সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ঈশ্বরের ব্যবস্থাগুলো আমাদের উপকারের জন্য

ঈশ্বরের ব্যবস্থাগুলো আমাদের উপকারের জন্য

ঈশ্বরের ব্যবস্থাগুলো আমাদের উপকারের জন্য

“আমি তোমার ব্যবস্থা কেমন ভালবাসি!”—গীতসংহিতা ১১৯:৯৭.

১. ঈশ্বরের ব্যবস্থাগুলোর প্রতি বাধ্য থাকার বিষয়ে সাধারণ মনোভাব কেমন?

 ঈশ্বরের ব্যবস্থাগুলোর বাধ্য হওয়া আজকে তেমন জনপ্রিয় নয়। অনেকের কাছে, এক অদৃশ্য উচ্চতর কর্তৃপক্ষের প্রতি বশীভূত হওয়াকে অযৌক্তিক বলে মনে হয়। বর্তমানে আমরা এমন এক যুগে বাস করছি, যেখানে নৈতিক অপেক্ষবাদ বিদ্যমান, কোন্‌টা ন্যায় আর কোন্‌টা অন্যায় তা অস্পষ্ট এবং কোন্‌টা ভাল ও কোন্‌টা মন্দ, তা বোঝা যায় না। (হিতোপদেশ ১৭:১৫; যিশাইয় ৫:২০) অনেক ধর্মবিদ্বেষী সমাজে লোকেদের চিন্তাভাবনা সম্বন্ধে বলতে গিয়ে সাম্প্রতিক একটা সমীক্ষা বলে: “আমেরিকার বেশির ভাগ জনগণ নিজেরাই ঠিক করতে চায় যে, কোন্‌টা সঠিক, ভাল ও অর্থপূর্ণ।” তারা ‘কোন কঠোর ঈশ্বর, কড়া আইন, নৈতিকতা বা অন্যান্য বিষয়ে প্রবল ক্ষমতাবান কাউকে চায় না।’ একজন সমাজ বিশ্লেষক বলেছিলেন, আজকে “আশা করা হয় লোকেরা নিজেরাই স্থির করে নেবে যে, এক শুদ্ধ ও নৈতিক জীবনযাপন করা বলতে আসলে কী বোঝায়।” তিনি আরও বলেছিলেন: “যে-কোন উচ্চতর কর্তৃপক্ষকেই প্রকৃত লোকেদের চাহিদা অনুযায়ী আদেশ দিতে হবে।”

২. বাইবেলে সবচেয়ে প্রথমে যে-ব্যবস্থা সম্বন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে, এর সঙ্গে কীভাবে ঈশ্বরের আশীর্বাদ এবং অনুমোদন জড়িত?

যিহোবার ব্যবস্থাগুলোর মূল্য নিয়ে যেহেতু অনেকেই সন্দেহ করে, তাই আমাদের এই প্রত্যয়কে আরও জোরালো করা দরকার যে, আমাদের উপকারের জন্যই ঈশ্বর মানগুলো দিয়েছেন। বাইবেলে সবচেয়ে প্রথমে যেখানে ব্যবস্থা সম্বন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে, তা বিবেচনা করে দেখা উপকারজনক হবে। আদিপুস্তক ২৬:৫ পদে আমরা ঈশ্বরের কথা পড়ি: “অব্রাহাম . . . আমার আদেশ, আমার আজ্ঞা, আমার বিধি ও আমার ব্যবস্থা সকল পালন করিয়াছে।” অব্রাহামের বংশধরদের বিস্তারিত ব্যবস্থা দেওয়ার শত শত বছর আগে যিহোবা এই কথাগুলো বলেছিলেন। ঈশ্বরের ব্যবস্থাগুলো সহ অন্যান্য বিষয়ের প্রতি অব্রাহাম বাধ্য হওয়ায় তাকে তিনি কীভাবে পুরস্কার দিয়েছিলেন? যিহোবা ঈশ্বর তার কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন: “তোমার বংশে পৃথিবীর সকল জাতি আশীর্ব্বাদ প্রাপ্ত হইবে।” (আদিপুস্তক ২২:১৮) এভাবে ঈশ্বরের ব্যবস্থাগুলোর প্রতি বাধ্যতার সঙ্গে ঈশ্বরের আশীর্বাদ ও অনুমোদন ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

৩. (ক) একজন গীতরচক যিহোবার ব্যবস্থার প্রতি কেমন অনুভূতি প্রকাশ করেছিলেন? (খ) কোন্‌ প্রশ্নগুলো আমাদের বিবেচনার যোগ্য?

