কলুষিত করে এমন যে কোন কিছু থেকে শুচি থাকুন
কলুষিত করে এমন যে কোন কিছু থেকে শুচি থাকুন
শুচি থাকতে চাওয়া স্বাভাবিক—কিন্তু ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের বেলায় যখন এই বিষয়টা আসে, তখন আমাদের প্রথমে তাঁকে সন্তুষ্ট করাই জরুরি। অনেক ইব্রীয় ও গ্রিক শব্দ কোন্টা শুচি এবং বিশুদ্ধ ও সেইসঙ্গে শুচি হওয়ার পদ্ধতি অর্থাৎ ত্রুটিহীন, নিষ্কলঙ্ক অবস্থায় ফিরে আসা এবং ময়লা, দূষিত বা কলুষিত করে এমন কোন কিছু থেকে মুক্ত থাকার বিষয় বর্ণনা করে। এই শব্দগুলো শুধু শারীরিক দিক দিয়ে শুচি থাকাকেই নয় কিন্তু প্রায়ই নৈতিক বা আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে শুচি থাকাকেও বোঝায়।
শারীরিক দিক দিয়ে শুচি থাকা
ব্যক্তিগত অভ্যাসগুলো ইস্রায়েল জাতিকে অন্যান্য জাতির তুলনায় স্বাস্থ্যবান লোক করে তুলেছিল, এমনকি প্রান্তরে ৪০ বছর ঘুরে বেড়ানোর সময়ও তা কোন বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। শিবিরে থাকার সময় ঈশ্বরের আইনগুলো তাদেরকে যে নির্দেশনা দিয়েছিল তা নিঃসন্দেহে তাদেরকে এই বিষয়ে সাহায্য করেছিল, যার মধ্যে রোগনির্ণয় ও চিকিৎসাপদ্ধতি ছিল। এই ব্যবস্থায় পরিষ্কার জল পান করার গুরুত্বের ওপর জোর দেওয়া হয়েছিল।
আধ্যাত্মিক অশুচিতা ও ফরীশীদের কপটতার বিষয়ে বলার সময় যীশুও শারীরিক দিক দিয়ে শুচি থাকার ওপর একটা নীতির কথা বলেছিলেন। ফরীশীদের কপট আচরণকে তিনি পানপাত্র বা পাত্রের ভিতরে পরিষ্কার না করে বাইরে পরিষ্কার করার সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। (মথি ২৩:২৫, ২৬) ঈষ্করিয়োতীয় যিহূদা সহ অন্যান্য শিষ্যদের সঙ্গে শেষ নিস্তারপর্ব ভোজের সময়ও যীশু একইরকম উদাহরণ ব্যবহার করেছিলেন। যদিও তারা স্নান করেছিলেন ও তাদের প্রভু তাদের পা ধুয়ে দিয়েছিলেন ও এর দ্বারা শারীরিক দিক দিয়ে “সর্ব্বাঙ্গে শুচি” ছিলেন কিন্তু আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে বলতে গিয়ে যীশু বলেছিলেন, “তোমরা সকলে শুচি নহ।”—যোহন ১৩:১-১১.
স্বাভাবিক অথচ অশুচি—কেন?
ঋতুস্রাব, বিবাহিত ব্যক্তিদের মধ্যে যৌন সম্পর্ক এবং সন্তান জন্ম দেওয়ার মতো স্বাভাবিক ও সঠিক বিষয়গুলোকে কেন ব্যবস্থায় “অশুচি” বলা হয়েছে? একটা কারণ হল, এটা বিবাহের সবচেয়ে অন্তরঙ্গ সম্পর্ককে পবিত্র করে তুলে ধরে, দুজন সাথিকেই ইন্দ্রিয় দমন, জনন অঙ্গগুলোকে শ্রদ্ধা করতে এবং জীবন ও রক্তের পবিত্রতাকে সম্মান করতে শেখায়। এই আইনগুলোকে সতর্কভাবে পালন করার মাধ্যমে স্বাস্থ্যসংক্রান্ত সুবিধাগুলোও পাওয়া যায়। কিন্তু এই বিষয়ে আরেকটা দিকও রয়েছে।
আদিতে ঈশ্বর প্রথম মানব-মানবীর মধ্যে যৌন আকাঙ্ক্ষা ও জন্মদানের ক্ষমতা দিয়েছিলেন এবং তাদেরকে একসঙ্গে বাস করে সন্তান জন্ম দেওয়ার আদেশ দিয়েছিলেন। তাই, সিদ্ধ দম্পতির মধ্যে যৌন সম্পর্ক করা কোন পাপ ছিল না। কিন্তু, আদম ও হবা যখন যৌন সম্পর্কের ব্যাপারে নয় বরং নিষিদ্ধ ফল খেয়ে ঈশ্বরের অবাধ্য হয়েছিল, তখন এক বিরাট পরিবর্তন আসে। হঠাৎ তাদের পাপ-জর্জরিত দোষী বিবেক তাদেরকে জানিয়ে দেয় যে, তারা উলঙ্গ এবং সঙ্গে সঙ্গে তারা তাদের যৌনাঙ্গগুলোকে ঈশ্বরের দৃষ্টি থেকে ঢেকে রাখে। (আদিপুস্তক ৩:৭, ১০, ১১) তখন থেকে মানুষ আর কখনও সিদ্ধভাবে সন্তান জন্ম দিতে পারে না কিন্তু এর বদলে উত্তরাধিকারসূত্রে বাবামার কাছ থেকে পাপ ও এর শাস্তিস্বরূপ মৃত্যু সন্তানদের মধ্যে চলে যায়। এমনকি অনেক ধার্মিক ও ঈশ্বর-ভয়শীল বাবামারাও পাপী সন্তান জন্ম দেন।—গীতসংহিতা ৫১:৫.
