সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ঈশ্বর যাদেরকে ভালবাসেন তাদের মাঝে কি আপনি আছেন?

ঈশ্বর যাদেরকে ভালবাসেন তাদের মাঝে কি আপনি আছেন?

ঈশ্বর যাদেরকে ভালবাসেন তাদের মাঝে কি আপনি আছেন?

“যে ব্যক্তি আমার আজ্ঞা সকল প্রাপ্ত হইয়া সে সকল পালন করে, সেই আমাকে প্রেম করে; আর যে আমাকে প্রেম করে, আমার পিতা তাহাকে প্রেম করিবেন।”যোহন ১৪:২১.

১, ২. (ক) মানবজাতির প্রতি যিহোবা কীভাবে তাঁর ভালবাসা দেখিয়েছেন? (খ) সা.কা. ৩৩ সালের ১৪ই নিশান রাতে যীশু কোন্‌ অনুষ্ঠান প্রবর্তন করেছিলেন?

 যিহোবা তাঁর সৃষ্ট মানুষকে ভালবাসেন। আসলে, তিনি মানবজাতিকে “এমন” ভালবাসেন “যে, আপনার একজাত পুত্ত্রকে দান করিলেন, যেন, যে কেহ তাঁহাতে বিশ্বাস করে, সে বিনষ্ট না হয়, কিন্তু অনন্ত জীবন পায়।” (যোহন ৩:১৬) খ্রীষ্টের মৃত্যুর স্মরণার্থক দিন যত এগিয়ে আসছে, সত্য খ্রীষ্টানদের এখন আগের চেয়ে আরও বেশি উপলব্ধি করা দরকার যে, যিহোবা “আমাদিগকে প্রেম করিলেন, এবং আপন পুত্ত্রকে আমাদের পাপার্থক প্রায়শ্চিত্ত হইবার জন্য প্রেরণ করিলেন।”—১ যোহন ৪:১০.

সাধারণ কাল ৩৩ সালের ১৪ই নিশান রাতে যীশু ও তাঁর ১২ জন প্রেরিত, মিশর থেকে ইস্রায়েলীয়দের উদ্ধারের বিষয় স্মরণে নিস্তারপর্ব উদ্‌যাপন করতে যিরূশালেমের একটা ওপরের কুঠরীতে একত্র হয়েছিলেন। (মথি ২৬:১৭-২০) যিহুদিদের এই উৎসব উদ্‌যাপন করার পর, ঈষ্করিয়োতীয় যিহূদাকে যীশু বের করে দিয়েছিলেন এবং এক স্মরণীয় ভোজ প্রবর্তন করেছিলেন, যেটা খ্রীষ্টানদের জন্য পরে খ্রীষ্টের মৃত্যুর স্মরণার্থক সভা হয়। * তাঁর দেহ ও রক্তের প্রতীক বা চিহ্নস্বরূপ তাড়ীশূন্য রুটি ও লাল দ্রাক্ষারস ব্যবহার করে, যীশু তাঁর বাকি ১১ জন প্রেরিতকে নিয়ে এই ভোজে অংশ নিয়েছিলেন। মথি, মার্ক ও লূক সুসমাচারের লেখকরা এবং প্রেরিত পৌল—এটাকে “প্রভুর [“সান্ধ্য,” NW] ভোজ” বলেন—এই অনুষ্ঠানের বিষয়ে বিশদভাবে বর্ণনা করেছিলেন।—১ করিন্থীয় ১১:২০; মথি ২৬:২৬-২৮; মার্ক ১৪:২২-২৫; লূক ২২:১৯, ২০.

৩. ওপরের কুঠরীতে যীশু তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে শেষ যে সময়টুকু কাটিয়েছিলেন, সেই বিষয়ে প্রেরিত যোহনের বিবরণ কোন্‌ গুরুত্বপূর্ণ দিক দিয়ে অন্যদের থেকে আলাদা?

