সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আজ সুরক্ষা বোধ করা ভবিষ্যতে সুরক্ষা পাওয়া

আজ সুরক্ষা বোধ করা ভবিষ্যতে সুরক্ষা পাওয়া

আজ সুরক্ষা বোধ করা ভবিষ্যতে সুরক্ষা পাওয়া

 সুরক্ষা পাওয়া কেন এত কঠিন আর যদিও পাওয়া যায়, তা হলে কেন এত ক্ষণস্থায়ী? এটা কি হতে পারে যে, সুরক্ষা সম্বন্ধে আমাদের ধারণা কল্পনাভিত্তিক—যা পাওয়া সম্ভব সেটা বাদ দিয়ে বরং আমরা যা পাওয়ার আশা করি, সেটার ওপর জোর দিই? এইধরনের ভ্রান্তিকে স্বপ্নের জগতে বাস করা বলা যেতে পারে।

কল্পনা একজনকে অরক্ষিত জীবনের বাস্তবতা থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে এক সুন্দর, সুরক্ষিত পরিবেশে নিয়ে আসে এবং এই স্বপ্নকে ভেঙে দেয় এমন যে-কোন বিষয়কে উপেক্ষা করতে প্রেরণা দেয়। কিন্তু, প্রায়ই বাস্তব জগতের সমস্যাগুলো হঠাৎ এই স্বপ্নের জগতে ঢুকে পড়ে আর একজনের সুখানুভূতিকে নির্মমভাবে নষ্ট করে দেয় এবং কল্পনাপ্রবণ ব্যক্তিকে চরম বাস্তবতায় ফিরিয়ে আনে।

আসুন আমরা একটা ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা করি, যেখানে লোকেরা সুরক্ষা খুঁজে থাকে আর সেটা হল ভৌগোলিক অবস্থান। উদাহরণস্বরূপ, সফলতা, আনন্দফূর্তি, মোটা অঙ্কের মাইনে ও আরামদায়ক বাসস্থানের জন্য বড় শহরকে হয়তো সম্ভাবনাময় বলে মনে হতে পারে। হ্যাঁ, এটা হয়তো দীর্ঘ আকাঙ্ক্ষিত সুরক্ষার আশা দিতে পারে। কিন্তু এই স্বপ্ন কি বাস্তব?

অবস্থান—বড় শহর অথবা বড় স্বপ্ন?

উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বড় শহরে যাওয়ার লোভকে বাড়িয়ে তোলা হয়, যা হয়তো অবাস্তব কল্পনাগুলো করতে প্রলুব্ধ করে। এইধরনের বিজ্ঞাপনের পিছনে যে-সংগঠনগুলো কাজ করে, সেগুলো সাধারণত আপনার সুরক্ষার বিষয়ে চিন্তিত নয় বরং তাদের জিনিসগুলো বিক্রি হচ্ছে কি না, সেটাই হল তাদের আগ্রহের বিষয়। তারা বাস্তব জগতের সমস্যাগুলোকে লুকিয়ে রেখে বরং সুরক্ষাকে তুলে ধরে এমন দৃশ্যগুলো দেখিয়ে থাকে। তাই বিজ্ঞাপিত বস্তু এবং বড় শহরের সঙ্গে সুরক্ষা শব্দটা সম্পর্কযুক্ত হয়ে পড়ে।

