সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ক্লোভিসের বাপ্তিস্ম ফ্রান্সে ক্যাথলিক ধর্মের ১,৫০০ বছর

ক্লোভিসের বাপ্তিস্ম ফ্রান্সে ক্যাথলিক ধর্মের ১,৫০০ বছর

ক্লোভিসের বাপ্তিস্ম ফ্রান্সে ক্যাথলিক ধর্মের ১,৫০০ বছর

 পোপ জন পল ২য়-র, ১৯৯৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ফ্রান্সের যে-গির্জা পরিদর্শন করার কথা ছিল সেখানে একটা বোমা পাওয়া গিয়েছিল, যেটাতে লেখা ছিল “পোপের নামে বিস্ফোরণ।” ফ্রান্সের প্রধান শহরে তার পঞ্চম পরিদর্শনের মধ্যে এটাই ছিল তার প্রতি বিরোধিতার চরম উদাহরণ। কিন্তু, ওই বছর প্রায় ২,০০,০০০ লোক, ফ্রাঙ্ক গোত্রীয় রাজা ক্লোভিসের ক্যাথলিক ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার ১,৫০০তম বার্ষিকী পোপের সঙ্গে উদ্‌যাপন করার জন্য ফ্রান্সের রিম্‌জ শহরে এসেছিল। এই রাজা কে ছিলেন যে তার বাপ্তিস্মকে ফ্রান্সের বাপ্তিস্ম বলা হয়? আর এই উদ্‌যাপন নিয়ে কেন এত তর্কবিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল?

অধঃপতিত সাম্রাজ্য

সেলিয়ন ফ্রাঙ্কদের রাজা চিলডেরিক ১ম এর পুত্র ক্লোভিসের জন্ম হয় সা.কা. প্রায় ৪৬৬ সালে। সা.কা. ৩৫৮ সালে রোমীয়রা ফ্রাঙ্কদের দখল করার পর, জার্মানির এই উপজাতিকে বর্তমানে যেটাকে বেলজিয়াম বলে সেখানে এই শর্তে থাকতে দেওয়া হয় যে, তারা সীমান্তকে পাহারা দেবে ও রোমীয় সেনাবাহিনীর জন্য সৈন্য সরবরাহ করবে। স্থানীয় গ্যালো-রোমীয় অধিবাসীদের মধ্যে যে-নিবিড় বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে, তা এই ফ্রাঙ্কদেরকে রোমীয়দের ঐতিহ্যকে মেনে নিতে পরিচালিত করেছিল। চিলডেরিক ১ম ছিলেন রোমীয়দের মিত্র আর তিনি জার্মানির অন্যান্য উপজাতি যেমন ভিজিগথ ও স্যাকসনদের আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। এই কারণে তিনি গ্যালো-রোমীয় অধিবাসীদের কৃতজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন।

উত্তরে রাইন নদী থেকে দক্ষিণে পিরেনিজ পর্যন্ত রোমীয় প্রদেশ গল প্রসারিত। কিন্তু, সা.কা. ৪৫৪ সালে রোমীয় সেনাপতি আ্যয়িশাসের মৃত্যুর পর, ওই দেশে আর কোন শাসক ছিল না। এ ছাড়া, সা.কা. ৪৭৬ সালে রোমের শেষ সম্রাট রামিউলাস অগাসশুলাসের ও রোমীয় সাম্রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের পতন, এই অঞ্চলে বিরাট রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে আসে। এর ফলে, গল অঞ্চল একটা পাকা ডুমুর ফলের মতো ছিল যেটাকে তুলে ফেলার জন্য এটার সীমান্তে বসবাসকারী উপজাতি দলগুলোর মধ্যে একটা দল একেবারে তৈরি ছিল। তাই এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, বাবার মৃত্যুর পর ক্লোভিস রাজত্বে আসায় তার রাজ্যের সীমানা বাড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন। সা.কা. ৪৮৬ সালে তিনি সোয়াসোন শহরের কাছে গল নগরের এক যুদ্ধে রোমের শেষ প্রতিনিধিকে পরাজিত করেছিলেন। এই বিজয়ের ফলে উত্তরে সম্‌ নদী থেকে শুরু করে মধ্য ও পশ্চিম গল অঞ্চলের লুয়ার নদী পর্যন্ত সমস্ত অঞ্চল তার আয়ত্তে চলে এসেছিল।