আগ্রহের বিষয় হল, প্রেরিত যোহন রুটি ও দ্রাক্ষারস ঘোরানোর বিষয়ে কিছুই উল্লেখ করেননি। এর কারণ সম্ভবত তিনি যখন (সা.কা. প্রায় ৯৮ সালে) সুসমাচারের বিবরণ লিখেছিলেন, সেই সময়ে প্রাথমিক খ্রীষ্টানদের মধ্যে এই পদ্ধতিটা ভালভাবে জানা হয়ে গিয়েছিল। (১ করিন্থীয় ১১:২৩-২৬) কিন্তু, আত্মার অনুপ্রেরণায় একা যোহনই আমাদেরকে যীশু তাঁর মৃত্যুর স্মরণার্থক সভা প্রবর্তন করার ঠিক আগে ও পরে যা যা বলেছিলেন ও করেছিলেন, সেই সম্বন্ধে কিছু মূল্যবান তথ্য জানান। এই রোমাঞ্চকর বিস্তারিত বিষয়গুলো যোহনের সুসমাচারের পাঁচটা অধ্যায়ে লেখা রয়েছে। সেগুলো স্পষ্টভাবে বর্ণনা করে যে, কীধরনের ব্যক্তিদেরকে ঈশ্বর ভালবাসেন। আসুন আমরা যোহন ১৩ থেকে ১৭ অধ্যায়গুলো পরীক্ষা করে দেখি।

যীশুর উদাহরণযোগ্য ভালবাসা থেকে শিখুন

৪. (ক) যীশু তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে একত্রিত হয়ে যখন স্মরণার্থক সভা প্রবর্তন করেছিলেন, তখন মূল বিষয়ের ওপর যোহন কীভাবে জোর দিয়েছিলেন? (খ) যিহোবা যে যীশুকে ভালবাসেন তার একটা প্রধান কারণ কী?

এই অধ্যায়গুলোতে যীশুর অনুগামীদেরকে দেওয়া বিদায়ী পরামর্শের মূল বিষয় হচ্ছে ভালবাসা। সত্যি বলতে কী, “প্রেম” শব্দটাকে বিভিন্নভাবে সেখানে ৩১ বার উল্লেখ করা হয়েছে। পিতা যিহোবা এবং শিষ্যদের জন্য যীশুর গভীর ভালবাসার বিষয়টা এই অধ্যায়গুলোর মতো আর কোথাও এত স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়নি। যিহোবার জন্য যীশুর ভালবাসা তাঁর জীবন সম্বন্ধীয় প্রত্যেকটা সুসমাচারের বিবরণে স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে কিন্তু একমাত্র যোহনই যীশুর বলা এই কথাগুলো লিখেছেন: “আমি পিতাকে প্রেম করি।” (যোহন ১৪:৩১) এছাড়াও যীশু বলেছিলেন যে যিহোবা তাঁকে ভালবাসেন ও বুঝিয়ে দিয়েছিলেন কেন ভালবাসেন। তিনি বলেছিলেন: “পিতা যেমন আমাকে প্রেম করিয়াছেন, আমিও তেমনি তোমাদিগকে প্রেম করিয়াছি; তোমরা আমার প্রেমে অবস্থিতি কর। তোমরা যদি আমার আজ্ঞা সকল পালন কর, তবে আমার প্রেমে অবস্থিতি করিবে, যেমন আমিও আমার পিতার আজ্ঞা সকল পালন করিয়াছি, এবং তাঁহার প্রেমে অবস্থিতি করিতেছি।” (যোহন ১৫:৯, ১০) হ্যাঁ, যিহোবা তাঁর পুত্রকে ভালবাসেন কারণ তিনি তাঁর প্রতি সম্পূর্ণ বাধ্য ছিলেন। যীশু খ্রীষ্টের সমস্ত অনুগামীদের জন্য কত সুন্দর এক শিক্ষা!

৫. কীভাবে যীশু তাঁর শিষ্যদের জন্য ভালবাসা দেখিয়েছিলেন?

