সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

তারা তাদের মাংসের কন্টকগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করেছিলেন

তারা তাদের মাংসের কন্টকগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করেছিলেন

তারা তাদের মাংসের কন্টকগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করেছিলেন

“আমার মাংসে একটা কন্টক, শয়তানের এক দূত, আমাকে দত্ত হইল, যেন সে আমাকে মুষ্ট্যাঘাত করে।”২ করিন্থীয় ১২:৭.

১. আজকে লোকেরা যে সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হচ্ছে, তার কয়েকটা কী?

 আপনি কি কোন কঠিন অবস্থার সঙ্গে লড়াই করে চলেছেন? যদি তাই হয়, তাহলে আপনি একা নন। এই ‘বিষম সময়ে’ বিশ্বস্ত খ্রীষ্টানরা তীব্র বিরোধিতা, পারিবারিক সমস্যা, অসুস্থতা, টাকাপয়সার অভাব, উদ্বেগ, মানসিক চাপ, প্রিয়জনের মৃত্যু এবং আরও অন্যান্য কঠিন অবস্থার সঙ্গে মোকাবিলা করছেন। (২ তীমথিয় ৩:১-৫) কিছু কিছু দেশে খাদ্যের অভাব ও যুদ্ধ লোকেদের জীবনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

২, ৩. আমরা যে কন্টকতুল্য সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হই তার থেকে কোন্‌ নেতিবাচক মনোভাব আসতে পারে এবং কীভাবে তা বিপদজনক হতে পারে?

এই সমস্যাগুলোর কারণে একজন একেবারে ভেঙে পড়তে পারেন, বিশেষ করে বেশ কয়েকটা সমস্যা যদি একই সময়ে চারদিক থেকে এসে উপস্থিত হয়। হিতোপদেশ ২৪:১০ পদ কী বলে দেখুন: “সঙ্কটের দিনে যদি অবসন্ন হও, তবে তোমার শক্তি সঙ্কুচিত।” হ্যাঁ, বিভিন্ন কষ্টের কারণে অবসন্ন হওয়া বা নিরুৎসাহ হয়ে পড়া আমাদের অতীব জরুরি শক্তিকে কেড়ে নিতে পারে এবং শেষ পর্যন্ত স্থির থাকার বিষয়ে আমাদের সংকল্পকে দুর্বল করে দিতে পারে। কীভাবে?

নিরুৎসাহ হলে আমরা নিরপেক্ষভাবে বিচার করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে পারি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমরা সহজেই আমাদের কষ্টগুলোকে বড় করে দেখতে পারি ও নিজেদের জন্য দুঃখ করা শুরু করতে পারি। এমনকি কেউ কেউ দুঃখ করে ঈশ্বরের কাছে বলতে পারে, “তুমি কেন এটা ঘটতে দিচ্ছ?” একজন ব্যক্তির হৃদয়ে যদি এইরকম নেতিবাচক মনোভাব গেঁথে যায়, তাহলে এটা তার আনন্দ ও আস্থাকে নষ্ট করে দিতে পারে। ফলে, ঈশ্বরের একজন দাস এতটাই নিরুৎসাহ হয়ে পড়তে পারেন যে, ‘বিশ্বাসের উত্তম যুদ্ধে প্রাণপণ করা’ পর্যন্ত বাদ দিয়ে দিতে পারেন।—১ তীমথিয় ৬:১২.

৪, ৫. কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের সমস্যার সঙ্গে শয়তান কীভাবে জড়িত কিন্তু তবুও, আমরা কোন্‌ আস্থা রাখতে পারি?

