সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

খ্রীষ্টের নেতৃত্ব কি আপনার কাছে বাস্তব?

খ্রীষ্টের নেতৃত্ব কি আপনার কাছে বাস্তব?

খ্রীষ্টের নেতৃত্ব কি আপনার কাছে বাস্তব?

“তোমরা ‘আচার্য্য [“নেতা,” NW]’ বলিয়া সম্ভাষিত হইও না, কারণ তোমাদের আচার্য্য [“নেতা,” NW] এক জন, তিনি খ্রীষ্ট।”মথি ২৩:১০.

১. সত্য খ্রীষ্টানদের একমাত্র নেতা কে?

 দিনটা ছিল ১১ই নিশান মঙ্গলবার। তিন দিন পর যীশু খ্রীষ্টকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে। শেষবারের মতো তিনি মন্দিরে আসেন। সেখানে উপস্থিত জনতা এবং শিষ্যদেরকে যীশু সেদিন এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেন। তিনি বলেন: “তোমরা ‘রব্বি’ বলিয়া সম্ভাষিত হইও না, কারণ তোমাদের গুরু এক জন, এবং তোমরা সকলে ভ্রাতা। আর পৃথিবীতে কাহাকেও ‘পিতা’ বলিয়া সম্বোধন করিও না, কারণ তোমাদের পিতা এক জন, তিনি সেই স্বর্গীয়। তোমরা ‘নেতা’ বলিয়া সম্ভাষিত হইও না, কারণ তোমাদের নেতা এক জন, তিনি খ্রীষ্ট।” (মথি ২৩:৮-১০) স্পষ্টতই, যীশু খ্রীষ্ট হলেন সত্য খ্রীষ্টানদের নেতা।

২, ৩. যিহোবার কথা শোনার এবং তাঁর নিযুক্ত নেতাকে মেনে নেওয়ার ফলে তা আমাদের জীবনে কোন্‌ ছাপ ফেলেছে?

আমরা যখন যীশুর নেতৃত্ব মেনে নিই, তখন তা আমাদের জীবনে কত উপকারী প্রভাবই না ফেলে! এই নেতার আসার বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করতে গিয়ে ভাববাদী যিশাইয়ের মাধ্যমে যিহোবা ঘোষণা করেছিলেন: “অহো, তৃষিত লোক সকল, তোমরা জলের কাছে আইস; যাহার রৌপ্য নাই, আইসুক; তোমরা আইস, খাদ্য ক্রয় কর, ভোজন কর; হাঁ, আইস, বিনা রৌপ্যে খাদ্য, বিনা মূল্যে দ্রাক্ষারস ও দুগ্ধ ক্রয় কর। . . . শুন, আমার কথা শুন, উত্তম ভক্ষ্য ভোজন কর, পুষ্টিকর দ্রব্যে তোমাদের প্রাণ আপ্যায়িত হউক। . . . দেখ, আমি তাঁহাকে জাতিগণের সাক্ষীরূপে, জাতিগণের নায়ক [“নেতা,” NW] ও আদেষ্টারূপে নিযুক্ত করিলাম।”—যিশাইয় ৫৫:১-৪.

আমরা যখন যিহোবার কথা শুনি এবং তিনি আমাদেরকে যে-নেতা ও আদেষ্টা দিয়েছেন, তাঁকে অনুকরণ করি, তখন কীভাবে তা আমাদের ব্যক্তিগত জীবনের ওপর ছাপ ফেলে, সেটা দেখাতে গিয়ে রূপক অর্থে যিশাইয় কিছু সাধারণ পানীয় যেমন, জল, দুধ এবং দ্রাক্ষারসের কথা বলেছেন। এর ফলে সতেজ হওয়া যায়। এটা ঠিক যেন প্রচণ্ড গরমে এক গ্লাস ঠান্ডা জল খাওয়ার মতো। সত্য এবং ধার্মিকতার জন্য আমাদের তৃষ্ণাকে মেটানো যায়। দুধ যেমন শিশুদেরকে শক্তিশালী করে ও বেড়ে উঠতে সাহায্য করে, ঠিক তেমনই ‘বাক্যের দুগ্ধ’ আমাদেরকে শক্তিশালী করে এবং ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে গড়ে তোলে। (১ পিতর ২:১-৩) আর যে-কোন উৎসবে দ্রাক্ষারস যে আনন্দ নিয়ে আসে, সেটা কে অস্বীকার করতে পারে? একইভাবে সত্য ঈশ্বরের উপাসনা করা এবং তাঁর নিযুক্ত নেতার পদচিহ্ন অনুসরণ করা জীবনকে “সম্পূর্ণরূপে আনন্দিত” করে। (দ্বিতীয় বিবরণ ১৬:১৫) তাই, আমরা যুবক-বৃদ্ধ বা নারী-পুরুষ যে-ই হই না কেন, খ্রীষ্টের নেতৃত্ব যে আমাদের কাছে বাস্তব তা দেখানো জরুরি। কিন্তু, রোজকার জীবনে আমরা কীভাবে দেখাতে পারি যে, মশীহ হলেন আমাদের নেতা?

