সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহোবা বিশ্বাসঘাতকতা ঘৃণা করেন

যিহোবা বিশ্বাসঘাতকতা ঘৃণা করেন

যিহোবা বিশ্বাসঘাতকতা ঘৃণা করেন

‘আপন আপন ভ্রাতার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করিও না।’মালাখি ২:১০.

১. আমরা যদি অনন্ত জীবন পেতে চাই, তা হলে ঈশ্বর আমাদের কাছ থেকে কী চান?

 আপনি কি অনন্ত জীবন চান? বাইবেলে এই বিষয়ে যে-প্রতিজ্ঞা রয়েছে তাতে যদি আপনি বিশ্বাস করেন, তা হলে হয়তো বলবেন, ‘অবশ্যই চাই।’ কিন্তু আপনি যদি চান যে, ঈশ্বর তাঁর নতুন জগতে আপনাকে অনন্ত জীবন দিক, তা হলে ঈশ্বর যা চান সেগুলো আপনাকে পূরণ করতে হবে। (উপদেশক ১২:১৩; যোহন ১৭:৩) অসিদ্ধ মানুষের কাছ থেকে তা আশা করা কি অযৌক্তিক? না, কারণ যিহোবা এই উৎসাহজনক কথাগুলো বলেন: “আমি দয়াই চাই, বলিদান নয়; এবং হোম অপেক্ষা ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান [চাই]।” (হোশেয় ৬:৬) তাই, এমনকি ভুল করার প্রবণতা রয়েছে এমন মানুষরাও ঈশ্বর যা চান, সেগুলো পূরণ করতে পারে।

২. অনেক ইস্রায়েলীয় কীভাবে যিহোবার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে?

কিন্তু, সবাই-ই ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করতে চায় না। হোশেয় বলেন যে, এমনকি অনেক ইস্রায়েলীয়রাও তা করতে চায়নি। একটা জাতি হিসেবে, ঈশ্বরের আইনগুলো মেনে চলার জন্য এক চুক্তির অধীনে থাকতে তারা একমত হয়েছিল। (যাত্রাপুস্তক ২৪:১-৮) কিন্তু, খুব শীঘ্র তারা তাঁর আইনগুলো মেনে না চলে ‘নিয়ম [“চুক্তি,” NW] লঙ্ঘন করিয়াছিল।’ তাই যিহোবা বলেছিলেন যে, ওই ইস্রায়েলীয়রা তাঁর সঙ্গে “বিশ্বাসঘাতকতা করিয়াছে।” (হোশেয় ৬:৭) আর সেই সময় থেকে বহু লোকেরা তা-ই করে আসছে। কিন্তু যিহোবা বিশ্বাসঘাতকতা ঘৃণা করেন, তা সে তাঁর সঙ্গেই করা হোক বা যারা তাঁকে ভালবাসেন ও সেবা করেন তাদের সঙ্গেই হোক।

৩. এই অধ্যয়নে কোন্‌ বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করা হবে?

ভাববাদী হোশেয় কেবল একাই বিশ্বাসঘাতকতার প্রতি ঈশ্বরের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেননি, যে-দৃষ্টিভঙ্গি সুখী জীবন উপভোগ করতে চাইলে আমাদের গড়ে তোলা দরকার। আগের প্রবন্ধে আমরা মালাখির বইয়ের প্রথম অধ্যায় দিয়ে তার অনেক ভবিষ্যদ্বাণীর বার্তা আলোচনা করা শুরু করেছি। এখন আসুন আমরা ওই বইয়ের দ্বিতীয় অধ্যায় খুলি এবং দেখি যে, বিশ্বাসঘাতকতার প্রতি ঈশ্বরের দৃষ্টিভঙ্গি কীভাবে তুলে ধরা হয়েছে। বাবিলন থেকে ফিরে আসার কয়েক দশক পর ঈশ্বরের লোকেদের যে-অবস্থা ছিল, মালাখি যদিও সেই বিষয় নিয়ে কথা বলছিলেন কিন্তু এই দ্বিতীয় অধ্যায়টা আজকে আমাদের জন্যও প্রকৃত অর্থ রাখে।

নিন্দনীয় যাজকরা

৪. যাজকদের যিহোবা কোন্‌ সাবধানবাণী দিয়েছিলেন?

