সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ঈশ্বরের দেওয়া নীতিগুলো আপনার উপকার করতে পারে

ঈশ্বরের দেওয়া নীতিগুলো আপনার উপকার করতে পারে

ঈশ্বরের দেওয়া নীতিগুলো আপনার উপকার করতে পারে

 আপনি নিশ্চয়ই জানেন যে, পশুপাখিরা সহজাত প্রবৃত্তির দ্বারা চালিত হয়। অনেক যন্ত্রকে এমনভাবে তৈরি করা হয় যেগুলো নির্দেশনা মেনে চলে। কিন্তু মানুষকে আসলে নীতির দ্বারা পরিচালিত হওয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছে। আপনি কীভাবে তা নিশ্চিত হতে পারেন? সমস্ত ধার্মিক নীতির উৎস যিহোবা, প্রথম মানুষকে সৃষ্টি করে বলেছিলেন: “আমরা আমাদের প্রতিমূর্ত্তিতে, আমাদের সাদৃশ্যে মনুষ্য নির্ম্মাণ করি।” সৃষ্টিকর্তা হলেন আত্মা; আমাদের মতো তাঁর মাংসিক দেহ নেই আর তাই আমরা তাঁর “প্রতিমূর্ত্তিতে” তৈরি বলতে বোঝায় যে, আমরা তাঁর ব্যক্তিত্বকে প্রকাশ করতে এবং তাঁর উত্তম গুণাবলির কিছুটা হলেও দেখাতে পারি। নীতিগুলো অর্থাৎ যেটাকে মানুষ সঠিক কাজের নীতি বলে বিশ্বাস করে, সেগুলো অনুযায়ী জীবন চালানোর ক্ষমতা তাদের রয়েছে। যিহোবা তাঁর বাক্য বাইবেলে এইরকম অনেক নীতি লিপিবদ্ধ করিয়েছেন।—আদিপুস্তক ১:২৬; যোহন ৪:২৪; ১৭:১৭.

একজন ব্যক্তি হয়তো বলতে পারেন, ‘কিন্তু বাইবেলে শত শত নীতি রয়েছে। সেগুলোর সবকটা জানা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।’ এটা ঠিক। কিন্তু এই বিষয়টা সম্বন্ধে চিন্তা করুন: যদিও ঈশ্বরের দেওয়া সমস্ত নীতি উপকারী কিন্তু কিছু নীতি আছে, যেগুলো অন্যগুলোর চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর সেটা আপনি মথি ২২:৩৭-৩৯ পদ থেকে দেখতে পারেন যেখানে যীশু দেখিয়েছেন যে, মোশির ব্যবস্থায় দেওয়া আদেশগুলো এবং উপযুক্ত নীতিগুলোর মধ্যেও কিছু কিছু নীতি অন্যগুলোর চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

সেই গুরুত্বপূর্ণ নীতিগুলো কী? যে নীতিগুলো সরাসরি ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ওপর ছাপ ফেলে সেগুলো হল বাইবেলের মূল নীতি। আমরা যদি এই নীতিগুলো মেনে চলি, তাহলে আমাদের নৈতিক কমপাসের ওপর সৃষ্টির্কতার প্রভাব প্রধান হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়া এমন নীতিও রয়েছে, যা অন্যদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলে। এই নীতিগুলো কাজে লাগালে তা আমাদেরকে যে-কোন ধরনের আমিত্ব মনোভাব এড়িয়ে চলতে সাহায্য করবে।

আসুন আমরা বাইবেলে দেওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সত্যগুলোর একটা দিয়ে শুরু করি। সেই সত্য কী আর কীভাবে তা আমাদের ওপর ছাপ ফেলে?

“সমস্ত পৃথিবীর উপরে পরাৎপর”

পবিত্র শাস্ত্র পরিষ্কার করে জানায় যে, যিহোবা হলেন আমাদের মহান সৃষ্টিকর্তা এবং সর্বশক্তিমান ঈশ্বর। তাঁর সঙ্গে অন্য কারও তুলনা হয় না বা কেউ তাঁর জায়গা নিতে পারে না। আর এই সত্যটাই বাইবেলে রয়েছে।—আদিপুস্তক ১৭:১; উপদেশক ১২:১.