জনন অঙ্গগুলোর কাজের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিষয়ে ব্যবস্থায় যা বলা হয়েছিল, তা পুরুষ ও নারীদেরকে আত্ম-শাসন, যৌনকামনায় সংযত এবং বংশবিস্তারের জন্য ঈশ্বর যা জুগিয়েছেন তার প্রতি সম্মান করতে শিখিয়েছিল। উত্তরাধিকারসূত্রে মানুষ যে পাপ পেয়েছে, তা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য পুরুষ ও নারী উভয়েরই স্বাভাবিক উপায়ে তাদের দেহের জনন অঙ্গ থেকে কিছু বেরিয়ে আসার কারণে দুজনকেই নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অশুচি থাকা উপযুক্ত ছিল। কোন ত্রুটির কারণে কারও যদি দীর্ঘসময় ধরে তা হতো, তাহলে আরও বেশি সময় ধরে তারা অশুচি থাকতেন; আর যেমন কোন মা যখন সন্তান জন্ম দিত, তখন সে অশুচি থাকত এবং এর জন্য স্নান করা ছাড়াও পাপার্থক বলির দরকার হতো, যাতে ঈশ্বরের যাজক ওই ব্যক্তির হয়ে প্রায়শ্চিত্ত করতে পারেন। তাই, যীশুর মা মরিয়মও উত্তরাধিকারসূত্রে লূক ২:২২-২৪.
পাওয়া তার পাপের কথা স্বীকার করেছিলেন অর্থাৎ প্রথম সন্তান জন্ম দিয়ে তিনি পাপার্থক বলি উৎসর্গ করে স্বীকার করেছিলেন যে তিনি পাপমুক্ত বা বিশুদ্ধ ছিলেন না।—খ্রীষ্টানরা এবং শুচি থাকা
ব্যবস্থা এবং তাতে শুচি হওয়ার বিষয়ে যা যা বলা হয়েছে, খ্রীষ্টানরা তার অধীনে নন, যদিও এই আইন ও এর রীতিগুলো যীশু যখন পৃথিবীতে ছিলেন তখনও পালন করা হতো। (যোহন ১১:৫৫) ব্যবস্থা “আগামী উত্তম উত্তম বিষয়ের ছায়াবিশিষ্ট” ছিল; তবে “দেহ খ্রীষ্টের।” (ইব্রীয় ১০:১; কলসীয় ২:১৭) তাই পৌল এই শুচি হওয়ার বিষয়ে লিখেছিলেন: “কারণ ছাগদের ও বৃষদের রক্ত এবং অশুচিদের উপরে প্রোক্ষিত গাভীভস্ম যদি মাংসের শুচিতার জন্য পবিত্র করে, তবে, যিনি অনন্তজীবী আত্মা দ্বারা নির্দ্দোষ বলিরূপে আপনাকেই ঈশ্বরের উদ্দেশে উৎসর্গ করিয়াছেন, সেই খ্রীষ্টের রক্ত তোমাদের সংবেদকে মৃত ক্রিয়াকলাপ হইতে কত অধিক নিশ্চয় শুচি না করিবে, যেন তোমরা জীবন্ত ঈশ্বরের আরাধনা করিতে পার!”—ইব্রীয় ৯:১৯-২৩, ১৩, ১৪.
