সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

পাঠকদের থেকে প্রশ্নসকল

পাঠকদের থেকে প্রশ্নসকল

পাঠকদের থেকে প্রশ্নসকল

 যোহন যখন ‘বিস্তর লোককে’ যিহোবার মন্দিরে আরাধনা করতে দেখেছিলেন, তখন তারা মন্দিরের কোন্‌ অংশে তা করছিলেন?—প্রকাশিত বাক্য ৭:৯-১৫.

এটা বলা যুক্তিযুক্ত যে, যিহোবার মহান আত্মিক মন্দিরের পার্থিব প্রাঙ্গণের একটাতে বিস্তর লোক তাঁকে উপাসনা করছেন, বিশেষ করে সেই প্রাঙ্গণ যা শলোমনের মন্দিরের বহিঃপ্রাঙ্গণের সমতুল্য।

আগে বলা হতো যে, বিস্তর লোক যীশুর দিনে যে-পরজাতীয়দের প্রাঙ্গণ ছিল, সেটার আত্মিক প্রতিরূপ বা রূপক প্রাঙ্গণে রয়েছেন। কিন্তু এই বিষয়ে আরও গবেষণা প্রকাশ করেছে যে, অন্তত পাঁচটা কারণের জন্য তা হতে পারে না। প্রথমত, হেরোদের মন্দিরের সবটা বৈশিষ্ট্যের রূপক অর্থ যিহোবার মহান আত্মিক মন্দিরে নেই। উদাহরস্বরূপ, হেরোদের মন্দিরে নারীদের একটা প্রাঙ্গণ এবং ইস্রায়েলের একটা প্রাঙ্গণ ছিল। পুরুষ ও নারী উভয়ই নারীদের প্রাঙ্গণে ঢুকতে পারত কিন্তু ইস্রায়েলের প্রাঙ্গণে শুধু পুরুষদের ঢোকার অনুমতি ছিল। যিহোবার মহান আত্মিক মন্দিরের পার্থিব প্রাঙ্গণে পুরুষ ও নারী পৃথকভাবে উপাসনা করেন না। (গালাতীয় ৩:২৮, ২৯) তাই, আত্মিক মন্দিরে নারীদের প্রাঙ্গণ এবং ইস্রায়েলের প্রাঙ্গণের প্রতিরূপ কিছু নেই।

দ্বিতীয়ত, শলোমনের মন্দিরে বা যিহিষ্কেলের মন্দির দর্শনে ঈশ্বর যে-নির্মাণপদ্ধতি দিয়েছিলেন তাতে কোন পরজাতীয়দের প্রাঙ্গণ ছিল না; কিংবা সরুব্বাবিলের পুনর্নির্মিত মন্দিরেও তা ছিল না। তাই, বিশেষ করে পরের বিষয়টা বিবেচনা করে বলা যায় যে, উপাসনার জন্য যিহোবার মহান আত্মিক মন্দির ব্যবস্থায় পরজাতীয়দের প্রাঙ্গণের ভূমিকা রয়েছে, তা বলার কোন কারণ নেই।

তৃতীয়ত, ইদোমের রাজা হেরোদ নিজের গৌরব এবং রোমের সমর্থন পাওয়ার জন্য পরজাতীয়দের প্রাঙ্গণ বানিয়েছিলেন। হেরোদ হয়তো সা.কা.পূ. ১৮ বা ১৭ সালে সরুব্বাবিলের মন্দিরকে মেরামত করা শুরু করেছিলেন। আ্যংকর বাইবেল অভিধান (ইংরেজি) ব্যাখ্যা করে: “পশ্চিমে [রোমে] প্রাচীন গ্রিস ও রোমের রাজত্বকারী সাম্রাজ্যের রুচি অনুযায়ী . . . এমন মন্দির তৈরি করার দরকার পড়ে, যা পূর্ব দেশীয় শহরগুলোর মন্দিরের চাইতে বড়।” কিন্তু মন্দিরের পরিমাপ ইতিমধ্যেই নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল। ওই অভিধান ব্যাখ্যা করে: “যদিও মন্দিরের পরিমাপ, পূর্বপুরুষ [শলোমনের বা সরুব্বাবিলের] মন্দিরের মতো একই হওয়ার ছিল কিন্তু মন্দিরের সম্পূর্ণ এলাকার যে-পরিমাপ তা নির্ধারিত ছিল না।” তাই হেরোদ বর্তমানে পরজাতীয়দের প্রাঙ্গণ নামে পরিচিত এই অংশটুকু তৈরি করে মন্দিরকে বিস্তৃত করেছিলেন। এইধরনের পটভূমিতে গড়ে ওঠা এই প্রাঙ্গণের রূপক প্রকাশ কেন যিহোবার আত্মিক মন্দির ব্যবস্থায় থাকবে?