একজন গীতরচক—সম্ভবত যিহূদার রাজপুত্র এবং ভাবী রাজা—এমন এক অনুভূতি প্রকাশ করেছিলেন, যা সাধারণত ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নয়। তিনি ঈশ্বরকে বলেছিলেন: “আমি তোমার ব্যবস্থা কেমন ভালবাসি!” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (গীতসংহিতা ১১৯:৯৭) এটা শুধুমাত্র আবেগের কথা ছিল না। এটা ছিল ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার জন্য এক প্রেমের প্রকাশ, যা তাঁর ব্যবস্থায় বলা হয়েছে। ঈশ্বরের সিদ্ধ পুত্র যীশু খ্রীষ্টেরও একইরকম অনুভূতি ছিল। যীশু সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণীতে এভাবে বলা হয়েছিল: “হে আমার ঈশ্বর, তোমার অভীষ্ট সাধনে আমি প্রীত, আর তোমার ব্যবস্থা আমার অন্তরে আছে।” (গীতসংহিতা ৪০:৮; ইব্রীয় ১০:৯) আমাদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে আমরা কি প্রীত হই? যিহোবার ব্যবস্থাগুলোর কার্যকারিতা ও উপকারগুলো সম্বন্ধে আমরা কি দৃঢ়প্রত্যয়ী? আমাদের উপাসনায়, রোজকার জীবনে, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে এবং অন্যদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের বেলায় ঈশ্বরের ব্যবস্থাগুলোর প্রতি বাধ্যতার কোন্‌ ভূমিকা রয়েছে? ঈশ্বরের ব্যবস্থাকে ভালবাসতে হলে আমাদের জানা উচিত যে, ব্যবস্থা তৈরি করার ও সেগুলোকে কার্যকারী করার অধিকার কেন ঈশ্বরের আছে।

যিহোবা—ন্যায্য ব্যবস্থাপক

৪. কেন যিহোবাই সর্বোচ্চ, ন্যায্য ব্যবস্থাপক?

সৃষ্টিকর্তা হিসেবে যিহোবা হলেন নিখিলবিশ্বের সর্বোচ্চ, ন্যায্য ব্যবস্থাপক। (প্রকাশিত বাক্য ৪:১১) ভাববাদী যিশাইয় বলেছিলেন: “সদাপ্রভু আমাদের ব্যবস্থাপক।” (যিশাইয় ৩৩:২২) সজীব ও জড় সৃষ্টিকে নিয়ন্ত্রণ করার ভৌত নিয়মগুলো তিনিই নির্ধারণ করেছেন। (ইয়োব ৩৮:৪-৩৮; ৩৯:১-১২; গীতসংহিতা ১০৪:৫-১৯) ঈশ্বরের এক সৃষ্টি হিসেবে, মানুষ যিহোবার ভৌত নিয়মগুলোর বশীভূত হয়। আর যদিও মানুষ নৈতিক দিক দিয়ে স্বাধীন ব্যক্তি ও নিজে যুক্তি দিয়ে চিন্তা করতে পারে কিন্তু একমাত্র তখনই সে সুখী হয়, যখন ঈশ্বরের দেওয়া নৈতিক ও আধ্যাত্মিক ব্যবস্থাগুলো সে মেনে চলে।—রোমীয় ১২:১; ১ করিন্থীয় ২:১৪-১৬.

৫. গালাতীয় ৬:৭ পদের নীতিটা কীভাবে ঈশ্বরের ব্যবস্থাগুলোর বেলায় সত্য প্রমাণিত হয়েছে?