যীশুর অনুগামীদের প্রতি তাঁর গভীর ভালবাসার কথা, প্রেরিতদের সঙ্গে করা যীশুর শেষ সভার বিষয়ে যোহনের বিবরণের একেবারে শুরুতেই তুলে ধরা হয়েছে। যোহন বর্ণনা করেছিলেন: “নিস্তারপর্ব্বের পূর্ব্বে যীশু, এই জগৎ হইতে পিতার কাছে আপনার প্রস্থান করিবার সময় উপস্থিত জানিয়া, জগতে অবস্থিত আপনার নিজস্ব যে লোকদিগকে প্রেম করিতেন, তাহাদিগকে শেষ পর্য্যন্ত প্রেম করিলেন।” (যোহন ১৩:১) ওই স্মরণীয় সন্ধ্যায়, অন্যদের প্রেম দেখিয়ে সেবা করে তিনি তাদেরকে এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দিয়েছিলেন, যা কখনও ভোলা যায় না। তিনি তাদের পা ধুয়ে দিয়েছিলেন। এই কাজটা যীশু ও তাদের ভাইদের জন্য শিষ্যদের প্রত্যেকের স্বেচ্ছায় করা উচিত ছিল কিন্তু তারা তা করেননি। এই ছোট কাজটা যীশু করেছিলেন এবং এরপর তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন: “আমি প্রভু ও গুরু হইয়া যখন তোমাদের পা ধুইয়া দিলাম, তখন তোমাদেরও পরস্পরের পা ধোয়ান উচিত? কেননা আমি তোমাদিগকে দৃষ্টান্ত দেখাইলাম, যেন তোমাদের প্রতি আমি যেমন করিয়াছি, তোমরাও তদ্রূপ কর।” (যোহন ১৩:১৪, ১৫) সত্য খ্রীষ্টানদের তাদের ভাইদের সেবা করার জন্য ইচ্ছুক ও খুশি হওয়া উচিত।—মথি ২০:২৬, ২৭; যোহন ১৩:১৭.

নতুন আজ্ঞা মেনে চলুন

৬, ৭. (ক) স্মরণার্থক সভা প্রবর্তন করার সময়ে যোহন কোন্‌ গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটা জানিয়েছিলেন? (খ) যীশু তাঁর শিষ্যদের কোন্‌ নতুন আজ্ঞা দিয়েছিলেন এবং এটার মধ্যে নতুন কী ছিল?

১৪ই নিশান রাতে ওপরের কুঠরীতে যা হয়েছিল সেই সম্বন্ধে একমাত্র যোহনের বিবরণেই নির্দিষ্ট করে ঈষ্করিয়োতীয় যিহূদার বের হয়ে যাওয়ার কথা বলা আছে। (যোহন ১৩:২১-৩০) সুসমাচারের ঘটনাগুলো একসঙ্গে মিলিয়ে দেখা যায় যে, এই বিশ্বাসঘাতক বেরিয়ে যাবার পরই যীশু তাঁর মৃত্যুর স্মরণার্থক সভা প্রবর্তন করেছিলেন। এরপর তিনি তাঁর বিশ্বস্ত প্রেরিতদের সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলেছিলেন, তাদেরকে বিদায়ী পরামর্শ ও নির্দেশনা দিয়েছিলেন। স্মরণার্থক সভায় উপস্থিত থাকার জন্য নিজেদেরকে তৈরি করার সঙ্গে সঙ্গে সেই অনুষ্ঠানে যীশু কী বলেছিলেন, সেই বিষয়ের প্রতি আমাদের বেশি আগ্রহী হওয়া উচিত আর এর বিশেষ কারণটা হল আমরা সেই ব্যক্তিদের মধ্যে থাকতে চাই, যাদেরকে ঈশ্বর ভালবাসেন।

যীশু তাঁর মৃত্যুর স্মরণার্থক সভা প্রবর্তন করার পরপরই সবচেয়ে প্রথমে যে নির্দেশনাটা দিয়েছিলেন, তা নতুন কিছু ছিল। তিনি ঘোষণা করেছিলেন: “এক নূতন আজ্ঞা আমি তোমাদিগকে দিতেছি, তোমরা পরস্পর প্রেম কর; আমি যেমন তোমাদিগকে প্রেম করিয়াছি, তোমরাও তেমনি পরস্পর প্রেম কর। তোমরা যদি আপনাদের মধ্যে পরস্পর প্রেম রাখ, তবে তাহাতেই সকলে জানিবে যে, তোমরা আমার শিষ্য।” (যোহন ১৩:৩৪, ৩৫) এই আজ্ঞার মধ্যে নতুন কী ছিল? ওই সন্ধ্যায় কিছু পরে, যীশু এই কথা বলে বিষয়গুলোকে স্পষ্ট করেছিলেন: “আমার আজ্ঞা এই, তোমরা পরস্পর প্রেম কর, যেমন আমি তোমাদিগকে প্রেম করিয়াছি। কেহ যে আপন বন্ধুদের নিমিত্ত নিজ প্রাণ সমর্পণ করে, ইহা অপেক্ষা অধিক প্রেম কাহারও নাই।” (যোহন ১৫:১২, ১৩) মোশির ব্যবস্থায় আদেশ দেওয়া হয়েছিল যে, ইস্রায়েলীয়রা ‘তাহাদের প্রতিবাসীকে আপনার মতো প্রেম করিবে।’ (লেবীয় পুস্তক ১৯:১৮) কিন্তু, যীশুর আদেশ আরও বেশি কিছু করতে বলেছিল। খ্রীষ্ট যেমন তাদেরকে ভালবেসেছিলেন, খ্রীষ্টানদের ঠিক সেভাবে ভালবাসতে হবে, তাদের ভাইদের জন্য নিজেদের জীবন পর্যন্ত উৎসর্গ করার জন্য ইচ্ছুক হতে হবে।

