যিহোবার ধার্মিকতায় আনন্দ খুঁজে নিন
যিহোবার ধার্মিকতায় আনন্দ খুঁজে নিন
“যে ধার্ম্মিকতার ও দয়ার অনুগামী হয়, সে জীবন, ধার্ম্মিকতা ও সম্মান পায়।” —হিতোপদেশ ২১:২১.
১. আজকে লোকেদের কোন্ পথ দুর্দশার দিকে পরিচালিত করেছে?
“একটী পথ আছে, যাহা মানুষের দৃষ্টিতে সরল, কিন্তু তাহার পরিণাম মৃত্যুর পথ।” (হিতোপদেশ ১৬:২৫) বাইবেলের এই প্রবাদ বর্তমান দিনের বেশির ভাগ লোকের পথ সম্বন্ধে কত নিখুঁতভাবে বর্ণনা করে! লোকেরা সাধারণত শুধু তাদের দৃষ্টিতে যেটা ঠিক, সেটা করার বিষয়ে চিন্তা করে, এমনকি অন্যদের মৌলিক চাহিদাগুলোকেও তুচ্ছ করে। (হিতোপদেশ ২১:২) তারা শুধু মুখেই দেশের আইন এবং মানগুলো মেনে চলে বলে দাবি করে কিন্তু প্রতিটা সুযোগে তারা সেগুলো পরোক্ষভাবে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। এর ফলে সমাজে ভাঙন, দ্বন্দ্ব এবং বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়।—২ তীমথিয় ৩:১-৫.
২. মানুষের উপকারের জন্য কী খুবই জরুরি?
২ আমাদের নিজেদের উপকার ও সেইসঙ্গে পুরো মানব পরিবারের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য এমন একটা আইন বা মান খুবই জরুরি, যা ন্যায্য ও সঠিক এবং যেটা সমস্ত লোকেরা স্বেচ্ছায় মেনে নেবে ও পালন করবে। এটা স্পষ্ট যে, মানুষ যত জ্ঞানী বা আন্তরিকই হোক না কেন, তাদের তৈরি কোন আইন বা মান সেই প্রয়োজন মেটাতে পারে না। (যিরমিয় ১০:২৩; রোমীয় ৩:১০, ২৩) এইরকম একটা মান যদি থেকেই থাকে, তা হলে কোথায় তা পাওয়া যেতে পারে এবং সেটা কেমন হবে? সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হতে পারে, এই মান যদি থাকেই, তা হলে আপনি কি তাতে আনন্দ করবেন এবং মেনে চলবেন?
ধার্মিক মান খুঁজে পাওয়া
৩. সকলে মেনে নেবে এবং সবার জন্য উপকারী, এমন একটা মান নির্ধারণ করার জন্য কে সবচেয়ে যোগ্য এবং কেন?
৩ সকলে মেনে নেবে এবং সবার জন্য উপকারী, এমন একটা মান খুঁজে বের করার জন্য আমাদের এমন একজনের কাছে যেতে হবে, যার মধ্যে জাতিগত, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কোন সীমাবদ্ধতা নেই এবং মানুষের অদূরদর্শিতা ও দুর্বলতা যাকে বাধা দিতে পারে না। নিঃসন্দেহে, সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তা যিহোবা ঈশ্বরই হলেন একমাত্র যোগ্য ব্যক্তি, যিনি ঘোষণা করেন: “ভূতল হইতে আকাশমণ্ডল যত উচ্চ, তোমাদের পথ হইতে আমার পথ, ও তোমাদের সঙ্কল্প হইতে আমার সঙ্কল্প তত উচ্চ।” (যিশাইয় ৫৫:৯) এ ছাড়া, বাইবেলে যিহোবাকে এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, “বিশ্বাস্য ঈশ্বর, তাঁহাতে অন্যায় নাই; তিনিই ধর্ম্মময় ও সরল।” (দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৪) বাইবেলের সমস্ত জায়গায় আমরা এই কথাগুলো পাই, ‘সদাপ্রভু [“যিহোবা,” NW] ধর্ম্মময়।’ (যাত্রাপুস্তক ৯:২৭; ২ বংশাবলি ১২:৬; গীতসংহিতা ১১:৭; ১২৯:৪; বিলাপ ১:১৮) হ্যাঁ, সর্বোচ্চ মানের জন্য আমরা যিহোবার দিকে তাকাতে পারি কারণ তিনি বিশ্বাস্য, ন্যায্য এবং ধর্মময়।
৪. “ধার্মিক” শব্দের মানে কী?