এই উদাহরণটা বিবেচনা করুন। পশ্চিম আফ্রিকার এক শহরে সরকারি কর্মকর্তারা একটা বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন, যেখানে স্পষ্টভাবে দেখানো হয়েছিল যে, ধূমপান করা আসলে কষ্ট করে অর্জিত টাকা পুড়িয়ে ফেলার সমান। এটা ছিল নাগরিকদের সাবধান করতে ধূমপানের বিরুদ্ধে করা এক অভিযানের অংশ। এর ঠিক বিপরীতে সিগারেট উৎপাদক ও বিক্রেতারা চতুরতার সঙ্গে এমন কিছু বিজ্ঞাপন লাগিয়েছিল, যেখানে ধূমপায়ীদের সুখানুভূতি এবং সাফল্যের এক চিত্তাকর্ষক দৃশ্য দেখানো হয়েছিল। এ ছাড়া একটা সিগারেট কোম্পানি তাদের কিছু কর্মচারিকে রং বেরঙের কাপড় ও টুপি পরিয়ে রাস্তায় যুবক-যুবতীদের কাছে সিগারেট বিতরণের এবং প্রত্যেককে “এটা খাওয়ার” জন্য উৎসাহিত করতে ব্যবহার করেছিল। এই যুবক-যুবতীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন গ্রাম থেকে আসায় এবং চাতুরীপূর্ণ এই বিজ্ঞাপন পদ্ধতিগুলোর সম্বন্ধে আগে থেকে না জানায় এই আমন্ত্রণে ফেঁসে যায়। তারা ধূমপানে আসক্ত হয়ে পড়ে। গ্রাম থেকে আসা এই যুবক-যুবতীরা তাদের পরিবারকে সাহায্য করতে অথবা আর্থিক দিক দিয়ে সফল হতে বড় শহরে সুরক্ষা খোঁজার জন্য এসেছিল। অথচ তারা তাদের টাকাপয়সা নষ্ট করতে শুরু করে, যা কিনা তারা আরও ভাল উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে পারত।

বড় শহরে এক সফল জীবন পাওয়ার বিষয়ে যে-বিজ্ঞাপনগুলো তুলে ধরা হয়, সেগুলো সবসময়ই যে বিক্রেতারাই করে থাকে তা কিন্তু নয়। এগুলো লোকেদের মুখের কথাও হতে পারে যারা ইতিমধ্যেই বড় শহরে বাস করতে আরম্ভ করেছে এবং যারা নিজেদের গ্রামে ফিরে যেতে লজ্জা বোধ করে। নিজেদের বর্থ্যতা ঢাকার জন্য তারা শহরে যতটুকু তথাকথিত ধন উপার্জন এবং প্রাপ্তি লাভ করেছে, তা নিয়ে গর্ব করতে থাকে। পদন্নোতি হয়েছে বলে তারা যে-দাবি করে সেটাকে ভালভাবে পরীক্ষা করলে দেখা যায় যে, তাদের আগের গ্রাম্য জীবনের তুলনায় বর্তমান জীবনধারার কোন উন্নতি হয়নি; শহরে থাকা আরও অন্যান্য বাসিন্দাদের মতো তারাও আর্থিকভাবে কষ্টে রয়েছে।

বিশেষ করে বড় শহরগুলোতে সুরক্ষার খোঁজে আসা নতুন ব্যক্তিরা অসৎ লোকেদের শিকার হয়। কেন? সাধারণত ঘনিষ্ঠ বন্ধু পাতানোর সুযোগ না পাওয়ায় এবং পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে দূরে থাকার জন্য এইরকম হয়। তাই তাদের বস্তুবাদী শহুরে জীবনের ফাঁদগুলোকে এড়িয়ে চলার জন্য সাহায্য করার পরামর্শদাতা থাকে না।

জোজুয়া ধূমপান করার ফাঁদে পড়েনি। এ ছাড়া সে বুঝতে পেরেছিল যে, শহুরে জীবনের চাপগুলোকে সফলতার সঙ্গে মোকাবিলা করা তার ক্ষমতার বাইরে। তার ক্ষেত্রে শহর তাকে একমাত্র উত্তম যে-বস্তু দিতে পেরেছিল তা হল, এক বিশাল অসম্পূর্ণ স্বপ্ন। সে বুঝতে পেরেছিল যে-শহরে প্রকৃত সুরক্ষা নেই; সেই শহরে থাকার সে উপযোগী নয়। শূন্যতা, হীনতা ও অসফল হওয়ার অনুভূতি তাকে ভারাক্রান্ত করে তোলে এবং অবশেষে সে সমস্ত অহংকার বিসর্জন দিয়ে গ্রামে ফিরে যায়।

