সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“আমি কৈসরের নিকটে আপীল করি”

“আমি কৈসরের নিকটে আপীল করি”

“আমি কৈসরের নিকটে আপীল করি”

উত্তেজিত জনতা এক অরক্ষিত ব্যক্তিকে ধরে পেটাতে শুরু করে। তারা মনে করে যে, তিনি মৃত্যুদণ্ডের যোগ্য। যখন মনে হচ্ছিল যে তিনি হয়তো জনতার হাতেই মারা যাবেন, ঠিক সেই মুহূর্তে সেখানে সৈন্যরা এসে উপস্থিত হয় ও অনেক কষ্টে ওই উদ্ধত জনতার হাত থেকে তাকে কেড়ে নিয়ে যায়। এই লোকটা হলেন প্রেরিত পৌল। তাকে যারা আক্রমণ করে তারা ছিল যিহুদি, যারা পৌলের প্রচার কাজের প্রচণ্ড বিরোধিতা করে এবং তার বিরুদ্ধে মন্দির অপবিত্র করার দোষ চাপায়। তাকে যারা উদ্ধার করতে আসে তারা রোমীয় আর তাদের সহস্রপতি ক্লৌদিয় লুষিয়ের নেতৃত্বে তারা সেখানে আসে। এই বিভ্রান্তির মধ্যে পৌলকে একজন অপরাধী হিসেবে সন্দেহ করে গ্রেপ্তার করা হয়।

এই গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে যে মামলা মকদ্দমা শুরু হয়, প্রেরিত বইয়ের শেষের সাতটা অধ্যায়ে তা তুলে ধরা হয়েছে। এই অধ্যায়গুলো আমাদেরকে পৌলের বৈধ ইতিহাস, তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগগুলো, তার প্রতিবাদ ও রোমীয় ফৌজদারি প্রক্রিয়া সম্বন্ধে বুঝতে সাহায্য করে।

ক্লৌদিয় লুষিয়ের প্রহরায়

ক্লৌদিয় লুষিয়ের কাজগুলোর মধ্যে যিরূশালেমের শৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্বও ছিল। তার উচ্চ কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ যিহূদিয়ার রোমীয় দেশাধ্যক্ষ কৈসরিয়ায় থাকতেন। পৌলের মামলায় লুষিয়ের হস্তক্ষেপ করাকে, হিংস্রতা থেকে একজন লোককে রক্ষা করা ও শান্তি বিপন্নকারীকে বন্দি করা হিসেবে বর্ণনা করা যায়। যিহুদিদের প্রতিক্রিয়া দেখে লুষিয় তার কয়েদিকে সেনাদের শিবির, আ্যন্টোনিয়া দুর্গে নিয়ে গিয়েছিলেন।—প্রেরিত ২১:২৭–২২:২৪.

পৌল আসলে কী করেছেন, তা লুষিয়কে বের করতে হতো। লোকেদের চিৎকার চ্যাঁচামেচির মধ্যে তিনি কিছুই বুঝতে পারেননি। তাই শুধু শুধু সময় নষ্ট না করে তিনি আদেশ দিয়েছিলেন যে, পৌলকে ‘কোড়া প্রহার দ্বারা পরীক্ষা করিতে হইবে, যেন তিনি জানিতে পারেন, লোকে কি দোষ দিয়া পৌলের বিরুদ্ধে এরূপ চেঁচাইতেছে।’ (প্রেরিত ২২:২৪) অপরাধী, দাস ও নিম্নপদস্থ অন্যান্য ব্যক্তিদের মুখ থেকে কথা বের করার জন্য এটাই ছিল সাধারণ প্রক্রিয়া। কোড়া (ফ্লাগরাম) মেরে শেষ পর্যন্ত হয়তো কথা বের করা যেত কিন্তু এটা খুবই যন্ত্রণাদায়ক এক হাতিয়ার ছিল। এইরকম কয়েকটা চাবুকে ধাতব বল শিকলের মধ্যে ঝোলানো থাকত। অন্যগুলোতে চামড়ার ফিতা লাগানো থাকত ও ফিতাগুলোতে ধারালো হাড় ও ধাতুর টুকরো বাঁধা থাকত। এগুলো দিয়ে মারার ফলে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হতো ও মাংস কেটে ঝুলে পড়ত।

