সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“আমার কাছে শিক্ষা কর”

“আমার কাছে শিক্ষা কর”

“আমার কাছে শিক্ষা কর”

“আমার যোঁয়ালি আপনাদের উপরে তুলিয়া লও, এবং আমার কাছে শিক্ষা কর, কেননা আমি মৃদুশীল ও নম্রচিত্ত; তাহাতে তোমরা আপন আপন প্রাণের জন্য বিশ্রাম [“সতেজতা,” NW] পাইবে।”মথি ১১:২৯.

১. যীশুর কাছ থেকে শেখা কেন আনন্দদায়ক হতে পারে এবং সমৃদ্ধি এনে দিতে পারে?

 যীশু খ্রীষ্ট সবসময় সঠিক চিন্তা দেখাতেন, সঠিক শিক্ষা দিতেন এবং সঠিক কাজ করতেন। যদিও পৃথিবীতে তিনি খুব অল্প সময় ছিলেন কিন্তু তিনি পরিতৃপ্তিকর এবং ভাল ফল এনে দেয় এমন জীবনযাপন করেছিলেন ও সুখী ছিলেন। তিনি শিষ্যদের একত্র করেছিলেন এবং তাদেরকে শিখিয়েছিলেন যে কীভাবে ঈশ্বরকে উপাসনা করতে, মানুষকে ভালবাসতে এবং জগৎকে জয় করতে হয়। (যোহন ১৬:৩৩) তিনি তাদের হৃদয় আশার আলোয় ভরিয়ে দিয়েছিলেন এবং “সুসমাচার দ্বারা জীবন ও অক্ষয়তাকে দীপ্তিতে আনিয়াছেন।” (২ তীমথিয় ১:১০) আপনি যদি নিজেকে তাঁর শিষ্যদের মধ্যে একজন বলে মনে করেন, তাহলে কখনও কি ভেবে দেখেছেন যে একজন শিষ্য হওয়ার মানে কী? শিষ্যদের সম্বন্ধে যীশু যা বলেছেন, তা বিবেচনা করে আমরা শিখতে পারি যে আমাদের জীবনকে কীভাবে সমৃদ্ধ করা যায়। এর মানে বিভিন্ন বিষয়কে তিনি যেভাবে দেখতেন সেভাবে দেখা এবং কিছু মূল নীতি কাজে লাগানো।—মথি ১০:২৪, ২৫; লূক ১৪:২৬, ২৭; যোহন ৮:৩১, ৩২; ১৩:৩৫; ১৫:৮.

২, ৩. (ক) যীশুর একজন শিষ্য বলতে কী বোঝায়? (খ) ‘আমি কার শিষ্য হয়েছি,’ নিজেদেরকে এই প্রশ্ন করা কেন জরুরি?

খ্রীষ্টান গ্রিক শাস্ত্রে যে শব্দকে “শিষ্য” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, তা মূলত এমন এক ব্যক্তিকে বোঝায় যিনি কোন একটা বিষয়ের দিকে তার মনকে পরিচালিত করেন বা যিনি শেখেন। এর সঙ্গে যুক্ত শব্দটা আমাদের মূল শাস্ত্রপদ, মথি ১১:২৯ পদে এসেছে: “আমার যোঁয়ালি আপনাদের উপরে তুলিয়া লও, এবং আমার কাছে শিক্ষা কর, কেননা আমি মৃদুশীল ও নম্রচিত্ত; তাহাতে তোমরা আপন আপন প্রাণের জন্য সতেজতা পাইবে।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) হ্যাঁ, একজন শিষ্য হলেন একজন শিক্ষার্থী। সুসমাচার লেখকরা মূলত যীশুর ঘনিষ্ঠ অনুসারীদের বেলায় “শিষ্য” শব্দটা ব্যবহার করেছেন, যারা তাঁর সঙ্গে সঙ্গে প্রচার করতেন এবং তাঁর কাছ থেকে শিক্ষা পেতেন। কিছু লোক হয়তো যীশুর শিক্ষাগুলো শুধু মেনে নিয়েছিলেন এমনকি কেউ কেউ তা গোপনেই করেছিলেন। (লূক ৬:১৭; যোহন ১৯:৩৮) সুসমাচার লেখকরা ‘যোহনের [বাপ্তাইজক] শিষ্যদের ও ফরীশীদের শিষ্যদের’ বিষয়েও উল্লেখ করেছিলেন। (মার্ক ২:১৮) যেহেতু যীশু তাঁর অনুসারীদেরকে “ফরীশী ও সদ্দূকীদের শিক্ষা হইতে সাবধান থাকিবার” বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছিলেন, তাই নিজেদেরকে আমরা জিজ্ঞেস করতে পারি, ‘আমি কার শিষ্য হয়েছি?’—মথি ১৬:১২.

