সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

মঙ্গলভাব দেখিয়ে চলুন

মঙ্গলভাব দেখিয়ে চলুন

মঙ্গলভাব দেখিয়ে চলুন

“সর্ব্বপ্রকার মঙ্গলভাবে, ধার্ম্মিকতায় ও সত্যে দীপ্তির ফল হয়।”ইফিষীয় ৫:৯.

১. বর্তমানে লক্ষ লক্ষ লোক কীভাবে দেখাচ্ছেন যে তারা গীতসংহিতা ৩১:১৯ পদের কথাগুলোর সঙ্গে একমত?

 সমস্ত মানুষ সবচেয়ে ভাল যে কাজ করতে পারে, তা হল যিহোবার গৌরব নিয়ে আসা। আজকে, লক্ষ লক্ষ লোক ঈশ্বরের মঙ্গলভাবের জন্য তাঁর প্রশংসা করে তা করছেন। যিহোবার নিষ্ঠাবান সাক্ষি হিসেবে আমরা মনেপ্রাণে গীতরচকের সঙ্গে একমত, যিনি গেয়েছিলেন: “আহা! তোমার দত্ত মঙ্গল কেমন মহৎ, যাহা তুমি তোমার ভয়কারীদের জন্য সঞ্চয় করিয়াছ।”—গীতসংহিতা ৩১:১৯.

২, ৩. কী হতে পারে যদি আমাদের শিষ্য তৈরির কাজের সঙ্গে সঙ্গে ভাল আচার-আচরণ না দেখাই?

যিহোবার প্রতি সশ্রদ্ধ ভয় আমাদেরকে তাঁর মঙ্গলভাবের জন্য প্রশংসা করতে প্রেরণা দেয়। এছাড়াও, এটা আমাদেরকে ‘সদাপ্রভুর প্রশংসা করিতে, তাঁহার ধন্যবাদ করিতে, তাঁহার রাজ্যের গৌরবের কথা জানাইতে’ প্রেরণা দেয়। (গীতসংহিতা ১৪৫:১০-১৩) এই কারণেই আমরা উদ্যোগের সঙ্গে রাজ্যের প্রচার ও শিষ্য তৈরির কাজে অংশ নিই। (মথি ২৪:১৪; ২৮:১৯, ২০) অবশ্য, প্রচার কাজের সঙ্গে সঙ্গে আমাদেরকে ভাল আচার-আচরণও দেখাতে হবে। নতুবা আমরা যিহোবার পবিত্র নামের প্রতি নিন্দা নিয়ে আসতে পারি।

অনেক লোক ঈশ্বরকে উপাসনা করে বলে দাবি করে কিন্তু তাদের আচার-আচরণ, তাঁর অনুপ্রাণিত বাক্যে যে মানগুলো রয়েছে তার সঙ্গে মেলে না। যে লোকেরা ভাল কাজ করে বলে দাবি করে কিন্তু আসলে করে না, তাদের সম্বন্ধে প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “তুমি যে পরকে শিক্ষা দিতেছ, তুমি কি আপনাকে শিক্ষা দেও না? তুমি যে চুরি করিতে নাই বলিয়া প্রচার করিতেছ, তুমি কি চুরি করিতেছ? তুমি যে ব্যভিচার করিতে নাই বলিতেছ, তুমি কি ব্যভিচার করিতেছ? . . . যেমন লিখিত আছে, সেইরূপ ‘তোমাদের হইতে জাতিগণের মধ্যে ঈশ্বরের নাম নিন্দিত হইতেছে’।”—রোমীয় ২:২১, ২২, ২৪.

৪. আমাদের ভাল আচার-আচরণের কোন্‌ প্রভাব রয়েছে?