আমাদের পরীক্ষার জন্য যিহোবা ঈশ্বর দায়ী নন। (যাকোব ১:১৩) আমরা তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত থাকার চেষ্টা করছি বলে আমাদের ওপর কিছু কিছু পরীক্ষা আসে। আসলে, যারা যিহোবাকে সেবা করে তারা যিহোবার প্রধান শত্রু শয়তান দিয়াবলের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। যে অল্প সময় বাকি আছে, সেই সময়ের মধ্যে “এই যুগের” মন্দ “দেব” এমন চেষ্টা করছে যাতে যারা যিহোবার ইচ্ছা পালন করছেন, তারা যেন তা করা বাদ দিয়ে দেন। (২ করিন্থীয় ৪:৪) সারা পৃথিবীতে আমাদের ভ্রাতৃসমাজের ওপর শয়তান যতটা পারে দুঃখকষ্ট নিয়ে আসার জন্য সচেষ্ট। (১ পিতর ৫:৯) এটা স্বীকার করতেই হবে যে, আমাদের সব সমস্যার জন্যই সরাসরি শয়তান দায়ী নয় কিন্তু আমরা যে সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হই, সেগুলোর সুযোগ নিয়ে সে আমাদেরকে আরও বেশি দুর্বল করে দেওয়ার চেষ্টা করে।

তবে, শয়তান বা তার হাতিয়ারগুলো যত শক্তিশালীই হোক না কেন, আমরা তাকে পরাজিত করতে পারি! এই বিষয়ে আমরা কীভাবে নিশ্চিত হতে পারি? কারণ যিহোবা ঈশ্বর আমাদের পক্ষে যুদ্ধ করেন। তিনি লক্ষ্য রাখেন যে, শয়তানের ফাঁদগুলো সম্বন্ধে তাঁর দাসেরা যেন অজ্ঞাত না থাকে। (২ করিন্থীয় ২:১১) আসলে, যে পরীক্ষাগুলো সত্য খ্রীষ্টানদের কষ্ট দেয় সেই সম্বন্ধে ঈশ্বরের বাক্য আমাদেরকে অনেক কিছু জানায়। প্রেরিত পৌলের বেলায় এটাকে বাইবেলে “মাংসে একটা কন্টক” বলা হয়েছে। কেন? আসুন আমরা দেখি যে, ঈশ্বরের বাক্য এই বাক্যাংশকে কীভাবে ব্যাখ্যা করে। তারপর আমরা দেখতে পাব যে, পরীক্ষাগুলোকে কাটিয়ে উঠতে আমরা একাই শুধু যিহোবার সাহায্য চাইছি না।

যে কারণে পরীক্ষাগুলো কন্টকতুল্য

৬. “মাংসে একটা কন্টক” বলতে পৌল কী বুঝিয়েছিলেন আর সেই কন্টক হয়তো কী হতে পারে?

পৌল চরম পরীক্ষার মুখোমুখি হয়ে এই কথা লিখেছিলেন: “আমার মাংসে একটা কন্টক, শয়তানের এক দূত, আমাকে দত্ত হইল, যেন সে আমাকে মুষ্ট্যাঘাত করে, যেন আমি অতিমাত্র দর্প না করি।” (২ করিন্থীয় ১২:৭) পৌলের মাংসে এই কন্টক বা কাঁটা কী ছিল? চামড়ার গভীরে কাঁটা আটকালে তা নিশ্চয়ই খুব বেদনাদায়ক হবে। তাই, এখানে যে রূপক বিষয়টা ব্যবহার করা হয়েছে, তা পৌলের জন্য শারীরিক, মানসিক বা দুদিক দিয়েই বেদনাদায়ক ছিল। হতে পারে পৌল চোখের সমস্যায় বা অন্য কোন শারীরিক অসুখে ভুগছিলেন। কিংবা সেই কন্টক হতে পারে সেই ব্যক্তিরা, যারা পৌলের প্রেরিত পদ নিয়ে বির্তক করেছিল এবং তার প্রচার ও শিক্ষা দেওয়ার ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। (২ করিন্থীয় ১০:১০-১২; ১১:৫, ৬, ১৩) যাই হোক না কেন, ওই কন্টক পৌলের মধ্যেই ছিল ও সেটাকে সরানো যাচ্ছিল না।

৭, ৮. (ক) “মুষ্ট্যাঘাত করে” কথাগুলো দিয়ে কী বোঝা যায়? (খ) এখন আমাদেরকে যে কন্টক জর্জরিত করছে তার সঙ্গে মোকাবিলা করা কেন জরুরি?

