সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ঈশ্বরের দেওয়া আলো অন্ধকার দূর করে!

ঈশ্বরের দেওয়া আলো অন্ধকার দূর করে!

ঈশ্বরের দেওয়া আলো অন্ধকার দূর করে!

“সদাপ্রভুই আমার অন্ধকার আলোকময় করেন।”২ শমূয়েল ২২:২৯.

১. কীভাবে জীবনের সঙ্গে আলোর সম্পর্ক রয়েছে?

 “ঈশ্বর কহিলেন, দীপ্তি হউক; তাহাতে দীপ্তি হইল।” (আদিপুস্তক ১:৩) আদিপুস্তকে সৃষ্টির বিবরণে এই গুরুত্বপূর্ণ কথাগুলো দেখায় যে, যিহোবা হলেন আলোর উৎস, যা ছাড়া পৃথিবীতে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। এ ছাড়াও যিহোবা হলেন আধ্যাত্মিক আলোর উৎস, যা জীবনে চলার পথে আমাদের নির্দেশনার জন্য খুবই জরুরি। (গীতসংহিতা ৪৩:৩) আধ্যাত্মিক আলো এবং জীবনের মধ্যে যে-ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, তা দেখাতে গিয়ে রাজা দায়ূদ লিখেছিলেন: “তোমারই কাছে জীবনের উনুই আছে; তোমারই দীপ্তিতে আমরা দীপ্তি দেখিতে পাই।”—গীতসংহিতা ৩৬:৯.

২. পৌলের বর্ণনা অনুসারে, আলোর সঙ্গে কীসের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে?

দায়ূদের সময় থেকে প্রায় ১,০০০ বছর পরে প্রেরিত পৌল সৃষ্টির বিবরণ সম্বন্ধে উল্লেখ করেছিলেন। করিন্থের খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীকে লেখার সময় তিনি বলেছিলেন: “ঈশ্বর বলিয়াছিলেন, ‘অন্ধকারের মধ্য হইতে দীপ্তি প্রকাশিত হইবে।’” এরপর পৌল দেখিয়েছিলেন যে, আধ্যাত্মিক আলোর সঙ্গে যিহোবার কাছ থেকে পাওয়া জ্ঞানের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে, যখন তিনি আরও বলেছিলেন: “তিনিই আমাদের হৃদয়ে দীপ্তি প্রকাশ করিলেন, যেন যীশু খ্রীষ্টের মুখমণ্ডলে ঈশ্বরের গৌরবের জ্ঞান-দীপ্তি প্রকাশ পায়।” (২ করিন্থীয় ৪:৬) কীভাবে এই আলো আমাদের কাছে আসে?

বাইবেল—আলোর প্রেরক

৩. বাইবেলের মাধ্যমে যিহোবা কোন্‌ আলো জোগান?

যিহোবা মূলত তাঁর অনুপ্রাণিত বাক্য বাইবেলের মাধ্যমে আধ্যাত্মিক আলো দেন। তাই, আমরা যখন বাইবেল অধ্যয়ন করি এবং ঈশ্বরের দেওয়া জ্ঞান নিই, তখন আমরা তাঁর আলোকে আমাদের ওপর আলোকিত হতে দিই। বাইবেলের মাধ্যমে যিহোবা তাঁর উদ্দেশ্যগুলোর ওপর আলোকপাত করেন এবং আমাদেরকে জানান যে, আমরা কীভাবে তাঁর ইচ্ছা পালন করতে পারি। এটা আমাদের জীবনে উদ্দেশ্য এনে দেয় এবং আধ্যাত্মিক চাহিদাগুলো পূরণ করতে সাহায্য করে। (উপদেশক ১২:১; মথি ৫:৩, NW) আমাদের আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর প্রতি যত্ন নেওয়ার বিষয়ে জোর দিয়ে যীশু মোশির আইন থেকে উদ্ধৃতি করে বলেছিলেন: “লেখা আছে, ‘মনুষ্য কেবল রুটীতে বাঁচিবে না, কিন্তু ঈশ্বরের মুখ হইতে যে প্রত্যেক বাক্য নির্গত হয়, তাহাতেই বাঁচিবে।’”—মথি ৪:৪; দ্বিতীয় বিবরণ ৮:৩.

