সৎক্রিয়ার জন্য শুচি লোক হওয়া
সৎক্রিয়ার জন্য শুচি লোক হওয়া
“আইস, আমরা মাংসের ও আত্মার সমস্ত মালিন্য হইতে আপনাদিগকে শুচি করি, ঈশ্বরভয়ে পবিত্রতা সিদ্ধ করি।”—২ করিন্থীয় ৭:১.
১. যারা যিহোবাকে উপাসনা করেন, তাদের কাছ থেকে তিনি কী চান?
“কেসদাপ্রভুর পর্ব্বতে উঠিবে? কে তাঁহার পবিত্র স্থানে দণ্ডায়মান হইবে?” যিহোবা যে-উপাসনা গ্রহণ করেন, তার বিষয়ে প্রাচীন ইস্রায়েলের রাজা দায়ূদ, ভাবিয়ে তোলার মতো এই প্রশ্নটা করেছিলেন। এরপর তিনি উত্তর দিয়েছিলেন: “যাহার অঞ্জলি নির্দ্দোষ ও অন্তঃকরণ বিমল, যে অলীকতার দিকে প্রাণ উত্তোলন করে নাই, ছলভাবে শপথ করে নাই।” (গীতসংহিতা ২৪:৩, ৪) পবিত্রতার মূর্ত প্রতীক যিহোবার কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য একজন ব্যক্তিকে অবশ্যই শুচি এবং পবিত্র হতে হবে। প্রাচীন কালে যিহোবা ইস্রায়েল মণ্ডলীকে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন: “তোমরা আপনাদিগকে পবিত্র কর; পবিত্র হও, কেননা আমি পবিত্র।”—লেবীয় পুস্তক ১১:৪৪, ৪৫; ১৯:২.
২. পৌল এবং যাকোব কীভাবে সত্য উপাসনায় শুচি থাকার গুরুত্ব সম্বন্ধে জোর দিয়েছিলেন?
২ কয়েক শতাব্দী পরে অধঃপতিত করিন্থ শহরের সহ খ্রীষ্টানদের প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন, “প্রিয়তমেরা এই সকল প্রতিজ্ঞার অধিকারী হওয়াতে আইস, আমরা মাংসের ও আত্মার সমস্ত মালিন্য হইতে আপনাদিগকে শুচি করি, ঈশ্বরভয়ে পবিত্রতা সিদ্ধ করি।” (২ করিন্থীয় ৭:১) এটা আবারও এই বিষয়টা তুলে ধরে যে, ঈশ্বরের সঙ্গে সম্পর্ক থাকতে হলে এবং তাঁর প্রতিজ্ঞাত আশীর্বাদ পেতে হলে একজন ব্যক্তিকে শুচি থাকতে হবে এবং শারীরিক ও আধ্যাত্মিক মালিন্য এবং কলুষতা থেকে মুক্ত হতে হবে। একইভাবে, ঈশ্বরের কাছে গ্রহণযোগ্য উপাসনা সম্বন্ধে লিখতে গিয়ে শিষ্য যাকোব বলেছিলেন: “ক্লেশাপন্ন পিতৃমাতৃহীনদের ও বিধবাদের তত্ত্বাবধান করা, এবং সংসার হইতে আপনাকে নিষ্কলঙ্করূপে রক্ষা করাই পিতা ঈশ্বরের কাছে শুচি ও বিমল ধর্ম্ম।”—যাকোব ১:২৭.
৩. আমাদের উপাসনা যাতে ঈশ্বরের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়, তার জন্য আমাদের গুরুত্বের সঙ্গে কী চিন্তা করতে হবে?
