সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

কেন বাপ্তাইজিত হবেন?

কেন বাপ্তাইজিত হবেন?

কেন বাপ্তাইজিত হবেন?

“তোমরা গিয়া সমুদয় জাতিকে শিষ্য কর; . . . তাহাদিগকে বাপ্তাইজ কর।”মথি ২৮:১৯.

১, ২. (ক) কিছু বাপ্তিস্ম কেমন পরিস্থিতিতে হয়েছে? (খ) বাপ্তিস্ম সম্বন্ধে কোন্‌ প্রশ্নগুলো ওঠে?

 ফ্রাঙ্কদের রাজা শারলেমেন সা.কা. ৭৭৫-৭৭ সালে, নিজের দখলে আনা স্যাকসন জাতির সকলকে বাপ্তিস্ম নিতে বাধ্য করেছিলেন। ইতিহাসবেত্তা জন লর্ড লিখেছিলেন, “তিনি জোর করে তাদেরকে নামেমাত্র খ্রীষ্টধর্মে ধর্মান্তরিত করেছিলেন।” একইভাবে, রাশিয়ার শাসক ভ্লাদিমির ১ম সা.কা. ৯৮৭ সালে একজন গ্রিক অর্থোডক্স রাজকুমারীকে বিয়ে করার পর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, তার সমস্ত প্রজাকে “খ্রীষ্টান” হতে হবে। তিনি তার লোকেদের, এমনকি দরকার হলে মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে গণ বাপ্তিস্মের আদেশ দিয়েছিলেন!

এইধরনের বাপ্তিস্ম কি যথার্থ ছিল? এগুলোর কি কোন প্রকৃত মানে আছে? যে-কেউই কি বাপ্তিস্ম নিতে পারে?

বাপ্তিস্ম—কীভাবে?

৩, ৪. মাথার ওপর জল ছিটিয়ে বা জল ঢেলে বাপ্তিস্ম দেওয়া কেন যথার্থ খ্রীষ্টীয় বাপ্তিস্ম নয়?

শারলেমেন ও ভ্লাদিমির ১ম যখন লোকেদেরকে বাপ্তিস্ম নিতে বাধ্য করেছিলেন, তখন ওই শাসকরা আসলে ঈশ্বরের বাক্যের সঙ্গে মিল রেখে কাজ করেননি। সত্যি বলতে কী, জল ছিটিয়ে, মাথার ওপর সামান্য জল ঢেলে বা এমনকি কাউকে শাস্ত্রীয় সত্য না শিখিয়ে জলে পুরো নিমজ্জিত হয়ে বাপ্তিস্ম দেওয়ায় কোন উপকার নেই।

সাধারণ কাল ২৯ সালে নাসরতের যীশু যখন যোহন বাপ্তাইজকের কাছে গিয়েছিলেন, তখন কী হয়েছিল তা একটু ভেবে দেখুন। যোহন লোকেদেরকে জর্দন নদীতে বাপ্তাইজিত করছিলেন। তারা নিজের ইচ্ছায় তার কাছে বাপ্তিস্ম নিতে এসেছিলেন। তিনি কি তাদেরকে জর্দন নদীতে দাঁড় করিয়ে নদী থেকে সামান্য জল তাদের মাথায় ঢেলে বা ছিটিয়ে দিয়েছিলেন? যোহন যখন যীশুকে বাপ্তিস্ম দেন, তখন কী হয়েছিল? মথি জানান যে, বাপ্তিস্মের পর “যীশু . . . অমনি জল হইতে উঠিলেন।” (মথি ৩:১৬) তিনি জলের নিচে অর্থাৎ জর্দন নদীতে নিমজ্জিত হয়েছিলেন। একইভাবে, ধার্মিক ইথিওপীয় নপুংসক ‘জলাশয়ে’ বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন। এইরকম জলাশয়ের প্রয়োজন ছিল, কারণ যীশু ও তাঁর শিষ্যদের বাপ্তিস্মের অন্তর্ভুক্ত হল পুরোপুরি নিমজ্জিত হওয়া।—প্রেরিত ৮:৩৬.

৫. প্রথমদিকের খ্রীষ্টানরা লোকেদেরকে কীভাবে বাপ্তিস্ম দিতেন?