লক্ষ্য করুন যে, সেই কন্টক পৌলকে আঘাত করছিল। আগ্রহের ব্যাপার হল, এখানে পৌল যে গ্রিক ক্রিয়াপদটা ব্যবহার করেছেন সেটা “আঙুলের গাঁটগুলো”-র জন্য যে শব্দ ব্যবহার করা হয় তার থেকে এসেছে। মথি ২৬:৬৭ পদে আক্ষরিক অর্থে এবং ১ করিন্থীয় ৪:১১ পদে রূপক অর্থে এই শব্দটা ব্যবহার করা হয়েছে। ওই পদগুলো থেকে মুষ্টি দিয়ে আঘাত করার ধারণা পাওয়া যায়। যিহোবা ও তাঁর দাসদের প্রতি শয়তানের তীব্র ঘৃণা দেখে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, একটা কন্টক পৌলকে আঘাত করছিল জেনে দিয়াবল খুশি হয়েছিল। আজকে আমরা যখন আমাদের মাংসে কন্টকের কারণে যন্ত্রণা পাই, তখনও শয়তান ঠিক এইরকম খুশি হয়।

তাই পৌলের মতো আমাদেরও জানা দরকার যে, এইরকম কন্টকগুলোকে কীভাবে মোকাবিলা করা যায়। তা করার ওপর আমাদের জীবন নির্ভর করে! মনে রাখবেন, যিহোবা চান আমরা যেন তাঁর নতুন জগতে চিরকাল বেঁচে থাকি, যেখানে কন্টকতুল্য সমস্যাগুলো আমাদেরকে আর কখনও জর্জরিত করবে না। এই চমৎকার পুরস্কারটা পেতে সাহায্য করার জন্য ঈশ্বর আমাদেরকে তাঁর পবিত্র বাক্য বাইবেলে অনেক উদাহরণ জুগিয়েছেন, যেগুলো দেখায় যে তাঁর বিশ্বস্ত দাসেরা তাদের মাংসের কন্টকগুলোর সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করেছেন। তারা আমাদের মতোই সাধারণ ও অসিদ্ধ মানুষ ছিলেন। এইরকম বৃহৎ ‘সাক্ষিমেঘের’ কয়েকজন ব্যক্তির বিষয় বিবেচনা করা আমাদেরকে ‘ধৈর্য্যপূর্ব্বক সম্মুখস্থ ধাবনক্ষেত্রে দৌড়িতে’ সাহায্য করতে পারে। (ইব্রীয় ১২:১) তারা যে ধৈর্য ধরেছিলেন সেই বিষয়টা নিয়ে ধ্যান করা আমাদেরকে এই আস্থা গড়ে তুলতে সাহায্য করতে পারে যে, শয়তান আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে চায় এমন যে কোন কন্টককেই আমরা মোকাবিলা করতে পারি।

যে কন্টকগুলো মফীবোশৎকে যন্ত্রণা দিয়েছিল

৯, ১০. (ক) কীভাবে মফীবোশতের মাংসে একটা কন্টক ছিল? (খ) মফীবোশৎকে রাজা দায়ূদ কীরকম দয়া দেখিয়েছিলেন এবং কীভাবে আমরা দায়ূদকে অনুকরণ করতে পারি?

দায়ূদের বন্ধু যোনাথনের ছেলে মফীবোশতের কথা ভেবে দেখুন। মফীবোশতের বয়স যখন পাঁচ বছর, তখন তার বাবা যোনাথন ও দাদু রাজা শৌল নিহত হন। এই খবর পেয়ে ওই ছেলের ধাত্রী খুবই ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। তিনি “তাহাকে তুলিয়া লইয়া . . . শীঘ্র পলাইতে যাওয়ায় সে পতিত হইয়া খঞ্জ হইয়াছিল।” (২ শমূয়েল ৪:৪) মফীবোশৎ যখন বড় হয়ে উঠেছিলেন, তখন এই অক্ষমতা সহ্য করা নিশ্চয়ই তার জন্য এক বিরাট কন্টক ছিল।