যিহোবার নামের ওপর নিন্দা নিয়ে আসার বদলে আমরা আমাদের ভাল আচার-আচরণের মাধ্যমে এর মহিমা নিয়ে আসার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করি। আর তা যারা খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর বাইরে রয়েছে তাদের ওপর ভাল প্রভাব ফেলে। একটা বিষয় হল যে, এটা আমাদের বিরোধীদের মুখ বন্ধ করে দিতে সাহায্য করে। (১ পিতর ২:১৫) সবচেয়ে জরুরি বিষয়টা হল, আমাদের ভাল আচার-আচরণ লোকেদেরকে যিহোবার সংগঠনের দিকে নিয়ে আসে এবং তাদের জন্য তাঁর গৌরব করার ও অনন্ত জীবন পাওয়ার পথ খুলে দেয়।—প্রেরিত ১৩:৪৮.

৫. আমাদের এখন কোন্‌ প্রশ্নগুলো বিবেচনা করে দেখা উচিত?

যেহেতু আমরা অসিদ্ধ, তাই কীভাবে আমরা এমন আচার-আচরণ এড়িয়ে চলতে পারি, যা যিহোবার অসম্মান নিয়ে আসতে পারে এবং সত্য অনুসন্ধানকারীদের বিঘ্ন জন্মাতে পারে? আসলে, মঙ্গলভাব দেখানোর ক্ষেত্রে কীভাবে আমরা সফল হতে পারি?

দীপ্তির ফল

৬. “অন্ধকারের ফলহীন কর্ম্ম সকলের” কয়েকটা কী কিন্তু খ্রীষ্টানদের মধ্যে কোন্‌ ফল দেখতে পাওয়া উচিত?

উৎসর্গীকৃত খ্রীষ্টান হিসেবে আমরা এমন কিছু উপভোগ করি, যা আমাদেরকে ‘অন্ধকারের ফলহীন কর্ম্ম সকল’ এড়িয়ে চলতে সাহায্য করে। এর মধ্যে রয়েছে ঈশ্বরের অসম্মান নিয়ে আসে এমন কাজগুলো যেমন, মিথ্যা বলা, চুরি করা, অশ্লীল ও যৌনতা সম্বন্ধে নোংরা কথাবার্তা বলা, কুৎসিত ব্যবহার, শ্লেষোক্তি এবং অতিরিক্ত মদ খাওয়া। (ইফিষীয় ৪:২৫, ২৮, ৩১; ৫:৩, ৪, ১১, ১২, ১৮) এইধরনের কাজগুলোতে নিজেদেরকে না জড়িয়ে আমরা ‘দীপ্তির সন্তানদের ন্যায় চলি।’ প্রেরিত পৌল বলেছেন, “সর্ব্বপ্রকার মঙ্গলভাবে, ধার্ম্মিকতায় ও সত্যে দীপ্তির ফল হয়।” (ইফিষীয় ৫:৮, ৯) তাই, সত্যে চলার মাধ্যমে আমরা মঙ্গলভাব দেখিয়ে চলতে পারব। কিন্তু, এটা কোন্‌ ধরনের দীপ্তি?

৭. আমরা যদি সবসময় মঙ্গলভাবের ফল দেখাতে চাই, তাহলে কী করতে হবে?

অসিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও, আমরা মঙ্গলভাব দেখাতে পারি যদি আমরা আধ্যাত্মিক দীপ্তিতে বা আলোতে চলি। গীতরচক গেয়েছিলেন, “তোমার বাক্য আমার চরণের প্রদীপ, আমার পথের আলোক।” (গীতসংহিতা ১১৯:১০৫) আমরা যদি সবসময় “সর্ব্বপ্রকার মঙ্গলভাবে” “দীপ্তির ফল” দেখাতে চাই, তাহলে আমাদেরকে অনবরত আধ্যাত্মিক জ্যোতি থেকে উপকার নিতে হবে, যা ঈশ্বরের বাক্যে পাওয়া যায় এবং যা খ্রীষ্টীয় প্রকাশনাগুলোতে মনোযোগ দিয়ে পরীক্ষা করা হয় ও উপাসনার জন্য সভাগুলোতে নিয়মিত আলোচনা করা হয়। (লূক ১২:৪২; রোমীয় ১৫:৪; ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) এছাড়া, আমাদেরকে “জগতের জ্যোতি” ও ‘[যিহোবার] প্রতাপের প্রভা’ যীশু খ্রীষ্টের উদাহরণ এবং শিক্ষাগুলোতে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে।—যোহন ৮:১২; ইব্রীয় ১:১-৩.