যে-গ্রিক শব্দগুলোকে “বাপ্তাইজ,” “বাপ্তিস্ম” এবং আরও অন্যান্যভাবে অনুবাদ করা হয়েছে, এর মানে জলের নিচে নিমজ্জিত হওয়া বা ডুব দেওয়াকে বোঝায়। স্মিথ এর বাইবেল ডিকশনারি বলে: “বাপ্তিস্ম শব্দের সঠিক ও আক্ষরিক মানে হল নিমজ্জিত হওয়া।” তাই, কিছু বাইবেল অনুবাদ “যোহন অবগাহক” এবং “নিমজ্জনকারী যোহন” হিসেবে অনুবাদ করে। (মথি ৩:১, রদ্যারহেম; ডায়াগ্লট ইন্টারলিনিয়ার) অগাস্টাস নেয়ান্ডারের প্রথম তিন শতাব্দীর খ্রীষ্টান ধর্ম ও গির্জার ইতিহাস (ইংরেজি) বই বলে: “প্রথমদিকে বাপ্তিস্ম মূলত জলে নিমজ্জিত করেই দেওয়া হতো।” বিখ্যাত ফ্রেঞ্চ বই বিংশ শতাব্দীর লারোস (প্যারিস, ১৯২৮) মন্তব্য করে: “প্রথমদিকের খ্রীষ্টানরা যেখানে জল দেখতে পেতেন সেখানে নিমজ্জিত হয়ে বাপ্তিস্ম নিতেন।” আর নিউ ক্যাথলিক এনসাইক্লোপিডিয়া বলে: “এটা স্পষ্ট যে, প্রথমদিকের গির্জায় জলে নিমজ্জিত করে বাপ্তিস্ম দেওয়া হতো।” (১৯৬৭, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫৬) তাই আজকে, একজন যিহোবার সাক্ষি হিসেবে বাপ্তিস্ম গ্রহণ হল নিজের ইচ্ছায় নেওয়া এক পদক্ষেপ, যার জন্য জলে পুরোপুরি নিমজ্জিত হওয়া দরকার।

বাপ্তিস্ম নেওয়ার একটা নতুন কারণ

৬, ৭. (ক) যোহন কোন্‌ উদ্দেশ্যে বাপ্তিস্ম দিতেন? (খ) যীশুর অনুসারীদের বাপ্তিস্মে নতুন কী ছিল?

যোহনের দেওয়া বাপ্তিস্ম এবং যীশুর অনুসারীদের দেওয়া বাপ্তিস্মের উদ্দেশ্য আলাদা ছিল। (যোহন ৪:১, ২) ব্যবস্থার বিরুদ্ধে পাপ করায় প্রকাশ্যে অনুতাপের প্রতীক হিসেবে যোহন লোকেদেরকে বাপ্তিস্ম দিতেন। * (লূক ৩:৩) কিন্তু, যীশুর অনুসারীদের দেওয়া বাপ্তিস্মে নতুন কিছু জড়িত ছিল। সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনে প্রেরিত পিতর তার শ্রোতাদেরকে আহ্বান করেছিলেন: “মন ফিরাও, তোমরা প্রত্যেক জন তোমাদের পাপমোচনের নিমিত্ত যীশু খ্রীষ্টের নামে বাপ্তাইজিত হও।” (প্রেরিত ২:৩৭-৪১) যদিও তিনি যিহুদি ও ধর্মান্তরিতদের উদ্দেশে বলছিলেন কিন্তু পিতর আসলে ব্যবস্থার বিরুদ্ধে পাপ করার জন্য অনুতাপের প্রতীকস্বরূপ বাপ্তিস্ম নিতে বলছিলেন না; কিংবা তিনি এও বোঝাননি যে, যীশুর নামে বাপ্তিস্ম নেওয়া মানে পাপ ধুয়ে ফেলা।—প্রেরিত ২:১০.