৪ অবশ্য, বর্তমানে “ধার্মিক” শব্দটা লোকেদের কাছে খুব একটা জনপ্রিয় নয়। আসলে, বেশির ভাগ লোক এটাকে এক নেতিবাচকভাবে, এমনকি নিচু দৃষ্টিতে দেখে থাকে এবং এটাকে লোক-দেখানো ধার্মিকতার সমান বা কপটভাবে ধার্মিক ও ধর্মপ্রাণ বলে মনে করে। কিন্তু, একটা ডিকশনারি অনুসারে “ধার্মিক” এর মানে হল ন্যায্য, ন্যায়পরায়ণ, সদ্গুণসম্পন্ন; নির্দোষ, নিষ্পাপ; ঐশিক আইন সম্বন্ধীয় নীতিগুলো মেনে চলা বা নৈতিকতার মান মেনে নেওয়া; সঠিক বা ন্যায্য কাজ করা। যে-আইন বা মানের মধ্যে এইধরনের উত্তম বৈশিষ্ট্যগুলো রয়েছে, সেটাতে কি আপনি আনন্দ করবেন না?
৫. বাইবেলে দেওয়া ধার্মিকতার গুণ সম্বন্ধে বর্ণনা করুন।
৫ ধার্মিকতার গুণ সম্বন্ধে এনসাইক্লোপিডিয়া জুডাইকা বলে: “ধার্মিকতা দুর্বোধ্য কোন ধারণা নয় কিন্তু সবার সঙ্গে ন্যায্য এবং সঠিক কাজ করার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।” উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ঈশ্বরের ধার্মিকতা বলতে শুধু তাঁর ভিতরের বা ব্যক্তিগত একটা গুণকে বোঝায় না, যেমন তাঁর পবিত্রতা এবং শুদ্ধতা। বরং এটা হল তাঁর বৈশিষ্ট্যের একটা প্রকাশ, যা সঠিক এবং ন্যায্য। এটা বলা যেতে পারে যে, যিহোবা যেহেতু পবিত্র এবং শুদ্ধ, তাই তিনি যা কিছু করেন এবং তাঁর কাছ থেকে যা কিছু আসে, সেগুলো সমস্তই ধর্মময়। বাইবেল যেমন বলে, “সদাপ্রভু [“যিহোবা,” NW] আপনার সমস্ত পথে ধর্ম্মশীল, আপনার সমস্ত কার্য্যে দয়াবান্।”—গীতসংহিতা ১৪৫:১৭.
৬. পৌল তার দিনের কিছু অবিশ্বাসী যিহুদি সম্বন্ধে কী বলেছিলেন এবং কেন?
৬ রোমের খ্রীষ্টানদের কাছে চিঠি লেখার সময় প্রেরিত পৌল এই বিষয়টার ওপর জোর দিয়েছিলেন। কিছু অবিশ্বাসী যিহুদি সম্বন্ধে তিনি লিখেছিলেন: “ঈশ্বরের ধার্ম্মিকতা না জানায়, এবং নিজ ধার্ম্মিকতা স্থাপন করিবার চেষ্টা করায়, তাহারা ঈশ্বরের ধার্ম্মিকতার বশীভূত হয় নাই।” (রোমীয় ১০:৩) এইধরনের ব্যক্তিদের সম্বন্ধে পৌল কেন বলেছিলেন যে তারা, ‘ঈশ্বরের ধার্মিকতা জানে না’? তারা কি ব্যবস্থা অর্থাৎ ঈশ্বরের ধার্মিক মানগুলো থেকে নির্দেশনা পায়নি? অবশ্যই তারা পেয়েছিল। কিন্তু, তাদের মধ্যে বেশির ভাগই ধার্মিকতাকে তাদের সহ মানবদের সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রে তাদের পরিচালনা দেওয়ার একটা মান হিসেবে না দেখে শুধু ব্যক্তিগত একটা সদ্গুণ হিসেবে দেখেছিল, যা পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে এবং যত্নের সঙ্গে ধর্মীয় আইনকানুন মেনে চলার মাধ্যমে অর্জন করা যায়। যীশুর দিনের ধর্মীয় নেতাদের মতো তারাও ন্যায়বিচার এবং ধার্মিকতার প্রকৃত অর্থ বুঝতে পারেনি।—মথি ২৩:২৩-২৮.