আমরা যদি যীশুর শিষ্য হই এবং তাঁর কাছ থেকে শিখে থাকি, তাহলে আমাদের উপস্থিতিতে অন্যদের আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে সতেজতা পাওয়া উচিত। তাদের বোঝার কথা যে আমরা আরও বেশি মৃদুশীল ও নম্রচিত্ত হয়েছি। আমাদের অধীনে যদি কেউ চাকরি করে, আমরা যদি বাবামা হই অথবা খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতে যদি আমাদের পালকের দায়িত্ব থাকে, তাহলে যারা আমাদের যত্নের অধীনে রয়েছে তারা কি মনে করে যে আমরা তাদের সঙ্গে সেই মতো ব্যবহার করি, যেমন যীশু তাঁর অধীনের লোকেদের সঙ্গে করতেন?

যীশু লোকেদের সঙ্গে যেমন ব্যবহার করতেন

৪, ৫. (ক) যাদের বিভিন্ন সমস্যা ছিল তাদের সঙ্গে যীশু কেমন ব্যবহার করতেন, তা জানা কঠিন নয় কেন? (খ) একজন ফরীশীর বাড়িতে নিমন্ত্রণ খেতে গিয়ে যীশুর কোন্‌ অভিজ্ঞতা হয়েছিল?

আমাদের জানা দরকার যে লোকেদের সঙ্গে, বিশেষ করে যাদের গুরুতর সমস্যা ছিল তাদের সঙ্গে যীশু কেমন ব্যবহার করতেন। তা জানা খুব কঠিন নয়; অন্যদের সঙ্গে যীশু কেমন ব্যবহার করতেন সেই সম্বন্ধে বাইবেলে অনেক বিবরণ রয়েছে আর তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রচণ্ড কষ্টের মধ্যে ছিল। আসুন আমরা এও দেখি, ধর্মীয় নেতারা বিশেষ করে ফরীশীরা এইরকম লোকেদের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করত। এই পার্থক্যই আমাদের বুঝতে সাহায্য করবে।

সাধারণ কাল ৩১ সালে যীশু যখন গালীলে প্রচার করছিলেন, তখন “ফরীশীদের মধ্যে এক জন তাঁহাকে আপনার সঙ্গে ভোজন করিতে নিমন্ত্রণ করিল।” তার নিমন্ত্রণ গ্রহণ করতে যীশু কোন দ্বিধা করেননি। “তাহাতে তিনি সেই ফরীশীর বাটীতে প্রবেশ করিয়া ভোজনে বসিলেন। আর দেখ, সেই নগরে এক পাপিষ্ঠা স্ত্রীলোক ছিল; সে যখন জানিতে পাইল, তিনি সেই ফরীশীর বাটীতে ভোজনে বসিয়াছেন, তখন একটী শ্বেত প্রস্তরের পাত্রে সুগন্ধি তৈল লইয়া আসিল, এবং পশ্চাৎ দিকে তাঁহার চরণের নিকটে দাঁড়াইয়া রোদন করিতে করিতে চক্ষের জলে তাঁহার চরণ ভিজাইতে লাগিল, এবং আপনার মাথার চুল দিয়া তাহা মুছাইয়া দিল, আর তাঁহার চরণ চুম্বন করিতে করিতে সেই সুগন্ধি তৈল মাখাইতে লাগিল।”—লূক ৭:৩৬-৩৮.

৬. সেই “পাপিষ্ঠা” স্ত্রীলোক কেন ফরীশীর বাড়িতে এসেছিল বলে মনে হয়?