দ্বিতীয় অধ্যায়টা যিহুদি যাজকদের বিরুদ্ধে যিহোবার ভর্ৎসনা দিয়ে শুরু হয় কারণ তারা তাঁর ধার্মিক পথগুলো থেকে সরে গিয়েছিলেন। তারা যদি তাঁর পরামর্শ না মানেন ও তাদের পথ সংশোধন না করেন, তা হলে খারাপ পরিণতি আসবেই। প্রথম দুটো পদ দেখুন: “হে যাজকগণ, তোমাদের প্রতি এই আজ্ঞা। বাহিনীগণের সদাপ্রভু কহেন, যদি আমার নামের মহিমা স্বীকার করিবার জন্য তোমরা কথা না শুন, ও মনোযোগ না কর, তবে আমি তোমাদের উপরে অভিশাপ প্রেরণ করিব, ও তোমাদের আশীর্ব্বাদের পাত্র সকলকে শাপ দিব।” যাজকরা যদি লোকেদেরকে ঈশ্বরের ব্যবস্থা সম্বন্ধে শেখাতেন এবং সেগুলো মেনে চলতেন, তা হলে তারা আশীর্বাদ পেতেন। কিন্তু ঈশ্বরের ইচ্ছা মেনে না চলায় তাদের ওপর অভিশাপ আসবে। এমনকি যাজকরা যে-আশীর্বাদ দিতেন তা-ও অভিশাপ হয়ে যেত।

৫, ৬. (ক) কেন বিশেষ করে যাজকদের নিন্দা করা হয়েছে? (খ) যিহোবা কীভাবে যাজকদের প্রতি তাঁর তীব্র ঘৃণা প্রকাশ করেন?

কেন বিশেষ করে যাজকদের নিন্দা করা হয়েছে? ৭ পদ এর স্পষ্ট উত্তর দেয়: “যাজকদের ওষ্ঠাধর জ্ঞান রক্ষা করে, ও তাহার মুখে লোকেরা ব্যবস্থার অন্বেষণ করে, ইহা উপযুক্ত; কেননা সে বাহিনীগণের দূত।” এক হাজার বছরেরও বেশি আগে, মোশির মাধ্যমে ইস্রায়েলীয়দেরকে দেওয়া ঈশ্বরের ব্যবস্থায় বলা হয়েছে যে, যাজকদের দায়িত্ব হল, ‘সদাপ্রভু ইস্রায়েল-সন্তানগণকে যে সকল বিধি দিয়াছেন, তাহা তাহাদিগকে শিক্ষা দেওয়া।’ (লেবীয় পুস্তক ১০:১১) কিন্তু দুঃখের বিষয় হল যে, পরে ২ বংশাবলি ১৫:৩ পদের লেখক জানিয়েছিলেন: “ইস্রায়েল বহুকাল সত্যময় ঈশ্বর-বিহীন, শিক্ষাদায়ক যাজকবিহীন ও ব্যবস্থাবিহীন ছিল।”

সাধারণ কাল পূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে মালাখির সময়ে যাজকদের অবস্থা একইরকম ছিল। তারা লোকেদেরকে ঈশ্বরের ব্যবস্থা সম্বন্ধে শিক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। তাই, ওই যাজকদেরকে নিকাশ দিতে হয়েছিল। যিহোবা তাদেরকে যে-জোরালো বাক্যগুলো বলেন, তা দেখুন। মালাখি ২:৩ পদ ঘোষণা করে: “আমি . . . তোমাদের মুখে বিষ্ঠা অর্থাৎ তোমাদের উৎসব সকলের বিষ্ঠা ছড়াইব।” কত তীব্র তিরস্কার! উৎসর্গ করা পশুর বিষ্ঠা বা মল শিবিরের বাইরে নিয়ে পুড়িয়ে দিতে হতো। (লেবীয় পুস্তক ১৬:২৭) কিন্তু যিহোবা যখন বলেন যে, এর বদলে তাদের মুখে সেই বিষ্ঠা ছড়ানো হবে, তখন এটা পরিষ্কার দেখিয়েছিল যে তিনি তাদের বলি এবং যারা সেগুলো উৎসর্গ করত তাদেরকে ঘৃণা করতেন এবং প্রত্যাখান করেছিলেন।

৭. ব্যবস্থার শিক্ষকদের ওপর যিহোবা কেন রাগ করেছিলেন?