৪. কীভাবে যীশু “জগতের জ্যোতি”?

আধ্যাত্মিক আলোর সঙ্গে যীশু ওতপ্রতোভাবে জড়িত ছিলেন। সত্যিই, তিনি নিজেকে “জগতের জ্যোতি” হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন এবং বলেছিলেন: “যে আমার পশ্চাৎ আইসে, সে কোন মতে অন্ধকারে চলিবে না, কিন্তু জীবনের দীপ্তি পাইবে।” (যোহন ৮:১২) এই কথাগুলো আমাদেরকে মানবজাতির কাছে যিহোবার সত্য জানানোর বিষয়ে যীশুর প্রধান ভূমিকা সম্বন্ধে বুঝতে সাহায্য করে। আমরা যদি অন্ধকারে না চলে ঈশ্বরের আলোয় চলতে চাই, তা হলে বাইবেলে লেখা যীশুর সমস্ত কথা আমাদের শুনতে হবে এবং তাঁর উদাহরণ ও শিক্ষাগুলো নিখুঁতভাবে মেনে চলতে হবে।

৫. যীশুর মৃত্যুর পর তাঁর অনুসারীদের কোন্‌ দায়িত্ব ছিল?

যীশু তাঁর মৃত্যুর কয়েক দিন আগে আবারও নিজেকে জ্যোতি বলে উল্লেখ করে শিষ্যদেরকে বলেছিলেন: “আর অল্প কালমাত্র জ্যোতি তোমাদের মধ্যে আছে। যাবৎ তোমাদের কাছে জ্যোতি আছে, যাতায়াত কর, যেন অন্ধকার তোমাদের উপরে আসিয়া না পড়ে; আর যে ব্যক্তি অন্ধকারে যাতায়াত করে, সে কোথায় যায়, তাহা জানে না। যাবৎ তোমাদের কাছে জ্যোতি আছে, সেই জ্যোতিতে বিশ্বাস কর, যেন তোমরা জ্যোতির সন্তান হইতে পার।” (যোহন ১২:৩৫, ৩৬) যারা জ্যোতির সন্তান হয়েছিলেন তারা বাইবেলের “নিরাময় বাক্য সমূহের আদর্শ” শিখেছিলেন। (২ তীমথিয় ১:১৩, ১৪) এরপর তারা আন্তরিক ব্যক্তিদেরকে অন্ধকার থেকে ঈশ্বরের আলোয় নিয়ে আসার জন্য এই নিরাময় বাক্য ব্যবহার করেছিলেন।

৬. ১ যোহন ১:৫ পদে আলো এবং অন্ধকার সম্বন্ধে আমরা কোন্‌ মূল সত্য পাই?

প্রেরিত যোহন লিখেছিলেন: “ঈশ্বর জ্যোতি, এবং তাঁহার মধ্যে অন্ধকারের লেশমাত্র নাই।” (১ যোহন ১:৫) এখানে আলো এবং অন্ধকারের মধ্যে যে-পার্থক্য রয়েছে, তা লক্ষ্য করুন। আধ্যাত্মিক আলোর উৎস হলেন যিহোবা আর তাঁর মধ্যে কোন আধ্যাত্মিক অন্ধকার থাকতে পারে না। তা হলে, অন্ধকারের উৎস কে?

আধ্যাত্মিক অন্ধকার—এর উৎস

৭. জগতের আধ্যাত্মিক অন্ধকারের পিছনে কে রয়েছে এবং তার কেমন প্রভাব রয়েছে?