১০ রাজা দায়ূদ যোনাথনকে অনেক ভালবাসতেন বলে কয়েক বছর পর মফীবোশতের প্রতি দয়া দেখিয়েছিলেন। দায়ূদ শৌলের সমস্ত সম্পত্তি তাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন এবং ওই জমি দেখাশোনা করার জন্য শৌলের ভৃত্য সীবঃকে নিযুক্ত করেছিলেন। এছাড়াও দায়ূদ মফীবোশৎকে বলেছিলেন: “তুমি নিত্য আমার মেজে ভোজন করিবে।” (২ শমূয়েল ৯:৬-১০) কোন সন্দেহ নেই যে, দায়ূদের দয়া মফীবোশৎকে সান্ত্বনা দিয়েছিল এবং তার অক্ষমতার দুঃখকে অনেকটা লাঘব করেছিল। কত সুন্দর এক শিক্ষা! মাংসে কন্টকের সঙ্গে লড়াই করছে এমন ব্যক্তিদের প্রতি আমাদেরও দয়া দেখানো উচিত।

১১. মফীবোশতের সম্বন্ধে সীবঃ কী অভিযোগ করেছিল কিন্তু কীভাবে আমরা জানি যে, তার এই দাবি আসলে মিথ্যা ছিল? (পাদটীকা দেখুন।)

১১ পরে মফীবোশৎকে তার মাংসের আরেকটা কন্টকের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছিল। রাজা দায়ূদ যখন নিজের ছেলে অবশালেমের বিদ্রোহের কারণে যিরূশালেম থেকে পালিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন মফীবোশতের দাস সীবঃ, রাজা দায়ূদের কাছে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা রটিয়েছিল। সীবঃ বলেছিল যে, মফীবোশৎ রাজত্ব পাওয়ার আশায় বিশ্বাসঘাতকতা করে যিরূশালেমে থেকে গেছে। * সীবঃর মিথ্যা কথা দায়ূদ বিশ্বাস করেছিলেন এবং মফীবোশতের সমস্ত সম্পত্তি সেই মিথ্যাবাদীকে দিয়ে দিয়েছিলেন!—২ শমূয়েল ১৬:১-৪.

১২. মফীবোশৎ তার পরিস্থিতির প্রতি কেমন মনোভাব দেখিয়েছিলেন এবং কীভাবে তিনি আমাদের সবার জন্য এক সুন্দর উদাহরণ?

১২ কিন্তু শেষ পর্যন্ত দায়ূদের সঙ্গে যখন মফীবোশতের দেখা হয়েছিল, তখন তিনি রাজাকে আসল ঘটনা খুলে বলেন। তিনি আসলে দায়ূদের কাছে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন আর তখন সীবঃ তার সঙ্গে প্রতারণা করে ও তার জায়গায় সে নিজে সেখানে চলে যায়। দায়ূদ কি এই অন্যায়ের বিচার করেছিলেন? কিছুটা। তিনি এই দুই ব্যক্তির মধ্যে সম্পত্তি ভাগ করে দিয়েছিলেন। এটাই ছিল মফীবোশতের মাংসের আরেকটা সম্ভাব্য কন্টক। এই কারণে তিনি কি অনেক দুঃখ পেয়েছিলেন? ন্যায়বিচার হয়নি বলে তিনি কি চিৎকার করে দায়ূদের সিদ্ধান্তে আপত্তি জানিয়েছিলেন? না, তিনি নম্রভাবে দায়ূদের ইচ্ছাকে মেনে নিয়েছিলেন। তিনি ভাল বিষয়গুলোতে মন দিয়েছিলেন, ইস্রায়েলের ন্যায্য রাজা নিরাপদে ফিরে এসেছিলেন বলে আনন্দ করেছিলেন। শারীরিক অক্ষমতা, মিথ্যা অপবাদ এবং হতাশা সহ্য করে মফীবোশৎ সত্যিই এক চমৎকার উদাহরণ রেখেছিলেন।—২ শমূয়েল ১৯:২৪-৩০.

নহিমিয় তার পরীক্ষাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করেছিলেন

১৩, ১৪. নহিমিয় যখন আবার যিরূশালেমের প্রাচীর নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন, তখন তাকে কোন্‌ কোন্‌ কন্টক সহ্য করতে হয়েছিল?