আমরা জানি যে, যিহোবার ভৌত নিয়মগুলোকে ভাঙা যায় না। (যিরমিয় ৩৩:২০, ২১) একজন ব্যক্তি যদি কিছু ভৌত নিয়মের, যেমন অভিকর্ষের নিয়মের বিপরীত কিছু করে, তা হলে এর পরিণতি তাকে ভোগ করতে হয়। একইভাবে, ঈশ্বরের নৈতিক ব্যবস্থাগুলোও অপরিবর্তনীয় এবং সেগুলো এড়িয়ে গিয়ে বা লঙ্ঘন করে শাস্তি থেকে রেহাই পাওয়া যায় না। সেগুলো তাঁর প্রাকৃতিক নিয়মগুলোর মতোই কার্যকারী, যদিও সঙ্গে সঙ্গেই এর পরিণতি না-ও আসতে পারে। “ঈশ্বরকে পরিহাস করা যায় না; কেননা মনুষ্য যাহা কিছু বুনে তাহাই কাটিবে।”—গালাতীয় ৬:৭; ১ তীমথিয় ৫:২৪.

যিহোবার ব্যবস্থার পরিধি

৬. ঈশ্বরের ব্যবস্থাগুলোর পরিধি কতটা বিস্তৃত?

মোশির ব্যবস্থা ছিল ঈশ্বরের ব্যবস্থার এক উল্লেখযোগ্য প্রকাশ। (রোমীয় ৭:১২) পরে, যিহোবা ঈশ্বর মোশির ব্যবস্থার জায়গায় “খ্রীষ্টের ব্যবস্থা” * দিয়েছিলেন। (গালাতীয় ৬:২; ১ করিন্থীয় ৯:২১) খ্রীষ্টান হিসেবে ‘স্বাধীনতার সিদ্ধ ব্যবস্থার’ অধীনে থাকায় আমরা উপলব্ধি করি যে, ঈশ্বর তাঁর নির্দেশগুলোকে শুধু আমাদের জীবনের কয়েকটা দিক, যেমন মতবাদসংক্রান্ত বিশ্বাস অথবা বিভিন্ন পর্বসংক্রান্ত রীতিনীতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেন না। জীবনের প্রতিটা দিকের সঙ্গে তাঁর মানগুলো জড়িত, যার মধ্যে রয়েছে পরিবারের বিষয়, ব্যবসায়িক লেনদেন, বিপরীত লিঙ্গের ব্যক্তিদের প্রতি আচরণ, সহ খ্রীষ্টানদের প্রতি মনোভাব এবং সত্য উপাসনায় অংশ নেওয়া।—যাকোব ১:২৫, ২৭.

৭. ঈশ্বরের গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থাগুলোর উদাহরণ দিন।

উদাহরণ হিসেবে, বাইবেল বলে: “যাহারা ব্যভিচারী কি প্রতিমাপূজক কি পারদারিক কি স্ত্রীবৎ আচারী কি পুঙ্গামী কি চোর কি লোভী কি মাতাল কি কটুভাষী কি পরধনগ্রাহী, তাহারা ঈশ্বরের রাজ্যে অধিকার পাইবে না।” (১ করিন্থীয় ৬:৯, ১০) হ্যাঁ, পারদারিকতা ও ব্যভিচার মানে নিছক “প্রেমে পড়া” নয়। সমকামিতা কেবলমাত্র এক “বিকল্প জীবনধারা” নয়। এগুলো করা মানে যিহোবার ব্যবস্থাকে লঙ্ঘন করা। আর সেইসঙ্গে চুরি করা, মিথ্যা বলা এবং কারও সম্বন্ধে অপবাদ দেওয়াও যিহোবার ব্যবস্থাকে লঙ্ঘন করে। (গীতসংহিতা ১০১:৫; কলসীয় ৩:৯; ১ পিতর ৪:১৫) যাকোব গর্ব করাকে মন্দ বলেছিলেন আর পৌল আমাদের আজেবাজে কথা ও নোংরা রসিকতা করা এড়িয়ে চলতে উপদেশ দিয়েছিলেন। (ইফিষীয় ৫:৪, NW; যাকোব ৪:১৬) খ্রীষ্টানদের জন্য আচরণের এই সমস্ত নিয়মগুলো ঈশ্বরের সিদ্ধ ব্যবস্থার অঙ্গ।—গীতসংহিতা ১৯:৭.

৮. (ক) যিহোবার ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য কী? (খ) “ব্যবস্থা” এর জন্য যে-ইব্রীয় শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, সেটার মূল অর্থ কী?

