সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যাদের প্রয়োজন তাদের প্রতি প্রেমপূর্ণ-দয়া দেখান

যাদের প্রয়োজন তাদের প্রতি প্রেমপূর্ণ-দয়া দেখান

যাদের প্রয়োজন তাদের প্রতি প্রেমপূর্ণ-দয়া দেখান

“প্রত্যেকে আপন আপন ভ্রাতার সহিত সদয় [“প্রেমপূর্ণ-দয়ার,” Nw] . . . ব্যবহার কর।”সখরিয় ৭:৯.

১, ২. (ক) কেন আমাদের প্রেমপূর্ণ-দয়া দেখানো উচিত? (খ) কোন্‌ প্রশ্নগুলো আমরা বিবেচনা করব?

 যিহোবার বাক্য আমাদের পরামর্শ দেয়, যেন আমরা “প্রেমপূর্ণ-দয়া” ভালবাসি। (মীখা ৬:৮, পাদটীকা, NW) কেন তা করা উচিত, সেই কারণ সম্বন্ধেও এটা আমাদের জানায়। একটা কারণ হল, “দয়ালু [“প্রেমপূর্ণ-দয়া আছে এমন ব্যক্তি,” NW] আপন প্রাণের উপকার করে।” (হিতোপদেশ ১১:১৭) কতই না সত্যি! প্রেমপূর্ণ-দয়া বা অনুগত প্রেম দেখানো অন্যদের সঙ্গে উষ্ণ এবং স্থায়ী বন্ধন গড়ে তোলে। এর ফলে আমরা অনুগত বন্ধুদের পাই, যা সত্যিই এক মূল্যবান পুরস্কার!—হিতোপদেশ ১৮:২৪.

এ ছাড়া, শাস্ত্র আমাদেরকে বলে: “যে ধার্ম্মিকতার ও দয়ার [“প্রেমপূর্ণ-দয়ার,” NW] অনুগামী হয়, সে জীবন . . . পায়।” (হিতোপদেশ ২১:২১) হ্যাঁ, আমরা যদি প্রেমপূর্ণ-দয়া দেখিয়ে চলি, তা আমাদেরকে ঈশ্বরের কাছে প্রিয় করে তুলবে এবং ভবিষ্যতে আশীর্বাদ ও সেইসঙ্গে অনন্ত জীবন পাওয়ার সুযোগ করে দেবে। কিন্তু, কীভাবে আমরা প্রেমপূর্ণ-দয়া দেখাতে পারি? কাদের প্রতি আমাদের তা দেখানো উচিত? আর প্রেমপূর্ণ-দয়া কি স্বাভাবিক সৌজন্যবোধ বা সাধারণত যে-দয়া দেখানো হয়, তার চেয়ে আলাদা?

সৌজন্যবোধ এবং প্রেমপূর্ণ-দয়া

৩. প্রেমপূর্ণ-দয়া কীভাবে সৌজন্যবোধ থেকে আলাদা?

স্বাভাবিক সৌজন্যবোধ এবং প্রেমপূর্ণ-দয়া বিভিন্ন দিক দিয়ে আলাদা। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যারা সৌজন্যবোধ দেখায় তারা প্রায়ই অন্যদের প্রতি গভীর ও ব্যক্তিগত অনুরাগ বা তাদের সঙ্গে সম্পর্ক না থাকলেও দয়া দেখিয়ে আচরণ করে। কিন্তু, আমরা যদি কারও প্রতি প্রেমপূর্ণ-দয়া দেখাই, তা হলে আমরা প্রেম সহকারে সেই ব্যক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হই। বাইবেলে মানুষদের মধ্যে যে-প্রেমপূর্ণ-দয়ার অভিব্যক্তিগুলো রয়েছে, তার কারণ হয়তো তাদের মধ্যে ইতিমধ্যেই সম্পর্ক ছিল। (আদিপুস্তক ২০:১৩; ২ শমূয়েল ৩:৮; ১৬:১৭) অথবা আগে কোন প্রেমপূর্ণ-দয়া দেখানোর কারণে তাদের মধ্যে একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। (যিহোশূয়ের পুস্তক ২:১, ১২-১৪; ১ শমূয়েল ১৫:৬; ২ শমূয়েল ১০:১, ২) এই পার্থক্যটা স্পষ্টভাবে তুলে ধরার জন্য আসুন আমরা বাইবেলের দুটো উদাহরণ বিবেচনা করি, একটা হল মানুষের একে অপরের প্রতি দেখানো সৌজন্যবোধ এবং আরেকটা হল প্রেমপূর্ণ-দয়া।

৪, ৫. এখানে বাইবেলের যে-দুটো উদাহরণ তুলে ধরা হয়েছে, সেগুলো কীভাবে সৌজন্যবোধ এবং প্রেমপূর্ণ-দয়ার মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য তুলে ধরে?

