সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহোবার দিনে কারা রক্ষা পাবে?

যিহোবার দিনে কারা রক্ষা পাবে?

যিহোবার দিনে কারা রক্ষা পাবে?

“সেই দিন আসিতেছে, তাহা হাপরের ন্যায় জ্বলিবে।”মালাখি ৪:১.

১. এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থার শেষ সম্বন্ধে ভাববাদী মালাখি কীভাবে বর্ণনা করেন?

 শীঘ্র যে-সব ভয়ংকর ঘটনাগুলো ঘটবে, সেই সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী লেখার জন্য ভাববাদী মালাখিকে ঈশ্বর অনুপ্রেরণা দিয়েছিলেন। এই ঘটনাগুলো পৃথিবীর সমস্ত লোককে প্রভাবিত করবে। মালাখি ৪:১ পদ ভবিষ্যদ্বাণী করে: “দেখ, সেই দিন আসিতেছে, তাহা হাপরের ন্যায় জ্বলিবে, এবং দর্পী ও দুষ্টাচারীরা সকলে খড়ের ন্যায় হইবে; আর সেই যে দিন আসিতেছে, তাহা তাহাদিগকে পোড়াইয়া দিবে, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু কহেন; সে দিন তাহাদের মূল কি শাখা কিছুই অবশিষ্ট রাখিবে না।” এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থার ধ্বংস কতটা ব্যাপক হবে? এটা ঠিক একটা গাছের শিকড়কে উপড়ে ফেলার মতো হবে, যাতে ওই গাছ আর কখনও বাড়তে না পারে।

২. কিছু শাস্ত্রপদ যিহোবার দিন সম্বন্ধে কীভাবে বর্ণনা করে?

আপনি হয়তো জিজ্ঞেস করতে পারেন, ‘ভাববাদী মালাখি কোন্‌ “দিনের” বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করছেন?’ এটা যিশাইয় ১৩:৯ পদে বলা সেই একই দিন, যেখানে ঘোষণা করা হয়েছে: “দেখ, সদাপ্রভুর দিন আসিতেছে; পৃথিবীকে ধ্বংস-স্থান করিবার, তথাকার পাপীদিগকে তাহার মধ্য হইতে উচ্ছিন্ন করিবার নিমিত্ত সেই দিন দারুণ এবং ক্রোধ ও প্রজ্বলিত কোপসমন্বিত।” সফনিয় ১:১৫ পদে এই বর্ণনা পাওয়া যায়: “সেই দিন ক্রোধের দিন, সঙ্কটের ও সঙ্কোচের দিন, নাশের ও সর্ব্বনাশের দিন, অন্ধকারের ও তিমিরের দিন।”

“মহাক্লেশ”

৩. “সদাপ্রভুর দিন” কী?

মালাখির ভবিষ্যদ্বাণীর বড় পরিপূর্ণতায়, “সদাপ্রভুর দিন” হল সেই সময়কাল, যেটাকে “মহাক্লেশ” বলে চিহ্নিত করা হয়। যীশু ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন: “তৎকালে এরূপ ‘মহাক্লেশ উপস্থিত হইবে, যেরূপ জগতের আরম্ভ অবধি এ পর্য্যন্ত কখনও হয় নাই, কখনও হইবেও না।’” (মথি ২৪:২১) বিশেষ করে ১৯১৪ সাল থেকে এই জগৎ যে-দুর্দশা ভোগ করে আসছে, তা একটু ভেবে দেখুন। (মথি ২৪:৭-১২) শুধু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেই ৫ কোটিরও বেশি লোক প্রাণ হারিয়েছে! কিন্তু, ‘মহাক্লেশের’ সময় যে-সমস্ত দুর্ঘটনা ঘটবে তার তুলনায় এগুলোকে সামান্য বলে মনে হবে। সেই সময় অর্থাৎ যে-সময়কাল যিহোবার দিনকেও চিত্রিত করে, তা হর্‌মাগিদোন দিয়ে শেষ হবে আর তখন এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থার শেষ কালের অবসান হবে।—২ তীমথিয় ৩:১-৫, ১৩; প্রকাশিত বাক্য ৭:১৪; ১৬:১৪, ১৬.

