ে বাধ্য থাকার চেয়েও আরও বেশি কিছু ছিল। দরকার হলে স্বর্গীয় পিতা ইস্‌হাককে পুনরুত্থিত করে তাঁর প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করবেন, এই বিষয়ে পূর্ণ আস্থা অব্রাহামকে এই কাজ করার জন্য প্রেরণা দিয়েছিল। পৌল যেমন লিখেছিলেন, অব্রাহাম “নিশ্চয় জানিলেন, ঈশ্বর যাহা প্রতিজ্ঞা করিয়াছেন, তাহা সফল করিতে সমর্থও আছেন।” (রোমীয় ৪:১৬-২১) ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করতে গিয়ে যদি বড় বড় ত্যাগস্বীকার করার দরকার হয়, তাহলে আমরা কি তা করার জন্য তৈরি আছি? “যাহারা তাঁহার অন্বেষণ করে,” যিহোবা “তাহাদের পুরস্কারদাতা” এই কথা জেনে আমরা কি পূর্ণ আস্থা রাখি যে, এইরকম বাধ্যতা স্থায়ী উপকার আনবে? (ইব্রীয় ১১:৬) যদি রাখি, তাহলে সেটাই হল ঈশ্বরের প্রতি প্রকৃত ভয়।—গীতসংহিতা ১১৫:১১.

১৩. কেন যোষেফ উপযুক্ত কারণেই বলতে পেরেছিলেন, “আমি ঈশ্বরকে ভয় করি”?

১৩ ঈশ্বরের প্রতি ভয় ছিল এমন আরেকজনের উদাহরণ আসুন আমরা পরীক্ষা করে দেখি, যিনি তার কাজে তা দেখিয়েছিলেন আর তিনি হলেন যোষেফ। পোটীফরের ঘরে দাস হিসেবে কাজ করার সময় যোষেফকে রোজ ব্যভিচার করার প্রলোভনের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। তার প্রভুর স্ত্রী তাকে সবসময় ব্যভিচার করার জন্য পীড়াপীড়ি করত আর স্পষ্ট বোঝা যায় যে, তার প্রভুর স্ত্রীকে এড়ানোর কোন উপায়ই যোষেফের ছিল না। শেষ পর্যন্ত, ওই স্ত্রী যখন ‘যোষেফকে ধরিল’ তখন তিনি “বাহিরে পলাইয়া গেলেন।” মন্দতা থেকে সঙ্গে সঙ্গে সরে আসতে কী তাকে প্রেরণা দিয়েছিল? কোন সন্দেহ নেই যে, মূল কারণ ছিল ঈশ্বরের প্রতি ভয় অর্থাৎ “মহা দুষ্কর্ম্ম . . . ও ঈশ্বরের বিরুদ্ধে পাপ” না করার ইচ্ছা। (আদিপুস্তক ৩৯:৭-১২) তাই, উপযুক্ত কারণেই যোষেফ নিজের সম্বন্ধে বলতে পেরেছিলেন, “আমি ঈশ্বরকে ভয় করি।”—আদিপুস্তক ৪২:১৮.

১৪. যোষেফের করুণা কীভাবে দেখিয়েছিল যে, তিনি সত্য ঈশ্বরকে ভয় করেন?

১৪ কয়েক বছর পর যোষেফ তার ভাইদের মুখোমুখি হয়েছিলেন, যারা নির্দয়ভাবে তাকে দাস হিসেবে বিক্রি করে দিয়েছিল। তাদের যখন খাবারের দরকার হয়েছিল, তখন যোষেফ সহজেই তার প্রতি তাদের অন্যায় ব্যবহারের প্রতিশোধ নিতে পারতেন। কিন্তু, লোকেদের সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণ করা দেখায় না যে একজন ব্যক্তির ঈশ্বরের প্রতি ভয় রয়েছে। (লেবীয় পুস্তক ২৫:৪৩) তাই, যোষেফ যখন তার ভাইদের মনোভাব পরিবর্তনের যথেষ্ট প্রমাণ দেখেছিলেন, তখন তিনি করুণা দেখিয়ে তাদের ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। যোষেফের মতো, আমাদেরও ঈশ্বরের প্রতি ভয় উত্তমের দ্বারা মন্দকে পরাজিত করতে চালিত করবে ও সেইসঙ্গে প্রলোভনে পড়া থেকে বিরত রাখবে।—আদিপুস্তক ৪৫:১-১১; গীতসংহিতা ১৩০:৩, ৪; রোমীয় ১২:১৭-২১.