আপনি কি মনে মনে তা কল্পনা করতে পারেন? একটা বই বলে: “সেই স্ত্রীলোক (৩৭ পদ) সামাজিক প্রথার সুযোগ নিয়েছিল, যে প্রথা অনুযায়ী অভাবী লোকেরা এইরকম ভূরিভোজে গিয়ে কিছু উচ্ছিষ্ট খাবারদাবার সংগ্রহ করতে পারত।” এটা হয়তো দেখায় যে কীভাবে একজন ব্যক্তি নিমন্ত্রণ না পেয়েও যেতে পারত। সেখানে হয়তো এমন আরও অনেকে ছিল, যারা ভোজ শেষে উচ্ছিষ্ট খাবার পাওয়ার আশায় অপেক্ষা করছিল। কিন্তু এই স্ত্রীলোকের আচরণ অস্বাভাবিক ছিল। সে লাইনের বাইরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেনি এবং রাতের খাবার শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেনি। তার বদনাম ছিল, তাকে সবাই “পাপিষ্ঠা” বলে জানত তাই যীশু বলেছিলেন “ইহার . . . বহু পাপ” সম্বন্ধে তিনি জানতেন।—লূক ৭:৪৭.

৭, ৮. (ক) লূক ৭:৩৬-৩৮ পদে যে বিবরণের কথা রয়েছে, সেই পরিস্থিতিতে থাকলে আমরা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাতাম? (খ) শিমোন কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল?

নিজেকে সেই সময়ে এবং যীশুর জায়গায় কল্পনা করুন। আপনি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাতেন? এই স্ত্রীলোক যদি আপনার কাছে আসত, তাহলে আপনি কি অস্বস্তি বোধ করতেন? এইরকম পরিস্থিতি আপনার ওপর কতটা ছাপ ফেলত? (লূক ৭:৪৫) আপনি কি আতঙ্কিত হয়ে পড়তেন?

আর আপনিও যদি অন্যান্য অতিথিদের মধ্যে থাকতেন, তাহলে কিছুটা হলেও আপনার চিন্তাভাবনা কি ফরীশী শিমোনের মতো হতো? “তাহা দেখিয়া, যে ফরীশী [যীশুকে] নিমন্ত্রণ করিয়াছিল, সে মনে মনে কহিল, এ যদি ভাববাদী হইত, তবে জানিতে পারিত, ইহাকে যে স্পর্শ করিতেছে, সে কে এবং কি প্রকার স্ত্রীলোক কারণ সে পাপিষ্ঠা।” (লূক ৭:৩৯) এর বদলে যীশুর মধ্যে গভীর করুণা ছিল। তিনি সেই স্ত্রীলোকের অবস্থা এবং মনের কষ্ট বুঝতে পেরেছিলেন। আমাদেরকে বলা হয়নি যে ওই স্ত্রীলোক কীভাবে পাপপূর্ণ জীবনের দিকে ধাবিত হয়েছিল। সে যদি সত্যিই বেশ্যা হয়ে থাকে, তাহলে এটা পরিষ্কার যে নগরের লোকেরা অর্থাৎ ধার্মিক যিহুদিরা কখনও তাকে সাহায্য করেনি।

৯. যীশু কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন আর এর ফল সম্ভবত কী হয়েছিল?

কিন্তু, যীশু তাকে সাহায্য করতে চেয়েছিলেন। তিনি তাকে বলেছিলেন: “তোমার পাপ সকল ক্ষমা হইয়াছে।” এরপর তিনি আরও বলেন: “তোমার বিশ্বাস তোমাকে পরিত্রাণ করিয়াছে; শান্তিতে প্রস্থান কর।” (লূক ৭:৪৮-৫০) এখানেই এই ঘটনার শেষ হয়ে যায়। কেউ কেউ অভিযোগ করতে পারেন যে যীশু তার জন্য বেশি কিছু করেননি। আসলে তিনি তাকে আশীর্বাদ দিয়ে বিদায় করেছিলেন। আপনি কি মনে করেন যে সেই স্ত্রীলোক হয়তো আবার তার খারাপ পথে ফিরে গিয়েছিল? যদিও আমরা নিশ্চিত করে সেটা বলতে পারি না কিন্তু লূক পরে কী বলেছিলেন, তা লক্ষ্য করুন। তিনি বলেন যে যীশু “ঘোষণা করিতে করিতে এবং ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করিতে করিতে নগরে নগরে ও গ্রামে গ্রামে” ভ্রমণ করলেন। লূক আরও বলেন, যীশু ও তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে “কএকটি স্ত্রীলোক” ছিলেন যারা “আপন আপন [স্ত্রীলোকরা] সম্পত্তি হইতে তাঁহাদের পরিচর্য্যা করিতেন।” সম্ভবত এই অনুতপ্ত এবং কৃতজ্ঞ মহিলাও তাদের মধ্যে ছিলেন, যিনি শুদ্ধ বিবেক, নতুন উদ্দেশ্য এবং ঈশ্বরের প্রতি আরও গভীর প্রেম নিয়ে ঈশ্বরকে খুশি করে এমনভাবে জীবনযাপন শুরু করেছিলেন।—লূক ৮:১-৩.