কিশোর-কিশোরীরা —“জ্ঞানে . . . বৃদ্ধি পাইতে” থাক

৪. (ক) বারো বছরের যীশু যখন নিস্তারপর্বের সময় যিরূশালেমে গিয়েছিলেন, তখন কী ঘটেছিল? (খ) মাত্র ১২ বছর বয়সে যীশু কতটা ভালভাবে প্রশিক্ষণ পেয়েছিলেন?

কিশোর-কিশোরীদের জন্য আমাদের নেতা যে-উদাহরণ রেখেছেন, তা বিবেচনা করুন। যদিও যীশুর ছেলেবেলা সম্বন্ধে খুব বেশি জানা যায় না কিন্তু একটা ঘটনা বেশ পরিষ্কারভাবে রয়েছে। যীশুর বয়স যখন ১২ বছর, তখন তাঁর বাবামা তাঁকে নিয়ে বার্ষিক নিস্তারপর্ব পালনের জন্য যিরূশালেমে যান। সেই সময় তিনি শাস্ত্রীয় আলোচনায় ডুবে যান এবং তাঁর পরিবার অসাবধানতাবশত তাঁকে রেখেই চলে যান। তিন দিন পর তাঁর উদ্বিগ্ন বাবামা যোষেফ ও মরিয়ম তাঁকে মন্দিরে খুঁজে পান, যিনি “গুরুদিগের মধ্যে বসিয়া তাঁহাদের কথা শুনিতেছিলেন ও তাঁহাদিগকে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিতেছিলেন।” এছাড়া, “যাহারা তাঁহার কথা শুনিতেছিল, তাহারা সকলে তাঁহার বুদ্ধি ও উত্তরে অতিশয় আশ্চর্য্য জ্ঞান করিল।” ভেবে দেখুন যে, মাত্র ১২ বছর বয়সে যীশু শুধু ভাবিয়ে তোলার মতো আধ্যাত্মিক জ্ঞানের প্রশ্নই করতেন না, সেইসঙ্গে তিনি তাদেরকে বুদ্ধির সঙ্গে উত্তরও দিতেন! কোন সন্দেহ নেই যে, তাঁর বাবামা তাঁকে প্রশিক্ষণ দিয়ে সাহায্য করেছিলেন।—লূক ২:৪১-৫০.

৫. কিশোর-কিশোরীরা কীভাবে পারিবারিক বাইবেল অধ্যয়নের প্রতি তাদের মনোভাবকে মূল্যায়ন করতে পারে?

তুমি হয়তো একজন কিশোর বা কিশোরী। তোমার বাবামা যদি ঈশ্বরের উৎসর্গীকৃত দাস হন, তাহলে তোমরা হয়তো ঘরে নিয়মিত পারিবারিক বাইবেল অধ্যয়ন করে থাক। পারিবারিক অধ্যয়নের প্রতি তোমার মনোভাব কেমন? নিজেকে এই প্রশ্নগুলো কর না কেন যেমন, ‘আমার পরিবারে যে-বাইবেল অধ্যয়নের ব্যবস্থা রয়েছে, সেটাকে কি আমি মনপ্রাণ দিয়ে সমর্থন করি? সেই নির্ধারিত সময়ে অন্য কিছু না করে আমি কি সহযোগিতা করি?’ (ফিলিপীয় ৩:১৬) ‘আমি কি সক্রিয়ভাবে অধ্যয়নে অংশগ্রহণ করি? যখন দরকার, তখন আমি কি অধ্যয়নের বিষয়বস্তু সম্বন্ধে প্রশ্ন করি এবং এর প্রয়োগ সম্বন্ধে মন্তব্য করি? আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে উন্নতি করার সঙ্গে সঙ্গে আমি কি “কঠিন খাদ্য [যাহা] সিদ্ধবয়স্কদেরই জন্য” তার জন্য আকাঙ্ক্ষা গড়ে তুলি?’—ইব্রীয় ৫:১৩, ১৪.

