সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

সহানুভূতি—দয়া ও করুণার চাবিকাঠি

সহানুভূতি—দয়া ও করুণার চাবিকাঠি

সহানুভূতি—দয়া ও করুণার চাবিকাঠি

 হেলেন কিলার লিখেছিলেন, “আপনি যখন অন্যের ব্যথা বুঝতে পারবেন, তখন জীবন আর ব্যর্থ হবে না।” কিলার নিশ্চয় মানসিক কষ্ট বুঝতে পেরেছিলেন। তার বয়স যখন মাত্র উনিশ মাস, সেই সময়ে একটা রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি পুরোপুরি অন্ধ ও বধির হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু একজন করুণাময়ী শিক্ষিকা, হেলেনকে ব্রেইল অক্ষরে পড়তে ও লিখতে এবং পরে কথা বলতে শিখিয়েছিলেন।

কিলারের শিক্ষিকা আ্যন সুলেভান শারীরিক অক্ষমতার সঙ্গে লড়াই করার কষ্ট সম্বন্ধে খুব ভাল করেই জানতেন। তিনিও বলতে গেলে প্রায় অন্ধই ছিলেন। কিন্তু, হেলেনের সঙ্গে কথা বলার জন্য আ্যন ধৈর্য ধরে হেলেনের হাতের ওপর একেকটা অক্ষর “বানান করার” মাধ্যমে একটা পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছিলেন। হেলেন তার শিক্ষিকার সহানুভূতির দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে নিজের জীবনকে অন্ধ ও বধির লোকেদের সাহায্য করার জন্য বিলিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আপ্রাণ চেষ্টা করে তিনি তার নিজের অক্ষমতাকে কাটিয়ে উঠেছিলেন, ফলে তার মতো পরিস্থিতিতে যারা ছিলেন, তাদের জন্য তিনি সহানুভূতি বোধ করেছিলেন। তিনি তাদেরকে সাহায্য করতে চেয়েছিলেন।

আপনি হয়তো লক্ষ্য করেছেন যে, এই স্বার্থপর জগতে ‘আপন করুণা রোধ করা’ এবং অন্যদের চাহিদাগুলোকে অবহেলা করা খুবই সহজ। (১ যোহন ৩:১৭) কিন্তু, খ্রীষ্টানদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তারা যেন তাদের প্রতিবেশীকে প্রেম করেন এবং পরস্পর একাগ্রভাবে প্রেম করেন। (মথি ২২:৩৯; ১ পিতর ৪:৮) তবে, আপনি সম্ভবত এই বাস্তবতা সম্বন্ধে জানেন: যদিও আমরা পরস্পর একাগ্রভাবে প্রেম করতে চাই কিন্তু আমরা প্রায়ই অন্যদের ব্যথা দূর করার সুযোগগুলোকে উপেক্ষা করি। এর একটা সাধারণ কারণ হতে পারে যে, আমরা তাদের চাহিদাগুলো সম্বন্ধে সজাগ নই। সহানুভূতি হল সেই চাবি, যেটা ব্যবহার করে আমরা আমাদের দয়া ও করুণার দ্বারকে খুলতে পারি।

সহানুভূতি আসলে কী?

একটা ডিকশনারি বলে যে সহানুভূতি হল, “অন্যের পরিস্থিতি, অনুভূতি এবং উদ্দেশ্যকে নিজের মনে করা এবং তা বুঝতে পারা।” এ ছাড়াও নিজেকে অন্যের অবস্থানে কল্পনা করা হিসেবেও বর্ণনা করা হয়। তাই সহানুভূতির জন্য সবচেয়ে প্রথমে যা দরকার তা হল, আমরা অন্য আরেকজনের পরিস্থিতি ভাল করে বুঝব এবং দ্বিতীয়ত যে-পরিস্থিতিগুলোর কারণে তিনি কষ্ট পাচ্ছেন, তার সেই কষ্টের অনুভূতিকে ভাগ করে নেব। হ্যাঁ, সহানুভূতি বলতে অন্যের ব্যথাকে আমাদের হৃদয়ে অনুভব করাকেও বোঝায়।