এই পরিস্থিতিতে পৌল তার রোমীয় নাগরিকত্বের কথা প্রকাশ করেছিলেন। একজন নির্দোষ রোমীয়কে কোড়া মারা নিষেধ ছিল, তাই পৌল তার অধিকারের কথা প্রকাশ করায় তা সঙ্গে সঙ্গে প্রভাব ফেলেছিল। একজন রোমীয় নাগরিকের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলে অথবা তাকে শাস্তি দিলে একজন রোমীয় অফিসার নিজের চাকরি হারাতে পারেন। তাই এটা খুবই স্পষ্ট যে, সেই সময় থেকে পৌলের সঙ্গে একজন বিশেষ কয়েদির মতো ব্যবহার করা হয়েছিল ও তার সঙ্গে অন্যেরা দেখা করতে পারত।—প্রেরিত ২২:২৫-২৯; ২৩:১৬, ১৭.

অভিযোগের কারণগুলো নিশ্চিত না হওয়ায়, লুষিয় মহাসভার সামনে পৌলকে উপস্থিত করেন, যাতে হইচইয়ের কারণগুলো জানতে পারেন। কিন্তু পৌল যখন বলেন যে পুনরুত্থান সম্বন্ধে কথা বলায় তার এই বিচার হচ্ছে, তখন এক প্রচণ্ড বিতর্কের সৃষ্টি হয়। এই মতভেদ এত প্রচণ্ড ছিল যে, লুষিয় ভয় পেয়েছিলেন পৌলকে না আবার মেরে টুকরো টুকরো করে ফেলা হয় আর তাই লুষিয় আবারও তাকে ক্রুদ্ধ যিহুদিদের হাত থেকে কেড়ে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন।—প্রেরিত ২২:৩০–২৩:১০.

লুষিয় চাননি যে, কোন রোমীয় নাগরিকের হত্যার জন্য তিনি দায়ী হন। হত্যার চক্রান্ত হচ্ছে জেনে তিনি সঙ্গে সঙ্গে তার বন্দিকে কৈসরিয়ায় পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। আইনগত বিধি অনুসারে, কয়েদিদের বিচারের জন্য উচ্চতর কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হলে তার মামলার সঙ্গে জড়িত সমস্ত রিপোর্টগুলোও পাঠাতে হতো। এই রিপোর্টের মধ্যে প্রাথমিক তদন্তের ফলাফল, কেন এই পদক্ষেপ নেওয়া হল তার কারণগুলো এবং মামলার বিষয়ে তদন্তকারীর মতামত থাকত। লুষিয় বলেছিলেন যে, পৌলের ওপর ‘যিহূদী ব্যবস্থা সম্বন্ধীয় কোন বিবাদ প্রযুক্ত দোষারোপ হইয়াছে, কিন্তু প্রাণদণ্ডের বা শৃঙ্খলের যোগ্য কোন দোষপ্রযুক্ত নয়’ আর পৌলের বিরুদ্ধে যাদের অভিযোগ ছিল তাদেরকে তিনি তাদের সমস্ত অভিযোগ দেশাধ্যক্ষ ফীলিক্সের কাছে বলার জন্য আদেশ দিয়েছিলেন।—প্রেরিত ২৩:২৯, ৩০.