১৩ সাধারণ কাল পূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে নহিমিয় যখন প্রাচীরহীন যিরূশালেমে ফিরে এসেছিলেন, তখন তিনি যে রূপক কন্টকগুলো সহ্য করেছিলেন, তা একটু ভেবে দেখুন। তিনি দেখেছিলেন যে, ওই শহর একেবারে অরক্ষিত ছিল এবং ফিরে আসা যিহুদিরা অসংগঠিত, নিরুৎসাহিত এবং যিহোবার চোখে অশুচি ছিল। রাজা অর্তক্ষস্ত যদিও যিরূশালেমের প্রাচীর আবারও নির্মাণের জন্য অনুমতি দিয়েছিলেন কিন্তু শীঘ্রিই নহিমিয় জানতে পেরেছিলেন যে, প্রতিবেশী দেশগুলোর দেশাধ্যক্ষরা তার এই কাজকে একটুও পছন্দ করে না। তারা “ইস্রায়েল-সন্তানদের মঙ্গল চেষ্টার জন্য এক জন লোক আসিয়াছে, ইহা বুঝিয়া অতিশয় অসন্তুষ্ট হইল।”—নহিমিয় ২:১০.

১৪ নহিমিয়ের কাজকে বন্ধ করে দেওয়ার জন্য ওই বিদেশি বিরোধীরা সমস্ত কিছুই করেছিল। তাদের হুমকি, মিথ্যা কথা, অপবাদ, ভয় দেখানো—সেইসঙ্গে তাকে নিরুৎসাহিত করার জন্য গুপ্তচরদের পাঠানো—নিশ্চয়ই সবসময় তার মাংসে কন্টকের মতোই ছিল। তিনি কি ওই শত্রুদের চাতুরিগুলোর প্রতি বশ্যতা স্বীকার করেছিলেন? না! তিনি ঈশ্বরের ওপর পূর্ণ আস্থা রেখেছিলেন, একটুও দুর্বল হননি। তাই, যিরূশালেমের প্রাচীর যখন শেষ পর্যন্ত নির্মিত হয়েছিল, তখন তা নহিমিয়ের প্রতি যিহোবার প্রেমপূর্ণ সমর্থনের প্রমাণ দিয়েছিল।—নহিমিয় ৪:১-১২; ৬:১-১৯.

১৫. যিহুদিদের মধ্যে কোন্‌ সমস্যাগুলো নহিমিয়কে গভীর যন্ত্রণা দিয়েছিল?

১৫ দেশাধ্যক্ষ হিসেবে, নহিমিয়কেও ঈশ্বরের লোকেদের মধ্যে অন্যান্য সমস্যাগুলোর সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছিল। এই সমস্যাগুলো কন্টকের মতো ছিল, যা তাকে গভীরভাবে যন্ত্রণা দিয়েছিল কারণ সেগুলো যিহোবার সঙ্গে লোকেদের সম্পর্ককে প্রভাবিত করেছিল। ধনী ব্যক্তিরা প্রচুর সুদ আদায় করছিল এবং ধার শোধ করার ও সেইসঙ্গে পারসিক কর পরিশোধ করার জন্য তাদের গরিব ভাইদের জমি ছেড়ে দিতে ও এমনকি ছেলেমেয়েদেরকে দাস হিসেবে বিক্রি করে দিতে হয়েছিল। (নহিমিয় ৫:১-১০) অনেক যিহুদিরা বিশ্রামবার লঙ্ঘন করেছিল এবং লেবীয়দেরকে ও মন্দিরে যা দেওয়ার কথা ছিল, তা দিতে পারেনি। এছাড়াও কেউ কেউ “অস্‌দোদীয়া, অম্মোনীয়া ও মোয়াবীয়া” মেয়েদেরকে বিয়ে করেছিল। এটা নহিমিয়কে কত দুঃখই না দিয়েছিল! কিন্তু, এই কন্টকগুলোর একটাও তাকে থামিয়ে দিতে পারেনি। বারবার তিনি ঈশ্বরের ধার্মিক আইনগুলোর একজন উদ্যোগী সমর্থক হিসেবে উঠে দাঁড়িয়েছিলেন। নহিমিয়ের মতো, আমরা যেন কখনও অন্যদের অবিশ্বস্ত আচরণকে যিহোবার প্রতি আমাদের নিষ্ঠাপূর্ণ সেবায় বাধা হতে না দিই।—নহিমিয় ১৩:১০-১৩, ২৩-২৭.