সেই সময়, পিতর ‘রাজ্যের চাবিগুলির’ মধ্যে প্রথমটা ব্যবহার করেছিলেন। কোন্‌ উদ্দেশ্যে? তার শ্রোতাদের স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করার সুযোগ রয়েছে, সেই বিষয়টা জানানোর জন্য। (মথি ১৬:১৯) যেহেতু যিহুদিরা যীশুকে মশীহ হিসেবে অস্বীকার করেছিল, তাই ঈশ্বরের কাছ থেকে ক্ষমা চাওয়ার ও তা পাওয়ার জন্য, অনুতাপ করা ও তাঁর ওপর বিশ্বাস অনুশীলন করে চলা এক নতুন ও জরুরি বিষয় ছিল। তারা যীশু খ্রীষ্টের নামে জলে নিমজ্জিত হয়ে এইরকম বিশ্বাসকে সকলের সামনে প্রকাশ করতে পারত। এভাবে তারা খ্রীষ্টের মাধ্যমে ঈশ্বরের প্রতি তাদের ব্যক্তিগত উৎসর্গকে চিহ্নিত করত। আজকে যারা ঈশ্বরের অনুমোদন পেতে চান, তাদের অবশ্যই একইরকম বিশ্বাস অনুশীলন করতে হবে, যিহোবা ঈশ্বরের কাছে নিজেদেরকে উৎসর্গ করতে হবে এবং সর্বোচ্চ ঈশ্বরের কাছে শর্তহীন উৎসর্গীকরণের চিহ্ন হিসেবে খ্রীষ্টীয় বাপ্তিস্ম নিতে হবে।

সঠিক জ্ঞান অত্যন্ত জরুরি

৮. কেন সকলে খ্রীষ্টীয় বাপ্তিস্মের জন্য যোগ্য নন?

খ্রীষ্টীয় বাপ্তিস্মের জন্য সকলে যোগ্য নন। যীশু তাঁর অনুসারীদের আদেশ দিয়েছিলেন: “তোমরা গিয়া সমুদয় জাতিকে শিষ্য কর; পিতার ও পুত্ত্রের ও পবিত্র আত্মার নামে তাহাদিগকে বাপ্তাইজ কর; আমি তোমাদিগকে যাহা যাহা আজ্ঞা করিয়াছি সে সমস্ত পালন করিতে তাহাদিগকে শিক্ষা দেও।” (মথি ২৮:১৯, ২০) বাপ্তিস্ম নেওয়ার আগে, লোকেদের অবশ্যই ‘যীশু তাঁহার শিষ্যদেরকে যাহা যাহা আজ্ঞা করিয়াছিলেন সে সমস্ত পালন করিতে শিক্ষা নিতে হইবে।’ তাই, ঈশ্বরের বাক্যের সঠিক জ্ঞানের ওপর বিশ্বাসের অভাব রয়েছে এমন ব্যক্তিদেরকে জোর করে বাপ্তিস্ম দেওয়া অর্থহীন আর তা যীশু তাঁর প্রকৃত অনুসারীদের যে-আদেশ দিয়েছেন, সেটার বিপরীত।—ইব্রীয় ১১:৬.

৯. ‘পিতার নামে’ বাপ্তাইজিত হওয়ার মানে কী?

‘পিতার নামে’ বাপ্তাইজিত হওয়ার মানে কী? এর মানে, বাপ্তিস্ম প্রার্থীরা আমাদের স্বর্গীয় পিতার পদ ও কর্তৃত্বকে স্বীকার করেন। এভাবে যিহোবা ঈশ্বরকে আমাদের সৃষ্টিকর্তা বলে স্বীকার করা হয়, যিনি “সমস্ত পৃথিবীর উপরে পরাৎপর” এবং নিখিলবিশ্বের সার্বিক সার্বভৌম ব্যক্তি।—গীতসংহিতা ৮৩:১৮; যিশাইয় ৪০:২৮; প্রেরিত ৪:২৪.

১০. ‘পুত্ত্রের নামে’ বাপ্তাইজিত হওয়ার মানে কী?

১০ ‘পুত্ত্রের নামে’ বাপ্তাইজিত হওয়ার মানে ঈশ্বরের একজাত পুত্র হিসেবে যীশুর পদ ও কর্তৃত্বকে স্বীকার করা। (১ যোহন ৪:৯) যারা বাপ্তিস্মের জন্য যোগ্য হন তারা যীশুকে সেই ব্যক্তি হিসেবে মেনে নেন, যাঁর মাধ্যমে ঈশ্বর ‘অনেকের পরিবর্ত্তে মুক্তির মূল্য’ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। (মথি ২০:২৮; ১ তীমথিয় ২:৫, ৬) এ ছাড়া বাপ্তিস্ম প্রার্থীদেরকে এও স্বীকার করতে হবে যে, ঈশ্বর তাঁর পুত্রকে ‘উচ্চপদান্বিত’ করেছেন।—ফিলিপীয় ২:৮-১১; প্রকাশিত বাক্য ১৯:১৬.