দেশাধ্যক্ষ ফীলিক্স বিচার করতে ব্যর্থ হন

ফীলিক্সের ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের ওপর প্রাদেশিক বিচারব্যবস্থা নির্ভর করত। তিনি চাইলে স্থানীয় রীতিনীতি কিংবা সংবিধিবদ্ধ ফৌজদারি আইন মেনে চলতে পারতেন, যা সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তি ও সরকারি কর্মকর্তাদের বেলায় কাজে লাগানো হতো। সেটা ওরডো বা তালিকা নামে পরিচিত ছিল। এছাড়া তিনি হয়তো এক্সট্রা ওরডিনেম বিচার ব্যবস্থা প্রয়োগ করতে পারতেন, যেটা যে কোন অপরাধের সিদ্ধান্ত নিতে প্রয়োগ করা যেত। একজন প্রাদেশিক দেশাধ্যক্ষ ‘রোমে কী হয়েছে তা নয় কিন্তু সকলের প্রতি কী করা উচিত, তা বিবেচনা করবেন’ বলে আশা করা হতো। তাই, তার বিচারের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করত।

প্রাচীন রোমীয় আইনের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ জানা যায় না কিন্তু পৌলের মামলাটাকে “প্রাদেশিক দণ্ডমূলক প্রক্রিয়া এক্সট্রা ওরডিনেম এর এক আদর্শ উদাহরণ” বলা যায়। উপদেষ্টাদের সাহায্যে দেশাধ্যক্ষ লোকেদের ব্যক্তিগত অভিযোগগুলো শুনতেন। প্রতিবাদীকে তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছে তার সামনে ডাকা হতো এবং তিনি আত্মপক্ষ সমর্থন করতে পারতেন কিন্তু যা অভিযোগ করা হয়েছে, তা প্রমাণ করার ভার প্রতিবাদীর ছিল। বিচারক যে কোন শাস্তি উপযুক্ত বলে মনে করেন, সেটাই বলবৎ করতেন। তিনি সঙ্গে সঙ্গে বিচারের রায় দিতে পারতেন বা অনির্দিষ্ট কালের জন্য সেটা মুলতুবি রাখতে পারতেন, যে ক্ষেত্রে প্রতিবাদীকে হাজতে রাখা হতো। পণ্ডিত হ্যানরি ক্যাডবারি বলেন, ‘কোন সন্দেহ নেই যে, এইধরনের অনিয়ন্ত্রিত ক্ষমতা থাকায় দেশাধ্যক্ষ যাতে অপরাধীকে বেকসুর বলে ছেড়ে দেন, দোষী করেন অথবা বিচার মুলতুবি রাখেন তার জন্য তাকে “অত্যাধিক চাপ” এবং ঘুস দিয়ে প্রভাবিত করা যেত।’

মহাযাজক অননিয়, কয়েকজন যিহুদি প্রাচীন এবং তর্তুল্ল আগেই ফীলিক্সের কাছে পৌলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন যে তিনি ‘যিহূদীর মধ্যে কলহজনক মহামারীস্বরূপ।’ তারা দাবি করেছিলেন যে তিনি হলেন “নাসরতীয় দলের” নেতা এবং মন্দিরকে অপবিত্র করার চেষ্টা করেছেন।—প্রেরিত ২৪:১-৬.

সবচেয়ে প্রথমে যারা পৌলকে আক্রমণ করেছিল তারা ভেবেছিল যে, ত্রফিম নামে একজন পরজাতীয়কে পৌল সেই প্রাঙ্গনে নিয়ে এসেছিলেন, যেখানে কেবল যিহুদিরা ঢুকতে পারত। * (প্রেরিত ২১:২৮, ২৯) সহজ করে বলতে গেলে, অভিযোগে বর্ণিত বেআইনি লোকটা ছিলেন ত্রফিম। কিন্তু যিহুদিরা যদি শুধু অনুমানের ওপর ভিত্তি করে বলতে পারে যে পৌল অন্যায় কাজে ইন্ধন জুগিয়েছিলেন, তাহলে এটাকে মৃত্যুযোগ্য অপরাধ বলাও তাদের কাছে কোন ব্যাপার না। আর এই অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার ক্ষমতা রোম যিহুদিদের দিয়েছিল বলে মনে হয়। তাই পৌলকে যদি লুষিয় গ্রেপ্তার না করে যিহুদিদের মন্দিরের রক্ষীবাহিনী গ্রেপ্তার করত, তাহলে কোন ঝামেলা ছাড়াই মহাসভা পৌলের বিচার করতে ও তাকে শাস্তি দিতে পারত।