আত্মার ফল

৮. কেন আমরা মঙ্গলভাব দেখাতে পারি?

কোন সন্দেহ নেই যে, আধ্যাত্মিক আলো আমাদেরকে মঙ্গলভাব দেখাতে সাহায্য করে। এছাড়া আমাদের এই গুণ দেখানোর আরেকটা কারণ হল, আমরা যিহোবার পবিত্র আত্মা বা কার্যকারী শক্তির দ্বারা পরিচালিত হই। মঙ্গলভাব হল, “আত্মার” একটা ‘ফল।’ (গালাতীয় ৫:২২, ২৩) আমরা যদি যিহোবার পবিত্র আত্মার নির্দেশনা মেনে নিই, তাহলে এটা আমাদের মধ্যে মঙ্গলভাবের উত্তম ফল উৎপন্ন করবে।

৯. লূক ১১:৯-১৩ পদে দেওয়া যীশুর কথাগুলোর সঙ্গে আমরা কীভাবে মিল রেখে কাজ করতে পারি?

আত্মার ফল মঙ্গলভাব দেখিয়ে, যিহোবাকে খুশি করার জন্য আমাদের আন্তরিক ইচ্ছা আমাদেরকে যীশুর এই কথাগুলোর সঙ্গে মিল রেখে কাজ করতে প্রেরণা দেয়: “যাচ্ঞা কর, তোমাদিগকে দেওয়া যাইবে; অন্বেষণ কর, পাইবে; দ্বারে আঘাত কর, তোমাদের জন্য খুলিয়া দেওয়া যাইবে। কেননা যে কেহ যাচ্ঞা করে, সে গ্রহণ করে, এবং যে অন্বেষণ করে, সে পায়; আর যে দ্বারে আঘাত করে, তাহার জন্য খুলিয়া দেওয়া যাইবে। তোমাদের মধ্যে এমন পিতা কে, যাহার পুত্ত্র রুটী চাহিলে তাহাকে পাথর দিবে? কিম্বা মাছ চাহিলে মাছের পরিবর্ত্তে সাপ দিবে? কিম্বা ডিম চাহিলে তাহাকে বৃশ্চিক দিবে? অতএব তোমরা [অসিদ্ধ আর তাই তুলনামূলকভাবে] মন্দ হইয়াও যদি তোমাদের সন্তানদিগকে উত্তম উত্তম দ্রব্য দান করিতে জান, তবে ইহা কত অধিক নিশ্চয় যে, স্বর্গস্থ পিতা, যাহারা তাঁহার কাছে যাচ্ঞা করে, তাহাদিগকে পবিত্র আত্মা দান করিবেন।” (লূক ১১:৯-১৩) আসুন যিহোবার আত্মা চেয়ে প্রার্থনা করে আমরা যীশুর পরামর্শ মেনে চলি, যাতে সবসময় মঙ্গলভাবের ফল দেখাতে পারি।

‘সদাচরণ করিয়া চলুন’

১০. যিহোবার মঙ্গলভাবের কোন্‌ দিকগুলো যাত্রাপুস্তক ৩৪:৬, ৭ পদে উল্লেখ করা হয়েছে?

১০ ঈশ্বরের বাক্যের আধ্যাত্মিক আলোয় এবং ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার সাহায্যে আমরা ‘সদাচরণ করিয়া চলিতে’ পারি। (রোমীয় ১৩:৩) নিয়মিত বাইবেল অধ্যয়নের মাধ্যমে আমরা আরও বেশি করে জানতে পারব যে, আমরা কীভাবে যিহোবার মঙ্গলভাবকে অনুকরণ করতে পারি। আগের প্রবন্ধে ঈশ্বরের মঙ্গলভাবের কিছু দিক বিবেচনা করা হয়েছে, যা যাত্রাপুস্তক ৩৪:৬, ৭ (NW) পদে মোশির কাছে ঘোষণা করার সময়ে উল্লেখ করা হয়েছিল, যেখানে আমরা পড়ি: “যিহোবা, যিহোবা, করুণাময় ও সদয় ঈশ্বর, ক্রোধে ধীর এবং প্রেমপূর্ণ-দয়া ও সত্যে মহান; সহস্র সহস্র পুরুষ পর্যন্ত প্রেমপূর্ণ-দয়া দেখান এবং অপরাধ, অন্যায় ও পাপ ক্ষমা করেন; কিন্তু তিনি কোনভাবেই শাস্তি থেকে রেহাই দেবেন না।” যিহোবার মঙ্গলভাবের এই দিকগুলো ভাল করে বিবেচনা করা আমাদেরকে ‘সদাচরণ করিয়া চলিতে’ সাহায্য করবে।