যিহোবার বাক্যে এই মৌলিক নিয়মগুলো প্রকাশ করে যে, তাঁর ব্যবস্থা শুধুমাত্র অনুভূতিহীন, কঠোর আইনগত বিধি নয়। এটা এমন এক ভারসাম্যপূর্ণ, সমৃদ্ধ জীবনের ভিত গঠন করে, যে জীবনের প্রতিটা আচরণ ভাল প্রভাব ফেলে। ঈশ্বরের ব্যবস্থা গঠনমূলক, নৈতিক মানসম্পন্ন এবং শিক্ষামূলক। (গীতসংহিতা ১১৯:৭২) গীতরচকের ব্যবহৃত “ব্যবস্থা” শব্দটা ইব্রীয় শব্দ তোরাহ্‌ থেকে অনুবাদ করা হয়েছে। একজন বাইবেল পণ্ডিত বলেন: “এই শব্দটা যে-ক্রিয়াপদ থেকে গঠিত হয়েছে, সেটার মানে পরিচালিত করা, নির্দেশনা দেওয়া, লক্ষ্য স্থির করা, সামনের দিকে নিক্ষেপ করা। অতএব, এর . . . মানে হবে আচরণের নিয়ম।” গীতরচকের কাছে ব্যবস্থা ছিল ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া এক উপহার। আমাদের জীবনধারাকে এর দ্বারা পরিচালিত হতে দিয়ে আমাদেরও কি এটাকে একইভাবে মূল্যায়ন করা উচিত নয়?

৯, ১০. (ক) কেন আমাদের নির্ভরযোগ্য নির্দেশনা দরকার? (খ) একমাত্র কীভাবে আমরা আনন্দদায়ক ও সফল জীবনযাপন করতে পারি?

সমস্ত সৃষ্টির নির্ভরযোগ্য পরিচালনা ও বিশ্বাসযোগ্য নির্দেশনার প্রয়োজন। যীশু এবং অন্যান্য দূতেদের বেলায়ও এটা সত্য, যারা মানুষের চেয়ে উচ্চতর। (গীতসংহিতা ৮:৫; যোহন ৫:৩০; ৬:৩৮; ইব্রীয় ২:৭; প্রকাশিত বাক্য ২২:৮, ৯) এই সিদ্ধ প্রাণীরা যদি ঈশ্বরের নির্দেশনা থেকে উপকার পেতে পারেন, তা হলে অসিদ্ধ মানুষের বেলায় তা আরও কতই না উপকারজনক হবে! মানব ইতিহাস ও আমাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ভাববাদী যিরমিয়ের কথাকে সত্য প্রমাণ করেছে: “হে সদাপ্রভু আমি জানি, মনুষ্যের পথ তাহার বশে নয়, মনুষ্য চলিতে চলিতে আপন পাদবিক্ষেপ স্থির করিতে পারে না।”—যিরমিয় ১০:২৩.

১০ আমরা যদি আনন্দদায়ক ও সফল জীবনযাপন করতে চাই, তা হলে নির্দেশনার জন্য আমাদেরকে ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করতে হবে। রাজা শলোমন ঈশ্বরের নির্দেশনা থেকে স্বাধীন হয়ে ব্যক্তিগত মান অনুযায়ী চলার বিপদ সম্বন্ধে বুঝতে পেরে বলেছিলেন: “একটী পথ আছে, যাহা মানুষের দৃষ্টিতে সরল; কিন্তু তাহার পরিণাম মৃত্যুর পথ।”—হিতোপদেশ ১৪:১২.

যিহোবার ব্যবস্থাকে উপলব্ধি করার কারণগুলো

১১. কেন আমাদের ঈশ্বরের ব্যবস্থা বোঝার আকাঙ্ক্ষা করা উচিত?

