সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

প্রকৃত যীশু

প্রকৃত যীশু

প্রকৃত যীশু

 লোকেরা যীশুর সম্বন্ধে কী ভাবে, সেই বিষয়ে তাঁর শিষ্যদের কাছ থেকে শোনার পর তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেছিলেন: “কিন্তু তোমরা কি বল, আমি কে?” মথির সুসমাচারে প্রেরিত পিতরের উত্তর লেখা রয়েছে: “আপনি সেই খ্রীষ্ট, জীবন্ত ঈশ্বরের পুত্ত্র।” (মথি ১৬:১৫, ১৬) অন্যেরাও একই কথা বলেছিলেন। নথনেল, যিনি পরে একজন প্রেরিত হয়েছিলেন, তিনি যীশুকে বলেছিলেন: “রব্বি, আপনিই ঈশ্বরের পুত্ত্র, আপনিই ইস্রায়েলের রাজা।” (যোহন ১:৪৯) যীশু নিজে তাঁর ভূমিকার গুরুত্ব সম্বন্ধে বলেছিলেন: “আমিই পথ ও সত্য ও জীবন; আমা দিয়া না আসিলে কেহ পিতার নিকটে আইসে না।” (যোহন ১৪:৬) বিভিন্ন সময়ে তিনি নিজেকে ‘ঈশ্বরের পুত্ত্র’ বলেছিলেন। (যোহন ৫:২৪, ২৫; ১১:৪) আর তিনি অলৌকিক কাজ করে, এমনকি মৃতদের জীবিত করে প্রমাণ দিয়েছিলেন যে এই কথা সত্য।

সুপ্রতিষ্ঠিত সন্দেহগুলো কী?

কিন্তু, যীশু সম্বন্ধে সুসমাচারের বিবরণগুলোর ওপর কি আমরা সত্যিই আস্থা রাখতে পারি? এগুলো কি প্রকৃত যীশুর বিষয় বর্ণনা করে? ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইবেল বিষয়ক সমালোচনা ও ব্যাখ্যার অধ্যাপক প্রয়াত ফ্রেডরিক এফ. ব্রুস বলেছিলেন: “শুধু বাইবেল কেন, সাধারণত প্রাচীন কোন লেখাতেই সমস্ত সত্য ঘটনা ঐতিহাসিক বিবরণে বিস্তারিত তুলে ধরা সম্ভব নয়। সার্বিকভাবে একজন লেখক কতটা নির্ভরযোগ্য তার ওপর যুক্তিসংগত আস্থা রাখাই যথেষ্ট; তা যদি একবার প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়, তাহলে সম্ভবত প্রমাণিত হয় যে, তার দেওয়া বিস্তারিত বিবরণগুলোও সত্য। . . . নতুন নিয়মকে খ্রীষ্টানরা ‘পবিত্র’ সাহিত্য হিসেবে মেনে নেন বলে এগুলোকে ঐতিহাসিক দিক দিয়ে অবিশ্বাস্য মনে করার কোন কারণই নেই।”

সুসমাচারের বিবরণগুলোতে যীশুকে যেভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, তা নিয়ে যে সন্দেহগুলো রয়েছে সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর, যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডেকোটার জেমসটাউন কলেজের ধর্মের অধ্যাপক জেমস আর. এডওআর্ডস্‌ লিখেছিলেন: “আমরা হয়তো পুরোপুরি আস্থা নিয়ে বলতে পারি যে, সুসমাচারের বিবরণগুলোতে যীশুর সম্বন্ধে প্রকৃত সত্য বিষয়গুলোর বিভিন্ন ও তাৎপর্যপূর্ণ প্রমাণ তুলে ধরা হয়েছে। . . . কিন্তু, সুসমাচারের বিবরণগুলোতে কেন যীশুর বিষয় এভাবে তুলে ধরা হয়েছে এই প্রশ্নের সবচেয়ে যুক্তিসংগত উত্তরটা হল, যীশু কে ছিলেন তা জানার জন্য এটা দরকার ছিল। তিনি তাঁর অনুসারীদের ওপর যে ছাপ ফেলেছিলেন অর্থাৎ ঈশ্বর যে সত্যি সত্যিই তাঁকে পাঠিয়েছিলেন এবং ঈশ্বরের পুত্র ও দাস হওয়ার জন্য তাঁকে শক্তি জুগিয়েছিলেন সেই বিষয়গুলো সুসমাচারের বিবরণে একেবারে সঠিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে।” *