যে ব্যক্তি রাজা হবেন

জার্মানির অন্যান্য উপজাতির মতো না হয়ে, ফ্রাঙ্করা পৌত্তলিকই থেকে গিয়েছিল। কিন্তু, বারগেনডীয় রাজকুমারি ক্লটিলডার সঙ্গে ক্লোভিসের বিয়ে হওয়ায়, তা তার জীবনের ওপর এক বিরাট ছাপ ফেলেছিল। ক্লটিলডা একজন আন্তরিক ক্যাথলিক ছিলেন আর তিনি তার স্বামীকে ধর্মান্তরিত করার জন্য অক্লান্ত চেষ্টা করেছিলেন। সা.কা. ষষ্ঠ শতাব্দীতে টুরের গ্রেগরির দ্বারা লিপিবদ্ধ ইতিহাস অনুসারে, সা.কা. ৪৯৬ সালে আ্যলেম্যানাই উপজাতির বিরুদ্ধে টোলবিকের (জুলপিক, জার্মানি) যুদ্ধের সময় ক্লোভিস প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, ক্লটিলডার ঈশ্বর যদি তাকে জয়ী করেন, তা হলে তিনি পৌত্তলিক ধর্ম ছেড়ে দেবেন। যদিও ক্লোভিসের সৈন্যরা প্রায় নিশ্চিত পরাজয়ের মুখেই ছিল কিন্তু আ্যলেম্যানাইয়ের রাজা নিহত হন ও তার সৈন্যরা আত্মসমর্পণ করে। কিন্তু ক্লোভিস মনে করেছিলেন যে, ক্লটিলডার ঈশ্বরই তাকে বিজয়ী করেছেন। সাধারণত মনে করা হয় যে, সা.কা. ৪৯৬ সালের ২৫শে ডিসেম্বর রিম্‌জের ক্যাথিড্রালে “সাধু” রেমিজিয়াসের কাছে ক্লোভিস বাপ্তিস্ম নেন। কিন্তু কেউ কেউ মনে করেন যে, সম্ভবত পরে সা.কা. ৪৯৮/৯ সালে তা হয়েছিল।

দক্ষিণপূর্বের বারগেনডীয় রাজ্য দখল করার ব্যাপারে ক্লোভিসের চেষ্টা বিফল হয়েছিল। কিন্তু, ভিজিগথের বিরুদ্ধে তার অভিযান সফল হয়েছিল যখন সা.কা. ৫০৭ সালে তিনি পোয়াটিয়ের কাছে ভুয়ে অঞ্চলে তাদেরকে পরাজিত করেছিলেন আর এই বিজয়ের কারণেই তিনি দক্ষিণপূর্ব গলের বেশির ভাগ অঞ্চলকে অধিকার করতে পেরেছিলেন। এই বিজয়ের কথা মনে রাখার জন্য পূর্ব রোমীয় সাম্রাজ্যের সম্রাট আ্যনাসট্যাস, ক্লোভিসকে সম্মাজনক কন্‌সলার হিসেবে নিয়োগ করেন। এভাবে পশ্চিমের অন্যান্য সমস্ত রাজাদের চেয়ে তিনি সবচেয়ে উচ্চপদে ছিলেন আর তার রাজত্ব গ্যালো-রোমীয় অধিবাসীদের চোখে বৈধ ছিল।