১১. যিহোবা যে করুণাময় এবং সদয়, তা জেনে আমাদের কীভাবে প্রভাবিত হওয়া উচিত?

১১ ঈশ্বরের কাছ থেকে এই ঘোষণা আমাদেরকে করুণাময় এবং সদয় হয়ে যিহোবাকে অনুকরণ করার প্রয়োজন সম্বন্ধে সর্তক করে। যীশু বলেছিলেন: “সুখী তারাই, যারা করুণাময়, কারণ তাদেরকে করুণা দেখানো হবে।” (মথি ৫:৭; লূক ৬:৩৬, NW) যিহোবা যে সদয়, তা জেনে আমরা অন্যদের ও সেইসঙ্গে যাদের কাছে প্রচার করি তাদের প্রতি সদয় হওয়ার ও হাসিখুশি মনোভাব দেখানোর প্রেরণা পাই। এটা পৌলের পরামর্শের সঙ্গে মিলে যায়: “তোমাদের বাক্য সর্ব্বদা অনুগ্রহ সহযুক্ত [“সদয়,” NW] হউক, লবণে আস্বাদযুক্ত হউক, কাহাকে কেমন উত্তর দিতে হয়, তাহা যেন তোমরা জানিতে পার।”—কলসীয় ৪:৬.

১২. (ক) যেহেতু ঈশ্বর ক্রোধে ধীর, তাই অন্যদের সঙ্গে আমাদের কেমন ব্যবহার করা উচিত? (খ) যিহোবার প্রেমপূর্ণ-দয়া আমাদেরকে কী করতে প্রেরণা দেয়?

১২ যেহেতু ঈশ্বর ক্রোধে ধীর, তাই আমাদের ‘সদাচরণ করিয়া চলিবার’ ইচ্ছা আমাদেরকে সহ বিশ্বাসীদের ছোটখাটো ভুলগুলো মেনে নিতে এবং তাদের ভাল গুণগুলোর দিকে মনোযোগ দিতে প্রেরণা দেয়। (মথি ৭:৫; যাকোব ১:১৯) যিহোবার প্রেমপূর্ণ-দয়া আমাদেরকে এমনকি কষ্টকর পরিস্থিতিতেও নিষ্ঠাপূর্ণ প্রেম দেখাতে প্রেরণা দেয়। আর সত্যিই তা সকলের কাছে খুবই উত্তম।—হিতোপদেশ ১৯:২২.

১৩. যিহোবা যে “সত্যে মহান,” তা দেখানোর জন্য আমাদের কী করা উচিত?

১৩ যেহেতু আমাদের স্বর্গীয় পিতা “সত্যে মহান,” তাই আমরা ‘সত্যের বাক্যে ঈশ্বরের পরিচারক বলিয়া আপনাদিগকে যোগ্যপাত্র দেখাইবার’ চেষ্টা করি। (২ করিন্থীয় ৬:৩-৭) যে সাতটা বিষয়কে যিহোবা ঘৃণা করেন তার মধ্যে রয়েছে “মিথ্যাবাদী জিহ্বা” এবং “যে মিথ্যাসাক্ষী অসত্য কথা কহে।” (হিতোপদেশ ৬:১৬-১৯) তাই ঈশ্বরকে খুশি করার জন্য আমাদের যে ইচ্ছা, তা আমাদেরকে ‘যাহা মিথ্যা, তাহা ত্যাগ করিয়া সত্য আলাপ করিতে’ প্রেরণা দেয়। (ইফিষীয় ৪:২৫) আসুন আমরা যেন কখনও এই গুরুত্বপূর্ণ উপায়ে মঙ্গলভাব দেখাতে ব্যর্থ না হই।

১৪. কেন আমরা অন্যদের ক্ষমা করব?