তার ভয় ছিল যে লোকে তাকে নিয়ে ঠাট্টা করবে। কিন্তু, এর পরিবর্তে তার পরিবার ও সত্যিকারের বন্ধুবান্ধবরা তাকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানায়। পরিবারের ভালবাসা, গ্রামের পরিচিত পরিবেশ এবং খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর বন্ধুবান্ধবদের প্রেমের কারণে খুব শীঘ্রিই সে সুরক্ষা বোধ করে, যা সে ওই বড় শহরে কখনও পায়নি, যেখানে অনেকের স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল যে, তার বাবার সঙ্গে মাঠে কাজ করার ফলে সে ও তার পরিবার যা আয় করতে শুরু করে তা শহরের চাইতে অনেক বেশি ছিল।

টাকাপয়সা—আসল সমস্যাটা কী?

টাকাপয়সা কি আপনার মধ্যে সুরক্ষা বোধ জাগিয়ে তুলতে পারে? কানাডার লিজ বলে: “একজন যুবতী হিসেবে আমি বিশ্বাস করতাম যে, টাকাপয়সা উদ্বিগ্নতা থেকে মুক্তি দেয়।” সে এমন একজন ব্যক্তির প্রেমে পড়ে, যার আর্থিক অবস্থা খুব ভাল ছিল। শীঘ্রিই তারা বিয়ে করে। সে কি সুরক্ষা বোধ করেছিল? লিজ বলে চলে: “আমার যখন বিয়ে হয়, তখন আমাদের একটা সুন্দর বাড়ি ও দুটো গাড়ি ছিল এবং আমাদের আর্থিক অবস্থা খুব ভাল ছিল বলে সবকিছু উপভোগ করার, বেড়াতে যাওয়ার ও আমোদপ্রমোদ করার স্বাধীনতা আমরা পেয়েছিলাম। কিন্তু অবাক হওয়ার বিষয় যে, তবুও টাকাপয়সার ব্যাপারে আমি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়তাম।” কেন এমন হতো সেটা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সে বলে: “আমাদের হারিয়ে যাওয়ার মতো অনেক বিষয় ছিল। আসলে যত বেশি আপনার থাকবে তত বেশি আপনি সুরক্ষার অভাব বোধ করবেন। টাকাপয়সা কখনোই উদ্বিগ্নতা অথবা দুঃশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দিতে পারেনি।”

আপনি যদি মনে করেন যে, সুরক্ষা বোধ করার মতো যথেষ্ট টাকাপয়সা আপনার নেই, তা হলে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন ‘আসল সমস্যাটা কী? সমস্যা কি টাকাপয়সার অভাব, নাকি টাকাপয়সা খরচ করার ব্যাপারে বিজ্ঞতার অভাব?’ বিগত জীবনের দিকে তাকিয়ে লিজ বলে: “এখন বুঝতে পারি যে, আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন আমাদের পরিবারের সমস্যার কারণ ছিল টাকাপয়সা বিজ্ঞতার সঙ্গে খরচ না করা। আমরা ধারে কেনাকাটা করতাম আর তাই সবসময়ই আমাদের মাথার ওপর ঋণের বোঝা ঝুলে থাকত। এটা দুঃশ্চিন্তা নিয়ে আসত।”

আজকে তাদের হাতে কম টাকা থাকা সত্ত্বেও, লিজ ও তার স্বামী অনেক বেশি সুরক্ষা বোধ করে। ঈশ্বরের বাক্যের সত্য শেখার পর তারা টাকাপয়সার বিষয়ে লোভনীয় প্রচারগুলোর প্রতি কান না দিয়ে বরং ঈশ্বরের প্রজ্ঞা ও সেইসঙ্গে এই কথাগুলোর প্রতি মনোযোগ দিতে শুরু করে: “কিন্তু যে জন আমার কথা শুনে, সে নির্ভয়ে বাস করিবে, শান্ত থাকিবে, অমঙ্গলের আশঙ্কা করিবে না।” (হিতোপদেশ ১:৩৩) তারা চেয়েছে যেন তাদের জীবন আরও বেশি অর্থপূর্ণ হোক, যা কিনা এক বিরাট ব্যাংক আ্যকাউন্ট দিতে পারে না। বর্তমানে দূরদেশে মিশনারি হিসেবে লিজ ও তার স্বামী, ধনী-গরিব উভয়কেই সমানভাবে শিক্ষা দিচ্ছেন যে, খুব শীঘ্রিই যিহোবা ঈশ্বর সারা পৃথিবীতে প্রকৃত সুরক্ষা নিয়ে আসবেন। এই কাজে কোন আর্থিক লাভ নয় কিন্তু মহৎ উদ্দেশ্য ও উচ্চ মূল্যবোধ রয়েছে তাই এটা গভীর পরিতৃপ্তি ও দৃঢ়তা নিয়ে আসে।