১৫. ইয়োবের আচরণ কেন যিহোবার হৃদয়কে খুশি করেছিল?

১৫ ইয়োব ছিলেন আরেক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ, যিনি ঈশ্বরকে ভয় করতেন। দিয়াবলকে যিহোবা বলেছিলেন: “আমার দাস ইয়োবের উপরে কি তোমার মন পড়িয়াছে? কেননা তাহার তুল্য সিদ্ধ ও সরল, ঈশ্বরভয়শীল ও কুক্রিয়াত্যাগী লোক পৃথিবীতে কেহই নাই।” (ইয়োব ১:৮) অনেক বছর ধরে, ইয়োবের সরল আচরণ তাঁর স্বর্গীয় পিতার হৃদয়কে আনন্দিত করেছিল। ঈশ্বরকে ইয়োব ভয় করতেন কারণ তিনি জানতেন যে, এটা ছিল সঠিক ও জীবনের সর্বোত্তম পথ। ইয়োব বলেছিলেন, “দেখ, প্রভুর [“যিহোবার,” NW] ভয়ই প্রজ্ঞা, দুষ্ক্রিয়া হইতে সরিয়া যাওয়াই সুবিবেচনা।” (ইয়োব ২৮:২৮) বিবাহিত ব্যক্তি হিসেবে ইয়োব কখনও অন্য যুবতীদের প্রতি কাম দৃষ্টিতে তাকাননি কিংবা ব্যভিচার করার চিন্তাও তার মনে পোষণ করেননি। ধনী হওয়া সত্ত্বেও, তিনি ধনের ওপর নির্ভর করাকে অস্বীকার করেছিলেন ও সমস্ত ধরনের প্রতিমাপূজা থেকে সরে এসেছিলেন।—ইয়োব ৩১:১, ৯-১১, ২৪-২৮.

১৬. (ক) কোন্‌ কোন্‌ উপায়ে ইয়োব প্রেমপূর্ণ-দয়া দেখিয়েছিলেন? (খ) কীভাবে ইয়োব দেখিয়েছিলেন যে, তিনি ক্ষমা করা পরিত্যাগ করেননি?

১৬ কিন্তু ঈশ্বরের প্রতি ভয় মানে, যা ভাল তা করা ও সেইসঙ্গে মন্দতা থেকে সরে আসা। তাই, ইয়োব দয়া দেখিয়ে অন্ধ, খঞ্জ এবং গরিব লোকেদের সাহায্য করেছিলেন। (লেবীয় পুস্তক ১৯:১৪; ইয়োব ২৯:১৫, ১৬) ইয়োব বুঝতে পেরেছিলেন যে, “নিজের লোকের প্রতি যে প্রেমপূর্ণ-দয়া দেখায় না, সে এমনকি সর্বশক্তিমানকেও ভয় করবে না।” (ইয়োব ৬:১৪, NW) প্রেমপূর্ণ-দয়া না দেখানো বলতে ক্ষমা না করা বা ঈর্ষা পোষণ করাকে বোঝাতে পারে। ঈশ্বরের নির্দেশনায় ইয়োব তার তিন বন্ধুর জন্য প্রার্থনা করেছিলেন, যারা তাকে প্রচুর দুঃখ দিয়েছিল। (ইয়োব ৪২:৭-১০) আমাদের কোন সহ বিশ্বাসী যদি আমাদেরকে দুঃখ দেয়, তাহলে আমরাও কি এইরকম ক্ষমার মনোভাব দেখাতে পারি? যে আমাদেরকে দুঃখ দিয়েছে তার জন্য মন থেকে প্রার্থনা করলে তা তার প্রতি বিরক্তি পোষণ করা এড়িয়ে চলতে অনেক সাহায্য করে। ঈশ্বরকে ভয় করার ফলে ইয়োব যে আশীর্বাদগুলো পেয়েছিলেন, তা আমাদেরকে ‘তাঁহার ভয়কারীদের জন্য যিহোবা যে মহৎ মঙ্গল সঞ্চয় করিয়াছেন’ তার পূর্বাভাস দেয়।—গীতসংহিতা ৩১:১৯; যাকোব ৫:১১.