সৌজন্যবোধের একটা উদাহরণে প্রেরিত পৌল সহ একদল জাহাজডুবি লোক জড়িত রয়েছে। তারা মিলিতা দ্বীপের উপকূলে ভেসে যায়। (প্রেরিত ২৭:৩৭–২৮:১) যদিও মিলিতা দ্বীপের অধিবাসীরা এই অসহায় যাত্রীদের প্রতি অনুগ্রহ দেখাতে বাধ্য ছিল না বা তাদেরকে তারা চিনত না, তবুও সেই দ্বীপের অধিবাসীরা এই অপরিচিত ব্যক্তিদেরকে সাদর অভ্যর্থনা জানায় এবং তাদের প্রতি “অসাধারণ সৌজন্য” দেখায়। (প্রেরিত ২৮:২, ৭) তাদের এই আতিথেয়তায় দয়া ছিল কিন্তু এটা ছিল আকস্মিক ঘটনা এবং অপরিচিতদের প্রতি তা দেখানো হয়েছিল। তাই এটা ছিল সৌজন্যবোধ।

এর বিপরীতে, রাজা দায়ূদ তার বন্ধু যোনাথনের ছেলে মফীবোশতের প্রতি যে-আতিথেয়তা দেখিয়েছিলেন সেটা বিবেচনা করুন। মফীবোশৎকে দায়ূদ বলেছিলেন: “তুমি নিত্য আমার মেজে ভোজন করিবে।” কেন তিনি এই ব্যবস্থা করছিলেন, সেই সম্বন্ধে বুঝিয়ে বলার পর দায়ূদ তাকে বলেছিলেন: “আমি তোমার পিতা যোনাথনের নিমিত্ত অবশ্য তোমার প্রতি দয়া [“প্রেমপূর্ণ-দয়া,” NW] করিব।” (২ শমূয়েল ৯:৬, ৭, ১৩) দায়ূদের অফুরন্ত আতিথেয়তাকে উপযুক্তভাবেই কেবল সৌজন্যবোধ নয় কিন্তু প্রেমপূর্ণ-দয়ার কাজও বলা যায় কারণ এটা ছিল এক প্রতিষ্ঠিত সম্পর্কের প্রতি তার আনুগত্যের প্রমাণ। (১ শমূয়েল ১৮:৩; ২০:১৫, ৪২) একইভাবে, আজকে ঈশ্বরের দাসেরা সব লোকেদের প্রতি সৌজন্যবোধ দেখান। কিন্তু, যাদের সঙ্গে তাদের এক ঈশ্বর অনুমোদিত সম্পর্ক রয়েছে, তাদের প্রতি তারা অফুরন্ত প্রেমপূর্ণ-দয়া বা অনুগত প্রেম দেখান।—মথি ৫:৪৫; গালাতীয় ৬:১০.

৬. মানুষের মধ্যে যে-প্রেমপূর্ণ-দয়া দেখানো হয়েছে, তার কোন্‌ বৈশিষ্ট্যগুলো বাইবেলে তুলে ধরা হয়েছে?

প্রেমপূর্ণ-দয়ার আরও কিছু বৈশিষ্ট্য চেনার জন্য আমরা সংক্ষেপে বাইবেলের তিনটে ঘটনা বিবেচনা করব, যা এই গুণকে তুলে ধরে। এর থেকে আমরা দেখব যে, মানুষ যে-প্রেমপূর্ণ-দয়া দেখিয়েছে তা (১) নির্দিষ্ট কাজের মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, (২) স্বেচ্ছায় দেখানো হয়েছে এবং (৩) বিশেষ করে যাদের দরকার তাদের প্রতি দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া, এই বিবরণগুলো দেখায় যে, আজকে আমরা কীভাবে প্রেমপূর্ণ-দয়া দেখাতে পারি।

একজন বাবা প্রেমপূর্ণ-দয়া দেখান

৭. বথূয়েল এবং লাবনকে অব্রাহামের দাস কী বলেছিলেন এবং তিনি কোন্‌ বিষয়টা উত্থাপন করেছিলেন?