যিহুদিরা যুক্তি দেখিয়েছিল, পৌল যা শেখাচ্ছিলেন তা যিহুদি বা কোন বৈধ ধর্ম (রিলিজিও লিসিটা) ছিল না। বরং সেটা অবৈধ ও রাষ্ট্রদ্রোহীমূলক কাজ ছিল।

তারা এও দাবি করেছিল যে, পৌল “জগতের সমস্ত যিহূদীর মধ্যে কলহজনক।” (প্রেরিত ২৪:৫) মাত্র কিছুদিন আগে সম্রাট ক্লৌদিয় দোষারোপ করেছিলেন যে, আলেকজান্দ্রিয়ার যিহুদিরা “সারা পৃথিবী জুড়ে এক সর্বজনীন মহামারী ছড়াচ্ছে।” এই কথাগুলোর মধ্যে মিল রয়েছে। ইতিহাসবেত্তা এ. এন. শারউইন-হোয়াইট বলেন, ‘ক্লৌদিয়ের শাসনের সময় বা নিরোর রাজত্বের প্রথম দিকে মূলত একজন যিহুদির বিরুদ্ধে এইধরনের অভিযোগ করা হতো। যিহুদিরা এই বলে দেশাধ্যক্ষকে প্ররোচিত করার চেষ্টা করেছিল যে, পৌল যা প্রচার করছিলেন তা পুরো সাম্রাজ্যের যিহুদি লোকেদের মধ্যে গণ্ডগোলের সৃষ্টি করছে। তারা জানত, দেশাধ্যক্ষরা শুধু ধর্মীয় অভিযোগের কারণে তাকে অপরাধী বলে রায় দিতে চাইবে না আর তাই তারা ধর্মীয় অভিযোগগুলোকে কিছুটা রাজনৈতিক দিকে মোড় দিতে চেয়েছিল।’

পৌল তার প্রতি একটার পর একটা অভিযোগের কারণে আত্মপক্ষ সমর্থন করেছিলেন। ‘আমি কোন গণ্ডগোল সৃষ্টি করিনি। এটা ঠিক যে, ওরা যেটাকে “দল” বলে আমি তার সদস্য কিন্তু সেই দলের সদস্য হওয়ার মানে যিহুদিদের ব্যবস্থা পালন করা। এশিয়ার কিছু যিহুদি এই দাঙ্গা উসকে দিয়েছে। আমার বিরুদ্ধে তাদের যদি কোন কথা থাকে, তাহলে তাদের এখানে উপস্থিত থাকা উচিত ছিল।’ তাই পৌল সমস্ত অভিযোগকে যিহুদিদের মধ্যে হওয়া এক ধর্মীয় তর্ক বলেছিলেন, যে ব্যাপারে রোমীয়দের তেমন একটা হাত ছিল না। অস্থির যিহুদিদেরকে ইতিমধ্যে আরও বিরক্ত হতে দেখে সর্তকতার সঙ্গে ফীলিক্স বিচার মুলতুবি করেছিলেন, আসলে তিনি এই মামলাকে এমন পর্যায়ে নিয়ে এসেছিলেন, যাতে আর কোন পদক্ষেপ নেওয়া যেতে না পারে। পৌলকে সেই যিহুদিদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়নি, যারা দাবি করেছিল যে বিচার করার অধিকার তাদেরই আছে কিংবা রোমীয় আইনেও তার বিচার করা হয়নি বা তাকে মুক্তিও দেওয়া হয়নি। বিচার ঘোষণা করতে ফীলিক্সকে বাধ্য করা সম্ভব ছিল না আর যিহুদিদের থেকে সমর্থন পাওয়ার ইচ্ছা থাকার সঙ্গে সঙ্গে এই দেরি করার পিছনে তার আরেকটা উদ্দেশ্য ছিল, তা হল তিনি আশা করেছিলেন যে, পৌল হয়তো তাকে ঘুস দেবেন।—প্রেরিত ২৪:১০-১৯, ২৬. *