১১. “পবিত্র আত্মার নামে” বাপ্তাইজিত হওয়ার মানে কী?

১১ “পবিত্র আত্মার নামে” বাপ্তাইজিত হওয়ার মানে কী? এর মানে বাপ্তিস্ম প্রার্থীরা স্বীকার করেন যে, পবিত্র আত্মা হল যিহোবার কার্যকারী শক্তি, যা তাঁর উদ্দেশ্যের সঙ্গে মিল রেখে বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়। (আদিপুস্তক ১:২; ২ শমূয়েল ২৩:১, ২; ২ পিতর ১:২১) যারা বাপ্তিস্মের যোগ্য তারা স্বীকার করেন যে, পবিত্র আত্মা তাদেরকে ‘ঈশ্বরের গভীর বিষয় সকল’ বুঝতে, রাজ্যের প্রচার কাজ চালিয়ে যেতে এবং আত্মার ফল “প্রেম, আনন্দ, শান্তি, দীর্ঘসহিষ্ণুতা, মাধুর্য্য, মঙ্গলভাব, বিশ্বস্ততা, মৃদুতা, ইন্দ্রিয়দমন” প্রকাশ করতে সাহায্য করে।—১ করিন্থীয় ২:১০; গালাতীয় ৫:২২, ২৩; যোয়েল ২:২৮, ২৯.

অনুতাপ ও পরিবর্তনের গুরুত্ব

১২. খ্রীষ্টীয় বাপ্তিস্মের সঙ্গে কীভাবে অনুতাপ জড়িত?

১২ কেবল নিষ্পাপ মানুষ যীশুর বাপ্তিস্ম ছাড়া, অন্য সকলের বাপ্তিস্ম হল ঈশ্বরের অনুমোদনের প্রতীক যেটার সঙ্গে অনুতাপ জড়িত। আমরা যখন অনুতাপ করি, তখন অতীতে কিছু করার বা কিছু করতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে আমরা দুঃখ করি বা মর্মপীড়া বোধ করি। প্রথম শতাব্দীর যে-যিহুদিরা ঈশ্বরকে খুশি করতে চেয়েছিল, তাদেরকে খ্রীষ্টের বিরুদ্ধে পাপ করার কারণে অনুতাপ করতে হয়েছিল। (প্রেরিত ৩:১১-১৯) করিন্থের কিছু পরজাতি বিশ্বাসীদের ব্যভিচার, প্রতিমাপূজা, চুরি ও অন্যান্য গুরুতর পাপের জন্য অনুতাপ করতে হয়েছিল। অনুতাপ করায় তারা যীশুর রক্তে “ধৌত” হয়েছিল; ঈশ্বরের সেবা করার জন্য “পবিত্রীকৃত” বা আলাদা হয়েছিল; এবং খ্রীষ্টের নামে ও ঈশ্বরের আত্মার সাহায্যে “ধার্ম্মিক গণিত” হয়েছিল। (১ করিন্থীয় ৬:৯-১১) শুদ্ধ বিবেক অর্জন করার এবং অতীতে করা পাপ থেকে ঈশ্বর-দত্ত স্বস্তি পাওয়ার জন্য, অনুতাপ অত্যন্ত জরুরি এক পদক্ষেপ।—১ পিতর ৩:২১.

১৩. বাপ্তিস্মের জন্য পরিবর্তনের সঙ্গে কী কী জড়িত?