৭. কীভাবে যিহোবার ধার্মিকতা প্রকাশ পেয়েছে?
৭ এর বিপরীতে, যিহোবার ধার্মিকতা তাঁর সমস্ত আচরণে প্রকাশ পায় এবং স্পষ্ট দেখা যায়। যদিও তাঁর ধার্মিকতার কারণে তিনি সাধারণত স্বেচ্ছাকৃত পাপীকে উপেক্ষা করেন না কিন্তু তাই বলে এটা তাঁকে অনুভূতিহীন এবং দাবি করেন এমন এক ঈশ্বর করে তোলে না যে, তাঁকে ভয় পেতে হবে বা তাঁর কাছ থেকে দূরে থাকতে হবে। বরং তাঁর ধার্মিক কাজগুলো এমন এক ভিত্তি জুগিয়েছে, যার ওপর নির্ভর করে মানুষ তাঁর নিকটবর্তী হতে পারে এবং পাপের গুরুতর পরিণতি থেকে রক্ষা পেতে পারে। তাই এটা পুরোপুরি উপযুক্ত যে, যিহোবাকে “ধর্ম্মশীল ও ত্রাণকারী ঈশ্বর” হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।—যিশাইয় ৪৫:২১.
ধার্মিকতা এবং পরিত্রাণ
৮, ৯. কোন্ কোন্ উপায়ে ব্যবস্থা ঈশ্বরের ধার্মিকতাকে প্রকাশ করেছিল?
৮ ঈশ্বরের ধার্মিকতা এবং তাঁর পরিত্রাণের প্রেমময় কাজের মধ্যে সম্পর্ক বোঝার জন্য তিনি মোশির মাধ্যমে ইস্রায়েল জাতিকে যে-ব্যবস্থা দিয়েছিলেন, সেই সম্বন্ধে বিবেচনা করুন। কোন সন্দেহ নেই যে, সেই ব্যবস্থা যথার্থ বা ন্যায্য ছিল। মোশি তার শেষ কথায় ইস্রায়েলীয়দের মনে করিয়ে দিয়েছিলেন: “আমি অদ্য তোমাদের সাক্ষাতে যে সমস্ত ব্যবস্থা দিতেছি, তাহার মত যথার্থ বিধি ও শাসন কোন্ বড় জাতির আছে?” (দ্বিতীয় বিবরণ ৪:৮) কয়েক শতাব্দী পরে ইস্রায়েলের রাজা দায়ূদ ঘোষণা করেছিলেন: “সদাপ্রভুর শাসন সকল সত্য, সর্ব্বাংশে ন্যায্য।”—গীতসংহিতা ১৯:৯.