৩ যেহেতু শুচি, পবিত্র এবং বিমল থাকা সত্য উপাসনায় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তাই যারা ঈশ্বরের অনুমোদন পেতে চান তাদের সবার এগুলো পালন করার বিষয়ে গুরুত্বের সঙ্গে চিন্তা করতে হবে। কারণ আজকে শুচি বা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সম্বন্ধে লোকেদের ভিন্ন মান এবং ধারণা রয়েছে কিন্তু যিহোবা কোন্টাকে শুচি এবং গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন, তা আমাদের বুঝতে হবে এবং মেনে চলতে হবে। আমাদের খুঁজে বের করতে হবে যে, এই ক্ষেত্রে ঈশ্বর তাঁর উপাসকদের কাছ থেকে কী চান এবং তাদের শুচি এবং গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠার জন্য কীভাবে তিনি সাহায্য করেছেন।—গীতসংহিতা ১১৯:৯; দানিয়েল ১২:১০.
সত্য উপাসনার জন্য শুচি
৪. শুচি থাকা সম্বন্ধে বাইবেলের ধারণা ব্যাখ্যা করুন।
৪ বেশির ভাগ লোকের কাছে শুচি হওয়ার মানে হল, শুধু ময়লা বা দূষণ থেকে মুক্ত থাকা। কিন্তু, বাইবেলে যে-ইব্রীয় এবং গ্রিক শব্দগুলোর মাধ্যমে শুচি হওয়ার ধারণাটা তুলে ধরা হয়েছে, তা শুধু শারীরিক দিক দিয়েই নয় কিন্তু নৈতিক ও আধ্যাত্মিক দিক দিয়েও বর্ণনা করেছে। তাই, একটা বাইবেল এনসাইক্লোপিডিয়া বলে: “‘শুচি’ এবং ‘অশুচি,’ শব্দগুলো খুব কম সময়েই স্বাস্থ্যবিধির সঙ্গে জড়িত কিন্তু মূলত ধর্মীয় ধারণাগুলোর সঙ্গে যুক্ত। তাই, ‘শুচি থাকার’ নীতি জীবনের প্রায় প্রতিটা ক্ষেত্রকে প্রভাবিত করে।”
৫. ইস্রায়েলীয়দের জীবনের কোন্ কোন্ দিকে মোশির ব্যবস্থা শুচি থাকার বিষয়ে নির্দেশনা দিত?
৫ অবশ্য, মোশির ব্যবস্থায় ইস্রায়েলীয়দের জীবনের প্রতিটা বাস্তব ক্ষেত্রের জন্য নিয়মনীতি ছিল এবং নির্দিষ্ট করে বলে দেওয়া হয়েছিল যে, কোন্টা শুচি ও গ্রহণযোগ্য এবং কোন্টা নয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, লেবীয় পুস্তক ১১ ও ১৫ অধ্যায়ে আমরা শুচি ও অশুচিতার সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন বিষয় সম্বন্ধে বিস্তারিত নির্দেশনা পাই। কোন কোন পশু অশুচি ছিল এবং ইস্রায়েলীয়রা সেগুলো খেতে পারত না। সন্তান জন্ম দিলে একজন মহিলা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অশুচি হয়ে যেত। একইভাবে, কিছু চর্মরোগ বিশেষ করে কুষ্ঠরোগ এবং পুরুষ ও নারীর জনন অঙ্গগুলো থেকে কিছু বেরিয়ে আসার কারণে একজন ব্যক্তি অশুচি হয়ে যেত। অশুচি থাকার সময়ে কী করতে হতো, সেই বিষয়েও ব্যবস্থায় স্পষ্ট করে বলা ছিল। উদাহরণ হিসেবে, গণনাপুস্তক ৫:২ পদে আমরা পড়ি: “তুমি ইস্রায়েল-সন্তানগণকে আদেশ কর, যেন তাহারা প্রত্যেক কুষ্ঠীকে, প্রত্যেক প্রমেহীকে ও মৃতের দ্বারা অশুচি প্রত্যেক জনকে শিবির হইতে বাহির করিয়া দেয়।”
৬. কোন্ উদ্দেশ্যে শুচি থাকার আইনগুলো দেওয়া হয়েছিল?