যীশু এবং ফরীশীদের মধ্যে পার্থক্য

১০. শিমোনের ঘরে যীশু ও সেই স্ত্রীলোকের ঘটনা বিবেচনা করা কেন উপকারী?

১০ এই স্পষ্ট বিবরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি? এটা আমাদের অনুভূতিকে জাগিয়ে তোলে, তাই নয় কি? নিজেকে শিমোনের ঘরে কল্পনা করুন। আপনার কেমন লাগত? আপনি কি যীশুর মতো, নাকি কিছুটা হলেও সেই ফরীশী নিমন্ত্রণকর্তার মতো প্রতিক্রিয়া দেখাতেন? যীশু ছিলেন ঈশ্বরের পুত্র তাই আমরা ঠিক তাঁর মতো মনোভাব দেখাতে বা তাঁর মতো করে কাজ করতে পারব না। অন্যদিকে, আমরা হয়তো নিজেকে ফরীশী শিমোনের জায়গায় চিন্তা করতে চাই না। খুব কম লোকই ফরীশীদের মতো হওয়ার বিষয়ে গর্ব করে।

১১. কেন আমরা ফরীশীদের দলে পড়তে চাই না?

১১ বাইবেল ও অন্যান্য জাগতিক সাক্ষ্যপ্রমাণ অধ্যয়ন করে আমরা এই উপসংহারে আসতে পারি যে, ফরীশীরা মনে করত যে, জনগণের উন্নতি এবং জাতির মঙ্গলের দায়িত্ব তাদেরই আর তাই তারা নিজেদেরকে বড় বলে ভাবত। ঈশ্বরের ব্যবস্থার যে মৌলিক বিষয়গুলো স্পষ্ট ছিল এবং সহজেই বোঝা যেত তা নিয়ে তারা সন্তুষ্ট ছিল না। যেখানেই তাদের কাছে ব্যবস্থাকে কিছুটা অস্পষ্ট বলে মনে হতো, তারা একটা নির্দিষ্ট প্রয়োগ দেখিয়ে আইন তৈরি করে ফেলত, যাতে কোন বিষয় বিবেকের ওপর ছেড়ে দেওয়ার কোন সুযোগই না থাকে। এই ধর্মীয় নেতারা সমস্ত ব্যাপারেই এমনকি ছোটখাটো বিষয়গুলোকেও নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একটা আইন তৈরি করতে চেয়েছিল। *

১২. নিজেদেরকে ফরীশীরা কোন্‌ দৃষ্টিতে দেখত?

১২ প্রথম শতাব্দীর ঐতিহাসিক জোসেফাস স্পষ্ট করে দেন যে ফরীশীরা নিজেদেরকে দয়ালু, নম্র, পক্ষপাতহীন এবং তাদের কাজের জন্য পুরোপুরি যোগ্য বলে মনে করত। কোন সন্দেহ নেই যে, ফরীশীদের মধ্যে কেউ কেউ এইরকম ছিলেন। আপনার হয়তো নীকদীমের কথা মনে পড়ছে। (যোহন ৩:১, ২; ৭:৫০, ৫১) এক সময় তাদের মধ্যে কেউ কেউ খ্রীষ্টীয় পথের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন। (প্রেরিত ১৫:৫) খ্রীষ্টান প্রেরিত পৌল কিছু যিহুদিদের, যেমন ফরীশীদের বিষয়ে লিখেছিলেন: “ঈশ্বরের বিষয়ে তাহাদের উদ্যোগ আছে, কিন্তু তাহা জ্ঞানানুযায়ী নয়।” (রোমীয় ১০:২) কিন্তু, সুসমাচারে তাদেরকে সেভাবেই তুলে ধরা হয়েছে যেভাবে সাধারণ লোকেরা তাদেরকে দেখত—গর্বিত, উদ্ধত, আত্মধার্মিক, দোষারোপকারী, সমালোচক এবং হীন আচরণকারী।

যীশুর দৃষ্টিভঙ্গি

১৩. ফরীশীদের সম্বন্ধে যীশু কী বলেছেন?