আদিপুস্তক ২৪:২৮-৬৭ পদে আগের প্রবন্ধে বলা অব্রাহামের দাসের বাকি গল্প বর্ণনা করা হয়েছে। রিবিকার সঙ্গে দাসের দেখা হওয়ার পর তাকে তার বাবা বথূয়েলের ঘরে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। (২৮-৩২ পদ) সেখানে গিয়ে সেই দাস অব্রাহামের ছেলের জন্য স্ত্রী খোঁজার বিষয়ে বিস্তারিত জানান। (৩৩-৪৭ পদ) তিনি জোর দিয়ে বলেছিলেন যে, এই পর্যন্ত তিনি যে-সফলতা লাভ করেছেন, সেগুলোকে যিহোবার কাছ থেকে পাওয়া এক চিহ্ন হিসেবে দেখেন, “যিনি আমার কর্ত্তার পুত্ত্রের জন্য তাঁহার ভ্রাতৃকন্যা গ্রহণার্থে আমাকে প্রকৃত পথে আনিলেন।” (৪৮ পদ) নিঃসন্দেহে সেই দাস আশা করেছিলেন যে, তার এই আন্তরিক ঘটনা বথূয়েল এবং তার ছেলে লাবনকে নিশ্চিত করবে যে, এই কাজের পিছনে যিহোবা আছেন। অবশেষে ওই দাস বলেছিলেন: “আপনারা যদি এখন আমার কর্ত্তার সহিত দয়া [“প্রেমপূর্ণ-দয়া,” NW] ও সত্য ব্যবহার করিতে সম্মত হন, তাহা বলুন; আর যদি না হন, তাহাও বলুন; তাহাতে আমি দক্ষিণে কিম্বা বামে ফিরিতে পারিব।”—৪৯ পদ।

৮. রিবিকার সঙ্গে জড়িত ঘটনার প্রতি বথূয়েল কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন?

ইতিমধ্যেই যিহোবা অব্রাহামের প্রতি অনেক প্রেমপূর্ণ-দয়া দেখিয়েছিলেন। (আদিপুস্তক ২৪:১২, ১৪, ২৭) রিবিকাকে অব্রাহামের দাসের সঙ্গে যেতে দিয়ে বথূয়েলও কি একই বিষয় করবেন? মানুষের প্রেমপূর্ণ-দয়া কি ঈশ্বরের প্রেমপূর্ণ-দয়ার পরিপূরক হবে? নাকি দাসের এই দীর্ঘযাত্রা ব্যর্থ হয়ে যাবে? “সদাপ্রভু হইতে এই ঘটনা হইল,” লাবন এবং বথূয়েলের মুখ থেকে এইরকম কথা শুনে অব্রাহামের দাস নিশ্চয়ই অনেক সান্ত্বনা পেয়েছিলেন। (৫০ পদ) তারা বুঝতে পেরেছিলেন যে, এই ব্যাপারে যিহোবার হাত রয়েছে আর তাই কোন দ্বিধা না করে তার সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছিলেন। এরপর বথূয়েল এই কথা বলে তার প্রেমপূর্ণ-দয়া দেখিয়েছিলেন: “ঐ দেখুন, রিবিকা আপনার সম্মুখে আছে; উহাকে লইয়া প্রস্থান করুন; এ আপনার কর্ত্তার পুত্ত্রের ভার্য্যা হউক, যেমন সদাপ্রভু বলিয়াছেন।” (৫১ পদ) রিবিকা স্বেচ্ছায় অব্রাহামের দাসের সঙ্গে গিয়েছিলেন এবং শীঘ্রই ইস্‌হাকের প্রিয়তমা স্ত্রী হয়েছিলেন।—৪৯, ৫২-৫৮, ৬৭ পদ।

একজন পুত্র প্রেমপূর্ণ-দয়া দেখান

৯, ১০. (ক) যাকোব তার ছেলে যোষেফকে তার জন্য কী করতে বলেছিলেন? (খ) যোষেফ কীভাবে তার বাবার প্রতি প্রেমপূর্ণ-দয়া দেখিয়েছিলেন?