পর্কিয় ফীষ্টের সময় এক চমৎকার পরিবর্তন

দুবছর পর নতুন দেশাধ্যক্ষ পর্কিয় ফীষ্ট যখন যিরূশালেমে উপস্থিত হন, তখন যিহুদিরা পৌলকে তাদের বিচারব্যবস্থার অধীনে ছেড়ে দেওয়ার জন্য আবারও দাবি জানিয়েছিল। কিন্তু ফীষ্ট দৃঢ়ভাবে বলেছিলেন: “যাহার নামে দোষারোপ হয়, সে যাবৎ দোষারোপকারীদের সহিত সম্মুখাসম্মুখি না হয়, এবং আরোপিত দোষ সম্বন্ধে আত্মপক্ষ সমর্থনের অবসর না পায়, তাবৎ কোন ব্যক্তিকে সমর্পণ করা রোমীয়দের প্রথা নয়।” ইতিহাসবেত্তা হ্যারি ডব্লু. তাশ্‌রা বলেন: “ফীষ্ট সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পেরেছিলেন যে, এক রোমীয় নাগরিককে যথাযথ বিচার ছাড়াই মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।” তাই যিহুদিদেরকে তাদের মামলা কৈসরিয়ায় পেশ করতে বলা হয়েছিল।—প্রেরিত ২৫:১-৬, ১৬.

সেখানে যিহুদিরা জোর গলায় বলেছিল যে, পৌলের “আর বাঁচিয়া থাকা উচিত নয়” কিন্তু তারা কোন প্রমাণ দেখাতে পারেনি। আর ফীষ্ট বুঝতে পারেন যে, পৌল আসলে মৃত্যুদণ্ডের যোগ্য কোন অপরাধ করেননি। আরেকজন কর্মকর্তার কাছে ফীষ্ট বলেছিলেন, তারা “তাহার বিরুদ্ধে আপনাদের নিজ ধর্ম্ম বিষয়ে, এবং যীশু নামে কোন মৃত ব্যক্তি, যাহাকে পৌল জীবিত বলিত, তাহার বিষয়ে কয়েকটী তর্ক উপস্থিত করিল।”—প্রেরিত ২৫:৭, ১৮, ১৯, ২৪, ২৫.

এটা স্পষ্ট যে, রাজনৈতিক কারণে পৌলের কোন দোষ ছিল না কিন্তু ধর্মীয় কারণে বিতর্ক করে যিহুদিরা সম্ভবত বোঝাতে চেয়েছিল যে, এই বিষয়টার মীমাংসা করার জন্য একমাত্র তাদের আদালতই উপযুক্ত। এই বিষয়গুলোর বিচারের জন্য পৌল কি যিরূশালেমে যাবেন? ফীষ্ট পৌলকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে তিনি সেখানে যেতে রাজি আছেন কি না। কিন্তু আসলে এটা এক অযৌক্তিক প্রস্তাব ছিল। যারা তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিল তাদের কাছে বিচারিত হওয়ার জন্য যিরূশালেমে যাওয়া মানে যিহুদিদের কাছে পৌলকে আত্মসমর্পণ করতে হবে। পৌল বলেছিলেন, “আমি কৈসরের বিচারাসনের সম্মুখে দাঁড়াইয়া আছি, এখানে আমার বিচার হওয়া উচিত। আমি যিহূদীদের প্রতি কিছু অন্যায় করি নাই, . . . ইহাদের হস্তে আমাকে সমর্পণ করিতে কাহারও অধিকার নাই; আমি কৈসরের নিকটে আপীল করি।”—প্রেরিত ২৫:১০, ১১, ২০.