৪. যিহোবার দিনের শেষে কী হবে?

যিহোবার সেই দিনের শেষে, শয়তানের জগৎ এবং এর সমর্থনকারীদের সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হবে। তবে, প্রথমে সমস্ত মিথ্যা ধর্মকে শেষ করা হবে। এরপর, শয়তানের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থাগুলোর ওপর যিহোবার বিচার আসবে। (প্রকাশিত বাক্য ১৭:১২-১৪; ১৯:১৭, ১৮) যিহিষ্কেল ভবিষ্যদ্বাণী করেন: “তাহারা আপন আপন রৌপ্য চকে ফেলিয়া দিবে, তাহাদের সুবর্ণ অশুচি বস্তু হইবে; সদাপ্রভুর ক্রোধের দিনে তাহাদের স্বর্ণ কি রৌপ্য তাহাদিগকে রক্ষা করিতে পারিবে না।” (যিহিষ্কেল ৭:১৯) সেই দিন সম্বন্ধে সফনিয় ১:১৪ পদ বলে: “সদাপ্রভুর মহাদিন নিকটবর্ত্তী, তাহা নিকটবর্ত্তী, অতি শীঘ্র আসিতেছে।” যিহোবার দিন সম্বন্ধে বাইবেল যা বলে, সেই কথা মনে রেখে আমাদের ঈশ্বরের ধার্মিক চাহিদার সঙ্গে মিল রেখে কাজ করার জন্য সংকল্প নেওয়া উচিত।

৫. যারা যিহোবার নামকে ভয় করেন তারা কোন্‌ অভিজ্ঞতা লাভ করবেন?

যিহোবার দিন শয়তানের জগৎকে কী করবে সেই সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করার পর, মালাখি ৪:২ পদে যিহোবা বলেন: “তোমরা যে আমার নাম ভয় করিয়া থাক, তোমাদের প্রতি ধার্ম্মিকতা-সূর্য্য উদিত হইবেন, তাঁহার পক্ষপুট আরোগ্যদায়ক; এবং তোমরা বাহির হইয়া পালের গোবৎসদের ন্যায় নাচিবে।” “ধার্ম্মিকতা-সূর্য্য” হলেন যীশু খ্রীষ্ট। তিনি “জগতের” আত্মিক “জ্যোতি।” (যোহন ৮:১২) যীশু আরোগ্য দান করে উদিত হন, প্রথমে আধ্যাত্মিক আরোগ্য, যা আজকে আমরা লাভ করছি আর পরে নতুন জগতে সম্পূর্ণ শারীরিক আরোগ্য লাভ করব। যিহোবা যেমন বলেন, যারা আরোগ্য লাভ করেন তারা “বাহির হইয়া পালের গোবৎসদের ন্যায় নাচিবে” কারণ তারা বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে রোমাঞ্চিত ও আনন্দিত।

৬. যিহোবার দাসেরা কোন্‌ বিজয় উদ্‌যাপন উপভোগ করবেন?