৮. (ক) আত্মত্যাগমূলক ভালবাসার মধ্যে কী জড়িত? (খ) আজকে যিহোবার সাক্ষিরা কীভাবে আত্মত্যাগমূলক ভালবাসা দেখান?

স্মরণার্থক মরশুম হল ব্যক্তিগতভাবে ও মণ্ডলীগতভাবে নিজেদেরকে পরীক্ষা করে দেখার এক উপযুক্ত সময় যে, সত্য খ্রীষ্টধর্মের শনাক্তকারী চিহ্ন—খ্রীষ্টের মতো ভালবাসা—আমাদের মধ্যে আছে কি না। এইরকম আত্মত্যাগমূলক ভালবাসার জন্য একজন খ্রীষ্টান তার ভাইদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করার বদলে জীবনের ঝুঁকি নেবেন ও কেউ কেউ তা নিয়েছেনও। এছাড়াও এর সঙ্গে আমাদের ভাইদের ও অন্যদেরকে সাহায্য এবং সেবা করার জন্য ব্যক্তিগত আগ্রহগুলোকে ত্যাগ করার জন্য ইচ্ছুক হওয়াও জড়িত। এই ক্ষেত্রে প্রেরিত পৌল এক সুন্দর উদাহরণ রেখেছিলেন। (২ করিন্থীয় ১২:১৫; ফিলিপীয় ২:১৭) সারা পৃথিবীতে যিহোবার সাক্ষিরা তাদের আত্মত্যাগমূলক মনোভাব দেখানোর, তাদের ভাইদের ও প্রতিবেশীদের সাহায্য করার এবং সহ মানবদের কাছে বাইবেলের সত্য জানানোর জন্য সুপরিচিত। *গালাতীয় ৬:১০.

মূল্যবান মনে করার মতো সম্পর্ক

৯. ঈশ্বর ও তাঁর পুত্রের সঙ্গে অমূল্য সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য আমরা আনন্দের সঙ্গে কী করতে চাই?

যিহোবা ও তাঁর পুত্র খ্রীষ্ট যীশুর ভালবাসা পাওয়ার চেয়ে মূল্যবান আর কিছুই হতে পারে না। কিন্তু, এইরকম ভালবাসা পেতে হলে ও উপলব্ধি করতে চাইলে আমাদেরকে অবশ্যই কিছু করতে হবে। সেই শেষ রাতে যীশু তাঁর শিষ্যদেরকে বলেছিলেন: “যে ব্যক্তি আমার আজ্ঞা সকল প্রাপ্ত হইয়া সে সকল পালন করে, সেই আমাকে প্রেম করে; আর যে আমাকে প্রেম করে, আমার পিতা তাহাকে প্রেম করিবেন; এবং আমিও তাহাকে প্রেম করিব, আর আপনাকে তাহার কাছে প্রকাশ করিব।” (যোহন ১৪:২১) যেহেতু ঈশ্বর ও তাঁর পুত্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে আমরা মূল্যবান মনে করি, তাই আমরা আনন্দের সঙ্গে তাঁদের আজ্ঞাগুলোর বাধ্য হই। এর মধ্যে রয়েছে আত্মত্যাগমূলক ভালবাসা দেখানোর নতুন আজ্ঞা ও সেইসঙ্গে খ্রীষ্ট পুনরুত্থিত হওয়ার পর ‘লোকদের কাছে প্রচার করিবার ও সাক্ষ্য দেওয়ার’ এবং যারা সুসমাচার শোনেন তাদেরকে ‘শিষ্য করিবার’ জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করার আদেশ।—প্রেরিত ১০:৪২; মথি ২৮:১৯, ২০.