ঈশ্বরের প্রতি ভয় বনাম মানুষের প্রতি ভয়

১৭. মানুষের প্রতি ভয় আমাদের কী করতে পারে কিন্তু এইরকম ভয় থাকা কেন দূরদর্শিতার পরিচয় নয়?

১৭ যদিও ঈশ্বরের প্রতি ভয় আমাদেরকে যা সঠিক তা করতে চালিত করতে পারে কিন্তু মানুষের প্রতি ভয় আমাদের বিশ্বাসকে নষ্ট করে দিতে পারে। এই কারণে, প্রেরিতদেরকে সুসমাচারের উদ্যোগী প্রচারক হতে উৎসাহ দেওয়ার সময় যীশু তাদেরকে বলেছিলেন: “যাহারা শরীর বধ করে, কিন্তু আত্মা বধ করিতে পারে না, তাহাদিগকে ভয় করিও না; কিন্তু যিনি আত্মা ও শরীর উভয়ই নরকে বিনষ্ট করিতে পারেন, বরং তাঁহাকেই ভয় কর।” (মথি ১০:২৮) যীশু বুঝিয়ে বলেছিলেন যে, মানুষের প্রতি ভয় থাকা দূরদর্শিতার পরিচয় নয় কারণ মানুষ আমাদের ভবিষ্যতের আশাকে ধ্বংস করতে পারে না। এছাড়াও, আমরা ঈশ্বরকে ভয় করি কারণ আমরা তাঁর বিস্ময়কর ক্ষমতা সম্বন্ধে জানি, যাঁর তুলনায় সমস্ত জাতির শক্তি খুবই নগণ্য। (যিশাইয় ৪০:১৫) অব্রাহামের মতো যিহোবার ক্ষমতার ওপর আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে যে, তিনি তাঁর বিশ্বস্ত দাসদেরকে পুনরুত্থিত করতে পারেন। (প্রকাশিত বাক্য ২:১০) তাই, আস্থা নিয়ে আমরা বলতে পারি যে: “ঈশ্বর যখন আমাদের সপক্ষ, তখন আমাদের বিপক্ষ কে?”—রোমীয় ৮:৩১.

১৮. যারা যিহোবাকে ভয় করে তাদেরকে তিনি কীভাবে পুরস্কার দেন?

১৮ পরিবারের সদস্য বা স্কুলের বন্ধুবান্ধব যে-ই আমাদের বিরোধিতা করুক না কেন, আমরা দেখতে পাব যে, “সদাপ্রভুর ভয় দৃঢ় বিশ্বাসভূমি।” (হিতোপদেশ ১৪:২৬) আমরা ঈশ্বরের কাছে শক্তি চেয়ে প্রার্থনা করতে পারি, এটা মনে রেখে যে তিনি আমাদের প্রার্থনা শুনবেন। (গীতসংহিতা ১৪৫:১৯) যারা তাঁকে ভয় করে, তাদেরকে যিহোবা কখনোই ভুলে যাবেন না। তাঁর ভাববাদী মালাখির মাধ্যমে তিনি আমাদেরকে আশ্বাস দেন: “তখন, যাহারা সদাপ্রভুকে ভয় করিত, তাহারা পরস্পর আলাপ করিল, এবং সদাপ্রভু কর্ণপাত করিয়া শুনিলেন; আর যাহারা সদাপ্রভুকে ভয় করিত, ও তাঁহার নাম ধ্যান করিত, তাহাদের জন্য তাঁহার সম্মুখে একখানি স্মরণার্থক পুস্তক লেখা হইল।”—মালাখি ৩:১৬.

১৯. কোন্‌ ধরনের ভয় শেষ হয়ে যাবে কিন্তু কোন্‌ ধরনের ভয় চিরকাল থাকবে?