মালাখির দিনের কয়েকশ বছর আগে, যিহোবা লেবীয়দেরকে সমাগম তাম্বু এবং পরে মন্দির দেখাশোনা করার ও পবিত্র পরিচর্যা সম্পন্ন করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। ইস্রায়েল জাতির মধ্যে তারা শিক্ষক ছিলেন। তাদের দায়িত্ব পালন করার মানে ছিল তাদের ও তাদের জাতির জন্য জীবন ও শান্তি। (গণনাপুস্তক ৩:৫-৮) কিন্তু, লেবীয়দের প্রথমে ঈশ্বরের প্রতি যে-ভয় ছিল, তা তারা হারিয়ে ফেলেছিলেন। তাই যিহোবা তাদের বলেছিলেন: “তোমরা পথ হইতে সরিয়া পড়িয়াছ, ব্যবস্থার বিষয়ে অনেককে উছোট খাওয়াইয়াছ; তোমরা লেবির নিয়ম নষ্ট করিয়াছ . . . তোমরা আমার পথ রক্ষা করিতেছ না।” (মালাখি ২:৮, ৯) যাজকরা তাদের শিক্ষা দেওয়ার ব্যর্থতা এবং খারাপ উদাহরণের মাধ্যমে অনেক ইস্রায়েলীয়কে ভুল পথে নিয়ে গিয়েছিলেন আর তাই তাদের প্রতি রাগ করার সঠিক কারণ যিহোবার ছিল।

ঈশ্বরের মানগুলো মেনে চলা

৮. মানুষরা ঈশ্বরের মানগুলো মেনে চলবে আশা করাটা কি খুব বেশি চাওয়া? ব্যাখ্যা করুন।

আসুন আমরা যেন এমন মনে না করি যে, ওই যাজকরা সমবেদনা পাওয়ার যোগ্য এবং তাদেরকে ক্ষমা করে দেওয়া উচিত কারণ তারা অসিদ্ধ মানুষ ছিলেন আর তাই ঈশ্বরের মানগুলো মেনে চলতে পারতেন না। কিন্তু, বিষয়টা হল যে, মানুষরা ঈশ্বরের আদেশগুলো মেনে চলতে পারে কারণ যিহোবা তাদের কাছে এমন কিছু চান না, যা তারা করতে পারবে না। হয়তো সেই সময়ের কিছু যাজক ঈশ্বরের মানগুলো মেনে চলেছিলেন আর পরে ‘মহাযাজক’ যীশু যে তা মেনে চলেছিলেন, তাতে কোন সন্দেহ নেই। (ইব্রীয় ৩:১) তাঁর সম্বন্ধে সত্যিই এই কথাগুলো বলা যায়: “তাহার মুখে সত্যের ব্যবস্থা ছিল, ও তাহার ওষ্ঠাধরে অন্যায় পাওয়া যাইত না; সে শান্তিতে ও সরলতায় আমার সহিত গমনাগমন করিত, এবং অনেককে অপরাধ হইতে ফিরাইত।”—মালাখি ২:৬.

৯. আমাদের দিনে কারা বিশ্বস্ততার সঙ্গে সত্য জানাচ্ছেন?

এর সঙ্গে মিল রেখে যীশুর অভিষিক্ত ভাইয়েরা, যাদের স্বর্গীয় আশা রয়েছে, তারা এক শতাব্দীরও বেশি সময়ে ধরে আজকে আমাদের দিন পর্যন্ত “পবিত্র যাজগবর্গ হইয়া . . . ঈশ্বরের গ্রাহ্য আত্মিক বলি উৎসর্গ” করার জন্য সেবা করছেন। (১ পিতর ২:৫) তারা অন্যদের বাইবেলের সত্য সম্বন্ধে জানানোর জন্য নেতৃত্ব নিয়েছেন। তারা আপনাকে যে-সত্য শিখিয়েছেন, তা শিখে আপনি কি অভিজ্ঞতা থেকে দেখতে পাননি যে তাদের মুখে সত্যের ব্যবস্থা আছে? তারা অনেককে ধর্মীয় ভুলভ্রান্তি থেকে ফিরিয়েছেন বলে এখন সারা পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ লোক বাইবেলের সত্য শিখেছেন এবং তাদের অনন্ত জীবনের আশা রয়েছে। এভাবে, আরও লক্ষ লক্ষ লোকের সত্যের ব্যবস্থা সম্বন্ধে শিক্ষা দেওয়ার সুযোগ খুলে গিয়েছে।—যোহন ১০:১৬; প্রকাশিত বাক্য ৭:৯.