প্রেরিত পৌল ‘এই যুগের দেবের’ বিষয়ে বলেছিলেন। এই কথাগুলো দিয়ে তিনি আসলে শয়তান দিয়াবলকে বুঝিয়েছেন। তিনি আরও বলেছিলেন যে, সে “অবিশ্বাসীদের মন অন্ধ করিয়াছে, যেন ঈশ্বরের প্রতিমূর্ত্তি যে খ্রীষ্ট, তাঁহার গৌরবের সুসমাচার-দীপ্তি তাহাদের প্রতি উদয় না হয়।” (২ করিন্থীয় ৪:৪) অনেকে ঈশ্বরে বিশ্বাস করে বলে দাবি করে; কিন্তু তাদের মধ্যে অনেকেই দিয়াবলে বিশ্বাস করে না। কেন? কোন অতিমানবীয় মন্দ শক্তি আসলেই থাকতে পারে এবং তাদের চিন্তাভাবনার ওপর ছাপ ফেলতে পারে, এটা তারা মেনে নিতে চায় না। কিন্তু, পৌল দেখিয়েছেন যে দিয়াবল আছে এবং লোকেরা যাতে সত্যের আলো দেখতে না পায় তার জন্য সে তাদেরকে সেইমতো প্রভাবিত করে। মানুষের চিন্তাভাবনার ওপর প্রভাব ফেলার জন্য শয়তানের যে-ক্ষমতা রয়েছে, সেটা তার সম্বন্ধে করা ভবিষ্যদ্বাণীতে দেখা যায়, যেখানে বলা আছে, “সে সমস্ত নরলোকের ভ্রান্তি জন্মায়।” (প্রকাশিত বাক্য ১২:৯) শয়তানের কাজগুলোর ফলে যিহোবার সেবকরা ছাড়া বাকি সমস্ত মানুষের অবস্থা ভাববাদী যিশাইয়ের বলা ভবিষ্যদ্বাণীর মতো: “দেখ, অন্ধকার পৃথিবীকে, ঘোর তিমির জাতিগণকে, আচ্ছন্ন করিতেছে।”—যিশাইয় ৬০:২.

৮. যারা আধ্যাত্মিক অন্ধকারের মধ্যে রয়েছে তারা কোন্‌ কোন্‌ উপায়ে দেখায় যে তারা বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছে?

ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যে কোন কিছুই দেখা সম্ভব নয়। একজন ব্যক্তি খুব সহজেই পথ হারিয়ে ফেলতে বা বিভ্রান্ত হয়ে পড়তে পারে। একইভাবে, যারা আধ্যাত্মিক অন্ধকারের মধ্যে রয়েছে তাদের বোঝার ক্ষমতা না থাকায় খুব শীঘ্রিই আধ্যাত্মিক অর্থে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। তারা মিথ্যা থেকে সত্যকে এবং ভাল থেকে মন্দকে আলাদা করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে পারে। যারা এইধরনের অন্ধকারের মধ্যে রয়েছে, তাদের সম্বন্ধে উল্লেখ করে ভাববাদী যিশাইয় লিখেছিলেন: “ধিক্‌ তাহাদিগকে, যাহারা মন্দকে ভাল, আর ভালকে মন্দ বলে, আলোকে আঁধার, ও আঁধারকে আলো বলিয়া ধরে, মিষ্টকে তিক্ত, আর তিক্তকে মিষ্ট মনে করে!” (যিশাইয় ৫:২০) যারা আধ্যাত্মিক অন্ধকারে থাকে তারা অন্ধকারের দেব, শয়তান দিয়াবলের দ্বারা প্রভাবিত হয় আর এর ফলে শেষ পর্যন্ত তারা আলো ও জীবনের উৎস থেকে দূরে সরে যায়।—ইফিষীয় ৪:১৭-১৯.

অন্ধকার থেকে আলোয়—এক কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা

৯. অন্যায়কারীদের কীভাবে আক্ষরিক এবং আধ্যাত্মিক দুঅর্থেই অন্ধকারের প্রতি আকর্ষণ রয়েছে, তা ব্যাখ্যা করুন।