৬ কোন সন্দেহ নেই যে, এগুলো এবং চিকিৎসা ও শারীরবৃত্তীয় ধারণা যুক্ত যিহোবার অন্যান্য আইন অনেক আগেই দেওয়া হয়েছিল আর সেগুলো যখন লোকেরা মেনে চলত, তখন উপকার পেত। কিন্তু, এই আইনগুলো শুধু স্বাস্থ্যগত আইন হিসেবেই দেওয়া হয়নি বা শুধু চিকিৎসাগত নির্দেশনা হিসেবেই কাজ করত না। এগুলো ছিল সত্য উপাসনার একটা অংশ। বিষয়টা হল যে, তাদের জীবন, যা কিনা শুধু যিহোবার প্রতি উৎসর্গীকৃত ছিল, তার প্রতিটা ক্ষেত্রে কোন্টা সঠিক এবং কোন্টা সঠিক নয়, তা নির্ধারণ করার অধিকার যে তাদের ঈশ্বর যিহোবার আছে, সেই বিষয়টা তুলে ধরার জন্য আইনগুলো লোকেদের রোজকার জীবন যেমন, খাওয়া, জন্মদান করা, বৈবাহিক সম্পর্ক এবং আরও অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিল।—দ্বিতীয় বিবরণ ৭:৬; গীতসংহিতা ১৩৫:৪.
৭. ব্যবস্থা মেনে চলে ইস্রায়েল জাতি কোন্ আশীর্বাদ পেয়েছিল?
৭ এ ছাড়া, নিয়মচুক্তি ইস্রায়েলীয়দের তাদের চারপাশের অন্যান্য জাতির কলুষিত অভ্যাসগুলো থেকে রক্ষা করেছিল। বিশ্বস্ততার সঙ্গে ব্যবস্থা ও সেইসঙ্গে যিহোবার চোখে শুচি থাকার জন্য সমস্ত চাহিদা মেনে চলে ইস্রায়েলীয়রা ঈশ্বরকে সেবা করার এবং তাঁর আশীর্বাদগুলো লাভ করার জন্য উপযুক্ত ছিল। এই ক্ষেত্রে যিহোবা সেই জাতিকে বলেছিলেন: “যদি তোমরা আমার রবে অবধান কর ও আমার নিয়ম পালন কর, তবে তোমরা সকল জাতি অপেক্ষা আমার নিজস্ব অধিকার হইবে, কেননা সমস্ত পৃথিবী আমার; আর আমার নিমিত্তে তোমরাই যাজকদের এক রাজ্য ও পবিত্র এক জাতি হইবে।”—যাত্রাপুস্তক ১৯:৫, ৬; দ্বিতীয় বিবরণ ২৬:১৯.
৮. শুচি থাকার বিষয়ে ব্যবস্থায় যা বলা হয়েছিল, আজকে খ্রীষ্টানদের কেন সেই বিষয়ের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত?
৮ যিহোবার চোখে ইস্রায়েলীয়রা কীভাবে শুচি, পবিত্র এবং গ্রহণযোগ্য হবে সেই বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়ার জন্য ব্যবস্থার মধ্যে যিহোবা যেহেতু বিস্তারিত বলে দিয়েছিলেন, তাই আজকে খ্রীষ্টানরা কীভাবে এই বিষয়গুলো মেনে চলতে পারেন, তা বিবেচনা করা কি তাদের জন্য উপযুক্ত নয়? যদিও খ্রীষ্টানরা ব্যবস্থার অধীন নন কিন্তু পৌল যেমন ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, তাদের মনে রাখতে হবে, ব্যবস্থায় যা কিছু দেওয়া হয়েছে, তা “আগামী বিষয়ের ছায়ামাত্র, কিন্তু দেহ খ্রীষ্টের।” (কলসীয় ২:১৭; ইব্রীয় ১০:১) যিহোবা, যিনি বলেন, “আমার পরিবর্ত্তন নাই,” তিনি যদি সেই সময় শুচি ও বিমল থাকাকে সত্য উপাসনার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে দেখে থাকেন, তা হলে আজকে আমরা যদি তাঁর অনুমোদন এবং আশীর্বাদ পেতে চাই, আমাদেরও শারীরিক, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে শুচি থাকাকে গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া উচিত।—মালাখি ৩:৬; রোমীয় ১৫:৪; ১ করিন্থীয় ১০:১১, ৩১.