চতুর্থত, অন্ধ, খঞ্জ ও অছিন্নত্বক পরজাতি লোকেরা অর্থাৎ প্রায় যে-কেউই এই পরজাতীয়দের প্রাঙ্গণে ঢুকতে পারত। (মথি ২১:১৪, ১৫) এটা ঠিক যে, ঈশ্বরের কাছে বলি উৎসর্গ করতে চাইত এমন অনেক অছিন্নত্বক পরজাতি লোকের জন্য এই প্রাঙ্গণটা কাজে আসত। আর সেখানেই যীশু মাঝে-মধ্যে জনতার উদ্দেশে কিছু বলেছিলেন এবং দুবার পোদ্দারদের ও ব্যবসায়ীদের সেখান থেকে এই বলে বের করে দিয়েছিলেন যে, তারা তাঁর পিতার গৃহকে অসম্মান দেখিয়েছে। (মথি ২১:১২, ১৩; যোহন ২:১৪-১৬) তবুও, যিহুদি বিশ্বকোষ (ইংরেজি) বলে: “এই বাইরের প্রাঙ্গণ আসলে মন্দিরের কোন অংশ ছিল না। এই প্রাঙ্গণের ভূমি পবিত্র ছিল না এবং এখানে যে-কেউ ঢুকতে পারত।”

পঞ্চমত, বার্কলে এম. নিউম্যান ও ফিলিপ সি. স্টাইনের লেখা মথির সুসমাচার সম্বন্ধে এক পুস্তক (ইংরেজি) বলে, পরজাতীয়দের প্রাঙ্গণকে বোঝানোর জন্য ব্যবহার করা হয় এমন যে-গ্রিক (হি·ই·রোন) শব্দকে ‘মন্দির’ বলে অনুবাদ করা হয়েছে, তা “নির্দিষ্টভাবে শুধু মন্দিরকে না বুঝিয়ে মন্দিরের সমস্ত এলাকাকে বোঝায়।” এর বিপরীতে, বিস্তর লোক সম্বন্ধে যোহনের দর্শনে মন্দির বলে যে গ্রিক (ন্যা·ওস) শব্দকে অনুবাদ করা হয়েছে, তা আরও বেশি নির্দিষ্ট কিছুকে বোঝায়। যিরূশালেমের মন্দিরের বর্ণনাতে এটা সাধারণত অতি পবিত্র স্থান, মন্দির অথবা মন্দিরের এক্তিয়ারকে বোঝায়।”—মথি ২৭:৫, ৫১; লূক ১:৯, ২১; যোহন ২:২০.

বিস্তর লোক যীশুর মুক্তির মূল্যের ওপর বিশ্বাস করে। তারা ‘মেষশাবকের রক্তে আপন আপন বস্ত্র ধৌত করিয়া, ও শুক্লবর্ণ করিয়া’ আধ্যাত্মিকভাবে শুদ্ধ। তাই তাদেরকে ঈশ্বরের বন্ধু হওয়ার এবং মহাক্লেশ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ধার্মিক বলে ঘোষণা করা হয়েছে। (যাকোব ২:২৩, ২৫) অনেক দিক দিয়ে তারা ইস্রায়েলের ধর্মান্তরিত ব্যক্তিদের মতো, যারা নিয়ম চুক্তিকে মেনে নিয়েছিলেন এবং ইস্রায়েলীয়দের সঙ্গে উপাসনা করতেন।

অবশ্য সেই ধর্মান্তরিত ব্যক্তিরা ভিতরের প্রাঙ্গণে সেবা করতেন না, যেখানে যাজকরা নিজেদের যাজকীয় কাজ করতেন। আর বিস্তর লোকেরা যিহোবার মহান আত্মিক মন্দিরের ভিতরের প্রাঙ্গণে নেই, যে-প্রাঙ্গণ পৃথিবীতে থাকাকালীন যিহোবার ‘পবিত্র যাজকবর্গের’ সদস্যদের সিদ্ধ, ধার্মিক, মানবপুত্র হওয়ার অবস্থাকে চিত্রিত করে। (১ পিতর ২:৫) কিন্তু যোহনকে স্বর্গের প্রাচীন যেমন বলেছিলেন যে, বিস্তর লোক আসলে মন্দিরে রয়েছেন, মন্দিরের এলাকার বাইরে নয় যে-জায়গাটাকে আত্মিক পরজাতীয়দের প্রাঙ্গণ হিসেবে ধরা হয়। তারা এক শুদ্ধ ধার্মিক আত্মিক অবস্থায় রয়েছেন, যে-বিষয়ে শলোমনের মন্দিরের বহিঃপ্রাঙ্গণ পূর্বাভাস দিয়েছিল। এটা কত বড় এক সুযোগ! আর এটা কত জোরালোভাবে তুলে ধরে যে প্রত্যেকের সবসময় আত্মিক ও নৈতিক দিক দিয়ে শুদ্ধ থাকা দরকার!

[৩১ পৃষ্ঠার ডায়াগ্রাম/চিত্র]

(পুরোপুরি ফরম্যাট করা টেক্সটের জন্য এই প্রকাশনা দেখুন)

শলোমনের মন্দির

১. মন্দির

২. ভিতরের প্রাঙ্গণ

৩. বহিঃপ্রাঙ্গণ

৪. মন্দিরের প্রাঙ্গণে যাওয়ার সিঁড়ি