১৩ অধ্যাপক ও ফরীশীদেরকে যীশু কপট বলেছিলেন। “তাহারা ভারী দুর্ব্বহ বোঝা বাঁধিয়া লোকদের কাঁধে চাপাইয়া দেয়, কিন্তু আপনারা অঙ্গুলি দিয়াও তাহা সরাইতে চাহে না।” হ্যাঁ, সেই বোঝা অনেক ভারী ছিল এবং লোকেদের ওপর যে জোয়ালি তুলে দেওয়া হতো, তা অনেক যন্ত্রণাদায়ক ছিল। অধ্যাপক ও ফরীশীদেরকে যীশু ‘মূঢ়’ বলেছিলেন। একজন মূঢ় ব্যক্তি সমাজের জন্য ভয়ংকর। এছাড়া, অধ্যাপক ও ফরীশীদেরকে যীশু “অন্ধ পথ-দর্শকেরা” বলেছেন এবং দৃঢ়ভাবে বলেছেন যে তারা ‘ব্যবস্থার মধ্যে গুরুতর বিষয়—ন্যায়বিচার, দয়া ও বিশ্বাস—পরিত্যাগ করিয়াছে।’ কে-ই-বা চাইবে যে যীশু তাকে একজন ফরীশীর মতো ভাবুন?—মথি ২৩:১-৪, ১৬, ১৭, ২৩.

১৪, ১৫. (ক) মথি লেবির সঙ্গে যীশুর আচরণ ফরীশীদের সম্বন্ধে কোন্‌ বিষয়গুলো প্রকাশ করে? (খ) এই ঘটনা থেকে আমরা কোন্‌ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শিখতে পারি?

১৪ সুসমাচার বিবরণের যে কোন পাঠকই বেশির ভাগ ফরীশীদের চরম স্বভাব সম্বন্ধে বুঝতে পারেন। যীশু, করগ্রাহী মথি লেবিকে একজন শিষ্য হওয়ার আমন্ত্রণ জানানোর পর লেবি তাঁর জন্য এক বিরাট ভোজের আয়োজন করেছিলেন। বিবরণ বলে: “তখন ফরীশীরা ও তাহাদের অধ্যাপকেরা তাঁহার শিষ্যদের বিরুদ্ধে বচসা করিয়া কহিতে লাগিল, তোমরা কি কারণ করগ্রাহী ও পাপীদের সঙ্গে ভোজন পান করিতেছ? যীশু উত্তর করিয়া তাহাদিগকে কহিলেন, . . . আমি ধার্ম্মিকদিগকে নয়, কিন্তু পাপীদিগকেই ডাকিতে আসিয়াছি, যেন তাহারা মন ফিরায়।”—লূক ৫:২৭-৩২.

১৫ সেই সময় যীশু আরও যা বলেছিলেন তা লেবি বুঝতে পেরেছিলেন: “কিন্তু তোমরা গিয়া শিক্ষা কর, এই বচনের মর্ম্ম কি, ‘আমি দয়াই চাই, বলিদান নয়’।” (মথি ৯:১৩) যদিও ফরীশীরা ইব্রীয় ভাববাদীদের লেখাগুলোতে বিশ্বাস করত বলে দাবি করেছিল কিন্তু তারা হোশেয় ৬:৬ পদ থেকে উদ্ধৃত কথাগুলোকে মেনে নেয়নি। তারা যদি কোন ভুল করত, তাহলে সেটাকে তারা পরম্পরাগত নীতির প্রতি বাধ্যতার একটা অংশ বলে মনে করত। আমরা প্রত্যেকে নিজেদেরকে জিজ্ঞেস করতে পারি, ‘আমাকে কি নির্দিষ্ট কিছু নিয়মের ব্যাপারে নাছোড়বান্দা বলে সবাই জানে, যেগুলোতে ব্যক্তিগত মতামত বা সাধারণ জ্ঞান প্রকাশ পায়? নাকি লোকেরা আমাকে দয়াময় এবং করুণাময় বলে মনে করে?’