একজন রোমীয় নাগরিকের বলা এই কথাগুলো সমস্ত প্রাদেশিক বিচারব্যবস্থাকে স্থগিত করে দিয়েছিল। তার আপীল করার অধিকার (প্রোভোকেশিও) ছিল “সত্য, বোধগম্য ও কার্যকারী।” তাই তার উপদেষ্টাদের সঙ্গে আইন সংক্রান্ত বিষয় সম্বন্ধে পরামর্শ নিয়ে ফীষ্ট ঘোষণা করেছিলেন: “তুমি কৈসরের নিকটে আপীল করিলে; কৈসরের কাছেই যাইবে।”—প্রেরিত ২৫:১২.

ফীষ্ট পৌলকে যেতে দিয়ে খুশিই হয়েছিলেন। কারণ কয়েকদিন পর হেরোদ আগ্রিপ্প দ্বিতীয়কে তিনি বলেছিলেন যে, এই মামলা তাকে মুশকিলে ফেলেছিল। সম্রাটের কাছে মামলাটা পাঠানোর জন্য ফীষ্টকে সেটার এক বিবৃতি লিখতে হতো কিন্তু ফীষ্টের জন্য এই অভিযোগগুলো ছিল যিহুদি ব্যবস্থার জটিল কিছু বিষয়, যা তিনি খুব ভালভাবে বুঝতে পারেননি। কিন্তু, এই ব্যাপারে আগ্রিপ্প দক্ষ ছিলেন আর তাই তিনি যখন আগ্রহ দেখান, তখন সঙ্গে সঙ্গে ফীষ্ট তাকে চিঠিটা লিখতে সাহায্য করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছিলেন। আগ্রিপ্পের সামনে বলা পৌলের পরবর্তী কথাগুলো শুনে, ফীষ্ট না বুঝতে পেরে চেঁচিয়ে বলে উঠেছিলেন: “পৌল, তুমি পাগল; বহু বিদ্যাভ্যাস তোমাকে পাগল করিয়া তুলিতেছে।” কিন্তু, আগ্রিপ্প পৌলের সমস্ত কথা একেবারে নিখুঁতভাবে বুঝতে পেরেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “তুমি অল্পেই আমাকে খ্রীষ্টীয়ান করিতে চেষ্টা পাইতেছ।” পৌলের যুক্তি শুনে তারা যা-ই ভেবে থাকুন না কেন, ফীষ্ট ও আগ্রিপ্প একমত ছিলেন যে পৌল নির্দোষ ছিলেন ও তিনি যদি কৈসরের কাছে আপীল না করতেন, তাহলে মুক্তি পেতে পারতেন।—প্রেরিত ২৫:১৩-২৭; ২৬:২৪-৩২.

বিচার যাত্রার সমাপ্তি

রোমে পৌঁছে পৌল যিহুদিদের কয়েকজন প্রধান লোকেদের কাছে শুধু প্রচার করার জন্যই নয় কিন্তু তার সম্বন্ধে তারা আসলে কী জানেন, সেটা জানতে তাদেরকে ডেকেছিলেন। আর সেটা করার ফলে হয়তো অভিযোগকারীদের কিছু উদ্দেশ্যও প্রকাশ পেয়েছিল। এইধরনের মামলার বিচার করার জন্য যিরূশালেমের কর্তৃপক্ষদের রোমীয় যিহুদিদের সাহায্য নেওয়া সাধারণ বিষয় ছিল কিন্তু পৌল শুনেছিলেন যে তার সম্বন্ধে তারা কোন কিছুই জানে না। তাই বিচারের জন্য অপেক্ষা করার সময় পৌলকে একটা বাড়ি ভাড়া করে থাকার ও স্বাধীনভাবে প্রচার করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এইধরনের অনুগ্রহ দেখানো বুঝিয়েছিল যে, রোমীয়দের চোখে পৌল একজন নির্দোষ ব্যক্তি ছিলেন।—প্রেরিত ২৮:১৭-৩১.