অব্রাহামের নাতি যাকোবও প্রেমপূর্ণ-দয়া পেয়েছিলেন। আদিপুস্তক ৪৭ অধ্যায় যেমন দেখায় যে, যাকোব সেই সময় মিশরে থাকতেন এবং “[তার] মরণ দিন সন্নিকট হইল।” (২৭-২৯ পদ) তিনি খুবই উদ্বিগ্ন ছিলেন কারণ ঈশ্বর অব্রাহামের কাছে যে-দেশের বিষয়ে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন সেই দেশের বাইরে তিনি মারা যাবেন। (আদিপুস্তক ১৫:১৮; ৩৫:১০, ১২; ৪৯:২৯-৩২) কিন্তু, যাকোব মিশরে কবরপ্রাপ্ত হতে চাননি বলে তিনি মারা গেলে তার মৃতদেহ যাতে কনানে নিয়ে যাওয়া হয়, সেই ব্যবস্থা করেছিলেন। তার ইচ্ছা পূরণ করার জন্য তার প্রভাবশালী ছেলে যোষেফের চেয়ে ভাল অবস্থানে আর কে-ই-বা ছিল?

১০ বিবরণ বলে যে: “তখন [যাকোব] আপন পুত্ত্র যোষেফকে ডাকাইয়া কহিলেন, আমি যদি তোমার দৃষ্টিতে অনুগ্রহ পাইয়া থাকি, . . . আমার প্রতি সদয় [“প্রেমপূর্ণ দয়া,” NW] ও সত্য ব্যবহার কর; মিসরে আমাকে কবর দিও না। আমি যখন আপন পিতৃপুরুষদের নিকটে শয়ন করিব, তখন তুমি আমাকে মিসর হইতে লইয়া গিয়া তাঁহাদের কবরস্থানে কবরশায়ী করিও।” (আদিপুস্তক ৪৭:২৯, ৩০) যোষেফ প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, তিনি এই অনুরোধ রাখবেন আর এর কিছু পরেই যাকোব মারা যান। যোষেফ এবং যাকোবের অন্য ছেলেরা তার মৃতদেহ “কনান দেশে” নিয়ে যান “এবং . . . মক্‌পেলা ক্ষেত্রের মধ্যবর্ত্তী গুহাতে তাঁহার কবর দিলেন, যাহা অব্রাহাম . . . ক্রয় করিয়াছিলেন।” (আদিপুস্তক ৫০:৫-৮, ১২-১৪) এভাবে যোষেফ তার বাবার প্রতি প্রেমপূর্ণ-দয়া দেখিয়েছিলেন।

একজন পুত্রবধূ প্রেমপূর্ণ-দয়া দেখান

১১, ১২. (ক) রূৎ কীভাবে নয়মীর প্রতি প্রেমপূর্ণ-দয়া দেখিয়েছিলেন? (খ) রূতের ‘শেষ’ কাজ কীভাবে ‘প্রথম’ কাজের চেয়ে উৎকৃষ্ট ছিল?

১১ রূতের বিবরণ বলে যে, কীভাবে বিধবা নয়মী তার মোয়াবীয় পুত্রবধূ রূতের কাছ থেকে প্রেমপূর্ণ-দয়া পেয়েছিলেন। নয়মী যখন যিহূদার বৈৎলেহমে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তখন রূৎ এই কথাগুলো বলে প্রেমপূর্ণ-দয়া এবং তার দৃঢ় সিদ্ধান্ত প্রকাশ করেছিলেন, “তুমি যেখানে যাইবে, আমিও তথায় যাইব; এবং তুমি যেখানে থাকিবে, আমিও তথায় থাকিব; তোমার লোকই আমার লোক, তোমার ঈশ্বরই আমার ঈশ্বর।” (রূতের বিবরণ ১:১৬) পরে নয়মীর এক বয়স্ক আত্মীয় বোয়সকে স্বেচ্ছায় বিয়ে করে রূৎ তার প্রেমপূর্ণ-দয়া দেখিয়েছিলেন। * (দ্বিতীয় বিবরণ ২৫:৫, ৬; রূতের বিবরণ ৩:৬-৯) বোয়স রূৎকে বলেছিলেন: “ধনবান কি দরিদ্র কোন যুবা পুরুষের অনুগামিনী না হওয়াতে তুমি প্রথমাপেক্ষা শেষে অধিক সুশীলতা দেখাইলে।”—রূতের বিবরণ ৩:১০.