রাইন নদীর তীরবর্তী জায়গাগুলোতে বসবাসকারী ফ্রাঙ্কদের অঞ্চলগুলোকে দখল করার পর, ক্লোভিস প্যারিসকে তার রাজধানী করেন। তার জীবনের শেষের কয়েক বছরে এক লিখিত আইন, লেক্স স্যালিকা প্রনয়ণ করার এবং গির্জা ও রাষ্ট্রের মধ্যে যে-সম্পর্ক রয়েছে, তা দেখানোর জন্য অরলেওনে এক গির্জা পরিষদের আহ্বান জানানোর মাধ্যমে তিনি তার রাজ্যকে শক্তিশালী করেন। সম্ভবত সা.কা. ৫১১ সালের ২৭শে নভেম্বর তার মৃত্যুর সময় তিনিই ছিলেন গলের তিন চতুর্থাংশ অঞ্চলের একমাত্র শাসক।

দ্যা নিউ এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা ক্লোভিসের ক্যাথলিক ধর্ম গ্রহণকে “পশ্চিম ইউরোপের ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য মুহূর্ত” বলে। এই পৌত্তলিক রাজার ধর্ম পরিবর্তন এত গুরুত্বপূর্ণ ছিল কেন? গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণটা হল, ক্লোভিস আ্যরিয়ানবাদকে গ্রহণ না করে ক্যাথলিক ধর্ম মেনে চলা বেছে নিয়েছিলেন।

আ্যরিয়ান বিতর্ক

সাধারণ কাল প্রায় ৩২০ সালে, মিশরের আলেকজান্দ্রিয়ার একজন যাজক আ্যরাইয়াস ত্রিত্ব সম্বন্ধে একেবারে বিপরীত ধারণা ছড়াতে শুরু করেছিলেন। পুত্র ও পিতা একই সত্ত্বা, এই ধারণাকে আ্যরাইয়াস অস্বীকার করেছিলেন। পুত্র কখনও ঈশ্বর বা পিতার সমান হতে পারেন না কারণ তাঁর শুরু ছিল। (কলসীয় ১:১৫) আ্যরাইয়াস বিশ্বাস করতেন যে, পবিত্র আত্মা হল একজন ব্যক্তি কিন্তু পিতা ও পুত্র দুজনের চেয়ে ছোট। এই শিক্ষা যা বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল, তা গির্জার মধ্যে প্রচণ্ড বিরোধিতার সৃষ্টি করেছিল। সা.কা. ৩২৫ সালে নাইসিয়া পরিষদে আ্যরাইয়াসকে নির্বাসনে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ও তার শিক্ষাকে নিন্দা করা হয়। *

কিন্তু, এটাই তর্কবিতর্কের শেষ নয়। এই মতবাদ নিয়ে তর্কবিতর্ক প্রায় ৬০ বছর ধরে চলেছিল, পরবর্তী সম্রাটরা কোন না কোন পক্ষের সমর্থন করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত সা.কা. ৩৯২ সালে সম্রাট থিওডোসিয়াস ১ম অর্থোডক্স ক্যাথলিক ধর্মকে, যার মধ্যে ত্রিত্ব মতবাদ ছিল, রোমীয় সাম্রাজ্যের রাষ্ট্রীয় ধর্ম করেছিলেন। এর মধ্যে গথ উপজাতি জার্মানির বিশপ উলফিলাসের মাধ্যমে আ্যরিয়ানবাদে ধর্মান্তরিত হয়েছিল। জার্মানির অন্যান্য উপজাতিগুলো সঙ্গে সঙ্গে এইধরনের “খ্রীষ্টধর্ম” গ্রহণ করেছিল। *