১১ যিহোবার ব্যবস্থা বোঝার জন্য আমাদের এক গভীর আকাঙ্ক্ষা গড়ে তোলা উচিত। গীতরচক এইরকম এক আকাঙ্ক্ষার কথা প্রকাশ করেছিলেন যখন তিনি বলেন: “আমার নয়ন খুলিয়া দেও, যেন আমি দর্শন করি, তোমার ব্যবস্থায় আশ্চর্য্য আশ্চর্য্য বিষয় দেখি।” (গীতসংহিতা ১১৯:১৮) ঈশ্বর ও তাঁর পথগুলো আমরা যত বেশি জানব, যিশাইয়ের কথাগুলোর প্রতি আমাদের উপলব্ধি তত গভীর হবে: “আমি সদাপ্রভু তোমার ঈশ্বর, আমি তোমার উপকারজনক শিক্ষা দান করি, ও তোমার গন্তব্য পথে তোমাকে গমন করাই। আহা! তুমি কেন আমার আজ্ঞাতে অবধান কর নাই?” (যিশাইয় ৪৮:১৭, ১৮) যিহোবা অন্তর থেকে চান যে, তাঁর লোকেরা যাতে বিপদ এড়িয়ে চলে এবং তাঁর আজ্ঞায় মনোযোগ দিয়ে জীবন উপভোগ করে। আসুন আমরা কয়েকটা বড় কারণ পরীক্ষা করে দেখি যে, কেন ঈশ্বরের ব্যবস্থাকে আমাদের উপলব্ধি করা উচিত।

১২. আমাদের সম্বন্ধে যিহোবা যতখানি জানেন, তা কীভাবে তাঁকে সর্বোত্তম ব্যবস্থাপক করে তোলে?

১২ ঈশ্বরের ব্যবস্থা এমন একজনের কাছ থেকে আসে, যিনি আমাদের সম্বন্ধে সবচেয়ে ভাল জানেন। যেহেতু যিহোবা আমাদের সৃষ্টিকর্তা, তাই তিনি মানুষকে পুরোপুরি জানবেন এটাই যুক্তিসংগত। (গীতসংহিতা ১৩৯:১, ২; প্রেরিত ১৭:২৪-২৮) ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন ও এমনকি বাবামা-ও আমাদেরকে যিহোবার মতো করে এতটা ভালভাবে জানেন না। আমরা নিজেদেরকে যতখানি জানি, তার চেয়ে হাজার গুণ ভালভাবে ঈশ্বর আমাদের জানেন! আমাদের নির্মাতা আমাদের আধ্যাত্মিক, মানসিক, আবেগগত এবং শারীরিক চাহিদাগুলো সম্বন্ধে যতটা ভালভাবে বোঝেন, তা আর কেউ-ই বোঝে না। যেহেতু তিনি আমাদের প্রতি মনোযোগ দেন, তাই তিনি আমাদের গঠন, আমাদের ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষাগুলোর প্রতি এক গভীর আগ্রহ দেখান। যিহোবা আমাদের সীমাবদ্ধতা বোঝেন কিন্তু সেইসঙ্গে তিনি এও জানেন যে, আমাদের মধ্যে ভাল কিছু করার ক্ষমতা আছে। গীতরচক বলেন: “তিনিই আমাদের গঠন জানেন; আমরা যে ধূলিমাত্র, ইহা তাঁহার স্মরণে আছে।” (গীতসংহিতা ১০৩:১৪) এভাবে আমরা যখন তাঁর ব্যবস্থা অনুসারে চলার চেষ্টা করি, স্বেচ্ছায় ঈশ্বরের নির্দেশনার বশীভূত হই, তখন আমরা আধ্যাত্মিক নিরাপত্তা বোধ করতে পারি।—হিতোপদেশ ৩:১৯-২৬.

১৩. কেন আমরা আস্থা রাখতে পারি যে, যিহোবা সত্যিই আমাদের জন্য সবচেয়ে ভাল চান?