কিন্তু যারা যিহোবার চাহিদাগুলোকে তুচ্ছ করে, তাদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? মালাখি ৪:৩ পদ বলে: “তোমরা [ঈশ্বরের দাসেরা] দুষ্ট লোকদিগকে মর্দ্দন করিবে; কেননা আমার কার্য্য করিবার দিনে তাহারা তোমাদের পদতলের অধঃস্থিত ভস্ম হইবে, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু কহেন।” ঈশ্বরের উপাসক হিসেবে, মানুষরা শয়তানের জগৎকে ধ্বংস করার কাজে অংশ নেবেন না। বরং, যিহোবার দিনের পরে যে-মহাবিজয় উদ্‌যাপন করা হবে, তাতে অংশ নিয়ে তারা রূপকভাবে ‘দুষ্ট লোকদিগকে মর্দ্দন করিবে।’ ফরৌণের সৈন্যবাহিনী লোহিত সাগরে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পরে এইরকম এক মহা উৎসব উদ্‌যাপন করা হয়েছিল। (যাত্রাপুস্তক ১৫:১-২১) তেমনই, মহাক্লেশের সময় শয়তান ও তার জগৎকে সরিয়ে দেওয়ার পর বিজয় উদ্‌যাপন করা হবে। যিহোবার দিনে যে-বিশ্বস্ত লোকেরা রক্ষা পাবেন, তারা উচ্চরবে বলবেন: “আমরা ইহাঁর কৃত পরিত্রাণে উল্লাসিত হইব, আনন্দ করিব।” (যিশাইয় ২৫:৯) যিহোবার সার্বভৌমত্বের ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠিত হলে এবং শান্তিপূর্ণ বাসস্থানের জন্য পৃথিবী পরিষ্কৃত হলে সেখানে কী আনন্দই না হবে!

খ্রীষ্টীয়জগৎ ইস্রায়েলকে অনুকরণ করে

৭, ৮. মালাখির দিনে ইস্রায়েলের আধ্যাত্মিক অবস্থা কেমন ছিল, সেই সম্বন্ধে বর্ণনা করুন।

যারা যিহোবার সেবা করে না তাদের বিপরীতে যারা তাঁর সেবা করেন, তারা যিহোবার অনুগ্রহ পেয়েছেন। এটা ঠিক সেই সময়ের মতো যখন মালাখি তার বই লিখেছিলেন। সা.কা.পূ. ৫৩৭ সালে অবশিষ্ট ইস্রায়েলীয়রা ৭০ বছর বাবিলনে বন্দি থাকার পর নিজেদের দেশে ফিরে এসেছিল। কিন্তু, পরের শতাব্দীতে নিজের দেশে ফিরে আসা জাতি ধর্মভ্রষ্ট হয়ে পড়েছিল ও দুষ্টতার পথে পা বাড়িয়েছিল। বেশির ভাগ লোকই যিহোবার নামকে অসম্মান করেছিল; তাঁর ধার্মিক ব্যবস্থাগুলোকে তুচ্ছ করেছিল; অন্ধ, খোঁড়া ও রুগ্ন পশুদের বলি দেওয়ার জন্য নিয়ে এসে তাঁর মন্দিরকে অশুচি করেছিল; এবং তাদের যৌবনের স্ত্রীদের ত্যাগ করেছিল।

তাই, যিহোবা তাদের বলেছিলেন: “আমি বিচার করিতে তোমাদের নিকটে আসিব; এবং মায়াবী, পারদারিক, ও মিথ্যাশপথকারিগণের বিরুদ্ধে, ও যাহারা বেতনের বিষয়ে বেতনজীবীর প্রতি, এবং বিধবা ও পিতৃহীন লোকের প্রতি, অত্যাচার করে, বিদেশীর প্রতি অন্যায় করে, ও আমাকে ভয় করে না, তাহাদের বিরুদ্ধে আমি সত্বর সাক্ষী হইব। . . . কারণ আমি সদাপ্রভু, আমার পরিবর্ত্তন নাই।” (মালাখি ৩:৫, ৬) তবুও, যারা তাদের খারাপ পথ থেকে ফিরে আসতে পারে তাদেরকে যিহোবা এক আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন: “আমার কাছে ফিরিয়া আইস, আমিও তোমাদের কাছে ফিরিয়া আসিব।”—মালাখি ৩:৭.

৯. কীভাবে মালাখির ভবিষ্যদ্বাণীগুলোর প্রাথমিক পরিপূর্ণতা হয়েছিল?