১৬. ফরীশীদের কাজ কী ছিল আর কীভাবে আমরা তাদের মতো হওয়া এড়িয়ে চলতে পারি?

১৬ খুঁত ধরাই ছিল ফরীশীদের কাজ। সত্যি হোক বা কল্পনাই হোক, ফরীশীরা সবসময় দোষ ধরার চেষ্টা করত। তারা লোকেদেরকে সবসময় ভয়ের মধ্যে রাখত এবং তাদের ব্যর্থতাগুলো মনে করিয়ে দিত। ফরীশীরা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়গুলোর জন্য যেমন পোদিনা, মৌরি, ও জিরার দশমাংশ দিয়ে নিজেদেরকে গর্বিত মনে করত। তাদের পোশাকআশাকের মাধ্যমে তারা সাধুতা দেখাত এবং লোকেদেরকেও সেই পথে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করত। সত্যিই আমরা যদি যীশুর উদাহরণের সঙ্গে মিল রেখে কাজ করতে চাই, তাহলে আমাদেরকে সবসময় অন্যদের দোষ খুঁজে বেড়ানো ও তা প্রকাশ করা এড়িয়ে চলতে হবে।

যীশু কীভাবে সমস্যাগুলোর মোকাবিলা করতেন?

১৭-১৯. (ক) গুরুতর হতে পারত এমন একটা পরিস্থিতিকে যীশু কীভাবে মোকাবিলা করেছিলেন, তা বর্ণনা করুন। (খ) কোন্‌ বিষয়টা পরিস্থিতিকে চাপপূর্ণ এবং অস্বাভাবিক করে তুলেছিল? (গ) সেই মহিলা যখন যীশুর কাছে এসেছিল, তখন আপনি যদি সেখানে থাকতেন তাহলে আপনি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাতেন?

১৭ যীশু যে উপায়ে সমস্যার মোকাবিলা করতেন, তা ফরীশীদের থেকে অনেক আলাদা ছিল। গুরুতর হতে পারত এমন একটা পরিস্থিতিকে যীশু যেভাবে মোকাবিলা করেছিলেন, তা বিবেচনা করুন। এটা ছিল একজন মহিলার ঘটনা, যিনি ১২ বছর ধরে রক্তস্রাবে ভুগছিলেন। আপনি লূক ৮:৪২-৪৮ পদে এই ঘটনাটা পড়তে পারেন।

১৮ মার্কের বিবরণ বলে যে সেই মহিলা ‘ভয়ে কাঁপিতেছিল।’ (মার্ক ৫:৩৩) কেন? কোন সন্দেহ নেই যে, তিনি জানতেন যে তিনি ঈশ্বরের আইন লঙ্ঘন করেছেন। লেবীয় পুস্তক ১৫:২৫-২৮ পদ অনুসারে কোন মহিলার অস্বাভাবিক রক্তস্রাব হলে তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ও সেইসঙ্গে আরও এক সপ্তাহ তাকে অশুচি বলা হতো। সে যা কিছু এবং যাদেরকে স্পর্শ করত তারা সকলেই অশুচি হয়ে যেত। যীশুর কাছে আসার জন্য সেই মহিলাকে লোকেদের ভিড় ঠেলে আসতে হয়েছিল। ২,০০০ বছর পরে এসে ঘটনাটা বিবেচনা করার সময় আমরা ওই মহিলার কষ্টের জন্য করুণা বোধ করি।

১৯ আপনি যদি সেই সময়ে থাকতেন, তাহলে সেই পরিস্থিতিকে আপনি কীভাবে দেখতেন? আপনি কী বলতেন? লক্ষ্য করুন যে, যীশু তার সঙ্গে করুণা, দয়া এবং বিবেচনা দেখিয়ে আচরণ করেছিলেন, এমনকি ওই মহিলা কোন সমস্যা তৈরি করেছে বলে তিনি উল্লেখও করেননি।—মার্ক ৫:৩৪.

২০. আজকের দিনেও যদি লেবীয় পুস্তক ১৫:২৫-২৮ পদ পালন করতে হতো, তাহলে আমরা কোন্‌ কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতাম?