১৩ ঈশ্বরের ব্যবস্থা এমন একজনের কাছ থেকে আসে, যিনি আমাদের ভালবাসেন। ঈশ্বর আমাদের চিরস্থায়ী মঙ্গলের জন্য গভীরভাবে চিন্তিত। তিনি কি অনেক বড় ত্যাগস্বীকার করে তাঁর পুত্রকে “অনেকের পরিবর্ত্তে . . . মুক্তির মূল্যরূপে দিতে” প্রেরণ করেননি? (মথি ২০:২৮) যিহোবা কি প্রতিজ্ঞা করেননি যে, ‘তিনি আমাদের প্রতি আমাদের শক্তির অতিরিক্ত পরীক্ষা ঘটিতে দিবেন না’? (১ করিন্থীয় ১০:১৩) বাইবেল কি আমাদেরকে আশ্বাস দেয় না যে, তিনি ‘আমাদের জন্য চিন্তা করেন’? (১ পিতর ৫:৭) মানব সৃষ্টির প্রতি প্রেম দেখিয়ে উপকারজনক নির্দেশনা দেওয়ার প্রতি যিহোবা যতটা আগ্রহী, এমন আর কেউই নেই। তিনি জানেন যে, আমাদের জন্য কোন্‌টা ভাল হবে এবং কোন্‌টা সুখ ও কোন্‌টা দুঃখ নিয়ে আসবে। যদিও আমরা অসিদ্ধ এবং ভুল করি কিন্তু আমরা যদি ধার্মিকতা অনুধাবন করি, তা হলে তিনি যে-বিভিন্ন উপায়ে আমাদের জন্য তাঁর ভালবাসা দেখান, তা জীবন ও বিভিন্ন আশীর্বাদ নিয়ে আসবে।—যিহিষ্কেল ৩৩:১১.

১৪. কোন্‌ গুরুত্বপূর্ণ দিক দিয়ে ঈশ্বরের ব্যবস্থা মানুষের ধারণার চেয়ে আলাদা?

১৪ ঈশ্বরের ব্যবস্থা অপরিবর্তনীয়। যে-অশান্ত সময়ে আমরা বাস করছি, সেখানে যিহোবা হলেন এক অটল পাথরের মতো, যিনি অনন্তকাল ধরে আছেন। (গীতসংহিতা ৯০:২) তিনি নিজের সম্বন্ধে বলেছিলেন: “আমি সদাপ্রভু, আমার পরিবর্ত্তন নাই।” (মালাখি ৩:৬) বাইবেলে লিপিবদ্ধ ঈশ্বরের মানগুলোর ওপর পুরোপুরি নির্ভর করা যায়—মানুষের ধারণাগুলোর মতো নয় যা অনবরত পালটাতে থাকে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বছরের পর বছর ধরে মনোবিজ্ঞানীরা বলে এসেছেন যে, ছেলেমেয়েদের লালনপালন করার ক্ষেত্রে কিছুটা প্রশ্রয়ী হওয়া দরকার কিন্তু পরে কিছু কিছু মনোবিজ্ঞানী তাদের চিন্তাভাবনা পালটান এবং স্বীকার করেন যে, তাদের উপদেশ আসলে ভুল ছিল। এই বিষয়ে জগতের মান ও নির্দেশনাগুলো যেন বাতাসের ঝাঁপটার মতো এদিক-ওদিক দুলছে। কিন্তু যিহোবার বাক্য একটুও টলে না। শত শত বছর ধরে বাইবেল পরামর্শ দিয়ে আসছে যে, কীভাবে প্রেমের সঙ্গে সন্তানদের লালনপালন করা যায়। প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “পিতারা, তোমরা আপন আপন সন্তানদিগকে ক্রুদ্ধ করিও না, বরং প্রভুর [“যিহোবার,” NW] শাসনে ও চেতনা প্রদানে তাহাদিগকে মানুষ করিয়া তুল।” (ইফিষীয় ৬:৪) এটা জানা কতই না আশ্বাসজনক যে, আমরা যিহোবার মানগুলোর ওপর নির্ভর করতে পারি; সেগুলো একটুও বদলাবে না!

যারা ঈশ্বরের ব্যবস্থা মেনে চলেন, তাদের জন্য আশীর্বাদ

১৫, ১৬. যিহোবার মানগুলোকে যদি আমরা কাজে লাগাই, তা হলে কী ফল হবে? (খ) বিবাহে ঈশ্বরের ব্যবস্থাগুলো কীভাবে এক উপকারজনক নির্দেশনা প্রমাণিত হতে পারে?