যীশুর খোঁজে

বাইবেল ছাড়া অন্যান্য জায়গায় যীশু খ্রীষ্ট সম্বন্ধে যা বলা হয়েছে, সেই সম্বন্ধে কী বলা যায়? সেগুলোকে কীভাবে মূল্যায়ন করা হয়? যে ট্যাসিটাস, সুইটোনিয়াস, জোসেফাস, প্লিনি দ্যা ইয়াংগার এবং আরও কিছু গ্রিক ও রোমীয় লেখকদের রচনায় যীশুর সম্বন্ধে অসংখ্য বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের সম্বন্ধে দ্যা নিউ এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা (১৯৯৫) বলে: “আলাদা আলাদা এই বিবরণগুলো প্রমাণ করে যে, প্রাচীন কালের এমনকি খ্রীষ্টধর্মের বিরোধীরা পর্যন্ত কখনও যীশুর ঐতিহাসিক সত্যতা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেনি, যা নিয়ে আঠারশ শতাব্দীর শেষ দিকে, উনবিংশ শতাব্দী চলাকালে এবং বিংশ শতাব্দীর শুরুতে প্রথমবারের মতো পর্যাপ্ত প্রমাণ ছাড়াই এই বিষয়ে বিতর্কের ঝড় উঠেছিল।”

কিন্তু দুঃখের বিষয় হল যে, “প্রকৃত” বা “ঐতিহাসিক” যীশুর সন্ধান করতে গিয়ে আধুনিক পণ্ডিত ব্যক্তিরা ভিত্তিহীন ধারণা, অযৌক্তিক সন্দেহ এবং অপ্রতিষ্ঠিত তত্ত্বের আড়ালে যীশুর প্রকৃত পরিচয়কে লুকিয়ে রেখেছেন। এক অর্থে, পৌরাণিক কাহিনী রচনার জন্য আসলে তারাই দোষী অথচ এর জন্য তারা কিনা সুসমাচার লেখকদেরকে দোষ দিয়ে থাকেন। কেউ কেউ আরও বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠতে এবং নতুন ও চমকপ্রদ তত্ত্বের সঙ্গে তাদের নাম জুড়ে দেওয়ার জন্য এত ব্যস্ত যে, যীশুর সম্বন্ধে সাক্ষ্যপ্রমাণগুলো সৎভাবে পরীক্ষা করতেই তারা ব্যর্থ হয়। এভাবে তারা এমন এক “যীশু”-কে সৃষ্টি করেন, যা আসলে তাদের পাণ্ডিত্যপূর্ণ কল্পনার চরিত্র।

যারা প্রকৃত যীশুকে সত্যিই খুঁজে পেতে চান, বাইবেলে তাঁকে পাওয়া যেতে পারে। এমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্ডলার স্কুল অফ থিওলজি-র নতুন নিয়ম ও খ্রীষ্টীয় উৎসের অধ্যাপক লূক জনসন বলেন যে, ঐতিহাসিক যীশুকে নিয়ে গবেষণা করা বেশির ভাগ তথ্যই বাইবেলের কথাকে উপেক্ষা করে। তিনি বলেন যে, যীশুর জীবন ও যুগের সামাজিক, রাজনৈতিক, নৃতাত্ত্বিক ও সাংস্কৃতিক প্রসঙ্গগুলো পরীক্ষা করে দেখা খুবই আগ্রহজনক হতে পারে। কিন্তু তিনি আরও বলেন, ঐতিহাসিক যীশুর বিষয়ে পণ্ডিত ব্যক্তিরা যা আবিষ্কার করেন তা “খুব কম সময়েই শাস্ত্রের সঙ্গে মেলে” কারণ শাস্ত্রে “যীশুর চরিত্র,” তাঁর বার্তা ও মুক্তিদাতা হিসেবে তাঁর ভূমিকা নিয়ে “বেশি আলোচনা করা হয়েছে।” তাহলে, যীশুর প্রকৃত চরিত্র ও বার্তা আসলে কী ছিল?