আক্ষরিক অন্ধকারের প্রতি অন্যায়কারীদের যে-আকর্ষণ রয়েছে, সেই সম্বন্ধে উল্লেখ করে বিশ্বস্ত ইয়োব বলেছিলেন: “পারদারিকের চক্ষুও সন্ধ্যাকালের অপেক্ষা করে; সে বলে, কাহারও চক্ষু আমাকে দেখিতে পাইবে না; আর সে আপন মুখ অচ্ছাদন করে।” (ইয়োব ২৪:১৫) এ ছাড়াও, অন্যায়কারীরা আধ্যাত্মিক অন্ধকারের মধ্যে রয়েছে এবং এই অন্ধকার অত্যন্ত শক্তিশালী হতে পারে। প্রেরিত পৌল বলেছিলেন যে, যারা অন্ধকারে থাকে তাদের কাছে যৌন অনৈতিকতা, চুরি, লোভ, মাতালামি, গালিগালাজ ও পরের সম্পত্তি আত্মসাৎ করা খুবই সাধারণ ব্যাপার। কিন্তু যে-কেউ ঈশ্বরের বাক্যের আলোতে আসেন, তারা বদলাতে পারেন। এইধরনের পরিবর্তন যে সম্ভব, তা পৌল করিন্থীয়দের কাছে লেখা তার চিঠিতে পরিষ্কার করে দিয়েছেন। অনেক করিন্থীয় খ্রীষ্টানরা আগে অন্ধকারে কাজগুলো করতেন অথচ পৌল তাদেরকে বলেছিলেন: “কিন্তু তোমরা প্রভু যীশু খ্রীষ্টের নামে ও আমাদের ঈশ্বরের আত্মায় আপনাদিগকে ধৌত করিয়াছ, পবিত্রীকৃত হইয়াছ, ধার্ম্মিক গণিত হইয়াছ।”—১ করিন্থীয় ৬:৯-১১.

১০, ১১. (ক) যীশু যে-ব্যক্তির দৃষ্টি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তার প্রতি কীভাবে তিনি বিবেচনা দেখিয়েছিলেন? (খ) কেন অনেকে আলো বেছে নেয় না?

১০ একজন ব্যক্তি যখন ঘুটঘুটে অন্ধকার থেকে আলোতে আসেন, তখন সেই আলোর সঙ্গে মানিয়ে নিতে তার কিছুটা সময় লাগে। বৈৎসৈদায় একজন অন্ধকে যীশু দয়া দেখিয়ে ধাপে ধাপে সুস্থ করেছিলেন। “তিনি সেই অন্ধের হাত ধরিয়া তাহাকে গ্রামের বাহিরে লইয়া গেলেন; পরে তাহার চক্ষুতে থুথু দিয়া ও তাহার উপরে হস্তার্পণ করিয়া তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, কিছু দেখিতে পাইতেছ? সে চক্ষু তুলিয়া চাহিল ও বলিল, মানুষ দেখিতেছি, গাছের মতন দেখিতেছি, বেড়াইতেছে। তখন তিনি তাহার চক্ষুর উপরে আবার হস্তার্পণ করিলেন, তাহাতে সে স্থির দৃষ্টি করিল, ও সুস্থ হইল, স্পষ্টরূপে সকলই দেখিতে পাইল।” (মার্ক ৮:২৩-২৫) স্পষ্টতই, যীশু সেই লোকের দৃষ্টি ধীরে ধীরে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, যাতে উজ্জ্বল সূর্যালোকের সঙ্গে সে মানিয়ে নিতে পারে। সেই ব্যক্তি যখন দেখতে পেয়েছিলেন, তখন তার কতটা আনন্দ হয়েছিল, তা আমরা কল্পনা করতে পারি।

১১ কিন্তু সেই ব্যক্তি যে আনন্দ পেয়েছিলেন, তার চেয়ে যাদেরকে আধ্যাত্মিক অন্ধকার থেকে ধাপে ধাপে সত্যের আলোতে নিয়ে আসতে সাহায্য করা হয়, তাদের আনন্দ আরও অনেক বেশি। আমরা যখন তাদের আনন্দ দেখতে পাই, তখন আমরা হয়তো ভেবে অবাক হয়ে যাই যে, কেন আরও বেশি লোকেরা সত্যের প্রতি আকৃষ্ট হয় না। যীশু এর কারণ জানিয়েছিলেন: “সেই বিচার এই যে, জগতে জ্যোতি আসিয়াছে, এবং মনুষ্যেরা জ্যোতি হইতে অন্ধকার অধিক ভালবাসিল, কেননা তাহাদের কর্ম্ম সকল মন্দ ছিল। কারণ যে কেহ কদাচরণ করে, সে জ্যোতি ঘৃণা করে, এবং জ্যোতির নিকটে আইসে না, পাছে তাহার কর্ম্ম সকলের দোষ ব্যক্ত হয়।” (যোহন ৩:১৯, ২০) হ্যাঁ, অনেকে “কদাচরণ” যেমন, অনৈতিকতা, অত্যাচার, মিথ্যা বলা, ঠকানো এবং চুরি করতে পছন্দ করে আর তারা যা করতে চায়, তার জন্য শয়তানের আধ্যাত্মিক অন্ধকারই হল উপযুক্ত জায়গা।