১০. অভিষিক্ত ও ‘অপর মেষদের’ জন্য কোন্‌ অমূল্য সম্পর্ক খোলা রয়েছে?

১০ সেই রাতেই যীশু তাঁর বিশ্বস্ত প্রেরিত যিহূদার (থদ্দেয়) প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন: “কেহ যদি আমাকে প্রেম করে, তবে সে আমার বাক্য পালন করিবে; আর আমার পিতা তাহাকে প্রেম করিবেন, এবং আমরা তাহার নিকটে আসিব ও তাহার সহিত বাস করিব।” (যোহন ১৪:২২, ২৩) খ্রীষ্টের সঙ্গে স্বর্গে রাজত্ব করার জন্য আহ্বান পেয়েছেন এমন অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের মধ্যে এমনকি এখনও যারা পৃথিবীতে আছেন, যিহোবা ও তাঁর পুত্রের সঙ্গে তাদের এক বিশেষ ও কাছের সম্পর্ক রয়েছে। (যোহন ১৫:১৫; ১৬:২৭; ১৭:২২; ইব্রীয় ৩:১; ১ যোহন ৩:২, ২৪) কিন্তু, চিরকাল পৃথিবীতে বেঁচে থাকার আশা রয়েছে তাদের এমন “অপর মেষ” সঙ্গীরা যদি বাধ্য থাকে, তাহলে তাদেরও “এক পালক” যীশু খ্রীষ্ট ও তাদের ঈশ্বর যিহোবার সঙ্গে এক অমূল্য সম্পর্ক রয়েছে।—যোহন ১০:১৬, NW; গীতসংহিতা ১৫:১-৫; ২৫:১৪.

“তোমরা ত জগতের নহ”

১১. যীশু তাঁর শিষ্যদের কোন্‌ গুরুত্বপূর্ণ সাবধানবাণী দিয়েছিলেন?

১১ যীশু তাঁর মৃত্যুর আগে তাঁর বিশ্বস্ত শিষ্যদের সঙ্গে শেষ সভা করার সময় তাদেরকে এক গুরুত্বপূর্ণ সাবধানবাণী দিয়েছিলেন: ঈশ্বর যদি কোন ব্যক্তিকে ভালবাসেন, তাহলে জগৎ তাকে ঘৃণা করবে। তিনি ঘোষণা করেছিলেন: “জগৎ যদি তোমাদিগকে দ্বেষ করে, তোমরা ত জান, সে তোমাদের অগ্রে আমাকে দ্বেষ করিয়াছে। তোমরা যদি জগতের হইতে, তবে জগৎ আপনার নিজস্ব ভালবাসিত; কিন্তু তোমরা ত জগতের নহ, বরং আমি তোমাদিগকে জগতের মধ্য হইতে মনোনীত করিয়াছি, এই জন্য জগৎ তোমাদিগকে দ্বেষ করে। আমি তোমাদিগকে যাহা বলিয়াছি, আমার সেই বাক্য স্মরণে রাখিও, ‘দাস আপন প্রভু হইতে বড় নয়;’ লোকে যখন আমাকে তাড়না করিয়াছে, তখন তোমাদিগকেও তাড়না করিবে; তাহারা যদি আমার বাক্য পালন করিত, তোমাদের বাক্যও পালন করিত।”—যোহন ১৫:১৮-২০.

১২. (ক) কেন যীশু তাঁর শিষ্যদের সাবধান করেছিলেন যে জগৎ তাদেরকে দ্বেষ করবে? (খ) স্মরণার্থক দিন যতই এগিয়ে আসছে আমাদের সকলের কোন্‌ বিষয়গুলো বিবেচনা করা উপকারজনক হবে?