প্রকৃত যীশু

সুসমাচারের বিবরণগুলো—বাইবেলে যীশুর জীবনের চারটে বিবরণ—যীশুকে সহানুভূতিশীল এক মহান ব্যক্তি বলে বর্ণনা করে। সমবেদনা ও করুণাই যীশুকে সেই লোকেদের সাহায্য করতে প্রেরণা দিয়েছিল, যারা অসুস্থতা, অন্ধত্ব ও অন্যান্য আরও সমস্যার কারণে কষ্ট পাচ্ছিল। (মথি ৯:৩৬; ১৪:১৪; ২০:৩৪) যীশু তাঁর বন্ধু লাসারের মৃত্যু ও লাসারের বোনদের শোক দেখে ‘উত্তেজিত হইয়াছিলেন ও কাঁদিয়াছিলেন।’ (যোহন ১১:৩২-৩৬) আসলে, সুসমাচারের বিবরণগুলো যীশুর বিভিন্ন অনুভূতি তুলে ধরে যেমন, কুষ্ঠরোগীর প্রতি সহানুভূতি, তাঁর শিষ্যদের সফলতা দেখে আনন্দ প্রকাশ, অনুভূতিহীন আইনপ্রণেতাদের প্রতি প্রচণ্ড রাগ এবং যিরূশালেমের লোকেরা মশীহকে প্রত্যাখ্যান করায় তাঁর দুঃখ বোধ।

অলৌকিকভাবে কাউকে সুস্থ করার পর যীশু প্রায়ই সেই ব্যক্তির সম্বন্ধে এভাবে বলতেন: “তোমার বিশ্বাস তোমাকে সুস্থ করিল।” (মথি ৯:২২) তিনি নথনেলকে “এক জন প্রকৃত ইস্রায়েলীয়” বলে প্রশংসা করেছিলেন ও তার সম্বন্ধে বলেছিলেন: ‘তাহার অন্তরে ছল নাই।’ (যোহন ১:৪৭) একজন স্ত্রীলোকের উপলব্ধিপূর্ণ উপহারকে যখন কেউ কেউ অপচয় ভেবেছিল, তখন যীশু তার হয়ে বলেছিলেন যে, এই স্ত্রীলোকের উদারতার কথা অনেক দিন ধরে স্মরণ করা হবে। (মথি ২৬:৬-১৩) তিনি নিজেকে তাঁর অনুগামীদের কাছে একজন প্রকৃত বন্ধু ও প্রিয় সঙ্গী হিসেবে প্রমাণ করেছিলেন আর ‘তাহাদিগকে শেষ পর্য্যন্ত প্রেম করিয়াছিলেন।’—যোহন ১৩:১; ১৫:১১-১৫.

সুসমাচারের বিবরণ আরও দেখায় যে, বেশির ভাগ লোকেদের দেখেই যীশু সঙ্গে সঙ্গে বুঝে ফেলতেন তাদের কী দরকার। কুয়োর ধারে একজন স্ত্রীলোকের সঙ্গে, একটা বাগানে একজন ধর্মীয় গুরুর সঙ্গে বা নদীর ধারে একজন জেলের সঙ্গে, মোট কথা তিনি যার সঙ্গেই কথা বলতেন না কেন, সঙ্গে সঙ্গে তাদের হৃদয় স্পর্শ করতেন। যীশু কথা বলতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে এদের অনেকেই তাঁর কাছে মনের কথা খুলে বলেছিলেন। তিনি তাদেরকে এমন কিছু বলতেন, যা শুনে তারা তাদের অনুভূতি প্রকাশ করতেন। যদিও তাঁর সময়ের লোকেরা কর্তৃত্বে আছেন এমন ব্যক্তিদের কাছ থেকে দশ হাত দূরে থাকত কিন্তু যীশুর ক্ষেত্রে দেখা যায় যে জনতা সবসময় তাঁকে ঘিরে থাকত। তারা যীশুর কাছে থাকতে ভালবাসত; তাঁর সান্নিধ্যে তারা স্বচ্ছন্দ বোধ করত। ছেলেমেয়েরা তাঁর কাছে সহজেই আসতে পারত এবং একটা বাচ্চাকে নিয়ে উদাহরণ দেওয়ার সময় তিনি শুধু বাচ্চাটাকে তাঁর শিষ্যদের সামনে দাঁড় করিয়েই রাখেননি কিন্তু ‘তাহাকে কোলে করিয়াছিলেন।’ (মার্ক ৯:৩৬; ১০:১৩-১৬) সত্যিই, সুসমাচারের বিবরণ যীশুকে এমন এক ব্যক্তি হিসেবে তুলে ধরে, যাঁর আকর্ষণ শক্তি এতটা প্রবল ছিল যে, লোকেরা কেবলমাত্র তাঁর মুখের চমৎকার কথা শোনার জন্য তিনদিন ধরে তাঁর সঙ্গে সঙ্গে ছিল।—মথি ১৫:৩২.