শারীরিক পরিচ্ছন্নতা আমাদের যোগ্যপাত্র হিসেবে তুলে ধরে
৯, ১০. (ক) একজন খ্রীষ্টানের জন্য শারীরিক পরিচ্ছন্নতা কেন জরুরি? (খ) যিহোবার সাক্ষিদের সম্মেলনগুলো সম্বন্ধে প্রায়ই কোন্ মন্তব্যগুলো করা হয়?
৯ শারীরিক পরিচ্ছন্নতা কি আজকেও সত্য উপাসনার এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ? যদিও শুধু শারীরিক পরিচ্ছন্নতা একজন ব্যক্তিকে ঈশ্বরের উপাসক করে তোলে না কিন্তু নিশ্চিতভাবে একজন সত্য উপাসক তার পরিস্থিতি অনুযায়ী যতটা পারেন পরিচ্ছন্ন থাকবেন আর সেটা উপযুক্ত। বিশেষ করে আজকে যেখানে বেশির ভাগ লোকই নিজেদের, তাদের বেশভূষা বা পারিপার্শ্বিক অবস্থা পরিষ্কার রাখার প্রতি তেমন একটা খেয়াল রাখে না, সেখানে যারা তা পালন করে চলেন, তারা প্রায়ই তাদের চারপাশের লোকেদের নজর কাড়েন। এটা ভাল ফল নিয়ে আসতে পারে, ঠিক যেমন করিন্থের খ্রীষ্টানদের পৌল বলেছিলেন: “আমরা কোন বিষয়ে কোন ব্যাঘাত জন্মাই না, যেন সেই পরিচর্য্যা-পদ কলঙ্কিত না হয়; কিন্তু ঈশ্বরের পরিচারক বলিয়া সর্ব্ববিষয়ে আপনাদিগকে যোগ্যপাত্র দেখাইতেছি।”—২ করিন্থীয় ৬:৩, ৪.
১০ যিহোবার সাক্ষিরা বারবার তাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সুশৃঙ্খলা এবং সম্মানজনক আচরণ ও অভ্যাসের জন্য সরকারি কর্মচারীদের দ্বারা প্রশংসিত হয়েছেন, যা বিশেষ করে তাদের বড় বড় সম্মেলনগুলোতে দেখা যায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ইতালির সাভোনা অঞ্চলে অনুষ্ঠিত একটা সম্মেলন সম্বন্ধে লা স্তামপা খবরের কাগজ মন্তব্য করেছিল: “কেউ যখন সেই জায়গা দিয়ে হেঁটে যায়, তখন সঙ্গে সঙ্গে যে-বিষয়টা তাদের নজরে পড়বে, তা হল যারা সেগুলোকে ব্যবহার করেন, তাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং সুশৃঙ্খলা।” ব্রাজিলের সাও পাওলো স্টেডিয়ামে সাক্ষিদের একটা সম্মেলনের পরে সেই স্টেডিয়ামের কর্মকর্তা তার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার দলের সুপারভাইজারকে বলেছিলেন, “এখন থেকে আমরা ঠিক যিহোবার সাক্ষিরা যেভাবে করেছিলেন সেভাবে স্টেডিয়াম পরিষ্কার করতে চাই।” সেই একই স্টেডিয়ামের আরেকজন কর্মকর্তা বলেছিলেন: “যিহোবার সাক্ষিরা যখন স্টেডিয়াম ভাড়া নিতে চান, তখন আমরা শুধু তারিখ নিয়ে চিন্তিত থাকি। অন্য আর কোনকিছু আমাদের উদ্বিগ্ন করে না।”
১১, ১২. (ক) ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে বাইবেলের কোন্ নীতি আমাদের মনে রাখতে হবে? (খ) নিজেদের ব্যক্তিগত অভ্যাস এবং জীবনযাপন সম্বন্ধে কোন্ প্রশ্নগুলো করা যেতে পারে?