ক্লোভিস যখন রাজত্বে আসেন, তখন ইতিমধ্যেই গলের ক্যাথলিক গির্জা টলমল অবস্থায় ছিল। যে-বিশপরা মারা গিয়েছিলেন তাদের জায়গায় অন্য বিশপদেরকে অনুমতি না দিয়ে আ্যরিয়ান ভিজিগথরা ক্যাথলিক ধর্মকে দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিলেন। এ ছাড়া রোমে দুজন পোপের ভিন্ন মতবাদের কারণে গির্জা অনেক সমস্যায় ছিল, যেখানে দুই বিরোধী দলের যাজকরা একে অন্যকে হত্যা করছিল। এই বিভ্রান্তির সঙ্গে সঙ্গে কিছু ক্যাথলিক লেখক এই ধারণা উপস্থিত করেছিল যে, সা.কা. ৫০০ সালে জগতের শেষ হবে। তাই, ফ্রাঙ্ক গোত্রের একজন বিজয়ীর ক্যাথলিক ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়াকে এক শুভ ঘটনা বলে দেখা হয়েছিল, “সাধুদের নতুন সহস্রাব্দ” বলে ঘোষণা করেছিল।

কিন্তু ক্লোভিসের উদ্দেশ্য কী ছিল? এগুলোর পিছনে ধর্মীয় উদ্দেশ্য ছিল কথাটাকে যদিও বাদ দেওয়া যায় না কিন্তু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যগুলোও নিশ্চয়ই ছিল। ক্যাথলিক ধর্মকে গ্রহণ করায় ক্লোভিস বেশির ভাগ ক্যাথলিক গ্যালো-রোমীয় জনসাধারণের এবং গির্জার প্রভাবশালী যাজকশ্রেণীর সমর্থন পেয়েছিলেন। এটা তাকে তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের ওপর বিরাট সুবিধা এনে দিয়েছিল। দ্যা নিউ এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা বলে যে, “গল অঞ্চলকে জয় করা, ঘৃণিত আ্যরিয়ান মতাবলম্বীদের জোয়ালি থেকে মুক্তি পাওয়ার এক যুদ্ধে পরিণত হয়েছিল।”

ক্লোভিস আসলে কীধরনের ব্যক্তি ছিলেন?

১৯৯৬ সালের উদ্‌যাপন শুরু হওয়ার আগে রিম্‌জের আর্চবিশপ জেরার ডিফোয়া ক্লোভিসকে “সবদিক ভেবেচিন্তে ও সঠিক বিচারবিবেচনা করে ধর্মান্তরিত হওয়ার প্রতীক” হিসেবে ব্যাখ্যা দেন। কিন্তু, ফরাসি ইতিহাসবেত্তা আরনেস্ট ল্যাভিস মন্তব্য করেছিলেন: “ধর্ম পরিবর্তন কোনভাবেই ক্লোভিসের চরিত্রকে পালটে দেয়নি; সুসমাচারের দয়া ও শান্তিপূর্ণ নীতি তার হৃদয় স্পর্শ করেনি।” আরেকজন ইতিহাসবেত্তা ঘোষণা করেছিলেন: “তিনি অডিনের [নরওয়ে বাসীদের এক দেবতা] কাছে সাহায্য না চেয়ে খ্রীষ্টের কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন ও আগের মতোই ছিলেন।” কনস্টানটিন খ্রীষ্টধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার পর যে-ধরনের ব্যবহার করেছিলেন, তা মনে করে ক্লোভিস তার রাজপদকে আরও শক্তিশালী করার জন্য শাসন করতে পারে এমন সমস্ত বিদ্রোহীকে এক-এক করে হত্যা করেছিলেন। তিনি “তার সমস্ত দুঃসম্পর্কীয় আত্মীয়দেরকে” চিরতরে ধ্বংস করেছিলেন।

ক্লোভিসের মৃত্যুর পর, মিথ্যে কাহিনী গড়ে তোলার ধারা শুরু হয়েছিল, যেটা তার পরিচয়কে এক নিষ্ঠুর যোদ্ধা থেকে এক বিখ্যাত সাধু হিসেবে উন্নত করেছিল। প্রায় একশ বছর পরে টুর অঞ্চলের গ্রেগরির লেখা বিবরণে আপ্রাণভাবে জানানোর চেষ্টা করা হয়েছে যে, ক্লোভিসের সঙ্গে কনস্টানটিনের বন্ধুত্ব ছিল, যিনি “খ্রীষ্টধর্ম” গ্রহণকারী প্রথম রোমীয় সম্রাট ছিলেন। আর বাপ্তিস্মের সময় ক্লোভিসের বয়স ৩০ বছর ছিল বলার দ্বারা গ্রেগরি খ্রীষ্টের সঙ্গে তাকে তুলনা করার চেষ্টা করেছিলেন বলেই মনে হয়।—লূক ৩:২৩.