তাই, প্রভু যীশু খ্রীষ্টের রক্তই খ্রীষ্টানদেরকে সমস্ত পাপ ও অধার্মিকতা থেকে শুচি করে। (১ যোহন ১:৭, ৯) খ্রীষ্ট “মণ্ডলীকে প্রেম করিলেন, আর তাহার নিমিত্ত আপনাকে প্রদান করিলেন; যেন তিনি জলস্নান দ্বারা বাক্যে তাহাকে শুচি করিয়া পবিত্র করেন” যাতে “নিজস্ব প্রজাবর্গকে, সৎক্রিয়াতে উদ্যোগী প্রজাবর্গকে” নিষ্কলঙ্ক, পবিত্র ও নির্দোষ রাখেন। (ইফিষীয় ৫:২৫-২৭; তীত ২:১৪) অতএব, এই খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর প্রত্যেক সদস্যের “আপন পূর্ব্বপাপসমূহের মার্জ্জনা ভুলিয়া” যাওয়া উচিত নয় কিন্তু “যে কোন শাখায় ফল ধরে, তাহা [ঈশ্বর] পরিষ্কার করেন, যেন তাহাতে আরও অধিক ফল ধরে” এই কথা মনে রেখে তাদের ঈশ্বরের আত্মার ফল প্রকাশ করে চলা উচিত।—২ পিতর ১:৫-৯; যোহন ১৫:২, ৩.
শুচি থাকার বিষয়ে উচ্চ মান বজায় রাখুন
তাই, খ্রীষ্টানদের শারীরিক, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে শুচি থাকার বিষয়ে এক উচ্চ মান বজায় রাখা উচিত, “মাংসের ও আত্মার সমস্ত মালিন্য হইতে” নিজেদেরকে রক্ষা করা উচিত। (২ করিন্থীয় ৭:১) যীশু যা বলেছিলেন অর্থাৎ ‘মনুষ্যের ভিতরে কিছু প্রবেশ করিয়া নয় বরং যাহা ভিতর হইতে বাহির হয় তাহাই তাহাকে অশুচি করে,’ এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে, খ্রীষ্টের শুদ্ধ রক্তের মাধ্যমে যারা উপকার পাচ্ছেন তারা আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে শুচি থাকার ওপর জোর দিয়ে থাকেন। এর ফলে তারা ঈশ্বরের সামনে এক “শুচি হৃদয়” এবং ‘শুচি সংবেদ’ বজায় রাখেন। (মার্ক ৭:১৫; ১ তীমথিয় ১:৫; ৩:৯; ২ তীমথিয় ১:৩) শুচি সংবেদ বা বিবেকসম্পন্ন এই ব্যক্তিদের কাছে “সকলই শুচি” কিন্তু অন্যদিকে অবিশ্বাসী ব্যক্তিদের বিবেক কলুষিত ও তাদের কাছে “কিছুই শুচি নয়।” (তীত ১:১৫) যারা শুচি ও হৃদয়ে বিশুদ্ধ থাকতে চান, তাদের যিশাইয় ৫২:১১ পদের পরামর্শে মনোযোগ দেওয়া দরকার, যা বলে: “অশুচি কোন বস্তু স্পর্শ করিও না, . . . হে সদাপ্রভুর পাত্রবাহকগণ, তোমরা বিশুদ্ধ হও।” (গীতসংহিতা ২৪:৪; মথি ৫:৮) তা করে, তাদের “হস্ত” রূপক অর্থে শুচি হয় এবং ঈশ্বর তাদের সঙ্গে শুচি ব্যক্তির মতো আচরণ করেন।—যাকোব ৪:৮; ২ শমূয়েল ২২:২৭; গীতসংহিতা ১৮:২৬; দানিয়েল ১১:৩৫; ১২:১০.
যদিও প্রেরিত পৌল ব্যবস্থার অধীন ছিলেন না কিন্তু তবুও, তিনি একবার ব্যবস্থা অনুসারে রীতিগতভাবে নিজেকে মন্দিরে শুচি করেছিলেন। এটা কি তার জন্য অসংগতিপূর্ণ ছিল? পৌল ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বা এর পদ্ধতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেননি; তিনি কেবল দেখিয়েছিলেন, খ্রীষ্টানদেরকে যে এর প্রতি বাধ্য থাকতেই হবে, তা ঈশ্বর বলেননি। এর পদ্ধতিগুলো যদি নতুন খ্রীষ্টীয় সত্যগুলোকে লঙ্ঘন না করত, তাহলে ব্যবস্থায় ঈশ্বর যা যা করতে বলেছিলেন, তা করা আপত্তিজনক ছিল না। পৌল তা করেছিলেন, যাতে যিহুদিরা শুধু শুধু যীশু খ্রীষ্ট সম্বন্ধে সুসমাচার শোনা থেকে পিছিয়ে না পড়ে। (প্রেরিত ২১:২৪, ২৬; ১ করিন্থীয় ৯:২০) এই সমস্ত কিছু করে পৌল অন্যদের পরিত্রাণের জন্য প্রচুর চিন্তা দেখিয়েছিলেন ও তার সাধ্যমতো চেষ্টা করেছিলেন। তাই তিনি বলতে পেরেছিলেন: “সকলের রক্তের দায় হইতে আমি শুচি।” (প্রেরিত ২০:২৬; ১৮:৬) আসুন আমরা শারীরিক, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে শুচি থাকার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করি। তা করলে আমরা যিহোবার সহর্ষ অনুমোদন লাভ করতে পারব।