“সহানুভূতি” শব্দটা বাইবেলে পাওয়া যায় না, তবে শাস্ত্র পরোক্ষভাবে এই গুণের বিষয়ে উল্লেখ করে। প্রেরিত পিতর খ্রীষ্টানদেরকে “পরদুঃখে দুঃখিত, ভ্রাতৃপ্রেমিক, স্নেহবান্‌” হতে পরামর্শ দিয়েছিলেন। (১ পিতর ৩:৮) যে-গ্রিক শব্দকে “পরদুঃখে দুঃখিত” বলে অনুবাদ করা হয়েছে সেটার আক্ষরিক অর্থ হল, “অন্যের সঙ্গে কষ্টভোগ করা” অথবা তার জন্য “করুণা বোধ করা।” প্রেরিত পৌল সহ খ্রীষ্টানদেরকে পরামর্শ দেওয়ার সময় একই মনোভাব প্রকাশ করে বলেন, “যাহারা আনন্দ করে, তাহাদের সহিত আনন্দ কর; যাহারা রোদন করে, তাহাদের সহিত রোদন কর।” পৌল আরও বলেছিলেন: “তোমরা পরস্পরের প্রতি একমনা হও।” (রোমীয় ১২:১৫, ১৬) আর আপনি কি একমত নন যে, আমরা যদি নিজেদেরকে আমাদের প্রতিবেশীর জায়গায় না রাখি, তা হলে তাদের প্রতি নিজের মতো প্রেম দেখানো অসম্ভব হবে?

প্রত্যেকের মধ্যেই স্বাভাবিকভাবে কিছুটা হলেও সহানুভূতি রয়েছে। ক্ষুধার্ত শিশু অথবা দিশেহারা শরণার্থীদের মর্মস্পর্শী ছবি কার হৃদয়েই বা নাড়া না দেয়? এমন কোন প্রেমময় মা কি আছেন, যিনি শিশুর কান্নাকে অবহেলা করতে পারেন? তবে, সমস্ত কষ্ট-যন্ত্রণাই সঙ্গে সঙ্গে বোঝা যায় না। যদি কেউ হতাশায় অথবা বাইরে থেকে বোঝা যায় না এমন কোন শারীরিক সমস্যায় বা এমনকি খাদ্যের প্রতি অরুচিতে ভুগে থাকেন, তা হলে সেটা বোঝা কতই না কঠিন, যদি না আমরা কখনও এইরকম সমস্যায় ভুগি! তাসত্ত্বেও, শাস্ত্র আমাদেরকে জানায় যে, যাদের পরিস্থিতি আমাদের মতো নয় তাদের দুঃখে আমরা দুঃখিত হতে পারি এবং তা হওয়া উচিত।

সহানুভূতির শাস্ত্রীয় উদাহরণগুলো

আমাদের জন্য সহানুভূতির সর্বোত্তম উদাহরণ হলেন যিহোবা। যদিও তিনি সিদ্ধ কিন্তু তিনি আমাদের কাছ থেকে সিদ্ধতা আশা করেন না, “কারণ তিনিই আমাদের গঠন জানেন; আমরা যে ধূলিমাত্র, ইহা তাঁহার স্মরণে আছে।” (গীতসংহিতা ১০৩:১৪; রোমীয় ৫:১২) এ ছাড়াও, তিনি যেহেতু আমাদের সীমাবদ্ধতাগুলো জানেন, তাই ‘তিনি আমাদের প্রতি আমাদের শক্তির অতিরিক্ত পরীক্ষা ঘটিতে দেন না।’ (১ করিন্থীয় ১০:১৩) তাঁর দাসদের ও তাঁর আত্মার মাধ্যমে তিনি আমাদের সমাধান খুঁজে পেতে সাহায্য করেন।—যিরমিয় ২৫:৪, ৫; প্রেরিত ৫:৩২.

যিহোবা তাঁর লোকেদের কষ্টে ব্যক্তিগতভাবে ব্যথা অনুভব করেন। বাবিলন থেকে ফিরে আসা যিহুদিদেরকে তিনি বলেছিলেন: “যে ব্যক্তি তোমাদিগকে স্পর্শ করে, সে তাঁহার [“আমার,” NW] চক্ষুর তারা স্পর্শ করে।” (সখরিয় ২:৮) ঈশ্বরের সহানুভূতি সম্বন্ধে পুরোপুরি জানেন বলে বাইবেল লেখক দায়ূদ তাঁকে বলেছিলেন: “আমার নেত্রজল তোমার কুপাতে রাখ; তাহা কি তোমার পুস্তকে লিখিত নাই?” (গীতসংহিতা ৫৬:৮) এটা জানা কতই না সান্ত্বনাদায়ক যে, যারা তাদের বিশ্বস্ততা বজায় রাখার জন্য কঠোর চেষ্টা করেন, যিহোবা তাদের চোখের জল মনে রাখেন—যেন সেগুলো একটা বইতে লেখা!