সাবধান থাকার কারণ

১০. কেন আমাদের সাবধান থাকার কারণ রয়েছে?

১০ কিন্তু, আমাদের সাবধান থাকার কারণ রয়েছে। মালাখি ২:১-৯ পদে যে-শিক্ষা রয়েছে, তা বুঝতে আমরাও ব্যর্থ হতে পারি। আমরা কি ব্যক্তিগতভাবে সতর্ক থাকি যেন আমাদের ওষ্ঠাধরে অন্যায় পাওয়া না যায়? উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, আমাদের পরিবারের লোকেরা কি আমাদের কথার ওপর সত্যিই ভরসা করতে পারে? মণ্ডলীতে আমাদের ভাইবোনেরাও কি তা পারে? একজনের পক্ষে এমনভাবে কথা বলার অভ্যাস গড়ে তোলা হয়তো সহজ, যা সূক্ষ্মভাবে বিচার করলে ঠিক শোনায় কিন্তু এভাবে কথা বললে হয়তো বিভ্রান্ত করা হয়। অথবা একজন হয়তো ব্যাবসাসংক্রান্ত বিষয় সম্বন্ধে বাড়িয়ে বলতে পারেন বা খুঁটিনাটি বিষয় লুকোতে পারেন। যিহোবা কি তা দেখতে পান না? আর আমরা যদি এইরকম করে থাকি, তা হলে তিনি কি আমাদের ওষ্ঠাধরের প্রশংসা বলি গ্রাহ্য করবেন?

১১. বিশেষ করে কাদের সাবধান থাকা দরকার?

১১ আজকে মণ্ডলীতে যাদের ঈশ্বরের বাক্য শিক্ষা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে, তাদের জন্য মালাখি ২:৭ পদ এক সাবধানবাণী হওয়া উচিত। এটা বলে যে তাদের ওষ্ঠ “জ্ঞান রক্ষা করে, ও” তাদের মুখে “লোকেরা ব্যবস্থার অন্বেষণ করে, ইহা উপযুক্ত।” এইরকম শিক্ষকদের ওপর গুরু দায়িত্ব রয়েছে কারণ যাকোব ৩:১ পদ ইঙ্গিত দেয় যে, তাদের “ভারী বিচার হইবে।” যদিও তাদের বলিষ্ঠভাবে ও উদ্যোগ নিয়ে শিক্ষা দিতে হবে কিন্তু তাদের শিক্ষা পুরোপুরিভাবে ঈশ্বরের লিখিত বাক্য এবং যিহোবার সংগঠনের কাছ থেকে পাওয়া নির্দেশনার ওপর ভিত্তি করে হতে হবে। এভাবেই তারা “অন্য অন্য লোককেও শিক্ষা দিতে সক্ষম” হবেন। তাই, তাদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে: “তুমি আপনাকে ঈশ্বরের কাছে পরীক্ষাসিদ্ধ লোক দেখাইতে যত্ন কর; এমন কার্য্যকারী হও, যাহার লজ্জা করিবার প্রয়োজন নাই, যে সত্যের বাক্য যথার্থরূপে ব্যবহার করিতে জানে।”—২ তীমথিয় ২:২, ১৫.

১২. যারা শিক্ষা দেন, তাদেরকে কোন্‌ বিষয়ে সাবধান থাকতে হবে?

১২ আমরা যদি সাবধান না হই, তা হলে আমাদের শিক্ষার মধ্যে নিজেদের ধারণা বা মতামত তুলে ধরার ইচ্ছা জাগতে পারে। এটা বিশেষ করে এমন একজন ব্যক্তির বেলায় হতে পারে যিনি নিজের সিদ্ধান্তে অতিরিক্ত ভরসা রাখেন, এমনকি সেগুলো যখন যিহোবার সংগঠনের বিপরীত শিক্ষা দেয়। কিন্তু মালাখি ২ অধ্যায় দেখায় যে, মণ্ডলীর শিক্ষকরা ব্যক্তিগত ধারণা নয়, যা কিনা মেষদের বিঘ্ন জন্মাতে পারে বরং ঈশ্বরের জ্ঞানের প্রতি অনুগত থাকবেন বলে আমরা আশা করব। যীশু বলেছিলেন: “যে ক্ষুদ্রগণ আমাতে বিশ্বাস করে, যে কেহ তাহাদের মধ্যে এক জনেরও বিঘ্ন জন্মায়, তাহার গলায় বৃহৎ যাঁতা বাঁধিয়া তাহাকে সমুদ্রের অগাধ জলে ডুবাইয়া দেওয়া বরং তাহার পক্ষে ভাল।”—মথি ১৮:৬.