গীতসংহিতার একজন লেখক যিহোবার সম্বন্ধে বলেছিলেন: “একা তুমিই সমস্ত পৃথিবীর উপরে পরাৎপর।” প্রাচীন রাজা দায়ূদ বলেছিলেন: “হে সদাপ্রভু, রাজ্য তোমারই, এবং তুমি সকলের মস্তকরূপে উন্নত।” আর সুপরিচিত ভাববাদী যিরমিয় লিখতে প্রেরণা পেয়েছিলেন: “হে সদাপ্রভু, তোমার তুল্য কেহই নাই; তুমি মহান, তোমার নামও পরাক্রমে মহৎ।”—গীতসংহিতা ৮৩:১৮; ১ বংশাবলি ২৯:১১; যিরমিয় ১০:৬.

ঈশ্বর সম্বন্ধে এই সত্যগুলোকে কীভাবে আমরা রোজকার জীবন কাজে লাগাতে পারি?

আমাদের জীবনে কে সর্বোৎকৃষ্ট তা একেবারে পরিষ্কার—আমাদের সৃষ্টিকর্তা এবং জীবনদাতা। তাহলে নিজেদের দিকে মনোযোগ আকর্ষণ করার যে-কোন প্রবণতাকে দাবিয়ে রাখা কি উপযুক্ত নয়—যে প্রবণতা কারও কারও মধ্যে অন্যদের থেকে হয়তো বেশি থাকতে পারে? বিজ্ঞ নির্দেশনামূলক নীতি হল, “সকলই ঈশ্বরের গৌরবার্থে কর।” (১ করিন্থীয় ১০:৩১) এই ব্যাপারে ভাববাদী দানিয়েল এক উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন।

ঐতিহাসিক বিবরণ আমাদেরকে বলে যে, বাবিলের রাজা নবূখদ্‌নিৎসর একটা স্বপ্ন দেখে উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন এবং এর অর্থ জানতে চেয়েছিলেন। যেখানে সবাই হতবুদ্ধি হয়ে পড়েছিল, সেখানে দানিয়েল সঠিকভাবে রাজা যা জানতে চেয়েছিলেন, তা বলে দিতে পেরেছিলেন। এর জন্য কি দানিয়েল কৃতিত্ব নিয়েছিলেন? না, তিনি ‘স্বর্গের ঈশ্বর যিনি নিগূঢ় বিষয় প্রকাশ করেন’ তাঁকে মহিমা দিয়েছিলেন। দানিয়েল বলে চলেন: “অন্য কোন জীবিত লোক অপেক্ষা আমার অধিক জ্ঞান আছে বলিয়া যে আমার কাছে এই নিগূঢ় বিষয় প্রকাশিত হইল তাহা নয়।” দানিয়েল একজন নীতিবান ব্যক্তি ছিলেন। তাই এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, দানিয়েলের বইয়ে তিনবার তাকে ঈশ্বরের চোখে “প্রীতি-পাত্র” বলা হয়েছে।—দানিয়েল ২:২৮, ৩০; ৯:২৩; ১০:১১, ১৯.

দানিয়েলকে অনুকরণ করলে আপনিও উপকার পাবেন। দানিয়েলের উদহারণ মেনে চলার সময়, মনে রাখার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা হল উদ্দেশ্য। আপনি যা কিছু করেন তার জন্য কে সম্মান পাওয়ার যোগ্য? আপনার পরিস্থিতি যা-ই থাকুক না কেন, যিহোবা হলেন সার্বভৌম প্রভু, বাইবেলের এই গুরুত্বপূর্ণ নীতির সঙ্গে মিল রেখে কাজ করার ক্ষমতা আপনার রয়েছে। আর আপনি যদি তা করেন, তাহলে তা আপনাকে তাঁর চোখে “প্রীতি-পাত্র” করবে।

আসুন এখন আমরা দুটো মূল নীতি বিবেচনা করি, যেগুলো মানুষের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমাদেরকে নির্দেশনা দেবে। কিন্তু, সমস্ত ক্ষেত্রে নিজেকে গুরুত্ব দেওয়ার ওপর বেশি জোর দেওয়া হয় বলে জীবনের এই দিকটা খুবই কঠিন।

‘নম্রভাব’

যারা নিজেদেরকে প্রথমে রাখে তারা খুব কমই পরিতৃপ্ত হয়। বেশির ভাগ লোকই চিরকালের জন্য উত্তম জীবন চায় আর তারা এখনই তা পেতে চায়। বিনয়ী হওয়া তাদের কাছে এক ধরনের দুর্বলতা। তারা মনে করে যে, ধৈর্য শুধু অন্যেরাই দেখাবে। সফলতার জন্য তারা যে-কোন কিছু করতে রাজি। আপনি কি মনে করেন যে তাদের ব্যবহারের চেয়ে আপনি আলাদা কিছু করতে পারেন?