১১ উপাসনার জায়গায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং সুশৃঙ্খলা যদি যে-ঈশ্বরকে আমরা উপাসনা করি তাঁর প্রতি প্রশংসা করার এক উৎস হয়, তা হলে নিশ্চিতভাবেই আমাদের ব্যক্তিগত জীবনেও এই গুণগুলো দেখানো সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু, ঘরে নিরালায় আমরা হয়তো মনে করতে পারি যে, যা খুশি তাই করার অধিকার আমাদের আছে। এমনকি পোশাক-আশাক এবং সাজগোজের ব্যাপারেও আমরা যেটাকে আরামদায়ক এবং আকর্ষণীয় বলে মনে করি, সেটা বাছাই করার স্বাধীনতা আমাদের অবশ্যই রয়েছে! কিন্তু, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই স্বাধীনতা হল আপেক্ষিক। কিছু খাবার খাওয়ার বিষয়ে একজনের ইচ্ছা সম্বন্ধে বলতে গিয়ে পৌল তার সহ খ্রীষ্টানদের কী বলেছিলেন, তা মনে করে দেখুন, “সাবধান, তোমাদের এই ক্ষমতা যেন কোন ক্রমে দুর্ব্বলদের ব্যাঘাতজনক না হয়।” এরপর তিনি এক মূল্যবান নীতি সম্বন্ধে বলেছেন: “সকলই বিধেয়, কিন্তু সকলই যে হিতজনক, তাহা নয়; সকলই হিতজনক, কিন্তু সকলই যে গাঁথিয়া তুলে, তাহা নয়।” (১ করিন্থীয় ৮:৯; ১০:২৩) পৌলের উদাহরণ কীভাবে আমাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বেলায়ও খাটে?
১২ লোকেরা উপযুক্তভাবেই আশা করে যে, ঈশ্বরের একজন পরিচারক তার জীবনযাপনে শুচি এবং সুশৃঙ্খল হবেন। তাই, আমাদের নিশ্চিত হতে হবে যে, আমাদের ঘর এবং চারপাশের পরিবেশ যাতে ঈশ্বরের বাক্যের পরিচারক হিসেবে আমরা যে-দাবি করি, এর প্রতি নিন্দা নিয়ে না আসে। নিজেদের এবং আমাদের বিশ্বাস সম্বন্ধে আমাদের ঘর কোন্ ধরনের সাক্ষ্য বা প্রমাণ দেয়? এটা কি দেখায় যে, আমরা আন্তরিকভাবে এক পরিচ্ছন্ন এবং সুশৃঙ্খল ধার্মিক নতুন জগতে বাস করার আশা রাখি, যে-বিষয়ে আমরা দৃঢ়ভাবে অন্যদের জানাই? (২ পিতর ৩:১৩) একইভাবে, আমাদের বেশভূষা—তা সে অবসর সময়ে হোক বা পরিচর্যার সময়েই হোক না কেন—আমরা যে-বার্তা প্রচার করি, সেটার প্রতি আগ্রহ বাড়িয়ে তুলতে বা কমিয়ে দিতে পারে। উদাহরণ হিসেবে, মেক্সিকোর একজন সংবাদপত্রের রিপোর্টারের এই মন্তব্যটা লক্ষ্য করুন: “সত্যিই যিহোবার সাক্ষিদের সদস্যদের মধ্যে যুবক-যুবতীরা হল এক বিরাট অংশ আর যে-বিষয়টা প্রকট হয়ে ওঠে, তা হল তাদের চুলকাটার ধরন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং উপযুক্ত পোশাক-আশাক।” আমাদের মধ্যে এইরকম যুবক-যুবতীদের উপস্থিতি কতই না আনন্দদায়ক!
১৩. আমাদের জীবনের সমস্ত দিক পরিচ্ছন্ন এবং সুশৃঙ্খল কিনা, সেটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমরা কী করতে পারি?