একজন অবিশ্বাসীকে বিয়ে করা

১৩, ১৪. মালাখি কোন্‌ বিশ্বাসঘাতকতা সম্বন্ধে তুলে ধরেছিলেন?

১৩ মালাখি ২ অধ্যায়ের ১০ পদ থেকে শুরু করে পরের পদগুলোতে বিশ্বাসঘাতকতা সম্বন্ধে আরও সরাসরি বলা হয়েছে। মালাখি দুটো সম্পর্কযুক্ত বিষয় সম্বন্ধে বলেছিলেন আর এ দুটো সম্বন্ধে তিনি বারবার “বিশ্বাসঘাতকতা” শব্দটা ব্যবহার করেছিলেন। প্রথমে লক্ষ্য করুন যে, মালাখি এই প্রশ্নগুলো দিয়ে তার উপদেশ শুরু করেন: “আমাদের সকলের কি এক পিতা নহেন? এক ঈশ্বরই কি আমাদের সৃষ্টি করেন নাই? তবে আমরা কেন প্রত্যেক জন আপন আপন ভ্রাতার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করি, আপনাদের পৈতৃক নিয়ম অপবিত্র করি?” এরপর ১১ পদ আরও বলে যে, ইস্রায়েলীয়দের বিশ্বাসঘাতকতা “সদাপ্রভুর সেই ধর্ম্মধাম” অপবিত্র করার সমান ছিল। তারা এমন কী করেছিল, যা অত্যন্ত গুরুতর ছিল? এই পদ একটা অন্যায় সম্বন্ধে তুলে ধরে: তারা “এক বিজাতীয় দেবের কন্যাকে বিবাহ করিয়াছে।”

১৪ অন্য কথায়, যিহোবার প্রতি উৎসর্গীকৃত জাতির অংশ হিসেবে কিছু ইস্রায়েলীয় তাঁকে উপাসনা করে না এমন মেয়েদের বিয়ে করেছিল। প্রসঙ্গ আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে, কেন তা খুবই গুরুতর ছিল? ১০ পদ বলে যে, তাদের সবার একজন পিতা ছিল। এই পিতা বলতে যাকোব (আরেক নাম ইস্রায়েল), অব্রাহাম বা এমনকি আদমকেও বোঝানো হয়নি। মালাখি ১:৬ পদ দেখায় যে, যিহোবাই ছিলেন সেই “এক পিতা।” ইস্রায়েল জাতির সঙ্গে তাঁর এক সম্পর্ক ছিল, তাদের পূর্বপুরুষদের সঙ্গে করা নিয়মের এক পক্ষে ছিলেন। ওই নিয়মচুক্তির একটা আইন ছিল: “তাহাদের সহিত বিবাহ-সম্বন্ধ করিবে না; তুমি তাহার পুত্ত্রকে আপনার কন্যা দিবে না, ও আপন পুত্ত্রের জন্য তাহার কন্যা গ্রহণ করিবে না।”—দ্বিতীয় বিবরণ ৭:৩.

১৫. (ক) অবিশ্বাসী কাউকে বিয়ে করার জন্য কেউ কেউ হয়তো কীভাবে যুক্তি দেখাতে পারে? (খ) বিয়ে সম্বন্ধে যিহোবা তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি কীভাবে প্রকাশ করেছেন?

১৫ আজকের দিনে কেউ কেউ হয়তো যুক্তি দেখায়: ‘আমি যাকে পছন্দ করি সে খুব সুন্দর। পরে, সে হয়তো সত্য উপাসনা গ্রহণ করবে।’ এইরকম চিন্তা অনুপ্রাণিত সাবধানবাণীর সঙ্গে মিলে যায়: “অন্তঃকরণ সর্ব্বাপেক্ষা বঞ্চক, তাহার রোগ অপ্রতিকার্য্য, কে তাহা জানিতে পারে?” (যিরমিয় ১৭:৯) একজন অবিশ্বাসীকে বিয়ে করার বিষয়ে ঈশ্বরের দৃষ্টিভঙ্গি সম্বন্ধে মালাখি ২:১২ পদে প্রকাশ পেয়েছে: “যে ব্যক্তি এই কর্ম্ম করে, সদাপ্রভু . . . তাহাকে উচ্ছিন্ন করিবেন।” তাই, খ্রীষ্টানদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যেন “কেবল প্রভুতেই” বিয়ে করেন। (১ করিন্থীয় ৭:৩৯) খ্রীষ্টীয় ব্যবস্থায় একজন বিশ্বাসী ব্যক্তি অবিশ্বাসী কাউকে বিয়ে করলে “উচ্ছিন্ন” হন না। কিন্তু, সেই অবিশ্বাসী ব্যক্তি যদি অবিশ্বাসীই থেকে যান, তা হলে ঈশ্বর যখন শীঘ্র বিধিব্যবস্থার শেষ নিয়ে আসবেন, তখন তার কী হবে?—গীতসংহিতা ৩৭:৩৭, ৩৮.