১৩ যিহোবার সাক্ষি হিসেবে বাপ্তিস্ম নেওয়ার আগে আমাদের অবশ্যই পরিবর্তন হওয়া দরকার। পরিবর্তন হল স্বেচ্ছায় নেওয়া এক পদক্ষেপ আর যিনি খ্রীষ্ট যীশুকে অনুসরণ করার জন্য অন্তর থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তিনি নিজে থেকে তা নিয়ে থাকেন। এই ব্যক্তিরা তাদের আগের ভুল পথকে পরিত্যাগ করেন এবং ঈশ্বরের চোখে যা সঠিক তা করার সিদ্ধান্ত নেন। শাস্ত্রে, পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ইব্রীয় ও গ্রিক ক্রিয়াপদ কোন কিছু থেকে পিছু হটে আসা বা ফিরে আসাকে বোঝায়। এই কাজে অন্যায় পথ থেকে সরে ঈশ্বরের কাছে ফিরে আসার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। (১ রাজাবলি ৮:৩৩, ৩৪) পরিবর্তনের জন্য “মনপরিবর্ত্তনের উপযোগী কার্য্য” করা দরকার। (প্রেরিত ২৬:২০) এর জন্য মিথ্যা উপাসনাকে ত্যাগ করা, ঈশ্বরের আজ্ঞাগুলোর সঙ্গে মিল রেখে কাজ করা এবং যিহোবার প্রতি ঐকান্তিক ভক্তি দেখানো দরকার। (দ্বিতীয় বিবরণ ৩০:২, ৮-১০; ১ শমূয়েল ৭:৩) আমাদের চিন্তা, উদ্দেশ্য ও ব্যক্তিত্বে পরিবর্তন দেখা যায়। (যিহিষ্কেল ১৮:৩১) অধার্মিক স্বভাবগুলোর জায়গায় যখন আমরা নতুন ব্যক্তিত্ব গড়ে তুলি, তখন আমরা ‘ফিরিয়া আসি।’—প্রেরিত ৩:১৯; ইফিষীয় ৪:২০-২৪; কলসীয় ৩:৫-১৪.

সর্বান্তকরণে উৎসর্গীকরণ জরুরি

১৪. যীশুর অনুসারীদের উৎসর্গীকরণ বলতে কী বোঝায়?

১৪ বাপ্তিস্ম নেওয়ার আগে, যীশুর অনুসারীদের নিজেদেরকে ঈশ্বরের কাছে সর্বান্তকরণে উৎসর্গ করা দরকার। উৎসর্গীকরণ বলতে এক পবিত্র উদ্দেশ্যে নিজেকে আলাদা করে রাখাকে বোঝায়। এই পদক্ষেপটা এত গুরুত্বপূর্ণ যে, যিহোবার কাছে প্রার্থনায় আমাদের জানাতে হবে, আমরা চিরকাল তাঁকে ঐকান্তিক ভক্তি দেখানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। (দ্বিতীয় বিবরণ ৫:৯) অবশ্যই আমরা কোন কাজে বা কোন মানুষের কাছে নয় কিন্তু ঈশ্বরের কাছেই নিজেদেরকে উৎসর্গ করছি।

১৫. বাপ্তিস্ম প্রার্থীরা কেন জলে নিমজ্জিত হন?

১৫ খ্রীষ্টের মাধ্যমে নিজেদেরকে ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গ করে আমরা শাস্ত্রের সঙ্গে মিল রেখে ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার জন্য আমাদের জীবনকে কাজে লাগানোর সংকল্প প্রকাশ করি। ওই উৎসর্গের প্রতীক হিসেবে বাপ্তিস্ম প্রার্থীরা জলের নিচে নিমজ্জিত হন, ঠিক যেমন যীশু নিজেকে ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গ করার চিহ্ন হিসেবে জর্দন নদীতে বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন। (মথি ৩:১৩) এই বিষয়টা লক্ষণীয় যে, ওই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সময় যীশু প্রার্থনা করেছিলেন।—লূক ৩:২১, ২২.

১৬. আমরা যখন লোকেদেরকে বাপ্তিস্ম নিতে দেখি, কীভাবে তখন আমাদের আনন্দকে সঠিকভাবে প্রকাশ করতে পারি?

১৬ যীশুর বাপ্তিস্ম এক গুরুগম্ভীর কিন্তু আনন্দপূর্ণ ঘটনা ছিল। বর্তমান দিনের খ্রীষ্টীয় বাপ্তিস্মের বেলায়ও একই কথা বলা যায়। আমরা যখন লোকেদেরকে ঈশ্বরের কাছে তাদের উৎসর্গীকরণকে প্রকাশ করতে দেখি, তখন হয়তো সম্মানজনকভাবে হাততালি দিয়ে ও উষ্ণ শুভেচ্ছা জানিয়ে আমাদের আনন্দ প্রকাশ করি। কিন্তু আমাদের বিশ্বাস প্রকাশের এই ঘটনার পবিত্রতা বজায় রাখতে হইচই করা, শিস দেওয়া এবং এইধরনের অসম্মানজনক কাজ এড়িয়ে চলা দরকার। অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ উপায়ে আমাদের আনন্দ প্রকাশ পায়।

১৭, ১৮. ব্যক্তিরা বাপ্তিস্মের জন্য যোগ্য কি না, কী তা বুঝতে সাহায্য করে?