এই মৌলিক সত্যটা মনে রাখুন: ঈশ্বরের কাছে ধনী হওয়াটা ধনসম্পদ থাকার চাইতে আরও বেশি মূল্যবান। পবিত্র শাস্ত্রের সমস্ত জায়গায় ধনসম্পদ থাকার ওপর নয় কিন্তু যিহোবার কাছে সুনাম রাখার বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে, যা আমরা বিশ্বাসের সঙ্গে ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে চলার মাধ্যমে বজায় রাখতে পারি। যীশু খ্রীষ্ট আমাদেরকে “ঈশ্বরের উদ্দেশে ধনবান্‌” থাকার এবং “স্বর্গে . . . ধন সঞ্চয়” করার বিষয়ে উৎসাহ দিয়েছেন।—লূক ১২:২১, ৩৩.

পদমর্যাদা—আপনাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে?

আপনি যদি মনে করার চেষ্টা করেন যে, সমাজে উচ্চ পদমর্যাদা পাওয়া হল সুরক্ষার পথ, তা হলে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘এমন কেউ কি আছেন, যিনি পদমর্যাদা পেয়ে প্রকৃত সুরক্ষা পেয়েছেন? এটা পাওয়ার জন্য আমাকে কতখানি ওপরে উঠতে হবে?’ কোন সফল পেশা আপনাকে হয়তো এক বাহ্যিক সুরক্ষা দেবে, যা আপনাকে নিরুৎসাহিত করতে পারে অথবা এর চেয়েও খারাপ এক দুর্দশাপূর্ণ পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিতে পারে।

সত্যিকারের অভিজ্ঞতাগুলো দেখায় যে, মানুষের কাছে সুনামের চেয়ে ঈশ্বরের কাছে সুনাম বেশি সুরক্ষা আনে। একমাত্র যিহোবাই মানুষকে অনন্ত জীবন উপহার দিতে পারেন। এর অন্তর্ভুক্ত হল আমাদের নাম কোন সামাজিক নথিতে নয় বরং ঈশ্বরের জীবন পুস্তকে লিপিবদ্ধ করা।—যাত্রাপুস্তক ৩২:৩২; প্রকাশিত বাক্য ৩:৫.

আশাবাদী মনোভাবকে আপনি যদি সরিয়ে রাখেন, তা হলে বর্তমান পরিস্থিতিকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করেন এবং ভবিষ্যতে আপনি প্রকৃতই কী আশা করতে পারেন? সকলের সবকিছু থাকে না। একজন বিজ্ঞ খ্রীষ্টান যেমন বলেছিলেন “আমাকে শিখতে হয়েছে যে জীবন এটা ওটা নয় বরং এটা বা ওটা।” একটু থামুন এবং বাক্সে দেওয়া “বেনিনে বলা হয়েছিল” বিষয়টা পড়ুন।

এখন এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিন: আমার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য বা লক্ষ্য কী? সেখানে পৌঁছানোর সবচাইতে সোজা রাস্তা কোন্‌টা? এটা কি হতে পারে যে আমি এক অরক্ষিত ঘোরানো রাস্তা দিয়ে চলছি এবং আসলেই আমি যা চাই ও বাস্তবিকভাবে পাওয়া সম্ভব তা এক অপেক্ষাকৃত সোজা রাস্তায় পাওয়া যায়?

আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর মূল্যের তুলনায় বস্তুগত বিষয়গুলোর যে আপেক্ষিক মূল্য রয়েছে, সেই বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ার পর যীশু চোখ “সরল” রাখার বিষয়ে বলেছিলেন। (মথি ৬:২২) তিনি স্পষ্ট করে বলে দিয়েছিলেন যে, জীবনের মূখ্য বিষয়গুলো হল আধ্যাত্মিক মূল্যবোধ ও সেই লক্ষ্য, যা ঈশ্বরের নাম ও তাঁর রাজ্যের ওপর কেন্দ্রীভূত। (মথি ৬:৯, ১০) অন্য জিনিসগুলো কম গুরুত্বপূর্ণ অথবা বলা যায় সেগুলো কেন্দ্রবিন্দুর বাইরে।

আজকে এমন অনেক ক্যামেরা আছে, যা দূরের ও কাছের উভয় জিনিসগুলোর ওপর স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফোকাস করে। আপনারও কি এইধরনের প্রবণতা আছে? আপনি যা কিছুই “ফোকাস করে” দেখেন তার সমস্ত কিছুই কি—গুরুত্বপূর্ণ, লোভনীয় এবং আকাঙ্ক্ষিত বলে অর্জনীয়? এমনকি সেটা কিছুটা সত্য হলেও, খ্রীষ্টানদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল রাজ্য, যা কিনা অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় বিষয়ের ভিড়ে হারিয়ে যেতে পারে আর এভাবে প্রত্যেকটা বিষয়ই আপনার মনোযোগ কেড়ে নিতে পারে। যীশু জোরালোভাবে উপদেশ দিয়েছিলেন: “কিন্তু তোমরা প্রথমে তাঁহার রাজ্য ও তাঁহার ধার্ম্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা কর, তাহা হইলে ঐ সকল দ্রব্যও তোমাদিগকে দেওয়া হইবে।”—মথি ৬:৩৩.

আজ ও ভবিষ্যতে সুরক্ষা

আমরা সকলে হয়তো নিজেদের ও প্রিয়জনের ভালোর জন্য স্বপ্ন দেখি। কিন্তু আমরা যেহেতু অসিদ্ধ এবং এক অসিদ্ধ জগতে বাস করি ও সেইসঙ্গে আমাদের জীবন সংক্ষিপ্ত, তাই এই বিষয়গুলো আমাদেরকে আকাঙ্ক্ষিত বিষয়গুলো আশা করার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা বজায় রাখতে বাধ্য করে। হাজার হাজার বছর আগে একজন বাইবেল লেখক ব্যাখ্যা করেছিলেন: “আমি ফিরিলাম, ও সূর্য্যের নীচে দেখিলাম যে, দ্রুতগামীদের দ্রুতগমন, কি বীরদের যুদ্ধ, কি জ্ঞানবানদের অন্ন, কি বুদ্ধিমানদের ধন, কি বিজ্ঞদেরই অনুগ্রহলাভ হয়, এমন নয়, কিন্তু সকলের প্রতি কাল ও দৈব ঘটে।”—উপদেশক ৯:১১.

কখনও কখনও আমরা দৈনন্দিন জীবনযাপনের মধ্যে এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়ি যে, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো যেমন আমরা কে এবং সত্যিকারের সুরক্ষা বোধ করার জন্য আমাদের প্রকৃতই কী দরকার, সেই ব্যাপারে কোন খেয়ালই করি না। এই প্রাচীন প্রজ্ঞার কথাগুলো বিবেচনা করুন: “যে ব্যক্তি রৌপ্য ভালবাসে, সে রৌপ্যে তৃপ্ত হয় না; আর যে ব্যক্তি ধনরাশি ভালবাসে, সে ধনাগমে তৃপ্ত হয় না; ইহাও অসার। শ্রমজীবী অধিক বা অল্প আহার করুক, নিদ্রা তাহার মিষ্ট লাগে; কিন্তু ধনবানের পূর্ণতা তাহাকে নিদ্রা যাইতে দেয় না।” (উপদেশক ৫:১০, ১২) হ্যাঁ, কোথায় আপনার সুরক্ষা রয়েছে?