সাথির সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা

১৬, ১৭. কেউ কেউ কোন্‌ বিশ্বাসঘাতকতার কাজ করেছিল?

১৬ এরপর মালাখি দ্বিতীয় বিশ্বাসঘাতকতার কথা বলেন: সাথির সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা, বিশেষ করে অন্যায়ভাবে বিবাহবিচ্ছেদ করে। ২ অধ্যায়ের ১৪ পদ জানায়: “সদাপ্রভু তোমার যৌবনকালীন স্ত্রীর ও তোমার মধ্যে সাক্ষী হইয়াছেন; ফলতঃ তুমি তাহার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করিয়াছ; কিন্তু সে তোমার সখী ও তোমার নিয়মের স্ত্রী।” যিহুদি স্বামীরা তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে যিহোবার বেদিকে ‘অশ্রুপাতে আচ্ছন্ন করিয়াছিল।’ (মালাখি ২:১৩) ওই পুরুষরা ছোটখাটো কারণে বিবাহবিচ্ছেদ করছিল, হয়তো কমবয়সী বা পৌত্তলিক মেয়েদের বিয়ে করার জন্য অন্যায়ভাবে তাদের যৌবনের স্ত্রীদের ত্যাগ করেছিল। আর কলুষিত যাজকরা তা করতে দিয়েছিলেন! কিন্তু, মালাখি ২:১৬ পদ ঘোষণা করে: “আমি স্ত্রীত্যাগ ঘৃণা করি, ইহা ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু কহেন।” পরে যীশু দেখিয়েছিলেন যে, বিবাহবিচ্ছেদ করার জন্য অনৈতিকতা হচ্ছে একমাত্র ভিত্তি যে-কারণে নির্দোষ সাথি আবার বিয়ে করতে পারেন।—মথি ১৯:৯.

১৭ মালাখির কথাগুলো নিয়ে চিন্তা করুন এবং দেখুন যে, সেগুলো কীভাবে আমাদের হৃদয় ও দয়ার অনুভূতিকে নাড়া দেয়। তিনি বলেন, “তোমার সখী ও তোমার নিয়মের স্ত্রী।” এর সঙ্গে জড়িত প্রতিটা পুরুষ একজন সহ উপাসক অর্থাৎ একজন ইস্রায়েলীয় মেয়েকে বিয়ে করেছিল, তাকে একজন প্রিয় সঙ্গী অর্থাৎ জীবনসাথি হিসেবে বেছে নিয়েছিল। সম্ভবত তারা দুজনেই যখন কমবয়সী ছিল, তখন তাদের বিয়ে হয়েছিল কিন্তু সময় বয়ে চলার এবং তাদের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের চুক্তি অর্থাৎ বিয়ের চুক্তি বাদ হয়ে যায়নি।

১৮. বিশ্বাসঘাতকতা সম্বন্ধে মালাখির যে-পরামর্শ, তা কীভাবে আজকেও খাটে?