১৩ এটা ঠিক যে, আমাদের বেশভূষা, বিষয়সম্পত্তি এবং ঘরবাড়ি সবসময় পরিষ্কার এবং সুশৃঙ্খল রাখা বলা যত সহজ, কাজে দেখানো তত সহজ নয়। এর জন্য অনেক জটিল এবং দামি জিনিসপত্র বা সরঞ্জামের দরকার নেই কিন্তু উত্তম পরিকল্পনা এবং অটল প্রচেষ্টার প্রয়োজন। আমাদের শরীর, পোশাক-আশাক, ঘরবাড়ি, গাড়ি এবং অন্যান্য বিষয় পরিষ্কার করার জন্য সময় আলাদা করে রাখা দরকার। পরিচর্যা, সভায় যোগ দেওয়া এবং ব্যক্তিগত অধ্যয়ন—সেইসঙ্গে রোজকার জীবনের অন্যান্য কাজ—ঈশ্বরের ও মানুষের সামনে গ্রহণযোগ্য হওয়ার ও পরিচ্ছন্ন থাকার বিষয়ে আমাদের রেহাই দেয় না। “সকল বিষয়েরই সময় আছে,” এই সর্বজনীন নীতি আমাদের জীবনের এই ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য।—উপদেশক ৩:১.
অকলুষিত এক হৃদয়
১৪. কেন এটা বলা যেতে পারে যে, নৈতিক এবং আধ্যাত্মিক পরিচ্ছন্নতা শারীরিক পরিচ্ছন্নতার থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ?
১৪ শারীরিক পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে যেমন মনোযোগ দেওয়ার দরকার তেমনই নৈতিক এবং আধ্যাত্মিক পরিচ্ছন্নতা সম্বন্ধে মনোযোগ দেওয়া আরও বেশি জরুরি। আমরা এই উপসংহারে আসতে পারি এই বিষয়টা মনে করে যে, ইস্রায়েল জাতি শারীরিক দিক দিয়ে অপরিচ্ছন্ন ছিল বলে নয় কিন্তু নৈতিক ও আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে কলুষিত হয়ে গিয়েছিল বলে যিহোবা তাদের পরিত্যাগ করেছিলেন। ভাববাদী যিশাইয়ের মাধ্যমে যিহোবা তাদের বলেছিলেন যে, তারা “পাপিষ্ঠ জাতি, অপরাধে ভারগ্রস্ত লোক” বলে তাদের বলিদান এবং অমাবস্যা ও বিশ্রামবার উদ্যাপন, হ্যাঁ, এমনকি তাদের প্রার্থনাও তাঁর কাছে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ঈশ্বরের অনুমোদন ফিরে পাওয়ার জন্য তাদের কী করার দরকার ছিল? যিহোবা বলেছিলেন: “তোমরা আপনাদিগকে ধৌত কর, বিশুদ্ধ কর, আমার নয়নগোচর হইতে তোমাদের ক্রিয়ার দুষ্টতা দূর কর; কদাচরণ ত্যাগ কর।”—যিশাইয় ১:৪, ১১-১৬.
১৫, ১৬. মানুষকে যা কলুষিত করে, সেই সম্বন্ধে যীশু কী বলেছেন এবং যীশুর কথাগুলো থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
১৫ নৈতিক এবং আধ্যাত্মিক পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব সম্বন্ধে আরও ভাল করে বোঝার জন্য যীশু কী বলেছিলেন, তা বিবেচনা করুন যখন তাঁর শিষ্যরা খাওয়ার আগে হাত ধোয়নি বলে ফরীশী এবং অধ্যাপকরা তাদের অশুচি বলেছিল। যীশু এই কথা বলে বিষয়টার মীমাংসা করেছিলেন: “মুখের ভিতরে যাহা যায়, তাহা যে মনুষ্যকে অশুচি করে, এমন নয়, কিন্তু মুখ হইতে যাহা বাহির হয়, তাহাই মনুষ্যকে অশুচি করে।” এরপর যীশু বলেছিলেন: “যাহা যাহা মুখ হইতে বাহির হয়, তাহা অন্তঃকরণ হইতে আইসে, আর তাহাই মনুষ্যকে অশুচি করে। কেননা অন্তঃকরণ হইতে কুচিন্তা, নরহত্যা, ব্যভিচার, বেশ্যাগমন, চৌর্য্য, মিথ্যাসাক্ষ্য, নিন্দা আইসে। এই সকলই মনুষ্যকে অশুচি করে; কিন্তু অধৌত হস্তে ভোজন করিলে মনুষ্য তাহাতে অশুচি হয় না।”—মথি ১৫:১১, ১৮-২০.