যীশুও তাঁর স্বর্গস্থ পিতার মতো অন্যদের প্রতি অনুভূতিশীল ছিলেন। একজন বধির লোককে সুস্থ করার সময় তিনি তাকে এক পাশে নিয়ে গিয়েছিলেন, সম্ভবত অলৌকিকভাবে সুস্থ হওয়াটা সেই লোকটাকে যেন অযথা হতবুদ্ধি করে না ফেলে বা চমকে না দেয়। (মার্ক ৭:৩২-৩৫) আরেকবার যীশু একজন বিধবাকে দেখেছিলেন যিনি তার একমাত্র ছেলেকে কবর দেওয়ার জন্য নিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি সেই বিধবার মনের ব্যথা তখনই বুঝতে পেরেছিলেন আর মৃতদেহ বহনকারী ব্যক্তিদের কাছে এসে সঙ্গে সঙ্গে সেই যুবককে পুনরুত্থিত করেছিলেন।—লূক ৭:১১-১৬.

যীশু নিজের পুনরুত্থানের পর দম্মেশকের পথে শৌলকে দেখা দিয়ে বলেছিলেন যে, তাঁর শিষ্যদের ওপর সে যে-অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছে তা তাঁকেও প্রভাবিত করেছে। তিনি তাকে বলেছিলেন: “আমি যীশু, যাঁহাকে তুমি তাড়না করিতেছ।” (প্রেরিত ৯:৩-৫) তাঁর শিষ্যরা যে-ব্যথা সহ্য করেছিলেন, তা যীশু ব্যক্তিগতভাবে অনুভব করেছিলেন, ঠিক যেমন একজন মা তার অসুস্থ বাচ্চার কষ্ট অনুভব করেন। একইভাবে আমাদের স্বর্গীয় মহাযাজক যীশু ‘আমাদের দুর্ব্বলতাঘটিত দুঃখে দুঃখিত হন’ অথবা রদারহেমের সংস্করণ অনুসারে বলা যায়, তিনি “আমাদের দুর্বলতাগুলোর জন্য একই রকম দুঃখবোধ করেন।”—ইব্রীয় ৪:১৫.

প্রেরিত পৌল অন্যদের অনুভূতি এবং কষ্ট উপলব্ধি করতে শিখেছিলেন। তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন: “কে দুর্ব্বল হইলে আমি দুর্ব্বল না হই? কে বিঘ্ন পাইলে আমি না পুড়ি?” (২ করিন্থীয় ১১:২৯) একজন স্বর্গদূত যখন পৌল ও সীলকে ফিলিপীর কারাগার থেকে অলৌকিকভাবে মুক্ত করেছিলেন, তখন পৌলের প্রথম চিন্তা ছিল কারারক্ষককে জানানো যে, কোন বন্দি পালিয়ে যায়নি। সহানুভূতি থাকায় তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, কারারক্ষক হয়তো আত্মহত্যা করতে চাইবেন। কারণ পৌল জানতেন যে রোমীয় আইন অনুসারে, কোন বন্দি যদি পালিয়ে যায়—বিশেষ করে বন্দিকে যদি সাবধানে পাহারা দিয়ে রাখার আদেশ দেওয়া হয়—তা হলে কারারক্ষককে কড়া শাস্তি পেতে হতো। (প্রেরিত ১৬:২৪-২৮) পৌলের এই জীবন রক্ষাকারী দয়ার কাজ কারারক্ষককে দারুণভাবে প্রভাবিত করেছিল আর এর পরে তিনি এবং তার সমস্ত পরিবার খ্রীষ্টান হওয়ার পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।—প্রেরিত ১৬:৩০-৩৪.