আলোতে উন্নতি করে চলা

১২. আলোতে এসে আমরা কোন্‌ কোন্‌ দিক দিয়ে উপকার পেয়েছি?

১২ আমরা যেহেতু আলো সম্বন্ধে জেনেছি, তাই আমরা নিজেদের মধ্যে কোন্‌ কোন্‌ পরিবর্তন দেখতে পাই? মাঝে মাঝে অতীতের কথা চিন্তা করে আমাদের পরীক্ষা করে দেখা উচিত যে, আমরা কতখানি আধ্যাত্মিক উন্নতি করেছি। কোন্‌ খারাপ অভ্যাসগুলো আমরা ত্যাগ করেছি? আমাদের জীবনের কোন্‌ কোন্‌ সমস্যাকে আমরা শোধরাতে পেরেছি? ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে আমাদের পরিকল্পনা কীভাবে পালটে গেছে? যিহোবার শক্তিতে এবং তাঁর পবিত্র আত্মার সাহায্যে আমরা আমাদের ব্যক্তিত্বে ও চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন করে চলতে পারি, যা দেখাবে যে আমরা আলোর প্রতি সাড়া দিচ্ছি। (ইফিষীয় ৪:২৩, ২৪) পৌল এটাকে এভাবে বলেছিলেন: “তোমরা এক সময়ে অন্ধকার ছিলে, কিন্তু এখন প্রভুতে দীপ্তি হইয়াছ; দীপ্তির সন্তানদের ন্যায় চল—কেননা সর্ব্বপ্রকার মঙ্গলভাবে, ধর্ম্মিকতায় ও সত্যে দীপ্তির ফল হয়।” (ইফিষীয় ৫:৮, ৯) যিহোবার আলোকে নির্দেশনা দিতে দিলে তা আমাদের জীবনে আশা এবং উদ্দেশ্য এনে দেয় ও সেইসঙ্গে যারা আমাদের চারপাশে রয়েছে তাদেরকেও আনন্দিত করে। আর আমাদের এইধরনের পরিবর্তনগুলো যিহোবার হৃদয়কেও কত আনন্দিত করে!—হিতোপদেশ ২৭:১১.

১৩. যিহোবার আলোর প্রতি আমরা কীভাবে কৃতজ্ঞতা দেখাতে পারি এবং এইরকম কাজের জন্য কীসের প্রয়োজন?

১৩ বাইবেল থেকে আমরা যা শিখেছি, তা পরিবারের সদস্য, বন্ধুবান্ধব এবং প্রতিবেশীদের কাছে বলে যিহোবার আলোকে প্রকাশ করার মাধ্যমে আমরা যে-সুখী জীবন উপভোগ করছি, তার প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখাই। (মথি ৫:১২-১৬; ২৪:১৪) যারা আমাদের কথা শুনতে চায় না, তাদের কাছে আমাদের প্রচার ও সেইসঙ্গে আদর্শ খ্রীষ্টীয় জীবনযাপন এক নিন্দার বিষয় হয়ে ওঠে। পৌল বলেন: “প্রভুর প্রীতিজনক কি, তাহার পরীক্ষা কর। আর অন্ধকারের ফলহীন কর্ম্ম সকলের সহভাগী হইও না, বরং সেগুলির দোষ দেখাইয়া দেও।” (ইফিষীয় ৫:১০, ১১) অন্যদেরকে অন্ধকার ছেড়ে আলো বেছে নেওয়ার জন্য সাহায্য করতে হলে আমাদের সাহসের প্রয়োজন। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এর জন্য অন্যদের প্রতি করুণা ও চিন্তা দেখানোর এবং তাদের চিরকালীন উপকারের জন্য তাদের সঙ্গে সত্যের আলো ভাগ করে নেওয়ার আন্তরিক ইচ্ছা থাকা প্রয়োজন।—মথি ২৮:১৯, ২০.