১৮ এই বিষয়গুলোতে যে-পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল, তা আজকেও খাটে। এটা খুবই দুঃখের যে, কেউ কেউ কেবল প্রভুতেই বিয়ে করার বিষয়ে ঈশ্বরের নির্দেশনাকে অসম্মান করেছে। আর এটাও দুঃখজনক যে, কেউ কেউ তাদের বিয়েকে অটুট রাখার জন্য চেষ্টা করে চলেননি। বদলে, তারা অজুহাত দেখান এবং অন্য কাউকে বিয়ে করার জন্য অশাস্ত্রীয়ভাবে বিবাহবিচ্ছেদ করে ঈশ্বর যে-পথকে ঘৃণা করেন সেই পথে চলেন। এইরকম কাজ করে তারা “সদাপ্রভুকে ক্লান্ত করিয়াছে।” মালাখির দিনে যারা ঈশ্বরের পরামর্শ অবজ্ঞা করেছিল, তারা এমনকি যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গিকে অযৌক্তিক বলে মনে করে দুঃসাহস দেখিয়েছিল। আসলে তারা বলেছিল: “বিচারকর্ত্তা ঈশ্বর কোথায়?” কত খারাপ চিন্তাভাবনা! আসুন আমরা যেন সেই ফাঁদে পা না দিই।—মালাখি ২:১৭.

১৯. স্বামী এবং স্ত্রীরা কীভাবে ঈশ্বরের আত্মা পেতে পারেন?

১৯ এটা প্রশংসনীয় যে, মালাখি দেখিয়েছেন কিছু স্বামী তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেননি। তারা ‘ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার অবশিষ্টাংশ ছিল।’ (১৫ পদ) আনন্দের বিষয় হল যে, আজকে ঈশ্বরের সংগঠনে এইরকম অনেক পুরুষ রয়েছেন, যারা ‘তাহাদের স্ত্রীদের সহিত জ্ঞানপূর্ব্বক বাস করেন।’ (১ পিতর ৩:৭) তারা শারীরিক বা মৌখিকভাবে তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন না, বিকৃত যৌন অভ্যাসগুলো করার জন্য জোর করেন না এবং অন্য মহিলার সঙ্গে প্রেমের ভান করে বা অশ্লীলচিত্র দেখে তাদের স্ত্রীদের অসম্মান করেন না। যিহোবার সংগঠন অনেক বিশ্বস্ত খ্রীষ্টান স্ত্রীদের পেয়েও আনন্দিত, যারা ঈশ্বর এবং তাঁর ব্যবস্থাগুলোর প্রতি নিষ্ঠাবান। এইসমস্ত নারী-পুরুষরা জানেন যে, ঈশ্বর কী ঘৃণা করেন এবং তারা এর সঙ্গে মিল রেখে চিন্তা ও কাজ করেন। ‘ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন করিয়া’ সবসময় তাদের মতো হোন এবং তাঁর পবিত্র আত্মা লাভ করে আশীর্বাদপ্রাপ্ত হোন।—প্রেরিত ৫:২৯.

২০. সমস্ত মানবজাতির জন্য কোন্‌ সময় এগিয়ে আসছে?

২০ শীঘ্র এই জগতের ওপর যিহোবা তাঁর বিচার নিয়ে আসবেন। প্রত্যেককে তাদের বিশ্বাস এবং কাজের জন্য তাঁর কাছে নিকাশ দিতে হবে। “আমাদের প্রত্যেক জনকে ঈশ্বরের কাছে আপন আপন নিকাশ দিতে হইবে।” (রোমীয় ১৪:১২) তাই, এক্ষেত্রে একটা আগ্রহজনক প্রশ্ন হল: যিহোবার দিনে কারা রক্ষা পাবে? এই ধারাবাহিক আলোচনার তৃতীয় এবং শেষ প্রবন্ধে এই বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করা হবে।

আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?

• মূলত কোন্‌ কারণে যিহোবা ইস্রায়েলের যাজকদের ভর্ৎসনা করেছিলেন?

• মানুষের পক্ষে ঈশ্বরের মানগুলো মেনে চলা কেন অসম্ভব নয়?

• আজকে আমাদের শিক্ষার বিষয়ে আমরা কেন সাবধান হব?

• বিশেষ করে কোন্‌ দুটো অভ্যাসের জন্য যিহোবা নিন্দা করেন?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

মালাখির দিনে যাজকরা যিহোবার পথে না থাকায় তাদেরকে ভর্ৎসনা করা হয়েছিল

[১৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

নিজেদের ধারণা তুলে না ধরে যিহোবার পথ সম্বন্ধে শেখানোর বিষয়ে আমাদের সাবধান থাকতে হবে

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

যে-ইস্রায়েলীয়রা ছোটখাটো কারণে তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ করেছিল এবং পৌত্তলিক মেয়েদের বিয়ে করেছিল, তাদেরকে যিহোবা নিন্দা করেছিলেন

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

আজকে খ্রীষ্টানরা তাদের বিয়ের চুক্তির প্রতি সম্মান দেখান