৬, ৭. রোজ বাইবেল পড়ার তালিকা কীভাবে কিশোর-কিশোরীদের জন্য মূল্যবান হতে পারে?

এছাড়া রোজ বাইবেল পড়ার তালিকাও জরুরি। গীতরচক গেয়েছিলেন: “ধন্য সেই ব্যক্তি, যে দুষ্টদের মন্ত্রণায় চলে না, . . . কিন্তু সদাপ্রভুর ব্যবস্থায় আমোদ করে, তাঁহার ব্যবস্থা দিবারাত্র ধ্যান করে।” (গীতসংহিতা ১:১, ২) মোশির পরে যিহোশূয় নেতা হয়েছিলেন এবং তিনি ‘যত্নপূর্ব্বক দিবারাত্র ব্যবস্থাপুস্তক ধ্যান করিতেন।’ এটা তাকে বুদ্ধির সঙ্গে চলতে এবং ঈশ্বরের দেওয়া দায়িত্ব সফলভাবে পালন করতে সাহায্য করেছিল। (যিহোশূয়ের পুস্তক ১:৮) আমাদের নেতা যীশু খ্রীষ্ট বলেছিলেন: “লেখা আছে, ‘মনুষ্য কেবল রুটীতে বাঁচিবে না, কিন্তু ঈশ্বরের মুখ হইতে যে প্রত্যেক বাক্য নির্গত হয়, তাহাতেই বাঁচিবে।’” (মথি ৪:৪) আমাদের যদি রোজ দৈহিক খাবারের দরকার হয়, তাহলে নিয়মিত আধ্যাত্মিক খাবার খাওয়া আরও কত জরুরি!

তেরো বছর বয়সী নিকল তার আধ্যাত্মিক চাহিদা সম্বন্ধে বুঝতে পেরে রোজ বাইবেল পড়া শুরু করেছিল। * তার বয়স এখন ১৬ বছর এবং সে পুরো বাইবেল একবার পড়ে ফেলেছে আর দ্বিতীয় বার শুরু করে সে প্রায় অর্ধেক পর্যন্ত এসে গেছে। তার পড়ার পদ্ধতি খুবই সাধারণ। সে বলে, ‘আমি ঠিক করি যে, দিনে অন্তত একটা করে অধ্যায় পড়ব।’ রোজ বাইবেল পড়া তাকে কীভাবে সাহায্য করেছে? সে উত্তর দেয়: “আজকে চারপাশে প্রচুর খারাপ প্রভাব রয়েছে। রোজ স্কুলে এবং অন্যান্য জায়গায় আমাকে যে-চাপের মুখোমুখি হতে হয়, তা আমাকে বিশ্বাসের পরীক্ষায় ফেলে। রোজ বাইবেল পড়ার ফলে আমি খুব দ্রুত বাইবেলের আদেশ এবং নীতিগুলো মনে করতে পারি, যা আমাকে এইধরনের চাপগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করতে সাহায্য করে। এর ফলে আমি যিহোবা এবং যীশুর কাছাকাছি আছি বলে মনে করি।”

৮. সমাজ-গৃহ সম্বন্ধে যীশুর রীতি কী ছিল আর কিশোর-কিশোরীরা কীভাবে তাঁকে অনুকরণ করতে পারে?