৯ ব্যবস্থার মাধ্যমে যিহোবা স্পষ্টভাবে তাঁর ন্যায়-অন্যায়ের নিখুঁত মানগুলো সম্বন্ধে জানিয়ে দিয়েছিলেন। ব্যবস্থার মধ্যে খুঁটিনাটি সমস্ত কিছু বলা হয়েছিল যে, কীভাবে ইস্রায়েলীয়রা শুধু ধর্মীয় ব্যাপারেই নয় কিন্তু ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে, বৈবাহিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে, খাবারদাবার, স্বাস্থ্যবিধান ও সেইসঙ্গে অবশ্যই শাসন বা বিচারসংক্রান্ত সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে আচরণ করবে। এ ছাড়া, ব্যবস্থার মধ্যে আইন অমান্যকারী ব্যক্তির কঠোর শাস্তির, এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের কথাও ছিল। * কিন্তু, ব্যবস্থায় দেওয়া ঈশ্বরের ধার্মিক চাহিদাগুলো কি লোকেদের জন্য এক কঠোর এবং ক্লান্তিকর বোঝা ছিল, যা তাদের স্বাধীনতা এবং আনন্দ কেড়ে নিত, যেমন আজকে অনেকে দাবি করে থাকে?
১০. যারা যিহোবাকে ভালবাসতেন তারা তাঁর আইনগুলো সম্বন্ধে কেমন বোধ করেছিলেন?
১০ যারা যিহোবাকে ভালবাসতেন তারা তাঁর ধার্মিক আইন এবং অনুশাসনগুলোর মধ্যে আনন্দ খুঁজে পেয়েছিলেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমরা যেমন দেখেছি যে, রাজা দায়ূদ যিহোবার বিচারসংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলোকে শুধু সত্য এবং ন্যায্য বলেই স্বীকার করেননি কিন্তু সেগুলোর জন্য তার গভীর ভালবাসা এবং কৃতজ্ঞতা ছিল। যিহোবার আইন এবং বিচারসংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলো সম্বন্ধে তিনি লিখেছিলেন: “তাহা স্বর্ণ ও প্রচুর কাঞ্চন অপেক্ষা বাঞ্ছনীয়, মধু ও মৌচাকের রস হইতেও সুস্বাদু। তোমার দাসও তদ্দ্বারা সুশিক্ষা পায়; তাহা পালন করিলে মহাফল হয়।”—গীতসংহিতা ১৯:৭, ১০, ১১.
১১. কীভাবে ব্যবস্থা “খ্রীষ্টের কাছে আনিবার জন্য . . . পরিচালক দাস” হিসেবে প্রমাণিত হয়েছিল?
১১ কয়েক শতাব্দী পরে পৌল ব্যবস্থার আরও একটা বিরাট মূল্য সম্বন্ধে উল্লেখ করেছিলেন। গালাতীয়দের কাছে লেখা তার চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন: “ব্যবস্থা খ্রীষ্টের কাছে আনিবার জন্য আমাদের পরিচালক দাস হইয়া উঠিল, যেন আমরা বিশ্বাস হেতু ধার্ম্মিক গণিত হই।” (গালাতীয় ৩:২৪) পৌলের দিনে একজন পরিচালক দাস বা গৃহশিক্ষক (স্কুলশিক্ষক, কিংডম ইন্টারলিনিয়ার) এক বিরাট পরিবারের একজন পরিচারক বা দাস ছিলেন। তার কাজ ছিল ছেলেমেয়েদের সুরক্ষা করা এবং তাদের সঙ্গে স্কুলে যাওয়া। একইভাবে, ব্যবস্থা ইস্রায়েলীয়দের তাদের চারপাশের বিভিন্ন জাতির নৈতিক ও ধর্মীয় কলুষতা থেকে রক্ষা করত। (দ্বিতীয় বিবরণ ১৮:৯-১৩; গালাতীয় ৩:২৩) এ ছাড়া, ব্যবস্থা ইস্রায়েলীয়দের তাদের পাপপূর্ণ অবস্থা এবং ক্ষমা ও পরিত্রাণ পাওয়ার প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে সতর্ক করে দিত। (গালাতীয় ৩:১৯) বলিদানমূলক ব্যবস্থা, মুক্তির মূল্যের প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে তুলে ধরেছিল এবং ভবিষ্যদ্বাণীর নমুনা জুগিয়েছিল, যার মাধ্যমে প্রকৃত মশীহকে চিহ্নিত করা যেতে পারত। (ইব্রীয় ১০:১, ১১, ১২) এভাবে যিহোবা যখন ব্যবস্থার মাধ্যমে তাঁর ধার্মিকতা প্রকাশ করেছিলেন, তখন তিনি তাদের মঙ্গল এবং অনন্ত পরিত্রাণের কথা মনে রেখে তা করেছিলেন।
যারা ঈশ্বরের দ্বারা ধার্মিক গণিত হয়েছিলেন
১২. যত্নের সঙ্গে ব্যবস্থা মেনে চললে ইস্রায়েলীয়রা কী অর্জন করতে পারত?