১৪ মোশির কাছে করা ঈশ্বরের ঘোষণা আমাদেরকে অন্যদের ক্ষমা করতে পরিচালিত করে কারণ যিহোবা ক্ষমা করার জন্য তৈরি আছেন। (মথি ৬:১৪, ১৫) অবশ্য, অনুতপ্ত নয় এমন পাপীদের যিহোবা শাস্তি দেন। তাই মণ্ডলীতে আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে শুদ্ধতা বজায় রাখার জন্য আমাদেরকে তাঁর মঙ্গলভাবের মানকে তুলে ধরতে হবে।—লেবীয় পুস্তক ৫:১; ১ করিন্থীয় ৫:১১, ১২; ১ তীমথিয় ৫:২২.

‘ভাল করিয়া দেখিয়া চলুন’

১৫, ১৬. ইফিষীয় ৫:১৫-১৯ পদে দেওয়া পৌলের পরমার্শ কীভাবে আমাদেরকে সবসময় মঙ্গলভাব দেখাতে সাহায্য করতে পারে?

১৫ আমাদের চারপাশের মন্দতা সত্ত্বেও মঙ্গলভাব দেখিয়ে চলার জন্য আমাদেরকে ঈশ্বরের আত্মা দ্বারা পরিপূর্ণ হওয়ার এবং আমরা কীভাবে চলছি, তা ভাল করে দেখা দরকার। তাই ইফিষের খ্রীষ্টানদেরকে পৌল পরামর্শ দিয়েছিলেন: “তোমরা ভাল করিয়া দেখ, কিরূপে চলিতেছ; অজ্ঞানের ন্যায় না চলিয়া জ্ঞানবানের ন্যায় চল। সুযোগ কিনিয়া লও, কেননা এই কাল মন্দ। এই কারণ নির্ব্বোধ হইও না, কিন্তু প্রভুর ইচ্ছা কি, তাহা বুঝ। আর দ্রাক্ষারসে মত্ত হইও না, তাহাতে নষ্টামি আছে; কিন্তু আত্মাতে পরিপূর্ণ হও; গীত, স্তোত্র ও আত্মিক সঙ্কীর্ত্তনে পরস্পর আলাপ কর; আপন আপন অন্তঃকরণে প্রভুর উদ্দেশে গান ও বাদ্য কর।” (ইফিষীয় ৫:১৫-১৯) এই বিষম সময়ে এই পরামর্শ আমাদের জন্য যে খুবই উপযুক্ত, তা একেবারে নিশ্চিত।—২ তীমথিয় ৩:১.

১৬ আমরা যদি সবসময় মঙ্গলভাব দেখাতে চাই, তাহলে আমাদেরকে ভাল করে দেখে চলতে হবে যে, যারা ঈশ্বরীয় প্রজ্ঞা অনুশীলন করেন আমরা তাদের মতো চলছি কি না। (যাকোব ৩:১৭) আমাদেরকে গুরুতর পাপগুলো এড়িয়ে চলতে, পবিত্র আত্মায় পরিপূর্ণ হতে এবং নিজেদেরকে এর দ্বারা পরিচালিত করতে হবে। (গালাতীয় ৫:১৯-২৫) খ্রীষ্টীয় সভা, অধিবেশন এবং সম্মেলনগুলোতে যে আধ্যাত্মিক নির্দেশনা দেওয়া হয়, তা কাজে লাগিয়ে আমরা সবসময় ভাল কাজ করতে পারি। এছাড়া, ইফিষীয়দের কাছে লেখা পৌলের কথাগুলো আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয় যে, বেশির ভাগ সময় উপাসনার জন্য একত্রিত হয়ে আমরা আন্তরিকভাবে ‘আত্মিক সঙ্কীর্ত্তন’ করে উপকার পাই, যেগুলোর বেশির ভাগই আধ্যাত্মিক গুণাবলি, যেমন মঙ্গলভাবকে তুলে ধরে।

১৭. গুরুতর অসুস্থতার জন্য যে খ্রীষ্টানরা নিয়মিত সভাগুলোতে আসতে পারেন না, তারা কোন্‌ বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারেন?