যীশু সিদ্ধ ছিলেন বলে তিনি যাদের সঙ্গে থাকতেন ও যাদের কাছে প্রচার করতেন সেই অসিদ্ধ, পাপী লোকেদের দোষ খুঁজে বেড়াননি বা উদ্ধত আচরণ করেননি অথবা তাদের ওপর কর্তৃত্ব করেননি। (মথি ৯:১০-১৩; ২১:৩১, ৩২; লূক ৭:৩৬-৪৮; ১৫:১-৩২; ১৮:৯-১৪) যীশু অন্যদের কাছ থেকে কখনও বেশি আশা করতেন না। তিনি লোকেদের বোঝা আরও বাড়িয়ে দেননি। এর বদলে তিনি বলেছিলেন: “হে পরিশ্রান্ত . . . লোক সকল, আমার নিকটে আইস, আমি তোমাদিগকে বিশ্রাম দিব।” তাঁর শিষ্যরা দেখেছিলেন যে তিনি “মৃদুশীল ও নম্রচিত্ত” ছিলেন; তাঁর জোয়ালি সহজ ও তাঁর ভার লঘু ছিল।—মথি ১১:২৮-৩০.

সুসমাচারের বিবরণগুলোর মাধ্যমে যীশুর আসল চরিত্র প্রকাশ পায়, যেগুলো একেবারে সত্য। একজন অসাধারণ ব্যক্তির সম্বন্ধে চারজন ব্যক্তির পক্ষে বানিয়ে বানিয়ে কথা বলা ও তাদের চারজনের আলাদা আলাদা বর্ণনায় তাঁর সম্বন্ধে একই বিষয় তুলে ধরা সহজ হতো না। কোন চরিত্র যদি অস্তিত্বেই না থেকে থাকে, তাহলে চার জন লেখকের পক্ষে ওই একই ব্যক্তির সম্বন্ধে একই বিষয় বর্ণনা করা একেবারেই অসম্ভব।

ইতিহাসবেত্তা মাইকেল গ্র্যান্ট, ভাবিয়ে তোলার মতো একটা প্রশ্ন করেন: “প্রত্যেকটা সুসমাচারের বিবরণ কীভাবে একজন আকর্ষণীয় যুবকের সম্বন্ধে এমন উল্লেখযোগ্য স্পষ্ট বর্ণনা দেয়, যিনি খারাপ নারী সহ সমস্ত ধরনের স্ত্রীলোকের সঙ্গে সহজে মেলামেশা করতেন অথচ তাদের প্রতি কোনরকম আবেগগত সম্পর্ক গড়ে তোলেননি, অস্বাভাবিক আচরণ করেননি বা কোনরকম অন্যায় কাজ করেননি বরং প্রতিটা ক্ষেত্রে বিশুদ্ধ চরিত্র বজায় রেখেছিলেন?” এই প্রশ্নের যুক্তিসংগত উত্তরটা হল, এইরকম একজন ব্যক্তি সত্যিই ছিলেন এবং বাইবেলে যা বলা আছে ঠিক সেই কাজগুলোই করেছিলেন।

প্রকৃত যীশু এবং আপনার ভবিষ্যৎ

যীশু যখন পৃথিবীতে ছিলেন সেই সময়ে তাঁর জীবনের প্রকৃত চিত্র বর্ণনা করা ছাড়াও বাইবেল দেখায় যে, পৃথিবীতে মানুষ হয়ে আসার আগে ঈশ্বরের একজাত পুত্র ও “সমুদয় সৃষ্টির প্রথমজাত” হিসেবে তাঁর অস্তিত্ব ছিল। (কলসীয় ১:১৫) দুহাজার বছর আগে, ঈশ্বর তাঁর স্বর্গীয় পুত্রকে মানুষ হিসেবে জন্ম দেওয়ার জন্য এক যিহুদি কুমারীর গর্ভে স্থানান্তরিত করেছিলেন। (মথি ১:১৮) যীশু পৃথিবীতে তাঁর পরিচর্যার সময়, দুর্দশাগ্রস্ত মানবজাতির একমাত্র আশা হিসেবে ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয় ঘোষণা করেছিলেন এবং প্রচার কাজ চালিয়ে নেওয়ার জন্য তাঁর শিষ্যদের প্রশিক্ষিত করেছিলেন।—মথি ৪:১৭; ১০:৫-৭; ২৮:১৯, ২০.