১২ যিহোবা যে-ব্যবস্থা দিয়েছিলেন সেটা যেহেতু সমস্ত দিক দিয়ে ধর্মময় ছিল, তাই এটা মেনে চলার দ্বারা ইস্রায়েলীয়রা ঈশ্বরের সামনে এক ধার্মিক মান অর্জন করতে পারত। ইস্রায়েলীয়রা প্রতিজ্ঞাত দেশে ঢোকার আগে মোশি তাদের মনে করিয়ে দিয়েছিলেন: “আমরা আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর আজ্ঞানুসারে তাঁহার সম্মুখে এই সমস্ত বিধি যত্নপূর্ব্বক পালন করিলে আমাদের ধার্ম্মিকতা হইবে।” (দ্বিতীয় বিবরণ ৬:২৫) এ ছাড়া, যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন: “তোমরা আমার বিধি সকল ও আমার শাসন সকল পালন করিবে; যে কেহ এই সকল পালন করে, সে এই সকলের দ্বারা বাঁচিবে; আমি সদাপ্রভু।”—লেবীয় পুস্তক ১৮:৫; রোমীয় ১০:৫.
১৩. তাঁর লোকেরা ধার্মিক ব্যবস্থা মেনে চলবে এটা চাওয়া কি যিহোবার পক্ষে অন্যায্য? ব্যাখ্যা করুন।
১৩ দুঃখের বিষয় যে, একটা জাতি হিসেবে ইস্রায়েলীয়রা ‘সদাপ্রভুর সম্মুখে এই সমস্ত বিধি পালন করিতে’ ব্যর্থ হয়েছিল এবং এভাবে প্রতিজ্ঞাত আশীর্বাদও হারিয়েছিল। তারা ঈশ্বরের সমস্ত আজ্ঞা পালন করতে ব্যর্থ হয়েছিল কারণ ঈশ্বরের ব্যবস্থা নিখুঁত ছিল কিন্তু তারা তা ছিল না। এর মানে কি এই যে, ঈশ্বর ন্যায্য বা ধর্মময় নন? কখনোই নয়। পৌল লিখেছিলেন: “তবে আমরা কি বলিব? ঈশ্বরে কি অন্যায় আছে? তাহা দূরে থাকুক।” (রোমীয় ৯:১৪) বিষয়টা হল যে, ব্যবস্থা দেওয়ার আগে এবং পরে ব্যক্তিবিশেষেরা অসিদ্ধ এবং পাপী হওয়া সত্ত্বেও তাদেরকে ঈশ্বর ধার্মিক বলে গণিত করেছিলেন। ঈশ্বর ভয়শীল এই ব্যক্তিদের তালিকায় নোহ, অব্রাহাম, ইয়োব, রাহব এবং দানিয়েল রয়েছেন। (আদিপুস্তক ৭:১; ১৫:৬; ইয়োব ১:১; যিহিষ্কেল ১৪:১৪; যাকোব ২:২৫) তা হলে প্রশ্ন হল: কীসের ভিত্তিতে এই ব্যক্তিবিশেষেরা ঈশ্বরের দ্বারা ধার্মিক বলে গণিত হয়েছিলেন?