এই কথাগুলো সা.কা. প্রথম শতাব্দীতেও পরিপূর্ণ হয়েছিল। যিহুদিদের এক অবশিষ্টাংশ যিহোবাকে সেবা করেছিলেন এবং আত্মায়-অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের নিয়ে গঠিত এক নতুন “জাতির” অংশ হয়েছিলেন, যার মধ্যে পরে পরজাতীয়রাও যুক্ত হয়েছিলেন। কিন্তু, বেশির ভাগ ইস্রায়েলীয়রা যীশুকে অগ্রাহ্য করেছিল। তাই, যীশু ইস্রায়েল জাতিকে বলেছিলেন: “দেখ, তোমাদের গৃহ তোমাদের নিমিত্ত উৎসন্ন পড়িয়া রহিল।” (মথি ২৩:৩৮; ১ করিন্থীয় ১৬:২২) সা.কা. ৭০ সালে, মালাখি ৪:১ পদের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী মাংসিক ইস্রায়েলের ওপর ‘সেই দিন . . . যা হাপরের ন্যায় জ্বলিবে’ তা এসেছিল। যিরূশালেম ও এর মন্দিরকে ধ্বংস করা হয়েছিল এবং দশ লক্ষেরও বেশি লোক দুর্ভিক্ষ, ক্ষমতার লড়াই ও রোমীয় সৈন্যদের আক্রমণে মারা গিয়েছিল বলে জানা যায়। কিন্তু, যারা যিহোবার সেবা করতেন তারা সেই ক্লেশ থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন।—মার্ক ১৩:১৪-২০.

১০. কোন্‌ অর্থে সাধারণ লোকেরা এবং যাজকরা প্রথম শতাব্দীর ইস্রায়েলীয়দেরকে অনুকরণ করে?

১০ মানবজাতি বিশেষ করে খ্রীষ্টীয়জগৎ প্রথম শতাব্দীর ইস্রায়েল জাতিকে অনুকরণ করেছে। খ্রীষ্টীয়জগতের নেতারা ও সাধারণ লোকেরা ঈশ্বরের বিষয়ে যীশু যেসব সত্য শিখিয়েছিলেন, সেগুলোর চেয়ে বরং তাদের নিজেদের ধর্মীয় মতবাদগুলোকে প্রাধান্য দেয়। এই ক্ষেত্রে পাদরিরা বেশি দোষী। তারা যিহোবার নাম ব্যবহার করতে চান না আর এমনকি তাদের বাইবেলের সংস্করণগুলো থেকে তা সরিয়ে দিয়েছেন। নরকে অনন্তকালীন যাতনা, ত্রিত্ব ও আত্মার অমরত্বের পৌত্তলিক মতবাদ এবং বিবর্তনবাদের মতো অশাস্ত্রীয় শিক্ষাগুলো দিয়ে তারা যিহোবাকে অসম্মান করেন। মালাখির দিনের যাজকদের মতো তারা যিহোবার প্রাপ্য প্রশংসা থেকে তাঁকে বঞ্চিত করেন।

১১. জগতের ধর্মগুলো কীভাবে দেখায় যে তারা আসলে কাকে সেবা করে?