১৯ সেই সময় খুবই কাছে যখন পৃথিবীর সবাই যিহোবাকে উপাসনা করবে এবং মানুষের প্রতি ভয় চলে যাবে। (যিশাইয় ১১:৯) ক্ষুধা, রোগ, অপরাধ এবং যুদ্ধের প্রতি ভয়ও চলে যাবে। কিন্তু, ঈশ্বরের প্রতি ভয় চিরকাল ধরে থাকবে কারণ স্বর্গে ও পৃথিবীতে তাঁর বিশ্বস্ত দাসেরা তাঁকে প্রাপ্য সম্মান, বাধ্যতা ও শ্রদ্ধা করে যাবেন। (প্রকাশিত বাক্য ১৫:৪) সেই সময় পর্যন্ত আমরা সবাই যেন ঈশ্বরের অনুপ্রেরণায় লেখা শলোমনের কথাগুলোতে মন দিই: “তোমার মন পাপীদের প্রতি ঈর্ষা না করুক, কিন্তু তুমি সমস্ত দিন সদাপ্রভুর ভয়ে থাক। কেননা শেষ ফল অবশ্য আছে, তোমার আশা ছিন্ন হইবে না।”—হিতোপদেশ ২৩:১৭, ১৮.

[পাদটীকাগুলো]

^ কাজের জন্য নিয়মিত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার মুখোমুখি হতে হয় বলে কিছু প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিরা বিপদকে আর ভয় পান না। বহু ছুতোর মিস্ত্রি কেন তাদের আঙুল হারিয়েছেন, এই প্রশ্নের উত্তরে একজন দক্ষ কারিগর স্বাভাবিকভাবে বলেছিলেন: “দ্রুতগতিসম্পন্ন বৈদ্যুতিক করাতের প্রতি তারা তাদের ভয় হারিয়ে ফেলেছেন।”

^ যিহোবা নিজেও এইরকম ঘৃণা করেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ইফিষীয় ৪:২৯ পদে গালিগালাজকে “কদালাপ” বলা হয়েছে। এখানে ‘কদালাপের’ জন্য যে গ্রিক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, তা আক্ষরিক অর্থে পচা ফল, মাছ বা মাংসকে বোঝায়। এইরকম শব্দ স্পষ্টভাবে অপছন্দকে বোঝায়, যে অনুভূতি খারাপ বা নোংরা কথাবার্তার প্রতি আমাদের থাকা উচিত। একইভাবে, শাস্ত্রে প্রতিমাগুলোকে প্রায়ই “মলতুল্য” (NW) বলে বর্ণনা করা হয়েছে। (দ্বিতীয় বিবরণ ২৯:১৭; যিহিষ্কেল ৬:৯) মল বা দেহের বর্জ্যের প্রতি আমাদের স্বাভাবিক অপছন্দ যে কোন ধরনের প্রতিমাপূজার প্রতি ঈশ্বরের ঘৃণার মনোভাবকে বুঝতে আমাদেরকে সাহায্য করে।

^ উদাহরণ হিসেবে, বাইবেল থেকে কয়িন (আদিপুস্তক ৪:৩-১২); দায়ূদ (২ শমূয়েল ১১:২-১২:১৪); গেহসি (২ রাজাবলি ৫:২০-২৭); এবং উষিয়ের (২ বংশাবলি ২৬:১৬-২১) ঘটনা বিবেচনা করুন।

আপনার কি মনে আছে?

• আমরা কীভাবে যা মন্দ সেটাকে ঘৃণা করতে শিখি?

• মালাখির দিনের কিছু ইস্রায়েলীয়রা কীভাবে যিহোবার সঙ্গে বন্ধুত্বকে হালকাভাবে নিয়েছিল?

• ঈশ্বরের প্রতি ভয় সম্বন্ধে অব্রাহাম, যোষেফ ও ইয়োবের কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

• কোন্‌ ভয় কখনও শেষ হবে না এবং কেন?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

বিজ্ঞ বাবামারা তাদের ছেলেমেয়েদের মনে উপযুক্ত ভয় গেঁথে দেন

[২০ পৃষ্ঠার চিত্র]

ভয় যেমন বিপদ থেকে আমাদেরকে সরিয়ে নিয়ে আসে, তেমনই ঈশ্বরের প্রতি ভয় আমাদের মন্দতা থেকে সরিয়ে নিয়ে আসে

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

তিন মিথ্যা বন্ধুর বিরোধিতার মুখেও ইয়োব ঈশ্বরের প্রতি ভয় বজায় রেখেছিলেন

[সৌজন্যে]

From the Bible translation Vulgata Latina, ১৭৯৫