এইধরনের মিথ্যে কাহিনী গড়ে তোলার পদ্ধতি, নবম শতাব্দীতে রিম্‌জের বিশপ আ্যংকমারের দ্বারা চলেছিল। ক্যাথিড্রালগুলো যখন তীর্থযাত্রীদের জন্য প্রতিযোগিতা করছিল, তখন তিনি তার আগের “সাধু” রেমিজিয়াসের সম্বন্ধে যে-আত্মজীবনী লিখেছিলেন, তাতে সম্ভবত তার গির্জার খ্যাতি বাড়াতে ও এটাকে সমৃদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। তার বিবরণে একটা সাদা কপোত ক্লোভিসের বাপ্তিস্মের সময় তাকে অভিষেক করার জন্য একটা বোতলে করে অল্প তেল নিয়ে এসেছিল, যা স্পষ্টভাবে পবিত্র আত্মা দ্বারা যীশুর অভিষিক্ত হওয়ার কথা মনে করিয়ে দেয়। (মথি ৩:১৬) এভাবে আ্যংকমার দেখিয়েছিলেন যে, ক্লোভিস, রিম্‌জ এবং রাজতন্ত্র একটা অন্যটার সঙ্গে জড়িত এবং ক্লোভিস প্রভুর মনোনীত ব্যক্তি ছিলেন, এই ধারণাকে আরও জোরালো করেছিলেন। *

এক বিতর্কিত স্মরণার্থক

প্রাক্তন ফরাসি প্রেসিডেন্ট চার্লস ডি গল একবার বলেছিলেন: “আমার মতে, ফ্রান্সের ইতিহাসের জন্মই হয়েছে ক্লোভিসকে দিয়ে, যাকে ফ্রাঙ্ক উপজাতির লোকেরা ফ্রান্সের রাজা হিসেবে মনোনীত করেছে, যারা তাদের নামে ফ্রান্স নাম দিয়েছে।” কিন্তু, সবাই বিষয়টাকে সেভাবে দেখে না। ক্লোভিসের বাপ্তিস্মের ১,৫০০তম বার্ষিকী নিয়ে বিতর্ক ছিল। যে-দেশে ১৯০৫ সাল থেকে গির্জা ও রাষ্ট্রকে সরকারিভাবে আলাদা করা হয়েছে, সেখানে এক ধর্মীয় অনুষ্ঠান বলে যেটাকে তারা মনে করে সেটাতে রাষ্ট্রের অংশগ্রহণকে অনেকে নিন্দা করেছিলেন। রিম্‌জের নগর পরিষদ পোপের পরিদর্শনের সময় যে-মঞ্চ ব্যবহার করা হবে তার খরচ বহন করার পরিকল্পনাকে যখন ঘোষণা করে, তখন একটা সংগঠন আদালতে এই সিদ্ধান্তকে সংবিধানবিরুদ্ধ বলে পালটে দিয়েছিল। অন্যেরা ভেবেছিলেন যে, ফ্রান্সের ওপর গির্জা তার নীতি ও অযাজকীয় কর্তৃত্ব আবারও চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিল। ক্লোভিসকে রক্ষণশীল ন্যাশনাল ফ্রন্ট ও মৌলবাদী ক্যাথিলক দলের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করায় এই উদ্‌যাপন আরও বেশি জটিল হয়ে উঠেছিল।