১৭ আমাদের সহ বিশ্বাসীদের সম্বন্ধে কী বলা যায়, যারা কোন গুরুতর অসুস্থতার জন্য নিয়মিত খ্রীষ্টীয় সভাগুলোতে আসতে পারেন না? আধ্যাত্মিক ভাইবোনদের সঙ্গে থেকে সবসময় যিহোবার উপাসনা করতে পারেন না বলে তারা হয়তো উৎসাহ হারিয়ে ফেলতে পারেন। কিন্তু তারা নিশ্চিত থাকতে পারেন যে যিহোবা তাদের অবস্থা বোঝেন, তাদেরকে সত্যে রাখবেন, পবিত্র আত্মা দেবেন এবং ভাল কাজ করে চলতে সাহায্য করবেন।—যিশাইয় ৫৭:১৫.

১৮. কী আমাদেরকে মঙ্গলভাবের কাজ করে চলতে সাহায্য করবে?

১৮ মঙ্গলভাব দেখিয়ে চলার জন্য আমাদের বন্ধুবান্ধব বাছাই করার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে এবং যারা “সদ্‌বিদ্বেষী” তাদের কাছ থেকে দূরে থাকতে হবে। (২ তীমথিয় ৩:২-৫; ১ করিন্থীয় ১৫:৩৩) এই পরামর্শ কাজে লাগালে তা আমাদেরকে পবিত্র আত্মার নির্দেশনার বিপরীত কাজ করে ‘ঈশ্বরের সেই পবিত্র আত্মাকে দুঃখিত করাকে’ এড়িয়ে চলতে সাহায্য করবে। (ইফিষীয় ৪:৩০) এছাড়া, যে সমস্ত ব্যক্তিদের জীবনযাপন দেখায় যে তারা মঙ্গলভাব ভালবাসেন এবং যিহোবার পবিত্র আত্মা দ্বারা পরিচালিত হন, তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা করে আমরা ভাল কাজ করার জন্য সাহায্য পাব।—আমোষ ৫:১৫; রোমীয় ৮:১৪; গালাতীয় ৫:১৮.

মঙ্গলভাব বিভিন্ন উত্তম ফল নিয়ে আসে

১৯-২১. মঙ্গলভাব দেখানো যে ভাল ছাপ ফেলে তার কয়েকটা উদাহরণ দিন।

১৯ আধ্যাত্মিক আলোয় চললে, ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার নির্দেশনা মেনে নিলে এবং আমরা কীভাবে চলছি তা ভাল করে দেখলে, আমরা যা খারাপ তা এড়িয়ে চলতে এবং ‘সদাচরণ করিয়া চলিতে’ সাহায্য পাব। এছাড়া, এটা বিভিন্ন উত্তম ফল নিয়ে আসে। দক্ষিণ আফ্রিকার জংজিল নামে একজন যিহোবার সাক্ষির উদাহরণ বিবেচনা করুন। একদিন সকালে স্কুলে যাওয়ার পথে সে তার সামান্য জমানো টাকা চেক করার জন্য যায়। অটোমেটিক টেলার মেশিন থেকে যে রসিদ বের হয়ে এসেছিল তাতে ভুলভাবে আরও ৪২,০০০ র্‌যান্ড (৬,০০০ মার্কিন ডলার) বেশি দেখা যায়। ব্যাংকের নিরাপত্তা রক্ষী এবং অন্যেরা তাকে সেই টাকা তার নামে তুলে নিয়ে আরেকটা ব্যাংকে জমা রাখার পরামর্শ দেন। যে সাক্ষি পরিবারের সঙ্গে সে থাকত শুধু তারাই তাকে সেখান থেকে কোন টাকা না তোলার জন্য প্রশংসা করেন।