২০ এই ঘটনা থেকে আমরা কি কিছু শিখতে পারি? ধরুন আজকে আপনি কোন এক খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর প্রাচীন। এছাড়া মনে করুন যে, আজকের দিনেও একজন খ্রীষ্টানকে লেবীয় পুস্তক ১৫:২৫-২৮ পদের কথাগুলো মেনে চলতে হয় এবং একজন খ্রীষ্টান মহিলা সেই আইন লঙ্ঘন করেছেন আর এর ফলে তিনি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন ও নিজেকে অসহায় মনে করছেন। আপনি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবেন? তাকে খুব কড়া পরামর্শ দিয়ে আপনি কি সবার সামনে তাকে নিচু করবেন? আপনি বলবেন, “নাহ্‌, আমি কখনও এরকম করব না! যীশুর উদাহরণ অনুকরণ করে আমি দয়া, প্রেম, চিন্তা এবং বিবেচনা দেখানোর জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করব।” খুব ভাল! কিন্তু তা করা অর্থাৎ যীশুর উদাহরণ অনুকরণ করা খুব কঠিন।

২১. আইন সম্বন্ধে যীশু লোকেদেরকে কী শিখিয়েছিলেন?

২১ লোকেরা মূলত যীশুর মাধ্যমে সতেজতা পেয়েছিল, আধ্যাত্মিক উন্নতি করেছিল এবং উৎসাহিত হয়েছিল। যেখানে ঈশ্বরের আইন স্পষ্ট ছিল, তখন ঠিক তা-ই পালন করতে হতো। আর তা যদি নির্দিষ্ট না হয়ে সাধারণ হতো, তাহলে লোকেদের তাদের বিবেককে কাজে লাগাতে হতো এবং তাদের সিদ্ধান্তগুলোর মাধ্যমে তারা ঈশ্বরের প্রতি তাদের প্রেম দেখাতে পারত। ঈশ্বরের আইনগুলো তারা সহজেই পালন করতে পারত। (মার্ক ২:২৭, ২৮) ঈশ্বর তাঁর লোকেদেরকে ভালবাসতেন, তাদের মঙ্গলের জন্য সবসময় কাজ করতেন এবং যখন তারা ভুল করত তিনি তাদেরকে দয়া দেখাতেন। যীশুও সেরকম ছিলেন।—যোহন ১৪:৯.

যীশুর শিক্ষাগুলোর ফল

২২. যীশুর কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করে তাঁর শিষ্যরা কোন্‌ ধরনের মনোভাব দেখাতে সাহায্য পেয়েছিলেন?

২২ যারা যীশুর কথা শুনেছিলেন এবং তাঁর শিষ্য হয়েছিলেন তারা তাঁর এই কথাগুলোকে মূল্যবান বলে মেনে নিয়েছিলেন: “আমার যোঁয়ালি সহজ ও আমার ভার লঘু।” (মথি ১১:৩০) তিনি তাদের ওপর কখনও বোঝা চাপিয়ে দিতেন না, তাদেরকে বিরক্ত করতেন না বা তিরস্কার করেও তাদেরকে কোন বক্তৃতা দিতেন না। ঈশ্বর এবং অন্যদের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে তারা ছিলেন অনেক স্বাধীন, সুখী এবং আস্থাশীল। (মথি ৭:১-৫; লূক ৯:৪৯, ৫০) তাঁর কাছ থেকে তারা শিখেছিলেন যে, একজন আধ্যাত্মিক নেতা হওয়ার জন্য অন্যদেরকে সতেজ করতে হয় এবং মৃদুশীল ও নম্রচিত্ত হতে হয়।—১ করিন্থীয় ১৬:১৭, ১৮; ফিলিপীয় ২:৩.

২৩. শিষ্যরা যীশুর কাছ থেকে কোন্‌ গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা পেয়েছিলেন এবং তা তাদেরকে কোন্‌ উপসংহারে পৌঁছাতে সাহায্য করেছিল?