রীতি অনুসারে যীশু সমাজ-গৃহে গিয়ে শাস্ত্রপাঠ শুনতেন এবং তা পড়তেন। (লূক ৪:১৬; প্রেরিত ১৫:২১) যেখানে বাইবেল পড়া এবং অধ্যয়ন করা হয়, সেই খ্রীষ্টীয় সভাগুলোতে নিয়মিত এসে এই উদাহরণ অনুকরণ করা কিশোর-কিশোরীদের জন্য কত উপকারী! এইধরনের সভাগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখিয়ে ১৪ বছর বয়সী রিচার্ড বলে: “আমার কাছে সভাগুলো খুবই মূল্যবান। সেখানে আমাকে সবসময় মনে করিয়ে দেওয়া হয় যে কোন্‌টা ভাল ও কোন্‌টা মন্দ, কোন্‌টা নৈতিক ও কোন্‌টা অনৈতিক এবং কোন্‌টা খ্রীষ্টীয় ও কোন্‌টা অখ্রীষ্টীয়। কঠিন উপায়ে অর্থাৎ তিক্ত অভিজ্ঞতার মাধ্যমে আমাকে সেগুলো বুঝতে হয়নি।” হ্যাঁ, “সদাপ্রভুর সাক্ষ্য বিশ্বসনীয়, অল্পবুদ্ধির জ্ঞানদায়ক।” (গীতসংহিতা ১৯:৭) নিকলও প্রতি সপ্তায় পাঁচটা সভায় যোগ দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে। এছাড়াও, সেগুলোর জন্য প্রস্তুতি নিতে সে দুই থেকে তিন ঘন্টা ব্যয় করে।—ইফিষীয় ৫:১৫, ১৬.

৯. কিশোর-কিশোরীরা কীভাবে “জ্ঞানে . . . বৃদ্ধি পাইতে” পারে?

‘একমাত্র সত্যময় ঈশ্বরকে, এবং তিনি যাঁহাকে পাঠাইয়াছেন, তাঁহাকে, যীশু খ্রীষ্টকে, জানিবার’ জন্য কৈশোর হল উপযুক্ত সময়। (যোহন ১৭:৩) তুমি হয়তো এমন অনেক কিশোর-কিশোরীকে জান, যারা কমিক বই পড়ার, টেলিভিশন দেখার, ভিডিও গেমস খেলার বা ইন্টারনেট ঘাঁটাঘাঁটি করার পিছনে অনেক সময় ব্যয় করে। তুমি যদি আমাদের নেতার নিখুঁত উদাহরণ অনুকরণ করতে পার, তাহলে কেন তাদেরকে অনুকরণ করবে? ছোট থাকতে তিনি যিহোবার সম্বন্ধে জেনে আনন্দ পেতেন। আর এর ফল কী হয়েছিল? আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো ভালবাসতেন বলে “যীশু জ্ঞানে . . . বৃদ্ধি পাইতে থাকিলেন।” (লূক ২:৫২) তুমিও তাই করতে পার।

“এক জন অন্য জনের বশীভূত হও”

১০. কোন্‌ বিষয়টা পরিবারকে শান্তি ও সুখের উৎস হতে সাহায্য করবে?

১০ ঘর হয় শান্তি ও পরিতৃপ্তির আশ্রয়স্থল নতুবা ঝগড়ার যুদ্ধক্ষেত্র হতে পারে। (হিতোপদেশ ২১:১৯; ২৬:২১) খ্রীষ্টের নেতৃত্ব মেনে নিলে পরিবারে শান্তি এবং সুখ বাড়ে। আসলে, যীশুর উদাহরণ হল পারিবারিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক আদর্শ। শাস্ত্র বলে, “খ্রীষ্টের ভয়ে এক জন অন্য জনের বশীভূত হও। নারীগণ, তোমরা যেমন প্রভুর, তেমনি নিজ নিজ স্বামীর বশীভূতা হও। কেননা স্বামী স্ত্রীর মস্তক, যেমন খ্রীষ্টও মণ্ডলীর মস্তক; তিনি আবার দেহের ত্রাণকর্ত্তা; . . . স্বামীরা, তোমরা আপন আপন স্ত্রীকে সেইরূপ প্রেম কর, যেমন খ্রীষ্টও মণ্ডলীকে প্রেম করিলেন, আর তাহার নিমিত্ত আপনাকে প্রদান করিলেন।” (ইফিষীয় ৫:২১-২৫) কলসীয় মণ্ডলীকে প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “সন্তানেরা, তোমরা সর্ব্ববিষয়ে পিতামাতার আজ্ঞাবহ হও, কেননা তাহাই প্রভুতে তুষ্টিজনক।”—কলসীয় ৩:১৮-২০.