১২ যীশু এই সাবধানবাণী দিয়েছিলেন যাতে জগতের দ্বেষের কারণে ১১ জন প্রেরিত ও তাদের পরে সমস্ত সত্য খ্রীষ্টান উৎসাহ হারিয়ে না ফেলেন ও হাল ছেড়ে না দেন। তিনি আরও বলেছিলেন: “এই সকল কথা তোমাদিগকে কহিলাম, যেন তোমরা বিঘ্ন না পাও। লোকে তোমাদিগকে সমাজ হইতে বাহির করিয়া দিবে; এমন কি, সময় আসিতেছে, যখন যে কেহ তোমাদিগকে বধ করে, সে মনে করিবে, আমি ঈশ্বরের উদ্দেশে উপাসনা-বলি উৎসর্গ করিলাম। তাহারা এই সকল করিবে, কারণ তাহারা না পিতাকে, না আমাকে জানিতে পারিয়াছে।” (যোহন ১৬:১-৩) বাইবেলের এক অভিধান ব্যাখ্যা করে যে, ‘বিঘ্ন পাওয়ার’ জন্য এখানে যে ক্রিয়াপদটা ব্যবহার করা হয়েছে, তার মানে “যে ব্যক্তির ওপর তার আস্থা রাখার ও তার বাধ্য হওয়ার কথা ছিল, তার ওপর আস্থা না রাখা ও তাকে ত্যাগ করা; এমনকি সরে পড়া।” স্মরণার্থক সভার সময় যতই এগিয়ে আসছে, সকলের উচিত অতীত ও বর্তমানের বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের জীবনধারা নিয়ে চিন্তা করা ও পরীক্ষার মধ্যে তারা যে অটল ছিলেন, তাদের সেই উদাহরণ অনুকরণ করা। যিহোবা ও যীশুকে ত্যাগ করতে বিরোধিতা অথবা তাড়নাকে সুযোগ দেবেন না বরং তাঁদের ওপর আস্থা রাখার ও তাঁদের প্রতি বাধ্য থাকার সংকল্প নিন।

১৩. পিতার কাছে একবার প্রার্থনা করার সময় যীশু তাঁর অনুগামীদের জন্য কোন্‌ অনুরোধ জানিয়েছিলেন?

১৩ যিরূশালেমের ওপরের কুঠরী ছেড়ে যাওয়ার আগে শেষ প্রার্থনায় যীশু তাঁর পিতাকে বলেছিলেন: “আমি তাহাদিগকে তোমার বাক্য দিয়াছি; আর জগৎ তাহাদিগকে দ্বেষ করিয়াছে, কারণ তাহারা জগতের নয় যেমন আমিও জগতের নই। আমি নিবেদন করিতেছি না যে, তুমি তাহাদিগকে জগৎ হইতে লইয়া যাও, কিন্তু তাহাদিগকে সেই পাপাত্মা হইতে রক্ষা কর। তাহারা জগতের নয়, যেমন আমিও জগতের নই।” (যোহন ১৭:১৪-১৬) আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, যিহোবা যাদেরকে ভালবাসেন তাদের ওপর তাঁর নজর আছে আর তারা যখন জগৎ থেকে নিজেদেরকে আলাদা রাখেন, তখন তিনি তাদের শক্তি দেন।—যিশাইয় ৪০:২৯-৩১.

পিতা ও পুত্রের ভালবাসায় অবস্থিতি করুন

১৪, ১৫. (ক) কোন্‌ ‘বিকৃত দ্রাক্ষালতার’ বিপরীতে যীশু নিজেকে কীসের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন? (খ) ‘প্রকৃত দ্রাক্ষালতার’ “শাখা” কারা?

১৪ যীশু তাঁর বিশ্বস্ত শিষ্যদের সঙ্গে ১৪ই নিশান রাতে অন্তরঙ্গ আলোচনা করার সময় অবিশ্বস্ত ইস্রায়েলের ‘বিকৃত দ্রাক্ষালতার’ বিপরীতে নিজেকে ‘প্রকৃত দ্রাক্ষালতার’ সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “আমি প্রকৃত দ্রাক্ষালতা, এবং আমার পিতা কৃষক।” (যোহন ১৫:১) এর কয়েকশ বছর আগে ভাববাদী যিরমিয় ধর্মত্যাগী লোকেদেরকে যিহোবার বলা এই কথাগুলো লিখেছিলেন: “আমি . . . উত্তম দ্রাক্ষালতা করিয়া তোমাকে রোপণ করিয়াছিলাম, তুমি কেমন করিয়া বিকৃত হইয়া আমার কাছে বিজাতীয় দ্রাক্ষালতার শাখা হইলে?” (যিরমিয় ২:২১) আর ভাববাদী হোশেয় লিখেছিলেন: “ইস্রায়েল দীর্ঘপল্লবা দ্রাক্ষালতাস্বরূপ, তাহার ফল ধরে . . . তাহাদের অন্তঃকরণ বিভক্ত।”—হোশেয় ১০:১, ২.