২৩ এছাড়াও খ্রীষ্টের সঙ্গে একতা বজায় রাখার গুরুত্ব এবং তিনি যে মনোভাব দেখিয়েছিলেন তা অনেককে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল। তিনি তাঁর শিষ্যদেরকে বলেছিলেন: “পিতা যেমন আমাকে প্রেম করিয়াছেন, আমিও তেমনি তোমাদিগকে প্রেম করিয়াছি; তোমরা আমার প্রেমে অবস্থিতি কর। তোমরা যদি আমার আজ্ঞা সকল পালন কর, তবে আমার প্রেমে অবস্থিতি করিবে, যেমন আমিও আমার পিতার আজ্ঞা সকল পালন করিয়াছি, এবং তাঁহার প্রেমে অবস্থিতি করিতেছি।” (যোহন ১৫:৯, ১০) তারা যদি ঈশ্বরের পরিচারক এবং দাস হিসেবে সফল হতে চাইতেন, তাহলে যীশুর কাছ থেকে তারা যা শিখেছিলেন তা লোকেদের কাছে ঈশ্বরের অপূর্ব সুসমাচার প্রচার ও শিক্ষা দেওয়ার এবং পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে ব্যবহার করার সময় অধ্যবসায়ের সঙ্গে কাজে লাগাতে হতো। মণ্ডলীগুলোতে ভ্রাতৃসমাজ গড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সবসময় তাদের নিজেদেরকে মনে করিয়ে দিতে হতো যীশুর পথই সঠিক। তিনি যা শিখিয়েছিলেন, তা ছিল সত্য এবং এবং তিনি যেভাবে জীবনযাপন করেছিলেন, তা সত্যিই উন্নত ছিল।—যোহন ১৪:৬; ইফিষীয় ৪:২০, ২১.

২৪. যীশুর উদাহরণ থেকে আমাদের কোন্‌ বিষয়গুলোতে মনোযোগ দেওয়া উচিত?

২৪ এখানে যে বিষয়গুলো আলোচনা করা হয়েছে সেগুলোর কিছু নিয়ে চিন্তা করে আপনি কি কোন কোন দিক দেখতে পান, যেখানে উন্নতি করা দরকার? আপনি কি একমত যে যীশু সবসময় সঠিক চিন্তা দেখাতেন, সঠিক শিক্ষা দিতেন এবং সঠিক কাজ করতেন? তাহলে নিরুৎসাহিত হবেন না। তাঁর এই উৎসাহজনক কথাগুলো আমাদের বেলায়ও খাটে: “এ সকল যখন তোমরা জান, ধন্য তোমরা, যদি এ সকল পালন কর।”—যোহন ১৩:১৭.

[পাদটীকা]

^ “ঈশ্বর সম্বন্ধে দুটো বিপরীত ধারণাই [যীশু এবং ফরীশীদের মধ্যে] মূল পার্থক্যকে পরিষ্কার করে দিয়েছে। ফরীশীদের মতানুসারে ঈশ্বর হলেন এমন একজন, যিনি দাবি করেন; যীশুর কাছে ঈশ্বর হলেন দয়াময় এবং করুণাময়। যদিও, একজন ফরীশী স্বীকার করত যে ঈশ্বর মঙ্গলময় এবং প্রেমময় কিন্তু, তা তিনি তাদেরকে তোরাহ্‌ [ব্যবস্থা] দিয়ে দেখিয়েছেন এবং ব্যবস্থায় যা কিছু চাওয়া হয়েছে সেগুলোর পূরণ করার মধ্যেই তা প্রকাশ পেয়েছে। . . . মৌখিক নিয়ম ও সেইসঙ্গে ব্যবস্থাকে ব্যাখ্যা করে, এমন আইনগুলো মেনে চলাকেই একজন ফরীশী তোরাহ্‌ অনুযায়ী চলার পথ হিসেবে দেখত। যীশু প্রেম সম্বন্ধে দুটো আজ্ঞাকে (মথি ২২:৩৪-৪০) যেভাবে অন্যান্য ব্যাখ্যার থেকে শ্রেষ্ঠ করেন এবং কঠোর মৌখিক পরম্পরাগত আইনকে অস্বীকার করেন . . . সেটাই যীশুর সঙ্গে ফরীশীদের মতবাদের সংঘর্ষ তৈরি করেছিল।”—দ্যা নিউ ইন্টারন্যাশনাল ডিকশনারি অফ নিউ টেস্টামেন্ট থিওলজি।

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• আপনার জন্য যীশুর শিষ্য হওয়ার মানে কী?

• লোকেদের সঙ্গে যীশু কেমন ব্যবহার করতেন?

• যীশুর শিক্ষা দেওয়ার ধরন থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

• যীশু এবং ফরীশীদের মধ্যে পার্থক্য কী ছিল?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৮, ১৯ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

লোকেদের সম্বন্ধে ফরীশীদের মনোভাব থেকে যীশুর মনোভাব কত আলাদা ছিল!