১৬ যীশুর কথাগুলো থেকে আমরা কী শিখতে পারি? যীশু উল্লেখ করেছিলেন যে সেই দুষ্ট, অনৈতিক এবং অশুচি কাজগুলো মনের দুষ্ট, অনৈতিক এবং অশুচি প্রবণতা থেকে আসে। শিষ্য যাকোব যেমন বলেছিলেন, “প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কামনা দ্বারা আকর্ষিত ও প্ররোচিত হইয়া পরীক্ষিত হয়।” (যাকোব ১:১৪, ১৫) তাই, যীশু যেমন বলেছিলেন যে, আমরা যদি গুরুতর পাপে পতিত হতে না চাই, তা হলে আমাদের হৃদয় থেকে এইধরনের যেকোন প্রবণতা পুরোপুরি দূর করতে হবে। এর অর্থ আমরা কী পড়ি, কী দেখি এবং শুনি সেই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। আজকে বাক্স্বাধীনতা ও শিল্পের ছাড়পত্রের নামে, বিনোদন এবং বিজ্ঞাপন জগৎ প্রচুর পরিমাণে এমন সব সংগীত ও ছবি তৈরি করছে, যা পাপপূর্ণ মাংসের কামনাগুলোকে জাগিয়ে তোলে। আমাদের দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হতে হবে যাতে এইধরনের ধারণাগুলো আমাদের হৃদয়ে শিকড় গেড়ে না বসে। মূল বিষয়টা হল যে, ঈশ্বরকে খুশি করতে চাইলে এবং তাঁর কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হলে আমাদের সবসময় সতর্ক থাকতে হবে যাতে আমরা এক পরিচ্ছন্ন এবং অকলুষিত হৃদয় বজায় রাখতে পারি।—হিতোপদেশ ৪:২৩.
সৎক্রিয়ার জন্য শুচি হওয়া
১৭. যিহোবা কেন তাঁর লোকেদের শুচি অবস্থায় নিয়ে এসেছেন?
১৭ এটা সত্যিই অনেক আশীর্বাদ এবং সুরক্ষা যে, যিহোবার সাহায্যে আমরা তাঁর সামনে শুচিভাবে দাঁড়াতে পারি। (২ করিন্থীয় ৬:১৪-১৮) কিন্তু আমরা উপলব্ধি করি যে, যিহোবা একটা নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে তাঁর লোকেদের শুচি অবস্থায় নিয়ে এসেছেন। তীতকে পৌল বলেছিলেন যে, খ্রীষ্ট যীশু “আমাদের নিমিত্তে আপনাকে প্রদান করিলেন, যেন মূল্য দিয়া আমাদিগকে সমস্ত অধর্ম্ম হইতে মুক্ত করেন, এবং আপনার নিমিত্ত নিজস্ব প্রজাবর্গকে, সৎক্রিয়াতে উদ্যোগী প্রজাবর্গকে, শুচি করেন।” (তীত ২:১৪) শুচি লোক হিসেবে, কোন্ কাজগুলোতে আমাদের উদ্যোগী হতে হবে?
১৮. কীভাবে আমরা দেখাতে পারি যে, আমরা সৎক্রিয়ার জন্য উদ্যোগী?