১১. একজন স্বামী কীভাবে দেখাতে পারেন যে, খ্রীষ্টের নেতৃত্ব তার কাছে বাস্তব?

১১ এই পরামর্শ মেনে চলার মানে হল যে, স্বামী পরিবারে নেতৃত্ব দেবেন, তার স্ত্রী নিষ্ঠার সঙ্গে সাহায্য করবেন এবং ছেলেমেয়েরা তাদের বাবামার প্রতি বাধ্য থাকবে। তাই, যখন সঠিকভাবে মস্তক পদকে কাজে লাগানো হয়, একমাত্র তখনই সুখ আসে। একজন বিজ্ঞ স্বামী তার নিজের মস্তক ও নেতা খ্রীষ্ট যীশুকে অনুকরণ করে শিখবেন যে, কীভাবে মস্তক পদকে কাজে লাগাতে হয়। (১ করিন্থীয় ১১:৩) যদিও পরে যীশু ‘মণ্ডলীতে সকলের উপরে উচ্চ মস্তক’ হন কিন্তু পৃথিবীতে তিনি “পরিচর্য্যা পাইতে আইসেন নাই, কিন্তু পরিচর্য্যা করিতে” এসেছিলেন। (ইফিষীয় ১:২২; মথি ২০:২৮) একইভাবে একজন খ্রীষ্টান স্বামী তার নিজের স্বার্থের জন্য নয় কিন্তু তার স্ত্রী ও সন্তান অর্থাৎ পুরো পরিবারের বিষয়গুলোর প্রতি যত্ন নেওয়ার জন্য মস্তক পদকে কাজে লাগান। (১ করিন্থীয় ১৩:৪, ৫) তিনি তার মস্তক যীশু খ্রীষ্টের ঈশ্বরীয় গুণাবলি অনুকরণ করার চেষ্টা করেন। যীশুর মতো তিনি মৃদুশীল ও নম্রচিত্ত। (মথি ১১:২৮-৩০) তিনি যখন ভুল করেন, তখন সহজেই এইধরনের কথাগুলো বলতে পারেন যেমন, “আমি দুঃখিত” বা “তুমিই ঠিক।” তার উত্তম উদাহরণ দেখে একজন স্ত্রীর পক্ষে এইধরনের ব্যক্তির “সহকারিণী,” “পরিপূরক” (NW) এবং “সখী” হওয়া সহজ হয় এবং তার কাছ থেকে তিনি শেখেন এবং তার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেন।—আদিপুস্তক ২:২০; মালাখি ২:১৪.

১২. কোন্‌ বিষয়টা একজন স্ত্রীকে মস্তকব্যবস্থার নীতি মেনে নিতে সাহায্য করবে?

১২ একজন স্ত্রীর দায়িত্ব হল তার স্বামীর বশীভূত থাকা। কিন্তু, তিনি যদি জগতের আত্মা দ্বারা প্রভাবিত হন, তাহলে তা হয়তো মস্তকব্যবস্থার নীতির প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গিকে নষ্ট করে দিতে পারে এবং একজন পুরুষের প্রতি বশীভূত থাকার ধারণা তার কাছে গ্রহণযোগ্য না-ও হতে পারে। শাস্ত্র বলে না যে, স্বামী উদ্ধতভাবে কর্তৃত্ব খাটাবেন কিন্তু তাদের এমন হতে হবে যাতে স্ত্রীরা তাদের বশীভূত থাকেন। (ইফিষীয় ৫:২৪) বাইবেলে আরও বলা আছে যে, স্বামী বা বাবা পরিবারের দায়িত্ব পালন করবেন আর যখন এর পরামর্শ কাজে লাগানো হয়, তখন পরিবারে শান্তি আসে এবং শৃঙ্খলা বজায় থাকে।—ফিলিপীয় ২:৫.

১৩. বশীভূত থাকার বিষয়ে ছেলেমেয়েদের জন্য যীশু কোন্‌ উদাহরণ রেখেছেন?