আলেয়া থেকে সাবধান হোন!

১৪. আলোর সম্বন্ধে কোন্‌ সাবধানবাণীতে আমাদের মনোযোগ দিতে হবে?

১৪ অন্ধকারের মধ্যে যারা সমুদ্রে থাকে, তারা যে-কোন ধরনের আলো দেখলেই স্বস্তি পান। অতীতে ইংল্যান্ডের পাহাড়ের চূড়াগুলোতে আগুন জ্বালানো থাকত, যা দেখে বোঝা যেত যে ঝড় হলে কোথায় আশ্রয় পাওয়া যেতে পারে। জাহাজের নাবিকরা কৃতজ্ঞ মনে সেই আলো দেখে নিরাপদ পোতাশ্রয়ে যেতেন। তবে কিছু কিছু আগুন আসলে আলেয়া ছিল। পোতাশ্রয় খুঁজে না পেয়ে অনেক জাহাজ ভুল পথে চলে যেত এবং পাহাড়ি উপকূলে গিয়ে ধাক্কা লেগে জাহাজ ভেঙে যেত আর সেখান থেকে তাদের মালপত্র চুরি হয়ে যেতো। প্রতারণাপূর্ণ এই জগতে আমাদেরকে সাবধান থাকতে হবে যেন আমরা কোন আলেয়ার প্রতি আকৃষ্ট না হই, যা কিনা আমাদের আধ্যাত্মিক জাহাজভগ্নের টোপ হিসেবে কাজ করতে পারে। আমাদেরকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, “শয়তান আপনি দীপ্তিময় দূতের বেশ ধারণ করে।” একইভাবে, ধর্মভ্রষ্টরা সহ তার দাসেরা “প্রতারক কর্ম্মকারী,” যারা ‘ধার্ম্মিকতার পরিচারকদের বেশও ধারণ করে।’ আমরা যদি এইধরনের লোকেদের মিথ্যা যুক্তিগুলো মেনে নিই, তা হলে যিহোবার সত্যের বাক্য বাইবেলের প্রতি আমাদের আস্থা দুর্বল হয়ে যেতে পারে এবং আমাদের বিশ্বাসের মৃত্যু হতে পারে।—২ করিন্থীয় ১১:১৩-১৫; ১ তীমথিয় ১:১৯.

১৫. কী আমাদেরকে জীবনে যাইবার পথে থাকতে সাহায্য করবে?

১৫ গীতরচক দায়ূদ লিখেছিলেন: “তোমার বাক্য আমার চরণের প্রদীপ, আমার পথের আলোক।” (গীতসংহিতা ১১৯:১০৫) হ্যাঁ, ‘জীবনে যাইবার দুর্গম পথ’ স্পষ্টতই আমাদের প্রেমময় ঈশ্বর যিহোবার মাধ্যমে আলোকিত হয়, যাঁর “ইচ্ছা এই, যেন সমুদয় মনুষ্য পরিত্রাণ পায়, ও সত্যের তত্ত্বজ্ঞান পর্য্যন্ত পঁহুছিতে পারে।” (মথি ৭:১৪; ১ তীমথিয় ২:৪) বাইবেলের নীতিগুলো কাজে লাগালে, তা আমাদেরকে সেই দুর্গম পথে থাকতে সাহায্য করবে এবং অন্ধকারের পথে যাওয়া থেকে রক্ষা করবে। পৌল লিখেছিলেন: “ঈশ্বর-নিশ্বসিত প্রত্যেক শাস্ত্রলিপি আবার শিক্ষার, অনুযোগের, সংশোধনের, ধার্ম্মিকতা সম্বন্ধীয় শাসনের নিমিত্ত উপকারী।” (২ তীমথিয় ৩:১৬) আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে উন্নতি করার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ঈশ্বরের বাক্য থেকে শিখি। ঈশ্বরের বাক্যের আলোয় আমরা নিজেদেরকে অনুযোগ করতে পারি বা দরকার হলে মণ্ডলীর প্রেমময় পালকরা আমাদেরকে অনুযোগ করতে পারেন। সেইসঙ্গে আমরা বিষয়গুলোকে সংশোধন করতে পারি এবং জীবনের পথে চলার জন্য নম্রভাবে ধার্মিকতার শাসন মেনে নিতে পারি।