যেভাবে সহানুভূতি গড়ে তোলা যায়

শাস্ত্র আমাদেরকে বারবার আমাদের স্বর্গীয় পিতা এবং তাঁর পুত্র যীশু খ্রীষ্টকে অনুকরণ করতে উৎসাহিত করে, তাই সহানুভূতি হল এমন এক গুণ যেটাকে আমাদের গড়ে তোলা দরকার। কীভাবে আমরা তা করতে পারি? মূলত তিনটে উপায়ে আমরা অন্যদের অনুভূতি ও চাহিদাগুলোর বিষয়ে আমাদের নিজেদের অনুভূতিকে আরও উন্নত করতে পারি আর তা হল: শুনে, লক্ষ্য করে এবং কল্পনা করে।

শুনুন। মন দিয়ে শুনে আমরা জানতে পারি যে, অন্যদের কোন্‌ সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হতে হয়। আমরা যত বেশি মনোযোগ দিয়ে শুনব, তারা হয়তো তাদের মনের কথা তত বেশি খুলে বলবেন ও তাদের অনুভূতি প্রকাশ করবেন। মিরিয়াম বলেন, ‘আমি যদি নিশ্চিত বোধ করি যে, একজন প্রাচীন আমার কথা শুনবেন, তা হলে আমি তার সঙ্গে কথা বলতে পারব। আমি জানতে চাই যে, তিনি সত্যিই আমার সমস্যাগুলো বুঝতে পারেন। তিনি যখন আমাকে ভাবিয়ে তোলার মতো প্রশ্ন করেন, তখন তার প্রতি আমার আস্থা আরও বেড়ে যায় আর তা দেখায় যে, আমি তাকে যা বলেছিলাম তিনি তা মন দিয়ে শুনেছিলেন।’

লক্ষ্য করুন। সবাই আমাদেরকে তাদের অনুভূতির কথা বা তাদের পরিস্থিতির কথা খোলাখুলিভাবে বলবেন না। কিন্তু একজন মনোযোগী দর্শক লক্ষ্য রাখবেন যে, কখন একজন সহ খ্রীষ্টানকে হতাশ দেখা যায়, একজন কিশোর বা কিশোরী নিজেকে গুটিয়ে নেয় বা একজন উদ্যোগী পরিচারক তার উদ্যমী মনোভাব হারিয়ে ফেলেন। কোন সমস্যা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বুঝতে পারার ক্ষমতা থাকা বাবামায়ের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মারি উল্লেখ করে, ‘আমি কথা বলার আগেই যে-কোনভাবে হোক মা আমার অনুভূতি টের পেয়ে যান। আর তাই আমার সমস্যাগুলো খোলাখুলিভাবে বলা আমার জন্য সহজ হয়ে যায়।’

আপনার কল্পনা শক্তিকে ব্যবহার করুন। সহানুভূতিকে উদ্দীপিত করে তোলার সবচেয়ে শক্তিশালী উপায় হল নিজেকে জিজ্ঞাসা করা: ‘আমি যদি এই পরিস্থিতিতে থাকতাম, তা হলে আমি কেমন বোধ করতাম? আমি কীভাবে সাড়া দিতাম? আমার কী দরকার হতো?’ ইয়োবের কাছে আসা তিনজন মিথ্যা সান্ত্বনাকারী নিজেদেরকে তার জায়গায় নিয়ে আসতে ব্যর্থ হয়েছিল। অতএব তারা ধরে নিয়েছিল যে, ইয়োব নিশ্চয়ই কোন অন্যায় করেছেন আর এর জন্য তারা ইয়োবকে দোষারোপ করেছিল।

অসিদ্ধ মানুষেরা প্রায়ই অন্যের অনুভূতি বোঝার চেষ্টা না করে বরং তার সমালোচনা করাকেই সহজভাবে নেয়। কিন্তু, আমরা যদি দুঃখি লোকেদের কষ্ট বোঝার জন্য আমাদের কল্পনা শক্তিকে ব্যবহার করতে কঠোর চেষ্টা করি, তা হলে তা আমাদেরকে অন্যদের দোষ না দিয়ে বরং তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে সাহায্য করবে। খোয়ান নামে একজন অভিজ্ঞ প্রাচীন বলেছিলেন, “পরামর্শ দেওয়ার আগে যদি আমি মন দিয়ে শুনি এবং পুরো পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করি, তা হলেই আমি ভাল পরামর্শ দিতে পারি।”