অন্যান্য যে বিশ্বস্ত ব্যক্তিরা মোকাবিলা করেছিলেন

১৬-১৮. পারিবারিক দ্বন্দ্ব কীভাবে ইস্‌হাক ও রিবিকা, হান্না, দায়ূদ এবং হোশেয়কে জর্জরিত করেছিল?

১৬ বাইবেলে এমন আরও অনেকের উদাহরণ আছে, যারা কন্টকতুল্য কঠিন পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করেছিলেন। এইরকম কন্টকগুলোর মধ্যে একটা সাধারণ কারণ ছিল পারিবারিক সমস্যা। এষৌর দুই স্ত্রী তার বাবামা “ইস্‌হাকের ও রিবিকার মনের দুঃখদায়িকা হইল।” এমনকি রিবিকা বলেছিলেন যে, এই স্ত্রীদের জন্য তার জীবন অতিষ্ট হয়ে উঠেছিল। (আদিপুস্তক ২৬:৩৪, ৩৫; ২৭:৪৬) এছাড়া হান্নার কথাও ভেবে দেখুন যে, তিনি বন্ধ্যা ছিলেন বলে তার সতিন পনিন্না কীভাবে হান্নার ‘মনস্তাপ জন্মাইত।’ সম্ভবত হান্না ঘরের মধ্যে প্রায়ই এই উপহাস সহ্য করতেন। এছাড়াও এই পরিবার যখন অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য শীলোতে যেত, তখন পনিন্না সবার সামনেই—কোন সন্দেহ নেই যে আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের সামনেও—তাকে টিটকারি দিত। এটা হান্নার মাংসের একেবারে গভীরে কন্টক বিদ্ধ করে দেওয়ার মতোই ছিল।—১ শমূয়েল ১:৪-৭.

১৭ একটু ভেবে দেখুন যে, দায়ূদের শ্বশুর রাজা শৌল যখন প্রচণ্ড হিংসা করেছিলেন, তখন দায়ূদকে কত কষ্ট সহ্য করতে হয়েছিল। তার নিজের জীবন রক্ষা করার জন্য দায়ূদকে ঐন্‌-গদী প্রান্তরের গুহায় বাস করতে হয়েছিল, যেখানে তাকে খাড়া ও বিপদজনক পাহাড়ি এলাকায় চলাচল করতে হয়েছিল। এই অবিচার নিশ্চয়ই অনেক যন্ত্রণাদায়ক ছিল কারণ শৌলের বিরুদ্ধে তিনি কিছুই করেননি। তবুও, একমাত্র শৌলের হিংসার কারণে বছরের পর বছর ধরে দায়ূদকে তার জীবন বাঁচানোর জন্য পালিয়ে পালিয়ে থাকতে হয়েছিল।—১ শমূয়েল ২৪:১৪, ১৫; হিতোপদেশ ২৭:৪.

১৮ এছাড়াও, ভাববাদী হোশেয়র পারিবারিক দ্বন্দ্বের কথা ভেবে দেখুন। তার স্ত্রী ব্যভিচার করেছিল। স্ত্রীর অনৈতিকতা হোশেয়ের মনে কন্টকের মতো বিঁধত। আর তিনি কত দুঃখই না সহ্য করেছিলেন, যখন তার স্ত্রী ব্যভিচারের কারণে দুটো অবৈধ সন্তানের জন্ম দিয়েছিল!—হোশয় ১:২-৯.

১৯. ভাববাদী মীখায়কে কীধরনের তাড়না জর্জরিত করেছিল?