১২ রূৎ ‘প্রথম’ প্রেমপূর্ণ-দয়া দেখিয়েছিলেন যখন তিনি তার লোকেদেরকে ছেড়ে এসে নয়মীর সঙ্গে সঙ্গে ছিলেন। (রূতের বিবরণ ১:১৪; ২:১১) এমনকি সেই কাজের চেয়ে ‘শেষে’ দেখানো প্রেমপূর্ণ-দয়া অর্থাৎ রূতের স্বেচ্ছায় বোয়সকে বিয়ে করা আরও উৎকৃষ্ট কাজ ছিল। রূৎ এখন নয়মীর জন্য এক উত্তরাধিকার জন্ম দিতে পারবেন, যার সন্তান জন্ম দেওয়ার মতো বয়স আর ছিল না। এরপর রূতের বিয়ে হয় এবং পরে তিনি যখন সন্তান জন্ম দেন, তখন বৈৎলেহমের মহিলারা বলেছিল: “নয়মীর এক পুত্ত্র জন্মিল।” (রূতের বিবরণ ৪:১৪, ১৭) রূৎ সত্যিই একজন “সাধ্বী [“চমৎকার মহিলা,” NW]” ছিলেন, যিনি এভাবে যীশু খ্রীষ্টের পূর্বপুরুষ হওয়ার অপূর্ব সুযোগ পেয়ে যিহোবার কাছ থেকে পুরস্কৃত হয়েছিলেন।—রূতের বিবরণ ২:১২; ৩:১১; ৪:১৮-২২; মথি ১:১, ৫, ৬.

কাজের মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে

১৩. বথূয়েল, যোষেফ এবং রূৎ কীভাবে তাদের প্রেমপূর্ণ-দয়া প্রকাশ করেছিলেন?

১৩ আপনি কি লক্ষ্য করেছেন যে, বথূয়েল, যোষেফ এবং রূৎ কীভাবে তাদের প্রেমপূর্ণ-দয়া প্রকাশ করেছেন? শুধু দয়া দেখিয়ে কথা বলার মাধ্যমেই নয় কিন্তু নির্দিষ্ট কাজের মাধ্যমে তারা তা দেখিয়েছেন। বথূয়েল শুধু বলেননি, “ঐ দেখুন, রিবিকা” কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তিনি “রিবিকাকে . . . বিদায় করিলেন।” (আদিপুস্তক ২৪:৫১, ৫৯) যোষেফ কেবল মুখেই বলেননি যে, “আপনি যাহা বলিলেন, তাহাই করিব” কিন্তু তিনি এবং তার ভাইয়েরা যাকোব “যেরূপ আজ্ঞা দিয়াছিলেন, তাঁহারা তদনুসারে” করেছিলেন। (আদিপুস্তক ৪৭:৩০; ৫০:১২, ১৩) আর রূৎও কেবল বলেননি, “তুমি যেখানে যাইবে, আমিও তথায় যাইব” কিন্তু তিনি নিজের লোকেদেরকে ছেড়ে নয়মীর সঙ্গে গিয়েছিলেন, তাই “তাহারা দুই জন চলিতে চলিতে শেষে বৈৎলেহমে উপস্থিত হইল।” (রূতের বিবরণ ১:১৬, ১৯) যিহূদায় রূৎ আবারও “তাহার শাশুড়ী যাহা যাহা আদেশ করিয়াছিল, সমস্তই করিল।” (রূতের বিবরণ ৩:৬) হ্যাঁ, অন্যান্যদের মতো রূতের প্রেমপূর্ণ-দয়া কাজের মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছিল।

১৪. (ক) আজকের দিনে ঈশ্বরের দাসেরা কীভাবে কাজের মাধ্যমে প্রেমপূর্ণ-দয়া দেখান? (খ) আপনার এলাকায় খ্রীষ্টানদের মধ্যে প্রেমপূর্ণ-দয়ার কোন্‌ কাজগুলো সম্বন্ধে আপনি জানেন?