১১ যখন ১৯১৪ সালে শেষ কাল শুরু হয়েছিল, তখন নিজেদেরকে যারা খ্রীষ্টান বলে দাবি করে তাদের দ্বারা পরিচালিত এই জগতের ধর্মগুলো দেখিয়েছিল যে, তারা আসলে কাকে সেবা করে। দুটো বিশ্বযুদ্ধের সময় তারা তাদের ধর্মের সদস্যদের অন্য জাতির লোকেদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যাওয়ার জন্য উৎসাহ দিয়েছিল, এমনকি যদিও এর মানে ছিল নিজেদের ধর্মের লোকেদেরকে হত্যা করা। কারা যিহোবার কথা মেনে চলেন ও কারা চলে না তাদেরকে ঈশ্বরের বাক্য পরিষ্কারভাবে শনাক্ত করে: “ইহাতে ঈশ্বরের সন্তানগণ এবং দিয়াবলের সন্তানগণ প্রকাশ হইয়া পড়ে; যে কেহ ধর্ম্মাচরণ না করে, এবং যে ব্যক্তি আপন ভ্রাতাকে প্রেম না করে, সে ঈশ্বরের লোক নয়। কেননা তোমরা আদি হইতে যে বার্ত্তা শুনিয়াছ, তাহা এই, আমাদের পরস্পর প্রেম করা কর্ত্তব্য; কয়িন যেমন সেই পাপাত্মার লোক, এবং আপন ভ্রাতাকে বধ করিয়াছিল, তেমন যেন না হই।”—১ যোহন ৩:১০-১২.

ভবিষ্যদ্বাণীর পরিপূর্ণতা

১২, ১৩. আমাদের সময়ে ঈশ্বরের দাসেরা কোন্‌ ভবিষ্যদ্বাণী পরিপূর্ণ করেছেন?

১২ উনিশশ আঠারো সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার সময়, যিহোবার দাসেরা দেখতে পেয়েছিলেন যে, খ্রীষ্টীয়জগৎ ও সেইসঙ্গে বাকি অন্যান্য মিথ্যা ধর্মকে ঈশ্বর নিন্দা করেছিলেন। সেই সময় থেকে সৎহৃদয়ের লোকেদের ডাক দেওয়া হয়েছিল: “হে আমার প্রজাগণ, উহা হইতে বাহিরে আইস, যেন উহার পাপ সকলের সহভাগী না হও, এবং উহার আঘাত সকল যেন প্রাপ্ত না হও। কেননা উহার পাপ আকাশ পর্য্যন্ত সংলগ্ন হইয়াছে এবং ঈশ্বর উহার অপরাধ সকল স্মরণ করিয়াছেন।” (প্রকাশিত বাক্য ১৮:৪, ৫) যারা যিহোবাকে সেবা করতে চেয়েছিলেন, তারা মিথ্যা ধর্মের সমস্ত চিহ্ন থেকে নিজেদের শুচি করেছিলেন এবং সারা পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করতে শুরু করেছিলেন, যে-কাজ এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থার শেষ আসার আগে সম্পূর্ণ হতে হবে।—মথি ২৪:১৪.

১৩ এটা মালাখি ৪:৫ পদে বলা ভবিষ্যদ্বাণী পরিপূর্ণ করার জন্য হয়েছিল, যেখানে যিহোবা বলেছিলেন: “দেখ, সদাপ্রভুর সেই মহৎ ও ভয়ঙ্কর দিন আসিবার পূর্ব্বে আমি তোমাদের নিকটে এলিয় ভাববাদীকে প্রেরণ করিব।” ওই ভবিষ্যদ্বাণী প্রথমে যোহন বাপ্তাইজকের কাজের মাধ্যমে পরিপূর্ণ হয়েছিল, যাকে এলিয়ের দ্বারা চিত্রিত করা হয়েছিল। যোহন এলিয়ের মতো কাজ করেছিলেন যখন নিয়মচুক্তির বিরুদ্ধে করা পাপের জন্য তিনি অনুতপ্ত যিহুদিদের বাপ্তিস্ম দিয়েছিলেন। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল যে, যোহন মশীহের অগ্রদূত ছিলেন। কিন্তু, যোহনের কাজের মধ্যে দিয়ে মালাখির ভবিষ্যদ্বাণী শুধু প্রাথমিক আকারে পরিপূর্ণ হয়েছিল। যীশু যোহনকে দ্বিতীয় এলিয় বলে শনাক্ত করে দেখান যে ‘এলিয়ের’ মতো কাজ ভবিষ্যতে আরও করা হবে।—মথি ১৭:১১, ১২.