১৮ এর প্রথম এবং মূল কাজটা হল জনসাধারণ্যে ঈশ্বরের রাজ্যের প্রচার করার জন্য নিজেদের বিলিয়ে দেওয়া। (মথি ২৪:১৪) তা করার মাধ্যমে আমরা সমস্ত জায়গার লোকেদের সামনে এমন এক পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকার আশা সম্বন্ধে তুলে ধরি, যা যেকোন প্রকারের কলুষতা থেকে মুক্ত হয়ে যাবে। (২ পিতর ৩:১৩) এ ছাড়া, আমাদের সৎক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে আমাদের রোজকার জীবনে ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার ফলগুলো দেখানো আর এভাবে আমাদের স্বর্গীয় পিতার মহিমা হয়। (গালাতীয় ৫:২২, ২৩; ১ পিতর ২:১২) আর আমরা তাদের কথাও ভুলে যাই না যারা সত্যে নেই কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা স্বাভাবিক দুঃখকষ্টের কারণে প্রচণ্ড ভেঙে পড়েছেন। আমরা পৌলের পরামর্শ মনে রাখি: “এজন্য আইস, আমরা যেমন সুযোগ পাই, তেমনি সকলের প্রতি, বিশেষতঃ যাহারা বিশ্বাস-বাটীর পরিজন, তাহাদের প্রতি সৎকর্ম্ম করি।” (গালাতীয় ৬:১০) এই কাজগুলো শুচি হৃদয় ও সেইসঙ্গে শুদ্ধ প্রেরণা থেকে আসে, যা ঈশ্বরকে খুশি করে।—১ তীমথিয় ১:৫.
১৯. আমরা যদি শারীরিক, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে শুচি থাকার উচ্চমান বজায় রাখি, তা হলে কোন্ আশীর্বাদগুলো আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে?
১৯ সর্বোচ্চ ব্যক্তির দাস হিসেবে, আমরা পৌলের কথাগুলোতে মনোযোগ দিই: “হে ভ্রাতৃগণ, ঈশ্বরের নানা করুণার অনুরোধে আমি তোমাদিগকে বিনতি করিতেছি, তোমরা আপন আপন দেহকে জীবিত, পবিত্র, ঈশ্বরের প্রীতিজনক বলিরূপে উৎসর্গ কর, ইহাই তোমাদের চিত্ত-সঙ্গত আরাধনা।” (রোমীয় ১২:১) আসুন, যিহোবার দ্বারা শুচি হওয়ার বিষয়টা আমরা যেন সবসময় উপলব্ধি করি এবং শারীরিক, নৈতিক এবং আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে শুচি থাকার উচ্চমান বজায় রাখার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করি। তা করা আমাদের জন্য শুধু আত্মসম্মান এবং পরিতৃপ্তিই নিয়ে আসবে না কিন্তু সেইসঙ্গে “প্রথম বিষয় সকল” অর্থাৎ বর্তমান দুষ্ট ও কলুষিত বিধিব্যবস্থার ধ্বংস দেখার আশা আমাদের রয়েছে, যখন ঈশ্বর ‘সকলই নূতন করিবেন।’—প্রকাশিত বাক্য ২১:৪, ৫.
আপনি কি মনে করতে পারেন?
• শুচি থাকা সম্বন্ধে ইস্রায়েলীয়দের কেন অনেক আইন দেওয়া হয়েছিল?
• শারীরিক দিক দিয়ে শুচি থাকা কেন আমরা যে-বার্তা প্রচার করি, তার প্রতি লোকেদের আগ্রহ বাড়িয়ে তোলে?
• নৈতিক এবং আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে শুচি থাকা কেন শারীরিক শুচিতার চেয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ?
• কীভাবে আমরা দেখাতে পারি যে, আমরা “সৎক্রিয়াতে উদ্যোগী” লোক”?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[২১ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
শারীরিক পরিচ্ছন্নতা আমরা যে-বার্তা প্রচার করি, তার প্রতি লোকেদের আগ্রহ বাড়ায়
[২২ পৃষ্ঠার চিত্র]
যীশু সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, মন্দ চিন্তাভাবনা মন্দ কাজগুলোর দিকে পরিচালিত করে
[২৩ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
শুচি লোক হিসেবে, যিহোবার সাক্ষিরা সৎক্রিয়ার জন্য উদ্যোগী