১৪ যিহোবার দাসেরা আজকে তাদের কাজের মাধ্যমে যেভাবে প্রেমপূর্ণ-দয়া দেখিয়ে চলেছেন, তা দেখা খুবই আনন্দদায়ক। উদাহরণ হিসেবে, দুর্বল, হতাশ বা গভীর শোকে জর্জরিত সহ বিশ্বাসীদেরকে যারা অফুরন্ত মানসিক সাহায্য জোগান, তাদের কথা চিন্তা করুন। (হিতোপদেশ ১২:২৫) অথবা এমন অনেক যিহোবার সাক্ষিদের কথা ভেবে দেখুন, যারা বয়স্ক ব্যক্তিরা যাতে মণ্ডলীর সাপ্তাহিক সভাগুলোতে যোগ দিতে পারেন সেইজন্য ভালভাবে গাড়ি চালিয়ে তাদেরকে কিংডম হলে নিয়ে আসেন। ৮২ বছর বয়স্কা আ্যনা আরথ্রাইটিসে ভুগছেন আর তিনি অনেকের প্রতি তার অনুভূতির কথা প্রকাশ করেন, এই বলে: “সবকটা সভায় যোগ দেওয়ার জন্য গাড়িতে করে যেতে পারা যিহোবার কাছ থেকে এক আশীর্বাদ। এইরকম প্রেমময় ভাইবোনদের জন্য আমি হৃদয়ের গভীর থেকে তাঁকে ধন্যবাদ জানাই।” আপনার মণ্ডলীতে আপনি কি এইরকম কাজ করছেন? (১ যোহন ৩:১৭, ১৮) যদি করে থাকেন, তা হলে নিশ্চিত হোন যে, আপনার প্রেমপূর্ণ-দয়াকে গভীরভাবে উপলব্ধি করা হয়।

স্বেচ্ছায় করেছেন

১৫. আমরা যে-তিনটে বাইবেলের বিবরণ বিবেচনা করলাম, সেখানে প্রেমপূর্ণ-দয়ার আর কোন্‌ বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধরা হয়েছে?

১৫ বাইবেলের যে-বিবরণগুলো আমরা বিবেচনা করেছি সেগুলো এও দেখায় যে, প্রেমপূর্ণ-দয়া জোর করে নয় কিন্তু বিনামূল্যে এবং স্বেচ্ছায় দেখানো হয়। বথূয়েল স্বেচ্ছায় অব্রাহামের দাসকে সহযোগিতা করেছিলেন এবং রিবিকাও তা-ই করেছিলেন। (আদিপুস্তক ২৪:৫১, ৫৮) যোষেফ যে-প্রেমপূর্ণ-দয়া দেখিয়েছিলেন, সেটার জন্য অন্যেরা তাকে প্রেরণা দেয়নি। (আদিপুস্তক ৫০:৪, ৫) রূৎ ‘[নয়মীর] সহিত যাইতে দৃঢ় মনস্থ ছিলেন।’ (রূতের বিবরণ ১:১৮) নয়মী যখন রূৎকে বোয়সের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন, তখন প্রেমপূর্ণ-দয়া এই মোয়াবীয় কন্যাকে এই কথা বলতে প্রেরণা দিয়েছিল: “তুমি যাহা বলিতেছ, সে সমস্তই আমি করিব।”—রূতের বিবরণ ৩:১-৫.

১৬, ১৭. বথূয়েল, যোষেফ এবং রূতের প্রেমপূর্ণ-দয়াকে কোন্‌ বিষয়টা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছে এবং এই গুণ দেখানোর জন্য কী তাদেরকে প্রেরণা দিয়েছে?

১৬ বথূয়েল, যোষেফ এবং রূৎ যে-প্রেমপূর্ণ-দয়া দেখিয়েছিলেন তা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ কারণ অব্রাহাম, যাকোব এবং নয়মী তাদেরকে জোর করে কিছু করাতে পারতেন না। শত হলেও, বথূয়েল তার মেয়েকে দূর দেশে বিদায় দেওয়ার ব্যাপারে আইনত বাধ্য ছিলেন না। তিনি খুব সহজেই অব্রাহামের দাসকে বলতে পারতেন: ‘না, আমি চাই আমার পরিশ্রমী মেয়ে আমার কাছাকাছি থাকুক।’ (আদিপুস্তক ২৪:১৮-২০) একইভাবে, যোষেফও তার বাবার অনুরোধ পালন করা না করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে স্বাধীন ছিলেন, কারণ যাকোব মারা যেতেন এবং তার কথা রাখার জন্য তাকে বাধ্যও করতে পারতেন না। নয়মী নিজে বলেছিলেন যে, মোয়াবে থাকার জন্য তিনি রূৎকে মুক্ত করে দিয়েছেন। (রূতের বিবরণ ১:৮) এ ছাড়া, রূৎ বয়স্ক বোয়সকে বিয়ে করার বদলে একজন ‘যুবা পুরুষকে’ বিয়ে করার জন্য স্বাধীন ছিলেন।