আপনার পরিস্থিতি যদি কিছুটা জোজুয়ার অবাস্তব স্বপ্নের মতো হয়, তা হলে আপনি কি নিজের চিন্তাভাবনাকে বদলাতে পারেন? যারা আপনাকে সত্যিই ভালবাসে তারা আপনাকে সাহায্য করবে, ঠিক যেমন জোজুয়ার পরিবার এবং মণ্ডলীর বন্ধুবান্ধবরা করেছিল। আপনাকে যারা ভালবাসে তাদের নম্র পরিবেশের মধ্যে থেকে আপনি অনেক বেশি সুরক্ষা উপভোগ করতে পারেন, যা কিনা আপনি শহরের সেই লোকেদের মধ্যে পাবেন না, যারা হয়তো স্বার্থের জন্য আপনার কাছ থেকে সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করে।

লিজ ও তার স্বামীর মতো আপনার যদি ইতিমধ্যেই যথেষ্ট টাকাপয়সা থাকে, তাহলে যে-রাজ্য প্রকৃত সুরক্ষা পাওয়ার মাধ্যম, সেই রাজ্য সম্বন্ধে ধনী বা গরিব সমস্ত লোকেদের শিখতে সাহায্য করার জন্য আপনি কি বেশি সময় ও শক্তি ব্যয় করতে আপনার জীবনধারায় পরিবর্তন আনতে পারেন?

আপনি যদি সমাজে অথবা চাকরির জায়গায় পদমর্যাদা পাওয়ার চেষ্টা করে থাকেন, তা হলে কী আপনাকে তা করতে পরিচালিত করছে, সেটা বোঝার জন্য আপনি হয়তো সততার সঙ্গে নিজেকে পরীক্ষা করতে চাইবেন। এটা ঠিক যে, আপনার কিছু সুযোগ-সুবিধা আপনার জীবনের আনন্দকে বাড়াতে পারে। তবুও, স্থায়ী সুরক্ষা পাওয়ার যে-সঠিক মাধ্যম সেই রাজ্যের প্রতি কি আপনি নিজের চোখ স্থির রাখতে পারছেন? যীশুর কথাগুলো মনে করে দেখুন: “গ্রহণ করা অপেক্ষা বরং দান করা ধন্য হইবার বিষয়।” (প্রেরিত ২০:৩৫) আপনি যদি খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর বিভিন্ন কাজে অংশ নেন, তা হলে আপনি পরিতৃপ্তিদায়ক সুরক্ষা লাভ করবেন।

যিহোবা ও তাঁর রাজ্যের ওপর যারা পূর্ণ আস্থা রাখেন তারা এখন হৃদয়স্পর্শকারী সুরক্ষার মধ্যে বৃদ্ধি পেতে থাকেন ও ভবিষ্যতে পুরোপুরি সুরক্ষার জন্য অপেক্ষা করেন। গীতরচক বলেছিলেন: “আমি সদাপ্রভুকে নিয়ত সম্মুখে রাখিয়াছি; তিনি ত আমার দক্ষিণে, আমি বিচলিত হইব না। এই জন্য আমার চিত্ত আনন্দিত, ও আমার গৌরব উল্লাসিত হইল; আমার মাংসও নির্ভয়ে বাস করিবে।”—গীতসংহিতা ১৬:৮, ৯.