কৃতজ্ঞ হয়ে আলোতে চলুন

১৬. যিহোবা যে-অপূর্ব আলো জুগিয়েছেন, সেটার প্রতি আমরা কীভাবে কৃতজ্ঞতা দেখাতে পারি?

১৬ যিহোবা যে-অপূর্ব আলো জুগিয়েছেন, সেটার প্রতি আমরা কীভাবে কৃতজ্ঞতা দেখাতে পারি? যোহন ৯ অধ্যায় আমাদেরকে জানায় যে, যীশু যখন একজন জন্মান্ধকে সুস্থ করেছিলেন, তখন সেই ব্যক্তি তার কৃতজ্ঞতা দেখাতে পরিচালিত হয়েছিলেন। কীভাবে? তিনি যীশুকে ঈশ্বরের পুত্র হিসেবে বিশ্বাস করেছিলেন এবং সবার সামনে তাঁকে “ভাববাদী” বলেছিলেন। এ ছাড়া, যারা যীশুর আশ্চর্য কাজকে নিচু করার চেষ্টা করেছিল তাদের বিরুদ্ধে তিনি সাহসের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। (যোহন ৯:১৭, ১৮, ৩০-৩৪) খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর অভিষিক্ত সদস্যদেরকে প্রেরিত পিতর “নিজস্ব প্রজাবৃন্দ” বলেছেন। কেন? কারণ তাদেরও সেই জন্মান্ধ ব্যক্তি, যাকে কিনা সুস্থ করা হয়েছিল, তার মতো একই কৃতজ্ঞতার মনোভাব রয়েছে। তাদের মহান জোগানদাতা যিহোবা “যিনি তাহাদিগকে অন্ধকার হইতে আপনার আশ্চর্য্য জ্যোতির মধ্যে আহ্বান করিয়াছেন” তাঁর ‘গুণকীর্ত্তন করিয়া’ তাঁর প্রতি তারা কৃতজ্ঞতা দেখান। (১ পিতর ২:৯; কলসীয় ১:১৩) পার্থিব আশা রয়েছে এমন ব্যক্তিদেরও একই কৃতজ্ঞতার মনোভাব রয়েছে এবং তারা সকলের কাছে যিহোবার “গুণকীর্ত্তন” করে তাদের অভিষিক্ত ভাইদেরকে সমর্থন করেন। অসিদ্ধ মানুষকে ঈশ্বর কী অমূল্য সুযোগই না দিয়েছেন!

১৭, ১৮. (ক) আমাদের প্রত্যেকের কী দায়িত্ব রয়েছে? (খ) তীমথিয়ের মতো প্রত্যেক খ্রীষ্টানকে কী এড়িয়ে চলার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে?