১৭ শিশুদের মাথায় জল ছিটিয়ে বা শাস্ত্র সম্বন্ধে কোন জ্ঞান না দিয়ে যাদেরকে বাপ্তিস্ম দেওয়া হয়, তাদের মতো যিহোবার সাক্ষিরা কখনও কাউকে বাপ্তিস্ম নিতে জোর করেন না। আসলে, যারা আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে যোগ্য নন, তাদেরকে তারা বাপ্তিস্ম দেন না। এমনকি কেউ যদি সুসমাচার প্রচার করার জন্য একজন অবাপ্তাইজিত প্রকাশক-ও হতে চান, তা হলে এর আগে খ্রীষ্টান প্রাচীনরা নিশ্চিত হয়ে নেন যে, তারা বাইবেলের মৌলিক শিক্ষাগুলোকে বোঝেন, এর সঙ্গে মিল রেখে কাজ করেন এবং “আপনি কি সত্যিই একজন যিহোবার সাক্ষি হতে চান?” এইধরনের প্রশ্নের উত্তরে হ্যাঁ বলেন।

১৮ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে, ব্যক্তিরা যখন রাজ্যের প্রচার কাজে অর্থপূর্ণভাবে অংশ নেন এবং বাপ্তিস্ম নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন, তখন খ্রীষ্টান প্রাচীনরা তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন, যাতে তারা নিশ্চিত হতে পারেন যে, এই বিশ্বাসী ব্যক্তিরা যিহোবার কাছে নিজেদেরকে উৎসর্গ করেছেন এবং বাপ্তিস্মের জন্য ঈশ্বর তাদের কাছ থেকে যা চান, তা পূরণ করেছেন। (প্রেরিত ৪:৪; ১৮:৮) বাইবেলের শিক্ষার ওপর প্রায় ১০০টারও বেশি প্রশ্নের ব্যক্তিগত উত্তর প্রাচীনদেরকে বুঝতে সাহায্য করে যে, তারা জলে নিমজ্জিত হওয়ার জন্য শাস্ত্র যা করতে বলে, তা পূরণ করছেন কি না। কেউ কেউ যোগ্য নয় আর তাই তাদেরকে খ্রীষ্টীয় বাপ্তিস্ম দেওয়া হয় না।

কোন কিছু কি আপনাকে বাধা দিচ্ছে?

১৯. যোহন ৬:৪৪ পদের কথা অনুসারে কারা যীশুর সহ শাসক হবেন?

১৯ জোর করে বাপ্তিস্ম দেওয়া হয় এমন অনেককে হয়তো বলা হয় যে, মৃত্যুর পর তারা স্বর্গে যাবেন। কিন্তু, যীশু তাঁর নিজের পদচিহ্ন অনুসারীদের ব্যাপারে বলতে গিয়ে বলেছিলেন: “পিতা, যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তিনি আকর্ষণ না করিলে কেহ আমার কাছে আসিতে পারে না।” (যোহন ৬:৪৪) যিহোবা ১,৪৪,০০০ জন ব্যক্তিকে খ্রীষ্টের দিকে আকর্ষণ করেছেন, যারা যীশুর সঙ্গে স্বর্গীয় রাজ্যে সহ শাসক হবেন। জোর করে দেওয়া বাপ্তিস্ম কখনও কাউকে ঈশ্বরের ব্যবস্থায় সেই প্রতাপান্বিত পদের জন্য পবিত্রীকৃত করেনি।—রোমীয় ৮:১৪-১৭; ২ থিষলনীকীয় ২:১৩; প্রকাশিত বাক্য ১৪:১.

২০. যারা এখনও বাপ্তিস্ম নেননি, কী তাদেরকে সাহায্য করতে পারে?