১৭ বথূয়েল, যোষেফ এবং রূৎ স্বেচ্ছায় প্রেমপূর্ণ-দয়া দেখিয়েছেন; তারা তা দেখানোর জন্য তাদের হৃদয় থেকে প্রেরণা পেয়েছিলেন। যাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল, তাদের প্রতি এই গুণ দেখানোকে তারা এক নৈতিক দায়িত্ব মনে করেছিলেন, ঠিক যেমন রাজা দায়ূদ পরে মফীবশতের প্রতি তা দেখানোর বাধ্যবাধকতা বোধ করেছিলেন।

১৮. (ক) কোন্‌ মনোভাব নিয়ে খ্রীষ্টান প্রাচীনরা ‘পালের পালন করেন’? (খ) সহ বিশ্বাসীদের সাহায্য করার বিষয়ে একজন প্রাচীন কীভাবে তার অনুভূতি প্রকাশ করেছেন?

১৮ প্রেমপূর্ণ-দয়া এখনও ঈশ্বরের লোকেদের ও সেইসঙ্গে যারা ঈশ্বরের পালের দেখাশোনা করেন তাদের একটা বৈশিষ্ট্য। (গীতসংহিতা ১১০:৩; ১ থিষলনীকীয় ৫:১২) এই প্রাচীন বা অধ্যক্ষদের নিযুক্ত করে তাদের ওপর যে-আস্থা রাখা হয়েছে, সেই অনুসারে চলাকে তারা তাদের দায়িত্ব বলে মনে করেন। (প্রেরিত ২০:২৮) তা সত্ত্বেও, তাদের পালকের কাজ ও সেইসঙ্গে মণ্ডলীর লোকেদের জন্য প্রেমপূর্ণ-দয়ার অন্যান্য কাজগুলো তারা “আবশ্যকতা প্রযুক্ত নয়, কিন্তু ইচ্ছাপূর্ব্বক” করেন। (১ পিতর ৫:২) প্রাচীনরা পালের দেখাশোনা করেন কারণ তা তাদের দায়িত্ব এবং তা করার ইচ্ছা তাদের আছে। তারা খ্রীষ্টের পালের প্রতি প্রেমপূর্ণ-দয়া দেখান কারণ তাদের তা করা উচিত এবং তারা তা করতে চান। (যোহন ২১:১৫-১৭) একজন খ্রীষ্টান প্রাচীন বলেন, ‘ভাইবোনদের জন্য আমি যে চিন্তা করি, তা দেখানোর জন্য আমি তাদের বাড়িতে যেতে বা টেলিফোনে তাদের সঙ্গে কথা বলতে ভালবাসি। ভাইবোনদের সাহায্য করা আমার জন্য আনন্দের এক বড় উৎস এবং পরিতৃপ্তিদায়ক!’ সব জায়গার যত্নবান প্রাচীনরা এই বিষয়ের সঙ্গে পূর্ণহৃদয়ে একমত।

যাদের প্রয়োজন তাদের প্রতি প্রেমপূর্ণ-দয়া দেখান

১৯. এই প্রবন্ধে বাইবেলের যে-ঘটনাগুলো আলোচনা করা হয়েছে, সেখানে প্রেমপূর্ণ-দয়ার কোন্‌ বিষয়টার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে?