১৪. বাইবেলে মানুষকে যখন ‘ধার্ম্মিক’ বলা হয়েছে, তখন এর দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
১৪ বাইবেলে যখন কোন মানুষকে ‘ধার্ম্মিক’ বলা হয়, তখন এটা নিষ্পাপ অবস্থা বা সিদ্ধতাকে বোঝায় না। বরং এর অর্থ হল, ঈশ্বর এবং মানুষের সামনে ব্যক্তিগত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, নোহকে “ধার্ম্মিক” এবং “তাৎকালিক লোকেদের মধ্যে . . . সিদ্ধ লোক” বলা হয়েছে কারণ তিনি “সেইরূপ করিলেন, ঈশ্বরের আজ্ঞানুসারেই সকল কর্ম্ম করিলেন।” (আদিপুস্তক ৬:৯, ২২; মালাখি ৩:১৮) যোহন বাপ্তাইজকের বাবামা সখরিয় এবং ইলীশাবেৎ “ঈশ্বরের সাক্ষাতে ধার্ম্মিক ছিলেন, প্রভুর সমস্ত আজ্ঞা ও বিধি অনুসারে নির্দ্দোষরূপে চলিতেন।” (লূক ১:৬) আর একজন ন-ইস্রায়েলীয় ইতালীয় শতপতি কর্ণীলিয়কে “এক জন ধার্ম্মিক লোক, যিনি ঈশ্বরকে ভয় করেন” বলা হয়েছে।—প্রেরিত ১০:২২.
১৫. কীসের সঙ্গে ধার্মিকতা নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত?
১৫ এ ছাড়া, মানুষের মধ্যে ধার্মিকতা একজনের হৃদয়ে কী আছে তার সঙ্গে জড়িত—যিহোবা ও তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলোর প্রতি একজনের বিশ্বাস, কৃতজ্ঞতা এবং প্রেম—ও সেইসঙ্গে ঈশ্বর যা চান শুধু তা করাকেই বোঝায় না। শাস্ত্র বলে যে, অব্রাহাম “সদাপ্রভুতে বিশ্বাস করিলেন, আর সদাপ্রভু তাঁহার পক্ষে তাহা ধার্ম্মিকতা বলিয়া গণনা করিলেন।” (আদিপুস্তক ১৫:৬) অব্রাহাম শুধু ঈশ্বরের অস্তিত্বেই বিশ্বাস করেননি কিন্তু “বংশ” সম্বন্ধে তাঁর প্রতিজ্ঞাতেও বিশ্বাস করেছিলেন। (আদিপুস্তক ৩:১৫; ১২:২; ১৫:৫; ২২:১৮) এই বিশ্বাস ও সেই অনুসারে কাজ করার ওপর ভিত্তি করে যিহোবার সঙ্গে অব্রাহামের সম্পর্ক ছিল এবং তিনি অব্রাহামকে ও অন্যান্য বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের অসিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও আশীর্বাদ করেছিলেন।—গীতসংহিতা ৩৬:১০; রোমীয় ৪:২০-২২.
১৬. মুক্তির মূল্যে বিশ্বাসের ফল কী হয়েছে?
১৬ সর্বোপরি মানুষের ধার্মিকতা নির্ভর করে যীশু খ্রীষ্টের মুক্তির মূল্যে বিশ্বাসের ওপর। প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানদের সম্বন্ধে পৌল লিখেছিলেন: “উহারা বিনামূল্যে তাঁহারই অনুগ্রহে, খ্রীষ্ট যীশুতে প্রাপ্য মুক্তি [ঈশ্বরের] দ্বারা, ধার্ম্মিক গণিত হয়।” (রোমীয় ৩:২৪) এখানে পৌল তাদের সম্বন্ধে বলেছিলেন, যাদের খ্রীষ্টের সঙ্গে স্বর্গীয় রাজ্যে অংশগ্রহণ করার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু, যীশুর মুক্তির মূল্য লক্ষ লক্ষ লোকেদের জন্য ঈশ্বরের সামনে এক ধার্মিক মান অর্জন করার সুযোগ খুলে দিয়েছে। প্রেরিত যোহন দর্শনে দেখেছিলেন “বিস্তর লোক, তাহা গণনা করিতে সমর্থ কেহ ছিল না; তাহারা সিংহাসনের সম্মুখে ও মেষ শাবকের সম্মুখে দাঁড়াইয়া আছে; তাহারা শুক্লবস্ত্র পরিহিত।” তাদের শুক্ল বস্ত্র হল ঈশ্বরের সামনে তাদের পরিচ্ছন্নতা এবং ধার্মিকতার প্রতীক কারণ তারা “মেষশাবকের রক্তে আপন আপন বস্ত্র ধৌত করিয়াছে, ও শুক্লবর্ণ করিয়াছে।”—প্রকাশিত বাক্য ৭:৯, ১৪.