[৬ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]

বেনিনে বলা হয়েছিল

এই গল্পটা বিভিন্নভাবে হাজার হাজার বার বলা হয়েছে। সম্প্রতি পশ্চিম আফ্রিকার বেনিনে একজন বয়স্ক গ্রামবাসী কয়েকজন অল্পবয়সী ছেলেমেয়েকে নিচের গল্পটা শুনিয়েছিলেন।

একজন জেলের তার ছোট্ট নৌকায় করে ঘরে ফিরে আসার পথে এক বিদেশী ব্যবসায়ীর সঙ্গে দেখা হয়, যিনি এই উন্নয়নশীল দেশে কাজ করেন। সেই ব্যবসায়ী জেলেকে জিজ্ঞেস করেন যে, কেন সে এত তাড়াতাড়ি ফিরে এসেছে। জেলে উত্তর দেয় যে, ইচ্ছা করলে সে আরও কিছু সময় থাকতে পারত কিন্তু সে যে-পরিমাণ মাছ ধরতে পেরেছে, তা তার পরিবারের ভরণপোষণের জন্য যথেষ্ট।

ব্যবসায়ী জিজ্ঞেস করেন, “আর বাকি সময়টাতে তুমি কি কর?”

উত্তরে জেলে বলে: “আমি অল্প কিছু সময় মাছ ধরি। আমার ছেলেমেয়েদের সঙ্গে খেলা করি। গরমের সময় দুপুরবেলা আমরা সবাই মিলে একটু বিশ্রাম নিই।। সন্ধ্যেবেলায় আমরা একসঙ্গে রাতের খাবার খাই। এরপর আমার বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে মিলে কিছু গানবাজনা উপভোগ বা অন্যকিছু করি।”

বিদেশী ব্যবসায়ী তাকে বাধা দিয়ে বলেন: “দেখো, আমি বিশ্ববিদ্যাল থেকে ডিগ্রি নিয়েছি এবং এই বিষয়ে অধ্যয়ন করেছি। আমি তোমাকে সাহায্য করতে চাই। মাছ ধরার জন্য তোমার আরও বেশি সময় দেওয়া উচিত। তুমি আরও টাকা কামাতে পারবে এবং শীঘ্রিই এই ছোট্ট নৌকার চেয়ে আরও বড় নৌকা কিনতে পারবে। আর সেই বড় নৌকার সাহায্যে তুমি আরও আয় করতে পারবে এবং খুব শীঘ্রিই ট্রলারের এক পাল তৈরি করতে পারবে।”

জেলে জিজ্ঞেস করে, “তারপর?”

“এরপর মাছ বিক্রি করার জন্য একজন মধ্যস্থ ছাড়াই তুমি কারখানার সঙ্গে সরাসরি কেনাবেচা করতে পারবে অথবা এমনকি মাছ ব্যাবসার জন্য নিজের একটা কারখানা শুরু করতে পারবে। নিজের গ্রাম ছেড়ে তুমি কোটুনু বা প্যারিস অথবা নিউ ইয়র্কে চলে আসতে পারবে এবং সেখান থেকে ব্যাবসা চালাতে পারবে। তুমি নিজের ব্যাবসাকে শেয়ার বাজারে দেওয়ার জন্যও বিবেচনা করতে পারবে এবং লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করতে পারবে।”

জেলে জিজ্ঞেস করে, “এই সমস্ত কিছু করতে কত সময় লাগবে?”

ব্যবসায়ী উত্তর দেন, “হয়তো ১৫ থেকে ২০ বছর।”

জেলে বলে, “আর তারপর?”

ব্যবসায়ী বলেন, ‘তখনই জীবন হবে আনন্দের। এরপর তুমি অবসর নিতে পারবে। শহরের ঝুটঝামেলা থেকে সরে গিয়ে দূরের কোন গ্রামে চলে যেতে পারবে।’

জেলে জিজ্ঞেস করে, “এর ফলে কী হবে?”

“তখন অল্প সময় মাছ ধরার, ছেলেমেয়েদের সঙ্গে খেলা করার, গরমের সময় একটু বিশ্রাম নেওয়ার, পরিবারের সঙ্গে রাতের খাবার খাওয়ার এবং বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে কিছু গানবাজনা উপভোগ করার সময় তোমার হবে।”

[৭ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

পদোন্নতি কি সুরক্ষা নিয়ে আসে?

[৮ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

আপনার সহ খ্রীষ্টানরা আপনার সুরক্ষা সম্বন্ধে সত্যিই আগ্রহী