১৭ সত্যের আলোর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা খুবই জরুরি। মনে রাখবেন, আমাদের মধ্যে কেউই সত্য জেনে জন্মগ্রহণ করিনি। কেউ কেউ বড় হয়ে সত্য শেখেন এবং শীঘ্রিই অন্ধকার থেকে আলোর শ্রেষ্ঠত্ব দেখতে পান। আবার অন্যেরা ঈশ্বর-ভয়শীল বাবামার কাছে বেড়ে ওঠার বিশেষ সুযোগ পেয়েছেন। এইরকম ব্যক্তিরা হয়তো খুব সহজেই আলোকে হালকাভাবে নিতে পারেন। একজন সাক্ষি, যার জন্মের আগে থেকেই তার বাবামা যিহোবাকে সেবা করতেন তিনি স্বীকার করেন যে, ছোটবেলা থেকে তিনি যে-সত্য শিখেছেন তার পুরো তাৎপর্য এবং গুরুত্ব উপলব্ধি করতে তার অনেক সময় লেগেছে ও অনেক প্রচেষ্টা করতে হয়েছে। (২ তীমথিয় ৩:১৫) যুবক বা বৃদ্ধ যে-ই হই না কেন, আমাদের প্রত্যেকের যিহোবার প্রকাশিত সত্যের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা গড়ে তোলা দরকার।

১৮ যুবক তীমথিয় একেবারে ছোটবেলা থেকে “পবিত্র শাস্ত্রকলাপ” শিখেছিলেন কিন্তু পরিচর্যায় নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার পরই তিনি খ্রীষ্টীয় পরিপক্বতা অর্জন করেছিলেন। (২ তীমথিয় ৩:১৫) এরপর তিনি প্রেরিত পৌলের সঙ্গে সহযোগীরূপে কাজ করার যোগ্য হয়েছিলেন, যিনি তাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন: “তুমি আপনাকে ঈশ্বরের কাছে পরীক্ষাসিদ্ধ লোক দেখাইতে যত্ন কর; এমন কার্য্যকারী হও, যাহার লজ্জা করিবার প্রয়োজন নাই, যে সত্যের বাক্য যথার্থরূপে ব্যবহার করিতে জানে।” তীমথিয়ের মতো আসুন আমরা সবাই এমন কিছু করা এড়িয়ে চলি, যা আমাদেরকে লজ্জায় ফেলবে বা আমাদের কারণে যিহোবা লজ্জিত হবেন।—২ তীমথিয় ২:১৫.

১৯. (ক) দায়ূদের মতো আমাদের সকলের কোন্‌ কথাগুলো বলার কারণ রয়েছে? (খ) পরের প্রবন্ধে কোন্‌ বিষয়ে আলোচনা করা হবে?

১৯ যিহোবার প্রশংসা করার যথেষ্ট কারণ আমাদের রয়েছে, যিনি আমাদেরকে সত্যের আলো দিয়েছেন। রাজা দায়ূদের মতো আমরা বলি: “হে সদাপ্রভু, তুমি আমার প্রদীপ; সদাপ্রভুই আমার অন্ধকার আলোকময় করেন।” (২ শমূয়েল ২২:২৯) তবুও, আমরা আত্মতুষ্ট হওয়ার দুঃসাহস দেখাই না, যা কিনা আমাদেরকে আবার সেই অন্ধকারে নিয়ে যেতে পারে, যেখান থেকে আমরা রক্ষা পেয়েছি। তাই, পরের প্রবন্ধ আমাদেরকে ঈশ্বরের দেওয়া সত্যকে যে আমরা আমাদের জীবনে গুরুত্ব দিই, তা মূল্যায়ন করতে সাহায্য করবে।

আপনি কী শিখেছেন?

• যিহোবা কীভাবে আধ্যাত্মিক আলো জোগান?

• আমাদের চারপাশের আধ্যাত্মিক অন্ধকার আমাদেরকে কোন্‌ প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফেলে?

• আমাদেরকে কোন্‌ বিপদগুলো এড়িয়ে চলতে হবে?

• সত্যের আলোর প্রতি আমরা কীভাবে কৃতজ্ঞতা দেখাতে পারি?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিহোবা হলেন আক্ষরিক এবং আধ্যাত্মিক আলোর উৎস

[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]

যীশু যেমন অন্ধ ব্যক্তিকে ধীরে ধীরে সুস্থ করেছিলেন, তেমনই তিনি আমাদেরকে আধ্যাত্মিক অন্ধকার থেকে বের হয়ে আসতে সাহায্য করেন

[১১ পৃষ্ঠার চিত্র]

শয়তানের আলেয়া দেখে ভুল পথে গেলে আধ্যাত্মিক জাহাজভগ্ন হয়