অন্যেরা এক ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে উদ্‌যাপনের সমালোচনা করেছিলেন। তারা বলেছিলেন, ক্লোভিসের বাপ্তিস্ম ফ্রান্সকে ক্যাথলিক করে দেয়নি কারণ এই ধর্ম ইতিমধ্যেই গ্যালো-রোমীয় অধিবাসীদের মধ্যে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছিল। আর তারা দাবি করেছিলেন যে, তার বাপ্তিস্ম কখনও এক জাতি হিসেবে ফ্রান্সের জন্মকে চিহ্নিত করে না। তারা মনে করেন যে, সা.কা. ৮৪৩ সালে শারলেমেনের রাজ্যের বভক্তির সময়েই হয়তো ফ্রান্সের জন্ম হয়েছে আর এটা ক্লোভিসকে নয় কিন্তু চার্লস দ্যা বল্ডকে ফ্রান্সের প্রথম রাজা বানিয়েছিল।

ক্যাথলিক ধর্মের ১,৫০০ বছর

“গির্জার বড় মেয়ে” হিসেবে ১,৫০০ বছরেরও বেশি সময় পর, আজকে ক্যাথলিক ধর্ম ফ্রান্সে কী সম্পাদন করছে? ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত ফ্রান্সে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বাপ্তাইজিত ক্যাথলিক ছিল। এখন এই দেশ ছয় নম্বরে রয়েছে, ফিলিপিনস ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলোরও পরে রয়েছে। আর যদিও আজকে ফ্রান্সে প্রায় সাড়ে চার কোটি ক্যাথলিক রয়েছে কিন্তু মাত্র ষাট লক্ষ ক্যাথলিক নিয়মিত মিশায় যান। ফরাসি ক্যাথলিকদের নিয়ে করা কিছুদিন আগের একটা সমীক্ষা প্রকাশ করেছিল যে, ৬৫ শতাংশ ক্যাথলিক “যৌনতার বিষয়ে গির্জার শিক্ষাকে একটুও পাত্তা দেন না” এবং তাদের মধ্যে শতকরা ৫ জনের কাছে যীশু “তেমন গুরুত্বপূর্ণ কেউ নন।” এইরকম নেতিবাচক প্রবণতা দেখেই পোপ ১৯৮০ সালে ফ্রান্স পরিদর্শনের সময় জিজ্ঞেস করেছিলেন: “ফ্রান্স, বাপ্তিস্মের সময়কার তোমার প্রতিজ্ঞাগুলো তুমি কতটা রেখেছ?”

[পাদটীকাগুলো]

^ ১৯৮৪ সালের ১লা আগস্ট প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) এর ২৪ পৃষ্ঠা দেখুন।

^ ১৯৯৪ সালের ১৫ই মে প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) এর ৮-৯ পৃষ্ঠা দেখুন।

^ লুই নামটা এসেছে ক্লোভিস থেকে, যার পরে ১৯ জন ফরাসি রাজার (যেগুলোর মধ্যে সপ্তদশ লুই এবং লুই-ফিলিপ রয়েছে) নাম রাখা হয়েছে।

[২৭ পৃষ্ঠার মানচিত্র]

(পুরোপুরি ফরম্যাট করা টেক্সটের জন্য এই প্রকাশনা দেখুন)

স্যাকসন

রাইন নদী

সম্‌ নদী

সোয়াসোন

রিম্‌জ

প্যারিস

গল

লুয়ার নদী

ভুয়ে

পোয়াটিয়ের

পিরেনিজ

ভিজিগথ

রোম

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

১৪শ শতাব্দীর পাণ্ডুলিপিতে ক্লোভিসের বাপ্তিস্মের বিষয় বর্ণনা করা হয়

[সৌজন্যে]

© Cliché Bibliotheque nationale de France, Paris

[২৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

ফ্রান্সের রিম্‌জের ক্যাথিড্রালের বাইরের অংশে ক্লোভিসের (মাঝখানের মূর্তি) বাপ্তিস্মের খোদাই করা মূর্তি

[২৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

ক্লোভিসের বাপ্তিস্ম উদ্‌যাপন করার জন্য জন পল ২য়-র ফ্রান্স পরিদর্শন বিতর্কের ঝড় তুলেছিল