সাধারণ কাল ৩৩ সালের ১৪ই নিশান (প্রায় ১লা এপ্রিলের দিকে) যীশুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তাঁর বিচার করা হয়েছিল, তাঁকে দণ্ড দেওয়া হয়েছিল এবং রাজদ্রোহী হিসেবে মিথ্যা অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। (মথি ২৬:১৮-২০, মথি ২৬:৪৮-২৭:৫০) যীশুর মৃত্যু মুক্তির মূল্য হিসেবে কাজ করে, বিশ্বাসী মানবজাতিকে তাদের পাপপূর্ণ অবস্থা থেকে মুক্ত করে এবং যারা বিশ্বাস অনুশীলন করে চলে তাদের সকলের জন্য অনন্ত জীবনের পথ খুলে দেয়। (রোমীয় ৩:২৩, ২৪; ১ যোহন ২:২) ১৬ই নিশান যীশু পুনরুত্থিত হয়েছিলেন এবং কিছুদিন পর আবার স্বর্গে চলে গিয়েছিলেন। (মার্ক ১৬:১-৮; লূক ২৪:৫০-৫৩; প্রেরিত ১:৬-৯) যিহোবার মনোনীত রাজা হিসেবে মানুষের জন্য ঈশ্বরের আদি উদ্দেশ্য পূর্ণ করার পুরো ক্ষমতা পুনরুত্থিত যীশুর রয়েছে। (যিশাইয় ৯:৬, ৭; লূক ১:৩২, ৩৩) হ্যাঁ, ঈশ্বরের উদ্দেশ্যগুলো পূর্ণ করায় যীশুর যে এক মুখ্য ভূমিকা রয়েছে, বাইবেল তা তুলে ধরে।

প্রথম শতাব্দীতে অনেকেই যীশুকে তিনি যা ছিলেন—প্রতিজ্ঞাত মশীহ বা খ্রীষ্ট, যিহোবার সার্বভৌমত্বকে প্রতিপাদন করতে এবং মানবজাতির মুক্তির মূল্য দিতে মৃত্যুবরণ করতে পৃথিবীতে পাঠানো ব্যক্তি হিসেবে মেনে নিয়েছিলেন। (মথি ২০:২৮; লূক ২:২৫-৩২; যোহন ১৭:২৫, ২৬; ১৮:৩৭) লোকেরা যদি তাঁর সম্বন্ধে নিশ্চিত করে কিছু না-ই জানতেন, তাহলে প্রচণ্ড তাড়নার মুখে, কখনও যীশুর শিষ্য হতেন না। তিনি ‘সমুদয় জাতিকে শিষ্য করিবার’ যে দায়িত্ব তাদেরকে দিয়েছিলেন, তা তারা সাহস ও উদ্যোগের সঙ্গে পালন করেছিলেন।—মথি ২৮:১৯.

আজকে, লক্ষ লক্ষ আন্তরিক ও সমস্ত কিছু জেনেশুনে খ্রীষ্টান হয়েছেন এমন ব্যক্তিরা জানেন যে যীশু কোন কাল্পনিক চরিত্র নন। তারা তাঁকে স্বর্গে ঈশ্বরের প্রতিষ্ঠিত রাজ্যের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত রাজা হিসেবে মেনে নেন, যিনি শীঘ্রিই পৃথিবীর সমস্ত কিছুর ওপর পূর্ণ ক্ষমতা গ্রহণ করবেন। ঈশ্বরের এই সরকারের কথা জানা খুবই আনন্দের খবর কারণ এটা জগতের সমস্যাগুলো থেকে স্বস্তি নিয়ে আসার বিষয়ে প্রতিজ্ঞা করে। সত্য খ্রীষ্টানরা অন্যদের কাছে “রাজ্যের এই সুসমাচার” ঘোষণা করে যিহোবার মনোনীত রাজার প্রতি তাদের নিষ্ঠাপূর্ণ সমর্থন প্রকাশ করেন।—মথি ২৪:১৪.