২০ বিশেষ করে ১৯৩০ দশকের মাঝামাঝি থেকে যে-অসংখ্য লোকেরা “মহাক্লেশ” থেকে রক্ষা পাওয়ার এবং চিরকাল পৃথিবীতে বেঁচে থাকার আশা রাখেন, তারা যীশুর ‘অপর মেষের’ সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। (প্রকাশিত বাক্য ৭:৯, ১৪; যোহন ১০:১৬, NW) তারা বাপ্তিস্মের জন্য যোগ্য হন কারণ তারা ঈশ্বরের বাক্যের সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করেছেন এবং তাঁকে ‘তাহাদের সমস্ত অন্তঃকরণ, প্রাণ, শক্তি ও চিত্ত দিয়া’ প্রেম করেন। (লূক ১০:২৫-২৮) যদিও কেউ কেউ জানেন যে, যিহোবার সাক্ষিরা ‘আত্মায় ও সত্যে ঈশ্বরের ভজনা করেন’ কিন্তু এখনও তারা যীশুর উদাহরণ মেনে চলছেন না এবং বাপ্তিস্ম নিয়ে সকলের সামনে যিহোবার প্রতি তাদের প্রকৃত ভালবাসা ও ঐকান্তিক ভক্তি দেখানোর প্রমাণ দিচ্ছেন না। (যোহন ৪:২৩, ২৪; দ্বিতীয় বিবরণ ৪:২৪; মার্ক ১:৯-১১) এই জরুরি পদক্ষেপ সম্বন্ধে আন্তরিক ও নির্দিষ্ট প্রার্থনা তাদেরকে ঈশ্বরের বাক্যের সঙ্গে পুরোপুরি মিল রেখে চলতে, যিহোবা ঈশ্বরের কাছে নিজেকে পুরোপুরি উৎসর্গ করতে এবং বাপ্তিস্ম নিতে প্রেরণা ও সাহস জোগাবে।

২১, ২২. কিছু কারণ কী যে-জন্য কেউ কেউ উৎসর্গীকরণ ও বাপ্তিস্ম নেওয়া থেকে বিরত থাকেন?

২১ কেউ কেউ উৎসর্গীকরণ ও বাপ্তিস্ম নেওয়া থেকে বিরত থাকেন কারণ তারা জগতের কাজকর্মে এত বেশি মত্ত হয়ে পড়েন বা ধনসম্পদের পিছনে এত বেশি ছোটেন যে, আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর জন্য তাদের হাতে খুব কম সময় থাকে। (মথি ১৩:২২; ১ যোহন ২:১৫-১৭) কত সুখীই না তারা হবেন যদি তারা তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও লক্ষ্যগুলোকে পালটান! যিহোবার নিকটবর্তী হওয়া তাদেরকে আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে সমৃদ্ধ করে তুলবে, উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করবে এবং শান্তি ও পরিতৃপ্তি নিয়ে আসবে, যা ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে পাওয়া যায়।—গীতসংহিতা ১৬:১১; ৪০:৮; হিতোপদেশ ১০:২২; ফিলিপীয় ৪:৬, ৭.

২২ অন্যেরা বলেন যে, তারা যিহোবাকে ভালবাসেন কিন্তু নিজেদেরকে উৎসর্গ করেন না অথবা বাপ্তিস্ম নেন না কারণ তারা মনে করেন যে, তা হলে তাদেরকে ঈশ্বরের কাছে নিকাশ দিতে হবে না। কিন্তু আমাদের প্রত্যেককে ঈশ্বরের কাছে নিকাশ দিতে হবে। যিহোবার বাক্য শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ওপর দায়িত্বও এসেছে। (যিহিষ্কেল ৩৩:৭-৯; রোমীয় ১৪:১২) ‘মনোনীত প্রজা’ হিসেবে প্রাচীন ইস্রায়েলীয়রা যিহোবার প্রতি উৎসর্গীকৃত এক জাতি হিসেবে জন্ম নিয়েছিল আর তাই তারা তাঁর নীতির সঙ্গে মিল রেখে তাঁকে বিশ্বস্তভাবে সেবা করতে বাধ্য ছিল। (দ্বিতীয় বিবরণ ৭:৬, ১১) আজকে কেউই এইরকম জাতি হিসেবে জন্ম নেয় না কিন্তু আমরা যদি শাস্ত্রের সঠিক নির্দেশনা পেয়ে থাকি, তা হলে আমাদের এর প্রতি বিশ্বাস রেখে কাজ করা দরকার।

২৩, ২৪. কোন্‌ ভয় লোকেদেরকে বাপ্তিস্ম নেওয়ায় বাধা হওয়া উচিত নয়?