১৫ সত্য উপাসনার ফল উৎপন্ন করার বদলে ইস্রায়েল ধর্মভ্রষ্টতায় জড়িয়ে পড়েছিল এবং কেবল নিজের জন্য ফল উৎপন্ন করেছিল। যীশু তাঁর বিশ্বস্ত শিষ্যদের সঙ্গে শেষ সভা করার তিনদিন আগে কপট যিহুদি নেতাদের বলেছিলেন: “আমি তোমাদিগকে কহিতেছি, তোমাদের নিকট হইতে ঈশ্বরের রাজ্য কাড়িয়া লওয়া যাইবে, এবং এমন এক জাতিকে দেওয়া হইবে, যে জাতি তাহার ফল দিবে।” (মথি ২১:৪৩) সেই নতুন জাতি হল, ১,৪৪,০০০ জন অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের নিয়ে গঠিত ‘ঈশ্বরের ইস্রায়েল’ আর তাদেরকে “প্রকৃত দ্রাক্ষালতা” খ্রীষ্ট যীশুর ‘শাখার’ সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।—গালাতীয় ৬:১৬; যোহন ১৫:৫; প্রকাশিত বাক্য ১৪:১, ৩.

১৬. যীশু ১১ জন বিশ্বস্ত প্রেরিতকে কী করতে বলেছিলেন আর এই শেষকালে বিশ্বস্ত অবশিষ্টাংশদের বিষয়ে কী বলা যায়?

১৬ ওপরের কুঠরীতে উপস্থিত ১১ জন প্রেরিতকে যীশু বলেছিলেন: “আমাতে স্থিত যে কোন শাখায় ফল না ধরে, তাহা তিনি কাটিয়া ফেলিয়া দেন; এবং যে কোন শাখায় ফল ধরে, তাহা পরিষ্কার করেন, যেন তাহাতে আরও অধিক ফল ধরে। আমাতে থাক, আর আমি তোমাদিগেতে থাকি; শাখা যেমন আপনা হইতে ফল ধরিতে পারে না, দ্রাক্ষালতায় না থাকিলে পারে না, তদ্রূপ আমাতে না থাকিলে তোমরাও পার না।” (যোহন ১৫:২, ৪) যিহোবার লোকেদের আধুনিক ইতিহাস দেখায় যে, অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের বিশ্বস্ত অবশিষ্টাংশরা তাদের মস্তক খ্রীষ্ট যীশুর সঙ্গে একতাবদ্ধ হয়ে আছেন। (ইফিষীয় ৫:২৩) তারা পরিষ্কারকরণ ও ছেঁটে দেওয়াকে মেনে নিয়েছেন। (মালাখি ৩:২, ৩) ১৯১৯ সাল থেকে তারা প্রচুররূপে রাজ্যের ফল উৎপন্ন করে চলেছেন আর এদের মধ্যে প্রথমে অন্যান্য অভিষিক্ত খ্রীষ্টানরা এবং ১৯৩৫ সাল থেকে দিন-দিন বেড়ে চলা তাদের “বিস্তর লোক” সঙ্গীরা আছেন।—প্রকাশিত বাক্য ৭:৯; যিশাইয় ৬০:৪, ৮-১১.

১৭, ১৮. (ক) যীশুর কোন্‌ কথাগুলো অভিষিক্ত ও অপর মেষদের যিহোবার ভালবাসায় অবস্থিতি করতে সাহায্য করে? (খ) স্মরণার্থক সভায় উপস্থিত হওয়া কীভাবে আমাদেরকে সাহায্য করবে?