যিহোবার ধার্মিকতায় আনন্দ করুন
১৭. ধার্মিকতার অনুধাবন করার জন্য কোন্ পদক্ষেপগুলো নিতে হবে?
১৭ মানুষরা যাতে যিহোবার সামনে এক ধার্মিক মান অর্জন করতে পারে তার জন্য যদিও যিহোবা প্রেমের সঙ্গে তাঁর পুত্র যীশু খ্রীষ্টকে দিয়েছেন কিন্তু এর যে-ফলাফল, তা এমনি এমনি আসে না। একজন ব্যক্তিকে অবশ্যই মুক্তির মূল্যে বিশ্বাস করতে হবে, ঈশ্বরের ইচ্ছার সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করতে হবে, যিহোবার কাছে নিজেকে উৎসর্গ করে এর চিহ্ন হিসেবে জলে বাপ্তিস্ম নিতে হবে। এরপর তাকে ধার্মিকতার ও সেইসঙ্গে অন্যান্য আধ্যাত্মিক গুণগুলো অনুধাবন করতে হবে। স্বর্গীয় আহ্বান রয়েছে, এমন একজন বাপ্তাইজিত খ্রীষ্টান তীমথিয়কে পৌল উৎসাহ দিয়েছিলেন: “ধার্ম্মিকতা, ভক্তি, বিশ্বাস, প্রেম, ধৈর্য্য, মৃদুভাব, এই সকলের অনুধাবন কর।” (১ তীমথিয় ৬:১১; ২ তীমথিয় ২:২২) এ ছাড়া, যীশু চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার ওপর জোর দিয়েছিলেন যখন তিনি বলেছিলেন: “কিন্তু তোমরা প্রথমে তাঁহার রাজ্য ও তাঁহার ধার্ম্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা কর।” আমরা হয়তো ঈশ্বরের রাজ্যের আশীর্বাদ পাওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করি কিন্তু একইসঙ্গে আমরা কি যিহোবার ধার্মিক পথ অনুধাবন করার জন্য কঠোর চেষ্টা করি?—মথি ৬:৩৩.
১৮. (ক) ধার্মিকতার অনুধাবন করা কেন সহজ নয়? (খ) লোটের উদাহরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
১৮ অবশ্য ধার্মিকতার অনুধাবন করা সহজ নয়। কারণ আমরা সকলে অসিদ্ধ এবং অধার্মিকতার প্রতি আমাদের স্বাভাবিক প্রবণতা রয়েছে। (যিশাইয় ৬৪:৬) এ ছাড়া, আমাদের চারপাশে এমন অনেক লোক রয়েছে, যারা যিহোবার ধার্মিক পথের ব্যাপারে কোন আগ্রহই দেখায় না। আমাদের পরিস্থিতি অনেকটা লোটের মতো, যিনি কুখ্যাত দুষ্ট নগর সদোমে বাস করতেন। প্রেরিত পিতর ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, কেন যিহোবা আসন্ন ধ্বংস থেকে লোটকে রক্ষা করা উপযুক্ত বলে মনে করেছিলেন। পিতর বলেছিলেন: “সেই ধার্ম্মিক ব্যক্তি তাহাদের মধ্যে বাস করিতে করিতে, দেখিয়া শুনিয়া তাহাদের অধর্ম্মকার্য্য প্রযুক্ত দিন দিন আপন ধর্ম্মশীল প্রাণকে যাতনা দিতেন।” (২ পিতর ২:৭, ৮) তাই, আমরা নিজেদের জিজ্ঞেস করলে ভাল করব: ‘আমাদের চারপাশে যে-অনৈতিক অভ্যাসগুলো রয়েছে সেগুলোকে কি আমি চুপচাপ সমর্থন করে যাই? আমি কি জনপ্রিয় অথচ দৌরাত্ম্যমূলক আমোদপ্রমোদ বা খেলাধুলাকে শুধুমাত্র রুচিহীন বলে মনে করি? নাকি আমিও লোটের মতো ওই অধার্মিক কাজগুলোর জন্য যাতনা পাই?’