পৌল আরও দুবছর কারাগারে ছিলেন। কিন্তু কেন? বাইবেল এই বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলে না। সাধারণত যিনি আপীল করতেন তাকে, তার অভিযোগকারীরা সেখানে এসে তাদের অভিযোগগুলো পেশ না করা পর্যন্ত আটকে রাখা হতো। কিন্তু, যিরূশালেমের যিহুদিরা হয়তো তাদের মামলা অতটা জোরালো নয় বলে বুঝতে পেরেছিল আর তাই কখনও সেখানে উপস্থিত হয়নি। সম্ভবত পৌলের মুখ যতদিন পারা যায় বন্ধ করে রাখার জন্য সেখানে না আসাই ছিল সবচেয়ে কার্যকারী উপায়। কারণ যা-ই হোক না কেন, পৌল নিশ্চয়ই নিরোর সামনে দাঁড়িয়েছিলেন, তাকে নির্দোষ ঘোষণা করা হয়েছিল এবং শেষ পর্যন্ত গ্রেপ্তারের প্রায় পাঁচ বছর পর তাকে ছাড়া হয়েছিল, যাতে তিনি আবার মিশনারি কাজ শুরু করতে পারেন।—প্রেরিত ২৭:২৪.

সত্যের বিরোধীরা খ্রীষ্টীয় প্রচার কাজে বাধা দেওয়ার জন্য অনেক আগের থেকেই ‘আইন দ্বারা উপদ্রব রচনা করে।’ এটা দেখে আমরা অবাক হই না। যীশু বলেছিলেন: “লোকে যখন আমাকে তাড়না করিয়াছে, তখন তোমাদিগকেও তাড়না করিবে।” (গীতসংহিতা ৯৪:২০, কিং জেমস ভারসন; যোহন ১৫:২০) এছাড়া যীশু আমাদেরকে সমগ্র জগতে সুসমাচার প্রচার করার স্বাধীনতার নিশ্চয়তাও দেন। (মথি ২৪:১৪) তাই, ঠিক যেমন প্রেরিত পৌল তাড়না ও বিরোধিতার জবাব দিয়েছিলেন, আজকে যিহোবার সাক্ষিরাও ‘সুসমাচারের পক্ষসমর্থন ও প্রতিপাদন করিয়া থাকেন।’—ফিলিপীয় ১:৭.

[পাদটীকাগুলো]

^ তিন হাত উঁচু বিশাল এক স্তম্ভ মন্দিরের ভিতরের প্রাঙ্গণ ও পরজাতীয়দের বিচার গৃহকে ভাগ করেছিল। নির্দিষ্ট কিছু দূরত্বে থাকা এই স্তম্ভগুলোতে গ্রিক ও ল্যাটিন ভাষায় সতর্কবাণী লেখা থাকত: “কোন বিদেশি যেন প্রাচীর ও ধর্মধামের চারিদিকে যে বেড়া দেওয়া আছে, তার ভিতরে প্রবেশ না করে। কেউ যদি এর ভিতরে ধরা পড়ে, তাহলে তার মৃত্যুর জন্য সে নিজে দায়ী থাকবে, যে শাস্তি সে পরে পাবে।”

^ অবশ্যই ঘুস নেওয়া অবৈধ ছিল। একটা বই বলে: “বলপূর্বক ছিনিয়ে নেওয়ার আইন অর্থাৎ লেক্স রিপেটানডেরাম আইন অনুসারে, ক্ষমতা বা প্রশাসনিক দায়িত্বে অধিষ্ঠিত যে কোন ব্যক্তিকে আটকে রাখার বা মুক্ত করার, বিচার ঘোষণা করার বা না করার অথবা কোন বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার জন্য ঘুস চাওয়া বা নেওয়া নিষেধ ছিল।”