১৯ মাংসের আরেকটা কন্টক হল তাড়না। ভাববাদী মীখায়ের কথা বিবেচনা করুন। দুষ্ট রাজা আহাবের চারিদিকে মিথ্যা ভাববাদীরা ছিল এবং তাদের ডাহা মিথ্যা কথা আহাব বিশ্বাস করেছিলেন দেখে মীখায়ের ধার্মিক প্রাণে যন্ত্রণা হচ্ছিল। এরপর মীখায় যখন আহাবকে বলেছিলেন যে, সেই ভাববাদীরা ‘মিথ্যাবাদী আত্মায়’ কথা বলছে, তখন ওই ভণ্ড ভাববাদীদের নেতা কী করেছিলেন? তিনি ‘মীখায়ের গালে চড় মারিলেন’! রামোৎ-গিলিয়দ পুনরাধিকার করার অভিযানে যে আহাব সফল হবে না, সেই বিষয়ে যিহোবার সাবধানবাণীর প্রতি আহাবের মনোভাব আরও বেশি দুঃখজনক ছিল। আহাব মীখায়কে কারাগারে ভরার এবং অল্প খাবার ও জল দেওয়ার আদেশ দিয়েছিলেন। (১ রাজাবলি ২২:৬, ৯, ১৫-১৭, ২৩-২৮) এছাড়া, মনে করে দেখুন যে, যিরমিয়ের সঙ্গে খুনি তাড়নাকারীরা কেমন আচরণ করেছিলেন।—যিরমিয় ২০:১-৯.

২০. নয়মীকে কোন্‌ কোন্‌ কন্টক সহ্য করতে হয়েছিল এবং তিনি কীভাবে পুরস্কার পেয়েছিলেন?

২০ প্রিয়জনের মৃত্যু হল আরেকটা দুঃখজনক বিষয়, যা মাংসে কন্টক হতে পারে। নয়মীর স্বামী ও দুই ছেলে মারা যাওয়ায় তাকে কত দুঃখ সহ্য করতে হয়েছিল। এত কষ্টকর আঘাত পেয়েও তিনি বৈৎলেহমে ফিরে এসেছিলেন। তিনি তার প্রতিবেশীদেরকে তাকে আর নয়মী বলে না ডেকে মারা ডাকতে বলেছিলেন, যে নাম থেকে তার তিক্ত অভিজ্ঞতার আভাস পাওয়া যায়। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত যিহোবা তাঁর ধৈর্যের পুরস্কার হিসেবে তাকে নাতি দিয়ে আশীর্বাদ করেছিলেন, যার বংশে মশীহ এসেছিলেন।—রূতের বিবরণ ১:৩-৫, ১৯-২১; ৪:১৩-১৭; মথি ১:১, ৫.

২১, ২২. ইয়োব কীভাবে সর্বনাশের দ্বারা জর্জরিত হয়েছিলেন কিন্তু তিনি কীভাবে সাড়া দিয়েছিলেন?

২১ ইয়োব যখন হঠাৎ তার দশজন ছেলেমেয়ের মৃত্যু সংবাদ ও সেইসঙ্গে তার সমস্ত পশুপাল ও দাসদাসীকে হারানোর সংবাদ পেয়েছিলেন, তখন তিনি কতখানি আঘাত পেয়েছিলেন, তা ভেবে দেখুন। তার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছিল! ইয়োবের প্রতি এই আঘাত শেষ হতে না হতেই শয়তান তাকে অসুস্থ করে ফেলেছিল। ইয়োব হয়তো ভেবেছিলেন যে, এই মারাত্মক অসুস্থতার কারণে তিনি মারাই যাবেন। তার ব্যথা এতটাই অসহ্য ছিল যে, তিনি ভেবেছিলেন মারা গেলেই তিনি স্বস্তি পাবেন।—ইয়োব ১:১৩-২০; ২:৭, ৮.