১৯ বাইবেলের যে-ঘটনাগুলো আমরা আলোচনা করেছি, তা এই বিষয়টার ওপরও জোর দেয় যে, প্রেমপূর্ণ-দয়া তাদের প্রতিও দেখানো দরকার যাদের প্রয়োজন রয়েছে কিন্তু তা পূরণ করার মতো ক্ষমতা নেই। অব্রাহামের বংশ রক্ষার জন্য বথূয়েলের সাহায্যের দরকার ছিল। যাকোবের মৃতদেহ কনানে নিয়ে যাওয়ার জন্য যোষেফের সাহায্যের দরকার ছিল। আর উত্তরাধিকার জন্ম দেওয়ার জন্য নয়মীর রূতের সাহায্যের দরকার ছিল। অব্রাহাম, যাকোব বা নয়মী কেউই সাহায্য ছাড়া এই প্রয়োজনগুলো পূরণ করতে পারতেন না। একইভাবে, আজকে বিশেষ করে যাদের প্রয়োজন, তাদের প্রতি প্রেমপূর্ণ-দয়া দেখানো হয়। (হিতোপদেশ ১৯:১৭) কুলপতি ইয়োবকে অনুকরণ করা উচিত, যিনি ‘আর্ত্তনাদকারী দুঃখী, এবং পিতৃহীন ও অসহায়দের’ ও সেইসঙ্গে ‘নষ্টকল্পের’ প্রতি মনোযোগ দিয়েছিলেন। এ ছাড়া ইয়োব ‘বিধবার চিত্তকে আনন্দিত’ করেছিলেন এবং ‘অন্ধের চক্ষু ও খঞ্জের চরণ’ হয়েছিলেন।—ইয়োব ২৯:১২-১৫.

২০, ২১. কাদের প্রতি আমাদের প্রেমপূর্ণ-দয়া দেখাতে হবে এবং আমাদের সকলের কী করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হতে হবে?

২০ আসলে, প্রত্যেক খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতে ‘আর্ত্তনাদকারী দুঃখী’ রয়েছে। আর সম্ভবত একাকীত্ব, নিরুৎসাহ, নিজেকে অযোগ্য মনে করা, হতাশা, গুরুতর অসুস্থতা বা প্রিয়জনের মৃত্যুর কারণে এইরকম হয়ে থাকে। কারণ যা-ই হোক না কেন, এই সমস্ত প্রিয় ব্যক্তিদের এমন কিছুর প্রয়োজন রয়েছে, যা আমাদের স্বেচ্ছাপূর্ণ এবং অফুরন্ত প্রেমপূর্ণ-দয়ার কাজের মাধ্যমে পূরণ করা যেতে পারে এবং করা উচিত।—১ থিষলনীকীয় ৫:১৪.

২১ তাই, আসুন আমরা যিহোবা ঈশ্বরকে অনুকরণ করে চলি, যিনি “দয়াতে [“প্রেমপূর্ণ-দয়াতে,” NW] মহান্‌।” (যাত্রাপুস্তক ৩৪:৬; ইফিষীয় ৫:১) বিশেষ করে যাদের দরকার তাদের জন্য স্বেচ্ছায় নির্দিষ্ট কাজ করে আমরা তা করতে পারি। আর এটা নিশ্চিত যে, আমরা যদি ‘আপন আপন ভ্রাতার প্রতি সদয় [“প্রেমপূর্ণ-দয়ার,” NW] ব্যবহার করি,’ তা হলে আমরা যিহোবাকে সম্মান করব এবং প্রচুর আনন্দ পাব।—সখরিয় ৭:৯.

[পাদটীকা]

^ এখানে কোন্‌ ধরনের বিয়ে হয়েছে, সেই সম্বন্ধে বিস্তারিত জানার জন্য যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত শাস্ত্রের প্রতি অর্ন্তদৃষ্টি (ইংরেজি) এর প্রথম খণ্ডের ৩৭০ পৃষ্ঠা দেখুন।

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• প্রেমপূর্ণ-দয়া কীভাবে সৌজন্যবোধ থেকে আলাদা?

• বথূয়েল, যোষেফ এবং রূৎ কোন্‌ কোন্‌ উপায়ে প্রেমপূর্ণ-দয়া দেখিয়েছিলেন?

• কোন্‌ মনোভাব নিয়ে আমাদের প্রেমপূর্ণ-দয়া দেখাতে হবে?

• কাদের প্রতি আমাদের প্রেমপূর্ণ-দয়া দেখাতে হবে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

বথূয়েল কীভাবে প্রেমপূর্ণ-দয়া দেখিয়েছিলেন?

[২১ পৃষ্ঠার চিত্র]

রূতের অনুগত প্রেম নয়মীর জন্য আশীর্বাদ নিয়ে এসেছিল

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

সৌজন্যবোধ স্বেচ্ছায় এবং নির্দিষ্ট কাজের মাধ্যমে দেখানো হয় আর যাদের দরকার তাদের প্রতি দেখানো হয়