১৫ ভাববাদী যিশাইয়ের মাধ্যমে ঈশ্বর বলেছিলেন: “আমার মুখনির্গত বাক্য . . . সিদ্ধার্থ হইবে।” (যিশাইয় ৫৫:১০, ১১) তাঁর বাক্যে পাওয়া মানগুলো পালন করার জন্য আমরা যখন আপ্রাণ চেষ্টা করি, তখন নিশ্চিতভাবেই আমরা সফল হব, ভাল কিছু সম্পন্ন করব এবং সুখ খুঁজে পাব।

১৬ এক সফল বিয়ের জন্য ঈশ্বরের ব্যবস্থাগুলো কীভাবে এক উপকারজনক নির্দেশনা, তা বিবেচনা করুন। পৌল লিখেছিলেন: “সকলের মধ্যে বিবাহ আদরণীয় ও সেই শয্যা বিমল [হউক]; কেননা ব্যভিচারীদের ও বেশ্যাগামীদের বিচার ঈশ্বর করিবেন।” (ইব্রীয় ১৩:৪) বিবাহ সাথিদের একে অন্যের প্রতি সম্মান ও প্রেম দেখানো দরকার: “তোমরাও প্রত্যেকে আপন আপন স্ত্রীকে তদ্রূপ আপনার মত প্রেম কর; কিন্তু স্ত্রীর উচিত যেন সে স্বামীকে ভয় [“সম্মান,” NW] করে।” (ইফিষীয় ৫:৩৩) যে-ধরনের প্রেম থাকা দরকার সেই বিষয়ে ১ করিন্থীয় ১৩:৪-৮ পদে বলা হয়েছে: “প্রেম চিরসহিষ্ণু, প্রেম মধুর, ঈর্ষা করে না, প্রেম আত্মশ্লাঘা করে না, গর্ব্ব করে না, অশিষ্টাচরণ করে না, স্বার্থ চেষ্টা করে না, রাগিয়া উঠে না, অপকার গণনা করে না, অধার্ম্মিকতায় আনন্দ করে না, কিন্তু সত্যের সহিত আনন্দ করে; সকলই বহন করে, সকলই বিশ্বাস করে, সকলই প্রত্যাশা করে, সকলই ধৈর্য্যপূর্ব্বক সহ্য করে। প্রেম কখনও শেষ হয় না।” যে-বিবাহে এইধরনের প্রেম আছে, তা কখনও ব্যর্থ হবে না।

১৭. মদ খাওয়ার ব্যাপারে যিহোবার মানগুলো কাজে লাগিয়ে কোন্‌ কোন্‌ উপকার আসে?

১৭ যিহোবার মানগুলো যে উপকারজনক, তার আরেকটা প্রমাণ হল তিনি অতিরিক্ত মদ খাওয়াকে নিন্দা করেন। তিনি এমনকি “বহু মদ্যপানে আসক্ত” ব্যক্তিকে অনুমোদনও করেন না। (১ তীমথিয় ৩:৩, ৮; রোমীয় ১৩:১৩) এই ব্যাপারে যারা ঈশ্বরের মানগুলোকে অগ্রাহ্য করে, তারা অতিরিক্ত মদ খাওয়ার ফলে রোগে ভোগে বা রোগের প্রকোপ আরও বেড়ে যায়। পরিমিত মাত্রায় মদ খাওয়ার ব্যাপারে বাইবেলের পরামর্শ অগ্রাহ্য করে কেউ কেউ এটা “প্রশান্তি বোধ করতে সাহায্য করে” এই কথা বলে অত্যধিক মদ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলেছে। অতিরিক্ত মদ খাওয়ার কারণে অনেক সমস্যা দেখা যায়, যার মধ্যে রয়েছে সম্মান হারানো, পারিবারিক সম্পর্কের অবনতি অথবা পরিবারের ভাঙন, আয়ের অপচয় এবং চাকরি হারানো। (হিতোপদেশ ২৩:১৯-২১, ২৯-৩৫) মদ খাওয়ার ব্যাপারে যিহোবার মানগুলো কি একটা সুরক্ষা নয়?