১৩ ছেলেমেয়েরাও তাদের বাবামার বাধ্য থাকবে। এই বিষয়ে যীশু এক উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেছেন। ১২ বছরের যীশুকে মন্দিরে রেখে তিন দিনের পথ চলে যাওয়ার সেই ঘটনার পর, “তিনি তাঁহাদের [তাঁহার বাবামার] সঙ্গে নামিয়া নাসরতে চলিয়া গেলেন, ও তাঁহাদের বশীভূত থাকিলেন।” (লূক ২:৫১) ছেলেমেয়েরা যখন বাবামার প্রতি বাধ্য থাকে, তখন পরিবারে শান্তি এবং একতা বাড়ে। পরিবারের সবাই যখন খ্রীষ্টের নেতৃত্বের প্রতি বশীভূত থাকে, তখন এর ফল হয় সুখী পরিবার।

১৪, ১৫. ঘরে কোন কঠিন সমস্যা দেখা দিলে কোন্‌ বিষয়টা আমাদেরকে সফল হতে সাহায্য করে? একটা উদাহরণ দিন।

১৪ এমনকি পরিবারে যখন কঠিন পরিস্থিতি দেখা দেয়, তখন সফল হওয়ার চাবি হল যীশুকে অনুকরণ করা এবং তাঁর নির্দেশনা মেনে চলা। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ৩৫ বছর বয়সী জেরি যখন লানাকে বিয়ে করেন, যার এক কিশোরী মেয়ে ছিল তখন তাদের মধ্যে অকল্পনীয় সমস্যার সৃষ্টি হয়। জেরি বলেন: “আমি জানতাম যে সফল মস্তক হতে হলে, আমাকে একই বাইবেলের নীতি কাজে লাগাতে হবে, যা কাজে লাগানোর ফলে অন্যান্য পরিবারে সফলতা এসেছে। কিন্তু, খুব শীঘ্রিই আমি বুঝতে পারি যে, সেগুলো আমাকে আরও বেশি প্রজ্ঞা এবং বিচক্ষণতার সঙ্গে কাজে লাগাতে হবে।” তার সৎমেয়ে জেরিকে তার মা ও তার মাঝে একটা বাধা বলে মনে করত আর এটা তাকে খুবই বিরক্ত করেছিল। আর সেই মেয়ের কথা ও কাজে তার এই মনোভাব যে প্রভাব ফেলত, তা বোঝার জন্য জেরির বিচক্ষণতার দরকার ছিল। কীভাবে তিনি সেই পরিস্থিতির মোকাবিলা করেছিলেন? উত্তরে জেরি বলেন: “লানা এবং আমি একমত হই যে, অন্তত কিছু সময়ের জন্য লানা তার মেয়েকে শাসন করার বিষয়টা যত্ন নেবে আর আমি তার সঙ্গে উত্তম সম্পর্ক গড়ে তোলার বিষয়টা খেয়াল রাখব। একসময়, এই বিষয়টা উত্তম ফল নিয়ে এসেছিল।”

১৫ ঘরে যখন কোন কঠিন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়, তখন পরিবারের সদস্যরা কেন এভাবে কথা বলে এবং কাজ করে, তা খুঁজে বের করার জন্য বিচক্ষণতার দরকার। এছাড়া, ঈশ্বরের দেওয়া নীতিগুলো সঠিকভাবে কাজে লাগানোর জন্য আমাদের প্রজ্ঞার দরকার। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যীশু পরিষ্কারভাবে বুঝতে পেরেছিলেন যে রক্তস্রাবে ভুগছেন সেই মহিলা কেন তাঁকে স্পর্শ করেছিলেন এবং তার সঙ্গে তিনি জ্ঞানপূর্বক এবং করুণা দেখিয়ে ব্যবহার করেছিলেন। (লেবীয় পুস্তক ১৫:২৫-২৭; মার্ক ৫:৩০-৩৪) প্রজ্ঞা এবং বিচক্ষণতা আমাদের নেতার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ছিল। (হিতোপদেশ ৮:১২) তিনি যেভাবে কাজ করেছিলেন সেভাবে কাজ করলে আমরা সুখী হই।

‘তোমরা প্রথমে তাঁহার রাজ্যের বিষয়ে চেষ্টা কর’

১৬. আমাদের জীবনে কোন্‌ বিষয়টাকে প্রথম স্থানে রাখতে হবে আর এটা যীশু কীভাবে তাঁর উদাহরণের মাধ্যমে দেখিয়েছিলেন?