১৪. এই বিধিব্যবস্থার ধ্বংসের আগে কোন্‌ গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হবে?

১৪ মালাখির ভবিষ্যদ্বাণী দেখিয়েছিল যে, মহান এলিয়ের কাজ “সদাপ্রভুর মহৎ ও ভয়ঙ্কর দিন” আসার আগে হবে। সেই দিন সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের দ্রুত এগিয়ে আসা মহা দিনের যুদ্ধ অর্থাৎ হর্‌মাগিদোনে শেষ হবে। এর মানে হল যে, এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থার শেষ ও সিংহাসনে অধিষ্ঠিত যীশু খ্রীষ্টের নেতৃত্বে ঈশ্বরের স্বর্গীয় রাজ্যের হাজার বছরের রাজত্বের শুরুর আগে এলিয়ের মতো একটা কাজ করা হবে। এই ভবিষ্যদ্বাণীকে সত্য প্রমাণ করে, যিহোবা এই দুষ্ট ব্যবস্থা ধ্বংস করার আগে, আজকের দিনের এলিয় শ্রেণী, পার্থিব আশা আছে এমন লক্ষ লক্ষ সহ খ্রীষ্টানদের সাহায্যে উদ্যোগের সঙ্গে বিশুদ্ধ উপাসনা পুনর্স্থাপনের, যিহোবার নামকে মহিমান্বিত করার এবং মেষতুল্য ব্যক্তিদের শিক্ষা দেওয়ার কাজ করে চলেছেন।

যিহোবা তাঁর দাসদের আশীর্বাদ করেন

১৫. যিহোবা কীভাবে তাঁর দাসদের মনে রাখেন?

১৫ যারা যিহোবাকে সেবা করেন, তাদেরকে তিনি আশীর্বাদ করেন। মালাখি ৩:১৬ পদ বলে: “তখন, যাহারা সদাপ্রভুকে ভয় করিত, তাহারা পরস্পর আলাপ করিল, এবং সদাপ্রভু কর্ণপাত করিয়া শুনিলেন; আর যাহারা সদাপ্রভুকে ভয় করিত, ও তাঁহার নাম ধ্যান করিত, তাহাদের জন্য তাঁহার সম্মুখে একখানি স্মরণার্থক পুস্তক লেখা হইল।” হেবলের সময় থেকে ঈশ্বর যেন একটা বইয়ে সেই সমস্ত মানুষের নাম লিখে রাখছেন, যাদেরকে অনন্ত জীবন দেওয়ার জন্য স্মরণে রাখা হবে। এদেরকে যিহোবা বলেন: “তোমরা সমস্ত দশমাংশ ভাণ্ডারে আন, যেন আমার গৃহে খাদ্য থাকে; আর তোমরা ইহাতে আমার পরীক্ষা কর, . . . আমি আকাশের দ্বার সকল মুক্ত করিয়া তোমাদের প্রতি অপরিমেয় আশীর্ব্বাদ বর্ষণ করি কি না।”—মালাখি ৩:১০.

১৬, ১৭. যিহোবা তাঁর লোকেদের এবং তাদের কাজের ওপর কীভাবে আশীর্বাদ করেছেন?