ঈশ্বরের দাসেরা রোজ এই মনোভাবের মুখোমুখি হন কিন্তু সেটার দ্বারা তাদের প্রভাবিত হওয়া উচিত নয়। পরিপক্ব খ্রীষ্টানরা এই নীতি গ্রহণ করেন যে, “আপনার প্রশংসা যে করে, সে নয়, কিন্তু প্রভু যাহার প্রশংসা করেন, সেই পরীক্ষাসিদ্ধ।”—২ করিন্থীয় ১০:১৮.

ফিলিপীয় ২:৩, ৪ পদে দেওয়া নীতিকে কাজে লাগালে সাহায্য পাওয়া যেতে পারে। এই পদগুলো আপনাকে ‘প্রতিযোগিতার কিম্বা অনর্থক দর্পের বশে কিছুই না করিয়া, বরং নম্রভাবে প্রত্যেক জন আপনা হইতে অন্যকে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান করিতে’ উৎসাহ দেয়। এভাবে আপনি ‘আপনার বিষয়ে নয়, কিন্তু পরের বিষয়েও লক্ষ্য রাখিবেন।’

প্রাচীন ইব্রীয়দের বিচারক গিদিয়োনের নিজের সম্বন্ধে সঠিক মনোভাব ছিল এবং তিনি নিজের যোগ্যতা সম্বন্ধে সঠিক মূল্যায়ন করেছিলেন। তিনি ইস্রায়েলের নেতা হতে চাননি। কিন্তু, তাকে যখন সেই দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছিল, তখন তিনি তার অযোগ্যতা সম্বন্ধে বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “মনঃশির মধ্যে আমার গোষ্ঠী সর্ব্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র, এবং আমার পিতৃকুলে আমি কনিষ্ঠ।”—বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ৬:১২-১৬.

এছাড়া, গিদিয়োনের পক্ষে যিহোবা জয় এনে দেওয়ার পর, ইফ্রয়িমের লোকেরা তার সঙ্গে ঝগড়া শুরু করেছিলেন। গিদিয়োন কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? জয়ী হয়ে তিনি কি নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি মনে করেছিলেন? না। নম্রভাবে উত্তর দিয়ে তিনি দুর্দশা এড়িয়েছিলেন। “আমি তোমাদের এই কর্ম্মের তুল্য কোন কর্ম্ম করিতে পারিয়াছি?” তিনি নম্র ছিলেন।—বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ৮:১-৩.

এটা ঠিক যে গিদিয়োনের ঘটনা অনেক আগে ঘটেছিল। তবুও এই ঘটনা নিয়ে চিন্তা করার মূল্য আছে। আপনি দেখতে পারেন যে গিদিয়োনের মনোভাব, আজকে সাধারণত যে মনোভাব দেখা যায় তার থেকে বেশ আলাদা এবং তার উপকারের জন্য তিনি এইরকম মনোভাব দেখিয়েছিলেন।

চারিদিকে ছড়িয়ে থাকা আমিত্ব মনোভাব আত্মসম্মান সম্বন্ধে আমাদের চিন্তাধারাকে বিকৃত করতে পারে। বাইবেলের নীতিগুলো সেই বিকৃত চিন্তাধারাকে শুধরে দেয় এবং সৃষ্টিকর্তা ও অন্যদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের প্রকৃত মূল্য সম্বন্ধে শিক্ষা দেয়।

বাইবেলের নীতিগুলোকে কাজে লাগালে, আমরা আমিত্ব মনোভাব কাটিয়ে উঠতে পারব। আকাঙ্ক্ষা বা প্রবণতাগুলোর দ্বারা আমরা আর নিয়ন্ত্রিত হব না। ধার্মিক নীতিগুলো সম্বন্ধে যতই আমরা শিখি, এর উদ্যোক্তার সঙ্গে আমরা তত ভালভাবে পরিচিত হই। হ্যাঁ, বাইবেল পড়ার সময় ঈশ্বরের দেওয়া নীতিগুলোতে ভাল করে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টার সত্যিই মূল্য আছে।—বাক্স দেখুন।