১৬ যীশু পরিষ্কার করে দিয়েছিলেন যে, যারা তাঁর নেতৃত্ব মেনে নেবে তাদের জীবনে কোন্‌ বিষয়টাকে প্রথম স্থানে রাখতে হবে। তিনি বলেছিলেন: “কিন্তু, তোমরা প্রথমে তাঁহার [ঈশ্বরের] রাজ্য ও তাঁহার ধার্ম্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা কর।” (মথি ৬:৩৩) আর তাঁর উদাহরণের মাধ্যমে তিনি আমাদেরকে দেখিয়েছেন যে, কীভাবে তা করতে হয়। যীশু তাঁর বাপ্তিস্মের পরে ৪০ দিন উপবাস থাকার এবং ধ্যান ও প্রার্থনা করার সময়ের শেষের দিকে পরীক্ষার মুখোমুখি হয়েছিলেন। শয়তান দিয়াবল তাঁকে ‘সমস্ত জগতের রাজ্যের’ কর্তৃত্ব দিতে চেয়েছিল। যীশু যদি দিয়াবলের প্রস্তাব গ্রহণ করতেন, তাহলে তাঁর জীবন কেমন হতো একটু ভেবে দেখুন! কিন্তু, খ্রীষ্ট তাঁর পিতার ইচ্ছা পালন করার ওপর জোর দিয়েছিলেন। তিনি এও বুঝতে পেরেছিলেন যে, শয়তানের জগতে এইধরনের জীবন খুবই ক্ষণস্থায়ী হবে। তিনি সঙ্গে সঙ্গে দিয়াবলের প্রস্তাবকে এই বলে অগ্রাহ্য করেছিলেন: “লেখা আছে, ‘তোমার ঈশ্বর প্রভুকেই প্রণাম করিবে, কেবল তাঁহারই আরাধনা করিবে’।” এর পরপরই যীশু “প্রচার করিতে আরম্ভ করিলেন; বলিতে লাগিলেন, ‘মন ফিরাও, কেননা স্বর্গ-রাজ্য সন্নিকট হইল’।” (মথি ৪:২, ৮-১০, ১৭) খ্রীষ্ট পৃথিবীতে তাঁর বাকি জীবন পূর্ণ-সময় ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে ঘোষণা করে কাটিয়েছিলেন।

১৭. আমরা কীভাবে দেখাতে পারি যে, রাজ্যের কাজকে আমরা জীবনে প্রথম স্থানে রেখেছি?

১৭ আমাদের নেতাকে অনুকরণ করা উচিত এবং মোটা মাইনের চাকরি এবং বৃত্তিকে আমরা আমাদের জীবনে প্রধান বিষয় হওয়ার জন্য শয়তানের জগৎকে টোপ ফেলতে সুযোগ দেব না। (মার্ক ১:১৭-২১) রাজ্যের সঙ্গে জড়িত বিষয়গুলোকে দ্বিতীয় স্থানে রেখে জগতের বিষয়গুলোর ফাঁদে পড়া আমাদের জন্য কত বোকামির কাজ হবে! যীশু আস্থার সঙ্গে আমাদেরকে রাজ্যের প্রচার কাজ এবং শিষ্য তৈরি করার দায়িত্ব দিয়েছেন। (মথি ২৪:১৪; ২৮:১৯, ২০) হ্যাঁ, আমাদের হয়তো পরিবার বা অন্যান্য দায়িত্ব থাকতে পারে কিন্তু প্রচার এবং শিক্ষা দেওয়ার খ্রীষ্টীয় দায়িত্ব পালন করার জন্য আমরা কি সন্ধ্যাবেলা এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলো ব্যবহার করতে আনন্দিত নই? আর এটা কত উৎসাহজনক যে, ২০০১ সালের পরিচর্যা বছরে প্রায় ৭,৮০,০০০ জন পূর্ণ-সময়ের পরিচারক বা অগ্রগামী হিসেবে কাজ করতে পেরেছেন!

১৮. কোন্‌ বিষয়টা আমাদেরকে পরিচর্যায় আনন্দ পেতে সাহায্য করে?