২৩ পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাব আছে, এই ভয় কাউকে কাউকে বাপ্তিস্ম নেওয়ায় বাধা দেয়। কিন্তু, আমাদের সকলেরই এখনও অনেক কিছু শেখার আছে কারণ ‘ঈশ্বর আদি অবধি শেষ পর্য্যন্ত যে সকল কার্য্য করেন, মনুষ্য তাহার তত্ত্ব বাহির করিতে পারিবে না।’ (উপদেশক ৩:১১) ইথিওপীয় নপুংসকের কথা ভেবে দেখুন। একজন ধর্মান্তরিত ব্যক্তি হিসেবে, শাস্ত্র সম্বন্ধে তার কিছু জ্ঞান ছিল, তবে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে তিনি প্রত্যেকটা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি। কিন্তু, যীশুর মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের মাধ্যমে পরিত্রাণ করার জন্য যিহোবার ব্যবস্থা সম্বন্ধে শেখার সঙ্গে সঙ্গে নপুংসক জলে নিমজ্জিত হয়ে বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন।—প্রেরিত ৮:২৬-৩৮.

২৪ কেউ কেউ ঈশ্বরের কাছে নিজেকে উৎসর্গ করতে ভয় পান কারণ তারা মনে করেন যে, সেই অনুযায়ী তারা চলতে পারবেন না। ১৭ বছর বয়সী মোনিক বলে: “আমি আমার উৎসর্গীকরণের যোগ্যরূপে চলতে পারব না, এই ভয়ে বাপ্তিস্ম নিতে দেরি করেছি।” কিন্তু, আমরা যদি সর্বান্তঃকরণে যিহোবার ওপর আস্থা রাখি, তা হলে ‘তিনি আমাদের পথ সকল সরল করিবেন।’ তাঁর বিশ্বস্ত উৎসর্গীকৃত দাস হিসেবে, তিনি আমাদেরকে ‘সত্যে চলিতে’ সাহায্য করবেন।—হিতোপদেশ ৩:৫, ৬; ৩ যোহন ৪.

২৫. কোন্‌ প্রশ্নটা এখন আমাদের বিবেচনা করা উচিত?

২৫ যিহোবার ওপর পূর্ণ আস্থা এবং তাঁর প্রতি অন্তর থেকে ভালবাসা থাকায় প্রতি বছর হাজার হাজার ব্যক্তি উৎসর্গীকরণ ও বাপ্তিস্ম নেওয়ার জন্য চালিত হন। আর নিশ্চিতভাবে ঈশ্বরের সমস্ত উৎসর্গীকৃত দাসই তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে চান। তাসত্ত্বেও, আমরা বিষম সময়ে বাস করছি এবং বিশ্বাসের নানা পরীক্ষার মুখোমুখি হচ্ছি। (২ তীমথিয় ৩:১-৫) যিহোবার প্রতি আমাদের উৎসর্গীকরণের যোগ্যরূপে চলতে আমরা কী করতে পারি? পরের প্রবন্ধে আমরা এই বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করব।

[পাদটীকা]

^ যেহেতু যীশু নিষ্পাপ ছিলেন, তাই তিনি অনুতাপের চিহ্ন হিসেবে বাপ্তিস্ম নেননি। তাঁর বাপ্তিস্ম বুঝিয়েছিল যে, পিতার ইচ্ছা পালন করার জন্য তিনি নিজেকে ঈশ্বরের কাছে সঁপে দিয়েছিলেন।—ইব্রীয় ৭:২৬; ১০:৫-১০.

আপনি কি মনে করতে পারেন?

• খ্রীষ্টীয় বাপ্তিস্ম কীভাবে দেওয়া হয়?

• বাপ্তিস্ম নেওয়ার জন্য একজনের কোন্‌ জ্ঞান নেওয়া দরকার?

• কোন্‌ পদক্ষেপগুলো সত্য খ্রীষ্টানদেরকে বাপ্তিস্মের দিকে পরিচালিত করে?

• কেউ কেউ কেন বাপ্তিস্ম নেওয়া থেকে বিরত থাকেন কিন্তু তাদেরকে কীভাবে সাহায্য করা যায়?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৪ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

আপনি কি জানেন যে, ‘পিতা, পুত্ত্র ও পবিত্র আত্মার নামে’ বাপ্তাইজিত হওয়ার মানে কী?