১৭ অভিষিক্ত খ্রীষ্টান ও তাদের সঙ্গী সকলের প্রতি যীশুর পরের কথাগুলো খাটে: “ইহাতেই আমার পিতা মহিমান্বিত হন যে, তোমরা প্রচুর ফলে ফলবান্‌ হও; আর তোমরা আমার শিষ্য হইবে। পিতা যেমন আমাকে প্রেম করিয়াছেন, আমিও তেমনি তোমাদিগকে প্রেম করিয়াছি; তোমরা আমার প্রেমে অবস্থিতি কর। তোমরা যদি আমার আজ্ঞা সকল পালন কর, তবে আমার প্রেমে অবস্থিতি করিবে, যেমন আমিও আমার পিতার আজ্ঞা সকল পালন করিয়াছি, এবং তাঁহার প্রেমে অবস্থিতি করিতেছি।”—যোহন ১৫:৮-১০.

১৮ আমরা সকলে ঈশ্বরের ভালবাসায় অবস্থিতি করতে চাই এবং এটা আমাদেরকে ফলবান খ্রীষ্টান হতে পরিচালিত করে। ‘রাজ্যের সুসমাচার’ প্রচার করার প্রতিটা সুযোগ গ্রহণ করে আমরা তা করি। (মথি ২৪:১৪) এছাড়াও আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে “আত্মার ফল” প্রকাশ করার চেষ্টা করে আমরা তা করি। (গালাতীয় ৫:২২, ২৩) খ্রীষ্টের মৃত্যুর স্মরণার্থক সভায় উপস্থিত হওয়া আমাদের এই সংকল্পকে আরও শক্তিশালী করবে কারণ সেখানে ঈশ্বরের ও খ্রীষ্টের মহৎ ভালবাসার কথা আমাদেরকে মনে করিয়ে দেওয়া হবে।—২ করিন্থীয় ৫:১৪, ১৫.

১৯. পরের প্রবন্ধে আর কোন্‌ সাহায্যের বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে?

১৯ স্মরণার্থক সভা প্রবর্তন করার পর যীশু প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, তাঁর পিতা তাঁর বিশ্বস্ত অনুগামীদের জন্য এক “সহায়, পবিত্র আত্মা” পাঠাবেন। (যোহন ১৪:২৬) যিহোবার ভালবাসায় অবস্থিতি করার জন্য এই পবিত্র আত্মা কীভাবে অভিষিক্ত ও অপর মেষদেরকে সাহায্য করে, তা পরের প্রবন্ধে আলোচনা করা হবে।

[পাদটীকাগুলো]

^ বাইবেলের হিসাব অনুসারে, ২০০২ সালের ১৪ই নিশান শুরু হবে ২৮শে মার্চ, বৃহস্পতিবার সূর্যাস্তের পর। ওইদিন সন্ধ্যায়, সারা পৃথিবীর যিহোবার সাক্ষিরা প্রভু যীশু খ্রীষ্টের মৃত্যু উদ্‌যাপন করার জন্য একত্র হবেন।

^ যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত যিহোবার সাক্ষীবৃন্দ—ঈশ্বরের রাজ্যের ঘোষণাকারী (ইংরেজি) বইয়ের ১৯ ও ৩২ অধ্যায় দেখুন।

পুনরালোচনার প্রশ্নগুলো

• প্রেমপূর্ণ সেবা করার বিষয়ে যীশু তাঁর শিষ্যদের কোন্‌ বাস্তব শিক্ষা দিয়েছিলেন?

• কোন্‌ দিক দিয়ে স্মরণার্থক মরশুম নিজেকে পরীক্ষা করে দেখার এক উপযুক্ত সময়?

• জগতের দ্বারা ঘৃণিত ও তাড়িত হওয়ার বিষয়ে যীশুর সাবধানবাণী শুনে কেন আমাদের বিঘ্ন পাওয়া উচিত নয়?

• কে “প্রকৃত দ্রাক্ষালতা”? “শাখা” কারা এবং তাদের কাছ থেকে কী আশা করা হয়?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

প্রেমপূর্ণ সেবা করে যীশু তাঁর প্রেরিতদের এমন শিক্ষা দিয়েছিলেন, যা কখনও ভোলা যায় না

[১৬, ১৭ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

খ্রীষ্টের শিষ্যরা তাঁর আদেশের বাধ্য হয়ে আত্মত্যাগমূলক ভালবাসা দেখান