১৮. টাকাপয়সা সংক্রান্ত বিষয়ে ঈশ্বরের ব্যবস্থাগুলো কি ব্যবহারিক? বুঝিয়ে বলুন।

১৮ টাকাপয়সা সংক্রান্ত ব্যাপারগুলোতেও ঈশ্বরের মানগুলো ব্যবহারিক প্রমাণিত হয়েছে। বাইবেল খ্রীষ্টানদেরকে সৎ ও পরিশ্রমী হতে পরামর্শ দেয়। (লূক ১৬:১০; ইফিষীয় ৪:২৮; কলসীয় ৩:২৩) যেহেতু তারা এই পরামর্শ মেনে চলেন, তাই অনেক খ্রীষ্টানের চাকরিতে পদোন্নতি হয়েছে বা অন্যদেরকে যখন ছাঁটাই করে দেওয়া হয়েছে তখনও তারা চাকরিতে বলবৎ থেকেছেন। একজন ব্যক্তি যখন এইরকম অশাস্ত্রীয় অভ্যাস ও আসক্তি যেমন জুয়াখেলা, ধূমপান করা ও মাদকদ্রব্য গ্রহণ করা এড়িয়ে চলেন, তখন টাকাপয়সার দিক দিয়ে তার অনেক উন্নতি হয়। কোন সন্দেহ নেই যে, অর্থনৈতিক বিষয়ে ঈশ্বরের মানগুলোর অন্যান্য ব্যবহারিক উদাহরণের বিষয়েও আপনি চিন্তা করতে পারেন।

১৯, ২০. ঈশ্বরের ব্যবস্থাগুলোকে মেনে নেওয়া ও তা ধরে রাখা কেন বিজ্ঞের কাজ?

১৯ অসিদ্ধ মানুষদের জন্য ঈশ্বরের ব্যবস্থা ও মানগুলো থেকে সরে বিপথে চলে যাওয়া স্বাভাবিক। সীনয় পর্বতে ইস্রায়েলীয়দের অবস্থার কথা চিন্তা করুন। ঈশ্বর তাদেরকে বলেছিলেন: “যদি তোমরা আমার রবে অবধান কর ও আমার নিয়ম পালন কর, তবে তোমরা সকল জাতি অপেক্ষা আমার নিজস্ব অধিকার হইবে।” উত্তরে তারা বলেছিল: “সদাপ্রভু যাহা কিছু বলিয়াছেন, আমরা সমস্তই করিব।” অথচ তারা যে-পথ বেছে নিয়েছিল, তা কতই না বিপরীত ছিল! (যাত্রাপুস্তক ১৯:৫, ৮; গীতসংহিতা ১০৬:১২-৪৩) তাদের মতো না হয়ে আসুন আমরা ঈশ্বরের মানগুলোকে মেনে নিই ও সেগুলোকে ধরে রাখি।

২০ আমাদের জীবন পরিচালনায় সাহায্য করার জন্য যিহোবা যে-অতুলনীয় ব্যবস্থাগুলো জুগিয়েছেন, সেগুলো মেনে চলা বিজ্ঞ ও সুখের পথ। (গীতসংহিতা ১৯:৭-১১) এটা সফলভাবে করার জন্য, আমাদেরকে ঈশ্বরীয় নীতিগুলোর মূল্য উপলব্ধি করা দরকার। আর পরের প্রবন্ধের বিষয়বস্তু এটাই।

[পাদটীকা]

^ “খ্রীষ্টের ব্যবস্থা” সম্বন্ধে বিস্তারিত জানার জন্য ১৯৯৬ সালের ১লা সেপ্টেম্বর প্রহরীদুর্গ এর ১৪-২৪ পৃষ্ঠা দেখুন।

আপনি কি মনে করতে পারেন?

• কেন আমরা আস্থা রাখতে পারি যে, ঈশ্বরের ব্যবস্থাগুলো আমাদের উপকারের জন্য দেওয়া হয়েছে?

• কোন্‌ কারণগুলোর জন্য যিহোবার ব্যবস্থাগুলোকে আমাদের উপলব্ধি করা উচিত?

• কোন্‌ কোন্‌ দিক দিয়ে ঈশ্বরের ব্যবস্থাগুলো উপকারজনক?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিহোবার ব্যবস্থা মেনে চলায় অব্রাহাম প্রচুর আশীর্বাদ পেয়েছিলেন

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

আজকের ব্যস্ত জীবনের উদ্বেগগুলো অনেককে ঈশ্বরের ব্যবস্থা থেকে দূরে সরিয়ে নেয়

[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

পাথরের ওপর এক বাতিঘরের মতো, ঈশ্বরের ব্যবস্থা অটল এবং অপরিবর্তনীয়