২০ পরের দিন ব্যাংকে গিয়ে জংজিল এই ভুল সম্বন্ধে জানায়। পরে জানা যায় যে, তার এবং একজন ব্যবসায়ীর আ্যকাউন্ট নম্বর প্রায় একরকম থাকায় সেই ব্যবসায়ী ভুল করে তার আ্যকাউন্টে টাকা জমা রেখেছিলেন। জংজিল সেই টাকা থেকে একটা টাকাও খরচ করেনি দেখে সেই ব্যবসায়ী অবাক হয়ে তাকে জিজ্ঞেস করেন: “তোমার ধর্ম কী?” জংজিল বলে যে সে একজন যিহোবার সাক্ষি। ব্যাংকের কর্মকর্তারা এই বলে তাকে সাগ্রহে প্রশংসা করেন: “আমরা চাই সমস্ত লোক যিহোবার সাক্ষিদের মতো সৎ হোক।” সত্যি বলতে কী, সৎ এবং মঙ্গলভাবের কাজ দেখে অন্যেরা যিহোবার গৌরব করে।—ইব্রীয় ১৩:১৮.

২১ ভাল ছাপ ফেলার জন্য মঙ্গলভাবের কাজ যে একেবারে নাটকীয় হতে হবে এমন নয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়: সামোয়ার একটা দ্বীপে পূর্ণ-সময়ের কাজ করেন, এমন একজন যুবক সাক্ষি স্থানীয় এক হাসপাতালে গিয়েছিলেন। লোকেরা ডাক্তার দেখানোর জন্য অপেক্ষা করছিলেন এবং সেই সাক্ষি লক্ষ্য করেন যে অত্যন্ত অসুস্থ এক বয়স্কা মহিলা তার পাশে বসে আছেন। তিনি সেই মহিলাকে তার আগে যাওয়ার সুযোগ দেন, যাতে তিনি শীঘ্রিই ডাক্তার দেখাতে পারেন। পরে একসময় বাজারে গিয়ে সেই বয়স্কা মহিলার সঙ্গে তার আবার দেখা হয়। তিনি তাকে এবং হাসপাতালে তার ভাল কাজের কথা মনে রেখেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “এখন আমি বুঝতে পেরেছি যে যিহোবার সাক্ষিরা সত্যিই তাদের প্রতিবেশীদেরকে ভালবাসেন।” আগে যেখানে রাজ্যের বার্তার প্রতি তিনি সাড়া দেননি, এখন একজন সাক্ষি তাকে যে মঙ্গলভাব দেখিয়েছিলেন তা তার ওপর ভাল ছাপ ফেলেছিল। তিনি গৃহ বাইবেল অধ্যয়ন করতে রাজি হন এবং ঈশ্বরের বাক্য থেকে জ্ঞান নিতে শুরু করেন।

২২. ‘সদাচরণ করিয়া চলিবার’ একটা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ উপায় কী?

২২ সম্ভবত আপনারও এইরকম অভিজ্ঞতা রয়েছে, যা মঙ্গলভাব দেখানোর গুরুত্বকে তুলে ধরে। ‘সদাচরণ করিয়া চলিবার’ একটা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ উপায় হল, নিয়মিত ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার কাজে অংশ নেওয়া। (মথি ২৪:১৪) আমরা যেন সবসময় এই মূল্যবান কাজে উদ্যোগের সঙ্গে অংশ নিই এবং উপলব্ধি করি যে, এটা হল বিশেষ করে যারা সাড়া দেয় তাদের জন্য ভাল কাজ করার একটা উপায়। সবচেয়ে জরুরি হল যে আমাদের পরিচর্যা এবং ভাল কাজ যিহোবার গৌরব নিয়ে আসে, যিনি হলেন মঙ্গলভাবের উৎস।—মথি ১৯:১৬, ১৭.

“সৎকর্ম্ম” করে চলুন

২৩. খ্রীষ্টীয় পরিচর্যা কেন একটা ভাল কাজ?