২২ এত কষ্টের মধ্যে তার স্ত্রী রাগে দুঃখে তার কাছে এসে চিৎকার করে বলেছিলেন: “ঈশ্বরকে জলাঞ্জলি দিয়া প্রাণত্যাগ কর।” ব্যথিত মাংসে এটা কত বড় কন্টকই না ছিল! পরে, ইয়োবের তিনজন বন্ধু তাকে সান্ত্বনা না দিয়ে বরং মিথ্যা যুক্তি দেখিয়ে তাকে আক্রমণ করে এবং ইয়োবের কোন গোপন পাপই তার এই দুর্দশার জন্য দায়ী বলে অভিযোগ করে। বলতে গেলে তাদের এই ভুল যুক্তি কন্টকগুলোকে তার মাংসের আরও গভীরে বিদ্ধ করেছিল। এছাড়াও মনে রাখবেন, ইয়োব জানতেন না যে কেন তার প্রতি এগুলো ঘটছে; কিংবা তিনি এও জানতেন না যে, তার নিজের জীবন রক্ষা করা হয়েছিল। তাসত্ত্বেও, “এই সকলেতে ইয়োব পাপ করিলেন না, এবং ঈশ্বরের প্রতি অবিবেচনার দোষারোপ করিলেন না।” (ইয়োব ১:২২; ২:৯, ১০; ৩:৩; ১৪:১৩; ৩০:১৭) যদিও অনেক কন্টক একসঙ্গে তাকে জর্জরিত করেছিল কিন্তু তবুও, তিনি কখনও বিশ্বস্ততার পথ পরিত্যাগ করেননি। কতই না উৎসাহজনক!

২৩. আমরা যে বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের কথা আলোচনা করেছি, তারা কেন মাংসে তাদের কন্টককে মোকাবিলা করতে পেরেছিলেন?

২৩ আগে বলা এই উদাহরণগুলো ছাড়াও আরও অনেক উদাহরণ আছে। বাইবেলে আরও অনেক রয়েছে। এই সমস্ত বিশ্বস্ত দাসদেরকে তাদের নিজেদের রূপক কন্টকগুলোর সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছিল। আর কত কত সমস্যাই না তারা ভোগ করেছিলেন! তারপরেও একটা ব্যাপারে তাদের সকলের মধ্যে মিল ছিল। তারা কেউই যিহোবার পরিচর্যা করা বাদ দিয়ে দেননি। তাদের সমস্ত কঠিন পরীক্ষা সত্ত্বেও, যিহোবা তাদেরকে যে শক্তি জুগিয়েছিলেন, তার সাহায্যে তারা শয়তানকে পরাজিত করতে পেরেছিলেন। কীভাবে? পরের প্রবন্ধ এই প্রশ্নের উত্তর দেবে এবং আমাদেরকে দেখাবে যে, কীভাবে আমরাও আমাদের মাংসে কন্টকতুল্য কোন কিছুকে মোকাবিলা করতে পারি।

[পাদটীকা]

^ মফীবোশতের মতো এইরকম একজন কৃতজ্ঞ, নম্র ব্যক্তি এমন উচ্চাকাঙ্ক্ষী ষড়যন্ত্র করতে পারেন, তা ভাবাই যায় না। কোন সন্দেহ নেই যে, তিনি তার বাবা যোনাথনের বিশ্বস্ত উদাহরণের কথা জানতেন। রাজা শৌলের পুত্র হওয়া সত্ত্বেও, যোনাথন নম্রভাবে দায়ূদকে ইস্রায়েলের রাজা মনোনয়ন করার বিষয়ে যিহোবার সিদ্ধান্তকে মেনে নিয়েছিলেন। (১ শমূয়েল ২০:১২-১৭) মফীবোশতের ঈশ্বর-ভয়শীল বাবা ও দায়ূদের নিষ্ঠাবান বন্ধু যোনাথন তার বাচ্চা ছেলেকে নিশ্চয়ই রাজকীয় ক্ষমতার জন্য আকাঙ্ক্ষা করতে শেখাননি।

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• আমরা যে সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হই, সেগুলোকে কেন মাংসের কন্টকের সঙ্গে তুলনা করা যায়?

• মফীবোশৎ ও নহিমিয়কে সহ্য করতে হয়েছিল এমন কিছু কন্টক কী?

• মাংসে বিভিন্ন কন্টক সহ্য করেছেন, শাস্ত্রের এমন নারী-পুরুষদের উদাহরণের মধ্যে থেকে কোন্‌টা আপনার হৃদয় স্পর্শ করেছে এবং কেন?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

মফীবোশৎকে শারীরিক অক্ষমতা, অপবাদ এবং হতাশার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হয়েছিল

[১৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

বিরোধিতা সত্ত্বেও নহিমিয় তার অবস্থানে দৃঢ় ছিলেন