যিহোবা মানুষকে পশুদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ করে তৈরি করেছেন, যারা মূলত সহজাত প্রবৃত্তি দ্বারা চালিত হয়। ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার মধ্যে তাঁর নীতিগুলো কাজে লাগানোও জড়িত। এভাবে আমাদের নৈতিক কমপাস সঠিকভাবে কাজ করতে পারে, যে কমপাস আমাদেরকে ঈশ্বরের তৈরি নতুন জগতের দিকে নিয়ে যাবে। খুব শীঘ্রিই পৃথিবী জুড়ে যে এক নতুন জগৎ আসবে, যেখানে ‘ধার্মিকতা বসতি করবে,’ তা প্রত্যাশা করার জন্য বাইবেল আমাদেরকে উপযুক্ত কারণ দেয়।—২ পিতর ৩:১৩.

[৬ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]

বাইবেলের কয়েকটা সাহায্যকারী নীতি

পরিবারের মধ্যে:

“কেহই স্বার্থ চেষ্টা না করুক, বরং প্রত্যেক জন পরের মঙ্গল চেষ্টা করুক।”—১ করিন্থীয় ১০:২৪.

“প্রেম . . . স্বার্থ চেষ্টা করে না।”—১ করিন্থীয় ১৩:৪, ৫.

“তোমরাও প্রত্যেকে আপন আপন স্ত্রীকে তদ্রূপ আপনার মত প্রেম কর।”—ইফিষীয় ৫:৩৩.

“নারীগণ, তোমরা আপন আপন স্বামীর বশীভূতা হও।”—কলসীয় ৩:১৮.

“তোমার জন্মদাতা পিতার কথা শুন, তোমার মাতা বৃদ্ধা হইলে তাঁহাকে তুচ্ছ করিও না।”—হিতোপদেশ ২৩:২২.

স্কুলে, কাজের জায়গায় বা ব্যবসায়:

“ছলনার নিক্তি . . . ঘৃণিত; . . . দুষ্ট মিথ্যা বেতন উপার্জ্জন করে।”—হিতোপদেশ ১১:১, ১৮.

“চোর আর চুরি না করুক, বরং স্বহস্তে সদ্ব্যাপারে পরিশ্রম করুক।”—ইফিষীয় ৪:২৮.

“যদি কেহ কার্য্য করিতে না চায়, তবে সে আহারও না করুক।”—২ থিষলনীকীয় ৩:১০.

“যাহা কিছু কর, প্রাণের সহিত কার্য্য কর, . . . প্রভুরই কর্ম্ম বলিয়া কর।”—কলসীয় ৩:২৩.

“আমরা . . . সর্ব্ববিষয়ে সদাচরণ করিতে বাঞ্ছা করিতেছি।”—ইব্রীয় ১৩:১৮.

ধনসম্পদের প্রতি মনোভাব:

“যে ধনবান হইবার জন্য তাড়াতাড়ি করে, সে অদণ্ডিত থাকিবে না।”—হিতোপদেশ ২৮:২০.

“যে ব্যক্তি রৌপ্য ভালবাসে, সে রৌপ্যে তৃপ্ত হয় না।”—উপদেশক ৫:১০.

নিজের যোগ্যতা মূল্যায়ন করা:

“লোকেরা যে গৌরব পাওয়ার চেষ্টা করে তা কি আসলেই গৌরব?”—হিতোপদেশ ২৫:২৭, NW.

“অপরে তোমার প্রশংসা করুক, তোমার নিজ মুখ না করুক।”—হিতোপদেশ ২৭:২.

“আমি তোমাদের মধ্যবর্ত্তী প্রত্যেক জনকে বলিতেছি, আপনার বিষয়ে যেমন বোধ করা উপযুক্ত, কেহ তদপেক্ষা বড় বোধ না করুক।”—রোমীয় ১২:৩.

“যদি কেহ মনে করে, আমি কিছু, কিন্তু বাস্তবিক সে কিছুই নয়, তবে সে আপনি আপনাকে ভুলায়।”—গালাতীয় ৬:৩.

[৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

দানিয়েল ঈশ্বরকে যথার্থ কৃতিত্ব দিয়েছিলেন

[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

ঈশ্বরের দেওয়া নীতিগুলো অনুযায়ী অন্যদের সঙ্গে ব্যবহার করা মধুর সম্পর্ক এবং সুখ এনে দেয়

[৭ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]

U.S. Fish & Wildlife Service, Washington, D.C./Robert Bridges