যারা জীবন্ত ঈশ্বরের পুত্র খ্রীষ্টের মাধ্যমে রাজ্যের ব্যবস্থাকে সমর্থন করেন, তারা অনন্ত আশীর্বাদ উপভোগ করার জন্য বেঁচে থাকবেন। এই আশীর্বাদগুলো আপনারও হতে পারে! এই পত্রিকার প্রকাশকরা, প্রকৃত যীশুর সম্বন্ধে জানতে আপনাকে সাহায্য করতে পেরে খুশি হবেন।

[পাদটীকা]

^ সুসমাচারের বিবরণগুলো ভালভাবে পরীক্ষা করার জন্য, যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত বাইবেল—ঈশ্বরের বাক্য অথবা মানুষের? (ইংরেজি) বইয়ের ৫ থেকে ৭ অধ্যায় দেখুন।

[৬ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]

অন্যেরা যা বলেছেন

“আমি নাসারতের যীশুকে বিশ্বের ক্ষমতাবান শিক্ষকদের মধ্যে একজন হিসেবে শ্রদ্ধা করি। . . . আমি হিন্দুদের বলতে চাই যে আপনাদের জীবন অসম্পূর্ণ থেকে যাবে যদি আপনারা যীশুর শিক্ষাগুলোকে শ্রদ্ধার সঙ্গে অধ্যয়ন না করেন।” মোহনদাস কে. গান্ধি, যীশু খ্রীষ্টের বার্তা (ইংরেজি)।

“এত সৃজনীশক্তিসম্পন্ন, এত পরিপূর্ণ, এত সংগতিপূর্ণ, এত নিখুঁত, এত মানবিক এবং মানুষের সমস্ত মহত্বের চেয়ে হাজার গুণ শ্রেষ্ঠ এক চরিত্র কখনও প্রতারণাপূর্ণ বা বানানো গল্প হতে পারে না। . . . কল্পনায় কোন যীশুকে রচনা করার জন্য যীশুর চেয়ে মহান কাউকে লাগবে।” ফিলিপ শেফ, খ্রীষ্টীয় গির্জার ইতিহাস (ইংরেজি)।

“কোন প্রজন্মের কয়েকজন সাধারণ লোক মিলে যদি বানিয়ে বানিয়ে এমন একজন ব্যক্তির গল্প লেখেন, যাঁর এক প্রখর ও আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব ছিল, যিনি উচ্চমানের নীতিগুলো মেনে জীবনযাপন করতেন ও মানব ভ্রাতৃসমাজ গড়ে তুলতে অনুপ্রেরণা দিয়েছিলেন, তাহলে তা এমন এক অলৌকিক ঘটনা হতো, যা সুসমাচারে লেখা যে কোন ঘটনার চেয়ে আরও বেশি অবিশ্বাস্য বলে মনে হতো।” উইল ডুরান্ট, সম্রাট ও খ্রীষ্ট (ইংরেজি)।

“অস্তিত্ব ছিল না এমন কোন ব্যক্তি সারা পৃথিবীতে কোন ধর্মীয় আন্দোলনের শুরু করতে পারেন ও প্রাচীন কালের কিছু ব্যক্তিরা সেই আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করবেন, তা বিশ্বাস করা বিভ্রান্তিকর বলেই মনে হয় কারণ অস্তিত্বে ছিলেন এমন অনেক লোকেরা শত চেষ্টা করেও তাদের ধর্মীয় আন্দোলনকে প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি।” গ্রেগ এস্টারব্রুক, প্রশান্ত জলের ধারে (ইংরেজি)।

‘একজন সাহিত্যিক ইতিহাসবেত্তা হিসেবে আমি হলফ করে বলতে পারি যে, সুসমাচারের বিবরণগুলো আর যা কিছুই হোক না কেন, পৌরাণিক কাহিনী হতে পারে না। এই বইগুলোতে কোন কথাই রংচঙ মাখিয়ে লেখা হয়নি যা আমরা পৌরাণিক কাহিনীগুলোতে দেখে থাকি। যীশুর জীবনের বেশির ভাগ বিষয়ই আমাদের অজানা আর পৌরাণিক কাহিনীর রচয়িতারা নিশ্চয়ই সেগুলো বাদ দিতে চাইতেন না।’ সি. এস. লুইস, ঈশ্বরকে নিয়ে তর্কবিতর্ক (ইংরেজি)।

[৭ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

সুসমাচারের বিবরণগুলো যীশুর বিভিন্ন অনুভূতি তুলে ধরে