১৮ সুসমাচারের বিবরণগুলো যীশুকে এমন এক ব্যক্তি হিসেবে তুলে ধরে, যিনি সক্রিয়ভাবে কাজ করতেন ও সেইসঙ্গে যাঁর কোমল অনুভূতি ছিল। তাঁর চারপাশে যারা ছিল, তাদের আধ্যাত্মিক চাহিদাগুলো দেখে তিনি তাদের প্রতি করুণা দেখিয়েছিলেন এবং নিজে থেকে তাদেরকে সাহায্য করেছিলেন। (মার্ক ৬:৩১-৩৪) আমরা যখন অন্যদের প্রতি প্রেম দেখিয়ে এবং তাদেরকে সাহায্য করার জন্য আন্তরিক ইচ্ছা নিয়ে পরিচর্যা করি, তখন তা আনন্দপূর্ণ হয়। কিন্তু, আমরা কীভাবে এইরকম আকাঙ্ক্ষা গড়ে তুলতে পারি? জেসন নামে এক যুবক বলে, ‘আমি যখন কিশোর বয়সী ছিলাম, তখন পরিচর্যা ততটা উপভোগ করতাম না।’ এই কাজের জন্য ভালবাসা গড়ে তুলতে কোন্‌ বিষয়টা তাকে সাহায্য করেছিল? উত্তরে জেসন বলে: “প্রতি শনিবার সকালে আমার পরিবার ক্ষেত্রের পরিচর্যায় যেত। এটা আমার জন্য ভাল ছিল কারণ যত বেশি আমি প্রচারে যেতাম ততই আমি এই কাজের ভাল দিকটা দেখতাম এবং অনেক উপভোগ করতাম।” আমাদেরও নিয়মিত আগ্রহের সঙ্গে পরিচর্যায় যাওয়া উচিত।

১৯. খ্রীষ্টের নেতৃত্ব সম্বন্ধে আমাদের কোন্‌ সংকল্প নেওয়া উচিত?

১৯ খ্রীষ্টের নেতৃত্ব মেনে নেওয়া সত্যিই সতেজ করে এবং পুরস্কার এনে দেয়। আমরা যখন তা করি, তখন কৈশোর এমন এক সময় হয়ে ওঠে যখন জ্ঞান এবং প্রজ্ঞা বৃদ্ধি পায়। পারিবারিক জীবন শান্তি ও সুখের উৎস হয় এবং পরিচর্যা আনন্দ ও পরিতৃপ্তি নিয়ে আসে। তা হলে, যেভাবেই হোক না কেন, আসুন আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে এটা দেখাতে দৃঢ় সংকল্প হই যে খ্রীষ্টের নেতৃত্ব আমাদের কাছে বাস্তব। (কলসীয় ৩:২৩, ২৪) কিন্তু, যীশু খ্রীষ্ট আরেকটা উপায়ে অর্থাৎ খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর মাধ্যমে নেতৃত্ব দেন। পরের প্রবন্ধে আলোচনা করা হবে যে কীভাবে আমরা এই ব্যবস্থা থেকে উপকার পেতে পারি।

[পাদটীকা]

^ কিছু নাম পালটে দেওয়া হয়েছে।

আপনি কি মনে করতে পারেন?

• আমাদের ঈশ্বরের নিযুক্ত নেতাকে অনুসরণ করা কীভাবে আমাদেরকে উপকৃত করে?

• কিশোর-কিশোরীরা কীভাবে দেখাতে পারে যে তারা যীশুর নেতৃত্ব মেনে নিতে চায়?

• পরিবারে যারা খ্রীষ্টের নেতৃত্বের প্রতি বশীভূত হয়, তা তাদের ওপর কোন্‌ প্রভাব ফেলে?

• আমাদের পরিচর্যা কীভাবে দেখাতে পারে যে, খ্রীষ্টের নেতৃত্ব আমাদের কাছে বাস্তব?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[৯ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

ঈশ্বর ও আমাদের নিযুক্ত নেতার সম্বন্ধে জ্ঞান নেওয়ার জন্য কৈশোর হচ্ছে শ্রেষ্ঠ সময়

[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]

খ্রীষ্টের নেতৃত্বের প্রতি বশীভূত হওয়া পরিবারে সুখ নিয়ে আসে

[১২ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

যীশু রাজ্যকে প্রথমে রেখেছিলেন। আপনিও কি রাখেন?