১৯. আমরা যদি ঈশ্বরের ধার্মিকতায় আনন্দ খুঁজি, তা হলে আমরা কোন্ কোন্ আশীর্বাদ পাব?
১৯ এই বিপদজনক এবং অনিশ্চিত দিনগুলোতে যিহোবার ধার্মিকতায় আনন্দ করা হল নিরাপত্তা এবং সুরক্ষার উৎস। “হে সদাপ্রভু, তোমার তাম্বুতে কে প্রবাস করিবে? তোমার পবিত্র পর্ব্বতে কে বসতি করিবে?” এই প্রশ্নের উত্তরে রাজা দায়ূদ বলেছিলেন: “যে ব্যক্তি সিদ্ধ আচরণ ও ধর্ম্মকর্ম্ম করে।” (গীতসংহিতা ১৫:১, ২) ঈশ্বরের ধার্মিকতা অনুধাবন করে এবং এতে আনন্দ খুঁজে নিয়ে আমরা তাঁর সঙ্গে এক উত্তম সম্পর্ক বজায় রাখতে পারব এবং সবসময় তাঁর অনুগ্রহ এবং আশীর্বাদ পাব। এভাবে, আমাদের জীবন হবে পরিতৃপ্তিজনক, আত্মসম্মানে ভরা ও মনের শান্তিতে পরিপূর্ণ। ঈশ্বরের বাক্য বলে, “যে ধার্ম্মিকতার ও দয়ার অনুগামী হয়, সে জীবন, ধার্ম্মিকতা ও সম্মান পায়।” (হিতোপদেশ ২১:২১) এ ছাড়া, যা ন্যায্য ও ঠিক তা করার জন্য আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টার মানে হল সুখী ব্যক্তিগত সম্পর্ক এবং নৈতিক ও আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে উন্নতমানের জীবন। গীতরচক ঘোষণা করেছিলেন: “ধন্য তাহারা, যাহারা ন্যায় রক্ষা করে, ধন্য সে, যে সতত ধর্ম্মাচরণ করে।”—গীতসংহিতা ১০৬:৩.
[পাদটীকা]
^ মোশির ব্যবস্থা সম্বন্ধে আরও বিস্তারিত জানার জন্য যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত শাস্ত্রের প্রতি অন্তর্দৃষ্টি (ইংরেজি) খণ্ড ২ এর ২১৪-২০ পৃষ্ঠায় দেওয়া “নিয়ম চুক্তির কিছু বৈশিষ্ট্য” প্রবন্ধটা দেখুন।
আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?
• ধার্মিকতা কী?
• কীভাবে ঈশ্বরের ধার্মিকতার সঙ্গে পরিত্রাণ সম্পর্কযুক্ত?
• কীসের ভিত্তিতে মানুষরা ঈশ্বরের দ্বারা ধার্মিক গণিত হয়?
• যিহোবার ধার্মিকতায় আমরা কীভাবে আনন্দ খুঁজে পেতে পারি?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[১৫ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
রাজা দায়ূদ ঈশ্বরের আইনগুলোর প্রতি গভীর আনন্দ প্রকাশ করেছিলেন
[১৬ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
নোহ, অব্রাহাম, সখরিয় ও ইলীশাবেৎ এবং কর্ণীলিয় ঈশ্বরের দ্বারা ধার্মিক গণিত হয়েছিলেন। আপনি কি জানেন কেন?