১৬ যারা যিহোবাকে সেবা করেন, তাদেরকে তিনি সত্যি সত্যিই আশীর্বাদ করেছেন। কীভাবে? একটা উপায় হল, তাঁর উদ্দেশ্যগুলো বোঝার ক্ষমতা বাড়িয়ে। (হিতোপদেশ ৪:১৮; দানিয়েল ১২:১০) অন্যটা হল, তাদের প্রচার কাজে চমৎকার ফল দিয়ে। প্রচুর সৎহৃদয়ের লোকেরা তাদের সঙ্গে সত্য উপাসনায় যোগ দিয়েছেন এবং এরা “প্রত্যেক জাতির ও বংশের ও প্রজাবৃন্দের ও ভাষার বিস্তর লোক . . . এবং তাহারা উচ্চ রবে চীৎকার করিয়া কহিতেছে, ‘পরিত্রাণ আমাদের ঈশ্বরের, যিনি সিংহাসনে বসিয়া আছেন এবং মেষশাবকের দান।’” (প্রকাশিত বাক্য ৭:৯, ১০) এই বিস্তর লোকেরা এক চমৎকার উপায়ে প্রকাশিত হয়েছেন এবং যারা সক্রিয়ভাবে যিহোবার উপাসনা করছেন তাদের সংখ্যা এখন সারা পৃথিবীতে ৯৩,০০০-রও বেশি মণ্ডলীতে ষাট লক্ষের ওপরে!

১৭ এ ছাড়া, যিহোবার সাক্ষিরাই এই সময় পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি বাইবেলের প্রকাশনাদি বিতরণ করেছেন যা দেখায় যে, যিহোবার আশীর্বাদ রয়েছে। এখন প্রতি মাসে প্রায় ৯ কোটি কপি প্রহরীদুর্গসচেতন থাক! পত্রিকা ছাপানো হয়, প্রহরীদুর্গ ১৪৪টা ভাষায় এবং সচেতন থাক! ৮৭টা ভাষায়। ১৯৬৮ সালে বাইবেল অধ্যয়নের জন্য যে সত্য অনন্ত জীবনে লইয়া যায় প্রকাশ করা হয়েছিল, যা ১১৭টা ভাষায় ১০ কোটি ৭০ লক্ষের বেশি কপি লোকেদের দেওয়া হয়েছিল। আপনি পরমদেশ পৃথিবীতে অনন্তকাল বেঁচে থাকতে পারেন ১৯৮২ সালে প্রকাশ করা হয়েছিল, যা ১৩১টা ভাষায় ৮ কোটি ১০ লক্ষেরও বেশি কপি লোকেদের দেওয়া হয়েছিল। জ্ঞান যা অনন্ত জীবনে পরিচালিত করে বইটা ১৯৯৫ সালে প্রকাশ করা হয়েছে, যা এ পর্যন্ত ১৫৪টা ভাষায় প্রায় ৮ কোটি ৫০ লক্ষেরও বেশি ছাপানো হয়েছে। ১৯৯৬ সালে প্রকাশিত ঈশ্বর আমাদের কাছ থেকে কী চান? নামের ব্রোশারটা ইতিমধ্যে প্রায় ২৪৪টা ভাষায় ১৫ কোটি কপি লোকেদের দেওয়া হয়েছে।

১৮. বিরোধিতা সত্ত্বেও, আমরা কেন আধ্যাত্মিক উন্নতি লাভ করি?

১৮ শয়তানের জগতের কঠিন এবং অনেকদিন ধরে বিরোধিতার মধ্যে দিয়েও এই আধ্যাত্মিক উন্নতি ঘটে চলেছে। এটা যিশাইয় ৫৪:১৭ পদে বলা কথাগুলো যে সত্য তা দেখায়: “যে কোন অস্ত্র তোমার বিপরীতে গঠিত হয়, তাহা সার্থক হইবে না; যে কোন জিহ্বা বিচারে তোমার প্রতিবাদিনী হয়, তাহাকে তুমি দোষী করিবে। সদাপ্রভুর দাসদের এই অধিকার, এবং আমা হইতে তাহাদের এই ধার্ম্মিকতা লাভ হয়, ইহা সদাপ্রভু কহেন।” মালাখি ৩ অধ্যায় ১৭ পদের ভবিষ্যদ্বাণী যে যিহোবার দাসদের ওপর বড় আকারে পরিপূর্ণ হচ্ছে, তা জানা তাদের কতই না সান্ত্বনা দেয়: “তাহারা আমারই হইবে, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু কহেন; আমার কার্য্য করিবার দিনে তাহারা আমার নিজস্ব হইবে।”

আনন্দের সঙ্গে যিহোবার সেবা করা

১৯. যারা যিহোবাকে সেবা করেন তারা কীভাবে যারা তাঁকে সেবা করে না, তাদের থেকে আলাদা?