এইক্ষেত্রে যিহোবার সাক্ষিদের বিতরিত প্রকাশনাগুলো অনেককে সাহায্য করেছে। প্রহরীদুর্গ এবং সচেতন! পত্রিকাগুলো হতাশা এবং শিশুদের ওপর যৌন নিপীড়নের মতো জটিল বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছে। এই সময়োপযোগী তথ্যগুলো পাঠকদেরকে সেই ব্যক্তিদের অনুভূতি আরও বেশি করে উপলব্ধি করতে সাহায্য করে, যারা এইধরনের সমস্যাগুলোর জন্য কষ্ট পাচ্ছেন। একইভাবে যুবক-যুবতীদের জিজ্ঞাস্য—যে উত্তরগুলো কাজ করে (ইংরেজি) বইটা অনেক বাবামাকে তাদের ছেলেমেয়েদের সমস্যাগুলো বুঝতে সাহায্য করেছে।

সহানুভূতি বিভিন্ন খ্রীষ্টীয় কাজে সাহায্য করে

আমাদের মধ্যে এমন লোক খুব কমই আছে, যে কিনা খাবার থাকা সত্ত্বেও একটা ক্ষুধার্ত শিশুর দুরবস্থাকে উপেক্ষা করবে। যদি আমাদের মধ্যে সহানুভূতি থাকে, তা হলে আমরা একজন ব্যক্তির আধ্যাত্মিক অবস্থা সম্বন্ধেও চিন্তা করব। বাইবেল যীশুর বিষয়ে বলে: “কিন্তু বিস্তর লোক দেখিয়া তিনি তাহাদের প্রতি করুণাবিষ্ট হইলেন, কেননা তাহারা ব্যাকুল ও ছিন্নভিন্ন ছিল, যেন পালকবিহীন মেষপাল।” (মথি ৯:৩৬) আজকে লক্ষ লক্ষ ব্যক্তির আধ্যাত্মিক অবস্থা এইরকম আর তাদের সাহায্য দরকার।

যীশুর সময়ের মতো আমাদেরও হয়তো কিছু লোকেদের হৃদয়ে পৌঁছানোর জন্য কুসংস্কার বা বদ্ধমূল পরম্পরাগত রীতিনীতিকে কাটিয়ে উঠতে হয়। একজন সহানুভূতিশীল পরিচারক তার বার্তা যাতে লোকেদের হৃদয়কে স্পর্শ করে, সেইজন্য যে-বিষয়গুলোতে পরস্পর একমত সেগুলো বের করে আনার চেষ্টা করেন বা লোকেদের মনে যে-বিষয়গুলো রয়েছে, সেগুলো নিয়ে কথা বলেন। (প্রেরিত ১৭:২২, ২৩; ১ করিন্থীয় ৯:২০-২৩) সহানুভূতির দ্বারা চালিত হয়ে দয়ার কাজগুলো করলে তা শ্রোতাদেরকে রাজ্যের বার্তার প্রতি আরও আগ্রহী করে তোলে, যেমন ফিলিপীর কারারক্ষকের বেলায় হয়েছিল।

মণ্ডলীতে অন্যদের ভুলগুলো উপেক্ষা করতে সাহায্য করার জন্য সহানুভূতির ভূমিকা অপরিহার্য। যে-ভাই আমাদেরকে কষ্ট দিয়েছেন, আমরা যদি তার অনুভূতিগুলো বোঝার চেষ্টা করি, তা হলে তাকে ক্ষমা করা আমাদের জন্য অনেক সহজ হয়ে যাবে। তার পরিস্থিতিতে ও পটভূমিকায় থাকলে আমরাও হয়তো একইরকম প্রতিক্রিয়া দেখাতাম। যিহোবার সহানুভূতি তাঁকে ‘আমরা যে ধূলিমাত্র, ইহা স্মরণে’ রাখতে চালিত করে। তাই, আমাদের সহানুভূতিরও কি আমাদেরকে অন্যদের অসিদ্ধতাকে বিবেচনা করতে এবং ‘তাহাদের ক্ষমা করিতে’ চালিত করা উচিত নয়?—গীতসংহিতা ১০৩:১৪; কলসীয় ৩:১৩.