২৩ কোন সন্দেহ নেই যে, আমাদের পরিচর্যা একটা ভাল কাজ। এটা আমাদের এবং যারা বাইবেলের বার্তা শোনে তাদের জন্য পরিত্রাণ নিয়ে আসতে পারে আর এভাবে অনন্ত জীবনের পথে এগিয়ে যাওয়া যায়। (মথি ৭:১৩, ১৪; ১ তীমথিয় ৪:১৬) আমাদেরকে যখন বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তখন ভাল কাজ করার ইচ্ছা হয়তো আমাদের মনে এই প্রশ্ন জাগাতে পারে: ‘এই সিদ্ধান্ত আমার রাজ্যের প্রচার কাজের ওপর কেমন ছাপ ফেলবে? আমি যা করতে চাই তা কি সত্যিই উপকারী? “অনন্তকালীন সুসমাচার” গ্রহণ করতে অন্যদের সহযোগিতা করার এবং যিহোবা ঈশ্বরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য এটা কী আমাকে সাহায্য করবে?’ (প্রকাশিত বাক্য ১৪:৬) যে সিদ্ধান্ত রাজ্যের আগ্রহকে তুলে ধরে তা প্রচুর সুখ নিয়ে আসবে।—মথি ৬:৩৩; প্রেরিত ২০:৩৫.

২৪, ২৫. মণ্ডলীতে কিছু ভাল কাজ করার উপায় কী এবং আমরা যদি মঙ্গলভাব দেখিয়ে চলি, তাহলে কোন্‌ বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারি?

২৪ আসুন আমরা যেন কখনও মঙ্গলভাবের উপকারগুলোকে ছোট করে না দেখি। খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীকে সমর্থন করে এবং এর মঙ্গলের জন্য কাজ করে আমরা সবসময় এই গুণ দেখিয়ে চলতে পারি। আমরা যখন নিয়মিত সভায় যোগ দিই এবং এতে অংশ নিই, তখন সত্যিই আমরা ভাল কাজ করি। আমাদের উপস্থিতিতে সহ বিশ্বাসীরা উৎসাহ পান এবং ভাল করে তৈরি আমাদের উত্তরগুলো শুনে তারা আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে গড়ে ওঠেন। এছাড়া, কিংডম হলের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আমরা যখন আমাদের বস্তুগত সম্পদ ব্যয় করি এবং এর সঠিক যত্ন নেওয়ার জন্য সাহায্য করি, তখন আমরা ভাল কাজ করি। (২ রাজাবলি ২২:৩-৭; ২ করিন্থীয় ৯:৬, ৭) সত্যিই, “আমরা যেমন সুযোগ পাই, তেমনি সকলের প্রতি, বিশেষতঃ যাহারা বিশ্বাস-বাটীর পরিজন, তাহাদের প্রতি সৎকর্ম্ম করি।”—গালাতীয় ৬:১০.

২৫ যে সমস্ত পরিস্থিতিতে মঙ্গলভাব দেখানো দরকার হতে পারে, তা হয়তো আমরা আগে থেকে বলতে পারি না। আমরা যখন কঠিন সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হই, তখন আসুন আমরা শাস্ত্র থেকে আলো খুঁজি, যিহোবার আত্মার জন্য প্রার্থনা করি এবং তাঁর উত্তম ও সঠিক ইচ্ছা পালন করার জন্য প্রাণপণ করি। (রোমীয় ২:৯, ১০; ১২:২) আমরা আস্থা রাখতে পারি যে, আমরা যদি মঙ্গলভাব দেখিয়ে চলি, তাহলে যিহোবা আমাদেরকে প্রচুর আশীর্বাদ করবেন।

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• কীভাবে আমরা সবচেয়ে ভাল কাজ করতে পারি?

• মঙ্গলভাবকে কেন ‘দীপ্তির একটা ফল’ বলা হয়?

• মঙ্গলভাবকে কেন ‘আত্মার একটা ফল’ বলা হয়?

• আমাদের ভাল আচার-আচরণের কোন্‌ প্রভাব রয়েছে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

ঈশ্বরের বাক্য এবং পবিত্র আত্মা আমাদেরকে মঙ্গলভাব দেখাতে সাহায্য করে

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

মঙ্গলভাব দেখানো বিভিন্ন উত্তম ফল নিয়ে আসে