১৯ সময় পেরিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যিহোবার বিশ্বস্ত দাসদের এবং শয়তানের জগতের লোকেদের মধ্যে পার্থক্য আরও স্পষ্ট হচ্ছে। মালাখি ৩:১৮ পদ ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল: “তোমরা ফিরিয়া আসিবে, এবং ধার্ম্মিক ও দুষ্টের মধ্যে, যে ঈশ্বরের সেবা করে, ও যে তাঁহার সেবা না করে, উভয়ের মধ্যে প্রভেদ দেখিবে।” অনেক পার্থক্যের মধ্যে একটা হল, যারা যিহোবাকে সেবা করেন তারা আনন্দের সঙ্গে তা করে থাকেন। আর এর একটা কারণ হল যে, তাদের অপূর্ব আশা রয়েছে। তারা পুরোপুরি যিহোবার ওপর আস্থা রাখেন যখন তিনি বলেন: “দেখ, আমি নূতন আকাশমণ্ডলের ও নূতন পৃথিবীর সৃষ্টি করি; এবং পূর্ব্বে যাহা ছিল, তাহা স্মরণে থাকিবে না, আর মনে পড়িবে না। কিন্তু আমি যাহা সৃষ্টি করি, তোমরা তাহাতে চিরকাল আমোদ ও উল্লাস কর।”—যিশাইয় ৬৫:১৭, ১৮; গীতসংহিতা ৩৭:১০, ১১, ২৯; প্রকাশিত বাক্য ২১:৪, ৫.

২০. কেন আমরা সুখী লোক?

২০ আমরা যিহোবার এই প্রতিজ্ঞাতে বিশ্বাস রাখি যে, তাঁর নিষ্ঠাবান লোকেরা যিহোবার মহাদিনে রক্ষা পাবেন এবং তাদেরকে নতুন জগতে নিয়ে আসা হবে। (সফনিয় ২:৩; প্রকাশিত বাক্য ৭:১৩, ১৪) আর যদিও কেউ কেউ তার আগেই বার্ধক্য, অসুখবিসুখ বা দুর্ঘটনার কারণে মারা যান, যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেন যে তিনি তাদেরকে অনন্ত জীবন দেওয়ার জন্য পুনরুত্থিত করবেন। (যোহন ৫:২৮, ২৯; তীত ১:২) আমাদের প্রত্যেকের বিভিন্ন সমস্যা ও কঠিন পরীক্ষাগুলো থাকা সত্ত্বেও, আমরা যেহেতু যিহোবার দিনে এগিয়ে যাচ্ছি, তাই পৃথিবীতে সবচেয়ে সুখী লোক হওয়ার কারণ আমাদের রয়েছে।

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• “সদাপ্রভুর দিন” কী?

• জগতের ধর্মগুলো কীভাবে প্রাচীন ইস্রায়েলকে অনুকরণ করে?

• যিহোবার দাসেরা কোন্‌ ভবিষ্যদ্বাণীগুলো পরিপূর্ণ করেন?

• যিহোবা কীভাবে তাঁর লোকেদেরকে আশীর্বাদ করেছেন?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২১ পৃষ্ঠার চিত্র]

প্রথম শতাব্দীর যিরূশালেম ‘হাপরের ন্যায় জ্বলিয়াছিল’

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

যারা যিহোবাকে সেবা করেন তাদের তিনি দরকারি সমস্ত কিছু জোগান

[২৪ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

যিহোবার দাসদের অপূর্ব আশা আছে বলে তারা সত্যিই সুখী