যে-ব্যক্তি ভুল করেছে, তাকে যদি আমাদের কোন পরামর্শ দিতে হয় আর এক্ষেত্রে আমরা যদি তার আবেগ-অনুভূতি বুঝতে পারি, তবে সেটা হয়তো আরও দয়ার সঙ্গে বিবেচনা করব। একজন সহানুভূতিশীল খ্রীষ্টান প্রাচীন নিজেকে মনে করিয়ে দেন: ‘আমিও এইরকম ভুল করতে পারতাম। তার পরিস্থিতিতে আমিও পড়তে পারতাম।’ তাই পৌল এইরকম পরামর্শ দেন: “তোমরা সেই প্রকার ব্যক্তিকে মৃদুতার আত্মায় সুস্থ কর, আপনাকে দেখ, পাছে তুমিও পরীক্ষাতে পড়।”—গালাতীয় ৬:১.

এ ছাড়াও কোন সহ খ্রীষ্টান যদি না-ও চান, তবুও সহানুভূতি আমাদেরকে সাধ্যমতো বাস্তব কিছু সাহায্য করতে অনুপ্রাণিত করতে পারে। প্রেরিত যোহন লেখেন: “যাহার সাংসারিক জীবনোপায় আছে, সে আপন ভ্রাতাকে দীনহীন দেখিলে যদি তাহার প্রতি আপন করুণা রোধ করে, তবে ঈশ্বরের প্রেম কেমন করিয়া তাহার অন্তরে থাকে? . . . আইস, আমরা বাক্যে কিম্বা জিহ্বাতে নয়, কিন্তু কার্য্যে ও সত্যে প্রেম করি।”—১ যোহন ৩:১৭, ১৮.

“কার্য্যে ও সত্যে” প্রেম দেখাতে হলে, আমাদের প্রথমে ভাইদের নির্দিষ্ট চাহিদাগুলোর দিকে নজর দেওয়া দরকার। আমরা কি সাহায্য করার মনোভাব নিয়ে অন্যদের চাহিদাগুলো যত্নের সঙ্গে লক্ষ্য করি? আসলে এটাই হল সহানুভূতি দেখানো।

পরদুঃখে দুঃখিত হওয়ার মনোভাব গড়ে তুলুন

আমরা হয়তো সহজাতভাবে সহানুভূতিশীল না-ও হতে পারি কিন্তু তারপরও আমরা পরদুঃখে দুঃখিত হওয়ার মনোভাব গড়ে তুলতে পারি। যদি আমরা আরেকটু মনোযোগ দিয়ে শুনি, আরেকটু গভীরভাবে লক্ষ্য করি এবং অন্যদের অবস্থানে নিজেদেরকে আরেকটু বেশি কল্পনা করি, তা হলে আমাদের সহানুভূতি বাড়বে। এর ফলে আমরা আমাদের ছেলেমেয়ে, খ্রীষ্টান ভাইবোন এবং আমাদের প্রতিবেশীদের প্রতি আরও বেশি প্রেম, দয়া ও করুণা দেখাতে অনুপ্রাণিত হব।

সহানুভূতি দেখানোর ক্ষেত্রে স্বার্থপরতাকে কখনোই বাধা হতে দেবেন না। পৌল লিখেছিলেন, “প্রত্যেক জন আপনার বিষয়ে নয়, কিন্তু পরের বিষয়েও লক্ষ্য রাখ।” (ফিলিপীয় ২:৪) আমাদের অনন্ত ভবিষ্যৎ যিহোবা এবং তাঁর মহাযাজক যীশু খ্রীষ্টের সহানুভূতির ওপর নির্ভর করে। তাই, এই গুণ গড়ে তোলা আমাদের এক নৈতিক দায়িত্ব। সহানুভূতি আমাদেরকে আরও উত্তম পরিচারক ও বাবামা হওয়ার জন্য শক্তি দেয়। সর্বোপরি, সহানুভূতি আমাদেরকে এটা বুঝতে সাহায্য করবে যে, “গ্রহণ করা অপেক্ষা বরং দান করা ধন্য হইবার বিষয়।”—প্রেরিত ২০:৩৫.

[২৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

সহানুভূতির অন্তর্ভুক্ত হল সাহায্য করার মনোভাব নিয়ে অন্যদের চাহিদাগুলো যত্নের সঙ্গে লক্ষ্য করা

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

একজন প্রেমময়ী মা তার সন্তানের প্রতি যে-সহজাত সহানুভূতি দেখান, আমরা কি তা দেখাতে শিখব?